Samaresh Majumdar (Bangla: সমরেশ মজুমদার) was a well-known Bengali writer. He spent his childhood years in the tea gardens of Duars, Jalpaiguri, West Bengal, India. He was a student of the Jalpaiguri Zilla School, Jalpaiguri. He completed his bachelors in Bengali from Scottish Church College, Kolkata. His first story appeared in "Desh" in 1967. "Dour" was his first novel, which was published in "Desh" in 1976. Author of novels, short stories and travelogues, Samaresh received the Indian government's coveted Sahitya Akademi award for the second book of the Animesh series, 'Kalbela".
সমরেশ মজুমদার-এর জন্ম ১০ মার্চ ১৯৪৪। শৈশব কেটেছে ডুয়ার্সের চা-বাগানে। জলপাইগুড়ি জেলা স্কুলের ছাত্র। কলকাতায় আসেন ১৯৬০-এ। শিক্ষা: স্কটিশ চার্চ কলেজ থেকে বাংলায় অনার্স, পরে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের এম.এ। প্রথমে গ্রুপ থিয়েটার করতেন। তারপর নাটক লিখতে গিয়ে গল্প লেখা। প্রথম গল্প ‘দেশ’ পত্রিকায়, ১৯৬৭ সালে। প্রথম উপন্যাস ‘দৌড়’, ১৯৭৫-এ ‘দেশ’ পত্রিকায়। গ্রন্থ: দৌড়, এই আমি রেণু, উত্তরাধিকার, বন্দীনিবাস, বড় পাপ হে, উজান গঙ্গা, বাসভূমি, লক্ষ্মীর পাঁচালি, উনিশ বিশ, সওয়ার, কালবেলা, কালপুরুষ এবং আরও অনেক। সম্মান: ১৯৮২ সালের আনন্দ পুরস্কার তাঁর যোগ্যতার স্বীকৃতি। এ ছাড়া ‘দৌড়’ চলচ্চিত্রের কাহিনিকার হিসাবে বি এফ জে এ, দিশারী এবং চলচ্চিত্র প্রসার সমিতির পুরস্কার। ১৯৮৪ সালে ‘কালবেলা’ উপন্যাসের জন্য পেয়েছেন সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার।
সমরেশ মজুমদারের পরিচিত বইগুলো (অনিমেষ সিরিজ, গর্ভধারিনী এইসব আর কি) বাদে আমার পড়া সবচেয়ে সুন্দর কাহিনী। প্রথম পড়েছিলাম সেই দশম শ্রেনীতে থাকতে। হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় একটি ফিল্ম ইউনিটের অভিযানের কাহিনী। এডিটিং এর পর সিনেমার ফিল্ম যে বিমানে করে আসছিলো তা যান্ত্রিক গলোযোগের কারণে হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় বিধ্বস্ত হয়। যাত্রীরা সকলে মারা যায় এবং ফিল্মটিও হারিয়ে যায়। যদিও এখানে একটু খটকা লাগে, এতো বড়ো একখানা সিনেমার ফিল্মের কপি মাত্র একটি। এর কোন সদুত্তর খুঁজে পাওয়া যায় না বইয়ের কোথাও। বিশাল লুপহোল। :)
