Ashapurna Devi (Bengali: আশাপূর্ণা দেবী), also Ashapoorna Debi or Asha Purna Devi, is a prominent Bengali novelist and poet. She has been widely honoured with a number of prizes and awards. She was awarded 1976 Jnanpith Award and the Padma Shri by the Government of India in 1976; D.Litt by the Universities of Jabalpur, Rabindra Bharati, Burdwan and Jadavpur. Vishwa Bharati University honoured her with Deshikottama in 1989. For her contribution as a novelist and short story writer, the Sahitya Akademi conferred its highest honour, the Fellowship, in 1994.
আমি চিরদিনই চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দী। আমার পৃথিবী জানলা দিয়ে দেখা। একেই তো খুব রক্ষণশীল বাড়ীর মেয়ে আবার প্রায় তেমন রক্ষণশীল বাড়ীর বৌও। চল্লিশ বছর বয়স পর্যন্ত কেউ জানতো না আসলে ‘আশাপূর্ণা দেবী’ কে? ওটা কোনো পুরুষ লেখকের ছদ্মনাম নয়তো? পরে যখন বাইরের জগতে বেরিয়ে পড়ে সকলের সঙ্গে দেখা-টেখা হয়েছে, অনেকে বলেছেন, এই যেমন সজনীকান্ত দাস, প্রেমেন্দ্র মিত্র, ‘আমরা তো ভাবতাম ওটা বোধহয় একটা ছদ্মনাম। আসলে পুরুষের লেখা। এমন বলিষ্ঠ লেখা।'
আশাপূর্ণা দেবী আমার অসম্ভব প্রিয় লেখিকাদের ভেতর একজন...তাঁর বিখ্যাত সত্যবতী ট্রিলজি আমার কতখানি পছন্দ সেটা বলে বোঝানো সম্ভব নয়...আজ সেসব কথা থাক...এই বইয়ের কথা বলি...তাঁর জীবনবৃত্তান্ত, স্মৃতিকথা, সাহিত্যভাবনা আর সাহিত্যলোচনা থেকে শুরু করে অনেক কিছুর পুঙ্খনাপুঙ্খ বর্ণনা সুন্দরভাবে এই বইতে তুলে ধরেছেন...
বিংশ শতাব্দীর শুরুর দিকে অতি রক্ষণশীল পরিবারে বড় হয়েছেন...তাই ঠাকুরমার কল্যাণে স্কুলে যাওয়ার বালাই ছিল না...কিন্তু তাই বলে সাহিত্যরসাস্বাদন থেমে থাকেনি...দাদারা যখন পড়ত, বর্ণ পরিচয়ের হাতেখড়ি সেখান থেকেই...আর মাতৃদেবীর অফুরন্ত সাহিত্যক্ষুধার ফলে তিন-চারটা লাইব্রেরি থেকে নিয়মিত বই আসতো...আর বাড়িতেও তো বই আর পত্রপত্রিকার অভাব ছিল না...এভাবেই পড়তে পড়তে লেখা শুরু...বয়স যখন তেরো তখন শিশুসাথী পত্রিকায় ছাপা হল তাঁর লেখা প্রথম কবিতা ‘বাইরের ডাক’...প্রথম লেখাই ছাপা হল, আর সাথে পত্র এল সহ-সম্পাদকের নিকট থেকে গল্প লিখতে পারেন কিনা?...এর আগে তো আর কখনও লিখেন নি...ভাবলেন চেষ্টা করে দেখি, আসলেই লিখতে পারি কিনা...এরপরে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি...একের পর এক লিখে গেছেন গল্প আর উপন্যাস...অনেকগুলো ছোট মাপের উপন্যাস লেখার পর একটা বিস্তৃত কিছু লেখার ইচ্ছা জাগে...অনেক প্রশ্ন আবাল্য বিক্ষত করেছে, আর সেগুলো প্রকাশ করার জন্যই সত্যবতী ট্রিলজিকে বেছে নিয়েছিলেন...যার জন্য পেয়েছেন পাঠকপাঠিকা সমাজের অকুন্ঠ অভিনন্দন...
