দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরতে হলো তুষারকে, অচেনা একটা ফোন কল পেয়ে, দেখা হলো পুরানো বন্ধুদের সাথে, জানা গেল অচেনা নাম্বার থেকে ফোন কল তারাও পেয়েছে। তারপর এক এক করে খুন হতে লাগল বন্ধুরা। কোথাও কোন ক্লু নেই, নেই কোন মোটিভ।দূর্ঘটনায় মারা গেল দেশ সেরা এক লেখক। দিশেহারা হয়ে পড়ল হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট। আবু জামশেদ তার নতুন যোগ দেয়া সহকারিদের নিয়ে নেমে পড়েছেন মাঠে। হার না মানা আবু জামশেদ দিশেহারা, এই কেসের উপর নির্ভর করছে পুরো ডিপার্টমেন্টের ভবিষ্যত, তার দীর্ঘদিনের সুনাম। বন্ধুত্ব, প্রেম, ঘৃনা আর প্রতিশোধের গল্প নিয়ে শরীফুল হাসানের উপন্যাস ‘আঁধারের যাত্রী’।
Shariful Hasan hails from Mymensingh, Bangladesh. He has spent his childhood by the banks of Brahmaputra river. He completed his Masters in Sociology from University of Dhaka and is currently working in a renowned private organization.
Shariful's first novel was published on 2012 titled Sambhala. With two other books, this captivating fantasy trilogy has received widespread acclimation both within and beyond the borders of Bangladesh. The Sambhala Trilogy was translated in English and published from India.
Although his inception consisted of fantasy and thriller, he has later worked on a variety of other genres. These works have been received fondly by the Bangladeshi reader community. Lot of his works have also been published from different publications in West Bengal.
Award- Kali O Kalam Puroshkar 2016 for 'অদ্ভুতুড়ে বইঘর'
ফ্যান্টাসির গন্ডি থেকে বেরিয়ে শরীফুল হাসান ভাইয়ার পুরোপুরি থৃলার লেখার প্রথম প্রচেষ্টা আধারের যাত্রী। আগাগোড়া রিভেঞ্জ থৃলার। বলা যায় প্রথম চেষ্টাতেই উতরে গিয়েছেন, বেশ ভালোভাবেই। কাহিনী প্রথম দিকে কিছুটা স্লো হলেও, পাতা উল্টানোর সাথে সাথে গল্পে গতিও এসেছে সমানুপাতিক ভাবে। ছোট ছোট অধ্যায়ে খুব গুছিয়ে লেখা হয়েছে, তাই পড়তে কোন অসুবিধা হয়নি।
পুরো কাহিনীতে কোন একক নায়ক নেই। অনেককে ঘিরেই গড়ে উঠেছে মূল প্লট। প্রথমে দেখা যায় একজন প্রবাসী চোদ্দ বছর পর ফিরে আসে বাংলাদেশে। কিন্তু এরপরেই খুন হতে থাকে একের পর এক তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু। তদন্তে নামে নব্যগঠিত হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট। কিছুতেই কোন সূত্র খুঁজে পাওয়া যায় না। শেষে ঘাটতে হয় অতীত।
শেষের দিকে টুইস্টটা খারাপ লাগেনি, কিন্তু আমি আরেকটু ডার্ক ফিনিশিং আশা করেছিলাম। তবে যা হয়েছে সেটাও চলনসই। :)
হুট হাট ভিলেনকে শেষটুকু অংশে পর্যাপ্ত জায়গা না দিয়ে শেষ করে ফেলা কি নতুন ধরনের ট্রেডিশন? বাতিঘরের এইবারের যে ২টা বই পড়লাম ২টাই একই দোষে দুষ্ট -_- সারা বই ভরে ভিলেন এরে মারল ওরে মারল তারপর তেমন জাঁদরেল কিছু না করেই নিজে টুপ করে মরে গেল ।
প্রথমেই কাহিনী সংক্ষেপটা বলে নিই। দীর্ঘদিনের প্রবাস জীবন থেকে হঠাৎ দেশে ফিরে আসে তুষার নামে এক ব্যক্তি, কারণ অদ্ভুত এক ফোনকল। এবং সে ফিরে আসার পরেই খুন হতে শুরু করে তার স্কুলজীবনের ঘনিষ্ঠ বন্ধুরা। নৃশংস খুন, দেখলেই বোঝা যায় নির্দিষ্ট কোন উদ্দেশ্য নিয়ে সামনে এগোচ্ছে খুনী। প্রতিশোধ, নিশ্চয়ই। কিন্তু কোন ঘটনার? এটাই প্রশ্ন। রহস্য উদঘাটনে নামে সদ্য প্রতিষ্ঠিত হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের প্রধান আবু জামশেদ। সাথে তার দুই সহকারী। খুঁজে বের করতে হবে খুনীকে, জানতে হবে তার উদ্দেশ্য।
এবার আমার মতামত। সত্যি কথা বলতে, প্রতিশোধমূলক থ্রিলার আমি খুব বেশি পড়ে ফেলেছি কি না জানি না, কিন্তু এখন আর এ ধরণের কাহিনী ভাল লাগে না। খুব বেশি গড়পড়তা মনে হয়। আর এই বইতে গল্পও কেন যেন ঠিক জমেনি, বারবার মনোযোগ সরে যাচ্ছিল। চরিত্রগুলোও আলাদা করে মনে দাগ কাটেনি, অনেক ছিদ্র ধরা গেছে কাঠামোতে। আবু জামশেদ আর আরিফুল হকের কথা বাদ দিলে বাকি সবাইকেই ম্যাড়মেড়ে মনে হয়েছে। স্পয়লার দিতে চাই না বলে বিশদ বলছি না, না হলে বুঝিয়ে বলা যেত ছিদ্রগুলো।
গল্পের এন্ডিংটাও ঠিক জমল না। লেখক চেষ্টা করেছেন পাঠকের মনে একটা ধারণা তৈরি করার, এবং শেষে গিয়ে সেটাকে ভুল দেখিয়ে অন্যভাবে গল্প শেষ করেছেন; যেটা বেশ কমন একটা এ্যাপ্রোচ। কিন্তু যে কোন সচেতন পাঠকই ধরতে পারবে যে ম্যাক্সিমাম থ্রিলারেই শেষে গিয়ে একটা টুইস্ট পাওয়া যায়, যার অর্থ হচ্ছে শুরু থেকে পাঠকের যে ধারণা তৈরি হয় তা শেষ পর্যন্ত সত্যি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। এই চিন্তাটা মাথায় আসার পরে আমি মনে মনে বিকল্প সমাধান খুজতে শুরু করেছিলাম, এবং যেটা পেয়েছিলাম সেটাই ঘটেছিল শেষ পর্যন্ত।
আরেকটা ব্যাপার। শরীফুল হাসান ভাইয়ের বইতে কিছু কিছু জায়গায় 'দাড়ি' নামক যতিচিহ্ন একটু কম দেখা যায়, মনে হয় বাক্যগুলো ইচ্ছাকৃতভাবেই লম্বা করা হয়েছে। এটা সম্ভবত তার নিজস্ব স্টাইল। তবে আমার কাছে বেশি বড় বাক্য পড়তে কেমন অস্বস্তি লাগে, ক্লান্ত হয়ে যাই। তার আগের বই 'ঋভু' এবং সাম্ভালা সিরিজেও এটা খেয়াল করেছি। তবে এটা আমার ব্যক্তিগত অভিমত, সবারই যে একই ধারণা হবে এমন কোন কথা নেই।
বইয়ের প্রচ্ছদ সুন্দর ছিল। কাহিনীও প্রমিজিং ছিল, তবে প্রমিজটা শেষ পর্যন্ত রক্ষা করা হয়নি বলেই মনে হচ্ছে। ভবিষ্যতে শরীফুল হাসান ভাইয়ের কাছ থেকে আরও জমাট কাহিনী আশা করছি।