ফিল্মের প্রডিউসার তার সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছিলো এই সিনেমার পেছনে। সিনেমাটি হিট হবার আশংকা ছিলো প্রবল। আর এই সিনেমরার প্রতি কলাকুশলী সকলের বেশ আবেগও জড়িত ছিলো। তাই তারা সকলে মিলে পরিকল্পনা করে সিনেমার ফিল্মটি উদ্ধার করবে। যাত্রা করবে হিমালয়ের গভীরে। ডনোরও পাওয়া যায় বড়ো মাপের। শুরু হয় তাদের পথ চলা। শুরু হয় এক অত্যাশ্চর্য অভিযানের। নানা কাহিনীর গলি-গুপচি পেরিয়ে সমাপ্তিটি আসলেই ট্যুইষ্ট সম্পন্ন। বেশ হতবুদ্ধিকর।
কোন চরিত্রেরই খুব একটা গভীরতা খুঁজে পাওয়া যায় না বইটিতে। যদিও সকলেরই আবেগ এবং কাহিনী জড়িতে এই সিনেমাকে কেন্দ্র করে। নেগেটিভ-পজেটিভ সকল চরিত্রের সমারোহে তাই কাহিনীটিই এখানে মুখ্য হয়ে ওঠে।
সব মিলিয়ে ৪ তারকাই দিতে হয়। বইটি পড়তে যে মুগ্ধতার আবেশে পড়েছিলাম তার উপহার স্বরূপ। :)
বরফকে কেন্দ্র করে একটা সিনেমার শুটিংয়ের র ফাইল হারিয়ে যায় এক বিমান দুর্ঘটনায়। সেই সিনেমার নায়ক অরিন্দমসহ সিনেমার সংশ্লিষ্টরা খুঁজে পেতে চান সেই শুটিং দৃশ্য। একে একে বেশ কয়েকজন যুক্ত হয় সেই দলে। কেউ কেউ যুক্ত হন অভিযানটা স্রেফ উপভোগ করার জন্য। অরিন্দমকে একাধারে পাই সিনেমার নায়ক, অভিযান দলের নায়ক, গোয়েন্দা হিসেবে। রহস্য, রোমাঞ্চ, খুন, মৃত্য, এডভেঞ্চার সবকিছু মিলিয়ে পাঠকের জন্য উপাদেয় এক উপন্যাস উপহার দিয়েছেন আমার প্রিয় লেখকদের একজন সমরেশ মজুমদার।
পাঠককে বইয়ের প্রতিটা লাইনে চোখ আটকে রাখার ক্ষমতা আছে হাতে গোনা কয়েকজন লেখকের। সমরেশ মজুমদার তাঁদেরই একজন।
মন্ত্রমুগ্ধের মত পড়ে শেষ করলাম সমরেশ মজুমদারের এই দুর্দান্ত অ্যাডভেঞ্চার উপন্যাস।
এই উপন্যাস হল হিমালয় এর পার্বত্য এলাকায় একটি ফিল্ম ইউনিটের অভিযানের কাহিনী, যেখানে প্লেন ক্রাশে সিনেমার রিল হারিয়ে গেছে এবং তা খুঁজতে গিয়েছে এই সিনেমার সাথে জড়িত কলাকুশলীরা, বিশেষ আবেগতাড়িত হয়ে। এই সিনেমায় প্রডিউসার তার সর্বস্ব ঢেলে দিয়েছিলেন এবং এই সিনেমাটি রিলিজ করলে তা হিট হবার চান্স ছিলো প্রবল। তাই তারা সকলে মিলে পরিকল্পনা করে সিনেমার ফিল্মটি উদ্ধার করার এবং সেই পরিকল্পনা অনুযায়ী যাত্রা করে হিমালয়ের অতি দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলের গভীরে, যেখানে দুর্ঘটনাগ্রস্ত বিমানটি ভেঙে পড়েছিল।
এই উপন্যাস একবার পড়তে শুরু করলে ছাড়া যায় না, অন্তত আমি তো পারিনি। রুদ্ধশ্বাসে পড়ে গেছি, আর মনে হচ্ছিল এরপর কি হবে। উপন্যাসটি পড়তে পড়তে কখন যে আমি এই অভিযানের সঙ্গে গভীরভাবে জড়িয়ে গেছিলাম তা শেষ না হওয়া পর্যন্ত বুঝতে পারিনি। এককথায় চুম্বকের মত আটকে রাখার সমস্ত উপকরণ দিয়ে এই উপন্যাস লিখেছেন লেখক, যা যেকোনো পাঠককে মুগ্ধ করবে। তাই যদি এখনও কেউ এই অসাধারণ গৃপিং উপন্যাস টি না পড়ে থাকেন, তাহলে পড়ে ফেলুন।
