Jump to ratings and reviews
Rate this book

জলেশ্বরী

Rate this book
ছোট ছোট কুঁড়েঘরগুলো পানিতে নাক ডুবিয়ে বসে আছে। গাছের কোটরে সাপ-ব্যাঙ বাস্তুতন্ত্রের নিয়ম ভঙ্গ করে এক সাথে আশ্রয় নিয়েছে। ঘোলা পানিতে প্রায়ই ভেসে যাচ্ছে পেট ফোলা গরু আর মানুষের লাশ। দরিদ্র বাবা আড়াই সের চালের বিনিময়ে মেয়ে বিক্রি করতে ছুটে যাচ্ছে বাবুদের নৌকায়। রাতের আঁধারে বউ পালিয়ে যাচ্ছে ঢাউস পেটের লম্পটের কাছে। ঠিক সেই সময় আটাশী সালের ভয়ংকর বন্যায় আমেরিকা ফেরত শহুরে ভব্য একটি ছেলে নদীতে নৌকা ভাসিয়েছে দুজন মাঝি নিয়ে।

112 pages, Hardcover

Published February 1, 2016

29 people are currently reading
877 people want to read

About the author

Obayed Haq

11 books286 followers
ওবায়েদ হকের জন্ম ১৯৮৬ সালে। পড়াশোনা করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। থাকেন কুমিল্লায়।
প্রকাশিত বইসমূহ-
উপন্যাস-
তেইল্যাচোরা (২০১৪)
নীল পাহাড় (২০১৫)
জলেশ্বরী (২০১৬)
কাঙালসংঘ (২০২১)
আড়কাঠি (২০২৪)
জল নেই পাথর (২০২৪)
উন্মাদ আশ্রম (২০২৫)
গল্প সংকলন-
একটি শাড়ি ও কামরাঙা বোমা (২০১৪)
নেপথ্যে নিমকহারাম (২০১৭)

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
450 (47%)
4 stars
394 (41%)
3 stars
81 (8%)
2 stars
10 (1%)
1 star
7 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 234 reviews
Profile Image for Wasee.
Author 49 books784 followers
March 4, 2024
ওবায়েদ হকের লেখার সাথে প্রথম পরিচয় "নীল পাহাড়ে" ।
সেই ভালো লাগার আবেশ কাটিয়ে উঠতে না উঠতেই জলেশ্বরীতে ডুব দিলাম এক মাঝরাতে। ধীরেসুস্থে পড়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু লেখকের ভাষার জাদুতে নেশা ধরে গেলো। বইয়ের শেষ পাতায় পৌঁছে দেখি জানালা দিয়ে সূর্য উঁকি দিচ্ছে। দুই ঘণ্টারও কম সময় বইয়ের পাতায় কাটিয়েছি, অথচ জলেশ্বরীর দেশে যেন হেঁটে বেড়িয়েছি অনেকগুলো দিন!

কখনও জোছনা রাতে বেদের নৌকায় ভেসেছি, কখনও কাজলের অস্তিত্বে ভর করে দিশেহারার মত খুঁজেছি ইব্রাহীম গাজীকে। চোখের সামনে দেখতে পেয়েছি আটাশির বন্যার দুর্ভোগ, মেয়ের মুখে ভাত তুলে দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে মান বিসর্জন দেয়া পিতার হাহাকার ! উত্তাল সময়ে বদলে যাওয়া মানুষের পশুবৃত্তি দেখে শিউরে উঠেছি বহুবার। আবার তাপসীর প্রেমে ব্যকুল চিত্তে ফেলেছি দীর্ঘশ্বাস।

কিছু বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ লেখা যায় না, ভাষায় বোঝানো যায় না প্রতিক্রিয়া। জলেশ্বরী তেমনই একটা বই। এ উপন্যাসের মূল চরিত্রের নাম কাজল, লস অ্যাঞ্জেলস থেকে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে সে গ্রামে ছুটে আসে।শৈশবের স্মৃতিতে মিশে থাকা রাশভারী একরোখা মানুষটার আত্মহত্যার বিষয়টা কিছুতেই মেলাতে পারে না। বাবাকে সারাজীবনে সামান্যই চিনেছে কাজল, মরে যাওয়ার পর সেই লোকটা হয়েছে আরও রহস্যময়।