আহামরি কিছু লাগলো না। টিপিকাল রিভেঞ্জ থ্রিলার কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে খুব একটা ভালো লাগলো না। ভালো বলতে একটানা পড়ে গেলাম এবং যথেষ্ট ফাস্ট বইটা। বইয়ের কোন চরিত্র ঐরকম ভাবে দাগ কেটে যাওয়ার মত না। কয়েক জায়গায় মনে হয়েছেন লেখক পাঠকদের টুইস্ট দেয়ার জন্য কিছু লুপ রেখেছেন সেগুলোও আহামরি কিছু লাগেনি। এন্ডিংটাও ভালো লাগেনি। খুনি কে অথবা খুনগুলোর পেছনে কে এসব নিয়ে শুরুথেকেই যে সন্দেহ ছিল শেষপর্যন্ত তাই হল। কিন্তু টুইস্ট অথবা এসব সবকিছুনা। সবকিছু মিলিয়েই পড়তে গিয়ে বইটা খুব বেশি উপভোগ করিনি। লেখক শরিফুল হাসানের অন্যান্য বই যেগুলো পড়েছি, এই বইয়ের তুলনায় অনেক অনেক ভালো ছিল সব।
আমরা অনেক সময় ভেবে কিংবা না ভেবে কত কাজ-ই করে ফেলি... পরবর্তীতে সেই কাজগুলোই বিশালাকার ধারন করে। যেটাকে সাদামাটা ভাবে বললে বলা যায় কর্মফল। কর্মফল আসলেই ভয়ানক একটা জিনিস। আর শরীফুল হাসানের 'আঁধারের যাত্রী ' বইটা মোটামুটি এই থিমের উপর লেখা। ছয়জন মানুষ... প্রায় কাছাকাছি সময়ে তাদের কাছে একটা রহস্যময় ফোনকল আসে। খুন হতে থাকে এক জনের পর একজন। বিশ্বাসের ভিত টলে যায়... তদন্তে নামে গোয়েন্দারা... খুন হচ্ছে ঠিক কিন্তু কোথাও কোন ক্লু নেই। গোয়েন্দাদের ল্যাজেগোবরে অবস্থা! খুনি কি তবে ধরা ছোঁয়ার বাইরে থেকে যাবে? খুনগুলো করছে-ই বা কে আর কেন? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আঁধারের যাত্রী বইটিতে।
ব্যক্তিগত মতামত- বইটা মাঝামাঝি লেগেছে। কিন্তু শুরু হিসেবে বেশ দুর্দান্ত ছিল। ফ্যাক্ট হল, লেখক বইয়ের ভিতরে রহস্য করতে চেয়েছিলেনঙ্কিন্তু এই রহস্যই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে -_- থাক! বেশি কিছু না বলি... স্পয়লার হবার আশংকা আছে।
স্টোরি বিল্ড-আপ ভালো ছিল, কিন্তু এন্ডিং একদমই আরেক নতুন জনপ্রিয় লেখকের (নাম মনে পড়ছে না) রিভেঞ্জ থৃলার "ঈশ্বরের মুখোশ"-এর মত, এবং এন্ডিংটা (আমার) মোটেও ভালো লাগেনি। শরীফুল হাসান সুলেখক, "সাম্ভালা" সিরিজ থেকে তার গুণমুগ্ধ আমি, "আঁধারের যাত্রী"-তে তিনি নিজের প্রতি বিশেষ সুবিচার করতে পারলেন না।
ফ্ল্যাপ থেকেঃ দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরতে হলো তুষারকে, অচেনা একটা ফোন কল পেয়ে, দেখা হলো পুরানো বন্ধুদের সাথে, জানা গেল অচেনা নাম্বার থে��ে ফোন কল তারাও পেয়েছে। তারপর এক এক করে খুন হতে লাগল বন্ধুরা। কোথাও কোন ক্লু নেই, নেই কোন মোটিভ।দূর্ঘটনায় মারা গেল দেশ সেরা এক লেখক। দিশেহারা হয়ে পড়ল হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট। আবু জামশেদ তার নতুন যোগ দেয়া সহকারিদের নিয়ে নেমে পড়েছেন মাঠে। হার না মানা আবু জামশেদ দিশেহারা, এই কেসের উপর নির্ভর করছে পুরো ডিপার্টমেন্টের ভবিষ্যত, তার দীর্ঘদিনের সুনাম। বন্ধুত্ব, প্রেম, ঘৃনা আর প্রতিশোধের গল্প নিয়ে শরীফুল হাসানের উপন্যাস ‘আঁধারের যাত্রী’।
শর্ট রিভিউঃ
* প্রথমে একটা ব্যাপার জানতে চাইতেছি, থ্রিলার না থৃলার? নাকি দুইটাই? ব্যাপারটা ভাবনার বিষয়। বইয়ের বানানের ক্ষেত্রে আরো যত্নশীল হওয়া উচিৎ। বাতিঘরের বই প্রচুর বিক্রি হয়, প্রথম সারির প্রকাশক তারা, তাদের কাছ থেকে আরো যত্ন নিয়ে কাজ আমরা পাঠকরা আশা করতেই পারি!
* লেখকের এইটা আমার পড়া দ্বিতীয় বই। প্রথমটা ঋভু ছিল। এই বইটা মোটামুটিরকম লেগেছে। পাঠক ধরে রাখার ক্ষমতা আছে। গল্প বলার ধারাবাহিকতা ভালোই বলা চলে।
* প্রতিশোধটা আরো ভয়ংকরভাবে নেওয়া যেতো...
* শেষের দিকে এইভাবে না শেষ করলেও লেখক পারতেন। আরেকটু আকর্ষণীয় করলে ভাল লাগতো।
শরীফুল হাসানের যেকোনো বইয়ের মতো এটিও আনপুটডাউনেবল। এতেও অপরাধ আর জীবনবোধ, নিষ্করুণ প্রতিহিংসা আর ভালোবাসা শঙখলাগা সাপের মতো বয়ে গেছে গোটা গল্প জুড়ে। কিন্তু... - এত আন্ডারহোয়েলমিং ক্রাইম থ্রিলার শেষ কবে পড়েছি, মনে নেই। - এত সমাপতন আর জোর করে চাপিয়ে দেওয়া ঘটনাক্রম একটা থ্রিলারের নিয়ন্ত্রক হয়ে উঠেছে দেখে ভীষণ হতাশ হয়েছি। - কাহিনির শেষে অ্যান্টাগনিস্ট আর প্রোটাগনিস্ট কোনো দ্বৈরথে অবতীর্ণ হননি, বরং কাগজের ঠোঙা ফাটানোর মতো গল্পের সব রস বেরিয়ে গেছে একটি 'কী হইতে কী হইয়া গেল' গোছের সমাপ্তিতে। ধুস!
চৌদ্দ বছর ধরে দেশের বাইরে তুষার। সবার সাথেই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে হারিয়ে গিয়েছে যেন। সেখানেই এক বিদেশিনীকে বিয়ে করে থিতু হয়েছে সে। কিন্তু মন তো দেশের জন্য কাঁদেই। পরিবার, বন্ধুবান্ধবকে অসময়ে খুঁজে বেড়ায়। দীর্ঘ চৌদ্দ বিচির দেশের বাইরে কাটানোর পর এক সময় সিদ্ধান্ত নিতেই হলো দেশে ফেরার। কিন্তু একটা ফোনকল যেন সবকিছু ওলট পালট করে দেওয়ার তালে আছে।
পুরোনো কোনো ভুল কিংবা পাপ, তার স্বীকারোক্তি আদায়ের চেষ্টায় মাত্র সাতদিনের সময় দেওয়া হয়েছে। নাহলে ঘোর বিপদ নেমে আসবে। একইভাবে তুষারের বন্ধু আজমল, মশিউর, রুবেল; প্রত্যেকেই এরূপ হুমকি দেওয়া হয়েছে। কী করছিল তারা? অতীতের কোন পাপের শাস্তি ভোগ করতে হবে তাদের?
তাদের বন্ধু মহলে আরেকজন ছিল। সেই আরিফুল হক আজ মস্তবড় লেখক। সে-ও একটা হুমকি পেয়েছে। কিন্তু ওই চার বন্ধুর সাথে অতোটাও সখ্যতা ছিল না। তবে কেন? আরিফুলের প্রকাশক একটি পান্ডুলিপি পেয়েছে। যেখানে লেখকের নাম নেই। কিন্তু দুর্দান্ত এক গল্প যেভাবেই হোক ছাপাতে হবে। যে গল্পটা অতীতের কোন এক পাপের স্বীকারোক্তি। কে লিখেছে এটা? যে লিখেছে সে কি অনুতপ্ত? নিজেকে নির্দোষ প্রমাণের জন্যই কি ছড়িয়ে দিতেছে অপরাধীদের নাম? কে জানে?
দু’টি মৃত্যু! খুনের পর পায়ের গোড়ালি পর্যন্ত কেটে লাশের পাশে রেখে দেওয়া! এ এক সাইকোপ্যাথের কাজ। সদ্য গড়ে ওঠা হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট কেসগুলো নিয়ে কাজ করছে। কিন্তু কোন দিশা খুঁজে পাচ্ছে না। একের পর এক খুনের মিছিল যেন তাদেরকে অথৈ সাগরে ফেলে দিয়েছে। উপরমহল থেকে চাপ আসছে তাই যে করেই হোক এর মীমাংসা করতেই হবে। কিন্তু কোন সূত্রে পাওয়া যায় না। কীভাবে সমাধান এ রহস্যের?
▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :
লেখক শরিফুল হাসানের “আঁধারের যাত্রী” বইটি অনেক বছর আগে লেখা। বর্তমানে লেখকের লেখা অনেক পরিণত হয়েছে, ভাষা শাণিত হয়েছে, বর্ণনাগুলো মুগ্ধতা ছড়ায়। সে তুলনায় বইটি সাদামাটাই লাগল। যদিও স্বাভাবিকভাবে বর্ণনাগুলো ভালো ছিল। এদিক দিয়ে লেখক শরিফুল হাসান অপ্রতিদ্বন্দ্বী।
তবে বইটি নিয়ে যে প্রত্যাশা ছিল, সেটা পূরণ হয়নি। হয়তো লেখকের অনেক আগের লেখা বলেই হয়তো। থ্রিলার জাতীয় উপন্যাস যেমন হয়, বইটি তেমনই। লেখক বইয়ের মাঝে মাঝে টুইস্ট দেওয়ার চেষ্টা করেছেন, রহস্য ধরে রাখতে পেরেছেন। পাঠকের ভাবনার সাথে খেলার চেষ্টা করেছেন।
এ জাতীয় থ্রিলার বইতে একাধিক মানুষকে অপরাধী হিসেবে ধরে নেওয়া হয়। এখানেও লেখক সেভাবেই গল্পটা এগিয়ে নিয়ে গিয়েছেন। তারপর মূল অপরাধীকে চমকের সাথে উপস্থাপন করা হয়। অনেক বেশি থ্রিলার পড়ার কারণে আগে থেকেই এমন কিছু হবে আন্দাজ করতে পেরেছিলাম, তাই হয়তো শেষ চমকটা ঐভাবে উপভোগ্য লাগেনি। এমনটা যে হবে জানতাম।
বইটি মূলত প্রতিশোধমূলক এক গল্প। যার বীজ বপিত হয়েছিল অনেক বছর আগের একটা ঘটনায়। সময়ের পালাবদলে ধীরে ধীরে প্রতিশোধের প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। অতীতের ঘটনা মনের মধ্যে জমতে জমতে মানুষ হয়ে ওঠে সাইকোপ্যাথ। বইটিতে তেমনই এক ইঙ্গিত করা হয়েছে।
আমি হতাশ হয়েছি চরিত্র বিশ্লেষণে। লেখক শরীফুল হাসান, চরিত্র নিয়ে কোনো কার্পণ্য করেন না। প্রতিটি চরিত্র সমানভাবে গুরুত্ব পায়। স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এখানে ওভাবে সবগুলো চরিত্র ঠিকঠাক প্রাধান্য পায়নি। দুয়েকটা চরিত্রের গভীরে লেখক যেতে পারলেও বাকি চরিত্রগুলো মনে মধ্যে দাগ কাটতে পারেনি।
তবে তদন্ত প্রক্রিয়া, একটু একটু করে গল্পের সুতো ছাড়ার বিষয়টা ভালো লেগেছে। কিছু কাকতালীয় বিষয় ছিল। সেগুলো নাহলে, আর চরিত্রগুলো আরেকটু স্পষ্ট হয়ে উঠল ঠিকঠাক উপভোগ্য হতো বইটি। তাছাড়া যে রহস্যময় পান্ডুলিপি নিয়ে রহস্য জমাট বেঁধেছিল, সেটা নিয়েও ঠিকঠাক সমাধা হলো। খুব বেশি প্রেডিক্টেবল ছিল। অন্যভাবে চমক রাখা যেত হয়তো, তাহলে টুইস্টগুলো মনে ধরার মতো পরিস্থিতি তৈরি হতো।
বইটিতে প্রচুর পরিমাণে বানান ভুল লক্ষ করেছি। ণ পরিবর্তে বেশিরভাগ জায়গায় ন ছিল। ঈ-কারের পরবর্তী ছিল ই-কার। কী/কি এর ভুল ব্যবহার ছিল লক্ষণীয়। এগুলোর বিষয়ে নজর দেওয়া উচিত।
চার বন্ধু। সবাই বদমায়েশ টাইপের। জীবনে অনেক আকাম কুকাম করলেও এখন সবাই সুপ্রতিষ্ঠিত। এদের মধ্যে সবাই একে একে হুমকি পেতে শুরু করে ফোনে। সবাইকে সাতদিন সময় দিয়ে বলা হল ১৪ বছর আগের পাপ স্বীকার করে নিতে। কি সেই পাপ? হুমকিদাতা যে ফাপা বুলি দেয়নি সেটা কাজে কর্মেও বুঝানো শুরু করে দেয়। খুন হতে থাকে একে একে মানুষ। এর মধ্যে এক প্রকাশনী সংস্থার মালিক অদ্ভুত এক উপন্যাস পায়। লেখক অজানা। কিন্তু গল্প অসাধারণ। ছাপা সে গল্প হাতে এসে পৌছায় হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের প্রধান আবু জামশেদের হাতে। কিন্তু পাগলের মত খুজে বেড়ানোর ফলেও খুনীর দেখা তো মেলে না।
ঝরঝরে লেখার বইটা পড়লে যেকোন মানুষেরই আনন্দ হবে। শুরু থেকেই টানটান উত্তেজনার বইটা মাঝে গিয়ে ঝুলে গিয়েছে আর শেষে গিয়ে আমার কাছে জমজমাট লাগেনি। টু��স্ট যে গল্পে সবসময় মাথাঘুরানো হতে হবে এমন আমার মনে হয় না। এরচে বরং টুইস্ট কমায় এমনে রিভেঞ্জ স্টোরি হলেও আমার কাছে অনেক বেশী ভাল লাগত।
সাম্ভালা খ্যাত শরিফুল হাসানের বেশ প্রথম দিকের কাজ এটা। কাঁচা হাতের ছাপ সামান্য হলেও বোঝা যায় তবে পড়তে কোন বোরিং ফিল হয়নি। ক্লাইম্যাক্স আরো ভালো হতে পারতো, revealed হওয়া চরিত্রটি আরো কিছু পৃষ্ঠা পেতে পারতো তবে একেবারে মন্দ হ��়নি। একটি ভালো থ্রিলারের প্রায় সবই এতে আছে ; খুন,খুনের রহস্য ও উন্মোচন প্রক্রিয়া, চরিত্রদের যাপিত জীবনের অপরাধ কিংবা প্রতিশোধ সেইসাথে ভালো-মন্দের চিরায়ত সংজ্ঞায়িতের দার্শনিক দ্বন্দ্ব। বৃষ্টিস্নাত একটি বিকেল খুবেকটা খারাপ কাটবেনা পাঠকের আঁধারের যাত্রী'র সাথে!
সাম্ভালা এর পর থেকেই আমি লেখকের মহাভক্ত।কিন্তু এই বই পড়ে আমি মোটামুটি হতাশ বলা চলে।পূরো বইএর বর্ণ্নাভঙ্গি অসাধারণ,কিন্তু সমাপ্তিটা মোটেও মনমত হল না,আরেকটু ভালো কিছু আশা করেছিলাম।তবে এক বসায় পড়ার মত বই,সাম্ভালা পড়ে এক্সপেক্টেশন ভয়াবহ বেশি না থাকলে হয়ত ৫ই দিতাম।
আঁধারের যাত্রী কেমন লেগেছে ? এক কথায় বলতে গেলে আমি হতাশ।গল্পের প্লটটা খুব আকর্ষণীয় ,ছোট খাট টুইস্ট গুলোও ভালো ছিল। আর ভালো না লাগার বিষয়গুলো বলতে গেলে বলতে হয় শেষটা ঐরকম হয়নি , সারা বইতে থ্রিলের পরিমান কম-তবে এগুলো আমার হতাশার বিষয় নয়। আমার মূল হতাশা বা বিরক্তির কারণ লেখায় অতিরিক্ত কমার ব্যবহার যা লেখার প্রাঞ্জলতা অনেকখানি কমিয়ে দিয়েছে ।বইয়ের কমার পরিমান বোঝানোর বইয়ের একেবারে প্রথম অধ্যায়ের প্রথম প্যারাটা একটু তুলে ধরছি -
" ড্রয়িং রুমের একপাশে কিং সাইজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে আজমল চৌধুরী ,বয়স সাইত্রিশ-আটত্রিশের কাছাকাছি ,মাথার চুল কালো কুচকুচে ,ব্যাকব্রাশ করে রাখে,গত দু'বছর হলো মাঝখানে পাতলা হতে শুরু করেছে ,চেহারায় কেমন যেন বুড়োটেভাব চলে এসেছে ,গায়ের রঙ ধবধবে ফর্সা ,মুখটা গোলগাল ,চোখের নিচটা ফোলা ,স্বাস্থ্য আগে থেকেই ভালো ছিলো, এখন আরো ভালো হয়েছে ,লম্বায় সে গড়পড়তা বাঙালির চেয়ে এগিয়ে আছে ,পাঁচ ফুট দশ ইঞ্চি ,তবে ,সবকিছুর পর ও নিজের মাঝে পুরানো টগবগে ভাবটা আর খুঁজে পায় না। "
পুরো বইতেই আসলে কমার এ ধরণের অনর্থক আধিক্য,যা আমার কাছে বিরক্তিকর লেগেছে। আশা করি লেখক এ ব্যাপারে আরো সচেতন হবেন এবং সামনে তার কাছ থেকে আরো প্রাঞ্জল ভাষার লেখা পাব।
আপাতত থ্রিলার পড়া বাদ দিতে হবে মনে হচ্ছে 😑শুরু থেকেই ধরতে পেরেছিলাম তাহেরের ব্যাপারটা,ক্লাইম্যাক্সের আগে একটু দ্বিধায় ছিলাম তানভীর আর শাহরিয়ার কে নিয়ে.
