Jump to ratings and reviews
Rate this book

নীল পাহাড়

Rate this book
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। দেশ রাজনৈতিক উত্তেজনার ঝড় উঠার আগে ঝিমিয়ে পড়েছে, কিন্তু পাহাড়ে অবস্থা বিপরীত। ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে। খুন, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষন নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পাহাড়ী বাঙ্গালিদের দ্বন্দ্ব তখন চরমে। সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হত পাহাড়ে পোস্টিং দিয়ে। সে শাস্তি মৃত্যুদন্ডের চেয়ে কম ছিলো না। ম্যালেরিয়া কিংবা সাপের দংশন থেকে বেঁচে গেলেও উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো থেকে বাঁচার উপায় ছিলো না। অনেকে চাকরিই ছেড়ে দিত। ঠিক সেসময় অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্রের পোস্টিং হয় বান্দরবানের দুর্গম এলাকায়। তার জীবনে আবর্তিত হতে থাকে অনেক কাঙ্খিত এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা। সে মুখোমুখি হয় সত্যের, হিংসার, ঘৃনার, ভালোবাসার, মৃত্যুর এবং নীল পাহাড়ের।

112 pages, Hardcover

First published February 1, 2015

36 people are currently reading
881 people want to read

About the author

Obayed Haq

11 books285 followers
ওবায়েদ হকের জন্ম ১৯৮৬ সালে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকেন কুমিল্লায়।
প্রকাশিত বইসমূহ-
উপন্যাস-
তেইল্যাচোরা (২০১৪)
নীল পাহাড় (২০১৫)
জলেশ্বরী (২০১৬)
কাঙালসংঘ (২০২১)
আড়কাঠি (২০২৪)
জল নেই পাথর (২০২৪)
উন্মাদ আশ্রম (২০২৫)
গল্প সংকলন-
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা (২০১৪)
নেপথ্যে নিমকহারাম (২০১৭)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
678 (54%)
4 stars
433 (34%)
3 stars
100 (8%)
2 stars
26 (2%)
1 star
5 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 313 reviews
Profile Image for Arupratan.
235 reviews385 followers
September 21, 2024
শুধুমাত্র চেহারা এবং সংস্কৃতির ভিন্নতার জন্যে মঙ্গোলীয় বংশোদ্ভুত মানুষদের আমরা অন্যচোখে দেখি। ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের মানুষদের নিয়ে হাসিতামাশা কিংবা বাঁকা কথা কিংবা তাঁদের প্রতি অপমানজনক আচরণ দেখা কিংবা শোনার অভিজ্ঞতা আমাদের, অর্থাৎ তথাকথিত ভূমিপুত্রকন্যাদের সবারই কমবেশি আছে। নিজদেশে তাঁরা পরদেশি হয়ে আছেন। বাংলাদেশের বান্দরবান অঞ্চলের নামডাক অনেক শুনেছি, মূলত বেড়াবার জায়গা হিসেবে। কিন্তু এই অঞ্চলের "পাহাড়ি" মানুষদের সঙ্গে বাঙালি "ভূমিসন্তান"দের সংঘর্ষের বিষয়টা আমি জানতাম না। এই বইটাকে দুই তারা দিলাম শুধু এই বিষয়টা এবং "মারমা" জনগোষ্ঠীর ব্যাপারে আমাকে অবগত করবার জন্যে।

গুরুত্বপূর্ণ এই বিষয়কে কেন্দ্র করে লেখা উপন্যাসটির শুরু হয়েছিলো বেশ আশা জাগিয়ে। গদ্য বেশ ঝরঝরে লাগছিলো। লেখকের রসবোধটাও বেশ উপভোগ্য মনে হচ্ছিলো। তারপরেই শুরু হলো তামিল ব্লকবাস্টার সিনেমা। গল্পের স্বাদ আরো ঝাঁঝালো করতে অবধারিতভাবে ঢোকানো হয়েছে সকল মশলার শ্রেষ্ঠ মশলা— মুক্তিযুদ্ধের আবেগ। তাও আবার চড়া মাত্রায়। গল্পের যিনি নায়ক, তাঁর মধ্যে নায়কোচিত সমস্ত উত্তম গুণ প্রবেশ করিয়ে দিয়েছেন লেখক। ভাগ্যাহত অনাথ, কিন্তু লেখাপড়ায় মেধাবী। এমনিতে তাঁর কুসুমকোমল হৃদয়, কিন্তু যখন দরকার হয় তখন সংকল্পে ইস্পাতদৃঢ়। মারাত্মক সৎ। নিশ্চুপ প্রেমিক। পর্যাপ্ত চিকিৎসাব্যবস্থার সাহায্য ছাড়াই রাতারাতি তিনি সুস্থ করে তুলতে পারেন মৃতপ্রায় একজন সেরিব্রাল ম্যালেরিয়ার রোগিকে। নায়কের অনাথ হওয়ার কাহিনিটিও (এবং সেই কাহিনির পরিণতি) এতোটাই নাটকীয় যে, এরকম কাহিনি আজকাল বাজারি বাংলা সিনেমার স্ক্রিপ্টলেখকরাও লেখা ছেড়ে দিয়েছেন।

মেলোড্রামার রসে জবজবে করে চোবানো অবিশ্বাস্য ঘটনাসমৃদ্ধ এই উপন্যাসটা পড়তে পড়তে খুব আফসোস হচ্ছিলো আমার। শুধুমাত্র পাঠকপ্রিয়তা পাওয়ার লোভে এমন একটি সিরিয়াস বিষয় নিয়ে কেমন ছেলেখেলা করলেন লেখক। উপন্যাসটা পড়া শেষ করে অনুভব করলাম, বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলের অশান্তির কার্যকারণ বিষয়ে খুব কম তথ্যই জানতে পেরেছি আমি। লাভের মধ্যে এটুকুই, মাথার মধ্যে ঢুকে রইলো একটা উদ্ভট আজগুবি আরব্যরজনীর গল্প।
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
April 4, 2024
প্রতিটা বাক্য যখন একেকটা অনুভূতির জন্ম দেওয়ার ক্ষমতা রাখে, সেই বই মনের ভেতর কতটা আবেগ তৈরী করে তা ভাষায় প্রকাশ করার মত ক্ষমতা আমার মত মানুষের নেই।
❝ পাহাড়ের সেই বালকের মতো তার পেট পুরে। মাচাং ঘরের পাশে ছোট পাহাড়টির জন্য, কাজচাই-এর জন্য, উথাই খায়াচিং-এর জন্য, ক্রাসিমার জন্য। সব ছেড়ে আবার ফিরতে ইচ্ছা করে পাহাড়ে, সে শুধু অপেক্ষা করে একটা আহ্বানের। ❞
পড়তে গিয়ে যখন মার্কার নিয়ে পছন্দের কোটেশন গুলো দাগানোর জন্য বসেছিলাম তখন দেখলাম আমার মার্কারের কালি এর জন্য যথেষ্ট না। বই শেষে হঠাৎ এইটাই মনে হলো, ভাজ্ঞিস বই টা দাগাই নি। দাগালে পুরো বই এর কোনো লাইন ই তো বাদ দেওয়া যেতো না।

❝ নীল পাহাড় উপন্যাসটিকে কালজয়ী সাহিত্য বলা যাবে কী না এমন তর্কে যাবনা। কিন্তু হলফ করে বলতে পারি, ওবায়েদ হকের কাছ থেকে কালজয়ী সাহিত্য আশা করা যায় ❞
প্রায় এক বছর আগে “নীল পাহাড়ের” রিভিউ দিয়েছিলেন সু লেখক জামশেদুর রহমান ভাই।

আসলেই তর্কে যাব না, অপেক্ষায় থাকব। একদিন হয়তো ঠিকই দেখব “নীল পাহাড়” ঠিকই কালজয়ী সাহিত্যে পরিনত হয়েছে৷
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,956 followers
March 21, 2016
খুব যেতে ইচ্ছে করছে পাহাড়ি এলাকায় । একটা ভালো লাগার কাজ করে আমরা তৃপ্তি নিয়ে বসে বসে ভাবিনা? এমুহূর্তে আমার ও সেরকমই অনুভূতি হচ্ছে । একটা ভালো বই শেষ করার ফল । এখনও আবেশ থেকে বের হতে পারেনি । অয়াধারণ লেখনী । আমি অত্যন্ত সাধারণ একজন পাঠক । খুব সহজেই মুগ্ধ হয়ে যাই । এটাই ভালো লাগে । কারণ অত বাছ-বিচার কাটা-কুটি করে পড়া আমার ধাতে সয় না ।
বইটা সন্ধ্যার দিকে ধরেছিলাম । আর সেই যে আটকা পড়েছিলাম লেখনীর জালে । এখন মুক্ত হলাম । বইটাকে কোন জনরায় ফেলবো তা অনেকক্ষণ ভেবেও বুঝতে পারিনি । জীবনধর্মীই বলা যায় । প্রেক্ষাপট আসির দশকের পাহাড়ি এলাকা । কাহিনী আবর্তিত হয়েছে এক হিন্দু যুবক ডাক্তারকে ঘিরে । লেখকের স্বার্থকতা কিসে? পাঠকেরা যদি একাত্ম হতে পারে তার বর্ণিত চরিত্রদের সাথে , হাসতে পারে তাদের আনন্দে কিংবা নিজের অজান্তেই যদি চোখের কোণটা ভিজে উঠে পড়তে পড়তে তবেই না তিনি সফল ।
কারো ছায়ামুক্ত, নিজস্ব ভঙ্গিমার বর্ণনা 'নীল পাহাড়'কে আরো অনবদ্য করে তুলেছে । ঘটনার বাঁকে বাঁকে তাও আমিও বাক নিচ্ছিলাম । আর চরিত্রগুলোর মধ্যে দিয়ে লেখক যেরকম বাস্তব জীবনদর্শনের বর্ণনা দিচ্ছিলেন সেটাও ভালো লাগছিলো । লেখককে ধন্যবাদ ।
একটি কথা না বললেই নয়, এরকম একটি বই কিভাবে আউট অফ প্রিন্ট হয় আমার মাথায় ঢোকেনা । তাহলে আমরা কি পড়ছি ইদানীং? প্রকাশকেরা কি মাথায় রেখে বই ছাপাচ্ছেন এই প্রশ্নটা উঠেই যায় ।
Profile Image for Md. Al Fidah.
Author 126 books549 followers
March 10, 2016
অসাধারণ লেখনী, সিম্পলি অসাধারণ। সোসাল মিডিয়া আর নিজের ঢাকঢোল নিজে পেটানোর যুগ। সেযুগে এসব না করলে যে লাইম লাইটে আসার যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও কেউ আসে না, তার মনে হয় উৎকৃষ্ট প্রমাণ ওবায়েদ হক। নাহলে এমন অসাধারণ বই মার্কেট আউট বা আউট অফ প্রিন্ট হয় কিভাবে?