সেই রহস্যের সুতোয় অদৃশ্য টান পড়ে যখন হঠাৎ বাবার লেখা একটা ছোট্ট চিরকুট পাওয়া যায়, "জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহীম গাজি আমাকে বাঁচতে দিচ্ছে না।" ইব্রাহীম গাজিকে খুঁজে বের করতে মরীয়া হয়ে ওঠে কাজল। ভয়াবহ বন্যাকে উপেক্ষা করে নৌকায় পাড়ি জমায় জলেশ্বরীর উদ্দেশ্য। কাজলের এই যাত্রার ভেতর দিয়ে উঠে এসেছে আটাশির বন্যার সময়ের ভয়াবহ বাস্তবতার প্রতিরূপ, অঙ্কিত হয় মানুষের দুর্ভোগের চিত্র। মানুষের লোভের শিকার হয়ে বিপর্যস্ত হতে হয়ে কাজলকে। কখনও আশ্রয় মেলে বেদের নৌকায়, কখনও আবার ভিড়তে হয় ভবঘুরেদের দলে।

শেষ পর্যন্ত অবশ্য ইব্রাহীম গাজীর পরিচয় পাওয়া যায়। অস্বস্তিকর, চাপা আর্তনাদ পুষে রেখে বন্ধ করতে হয় বইয়ের মলাট।

আগেও বলেছি, লেখকের ভাষার জাদু-ই বইয়ের মূল আকর্ষণ। বই থেকে কয়েকটা লাইন তুলে দিচ্ছি -

* আমি বুঝলাম মা মেয়ের একটাই শাড়ি । দুজনে একসাথে বের হতে পারেনা। জন্মের সময় দাঁই নাড়ির বন্ধন কেটেছে, কিন্তু শাড়ির বন্ধন কাটতে পারেনি।

* আকাশে একটা আধ খাওয়া চাঁদ উঠেছে। তারাদের হটিয়ে পঙ্গু চাঁদটাই এই মজলিশের মধ্যমণি হয়ে গেল। চাঁদের আলো নদীতে রুপালি মরুভূমি তৈরি করেছে। মরুভূমিতে ঠোঁটের উপরের সুন্দর তিলের মতো একটা বিন্দু দেখতে পেলাম।

* নদী সন্ন্যাসী ভিক্ষুকের মত মানুষের উঠানে গিয়ে উঠেছে, চাইলেও কেউ এই আপদ বিদায় করতে পারছে না। কিছু না নিয়ে সে ক্ষান্ত হবে না। সন্ন্যাসীকে এক মুঠো চাল দিয়ে বিদায় করা যায়, কিন্তু নদী কী চায়? প্রাণ? ছানি পড়া বৃদ্ধের চোখের মত ঘোলা পানি, কোথাকার মাটি যেন খেয়ে এসেছে।

* লিয়াকত চুলায় আগুন ধরিয়ে ভাত চড়িয়ে দিয়েছে। ভাতের জলীয় বাষ্প, তরকারীর সুবাস আর আগুনের ধোঁয়া উড়ে নৌকার পালের কাছে পাক খেয়ে মিশে যাচ্ছে বাতাসে। নির্জীব হয়ে পড়ে থাকা চোরটা খুব আগ্রহ নিয়ে সেই মিলিয়ে যাওয়া ধোঁয়া দেখতে লাগল। মুখ হা করে বুক ভরে শ্বাস টেনে নিল, যেন লোকমা লোকমা তরকারি মেশানো ভাত গিলছে। সেই বাতাস বুকে গিয়ে ফিরে আসছে, পেটে যাচ্ছে না।

লেখকের আরো দুটো বই পড়া বাকি আছে এখনও। পড়তে ইচ্ছা করছে, কিন্তু বাঁধ সাধছে হৃদয়। দৃশ্যমান আগ্রহকে স্পর্শ না করার মাঝে এক রহস্যময় আনন্দ আছে। বেঁচে থাকুক সে আনন্দ। :)
Profile Image for Rifat.
501 reviews329 followers
May 23, 2024
মনের ভেতরে দু:খ জমার মতো করে বৃষ্টিতে বাড়ির পাশের জমিতে পানি জমে। আমি দেখি সেঞ্চি লতার ঢেউ, পানি চকচক করে আয়নার মতো, জলের ভেতরকার ঈশ্বরী আমাকে হাতছানি দিয়ে ডাকে।