বুনো হাঁসের পালক লেখক - সমরেশ মজুমদার প্রকাশক - মিত্র ও ঘোষ মূল্য - ১০০ টাকা (এখন আর প্রকাশিত হয় না)
আনন্দবাজার রবিবাসরীয় পত্রিকায় ২০০৫ থেকে শুরু করে দু বছর টানা প্রকাশিত হতো বিখ্যাত লেখকদের ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাস। আমাদের এই নুতুন সিরিজটিতে আমরা সাজিয়ে রাখবো এই সকল ধারাবাহিক রহস্য উপন্যাসগুলোর আলোচনা দিয়ে, আজকের আলোচনা একটি বিখ্যাত রহস্য ও এডভেঞ্চার উপন্যাস বুনো হাঁসের পালক। বইটির প্রচ্ছদটিও বেশ ইন্টারেস্টিং এক নজর দেখেই বেশ আগ্রহ জন্মায় মনে। আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে লেখা একটি উপন্যাস যা একাধারে প্রেমের ও রহস্যের, অ্যাডভেঞ্চারের উপাদানে তৈরি, এই তীব্রগতি উপন্যাসে আছে আদ্যন্ত নেশা-ধরানো উত্তেজনা। এই উপন্যাসগুলো যেহেতু ধারাবাহিক ভাবে প্রকাশিত হতো তাই ক্লিফ হ্যাঙ্গার রয়েছে অনেক, যাতে করে পাঠকদের আকর্ষিত করে রাখা যায়।
পটভূমি -
হিমালয়ের পার্বত্য এলাকায় বাংলা সিনেমার শুটিং এ যায় একটি দল। সিনেমাটি ওই সময়ে দাড়িয়ে একটি ভালো বাজেটের সিনেমা এবং এই ধরনের এডভেঞ্চার সিনেমা বহুদিন তৈরি হয়নি বাংলা মুভি ইন্ডাস্ট্রিতে। সুতরাং বইটি রিলিজ হলে বেশ ভালই হিট হবে প্রযোজকের মত অনুযায়ী। প্রযোজক হরিশ মল্লিক প্রায় সর্বস্বান্ত হয়েই এই সিনেমায় টাকা ঢেলেছেন। দুর্ভাগ্যবশত যে প্লেনে করে মুভির শুটিং রিল হায়দ্রাবাদ এ পৌঁছানোর কথা ডেভেলপ করানোর জন্য সেই প্লেন ক্র্যাশ করে সিকিম এর এক দুর্গম বরফ সংকুল পার্বত্য অঞ্চলে। এই দুর্ঘটনার খবরের সাথে সাথেই হরিশ মল্লিক স্ট্রোকের শিকার হয়। পুরো ইউনিট ধীরে ধীরে ফিরে আসে কলকাতায়।
কলকাতায় ফিরে আসার পর এই ইউনিটের নির্দেশক বসন্ত ও নায়ক অরিন্দম মিলে আবার সকল ইউনিটকে একত্রিত করে এক দুর্গম অভিযানের সূচনা করে, যেখানে প্লেনটি ভেঙে পড়েছিল সেখানে যাওয়ার জন্য। উদ্দেশ্য যদি সিনেমার রিল গুলো খুজে পাওয়া যায়। এই আবেগতাড়িত অভিযানে একে একে যুক্ত হয় নায়িকা, প্রোডাকশন ম্যানেজার এমনকি অসুস্থ প্রযোজক হরিশ মল্লিক।
শিলং থেকে যে প্লেন হায়দ্রাবাদ যাচ্ছিল কলকাতা হয়ে, সেই প্লেনের যাত্রী ছিল মি: সেন। কিন্তু সেই প্লেন এ যাত্রা না করে তার এক চেনা পরিচিত মানুষকে নিজের জায়গায় পাঠায় সঙ্গে একটি আটাচি। প্লেনটি দুর্ঘটনার সম্মুখীন হয় এবং মি: সেন এর বন্ধুর মৃত্যু হয়। মি: সেন এর ওয়াইফ একটি আলাদা অভিযানের মাধ্যমে পৌঁছতে চান ওই একই জায়গায় যেখানে প্লেনটি দুর্ঘটনার কবলে পড়ে শুধুমাত্র আটাচি উদ্ধার করতে। কী এমন আছে ওই আটাচিতে? দুটো দল কি পারবে সেই জায়গায় পৌঁছাতে? পুরো ফিল্মের ইউনিট কি পারবে রিলটি খুঁজে পেতে? মুভিটি কি আদৌ রিলিজ করতে পারবে? এই সব প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে অবশ্যই পড়তে হবে "বুনো হাঁসের পালক"।