অসাধারণ কেন? আসলেই তো, একটা বইকে কখন অসাধারণ বলা যায়? যখন সেটা মন ছুয়ে যেতে পারে? যখন সেই বই এর চরিত্রগুলো আপনার লোক বলে মনে হয়? যখন তাদের হাসিতে হাসি, তাদের কান্নায় কান্না আসে? যখন পাঠক বুঝতে পারে পরিসমাপ্তিতে বিচ্ছেদ হলে অসাধারণ একটা বই হবে, কিন্তু চরিত্রগুলোকে এতটাই ভালোবেসে ফেলে যে মনে মনে বলে বই চুলায় যাক-বিচ্ছেদ চাই না? নাকি যখন লেখনী হয় চুম্বকের মতো? প্লট যেখানে গৌণ হয়ে যায়, লেখনীই হয় আসল?

অন্তত আমার বিচারে অসাধারণ হবার জন্য দরকার এই বৈশিষ্ট্যগুলোই আর প্রতিটা...

পুরো বইটা এত সুন্দর গতিতে এগিয়েছে যে, লেখক মাঝে মাঝে গল্পের গতির রাশ টেনে ধরেছেন তা টের পাওয়া যায়নি। সব মিলিয়ে অসাধারণ।

বয়স বাড়ার কারণেই হোক, আর পেশাগত কারণেই হোক বই পড়ে আজকাল মন দ্রবীভুত হয় কম। চোখে কী যেন পড়েছে, তাও খুব একটা বলা হয় না। তবে বয়স আরেকটু কম হলে হয়তো....

'পাহাড়ের সেই বালকের মতো তার পেট পুরে। মাচাং ঘরের পাশে ছোট পাহাড়টির জন্য, কাজচাই-এর জন্য, উথাই খায়াচিং-এর জন্য, ক্রাসিমার জন্য। সব ছেড়ে আবার ফিরতে ইচ্ছা করে পাহাড়ে, সে শুধু অপেক্ষা করে একটা আহ্বানের।'
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
July 22, 2025
‘তুমি বলেছিলে, মানুষের মৃত্যুতে ডাক্তাররা বিচলিত হয় না। কথাটা ঠিক নয়। আমরা বিচলিত হ‌ই কিন্তু প্রকাশ করতে পারি না।’

বাইরের দিক থেকে আমরা অনেকেই ডাক্তারদের আবেগহীন মনে করি। আমরা বুঝতে পারি না, তাদের অনুভূতি আমাদের চ��য়েও প্রবল। সেটা কতটা? ... এই উপন্যাসটি ভীষণ ভালো লাগার একটি কারণ– একজন ডাক্তারের পাহাড় অনুভবের গল্প এটি; পাহাড়ের বুকে মায়ের বুক খুঁজে প��ওয়ার গল্প।

▪️▪️▪️

পড়ার সময় মনে হচ্ছিল, কত কত কথা বলব এই ব‌ই নিয়ে। এখন কিছুই লিখতে পারছি না। শুধু চোখে ভাসছে– একটা বাচ্চা ছেলে কী গভীর আকুতিতে মা খুঁজে বেড়াচ্ছে, স্লেটে তার‌ই লেখা মায়ের নামটি তার চোখে কী মায়াময় দেখাচ্ছে! কত নিপুণভাবে সে মা-বাবার নাম লিখছে… বিশ্বাস করুন, ব‌ইয়ের এই অংশে আপনি না কেঁদে পারবেন না। মনে হবে, কী দরকার ছিল লেখকের এত নিষ্ঠুর হ‌ওয়ার?

তবে ঔপন্যাসিক শুধু কাঁদিয়েই গেছেন, তা না। লেখাটার আরো একটি উল্লেখযোগ্য দিক হলো, লেখকের রুচিশীল রসবোধ। কান্না, মন খারাপের মাঝেই লেখক বেশকিছু লাইন পরপর এমন হিউমার রেখেছেন, হো হো করে হেসে উঠতেই হয়–
… ভেতরে বিশাল বড় এক অজগর সাপ কুণ্ডলী পাকিয়ে নিদ্রা যাচ্ছিল। কিন্তু তাদের অযাচিত আগমনে সাপটির নিদ্রায় ব্যাঘাত ঘটেছে। গলা উঁচিয়ে তার বিরক্তি জানান দিয়ে অজগর সাপটি মানিকের মতো অনাথকেও তার বাবার কথা মনে করিয়ে দিল।(!)

শুরুতে ডাক্তারের ব্যাপারে যেমন বলেছিলাম, কথাটা পাহাড়ের বেলায়‌ও সত্যি। পাহাড়কে বাইরে থেকে যেমন দেখি, আদতে তার বুকে কেমন হয়, কী ঘটে তার কতটুকুই আমরা জানি? সে যাদের আশ্রয় দেয়, তার মধ্যে কেউ কি তার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে না?

গল্পটা পড়তে পড়তে আমি মানিক আর পাহাড়কে এক করে ফেলছিলাম– পাহাড়ের দুঃখে কষ্ট হচ্ছিল, মানিকের একাকিত্বেও ইচ্ছে করছিল বুকের সব মমতা উজাড় করে দিই...
–আপনি সব সময়‌ই একা একা জোছনা দেখেন? কোনো সঙ্গী নেই আপনার? আমি বাবার সাথে দেখতাম।
–আমি তো অনাথ, কোনো আপনজন নেই, সঙ্গী নেই।
–কেউ আপনাকে আপন করতে চায়নি?
–জানি না কিংবা বুঝিনি, আমি তখন আমাকে খুঁজছিলাম।

যে ভালোবাসা আমরা হাতড়ে মরি, যাদের আমরা খুঁজে ফিরি– তারা যদি জানত আমরা শুধু একটি আহ্বানের অপেক্ষায়!

এই উপন্যাসটা যদি বান্দরবানের‌ই কোনো পাহাড়ে বসে পড়তে পারতাম, বোধহয় আরও শান্তি পেতাম। সেরকম কেউ আছেন?
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
December 20, 2020
"কী আছে ঝোপের আড়ালে? তলুঃ নাকি শূকর? তলুঃতে ভয় নেই মানিকের, সেই জঙ্গল মানুষের আগ্রহ শুধু কুমারী মেয়েতে, সে তা নয়। ঈশ্বর তাকে এই কৃপাটুকু করেছেন।"
ডা. মানিক মিত্রকে ঈশ্বর কৃপা করলেও শহুরে তলুঃ ডা. সোবহান তাকে খুব একটা কৃপা করে নি। ডা. সোবহান একটি বাচ্চা মেয়েকে খুব বাজে ভাবে এক্সামিন করায় মানিক কর্তৃপক্ষের কাছে অভিযোগপত্র জমা দেয়। যা হওয়ার তাই হয়! ক্ষমতাশীলদের তখন একটাই কাজ মানিকের চাকরি নট করা কিংবা তাকে পাহাড়ে বদলি করে দেয়া। কর্তৃপক্ষ তার উপর একটু কৃপা করেছিল; চাকরি না খেয়ে বান্দরবানের থানচি উপজেলার ইউনিয়ন সাবসেন্টারে পাঠিয়ে দেয় তাকে যার ফলে সে জঙ্গলে ঘুরাঘুরি করে তলুঃর কথা চিন্তা করতে পারছে।

মানিক বড় হয়েছে ঢাকার অনাথ আশ্রমে। তাই এই ঢাকা ছেড়ে বান্দরবান যাওয়ার ব্যাপারে তার তেমন কোনো পিছুটান ছিল না। পাহাড়ে পা দিয়ে পাহাড়ের মোহনীয় সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে যায় মানিক; ছোট ছোট ঘরগুলোতে বাস করা মানুষের জীবনযাত্রার ব্যাপারে ভাবে সে, আগ্রহবোধ করে। তখনও সে জানত না সবাইকে নিজের উদরে স্থান দেয়া এই পাহাড় তার খাঁজে খাঁজে কত হিংস্রতা লুকিয়ে রেখেছে! আশির দশকের পাহাড়! খুন, গুম, ধর্ষণ, বিভিন্ন সংগঠনের হামলা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা-হাঙ্গামা সেখানকার সাধারণ ব্যাপার।