২৩ মে, ২০২৪



বইটা পড়ার শুরুর দিকেই আমার মস্তিষ্ক আমাকে রীতিমতো বোকা বানিয়েছে।
ইব্রাহিম গাজী কে আমি জানি না, তাকে কোনদিন দেখিনি, শুধু জানি সে জলেশ্বরী গ্রামে থাকে।- একটা অতি সাধারণ লাইন। কিন্তু এই লাইনটা পড়ার পর আমার শরীর কাঁটা দিয়ে উঠলো। বইটার নাম যে জলেশ্বরী তা জেনেই তো পড়া শুরু করেছিলাম!
মস্তিষ্কের এমন অজানা কর্মকান্ডে বোকা হয়ে রইলাম কিছুক্ষণ -_-

কাজল নামের আমেরিকা ফেরত এক যুবক আটাশির বন্যার মধ্যে বজরা নিয়ে বেড়িয়ে পড়েছে একজন লোককে খোঁজার জন্য। অনেকটা সময় যে বিদেশে কাটিয়ে এসেছে স্বভাবতই সে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি কখনও দেখেনি। চারদিকে বন্যাপীড়িত মানুষের হাহাকার, ক্ষুধা-তৃষ্ণা আর নির্মমতা। এর মধ্যেই বজরা নিয়ে জলেশ্বরী অভিমুখে যাত্রা করেছে কাজল; তার সামনে অপেক্ষমান অভিজ্ঞতার বিশালতা।

বইটা যেহেতু খুব বেশি বড় না, চাইলে দ্রুতই পড়া যেত। কিন্তু ধীরে ধীরে পড়তে বাধ্য হয়েছি। বর্ণনার ভঙ্গিমা এত সুন্দর!! এর বদলে একটা কথাই মাথায় আসতেছে; সিম্পলের মধ্যে গর্জিয়াস কথাটি। কাজল, বজরার দুই মাঝি, নিতাই মাস্টার আর তার শোভা, নিভৃত চরে কাজলের সাথে দেখা হওয়া সেই হিজল গাছের কর্ত্রী তাপসী, ফিজিক্সের শিক্ষক আসাদ উদ্দীন, বুজি আর বেদের দল - মনে হল কিছুক্ষণ আগে এরা আমার সামনেই ছিল। ঘোরের মধ্যেই হঠাৎ করে বুঝলাম ইতি টানা হচ্ছে।

আপনি জলেশ্বরী যান নি?
না, জলেশ্বরী আমার নৌকায় এসেছে।
সে কি বুঝল? কে জানে। মৃদু ভাবে বলল, আমার একটা স্বপ্ন ছিল।


আমার মস্তিষ্ক আমাকে আবার ২য় বারের মতো বোকা বানিয়ে ছাড়লো! বুঝলাম না কিছু ¬_¬

৪ তারা দিতে গিয়েও ৫ তারা দিলুম,কী একটা অবস্থা!

~১৫অক্টোবর,২০২০




মানুষ জীবনে কতই না অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হয়! পূর্ব দিকে গেলে যেমন পশ্চিমের দিকটাকে জানা হয় না তেমনি ভরা পেটে থাকলে অভুক্তের ব্যথাও বোঝা যায় না। কত কিছু যে জানা বাকি থেকে যায়!
দ্বিতীয় বার পড়েও অনুভূতি বদলায় নি😅

~২১ অক্টোবর, ২০২০




ছুঁয়ে দেখলাম জলেশ্বরীর ৩য় পরিমার্জিত সংস্করণ। ভূমিকাতে লেখক বলেছেন, "যতবার জলেশ্বরী প্রশংসা পেয়েছে ততবার বইটির দুর্বল অংশ ঘায়ের মতো উদ্ভাসিত হয়েছে। তাই তিনি ঘায়ে প্রলেপ দেয়ার চেষ্টা করেছেন। অলংকারের যোগ-বিয়োগ হয়েছে কেবল, জলেশ্বরীর অবয়ব তাতে পালটায় নি। আশা করি এবার জলেশ্বরী'কে ভুলে যেতে পারব।"
হ্যা, অবয়ব বদলে যায় নি। শক্তপোক্ত অলংকরণে আরও মজবুত হয়েছে জলেশ্বরী'র ভিত্তি। দু'য়ের অধিকবার পড়ার কারণে পরিবর্তনগুলো চোখে ধরা পড়ছিল বারবার।

লেখক ঐ জলেশ্বরী'কে ভুলতে পেরে বেঁচে যাবেন কিন্তু ঐ অপূর্ণ জলেশ্বরীই আমাকে পেয়ে বসেছে!