পাঠ প্রতিক্রিয়া -
রহস্য, রোমাঞ্চ, খুন, এডভেঞ্চার, মৃত্যু সবকিছু মিলিয়ে পাঠকদের জন্য বেশ একটি উপাদেয় উপন্যাস সৃষ্টি করেছেন সমরেশ মজুমদার। আজ থেকে প্রায় ৮৫ বছর আগে সৃষ্টি এই উপন্যাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কল্পনা আশ্রিত। আজ যখন আমরা পড়ছি তখন উপন্যাস ব্যবহৃত অনেক তথ্যই ভুল মনে হচ্ছে। এই তথ্য সংক্রান্ত ব্যাপারটিকে যদি পাশে সরিয়ে উপন্যাস টি পড়া যায় তাহলে বইটি আনপুটডাউনেবল। টানটান রুদ্ধশ্বাস গতিময় থ্রিলার। খুঁত বলতে প্রত্যেকটি চরিত্র লেখক বড়ো আলগা গোছের সৃষ্টি করেছেন। বই পড়তে পড়তে আপনিও ওই অভিযানের সঙ্গী হতে বাধ্য। এখনো যারা যারা এই উপন্যাসটি পড়েননি তাদের বলবো এই নির্ভেজাল রহস্য ও এডভেঞ্চারে মোরা উপন্যাসটি মিস করবেন না।
পাহাড় মানুষকে কি অনেক বেশি নির্মম এবং স্বার্থপর করে তোলে? পাহাড়ে এলে কি মানুষ অনেক বেশি আদিম হয়ে যায়? পাহাড়, প্রেম আর অনাহেতুক জটিল মানুষের মনকে কেন্দ্র করে লেখা এই উপন্যাসের সূচনা একটি বাংলা ফিল্ম শুটিংয়ের আফটার পার্টি দিয়ে। সিনেমার প্রযোজক হরিশ মল্লিকের মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে যখন তিনি জানতে পারে- যে প্লেনে করে তার ফিল্মের রিল পাঠানো হচ্ছিল, সেই প্লেনটি নিখোঁজ হয়ে গেছে। কিন্তু সহজে হাল ছাড়া পাত্রী নয় তার শুটিং টিম। তাই শুরু হয় সুট ফিল্ম ক্যানগুলো যে সুটকেস ছিল, সেই সুটকেস খোঁজার অভিযান। সেই বরফ‑আবৃত পাহাড়ি অভিযানে লেখা হয় প্রেম, রহস্য‑ভরা পাহাড়ি কাহিনী যা মানুষের মানবিকতার সবটুকু শেষ পর্যন্ত নিঃশেষ করে দেয়। উপন্যাসটি ছিল খুবই রোমাঞ্চকর; কোথাও বোর হওয়ার অবকাশ নেই। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র অরিন্দমের চরিত্র অঙ্কন খুবই নিরূপণ এবং ম্যাচিউরডভাবে করা হয়েছে। অন্যান্য চরিত্র, যেমন ঠক্কর, বসন্ত এবং মিস্টার সেন,ও দাগ কেটে গেছে। পাহাড়ি অভিযানের সংগ্রামের সাথে মানুষের জটিল মন মিলে তৈরি হয়েছে টেন্ডার উত্তেজনাপূর্ণ বুনো হাঁসের পালক যা যেকোনো বাংলা সিনেমার গল্পকে হার মানিয়ে দিতে বাধ্য। সব দিকে পূর্ণ নম্বর পেলেও সমরেশ মজুমদার লেখক মহাশয় আটকে গেছেন মহিলা চরিত্র অঙ্কনের সময়। তিনি মহিলা চরিত্রদের এমনভাবে এঁকেছেন যারা শুধুমাত্র আবেগ এবং যৌনতার দ্বারা তারিত এবং তার মাঝে বা তার