সাধারণ ভাবেই মানিকের দিন গুজরান হতে থাকে। এর মাঝে একবার হাঙ্গামাও হয়ে যায়, এক বন কর্মকর্তাকে হত্যা করা হয়, কারা যেন পাহাড়িদের বাড়ি ঘর পুড়িয়ে দিয়ে যায়। এই সব চলাকালীন সময়ে ঢাকার অনাথ আশ্রম থেকে চিঠি আসে, চিঠি পড়ে মানিকের চারপাশ এলোমেলো হয়ে যায়। সে ফেরার জন্য রওনা করলে আরেক রহস্যের সম্মুখীন হয়।

একটা পুঁচকে বইতে এত কাহিনীর ফ্লো সুন্দরভাবে দেখানোটা সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। সুন্দর, সহজ এবং সাবলীল বর্ণনা-
"থানচিতে যখন পৌঁছাল তখন সূর্যটা দুপুরের অহংকার ছেড়ে বেশ বিনয়ী হয়ে গেছে। একটু লাল রং ধরেছে লজ্জায়।"

জলেশ্বরী বইয়ের রিভিউ দিতে গিয়ে বর্ণনার ব্যাপারে আমি বলেছিলাম সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস। একদম! বর্ণনার আধিক্য নেই। যতটুকু আছে তাতে জটিলতা নেই, সরলতাই সুন্দর। তবে বইটা আরেকটু বড় হলে মন্দ হতো না বরং আরও ভালো হতো।

ওবায়েদ হকের নাম শুনেছিলাম এই বইয়ের মাধ্যমেই। অনেক প্রশংসাও শুনেছিলাম। তখন সিদ্ধান্ত নেই আগে অন্য বইগুলো পড়ব। আমার অনেক সময় একটা হালকা ভয় হয় যদি সবচেয়ে সুন্দর বইটা আগে পড়ে ফেলি আর অন্যান্য সুন্দর বইগুলো যদি পরে ফিকে হয়ে যায়!!? যার কারণে নীল পাহাড়ের মাধ্যমে পরিচিত হয়েও এটা সবার শেষে পড়া। কিন্তু আমি অবাক হয়ে রইলাম কেমন করে জানি সব বই-ই ভালো লেগে গেল ^_^

বইয়ের জন্য ৪ তারা। আরেকটি তারা এই অন্তর্মুখী লেখকের জন্য যিনি নিজের অজান্তেই একজন সাধারণ পাঠককে অতিরিক্ত খুশি করে দিয়েছেন ^_^

~ ২০ ডিসেম্বর, ২০২০
Profile Image for Tazbeea Oushneek.
156 reviews53 followers
September 20, 2021
পাহাড় আমার একদমই পছন্দ না। একদম না। কেমন যেন মনে হয় অনেক কষ্ট লুকিয়ে রাখে পাহাড়। পাহাড়ের নাকি লুকানো কান্না আছে। সেই কান্না আসলে কী তার সম্পর্কে কোন ধারণাই নেই। এই বইটাতে আসলে সেই কান্নার কাছাকাছি কিছু আছে কিনা তাও জানিনা। কিন্তু বইয়ের প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত প্রতিটা শব্দ অনুভব করছিলাম। ১২৮ পৃষ্ঠার মধ্যে থাকা প্রত্যেকটা মানুষ আপন হয়ে গেছে। তাদের কান্না, হাসি সবকিছু আপন হয়ে গেছে। এত অসাধারণ লেখা শেষ কবে পড়েছিলাম আমার মনে নেই।
Profile Image for Manzila.
166 reviews159 followers
February 13, 2022
লেখার ভাষা নিসন্দেহে খুব সুন্দর। জায়গায় জায়গায় এতো সুন্দর উপমা ব্যবহার করেছেন বা একেকটা দৃশ্যের এতো ভালো বর্ণনা রয়েছে যার প্রসংশা না করে পারছি না। কোন কোন পাতায় তো মনে হয়েছে প্রথিতযশা কোন লেখকের লেখা পড়ছি।

তবে উপন্যাসের প্লট কী যে দূর্বল! প্রথম ৪০-৫০ পেইজ পর্যন্ত আমার কোন অভিযোগ ছিল না। তারপর বানিজ্যিক সিনেমার কাহিনী শুরু হয়ে গেল। নায়ক, নায়িকা, ভিলেন, একদল ভালো লোক, একদল খারাপ লোক আর কিছু পার্শ্ব চরিত্র নিয়ে পাহাড়ের রাজনীতি - এই ছিল যেন লেখকের রেসিপি!

এতো রূঢ় ভাবে লেখকের সমালোচনা করার প্রধান কারন হল, ভালো গল্পের চেয়ে ভালো করে গল্প বলার দক্ষতাই বরং আজকাল যারা লেখেন তাদের বেশির ভাগের থাকে না। এই লেখক গল্প চমৎকার বলতে জানেন কিন্তু তার গল্পটাই তেমন ভালো না। এবং এজন্যই উনার ব্যাপারে আমি আশাবাদী, অন্য যে বইগুলো এখনও পড়িনি বা আগামীতে হয়ত খুব ভালো ভালো লেখা উনার কলমে পেতে যাচ্ছি।
Profile Image for Harun Ahmed.
1,646 reviews418 followers
April 28, 2024
"জলেশ্বরী"র পর এই বই পড়ে ওবায়েদ হক আমার প্রিয় লেখকদের কাতারে চলে এলেন। সবারই পড়া উচিত।

(২০২১)
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
April 11, 2022
আমার জীবনে দেখা সবচেয়ে সুন্দর নদী হলো সাঙ্গু নদী। পাহাড়ের মধ্যে দিয়ে একেবেকে গেছে নদীটা। হাজার বছরের পুরোনো সব বিশাল বিশাল পাহাড়ের মধ্যে নদীর উপর নৌকা দিয়ে যখন যাচ্ছিলাম তখন নিজেকে যতটা ক্ষুদ্র মনে হয়েছিলো জীবনে কখনো নিজেকে এতটা ক্ষুদ্র মনে হয়নি। খুব ভোরে একবার নৌকা দিয়ে এ নদী দিয়ে থানচি আসতেছিলাম, নদীর পানিকে ছুঁয়ে যাওয়া মেঘের যে সৌন্দর্য সেদিন দেখেছিলাম, সে ��ৌন্দর্য দেখে জীবনে বেচে থাকার তৃপ্তি কিছুটা হলেও পূর্ণতা পেয়েছে। বইয়ের কথা লিখতে এসে নিজের কথা লিখা শুরু করলাম, কারণ বইটা সাঙ্গু নদী আর এ নদীকে ঘিরে গ্রাম নিয়ে লেখা। বইয়ের কথা লিখা যাক।
বইটার মাঝে লেখক দুটি দিক দেখানোর চেষ্টা করেছেন বলে আমার মনে হয়েছে।
১. পাহাড়ী মানুষদের অবস্থা(সেই সময়ে) এবং পাহাড়ী মানুষদের সাথে বাংলাদেশের মানুষদের যে বিরোধ তা ফুটিয়ে তুলেছেন। তা এখনো কিছু আছে তবে সেটা অনেকটাই কমে গেছে বলে আমার ধারণা।
২. একজন একাকী এবং নিঃসঙ্গ মানুষের জীবনের গল্প।
কিছু মানুষ টাকার ঐশ্বর্যে বেড়ে ওঠে, কিছু মানুষ ভালোবাসার ঐশ্বর্যে বেড়ে ওঠে, কিছু মানুষ অভালবাসায় বেড়ে ওঠে, আবার কিছু মানুষ শূন্যতায় বেড়ে ওঠে। মানুষের এই বেড়ে ওঠা তার পরবর্তী জীবনের উপর খুব বড়ো প্রভাব ফেলে। খুব ভালোবাসায় বড়ো হওয়া কিছু মানুষ তার চারপাশের সকলকে ভালোবাসা দিয়ে পূর্ণ করে দিতে চায়, আবার কেউ কেউ আজীবন ভালোবাসা পাওয়ার অভ্যাসটা রেখে দেয়, তারা শুধু ভালোবাসা পেতেই চায়। আবার খুব শূণ্যতায় বড় হওয়া কিছু মানুষ বড়ো হয়ে চায় তার চারপাশের সব মানুষের শূণ্যতা দূর করতে আবার কিছু মানুষ তার শূণ্যতাকে আগলে ধরে বাচতে চায় আজীবন।
গল্পের নায়ক মানিক শূণ্যতা নিয়ে বেড়ে ওঠে এবং গল্পের শেষ অব্দি তার জীবনে শূণ্যতার সমাপ্তি আর হয় না। সে মনে প্রাণে তার এই শূণ্যতা পূর্ণ করতে চাইলেও সে পেড়ে ওঠে না। তার চারপাশের সকল মানুষই তার খুব কাছে থেকেও দূরত্ব নিয়ে থাকে। একটা বায়বীয় দূরত্ব তাকে সব সময় তার চারপাশের মানুষদের থেকে দূরে রাখে।
গল্পের ভালো দিকঃ মানিক চরিত্র খুব সুন্দর ভাবে লেখক গড়ে তুলেছেন। মাঝে মাঝে লেখক এতো সুন্দর ভাবে কিছু জিনিসের বর্ণনা দিয়েছেন যে কয়েকবার সে লাইনগুলো পড়তে বাধ্য হয়েছি।
যা ভালো লাগেনিঃ কাহিনী কেমন নাটকীয় লাগলো, সিনেমা সিনেমা টাইপ। মনে হলো যেনো সিনেমার জন্য গল্পটা লেখা। নাটকীয়তা আরেকটু কম আনতে পারতো। হতে পারে অনেকের কাছে এই নাটকীয়তাই খুব ভালো লাগবে।
Profile Image for মাশুদুল Haque.
Author 19 books1,008 followers
March 30, 2016
বেশ ভালো, এটা পড়া ছিল কিছুটা আবিষ্কার এর মত। নতুন ভাল লেখক আবিষ্কার সবসময়ই আনন্দের। নামকরন নীল পাহাড় হওয়ায় এটাকে থ্রিলার উপন্যাসও বলা চলে। লেখকের জন্য অনেক শুভ কামনা।
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
October 12, 2022
লেখকের বেশ কয়েকটা বই কিনে রেখেছি কয়েকমাস হলো। সময়ের সাথে সমন্বয় হওয়ার অভাবে পড়া হয়নি। এটাই শুধু কারন না। আরও একটা কারন লেখকের প্রশংসা। নতুন লেখক হিসেবে কাওকে নিরাশ করবেননা এরকম লেখা উনার এটা সেটা অনেক কিছু। তাই ভেবে রেখেছিলাম ভালো একটা সময় দেখে পড়বো। কারন নতুন লেখকদের তড়িঘড়ি করার কথাও অনেক শুনেছি, প্লটের গোল মিল পাকায়ে ফেলার কথাও। তাই এই লেখকের প্রতি আলাদা একটা টান ছিলো।  ভালো সময় খুব কম আসে মানুষের জিবনে। তাই ভালো সময়ের অপেক্ষা বাদ রেখে পড়ে ফেললাম।