শুধুমাত্র শেষ না ধরতে পারা ধাঁধা অংশটার জন্য রেটিং:🌠🌠🌠
সাদাসিধা মানুষ মাইনুল, খোঁড়া পা নিয়ে একটা গ্যারেজে স্বল্প বেতনে কাজ করে। স্ত্রী আর একমাত্র মেয়ে ফুলিকে নিয়ে একটা বস্তিতে থাকে। কিন্তু এক রাতে মেয়ের চিকিৎসা করানোর টাকা জোগাড় করতে গিয়েই পড়লো বিপদে। সে এতটাই গরীব যে তার মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার দেখানোর মতন টাকাও তার পকেটে থাকে না। কারো কাছে যে টাকা ধার চাইবে, তারও কোনো উপায় নেই৷ এমন সময় পথিমধ্যে মাইনুলের সাথে বাক বিতন্ডা ও হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়ে কবির খান। কবির খানকে ঘুষি মেরে তার মানিব্যাগ চুরি করে পালিয়ে যায় মাইনুল৷
পরদিন সে জানতে পারে লোকটি মারা গেছে। সেই লোক আবার প্রাক্তন এমপির ছেলে, আর তার খুনিকে হন্য হয়ে খুঁজছে পুলিশ। খবরে বলা হয়েছে গলা চেপে কেউ তাকে হত্যা করেছে। কিন্তু মাইনুল নিশ্চিত যে সে খুন করেনি। কিন্তু কে তার কথা বিশ্বাস করবে? ভয় পেয়ে যায় মাইনুল। আর জড়িয়ে পড়ে ঝামেলায়।
এদিকে লোকাল থানার ওসি আরিফ আর তার সহকারী হাফিজের চোখে ঘুম নেই। যে করেই হোক কবির খানের খুনিকে বের করতে হবে। এদিকে এক খুনের তদন্তের কূল-কিনারা না হতেই আরেকটা খুন হয়ে গেল। কবির খান যেখানে খুন হয়েছিল ঠিক তার পাশেই। দুটো খুন কি তাহলে একই সূতোয় বাঁধা? . . .
শরিফুল হাসানের লেখা এবারই প্রথম পড়লাম। একদম ছোট সাইজের একটা বই, মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার মতন কোন টুইস্ট নেই, খুব সাধারণ প্লট আর চরিত্র, অ্যাকশন বা বুদ্ধির খেলা- কোনোটাই নেই। তবুও একদম সাজানো গোছানো একটা থ্রিলার। আমাদের সাদামাটা জীবনের বিরতির ফাঁকে একটানে পড়ে ফেলার মতন হাল্কা মেজাজের একটা বই। সুখপাঠ্য বলা চলে। বেশ সহজ, সাবলীল ও মেদহীন বর্ণনা ফুটিয়ে তোলার জন্য লেখক অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। তবে একদম শেষের দিকে রহস্যভেদের ব্যাপারটা আরেকটু নাটকীয়ভাবে উপস্থাপন করতে পারতেন। পড়ে মনে হলো একটু তাড়াহুড়োয় সব শেষ করা৷ সেই সাথে কিছু কিছু জায়গায় প্রশ্নবোধক চিহ্নও পড়ে গেছে। যেমন ৫ জন খোঁড়া ব্যক্তির মধ্যে শুধু মাইনুলকেই কেন ধরা হলো? আর গল্পে সুমনা ও সাজুর ভূমিকাই বা কী? এইরকম কিছু প্লটহোল বাদে বইটা উপভোগ্য ছিল।
টান টান উত্তেজনায় ঠাসা প্রতিটা পৃষ্ঠা।বৃহৎ কলেবরের এই থ্রিলার উপন্যাসটি দারুন উপভোগ করেছি।লেখকের লেখায় চম্বুকের মতো আকর্ষণ করার একটা ব্যাপার আছে। লেখকের জন্য শুভকামনা ...
লেখক শরীফূল হাসানের মূল শক্তি তার ইতিহাসের আঙ্গিকে লেখা এবং অতিপ্রাকৃত রচনায়। কিন্তু এই বইটি সম্পূর্ণ আলাদা ছিল। একেবারে শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত একটি মার্ডার মিস্ট্রি। গল্পের মূল প্রতিপাদ্য কে খুনি? কেন খুন করছে তা নিয়েও সংশয় থাকে, তবে তার পেছনের যুক্তি পাঠকের ধারণার আঙিনায় প্রায় অনেকক্ষণ ধরেই ভাসমান অবস্থায় রাখা হয়েছে, চাইলেই কল্পনা করে নেয়া সম্ভব।
মূল গল্পে কে নায়ক তা বলা কঠিন। অন্তত আমার যাকে নায়ক বলে মনে হয়েছে অন্যদের তাকে নায়ক নাও মনে হতে পারে। কিংবা এই গল্পের কোনও নায়কই নেই, স্রেফ প্রতিহিংসা চরিতার্থ করতে চাওয়া ব্যক্তি, এবং কিছু শিকার, সব মিলে বই। গল্পের বিভিন্ন স্থানে ক্লু দেয়া আছে, চাইলে খুনিকে পাঠক আবিষ্কার করতে পারবে মূল ক্লাইমেক্সের আগেই, অন্তত আমি পেরেছি। তবে তাতে দোষের কিছু নেই, কিছু আবিষ্কারের সাথে বাস্তবতার মিল দেখতে পেলে ভাল লাগে, এক্ষেত্রেও তেমনটাই হয়েছে।
খুনের মোটিভ কি যথার্থ? হুম, আমার মনে হয় ঠিকই আছে। তবে মৃতের পায়ের পাতা আলাদা না করলেও চলত। যেহেতু আলাদা করাই হয়েছে সেহেতু খুনের ক্রম পরিবর্তন করে আরও গভীর পর্যন্ত ভিন্নভাবে সাসপেন্স এলিমেণ্ট ধরে রাখা যেত। তবে হ্যাঁ, কাহিনী নানাদিকে ঘোরানোর চেষ্টা হয়েছে এবং তা বিভ্রান্তির অনেকাংশেই জন্য যথেষ্ট।
যে কারণে ফেলুদার থেকে ব্যোমকেশ বেশি ভাল লাগে সেই কারণে এই গল্প ভাল লেগেছে। কারণ পাঠককে রহস্যের মধ্যে রেখেও তা আবিষ্কারের সুযোগ দেয়া হয়েছে। তবে গল্পে অভিপ্রেত কাকতল রয়েছে, বিশেষ করে আবু জামশেদের পুরো বিষয়টি আবিষ্কার করার ব্যাপারটা। কিন্তু কোনও না কোনও ভাবে তো একটা সূত্র দিতেই হতো হাতে, সেই ক্ষেত্রে লেখকের সিদ্ধান্ত ভুল নয়।
গল্পে পুলিশের উপস্থাপন যথেষ্ট বাস্তবিক হয়েছে। অর্থাৎ, তাদের কোনও বিশেষ আধুনিক টেকনোলজির অধিকারী দেখিয়ে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষমতাধর করা হয়নি। তাদের মানবিক দেখানো হয়েছে। ধীর গতিতে সূত্র ধরে ধরে কাজ করেছে তারা। তদন্ত করেছে, পাহারা দিয়েছে, খুনির পেছনে ছুটেছে, সূত্র খুঁজেছে, জেরা করেছে, ঠিকানা জোগাড় করেছে, সূত্র জুড়ে সহজাত পদ্ধতিতে কেসের কাজ করেছে। এই বিষয়গুলো ভাল লেগেছে।
শরীফূল হাসানের অন্যান্য গল্পগুলোর মতোই এই বইতে একটি উন্মুক্ত সমাপ্তি হয়েছে। অর্থাৎ, বইটি এখানেই শেষ কিন্তু চাইলেই এর একটি সিকুয়েল লেখা সম্ভব। লেখক লিখবেন কি না জানি না তবে লেখা উচিৎ। কারণ পরবর্তী ঘটনা কী হলো তা জানার জন্য আগ্রহ থেকে গেছে।
যারা রহস্য-রোমাঞ্চ গল্প পড়তে পছন্দ করেন, গল্পটি তাদের দারুণ লাগবে।
কিছু কিছু উপন্যাস মনে বেশ দাগ কাটে , শরীফুল হাসানের আঁধারের যাত্রী রহস্য উপন্যাসটিও সেরকম ।
কাহিনী সংক্ষেপ
