জাফর আলম উর্দু ও হিন্দি কথাসাহিত্যের প্রথিতযশা বাংলা অনুবাদক। তাঁর জন্ম ১৯৪৩ সালে কক্সবাজার জেলায়।
জাফর আলম পেশাগত জীবন শুরু করেন সাংবাদিকতা দিয়ে। তিনি সাপ্তাহিক পূর্বদেশ, দৈনিক সংবাদ ও পাকিস্তান অবজারভার-এ (বর্তমানে বাংলাদেশ অবজারভার) বগুড়া জেলার সংবাদাতা হিসেবে কাজ করেন। ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তান-এ (বর্তমানে দৈনিক বাংলা) সহ-সম্পাদক হিসেবে, পরবর্তীতে দৈনিক জনপদ-এ সিনিয়র সহ-সম্পাদক হিসেবে সাংবাদিকতা করেছেন। পরে ১৯৭৫ সালে তথ্য অধিদপ্তরে যোগদান করেন। ২০০১ সালে তিনি উপপ্রধান তথ্য অফিসার হিসেবে অবসরগ্রহণ করেন।
অনুবাদক হিসেবে জাফর আলম বাংলা একাডেমি পুরস্কার ও একুশে পদকে ভূষিত হন। ২০২০ সালের ২০ জুন তিনি ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।
দেশভাগ ও দাঙ্গা - দুইটি শব্দ পরস্পর বিশ্রীভাবে সংযুক্ত। দক্ষিণ এশিয়ার এই অঞ্চলের জনতার মতো সাহিত্যিকদেরকে প্রভাবের বাইরে রাখেনি দেশভাগ আর তার ফলশ্রুতিতে সৃষ্ট সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা। খুন, পাল্টা খুন, নারী নিপীড়নের অপরপৃষ্ঠে অনেকেই দেখিয়েছেন মানবতা। দাঙ্গার নানান দিক বহুবিচিত্রভাবে গল্পগুলোতে বিবৃত হয়েছে।
এমন সংকলন যে-কোনো সময় পড়া যায়, বারবার পড়া যায়।বইটা ভাবতে বাধ্য করার জন্য যথেষ্ট। জাফর আলমের অনুবাদ নিয়ে বলার নেই। বরাবরের মতো সুপাঠ্য ভাষান্তর।
বইটা কিনেছি অনেকদিন। পড়ব পড়ব করে পড়া হয়ে উঠছিল না। কিছু দূর এগিয়ে ব্যস্ততায় ক্ষান্ত দিয়েছিলাম। গল্পগুলোয় দেশভাগের যে বাস্তবতা ফুটে উঠেছে তা আমার এতদিনের চিন্তাধারায় বেশ কিছু পরিবর্তন এনেছে। বিষয়টা এমন যে- এভাবেও হয়? নিজের কিছু ভুল জানাছিল, কিছু অজানা ছিল। এক মানচিত্র নিয়ে কাটাকুটিতে এতগুলা মানুষের জীবনযাত্রা চিন্তাধারা সারা জীবনের ন্যায় বদলে যাবে কে ভেবেছিল!
বইটায় বেশ কিছু মুদ্রণজনিত ত্রুটি আছে। এজন্যে পড়তে কিছু জায়গায় খটকা লেগেছে। প্রথমে ভেবে নিয়েছিলাম অনুবাদে ভুল। পরে মনে হলো না, আরও কয়েকবার পড়ি। তারপরে গিয়ে মর্মার্থ উদ্ধার করতে সক্ষম হই। আর একই গল্পের একটা ঘটনার পর অন্য একটা ঘটনার আরম্ভ হয়েছে, কিন্তু পর্যাপ্ত খালি স্থান রেখে টাইপ করা হয়নি। মনে হচ্ছিল দুটা ঘটনা একই সময়ের বা সংযুক্ত। এই মুদ্রণজনিত ত্রুটি অনেকবার বিরক্তি সৃষ্টি করেছে, বিশেষ করে 'নির্বাসন' গল্পে।