''কারো বীর্যে মানুষ জারজ হয়ে যায় না, পিতার পশুত্বে তুমি পশু হবে না। মানুষ হওয়ার জন্য পিতা লাগে না, মন লাগে, মনুষত্ব লাগে।''


সাদা মাটা সুশ্রী একটা বই। সাদা মাটা বলতে গভীরতা নেই বা বাক্যের মাধুর্য নেই এমন না। যথেষ্ট পরিমানে সব কিছুই আছে। সাদামাটা কারন, অকারনের কোনো বাক্য নেই। গল্পের প্রয়োজনে যতটুকু দরকার ততোটুকুই। যদিও পড়ার সময় মনে হচ্ছিলো আরও কয়েক ডজন পেজ বেশি হলে খারাপ হতো না।

গল্প আশির দশক ও তার পরবর্তী সময়ের। যুদ্ধ শেষ। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর তান্ডব, পশুত্ব শেষ। এক নির্মল বাংলাদেশ। স্বাধীন হবার পরে নির্মল বাংলাদেশ পাবারই প্রয়াস ছিলো কিন্তু আসলেই কতটা নির্মল ছিলো বাংলাদেশ বা এখোনি বা কতোটা আছে!

গল্পের শুরুতেই যে সাসপেন্সের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন লেখক সেই এক সাসপেন্সই আমাকে আর বইটা রাখতে দেয়নি। গল্পটা "মানিক" কে ঘিরে। গল্পটা লুকিয়ে থাকা মির্জফরদের ঘিরে। গল্পটা পাহাড় আর পাহাড়িদের ঘিরে। না এটা রাজনৈতিক গল্প না। এই গল্প পাহাড়ে বসবাসকারী মানুষদের ঘিরে। যেমনটা লেখক বলেছেন, "আমার শৈশব কেটেছে চাকমাদের সাথে। তারা পাহাড় থেকে বিতাড়িত হয়ে আমাদের শহরে আশ্রয় নিয়েছিলো। এই উপন্যাসটাকে রাজনৈতিক উপন্যাস বলা ভুল হবে, আর ঐতিহাসিক উপন্যাস বললে মহাভুল হবে"

'আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। দেশ রাজনৈতিক উত্তেজনার ঝড় উঠার আগে ঝিমিয়ে পড়েছে, কিন্তু পাহাড়ে অবস্থার বিপরীত। ভয়, আতঙ্ক, উৎকণ্ঠা বিরাজ করছে সেখানে। খুন, হত্যা, অপহরণ, ধর্ষণ নিত্যনৈমিত্তিক ঘটনা। পাহাড়ী বাঙ্গালীদের দ্বন্দ্ব তখন চরমে। সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি। দেয়া হতো পাহাড়ে পোস্টিং দিয়ে। সে শাস্তি মৃত্যুদন্ডের চেয়ে কম ছিলো না। ম্যালেরিয়া কিংবা সাপের দংশন থেকে বেঁচে গেলেও উগ্রপন্থী সংগঠনগুলো থেকে বাঁচার উপায় ছিলো না। অনেকে চাকরিই ছেড়ে দিত। ঠিক সেসময় অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্রের পোস্টিং হয় বান্দরবানের দুর্গম এলাকায় । তার জীবনে আবর্তিত হতে থাকে অনেক কাঙ্ক্ষিত এবং অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। সে মুখোমুখি হয় সত্যের, হিংসার, ঘৃণার, ভালোবাসার, মৃত্যুর এবং নীল পাহাড়ের।'

মানিক মিত্রর বেড়া ওঠা আশ্রমে। পিতার পশুত্বে যে পশু হয়নি। বরং হয়েছে ডাক্তার। ডাঃ সোবহানের ধর্ষনের পর্যায়ের পাপকে যে সর্বপ্রথম খোলাসা করে। পরিনতিতে পায় পাহাড়ে বদলি হবার শাস্তি। পিছুটান মানিকের ছিলোনা। স্লেটে আর পেন্সিলে পিতা-মাতার অভাব পুরন করেছে সারাজিবন। আদর, স্নেহ, ভালোবাসা কোনোটাই পাবার ভাগ্য তার হয়নি। তাই পাহাড়ে যাবার ব্যাপারে কোনো পিছুটান তার ছিলোনা। থাকলে ছিলো কিছু ভয়। সে ভয়ও উবে গিয়েছিলো পাহাড়ের সৌন্দর্যের কাছে। কী করে ঢাকার সমস্ত স্মৃতি মুছে গিয়েছিলো সেটাও টের পেয়েছিলোনা কয়েকমাস। তারপরই পরিচয় পাহাড়িদের সাথে আর আবিস্কার নানান ঘটনার। 

আমি বলতে শুনেছি মুসলমানদের ছোট করে দেখানো হয়েছে আর হিন্দুদের বড় করে দেখানো হয়েছে। রাজাকার কী শুধু মুসলমানরাই ছিলো? হিন্দুদের কী কেউ ছিলোনা?  এ ব্যাপারে আমার ছোট্ট একটা লজিক আছে। যে দেশে ৯৯% ভাগ মুসলমান থাকে সে দেশে পার্সেন্টেন্স হিসেবে বিবেচনা করলেও তো সব কিছুতেই মুসলমানরাই বেশি থাকবে। হোক সেটা ভালো কাজ বা খারাপ কাজ। ৯৯ জনের কাজের ভিড়ে একজনের নাম আর কতটা আলোকিত হবে? ভালো কাজের সব ক্রেডিট নিতে পারলে খারাপ কাজের নিতে সমস্যা কোথায়! পাশের হিন্দু রাষ্ট্রের দিকে তাকালে দেখা যায় তাদের ক্ষেত্রে হিন্দুদের অবদানই বেশি। খারাপ কাজের ক্ষেত্রেও আর ভালো কাজের ক্ষত্রেও।

লেখকের উপন্যাস লেখার চেষ্টা এটাই প্রথম। তারপরও এক মহুর্তের জন্যও মনে হবেনা এসবের কিছুই। নীল পাহাড় পড়ে মনে হলো লেখকের লিখতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। এমনিতেই সব কিছু ধরা দিয়ে দিয়েছে। কোহেরেন্স, কোহেসন, ডিকশন সবকিছু কত সাবলিল। পড়তে ধরলে ছাড়ার উপায় রাখবেনা। মানুষের প্রকৃতির বর্ননা, পাহাড়ের বর্ননা, নদীর বর্ননা, ভালোবাসার, ঘৃনার সবকিছুর বর্ননা লেখক নিপুন হাতে দিয়েছেন। বর্তমান সময়ের সাথে অতীত সময়ের বর্ননাকে মিশেছেন মাধুর্যতার সাথে। কার জন্য ঘৃনা জাগবে সে কথা না বলতে পারলেও পাহাড়ে যাবার লোভ যে জাগবেই জাগবে এটুকু নিঃসন্দেহে বলতে পারি।

বানানের ক্ষেত্রে বলতে গেলে মোস্টলি সব ঠিকঠাক ছিলো। শুধু "ড়" এর স্থানে "র" এর ব্যাবহার গুলো কটু লেগেছে চোখে। যেমনঃ মনে পরে (পড়ে), বিপর্যয়ের মুখে পরেছিলো (পড়েছিলো) এই জাতীয়।  বানান ভুলের কথা আমি বলিনা। এটাতে বললাম কারন শুরুতে লেখক বলেছেন দ্বিতীয় সংস্করণে তিনি বানান ঠিক করেছেন।

শেষে বলায় যায় ১-১.৫ ঘন্টার জার্নিটা মনোমুগ্ধকর ভাবে কেটেছে। ৫ এ ৫ পাবার যোগ্য একটা বই।