বাইরে কিছু ভাবতেই পারেন না। মানুষের মনকে অনুসরণ এবং এক্সপ্লোর করতে গিয়ে তিনি অনেক ক্ষেত্রে বিষয়গুলি ঘেঁটে দিয়েছেন। গল্পের নায়িকা কল্পনার কথোপকথন ও অন্তর্ভাবনা পাঠকদের বিব্রত করে। প্রেমের যে কয়টি দিক তিনি আনতে চেয়েছেন, সবগুলোই আমার মধ্যে সম্পূর্ণভাবে বিফল হয়েছে, কারণ তার মধ্যে কোন কাব্যিক অনুভূতির ছোঁয়া ছিল না। শেষটা বড় বেমানান লেগেছে; একটুকুও আসার ছোঁয়া কি সমরেশ মহাশয় আমাদের উপহার দিতে পারতেন না? তবুও বলব, সব মিলিয়ে বেশ মনোমুগ্ধকর ছিল। বইয়ের পাতা থেকে চোখ সরাতেই পারছিলাম না; এতটাই রহস্যময় যা আমাকে অন্য জগতে নিয়ে গিয়েছিল। উপন্যাসটি লেখকের আমার দ্বিতীয় উপন্যাস, এবং পরবর্তীকালে আমি তার লেখা পড়ার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করব।
• অর্জন করা যতটা শ্রমভাগ্য এবং প্রতিভাসাপেক্ষ তার চেয়ে বহুগুণ কষ্টকর সেটাকে বাঁচিয়ে রাখা।
• অকারণ উদ্বিগ্নতা মানুষের পায়ের তলার মাটিকে বড্ড পিছল করে দেয়।
• উদাসীনতা যে দূরত্ব বাড়ায় তা ভালবাসা দিয়ে পূর্ণ করা যায় না। বরং এই ভাল। আমি থাকি আমার মত। তুমি সমস্ত কাজ শেষ কর। মনের বয়স আমার কোনোকালে বাড়বে না, দেখো।
• স্মৃতি যতক্ষণ জড় হয়ে থাকে ততক্ষণ তা সহনীয়। কারণ জড় বিলোপ পাবেই। কিন্তু সচল ছবি, গলার স্বর কখনই স্মৃতিকে মরতে দেয় না। এক জীবনে দেখা সব মৃত্যু যদি এভাবে সজীব থাকত তাহলে মানুষ পাগল হয়ে যেত।
এক ভাগ্যান্বেষী চলচ্চিত্র নির্মাতা যার সঙ্গী হয়েছিলেন একজন স্বপ্নদ্রষ্টা ও দুঃসাহসী পরিচালক, কিছু কর্মী এবং নতুন কিছু করার নেশায় আগ্রহী অভিনেতা অভিনেত্রীরা। দীর্ঘ তিন মাস হিমালয়ের কনকনে ঠান্ডা, তাঁবু, বরফের বৃষ্টি, এডভেঞ্চারের মধ্য দিয়ে ফিল্ম তোলা যখন শেষ হলো; সবাই যখন একটা পরিণতির আকাঙ্ক্ষায় উন্মুখ, ঠিক তখনই দেখা দিল এক নিদারুণ বিপর্যয়। পুরো ক্রু এর যাবতীয় পরিশ্রমের ফল চলচ্চিত্রটির গোটা ফিল্মটি প্লেনে করে পাঠানো হচ্ছিলো শিলিগুড়ি থেকে মাদ্রাজ; পথিমধ্যেই বিরূপ আবহাওয়ার ফলে প্লেনটি দুর্ঘটনার শিকার হয়ে সিকিম বর্ডারের কাছে ক্র্যাশ করে। ফিল্ম ক্রু এর কাছে খবর পৌঁছাতে দেরী হয়না একদমই। নিমিষেই ধূলিসাৎ হয়ে যায় কারো সারা জীবনের সঞ্চয়, কারো ক্যারিয়ারের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন। ঠিক যেখানে চলচ্চিত্রের কাহিনীর শেষ, সেখান থেকেই শুরু হয় সত্যিকারের নাটক ও এক দুঃসাধ্য এডভেঞ্চার। একটা ক্ষীণ আশা বুকে নিয়ে তৈরি হয়ে যায় দশজনের একটি টিম, যারা জীবন বাজি রেখে খুঁজতে বের হয় সেই স্যুটকেস যাতে ছিল সাধের ফিল্ম রোল!