সেই বিখ্যাত ‘প্রথম প্রতিশ্রুতি’র লেখিকার ছেলেবেলা কেটেছে উত্তর কলকাতার সরু গলির ধারে পুরনো বাড়ির চার দেওয়ালের মধ্যে...লালিত হয়েছেন পরষ্পরবিরোধী দুটো হাওয়ার মধ্যে...বাবা পরম রাজভক্ত প্রজা, মা মনেপ্রাণে কট্টর স্বদেশী...মার জীবনে একটি মাত্রই পরমার্থ, সেটা হচ্ছে সাহিত্য...আর বাবার মতে চব্বিশ ঘণ্টা বই পড়া একটা বাহুল্য বাতিক...তাঁর নেশা এবং পেশা দুটোই ছিল ছবি আঁকা...বোনেরাও ছবি আঁকতে পারতেন, কিন্তু লেখিকার প্রিয় তো মায়ের মত সেই বই...এরই মধ্যে দিদির বিয়ে হয়ে গেল, পুরো বাড়ি খাঁ খাঁ...এক কান্ড করে বসলেন...বাড়ির কাউকে না জানিয়ে ‘শ্রীযুক্ত রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর’ এর নামে একটি চিঠি প্রেরণ করলেন দুই বোনের যুগল স্বাক্ষরে...বিষয়বস্তু কিছুই না, শুধু একটি আবেদন...নিজের হাতে নাম লিখে একটি উত্তর দিবেন...কিন্তু চিঠি পাঠিয়েই শুরু হল বুক ধড়ফড়...যদি বড়রা বকে?...কোন সাহসে রবি ঠাকুরকে চিঠি লিখেছ?...কিন্তু আশ্চর্য ঘটনা যে আসলেও ঘটে!...স্বয়ং রবীন্দ্রনাথ নিজের হাতে চিঠি পাঠিয়েছেন...ছুটে গেলেন মার কাছে...মা একটুক্ষণ সেই হাতের লেখার দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন, “তোরা পারলি? আমি শুধুই স্বপ্ন দেখেছি”...দু;সাহসে দুঃসাহস বাড়ে...এবার আর যুগল স্বাক্ষর নয়, একাই পাঠিয়ে দিলেন পত্রিকায় সেই বাইরের ডাক কবিতাটি...তারও কিছুদিন পর খোকাখুকু পত্রিকায় কবিতা প্রতিযোগিতার ঘোষণা হলো, প্রতিযোগীর বয়স পনের হওয়া আবশ্যক...মহোৎসবে কবিতা লিখে প্রেরণ, আর ফলাফল প্রথম পুরস্কার...কিন্তু সেই পুরস্কার পেতে পেতেই আইবুড়ো নাম খন্ডন...পুরস্কারলব্দ ভালো ভালো বই – যার মধ্যে ছিল ‘রাজকাহিনী’, ‘ক্ষীরের পুতুল’, ‘নালক’, ‘নীলপাখী’, ‘টমকাকার কুটির’, ‘শিশু’, ‘শিশু ভোলানাথ’ ইত্যাদি নতুন ট্রাঙ্কে ভরে এক গলা ঘোমটা টেনে শেয়ালদা স্টেশনের ট্রেনে চেপে গুটি গুটি শ্বশুরবাড়ি যাত্রা!