বইঃ নীল পাহাড়
লেখকঃ ওবায়েদ হক
Profile Image for Mahrufa Mery.
201 reviews115 followers
November 21, 2020
না পড়া ক্ল্যাসিক বইয়ের সংখ্যা এত বেশি যে, সমসাময়িক লেখকদের বই হাতে নিতে একধরনের স্কেপ্টিসিজম কাজ করে, মনে হয় যেন অযথা সময় নষ্ট হবে। এই কারনে আমাকে নাক উঁচু বলে আখ্যা দেয়া যায় কিন্তু গত ক’বছরে বই মেলা থেকে কেনা নবীন লেখকদের বইগুলো হতাশার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়ে আমার স্কেপ্টিসিজমে জলসিঞ্চন করে তাকে পাকাপোক্ত করেছে। এছাড়াও বইপ্রেমী মানুষজনের সঙ্গে আমার ওঠাবসা কম হওয়ায় নতুন লেখকের ভাল বইয়ের সাজেশন তেমন পাইনা। যাহোক, লেখক ওবায়েদ হকের খোজ প্রথম পাই বইপোকাদের আড্ডাখানা নামক ফেসবুক গ্রুপে। সেখানে লেখকের নীল পাহাড়, জলেশ্বরী, তেইল্লাচোরা প্রভৃতি বইয়ের আলোচনা দেখে আগ্রহ জেগে ওঠে। পরবর্তীতে একটি শাড়ি এবং কামরাঙা বোমা ও অন্যান্য গল্পের সংকলণ পড়ে ‘নীল পাহাড়’ বইটি কিনি।

একজন অনাথ হিন্দু ডাক্তার মানিক মিত্রের বদলী পাহাড়ে হবার পরে ঘটতে থাকা বিভিন্ন ঘটনাবলী এই উপন্যাসের উপজীব্য।গল্পটা পাহাড়ের, গল্পটা মানিকের নিজের একান্ত ও বটে। কাহিনী এবং বর্ণনা খুবই সবলীল, প্লট ছোট, চরিত্রের সংখ্যাও কম। এই ছোট প্লটকেই ভাল দক্ষতায় ১২৮ পৃষ্ঠায় গুছিয়ে এনেছেন লেখক, সুন্দর করেই উপন্যাসের সমাপ্তি টেনেছেন। উপন্যাসের বর্ণনা খুব মায়াময় এবং প্রচন্ড ইমোশনাল ধরনের লেখনি। ঘটনার পরম্পরা ও পরিনতি বেশ আইডিয়ালিস্টিক যেটা কিনা আমার রিয়ালিস্টিক মন মানতে একটু গাইগুই করলেও লেখার গুণে শেষমেষ মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। পাহাড়ের মানুষের আর্থ সামাজিক সংকট উঠে এসেছে লেখায়। সবমিলে বেশ ভাল লেগেছে উপন্যাসটা।
বাকি বইগুলো ও সময় করে পড়ে ফেলার আশা রাখি। বইটার প্রচ্ছদ আলাদা ভাবে উল্লেখ করার মত সুন্দর লেগেছে আমার কাছে। প্রচ্ছদ করেছে তৃত।

ভেবেছিলাম, লেখককে উতসাহমূলক একটি ইমেইল করব কিন্তু বইয়ের কোথাও লেখকের ইমেইল দেয়া নেই, নেই ছবি বা কোন পরিচিতি। এরপর মনে পড়লো উনার বইয়ের যত রিভিউ পড়েছি প্রায় সবখানেই উনাকে অন্তর্মুখি লেখক হিসেবে অভিহিত করা হয়েছে, সম্ভবত এই জন্যেই। আশা করি, তিনি এভাবেই ভাল লেখা উপহার দিতে থাকবেন আমাদেরকে। যাদের সমসাময়িক সাহিত্য/লেখা নিয়ে আগ্রহ রয়েছে পড়ে ফেলতে পারেন বইটা।
Profile Image for Nowrin Samrina Lily.
157 reviews15 followers
Read
March 24, 2022
পড়বোনা পড়বোনা করে ঠিকই পড়ে ফেললাম বইটা। ইচ্ছে করছে ছুটে চলে যাই ওই নীল পাহাড়ে।
উপহারে পেয়েছিলাম বইটা,কিন্তু যে দিয়েছিল সে আজ পাশে নেই। তাই পড়ে সুন্দর কোনো রিভিউ দেওয়ার মতো আমার কাছে ভাষা নেই।
লিলির মন ও ভালো নেই,ভালো থাকবেনা এই কয়দিন। আপাতত এই বই শেষ করে গুডরিডস এর মায়া কিছুদিনের জন্য মুলতবি রাখলাম। আবার যখন ফিরে আসবো, এই রিভিউ অবশ্যই এডিট করবো।
ভালো থাকুক এই উপহারদাতা।
Profile Image for Shamik.
216 reviews7 followers
February 28, 2020
কখনো এরকম হয়েছে, একটি বই বা তার লেখক সম্পর্কে কিচ্ছুটি না জেনে শুধু নিজের হাঞ্চের ওপর ভরসা করে কিনেছেন, তারপর দেখেছেন সেটা যাকে বলে 'অমূল্য রতন'? আমার জন্য এই বইটা একেবারে তাই।

গুডরিডসে এই বইটির দুটো আলাদা এন্ট্রি আছে। সম্ভবত ২০১৫ সালে বইটি প্রথম প্রকাশিত হয়েছিলো। ২০১৯-য়ে নতুন প্রচ্ছদ সমেত 'অরণ্যমন' একে আবার সামনে নিয়ে এসেছেন, আমার তরফ থেকে তাদের অনেক ধন্যবাদ। (বা হতে পারে এটি ভারতীয় সংস্করণ, এই তথ্যের ব্যাপারে আমি নিশ্চিত নই।) আমি এই নতুন ভার্সানটাই পড়েছি। সত্যি বলতে কি বইমেলায় বইটা হাতে নিয়ে যখন পাতা ওল্টাচ্ছিলাম, বিষয়বস্তুর চেয়ে এই প্রচ্ছদটাই আমাকে বেশি আকর্ষণ করে।


কাহিনী আমাদের প্রতিবেশী দেশের। কাহিনীর প্রোটাগনিস্ট মানিক মিত্র অনাথাশ্রমে বেড়ে ওঠা এক অত্যন্ত মেধাবী মানুষ, যে তার প্রতিভা আর কিছু সহৃদয় ব্যক্তির সাহায্যে এক চরিত্রবান ডাক্তার হয়ে ওঠে। মানিকের আপোষহীন মনোভাবের জন্য তাকে পানিশমেন্ট পোস্টিং হিসেবে বদলী করা হয় দুর্গম, বিপদসংকুল বান্দারবনে। সেখানকার প্রকৃতি, মানুষ, সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিবেশের সাথে মানিকের মানিয়ে নেওয়ার কাহিনীই 'নীল পাহাড়'। আর এর সাথেই জড়িয়ে আছে মানিকের আত্মানুসন্ধান, আত্মপরিচয় জানার আকুতি।


বইটা ভালো লাগার প্রথম কারণ ঝরঝরে ভাষা। তার সাথে খুব সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তোলা মানিকের চরিত্র। পাঠক খুব সহজেই তার সমব্যথী হয়ে যাবেন। একেবারে অজানা কিছু জায়গার খুব মনোগ্রাহী বর্ণনা আছে, খুবই পরিমিত ভাষায়। দেখনদারি ভাষার কারুকার্য বা প্রকৃতি নিয়ে অতি কবিত্ব এসব কিছুই এখানে নেই, কিন্তু পড়তেও বেশ লাগে। প্লটও বেশ বিশ্বাসযোগ্য, বিশেষ করে ক্লাইম্যাক্স প্রেডিক্টেবল হলেও একেবারেই মেলোড্রামাটিক নয়, যদিও সেটা হয়ে যাওয়ার মতো মশলা মজুতই ছিলো। আর 'নীল পাহাড়' সত্যিই কাহিনীর এক গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র।


অজানা লেখক বলেই বইটা শেষ করেই স্বাভাবিক অনুসন্ধিৎসাবশত শেষের ফ্ল্যাপে চলে গিয়ে এটা পেলাম..."বইয়ের শেষ পৃষ্ঠা উল্টিয়ে লেখকের পরিচয় পাওয়া সম্ভব নয়। লেখক যুবক নাকি বৃদ্ধ, শিক্ষিত নাকি অশিক্ষিত, ধনী নাকি দরিদ্র এগুলো অপ্রাসঙ্গিক। লেখকের পরিচয় পাওয়া যাবে প্রথম ও শেষ পৃষ্ঠার মাঝের পৃষ্ঠাগুলোতে। কালো কালো হরফের লেখাগুলোকে লেখক সন্তান মনে করেন, সন্তানের পিতা হিসেবেই তিনি পরিচিত হতে চান।"