বহু বছর বিদেশে আছে তুষার, কিন্তু হটাৎ অচেনা ফোনকল পেয়ে সস্ত্রীক দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয় তুষার । ঢাকা শহরে এসে সে যোগাযোগ করে নিজের পুরাতন বন্ধুদের সাথে , জানতে পারে অচেনা ফোন কল তারাও পেয়েছে ,প্রথমে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যেই একে অপরকে সন্দেহ করতে থাকে , কিন্তু তারপর শুরু হয় হত্যালীলা। একে একে রহস্যময় আততায়ীর হাতে নিহত হয় তার বন্ধুরা , হত্যা করার পর খুনি ভিক্টিমের পায়ের পাতা কেটে আলাদা করে দেয় শরীর থেকে, বোঝা যায় একই প্যাটার্নে সিরিয়াল কিলিং এর রূপ দেয়া হচ্ছে খুনগুলিকে। এদিকে এক নাম না জানা লেখকের কাছ থেকে একটি রুদ্ধশ্বাস রহস্যকাহিনীর পাণ্ডুলিপি পেয়ে সেটি বই হিসেবে ছেপে ছিলেন প্রকাশক মোফাজ্জল হোসেন ,ঢাকার হোমিসাইড ব্রাঞ্চের গোয়েন্দা আবু জামশেদের মনে হলো সেই রহস্য উপন্যাসের সাথে এই খুনগুলির সম্পর্ক আছে । তার সাথে যোগ দেন সহকারী তানভীর ও শাহরিয়ার । হত্যাকারীর শেষ শিকার হবে তুষার , কিন্তু তার আগেই আবু জামশেদকে পৌছতে হবে হত্যাকারীর কাছে , কারন তিনি ছাড়বার পাত্র নন ।
প্রতিক্রিয়া -লেখক শরীফুল হাসানের লেখনীর সাথে এই বইটির মাধ্যমেই আমার প্রথম পরিচয় , প্লট বুনতে লেখকের হাতে জাদু আছে । অতিরিক্ত বোরিং কিছু নেই , কাহিনীর স্বার্থে চরিত্রদের আগমন হয়েছে । পাঁচজন বন্ধু , সময়ের সঙ্গে সঙ্গে তাদের পরিস্থিতিও কিভাবে বদলে যায় , তাও দেখিয়েছেন লেখক , কাহিনী এগোতে থাকলে বিভিন্ন জনকে সন্দেহ করতেই পারেন পাঠকরা , বিশেষত একজনের উপর সন্দেহ বেশী হয় , কিন্তু তবুও লেখক লেখনীর জাদুতে বাধ্য করবেন উপন্যাসের শেষটুকুতে যাবার জন্য , শেষে আছে বিশেষ এক চমক , যার জন্য পাঠক তৈরি থাকবেন না ।
শেষমেষ কে সেই হত্যাকারী ? কেন সে হত্যা করতো ? তুষারকে কি বাঁচাতে পারলেন গোয়েন্দা আবু জামশেদ ?? আঁধারের যাত্রী আসলে কে ?? জানতে হলে পড়ে ফেলতেই হবে ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে লেখা এই রহস্য উপন্যাস - আঁধারের যাত্রী ।
গ্রন্থ - আঁধারের যাত্রী লেখক - শরীফুল হাসান বাতিঘর প্রকাশনী মুল্য - ২৫০ টাকা (বাংলাদেশী টাকায়) (210 Rs in Indian Rs)
'ফুল কলি' প্রকাশনীর কর্ণধার মোফাজ্জল হোসেন কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি পান্ডুলিপি পেলেন। পান্ডুলিপি দেখে তার কাছে বিষয়টা অদ্ভুত লাগলো। কারন, পান্ডুলিপি কোনো কাগজে আসেনি। এসেছে পেনড্রাইভে করে। আরো আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, পান্ডুলিপিতে লেখকের নাম নেই। তবে ভিতরের গল্পটা পড়লেন। এবং পড়েই খুব উত্তেজিত হয়ে পরলেন ছাপবেন বলে। কিন্তু লেখকের নাম ছাড়া কি করে ছাপবেন? ফেইসবুকে লেখাটা নিয়ে একটা স্টেটাস দেয়ার পরে তাকে একটি অপরিচিত আইডি থেকে জানানো হয় লেখকের নাম "অরি"।
বই ছাপা শেষ হলো। বই বিক্রি হলো ব্যাপক হারে। দারুণ পাঠক প্রিয় হয় বইটা। কিন্তু সেই বইতে কি এমন কাহিনী আছে? লেখক কেন তার পরিচয় গোপন করে?
--আচ্ছা যাক সে কথা,সেটা আপনারা বই পড়েই জেনে নিয়েন, এখন আসুন ১৪ বছর আগের সময়ে ঘুরে আসি।
"ফোরস্টার" একটা গ্রুপের বা দলের নাম। সদস্য আজমল, তুষার, রুবেল, মশিউর। দুরন্ত ও বেপরোয়া চার কিশোরের দল। স্কুলে থাকা কালিন সময়ই তারা এই গ্রুপের জন্ম দেয়। এবং তখন থেকেই তারা বেপরোয়া।
স্কুল শেষ করে একসাথে কলেজে ভর্তি হয় সবাই। তবে সেখানে যেন তাদের দুরন্তপনা আরো বেড়ে যায়। আর তাছাড়া মশিউর বাদে দলের সকলেরই পরিবার বেশ ধনী। ইচ্ছে মত টাকা উড়ানো, গাড়ি নিয়ে ঘোরাঘুরি, মাতলামি করা, সব করতো তারা। আর সে সময় দলে থাকা তুষারের সাথে পরিচয় হয় "আরিফুলের" সাথে। অভাবি পরিবারের ছেলে আরিফুল। পারবেকি ফোরস্টারের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে?
ফোরস্টার, আর আরিফুল সহ এক বৃষ্টিপূর্ন রাতে ড্রাংক অবস্থায় বের হলো গাড়ি নিয়ে। আপনারা বুঝতে পারছেন, কি একটা নরক অবস্থা গাড়ির ভিতরে হচ্ছে তখন?
হঠাৎ প্রচন্ড জোরে ব্রেক কষলো গাড়ি। এবং গাড়ির সামনের ঘটনা দেখে সবাই হতভম্ব। তাদের চোখে মুখে ভয়। কি দেখেছিলো তারা?
--ঘোরাঘুরি শেষ, চলুন এখন বর্তমানে ফিরে আসি।
-৫ বন্ধুর সবাই আজ প্রতিষ্ঠিত। আজমল সাহেব বড় ব্যবসায়ী। তার প্রভাব প্রতিপত্তিও অনেক। উপর মহলের সবাই চেনে তাকে।
-রুবেল বেসরকারি একটি ব্যাংকের ভাইস প্রেসিডেন্ট। তার টাকার কোনো অভাব নাই। গাড়ি, বাড়ি, নারী সব আছে।
-তুষার আমেরিকায় পিএইচডি করতে এসে এখানেই স্থায়ী হয়ে যান। বিয়ে করেন সে দেশের মেয়ে ক্রিস্টিয়ানাকে। অমায়িক চরিত্রের মেয়ে ক্রিস্টিয়ানা।
-তবে মশিউর শেষ। কারন তার কোনো উন্নতী নেই। বর্তমানে তিনি বিভিন্ন ঘৃন্য উপাধিতে ভূষিত।
-আর আরিফুল বর্তমানে দেশের নাম করা একজন লেখক। এক সময় সুস্থ স্বাভাবিক থাকলেও বর্তমানে তিনি পঙ্গু। তার এই পঙ্গুত্বের নিদারুন কাহিনী জেনে সত্যিই পাঠকও কষ্ট পাবেন। তিনি লেখালেখি করেই বর্তামানে চলেন। পান্ডুলিপি বিক্রি করে ইনকাম বেশ ভালোই হয়। নিজে বাড়ি বানালেন খুব সুন্দর করে। বাড়িতে একজন মাত্র কর্মচারী নিয়েই তার সংসার।
কিন্তু এখন এরা কেউই বর্তমানে শান্তিতে নাই। তার কারন, অজানা কেউ একজন তাদের ফোন হুমকি দিতে থাকে। তাদের কোনো একটা পাপ স্বীকার করে নেয়ার জন্য। সময়ও বেঁধে দেন মাত্র সাত দিন। কিন্তু তারা কী স্বীকার করবে? কার কাছে স্বীকার করবে?
অদ্ভুদ ফোন কল পেয়ে আমেরিকা থেকে দীর্ষ ১৪ বছর পর তুষার চলে এসেছে এই কারনেই। আর সে আসার পরেই ঘটতে থাকে একের পর এক ঘটনা...
