বাংলাদেশে যখন মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে মৌলবাদ সোনার বাংলার গ্রামগুলো যখন আচ্ছন্ন করে অশিক্ষিত কাঠমোল্লারা, রাষ্ট্রব্যবস্থা এবং আইনের তোয়াক্কা না করে যখন একের পর এক ফতোয়া দিতে থাকে তারা, ফতোয়াবাজ নরপশুদের হিংস্র নখরে যখন ছিন্নভিন্ন হয় গ্রামপ্রান্তের অবলা নারী, নূরজাহার সেই নারীসমাজের প্রতিভূ। মৌলভীবাজারের ছাতকছড়া গ্রামে জন্মেছিল নূরজাহান। প্রথম বিয়ের পর স্বামী যায় নিরুদ্দেশ হয়ে। অষ্টাদশী নূরজাহানের রূপে মুগ্ধ হয়ে গ্রাম মসজিদের প্রভাবশালী মাওলানা মান্নান তাকে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু নূরজাহানের বাবা তাকে মধ্যবয়সী মাওলানার সঙ্গে বিয়ে না দিয়ে মোতালেব নামের এক যুবকের সঙ্গে বিয়ে দেয়। তখন মাওলানা মান্নান ক্ষিপ্ত হয়ে ফতোয়া জারি করে নূরজাহানের দ্বিতীয় বিয়ে বৈধ নয়। অবৈধ বিয়ের অপরাধে মধ্যযুগের আরব দেশীয় কায়দায় বুক অব্দি গর্তে পোঁতা হয় নূরজাহানকে। তারপর একশো একটি পাথর ছুঁড়ে মারা হয়। নূরজাহানের স্বামীকেও দেয়া হয় একই শাস্তি, পিতাকে করা হয় বেত্রাঘাত। এই অপমান সইতে না পেরে সেই রাতেই বিষপানে আত্মহত্যা করে নূরজাহান। নূরজাহানের এই আত্মহত্যা আসলে মৌলবাদের বিরুদ্ধে বিশাল এক প্রতিবাদ। নূরজাহানের আত্মহত্যা আসলে ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে প্রথম সোচ্চার, বাংলাদেশের সমাজব্যবস্থার গায়ে কালিমা লেপন। সুতরাং ঐতিহাসিক না হয়েও নূরজাহান এক ঐতিহাসিক চরিত্র। এই নূরজাহানকেই উপন্যাসের বিষয় করেছেন ইমদাদুল হক মিলন। নূরজাহানকে আশ্রয় করে ফুটিয়ে তুলেছেন বাংলাদেশের নির্যাতিতা নারীসমাজের অনুপুঙ্খ চিত্র। উন্মোচন করেছেন মৌলবাদ, ফতোয়াবাজ এবং কাঠমোল্লাদের মুখোশ। বাংলাদেশের রাজনীতি, মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, গ্রামমানুষের জীবন ছবির মতো ফুটে উঠেছে এই উপন্যাসে।
Imdadul Haq Milon (Bangla: ইমদাদুল হক মিলন) is a Bangladeshi novelist and editor of the daily Kaler Kantho. Milon graduated from Jagannath College. He went to Germany and after returning, wrote one of his premier works, Poradhinota. Milon authored books on classic stories, historical writings, romantic stories and other genres. He also works as a TV personality in a talk show called Ki Kotha Tahar Sone. He was honored with Bangla Academy Award in 1992.
স্বাধীনতা পরবর্তী একটি বাংলাদেশী পল্লী এলাকার বিস্তৃত জীবনাচরণ উঠে এসেছে এই উপন্যাসে। যার কেন্দ্রীয় চরিত্রে থাকে নূরজাহান নামের একটি বালিকা। তার পরিবার, গ্রাম ও আশেপাশের প্রাকৃতিকে উপজীব্য করে গড়ে উঠেছে এই উপন্যাসের প্রেক্ষাপট। যেখানে কিশোরীর ভালো লাগার অনুভূতি গুলো তৈরি হওয়ার গল্প আছে, যেখানে দারিদ্রের গল্প আছে, আছে বঞ্চনার গল্প, আছে বিপ্লবী চরিত্রের ঝংকার। বিস্তৃত বর্ণনামূলক গল্প হওয়া সত্ত্বেও ভাষার সহজবোধ্য উপস্থাপনের জন্য বেশ সুখপাঠ্য হয়ে উঠেছে উপন্যাসটি।
বইটাতে যে জায়গা গুলোর বর্ণনা দেয়া তার প্রত্যেকটা জায়গা আমি চিনি, গিয়েছি... এজন্যেই হয়তো আশির দশকের প্রেক্ষাপটে জায়গাগুলোর বর্ণনা পড়া, সেখানকার মানুষদের জানার ব্যাপারটা আমার কাছে টাইম ক্যাপসুলের কাজ দিয়েছে... ইমদাদুল হক মিলনের দুই-একটি বই আগে পড়ার চেষ্টা করে হতাশ হয়েছিলাম, এটি পড়ার পর নিঃসন্দেহে সেই হতাশা কেটেছে... অনবদ্য বললেও কম বলা হয়... ত্রিশ বছর পরে এসেও কাহিনীর আবেদন একটুও ফুরোয় নি, জাতি হিসেবে যে আমাদের ব্যররথতার ভার বাড়ছে এটাই তার প্রমাণ... (বইটা পড়লে বুঝা যাবে সেটা)...
বইটার দুইটা জিনিস সবচাইতে ভালো লেগেছে- ১। ব্যক্তিগত স্মৃতিবহুল ঢাকা-মাওয়া সড়কের নির্মাণযজ্ঞের বর্ণনা বইতে আসায় পড়া উপভোগ্য হয়েছে... ২। বইটার বেশকিছু লাইন একদম জায়গামতো লাগে, দীর্ঘশ্বাস স্বয়ংক্রিয়ভাবে বের হয়ে আসে...