এরকম লেখকের কলমে ফুল চন্দন পড়ুক। আরও আরও লেখা যেন পাই তাঁর থেকে।
Profile Image for Anika.
29 reviews42 followers
August 26, 2017
গল্পের প্লট ডেভেলপমেন্ট, ক্লাইমেক্স এবং সর্বশেষ যে ইতি টানা, সব মিলিয়ে খুবই পরিণত একটি বই। কিন্তু এত কিছু ভালর মধ্যেও যেটি প্রধানত দৃষ্টি আকর্ষণ করে তা হল ওবায়েদ হকের অনবদ্য লেখনী। এতটা পরিপক্ক উপস্থাপন, শব্দ চয়ন কোন নতুন লেখকের কাছে পাব এতটা আমি আশা করি নি।
গল্পটির শুরু বেশ সাধারণ। অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত না করা এক ডাক্তারকে নিয়েই কাহিনী আবর্তিত হচ্ছিল। মাঝ খান থেকে ফ্ল্যাশ ব্যাকের মত এসেছে মুক্তিযুদ্ধ। সেই ডাক্তার যখন পাহাড়ে গিয়ে পড়লেন সেই থেকেই আসল গল্পের শুরু। আমার পড়ার পরিধি বেশ কম দেখেই হয়তবা আদিবাসীদের সংগ্রাম এর ইতিহাস, বা কোন ডকুফিকশন আমার এর আগে কখন ও পড়া হয় নি। নির্মল পাহাড়ি আদিবাসীদের জীবন কিভাবে রাজনীতের মারপ্যাঁচে পড়ে ওলট পালট হয়ে গেল এবং কিভাবে শফিক আহমেদ এবং থুইনপ্রুর মত কিছু সুবিধাবাদি, লোভী মানুষ এই জটিল সময়টাকে আরো জটিল করে তোলে তা আমরা দেখতে পাই এই গল্পে। আমাদের আশেপাশে ঘুরে বেরানো মানুষ রুপী পিশাচদের প্রতিনিধিত্ব করার জন্য এই বইয়ে পাই বরকত আলীর মত চরিত্রকে ও।
পাহাড়ি আদিবাসী মানুষ গুলোর ঘুরে দাঁড়ানো দেখে যখনই মনে হয় একটি 'হ্যাপি এন্ডিং' তখনই ডা.মানিকের জীবনের চরম ট্র‍্যাজেডিই যেন শেষ পর্যন্ত উপন্যাস টির হাইলাইট হয়ে থাকে। সব শেষে উপন্যাসটি আমার মনে দাগ কাটে এক হতভাগ্য ডাক্তারের অস্তিত্ব খুঁজে পেয়ে আবার হারিয়ে ফেলার হাহাকারে ভরা এক গল্প হিসেবে। An extremely good read indeed.
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews79 followers
February 19, 2024
লেখকের বইগুলো আসলেই অসাধারণ, একটানা দু'টো বই পড়লাম এবং দু'টোই মন কেড়ে নিল।

এত্ত দারুণ লেখনী, বইটা শেষ না হওয়া পর্যন্ত একদম আটকে থাকতে হয়। সোসাল মিডিয়ার এই যুগে শুধুমাত্র লেখনীর কারণেই, নিজের কোন প্রকার প্রচারণা ছাড়া এইরকম পরিচিতি পাওয়া খুবই বিরল। ওবায়েদ হক সেটা সম্ভব করেছেন তার অসাধারণ লেখনীর কারণেই। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে সাধারণ লেখার মাঝেই এত অসাধারণত্ব। উনার বইটা পড়ার পর আবারো পাহাড়ে যেতে ইচ্ছে করছিল। চারপাশের সবকিছু এত সুন্দর ফুটিয়ে তুলতে পারে। উনার আরো বেশি লেখালেখি করা উচিৎ এবং সেই লেখাগুলো বই আকারে প্রকাশ পাওয়া উচিৎ, আমাদের মত পাঠকদের কথা চিন্তা করেই।😷
Profile Image for Ratul Ahmed.
43 reviews
May 7, 2021
ওবায়েদ হকের লেখনী বরাবরের মতোই মুগ্ধ করলো। এত চমৎকার লেখকের ভাষা! শুরু থেকেই সম্মোহীত করে রেখেছিলো, যেন মানিকের সাথে আমিও পাহাড়ে চলে গিয়েছিলাম। মাঝে দিয়ে কিছুটা ঝুলে গেলেও শেষটা এতই তৃপ্তি দিয়েছে যে ফুল মার্কস দিতে বাধ্য হলাম।
Profile Image for Moumita Hride.
108 reviews65 followers
July 10, 2017
আমি মনে করি গল্প এমন হওয়া উচিত যা পড়ার পর মনের উপর প্রভাব ফেলবে, দাগ কাটবে এবং আবারো ভাবাবে। ওবায়েদ হকের "নীল পাহাড়" এমনই একটা গল্প যা মনে দাগ কেটে যাবে পাঠকের। "নীল পাহাড়" গল্পটা, এক অনাথ ডাক্তার মানিকের যে সারা জীবন চেয়েছে একটু ভালোবাসা, একটু মমতা।তার ভাগ্য তাকে টেনে নিয়ে গেছে নীল পাহাড়ে। পাহাড় সবাইকে জায়গা দেয় না। পাহাড় যেমন মমতাময়ী, তেমনই হিংস্র। মানিক যখন পাহাড়ে গেছে তখন পাহাড়ে চলছিল দাঙ্গা, মারামারি। বাঙালীরা আর পাহাড়ীদের মধ্যে সেই দাঙ্গা রুপ নিয়েছে ভয়াবহ আকারে। কেউ কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। এমন সময় মানিক যেয়ে পরে নিরীহ পাহাড়িদের মাঝে.... তারা কি তাকে গ্রহন করবে? মানিকের দেখা হয় "ক্রাসিমা" নামের এক পাহাড়ী মেয়ের সাথে, যে তাকে ভালোবাসার মানে শেখায়। মানিক মুখোমুখি হয় নীল পাহাড়ের রহস্যের সাথে... কি এই রহস্য? এর সাথে কি জড়িত কোন স্বার্থানেশী মহল? মানিক কি আজীবন যা খুঁজে এসেছে তা পাবে এই জীবনে? এসব জানতে পড়তে হবে "নীল পাহাড়"।