তুষারঝড়, প্লেসিয়ারের মরণফাঁদ, ধ্বস এসব তুচ্ছ করে শুরু হলো লুপ্ত সম্পদ উদ্ধারের জন্য এক দলের মরণপণ সংগ্রাম, আর তাদের বিরুদ্ধে শুরু হলো অন্য একটি দলের ষড়যন্ত্র! এই দলে ছিলেন এক নারী, যিনি হন্যে হয়ে খুঁজছিলেন তার স্বামীর ব্রিফকেস। এমন ব্রিফকেস, যার জন্য তিনি জীবন বাজি রাখতে পিছপা হননি। একের পর এক ষড়যন্ত্র, দুর্ঘটনা, নিজেদের মধ্যকার কলহ আর একে একে সঙ্গীদের হারিয়েও দুই দল পৌঁছে যায় নির্দিষ্ট স্থানে। কিন্তু তারপর...?
রোমান্স, রোমাঞ্চ, অনিশ্চয়তায় ঘেরা এই কাহিনী যা একবার পড়তে শুরু করে শেষ না করে থামা যায়না। উপন্যাসের প্রতিটি শব্দে আমি পেয়েছিলাম হিমালয়ের তুষারের ছোঁয়া; চোখের সামনে জীবন্ত হয়ে উঠেছিল তিব্বত, লাচুঙ, কালিম্পং, সিকিম; ফিরে গিয়েছিলাম সমরেশ এর গর্ভধারিণী, উত্তরাধিকার-কালবেলা-কালপুরুষ এর বুনো হাঁসের পালক সেই বস্তু যা সহজে মানুষের আয়ত্ত হয়না!
This entire review has been hidden because of spoilers.
পড়তে পড়তে মনে হচ্ছিল, আমি যেন একটা নরম কুয়াশায় ঢাকা সকালের ভেতর দিয়ে হেঁটে চলেছি চারপাশে আবছা আলো, হালকা হাওয়া আর কোথাও একটা একটানা বাজতে থাকা বাঁশির সুর। বুনোহাঁসের পালক ঠিক এমনই কোনো স্পষ্ট গন্তব্য নয়, অনুভবের ভেতর দিয়ে যাত্রা।
গল্পটা খুব উচ্চকণ্ঠে কিছু বলে না। ছোট ছোট দৃশ্য, মৃদু সংলাপ, মানুষের একাকিত্ব, প্রেম, অভিমান সব কিছু যেন বুনোহাঁসের পালকের মতো হালকা আর ছুঁয়ে যাওয়া।
একটা ছোট্ট সাবধানতা—যারা অ্যাকশন বা চমকপ্রদ মোড় খোঁজেন, তাদের জন্য এটা হয়তো ধীরগতির লাগবে। কিন্তু যাদের সাহিত্য কাছে মানেই মন ছুঁয়ে যাওয়া ছবি, তাদের জন্য এই বই একটা নিঃশব্দ প্রেমপত্র।
শেষ কথা? দেখেই হয়তো বুঝা যাচ্ছে বইটা বেশ পুরোনো৷ পুরোনো বইয়ে একটা গুমোট গন্ধ থাকে, আর মজুমদারের লেখা পড়ে বরাবর ই মনে একটা ক্লাসিকাল ভাব চলে আসে।
কয়েক প্রকার মানুষের চরিত্র খুব সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন লেখক সুন্দর ভাবে, ঘটনায় ভৌগলিক ত্রুটি বেশীরভাগ সাধারণ মানুষের নজরে আসবে না, সব মিলিয়ে ভালোই বলা যায়।
এই বইটি প্রথম পড়েছিলাম স্কুলে পড়া���ালীন সময়ে, স্কুলের পেছনে একটি বইয়ের দোকানের সামনে দাঁড়িয়ে দাড়িয়ে (তখনও বই প্লাস্টিকে মুড়ে রাখা শুরু হয় নি)। কিশোর বয়সে অসাধারণ লেগেছিল, স্বাভাবিকভাবেই এবার তেমন ভালো লাগেনি, তবুও রেটিং কমাচ্ছি না।
এটাকে থ্রীলার বলা যায়, তাই আছে অনেক উত্তেজনাকর উপাদান, কিন্তু সাহিত্যকীর্তি হিসেবে একটু দুর্বল, আর তথ্যগত ত্রুটি এখন নজরে আসে, অনেকটাই কল্পনার উপর নির্ভর করে রচনা করা। এই হল জ্ঞান অর্জনের দোষ, তথ্যগত ত্রুটি নজরে পড়ে... তবে সব মিলিয়ে আকর্ষনীয় ভাবটা ধরে রাখতে পেরেছেন...