আরও আছে কত কি...লিখলে কি আর এসব শেষ হবে?!!...তাঁর সেই ছেলেবেলার দুর্গোৎসব আর বড়দিন উদযাপনের বর্ণনা, আর সেই সাথে উঠে এসেছে এখনকার উৎসবের সাথে তুলনামূলক আলোচনা...আর আছে তাঁর সেই প্রাণের কলকাতার একাল সেকাল...তাঁর ভাষায় বলতে গেলে তখনকার কলকাতার রাস্তায় বাস চলত না, লরি চলত না, মটরগাড়ির রমরমা ছিল না, ছিল না — সিনেমা, রেডিও, টিভি, ফ্রিজ, টেপ রেকর্ডার, ফাউন্টেন পেন, ডটপেন, রান্নার গ্যাস, প্রেসার কুকার আরও কত কি!...কিন্তু যেটা ছিল সেটা যে এখনকার যুগে দুর্লভ...সেই সময় ছিল শান্তি, স্বস্তি, নিরাপত্তা, নিশ্চিন্ততা, সততা আর ভালবাসা...অবাক লাগে, তাই না?!!...সাহিত্য জিনিসটা সব জায়গায় বোধ হয় একই রকম...আর এ তো রীতিমত সত্য কথা...মনে হয় আমাদের সেই ছোটবেলার ঢাকা আর এখনকার ঢাকার মধ্যে কী বিস্তর পার্থক্য!...খুব বেশিদিন হয়ও নি...কিন্তু মনে হয় এই তো সেই দিন...গতকাল না কবে যেন নাইনটিস কিডস নিয়ে একটা আর্টিকেল পড়ছিলাম...যার ভিতর এটাই ছিল — এখনকার যুগের কোন কিছুই আর ভালো লাগে না, মনে হয় আগের সময়টাই ভালো ছিল...নতুন একটা জিনিসও দুইদিন পর পর পুরানো হয়ে যায়...কিন্তু আগের জিনিসগুলোর আবেদন কোনদিনই যেন ফুরাবার নয়...একবিংশ শতাব্দীর বাচ্চারা সেটা কোনদিন বুঝতেও পারবে না...আমরা যারা নাইনটিস কিডস মোটেও আর কিডস নই, সবাই গ্রোন আপ...কিন্তু মনে হয় এই না সেই দিন, কী অদ্ভুত সুন্দর দিন কাটাতাম...!!!
বইয়ের কথায় ফিরে আসি আবার...শুধু এই সাহিত্যভাবনা আর স্মৃতিকথা নয়, রীতিমত সাহিত্য আলোচনাও রয়েছে বইটাতে...রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়, তারাশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায়, গজেন্দ্রকুমার মিত্র এবং যোগীন্দ্রনাথ সরকার এর সাহিত্যকর্ম নিয়ে আলোচনা...তাঁরা ছাড়াও আরও অনেক বিখ্যাত ব্যক্তি যাদের সাহচর্যে লেখিকা এসেছেন কিংবা আসতে পারেননি, তাঁদের প্রভাব কতখানি তাঁর জীবনে সে সম্বন্ধেও লিখেছেন...তাঁদের মধ্যে আছেন নরেন্দ্র দেব, কালিদাস রায়, সুনীতিকুমার চট্টোপাধ্যায়, বিভূতিভূষণ মুখোপাধ্যায়, বনফুল, প্রেমেন্দ্র মিত্র, রাধারাণী দেবী, অনুরূপা দেবী, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, প্রমথনাথ বিশী, প্রভাবতী দেবী সরস্বতী, ডঃ রমা চৌধুরী, সৌম্যেন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং আরও অনেকে...আর আছে সাহিত্য সম্পর্কিত তাঁর কয়েকটি ভাষণ...এমনিতে ভাষণ আমার খুবই অপ্রিয় জিনিসগুলোর ভিতর একটি...কিন্তু এই ভাষণগুলো খুব আগ্রহ নিয়ে পড়েছি...যাই হোক, এমনিতে লেখা অনেক বড় হয়ে গিয়েছে...এসব লিখতে গেলে আরও কয়েকগুন বড় হয়ে যাবে...সব মিলিয়ে অসম্ভব ভালো লাগায় ভরিয়ে দেওয়ার মত একটি বই...পড়তে পড়তে কতগুলো লাইন যে মনে হয়েছে কোট করার মত তা বলে বোঝানো সম্ভব নয়...কিন্তু করা হয় নি সবগুলো...অল্প কয়েকটি করার চেষ্টা করেছি...কিন্তু তাও সব মিলিয়ে অনেক...নন ফিকশন সাধারণত তেমন একটা পড়া হয় না...কিন্তু এখন এটা পড়ার পর থেকে মনে হচ্ছে এমন নন ফিকশন মাঝে মাঝেই পড়া উচিত...মনটাই ভালো হয়ে যায়...