ওবায়েদ হকের ভক্ত আমি তার "জ্বলেশরী" বইটা পড়েই হয়ে গিয়েছিলাম। এত ভালো লেখা বোধহয় অনেক দিন পড়ি নি। উনার সবচেয়ে যে দিকটা ভালো লাগে তা হল, ইতিসের কোন একটা সময়কালকে তুলে আনে গল্পের ভেতরে। তাই "নীল পাহাড়" টাও অসাধারন লেগেছে। উনার সেন্স অফ হিউমার, কমিক রিলিফ, শব্দ চয়ন খুব সুন্দর যা লেখাকে উপভোগ্য করে তোলে। বিশেষ করেরে, এই বইয়ের শেষ টা বেশ ভালো লেগেছে আমার। শেষটা হ্যাপি এন্ডিং হলেও বেশ নাটকিতা আছে।
সবশেষে বলব, অবশ্যই বইটা খুবই উপভোগ্য... :)
রেটিং : ৪.৫/৫
Profile Image for Turna Dass.
145 reviews
December 6, 2025
"মোর গাঁয়ের সীমানায় পাহাড়ের ওপারে,নিশীথ রাত্রির প্রতিধ্বনি শুনি।
প্রতিধ্বনি শুনি আমি- প্রতিধ্বনি শুনি।"

~~~
কথাসাহিত্যিক ওবায়েদ হকের সাহিত্যপ্রতিভার আলাপচারিতার খানিকটা গুঞ্জন গুডরিডসে আসার পরপরই শুনতে পেয়েছিলাম।সেই থেকে জন্ম নিল এক কৌতূহলী আগ্রহ-এরপর তার লেখা "নীল পাহাড়" পড়ার পর আমি এখানে।

বেজায় মনখারাপ নিয়ে একটু একলা নিরালায় বসে বইয়ের পাতায় পাতায় সেই অদ্ভুতুড়ে পাহাড়ি আখ্যান আস্বাদন করলাম।

বইয়ের লেখনী বেশ সুন্দর সাবলীল ধারায় বয়ে গেছে কাহিনীজুড়ে- ঠিক যেমন ভারাক্রান্ত পাহাড়ের বুকে স্বচ্ছ সাঙ্গু নদীর শান্ত-নির্মল স্রোত,যা মনে এক আলাদা প্রশান্তি এনে দেয়।এরপর ধীরে ধীরে ঢাকা অনাথ আশ্রমের জরাজীর্ণময় চার দেয়াল পেরিয়ে চলে যাই পাহাড়ের এক অদ্ভুত মায়াময় রাজ্যে।একদিকে যেমন প্রকৃতিদেবীর লীলাক্ষেত্রে অপার বিস্ময়ে পাহাড়ের চূড়ায় দাঁড়িয়ে এক স্নিগ্ধশীতল আবেশে মেঘেদের হাতছানি,অপরদিকে সেই পাহাড়ের বৃহৎ হৃদয়ে নিঃশব্দে বয়ে যাওয়া গভীর ক্ষতচিহ্ন।তাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে এক অনাথ--মানিক।পিতামাতার সেই অবিচ্ছেদ্য বন্ধনের এক শতছিন্ন টুকরো হাতে সে পাগলের মত হাতছানি দিয়ে খোঁজে; একাকীত্ব,বা দুর্ভাগ্যের অজুহাতে এক মমতামাখানো মায়ের পরশ।

সেই রেশ ধরে ক্যানভাসে আঁকা নীল পাহাড়ে ঠায় দাঁড়িয়ে রচনা করল এক ইতিহাস-রাজনীতি বা কূটনীতির সমান্তরালে......কি সে?

"জেগে ওঠা মানুষের হাজার চিৎকারে-
আকাশছোঁয়া অনেক কথার পাহাড় ভেঙে পড়ে।
মানবসাগরের কোলাহল শুনি।
নতুন দিনের যেন পদধ্বনি শুনি।
পদধ্বনি শুনি, পদধ্বনি শুনি।"

কিন্তু সমাপ্তিতে ক্রাসিমা আর মানিকের মধ্যে রহস্যজাল রেখে গেলেন......কি হল সেই নিরীহ চিঠিগুলোর?উত্তর জানা নেই।

(তবে পাহাড়ের তৎকালীন বিধ্বস্ত পরিস্থিতি নিয়ে কেমন যেন ঘন কুয়াশায় ঢাকা।তেমন গুরুত্বই বহন করতে পারেনি উপন্যাসে।বেশ মিসকনসেপশনে পড়ে গেলাম।)

সর্বোপরি রেটিং-৪/৫
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
May 4, 2022
রেটিং-৪.৫
এ বছরের পড়া অন‍্যতম সেরা বই,যখন পড়া শুরু করি তখন এতটাই মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ছিলাম শেষ করতে পারবো কিনা এটা নিয়ে সন্দেহ ছিল,এক পাতা পড়লে অপর পাতা আর টানত না চোখ ঝাপসা হয়ে যেত,পরেও অবশ্য ও চোখ আবার ও ঝাপসা হয়েছে কিন্তু সেটা ব‍্যক্তি আমি থেকে বইয়ের মানিকের জন্য বেশি হয়েছে,যে সারাজীবনই ভালোবাসার কাঙ্গাল,শব্দের মাকে অনুভব করতে এমন কোনো চেষ্টাই সে বাদ রাখেনি,জন্ম থেকেই এই একটা সম্পর্কের স্পর্শ পেতে যে এতটাই উতালা যে অনাথ আশ্রমের কার্তিকের সাথে নিজের ভাগের খাবার দিত শুধু মাত্র তার মাকে নিজের মা বলে ডাকতে,অনাথ কিন্তু অন‍্যায়ের সাথে আপোষহীন যখন সবাই প্রভাবশালী চরিত্রহীন ডাঃ এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে নারাজ সেই সময়ে তার ছোট্ট প্রতিবাদই ছিল বারুদ স্বরূপ, এরশাদের শাসনামলে তখন পাহাড় ছিল মৃত্যুপুরী আর সেইখানেই তাকে পাঠানো হয় প্রতিবাদ করার শাস্তি হিসেবে.এরপর পাহাড়,পাহাড়ী লোক আর ক্রিসিমা এই সব মিলিয়ে মানিকের জীবনের নতুন মোড় প্রতে‍্যকটা পাতাই মুগ্ধতার আবেশে আবিষ্ট করে রেখেছে, কিছু বই কখনও ভোলা যায় না মনের সাদা কাগজে তা অদৃশ্য কালি দিয়ে ঠিক লেখা থাকে.
Profile Image for Sarah Haque.
427 reviews105 followers
March 30, 2020
কবিত��র মত সু���্দর মনে হয় এটাকেই বলে। ছোট্ট একটা বই, সারাদিন ধরে একটু একটু করে পড়েছি। কখনো প্রচন্ড হাসি পায়, কখনো আবার অসম্ভব রাগ লাগে - প্রতিটা চরিত্র, তাদের অনুভূতি একেবারে জীবন্ত হয়ে উঠে এসেছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত গল্পে কোথাও এতটুকুও একঘেয়েমি নেই।
Profile Image for Shaid Zaman.
290 reviews47 followers
February 14, 2016
কিছু কিছু সময় লেখার মতো কোন বাক্য গঠন করা খুব কঠিন হয়ে ওঠে। ওবায়েদ হকের নীল পাহাড় উপন্যাসটা পড়ার পরে এখন আমার ঠিক সেই অবস্থাটাই হয়েছে। দুদিন আগেও ওবায়েদ হক নামে যে কোন লেখক আছে সেটাই জানা ছিল না, আর আজ তার বই পড়া শেষ করে বিস্মিত হয়ে বসে থেকেছি অনেকক্ষণ।

নীল পাহাড় উপন্যাসটি একজন বাঙালী ডাক্তার কে নিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে, কখনো ঢাকার রাস্তায়, ��োকাল বাসে আবার কখনো বান্দরবনের পাহাড়ে। লেখক আশির দশকের প্রেক্ষাপট তুলে ধরলেও বর্তমান অবস্থা যে খুব একটা পরিবর্তন হয়েছে বলা যায় না। সে আমলেও যেমন সৎ সরকারী চাকুরীজীবীদের শাস্তি দেওয়া হতো পাহাড়ে বদলী করে, এখনো তেমনটা হয় প্রায় সময়েই। ড. মানিক কে তেমনি চলে যেতে হয় বান্দরবনের বলিপাড়ায়। এতিম খানায় মানুষ হওয়া একাকি মানিক পাহাড়কে ভালবেসে ফেলে। ভালবেসে ফেলে পাহাড়িদের।

কিন্তু সময় তো ভালো যায় না সবার। যায়নি মানিকেরও। বাঙালী সেটলার আর শান্তি বাহিনীর মধ্যে যে উত্তেজনা তখন বিরাজ করছিল তার আচ এসে পরে মানিকের উপরেও। হঠাৎ মায়ের পরিচয় পেয়ে তাকে একপলক দেখার জন্য ঢাকার পথে রওনা দিলেও যাওয়া হয় না মানিকের, অপহৃত হয় বিদ্রোহী পাহাড়িদের হাতে। এরপরে কি হয় সেটা আমি বলে আপনাদের চার্ম নষ্ট করতে চাই না। তবে বলবো, এমন উপন্যাস না পড়াটা বোকামি।

লেখক দুর্দান্ত ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন পাহাড় আর পাহাড়ে বাস করা মানুষের জীবনধারাকে। কিছুদিন আগেই ঘুরে এসেছি পাহাড়। থেকেছি পাহাড়িদের ঘরে। তাই ভিযুয়ালাইজ করতে আরো সুবিধা হয়েছে। সেই সাথে লেখকের দারুণ বর্ণনার কারনে মনে হচ্ছিল আমি যেন ড. মানিকের সাথেই ঘুরে বেড়াচ্ছি। ধন্যবাদ লেখক কে।
Profile Image for Sukanta Bhattacharjee .
52 reviews11 followers
September 6, 2021
এখানে শহরের অলিগলি নেই, ধোয়া নেই, নেই কোনযান্ত্রিক কলরব। এখানে সবুজ আছে, পাহাড় আছে, সাংগু নদী আছে। এখানে আছে মানিক মিত্র নামের এক চরিত্র। মা-বাবা হারা অনাথ আশ্রমেই যার জীবনের প্রথম দিককার সময়গুলো কেটে যায় মা-বাবার স্নেহ ছাড়া। সময় গড়িয়ে মানিক মিত্র হয়ে যায় ডাঃ মানিক মিত্র। হাসপাতলের অনিয়মের প্রতিবাদে যে বদলি হয়ে যায় পাহাড়ে যেখানে বাঙালি-পাহাড়ি সংঘর্ষের শিকার হয়ে প্রায়শই কারো মাথা ধড় থেকে আলাদা হয়ে যায়। একদিন ঘটনাচক্রে নিজেও অপহৃত হয় পাহাড়িদের হাতে। অন্যদিকে একটা চিঠিতে ওলটপালট হয়ে যায় মানিকের আরেক পৃথিবী।

চরিত্র প্রসংগে বলা যায় ভিন্ন ভিন্ন কিন্তু অনেকগুলো চরিত্রের সাথেই পরিচয় করিয়ে দিয়েছেন লেখক। পাহাড়ি কন্যা ক্রাসিমা, মংতো, থাংসাই, থাইংপ্রু, উমে, উথিয়া সবাই সচরিত্রে জলজল। আরও আছে একাত্তরের সুধীর দত্ত, বদলি হওয়া বদরুল আলম, চিত্রশিল্পী শফিক।