খুন হতে থাকে একে একে… এবং নৃশংস ভাবে।
সব গুলো খুনের তদন্তের ভার এসে পড়ে হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটরদের উপর। 'এসে পড়ে' না বলে বরং বলা ভালো নেয়া হয়েছে। নিয়েছেন একসময়ের সৎ এবং একরোখা স্বভাবের পুলিশ অফিসার "আবু জামশেদ" বর্তমানে তিনি পুলিশ থেকে বের হয়ে সরকারি আরেক বিভাগ এই হোমিসাইডে জয়েন্ট করে। দায়িত্ব নিয়ে তিনি প্রতিজ্ঞা করেন কোনো আনসলভড কেস থাকবে না তার এখানে।
নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী "শাহরিয়ার" এবং আরেক নতুন সদস্য "তানভির" কে নিয়ে তিনি চালাতে থাকেন এই তদন্ত। কিন্তু তিনি কি পারবেন? কেনেনা খুনির খুন করার ধরন দেখে মনে হচ্ছে খুনি একজন সাইকোপ্যাথ, সিরিয়াল কিলার। খুনি প্রতিটা খুনে একটা সংকেত রেখে যাচ্ছে।
কিসের সংকেত? কার জন্য সংকেত রেখে যাচ্ছে? খুনি কী চায়? আবু জামশেদ কি পারবে তাঁর সম্মান, তাঁর দলের সম্মান এবং সেই সাথে হোমিসাইডের ভবিষ্যৎ ধরে রাখতে? …
গল্পটি পড়তে পড়তে যখন পাঠক একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাবে এবং বুঝতে পারবে কি হচ্ছে, বা হবে, ঠিক তখনই গল্পের টুইস্ট পাঠককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সব চিন্তাকে এলোমেলো করে দেবে। যেমন ভাবে হতবাক হয়েছেন গোয়েন্দা অফিসার আবু জামশেদ।
প্রেম ভালোবাসা, ঘৃনা, মমতা, রহস্য, কি নেই গল্পে? ৬৫ অধ্যায়ের গল্পটি শেষ হয়েছে ২৬৯ পৃষ্ঠাতে। চমৎকা�� সুখ পাঠ্য ছিলো সারা বইটি। অন্তত আমি হতাশ না। তবে আক্ষেপ আছে, সেটা হলো কিছু বিষয় আরো পরিষ্কার করে লেখতে পারতেন লেখক। যেমন আবু জামশেদের জীবনটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার দরকার ছিলো।
লেখক "শরিফুল হাসান" খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখেছেন তাঁর এই "আঁধারের যাত্রী" নামক বইটি। বইটি ২০১৬ সালে 'বাতিঘর প্রকাশনী' থেকে বের হয়, মূদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা।
বাংলায় মৌলিক থ্রিলার গল্প বা উপন্যাস লেখা আমার মতে অনেক বড় ব্যাপার আমাদের জন্য। প্রচলিত বাংলা সাহিত্য থেকে আলাদা এই থ্রিলার সাহিত্য। আমাদের দেশে এই সাহিত্যকে অনেকই সাহিত্যের কাতারেই রাখেন না। যেটা খুবই হতাশার। বাংলার প্রচলিত সাহিত্যের মত না হলেও এই সাহিত্যে কোনো কিছুর ঘাটতি নেই। এই সাহিত্যের চর্চা আরো করা উচিৎ। তবে আনন্দের বিষয় বর্তমানে সেই মানের মৌলিক না হলেও ধীরে ধীরে উন্নতি হচ্ছে।
শরীফুল হাসানের জন্ম ময়মনসিংহে৷ পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান বিভাগে পড়াশোনা করেছেন৷ থ্রিলারে এসেছিলেন অনুবাদ দিয়ে৷ তার অনুদিত প্রথম বই মেইজ অব বোনস৷ কিছুদিনের মধ্যেই মৌলিক থ্রিলার লেখা শুরু করেন৷ প্রথম উপন্যাস সাম্ভালা দিয়ে নিজের জাত চিনিয়েছিলেন তিনি, পরবর্তীতে সেটা রূপ নেয় ট্রিলজিতে৷ এছাড়াও ঋভু, আঁধারের যাত্রী, মেঘ বিষাদের গল্প ইত্যাদি বেশ কিছু উপন্যাস লিখেছেন তিনি৷ মূলত থ্রিলার হিসেবে লেখা হলেও তার শেষের দিকে লেখা উপন্যাসগুলোকে চট করে থ্রিলার ঘরানায় ফেলে দেয়ার কোনো উপায় নেই৷ কারন বর্তমান তাঁর লেখা গুলোতে থ্রিলারের পাশাপাশি সামাজিক চিত্রও অংকিত হয়। তাই অনেক সময় মনেহয় বাস্তব কোনো ঘটনা পড়ছি।
প্রথমদিককার কাহিনি ভীষণ স্লো ছিলো শেষ দিকের কাহিনি কিছুটা গতি পেলেও বৃষ্টির রাতের দুর্ঘটনাটার অংশটুকু পড়ার পর মনে হচ্ছিলো মূল কালপ্রিট কে সেটা ধরে ফেলেছি তাই শেষে মজা পাইনি।
সুন্দর একটা নাম সুন্দর একটা প্রচ্ছদ। এই লেখকের প্রতিটা বই এবং নাম খুবই সুন্দর। প্রচ্ছদের দিকে তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে শুধু। এটা একটা প্রতিশোধ ধর্মী উপন্যাস। কিছু বন্ধুদের জীবনে একটা ভুল। যা মুছে ফেলেতে পারেনি তারা। সেই ভুলটাই তাদের জীবনে অভিশাপ হয়ে এলে। সেই ভুল ঢেকে আনতে চলেছে মৃত্যু। লাশ পাওয়া গেল। পায়ের পাতা কাটা লাশ! একটা নয়। একের পর এক লাশ। কিছুটা সাইকোলজিক্যাল ভাব ছিল বইটা। যাইহোক আমার কাছে মোটামুটি ভাল লেগেছে। গল্পের শেষ কেমন হতে পারে তেমন একটা ধারণা ছিল। সেটা প্রায় ৫০% মিলে গেছে। মিলে না গেলে খুব ভালো হতো। এসব গল্প যদি পাঠক আগেই বুঝে যায় তবে গল্প লেখাটা সার্থক হয়না। তবে এই গল্পটা সার্থক হয়েছে। কেন? জানি না, মনে হলো।
প্লট টা বেশ ভাল ছিল, তবে কাহিনী তে বেশ কিছু লুপ হোল ছিল। পাঠক কে বিভ্রান্ত করতে গিয়ে লেখক কিছু কৌশলের আশ্রয় নিয়েছেন যা বইটিকে তার ট্র্যক থেকে দূরে সরিয়ে দিয়েছে। শেষের চমক টা চমকপ্রদ করতে গিয়ে বেমানান হয়ে গেছে। চরিত্র গুলো গোছানো ছিল এবং গল্পটা একটা শক্ত ভিত্তির ওপরে দাঁড় করানোর ফলে অন্যান্য দুর্বলতা গুলো মোটামুটি উৎরে গেছে। অবশ্য পাঠ্য না হলেও আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে এটি একটি মোটামুটি মানের বলাই যায়।
" রাত হলেই যে ঘুমাতে হবে এমন কোনো কথা নেই, রাতেই অনেক রহস্যের সূচনা, অনেক রহস্যের অবসানও হয় রাতে।"
কাহিনি সংক্ষেপ:
ওরা পাঁচ বন্ধু। সব সময় কাছাকাছি পাশাপাশি ছিলো। জীবিকার তাড়নায় আজ সবাই সবার ভিন্ন ভিন্ন গন্তব্যর মধ্যে এসে থিতু হয়েছে। তুষার এখন আমেরিকায় তাঁর বিদেশি স্ত্রীর সাথে। অন্যদিকে লেখক আরিফ পঙ্গু হয়ে তাঁর লেখালেখি নিয়ে ব্যাস্ত সময় পার করে আসছে। রুবেল, আজমল, মশিউর তাঁরা তাদের ব্যবসা বানিজ্য নিয়ে আছে। হঠাৎ একসময় এক অচেনা নাম্বার থেকে কল আসতে শুরু করে একেক বন্ধুর কাছে। অচেনা কন্ঠস্বর তাঁদের সময় দেয় সাত দিন। এই সাত দিনের ভিতরে তাদের গোপনীয় সেই ভুল স্বীকার করে পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করতে হবে নতুবা তাদের কপালে লেখা থাকবে মৃত্যু। কী ভুল! সেটা কোনো বন্ধুই ধরতে পারছে না ঠিক করে। সতর্কবাণী পেয়ে তুষারও চৌদ্দ বছর পর আমেরিকা থেকে বাংলাদেশে চলে আসলো। সাত দিন পর একেক জন বন্ধু খু*ন হতে থাকে কিন্তু কেউই বুঝতে পারছেনা তাঁদের অপরাধ টা কী! ভিক্টিমকে খু*ন করার পর দু-পায়ের পাতা চাপাতি দিয়ে কেটে আলাদা করে রেখে যাচ্ছে খু*নি। কেস সামলাতে হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটরের প্রধান নির্বাহী আবু জামশেদকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। সে তাঁর স্পেশাল ফোর্সের সদস্য শাহরিয়ার, তানভীর সহ বাকীদের নিয়ে কাজে নেমে পড়ে; কিন্ত আততায়ীর একেকটা খু*ন কেসের মোড় ঘুরিয়ে দেয়। মামলার কোনো মূল টার্মই ধরতে পারছেনা হোমিসাইড ইনভেস্টিগেটররা। আবু জামশেদ কোনো সুরাহা করতে পারছেনা দেখে হন্য হয়ে যায় এবং নিজের কাছে শপথ করে এই কেস সে সমাধান করবেই করবে। শেষমেশ কী তাঁরা আততায়ীকে ধরতে পারে? ওই পাঁচ বন্ধুর বাকী কয়জনই বা বেঁচে থাকে আততায়ীর নির্মম হত্যার স্টিমরোলার থেকে? জানতে হলে পড়তে হবে বইটি।
পাঠ অভিজ্ঞতা:
কথা বলছিলাম শরীফুল হাসান রচিত "আঁধারের যাত্রী" বইটা নিয়ে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত মা*র মা*র কা*ট কা*ট না হলেও বেশ রহস্যে ধরে রেখেছিলেন পুরোটা সময় জুড়ে। গল্পের চরিত্ররা যখন আস্তে আস্তে ডানা মেলে নিজেদের অবস্থান যাচাই করছে ঠিক তখনই অদ্ভুত এক আতঙ্ক নেমে আসে পাঁচ বন্ধুর জীবনে। কে এই আততায়ী! কেনো এত নির্মম হত্যা করে চলছে সে! এই ভাবনা ভাবতে ভাবতে আমি অনেককেই সন্দেহ করা শুরু করে দিয়েছিলাম। কিন্তু শেষমেশ লেখকের দারুণ এক টুইস্ট দেখে সত্যিই হকচকিয়ে গেলাম। গতানুগতিক ধারার না হলেও প্লট টা বেশ ইন্��ারেস্টিং লেগেছিলো আমার কাছে। শরীফুল হাসানের বই পড়ার অভিজ্ঞতা যাঁদের আছে তারা জানেন কত সুন্দর লেখনশৈলী দিয়ে তিনি পাঠকদের গল্প বলায় বুঁদ করে রাখেন। এ বইটাও তাঁর ব্যতিক্রম নয়। ভালো একটা সময় কেটেছিল বইটার সাথে।
যা কিছু ভালো লাগে নি:
২০১৬ সালে বাতিঘর থেকে প্রকাশীত এই বইয়ে প্রচুর পরিমাণে বানান ভুল ছিলো। পড়তে গিয়ে মাঝে মাঝে বিরক্ত ভর করেছিল মনে। এ বইয়ের যদি কখনো রিপ্রিন্ট আসে তাহলে সবার আগে সম্পাদনায় পরিপূর্ণ মনোযোগ দিতে হবে। বইটার বাইন্ডিং ছিলো এভারেজ। মনে হচ্ছিলো পেইজ গুলো খুলে যাবে যে কোন সময়ে। এটা কি শুধু আমার বইয়ের ক্ষেত্রেই ছিলো তা বলতে পারবো না। আর অন্যদিকে বইটার প্রচ্ছদটাও আরেকটু ভালো করার দরকার ছিলো।
বাদবাকি:
একদম গতানুগতিক না বইটা। এখানে লেখক অনেক কিছু খোলাসা করতে গিয়ে একটু বর্ণনা করার দিকে মনোযোগ দিয়েছিল বেশি। প্রতি অধ্যায়ের শেষে লেখক কিছু প্রশ্ন রেখে গিয়েছে পাঠকদের আরো মনোযোগী করার জন্য। যাঁরা এখন ভাবছেন বইটা পড়বেন কী পড়বেন না! তারা বিনা সংকোচে বইটা পড়তে পারেন। আমি আশাবাদী ভালো একটা সময় কাটবে আঁধারের যাত্রীর সঙ্গে।
#ফ্ল্যাপ: অচেনা একটি ফোন কল পেয়ে দীর্ঘদিন পর দেশে ফিরতে হলো তুষারকে, দেখা হলো পুরনো বন্ধুদের সাথে, জানা গেল অচেনা নাম্বার থেকে ফোন কল তারাও পেয়েছে। তারপর এক এক করে খুন হতে লাগল বন্ধুরা। কোথাও কোন ক্লু নেই, নেই কোন মোটিভ। এদিকে দূর্ঘটনায় মারা গেল দেশসেরা এক লেখক। দিশেহারা হয়ে পড়ল হোমিসাইড ডিপার্টমেন্ট। আবু জামশেদ তার নতুন যোগ দেয়া সহকারিদের নিয়ে নেমে পড়ে মাঠে। হার না মানা জামশেদ দিশেহারা, এই কেসের উপর নির্ভর করছে পুরো ডিপার্টমেন্টের ভবিষ্যত, তার দীর্ঘদিনের সুনাম। বন্ধুত্ব, প্রেম, ঘৃনা আর প্রতিশোধের গল্প নিয়ে সাম্ভালা ট্রিলজিখ্যাত শরীফুল হাসানের উপন্যাস আঁধারের যাত্রী।
#কাহিনি_সংক্ষেপ: বাতিঘর প্রকাশিত আঁধারের যাত্রী বইটা অন্ধকার সঙ্গ করে চলা এক যুবকের যাকে আলোতে দেখা গেলেও তার সমস্ত স্বত্বা ছিলো অন্ধকারে ঘেরা। বইটাতে নেশায় চূর হয়ে থেকে ঘটনাক্রমে খুন করে ফেলা একটা অপরাধকে কেন্দ্র করে ঘটে যাওয়া আরো কয়েকটা খুনকে নিয়ে বিশদ বর্ণনা করা হয়েছে।
শরিফুল হাসানের এর আগে পড়া এক নক্ষত্রের নিচে বইটার মতো এই বইটাও বন্ধুদের ঘিরেই। তবে দুই বই দুই মেরুর। এই বইটাতে এক আত্মায় গাঁথা উশৃংখল অহংকারী বিবেকবর্জিত বন্ধুসম্পর্ক দেখানো হয়েছে।
#পাঠ_আলোচনা: আজমল, রুবেল, মশিউর, তুষার আর আরিফকে নিয়ে বলা ঘটনার সূত্রপাত একটা ফোনকল আর সাতদিন বাঁধানো সময় দেয়ার মাধ্যমে। গল্পের বিস্তারিত সিংহভাগই বলা হয়েছে তুষারকে মাধ্যম করে। একটা বই, নাম রক্তনীল সুখ, বইটার সাথে আঁধারের যাত্রীর কি সম্পর্ক সেটা বইটার শেষাংশে এসে জানা যায়। বইটার চরিত্র কাহিনী যেভাবে এগিয়েছে, খুনের ধরন প্রকৃতি দেখে আবু জামশেদ এর মতো আমিও ভেবেছিলাম হয়তো কালপ্রিট হুইল চেয়ারে জীবন পার করা জনপ্রিয় লেখক আরিফ ই। শেষ ভাগে এসে চমকে গেছি। বলে কিনা সরিষাতেই ভুত থাকে, ব্যাপার টা ঠিক সেরকম ই। তবে, প্রতিশোধ মূলক যে থ্রিলার গুলো আছে শেষটায় সাধারণত এমনই হয়ে থাকে।
শুরু থেকে যেভাবে চোর পুলিশ রহস্য খেলায় কাহিনি এগোচ্ছিলো সে হিসেবে শেষটায় চমকে যাবার মতো কাহিনি থাকলেও আমার চাহিদা ছিলো আরেকটু বেশি। প্লট অনুযায়ী শেষটা সাধারণ মনে হলো। ভিলেন কে শেষটায় পর্যাপ্ত জায়গা না দিয়েই সরিয়ে দেয়া হয়েছে।
আরেকটা বিষয় যেটা বোকা বোকা লাগছে সেটা হলো,
--- হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের ইনভেস্টিগেটর এমন বোকাসোকা কেনো হবে? --- ইনভেস্টিগেটর যাচাই প্রক্রিয়া এতো সাধারণ কেনো হবে? ঝড়ে বক মরলেই কি সব কেরামতি ফকিরের সেটা আর যাচাই করে দেখবে না এই ডিপার্টমেন্ট? --- কোনো অপারেশনে গেলে নিজেদের যে ব্যক্তিগত নিরাপত্তা সেটার দিকে খেয়াল রাখবে না?
এক্ষেত্রে অনেকাংশেই প্লট হোল রয়ে গেছে। ভিলেন কে শুরু থেকেই যেমন ভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে সেভাবে শেষটায় উপস্থাপন করা হয় নি। কেমন হুট করেই শেষ।
লেখক চেষ্টা করেছে শেষটায় পাঠক চমকে দেবার মতো কিছু আঁকতে কিন্তু কোনো চরিত্রকেই তেমন বিশেষ মনে ধরার মতো করে ফুটিয়ে তুলেন নি। অসাধারণ প্লটে কাহিনি এগিয়ে গেলেও, জায়গায় জায়গায় প্লট হোল, বাস্তবতার সাথে ভিন্নতা, বর্ণনার হের ফের এর কারণে সাধারনই রয়ে গেলো।
প্রায় ১.৫ মাস সময় নিয়ে শেষ করলাম বইটি৷ পড়ার শুরু থেকেই একটানা পড়ে যাওয়ার তেমন আগ্রহ পাইনি। বলা যায় টান টান উত্তেজনা বলতে কিছু ছিল না পুরো বইটা তে(আমার অন্তত তাই মনে হয়েছে।)। তবে শেষের দিকে গল্পের মূল রহস্য উদঘাটনের সময় কয়েক পৃষ্ঠা খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি।
প্রথম যখন বইটা পড়া শুরু করেছিলাম হাতে যথেষ্ট সময় ছিল। কিন্তু একটানা যত পৃষ্ঠা পড়তে চেয়েছি ঠিক ততটা পারিনি । কিছুটা পড়ার পর আরো কিছু পড়তে চাইতাম কিন্তু উৎসাহ পেতাম না। ফলস্বরূপ সেখানেই থেমে যেতাম। বইটির এইদিক টা আমার ভালো লেগেছে ব্যক্তিগত কারণে ।যখন মন চেয়েছে পড়েছি, যখন মন চায়নি পড়িনি। কোনো তাড়াহুড়া ছিল না শেষ করার। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত স্বাভাবিক লেগেছে৷ অতি প্রাকৃতিক বা অসম্ভব কিছু মনে হয়নি । এই ব্যাপারটাও ভালো লেগেছে।
যদিও বইটি পড়া শেষ করে আমার দারুণ লেগেছে তবুও ভালো না লাগার মতোও কিছু বিষয় আছে। যেমন:-
শেষে "আবু জামশেদ" কি এমন ভিডিও দেখেছিল যার জন্য, যে মানুষের অভিধান থেকে "বিস্মিত" শব্দ টা উঠে গিয়েছিল সেই মানুষটাও বিস্মিত হলো। (আমার মনে পড়ছে না উনি ভিডিওতে যা দেখেছিল তার বর্ননা দিয়েছে বলে।)
পাঁচ বন্ধুকে কল করে ঠিক "সাত দিন" সময় দেওয়া হয় খুব নাটকীয় ভাবে। সে হিসেবে সাত দিন পূর্ণ হওয়ার সাথে সাথে সবাইকে একই দিন মা*রার কথা কিংবা সময়ের একটা যোগসূত্র থাকা প্রতিটি হ*ত্যায় কিন্তু তেমন কিছু হয়নি। আর পায়ের পাতা কে*টে আলাদা করার যে কারণ দেখানো হয়েছে তার চেয়ে ভালো কোনো কারণের দরকার ছিল ।খু*নি পায়ের পাতা কা*টার যে কারণটা বললো, সে উদ্যেশ্য ভিন্ন ভিন্ন ভাবেও পূরণ করতে পারতো।
আর শেষে দুই ভাইয়ের মধ্যে পার্থক্য করার জন্য "নীল" চোখের কোনো প্রয়োজন ছিল না। বাংলাদেশের মানুষের চোখ সাধারণত নীল হয় না। আমি অন্তত এখন পর্যন্ত দেখিনি। কিছু নীল চোখের অধিকারী থাকতে পারে। তবে গল্পের এই চরিত্রের নীল চোখ আমার কাছে অতিরিক্ত লেগেছে । একজন মানুষের এতো দোষ-গুণ থাকা অস্বাভাবিক।
যে মুহুর্তে এই খু*নগুলোর পেছনের কারণটা জানতে পারি সেটাই উপন্যাসের শেষ ছিল আমার কাছে।তাই সবমিলিয়ে আমার কাছে ভালো লেগেছিল।( গল্পের শেষটা এক্সপেকটেশন ফুলফিল নাও করতে পারে পাঠকের।)
"বইটই"-এ বই পড়তে বেশিরভাগ সময়-ই বানান সমস্যার সম্মুখীন হওয়া লাগে৷ কিন্তু এই বইটির ক্ষেত্রে এই সমস্যার সম্মুখীন হওয��া লাগেনি। এটাও ভালো একটা দিক। অনেকে যতিচিহ্নের ব্যবহার ঠিকঠাক হয়নি বলে অভিযোগ করছে। কিন্তু আমি নিজে যতি চিহ্ন এতো ভালো ব্যবহার করতে পারি না বলে এই সমস্যাটা ধরতে পারি নি।
সব মিলয়ে আমার খুব ভালো লেগেছে, এমন বই যা খুব তাড়া নিয়ে পড়ে শেষ করে ফেলা লাগবে না আমার জন্য তেমন বই-ই ভালো। বই পড়ার নেশা*য় আ*সক্ত হওয়ার ইচ্ছে যেহেতু নেই।
#বই_রিভিউ বইয়ের নাম : আঁধারের যাত্রী লেখক: শরীফুল হাসান
ব্যাপারটা কেমন হবে যখন কাউকে ফোনকলের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হবে সাতদিনের মধ্যে অতীতে করা কোনো অপরাধ স্বীকার করার জন্য?
অচেনা এক ফোনকল পেয়ে দীর্ঘ ১৪ বছর পর আমেরিকা থেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয় তুষার। ফোন কলের মাধ্যমে হুমকি দেওয়া হয় সাতদিনের মধ্যে অতীতের করা অপরাধ স্বীকার করার জন্য।
ঢাকা শহরে এসে সে যোগাযোগ করে নিজের পুরাতন বন্ধু আজমল,মশিউর,আরিফ আর রুবেলের সাথে।জানতে পারে অচেনা ফোন কলে তাদের ও হুমকি দেওয়া হয়েছে। প্রথমে ফোনকলটাকে তেমন গুরুত্ব না দিলে আজমলের মৃত্যুতে টনক নড়ে বাকিদের। নৃশংস ভাবে খু'ন হয় আজমল।গু'লি করার পর কেটে ফেলা হয়েছিল তার দু'পা।
খু'নের তদন্তের ভার চলে আসে সদ্য গঠিত হোমিসাইড ডিপার্টমেন্টের একসময়ের সৎ এবং একরোখা স্বভাবের পুলিশ অফিসার "আবু জামশেদ" এর উপর। নতুন নিয়োগ প্রাপ্ত অদ্ভুত চরিত্রের অধিকারী "শাহরিয়ার" এবং আরেক নতুন সদস্য "তানভির" কে নিয়ে তিনি চালাতে থাকেন এই তদন্ত। অন্য দিকে একে একে খু'ন হতে থাকে রুবেল, আরিফ ও মশিউর।,হত্যা করার পর খুনি ভিক্টিমের পায়ের পাতা কেটে আলাদা করে দেয় শরীর থেকে, বোঝা যায় একই প্যাটার্নে সিরিয়াল কিলিং এর রূপ দেয়া হচ্ছে খুনগুলিকে। এদিকে এক নাম না জানা লেখকের কাছ থেকে একটি রুদ্ধশ্বাস রহস্যকাহিনীর পাণ্ডুলিপি পেয়ে সেটি বই হিসেবে ছেপে ছিলেন প্রকাশক মোফাজ্জল হোসেন।কী ছিল এই বইয়ে?
জানতে হলে ফিরে যেতে হবে চৌদ্দ বছর আগের তুষার আর তাদের বন্ধুদের মিলে করা অসাবধানতার বশে একটা হত্যাকান্ডে। আবু জামশেদ কি পারবে তাঁর সম্মান, তাঁর দলের সম্মান এবং সেই সাথে হোমিসাইডের ভবিষ্যৎ ধরে রাখতে? শেষমেষ কে সেই হত্যাকারী ? কেন সে হত্যা করতো ? তুষারকে কি বাঁচাতে পারলেন গোয়েন্দা আবু জামশেদ ?? আঁধারের যাত্রী আসলে কে ?? জানতে হলে পড়ে ফেলতেই হবে ঢাকা শহরের প্রেক্ষাপটে লেখা এই রহস্য উপন্যাস - আঁধারের যাত্রী । গল্পটি পড়তে পড়তে যখন পাঠক একটা ঘোরের মধ্যে চলে যাবে এবং বুঝতে পারবে কি হচ্ছে, বা হবে, ঠিক তখনই গল্পের টুইস্ট পাঠককে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে সব চিন্তাকে এলোমেলো করে দেবে। যেমন ভাবে হতবাক হয়েছেন গোয়েন্দা অফিসার আবু জামশেদ।
প্রেম ভালোবাসা, ঘৃনা, মমতা, রহস্য, কি নেই গল্পে? ৬৫ অধ্যায়ের গল্পটি শেষ হয়েছে ২৬৯ পৃষ্ঠাতে। চমৎকার সুখ পাঠ্য ছিলো সারা বইটি। অন্তত আমি হতাশ না। তবে আক্ষেপ আছে, সেটা হলো কিছু বিষয় আরো পরিষ্কার করে লেখতে পারতেন লেখক। যেমন আবু জামশেদের জীবনটা নিয়ে কিছুটা আলোচনা করার দরকার ছিলো।
লেখক "শরিফুল হাসান" খুব সুন্দর ভাবে গুছিয়ে লেখেছেন তাঁর এই "আঁধারের যাত্রী" নামক বইটি। বইটি ২০১৬ সালে 'বাতিঘর প্রকাশনী' থেকে বের হয়, মূদ্রিত মূল্য ২৫০ টাকা।