বইটা পড়ে আমার ইচ্ছে হয়েছে নীলাতা ফুল গোজা মেয়েটাকে দুচোখ ভরে দেখি। তার কালো চুলের স্পর্শ নিই। মানিক মিত্র কি এমন কোন সুযোগ পেয়েছিল? কখনো কি তার মনেও আমার মতো ঐ পাহাড়ি কন্যার জন্যে মায়া জন্মেছিল? নাকি সবটুকুই বিসর্জন দিল নীল পাহাড়ের খাদে।
Profile Image for Mehzabin Hasan Hridy.
65 reviews
October 10, 2021
যখন আমি বইটা পড়ে শেষ করলাম, ঠিক সেই মুহূর্তে বুকের ভেতরে গ্যাসীয় অণুর মতন ছোটাছুটি করছে কিছু বিচ্ছিন্ন বর্ণ। তারই কিছু কিছু আবার সমযোজী বন্ধনের মত পাশাপাশি বসে আমাকে কিছু শব্দের চেহারা দেখতে দিচ্ছে। শব্দগুলি এলোমেলো। আমার অনুভূতিটাই এলোমেলো এখন! তবে সে আর যা-ই হোক, মন্দ লাগা নয়! ভীষণ সুন্দর একটা বই পড়লাম আমি। পরিচিত দু'তিনজনের রিকমেন্ডেশন ছিল যদিও, অনেক বাদে পড়া শুরু করার সময় আমি অতটা আশা নিয়ে বসি নি।

আমি অধিকাংশ সময়েই ঠিক নিয়মতান্ত্রিক রিভিউ লিখি না। বলা ভালো, লিখতে পারি না। লিখি আমার অনুভূতি। এক্ষেত্রেও তাই লিখলাম। হয়ত কখনও কোনো একদিন এটার রিভিউ লিখব, যদি মেলে সময় আর যদি ভাবি তা প্রয়োজনীয়।

আক্ষেপ: এরকম অনেক বই সেভাবে পপুলার হয় না, যতটা হয় মৌরি মরিয়মের "প্রেমাতাল!"
আশা: রতনে রতন চিনে নেবে।
Profile Image for Pritha Hasan.
10 reviews43 followers
May 21, 2024
'নীল পাহাড়' হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম কিছুক্ষণ পড়ে তারপর একডেমিক বই নিয়ে বসব।কিন্তু সেই কিছুক্ষণ আমার শেষ হলো একেবারে শেষের পৃষ্ঠায় এসে ।পড়তে পড়তে ভেসে গেলো আমার সামনে পরীক্ষার চিন্তা,ভেসে গেলো একাডেমিক পড়া। কি অসাধারণ লেখনী! ওবায়েদ হকের লেখা এই প্রথম পড়ছি আমি আর প্রথম লেখাতেই উনার ভক্ত হয়ে গেলাম।একটা লাইন আমার মাথায় গেথে গেছে-
"খাওয়ার সময় আমার ডাল আমি তোকে দিব,তুই আমাকে তোর মা দিস।"
কাহিনীর রেশ এখনো আমার অনুভূতিতে তীব্রভাবে রয়ে গেছে, বকবক করে সে রেশ কাটাতে চাই না।শুধু বলবো ভীইইইষন ভালো লেগেছে।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,469 reviews560 followers
October 6, 2019
অনাথ আশ্রমে মানুষ মানিক মিত্র। নিজের বাবা-মায়ের পরিচয় জানেনা সে তাই প্রায়শই দ্বিধা-দ্বন্দে ভোগে। অনাথ মানিক পড়াশোনা করে হয়ে উঠে ডাক্তার মানিক মিত্র। এ মানিক মিত্র অন্যায় আর অসঙ্গতির ঘোরতর বিরোধী। পিজি হাসপাতালে তার সিনিয়র কর্তার অশালীন কর্মের বিরুদ্ধে কথা বলায় সে প্রভাবশালী ডাক্তার তাকে বান্দরবানে ট্রান্সফার করিয়ে দেয়। উল্লেখ্যে,ঘটনার প্রেক্ষাপট স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশের (মুক্তিযুদ্ধের একটি বিশেষ দিককে প্রাসঙ্গিক ভাবে কাহিনীতে এনেছেন যা বেশ আবেগময়)আশির দশক যখন পাহাড় বেশ উত্তপ্ত, পাহাড়ি আর বাঙালি সংঘর্ষ সেখানকার নিত্যকার বিষয়। মানিক ডাক্তার ঢাকায় তার নিজের বাড়ি (দানে করেছেন আরেকজন) , তার একদা ভিক্ষুক বন্ধুর হাতে দিয়ে বান্দরবানে পাড়ি জমান
।সেখানে তার পরিচয় হয় শফিক সাহেব নামক বাঙালি সমাজকর্মীর যদিও শফিক সাহেবের সমাজকর্ম লোকে পছন্দ করে না।এই ধনী শফিক সাহেব আবার বেশ ভালো আঁকেন(যার প্রমাণ চমৎকার একটি পাহাড়ের চিত্র, যার রঙ নীল ও আরো একটি ছবি )। শফিক সাহেবের এক কর্মচারী বরকত বেশ উগ্রবাদী এবং নানা খারাপকর্মে সিদ্ধহস্ত। যাইহোক,মহাউৎসাহী ডাক্তারবাবু পাহাড়িদের ওপর বাঙালিদের নগ্নভাবে কারণহীন আক্রমণ প্রত্যক্ষ করেন যা পাহাড়ি আর বাঙালি সম্প্রীতির অন্তরায়। একনিষ্ঠ ডাক্তার তার কর্মনিপুণতায় পাহাড়িদের বিশ্বাস অর্জন করেন এবং ঘটনাক্রমে পরিচিত হয় সেখানকার সবচে' সুন্দরী এবং শিক্ষিত ক্রাসিমার সাথে। ঘটনাক্রমে ডাক্তার কে অপহরন করে একদল উগ্রবাদী পাহাড়ি তাদের নেতার পায়ের চিকিৎসার জন্য। সেখানে গিয়ে মানিক বাবু দেখেন ক্রাসিমা কে (রোগিকেও দেখেন) । ঘটনাক্রমে দেখা যায় সেই পাহাড��ি নেতা সৎ সাজলেও তিনি অসৎ কিন্তু কীভাবে তা প্রমাণ হয়? (জানতে বইটা পড়তে হবে)। যেহেতু ঘটনাক্রমে ক্রাসিমা এখানে সেহেতু ঘটনাক্রমে একে ওপরের ওপর ক্রাশ খান কিন্তু মিলন হবে তো? মানিক ডাক্তার বাঁচবে তো? সে কী কখনও তার মা-বাবার পরিচয় জানতে পারবে? এসব প্রশ্নের উত্তর ই টুইস্ট আর নামকরণের যথার্থতা রয়েছে বলে মনে হয়েছে।

৩ তারকার বেশি দিতে অপারগ কেননা-

ঘটনাক্রমে ঘটনা এ বইতে অনেক বেশি ঘটেছে যা আমার কিঞ্চিত অযৌক্তিক মনে হয়েছে। আবেগের বাড়াবাড়ি ছিলো চোখে পড়ার মতো। সাহিত্য ইতিহাস নয় মানি, লেখকের নিজের লেখার খাতিরে ইতিহাসের গণেশ কে উল্টিয়ে ব্যবহারের স্বাধীনতা আছে তাও মানি। কিন্তু বইতে একপাক্ষিক ইতিহাসের উপস্থাপনা কাম্য নয়। বিশেষত, বাঙালি-অবাঙালি দ্বন্দের বিষয়টির দায়ভার লেখক স্রেফ বাঙালিদের ওপর দিয়ে সটকে পড়েছেন যা অপইতিহাসের দৃষ্টান্ত।

ওভারঅল,লেখার স্টাইলে ভালো ই গতি ছিলো। ঔপন্যাসিকের বর্ণনা শক্তির প্রশংসা না করলেই নয়।
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
361 reviews34 followers
April 12, 2023
রাজনৈতিক বা ঐতিহাসিক উপন্যাস নয়, এটি খুবই সাধারন এক বাঙ্গালী ডাক্তারের জীবনের গল্প। লেখক এ উপন্যাসে খুবই সাধারন পাহাড়ী জীবনযাত্রা সু��্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তাঁর কলমের আঁচড়ে এবং পাঠকের মনে জায়গা করে নিয়েছেন। সে দিক থেকে তিনি স্বার্থ একজন মানুষ। তিনি অনেক বেশী ভাবে পাঠকের মনে আছেন এবং থাকবেন।
লেখকের প্রকাশিত অন্যান বই:- তৈইলা চোরা, একটি শাড়ী ও কামরাঙ্গা বোমা, নেপথ্যে নিমকহারাম, জলেশ্বরী।

লেখক ওবায়েদ হক তাঁর "নীল পাহাড় " উপন্যাসটিতে মূলত একটি এতিম অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া বাঙ্গালী ডাক্তার মানিকের জীবনকে কেন্দ্র করে এগিয়ে গেছেন। একই সাথে তিনি যোগ করেছেন পাহাড়ী জীবন এবং সংস্কৃতি।
আশির দশকের মাঝামাঝি সময়। দেশে তখন রাজনৈতিক ঝড় থেমে গেলেও পাহাড়ে অবস্থা ছিলো বিপরীত। পাহাড়ীদের জীবন যাত্রা সহজ ছিলো না, তারপরও পাহাড়ই তাদের বেশী টানে। সেখানে সবসময়ই বিরাজ করত ভয়, আতঙ্ক, উৎকন্ঠা। খুন, হত্যা, অপহরন, ধর্ষণ ছিলো প্রতিদিনের ঘটনা। পাহাড়ী বাঙ্গালীদের দ্বন্দ্ব তখন চরমে। সরকারি কর্মকর্তাদের শাস্তি দেয়া হতো পাহাড়ে পোষ্টিং দিয়ে। সে শাস্তি ছিলো মৃত্যুদন্ডের মত।। ম্যলেরিয়া বা সাপের কামড় থেকে বাঁচা গেলেও উগ্রপন্থি সংগঠনগুলো থেকে বাঁচার উপায় ছিলো না। অনেকে চাকরি ছেড়ে দিত। ঠিক সেই সময়। অনাথ আশ্রমে বড় হওয়া ডাক্তার মানিক মিত্রের পোস্টিং হয় বান্দরবনের দুর্গম এলাকাতে। তার জীবনে ঘটতে থাকে অনেক কাঙ্খিত এবং অনাকাঙ্খিত ঘটনা। তার পরও পাহাড়ের ডাক তিনি শুনতে পেয়েছেন, পাহাড়ের সৌন্দর্য তাকে মুগ্ধ করেছে, যেখানে সারিসারি পাহাড় তাকে হাতছানি দিয়েছে। পাহাড়ী ঝর্না বনের সৌন্দর্য মানিককে কাছে টেনে নিয়েছে। আর এখানেই প্রভাবিত হয়েছে এই অনাথ ছেলের জীবন কাহিনী। সে মুখোমুখি হয় সত্যের, হিংসার, ঘৃনার, ভালবাসার, মৃত্যুর এবং নীল পাহাড়ের।
উপন্যাসের বিশেষ চরিত্রগুলো: মানিক মিত্র, ক্রাসিমা, মংতো, থুইনুপ্রুর, চন্দন ভৌমিক, কার্তিক, বদরুল আলম, কাজাচাই, এছাড়াও অনেক ছোট ছোট চরিত্র আছে যারা উপন্যাসটিকে সমৃদ্ধ করেছে।
Displaying 1 - 30 of 313 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.