~ ২৮ মার্চ, ২০২১
Profile Image for সালমান হক.
Author 66 books1,957 followers
June 19, 2016
কিছুদিন আগে লেখকের লেখনীর ঘাড়ে চেপে নীল পাহাড় থেকে ঘুরে এসেছিলাম। ভীষণ রকম মুগ্ধ হয়েছিলাম, পাশেই তখন জলেশ্বরী ছিল। কিন্তু হাতে নেই নি পরে এর স্বাদ আস্বাদন করব বলে। আজ একটু চোখ বোলাতে হাতে নিয়েছিলাম বইটা। ব্যস, আর ছাড়তে পারিনি। বইটা ছোট, কিন্তু ইচ্ছে করে আস্তে আস্তে পড়েছি। যতক্ষন লেখার ঘোরে থাকতে পারি আর কি। ভালো যে লেগেছে সেটা বলাই বাহুল্য।

এরকম বই এর কাহিনী সংক্ষেপ বলা যায় না, লেখনীই প্রধান। কিন্তু অবাক হয়ে লক্ষ্য করেছিলাম গতবার যে এরকম লেখার মাঝেও কিভাবে টুইস্টের ব্যবহার করা যায়। প্রতি পৃষ্ঠায় চেঞ্জ হয়েছে কাহিনী। কখনো বইয়ের নায়কের সাথে জমিদারী হালে নৌকায় ঘুরে বেড়িয়েছি, আবার কখনো সেই নায়কের সাথেই চরে পড়ে পড়ে মৃত্যুর প্রহর গুণেছি। মূল চরিত্র আমেরিকা ফেরত এক যুবক। বাবার মৃত্যুতে দেশে ফিরে, এক চিরকুটে ইব্রাহীম গাজীর নাম দেখে তাকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়ে নৌকো নিয়ে। আটাশির বন্যার সময়কার কথা। এরপর দেখা যায় কাহিনীর বৈচিত্র্যময় আটত্রিশ দিন।

মানুষে মানুষে সম্পর্ক, কুসংস্কার, গোড়ামী সবই ফুটে উঠেছে খুব সুন্দর ভাবে গল্পের ফাঁকেফাঁকে। লেখকের কাছ থেকে এরকম আরো বইয়ের অপেক্ষায়।
Profile Image for বিমুক্তি(Vimukti).
156 reviews88 followers
April 16, 2021
বেশ্যালয়ে  কোনো এক অন্ধকারে ঠোট ছুতে যাওয়ার সময় ধরা পড়েছিল কাজল, এরপর বিতাড়িত হয় দেশ থেকে৷ আমেরিকা গিয়ে নাক ডুবিয়ে পড়াশোনা, এরপর একদিন বাবা মারা যাওয়ায় আবার দেশে ফিরে আসতে হয়, বৃষ্টিতে ভিজতে ভিজতে বাবার কবর দর্শন করে আর মাটিতে লেগে থাকা তার বাবার রক্তের ছোপ দেখে। দলীল দস্তাবেজ ঘাটতে গিয়ে আবিষ্কার করে তার বাবা ছয় তলা থেকে লাফ দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন কোনো এক ইব্রাহিম গাজীর কারণে, জলেশ্বরী গ্রামের ইব্রাহিম গাজী। যে বাবাকে কোনোদিন ঠিক করে জানা হয় নি, বেশ্যালয়ে পা দেয়ার কারণে যে বাবা তাকে দূরে সরিয়ে ফেলেছিলো, তাকে জানার আগ্রহের জন্য কাজল নৌকায় উঠে, জলেশ্বরীর দিকে যাত্রা শুরু করে।

 

 
এই অংশটুকু হচ্ছে গল্পের গৌণ অংশ, শিক্ষিত একজন ব্যক্তিকে নদীতে, বন্যা কবলিত অঞ্চলে নামানোর জন্যে লেখকের এই প্লটের দরকার ছিল। তারপর কাজলের সভ্যতার মোড়কে ঢাকা  চোখ দিয়ে আমরা দেখতে থাকি জলের লোকজনের গল্প। জলে ডুবে থাকা নরককে দেখি। দেখি লোকজন খোদার থেকেও ক্ষুধাকে বেশি ভয় পায় এখানে। সভ্যতার মোড়ক, শিক্ষা নামক ফিল্টার অকেজো হয়ে যায় দুর্দশায়। অনেক লোক এসেছে, গল্পটাতে নিজের অংশটা জুড়ে দিয়ে বিদায়ও হয়ে গেছে। এ গল্প বেদে সম্প্রদায়ের হতে পারতো, বুজির হতে পারতো, মেকুর হতে পারতো, আসাদ উদ্দীনেরও হতে পারতো। কিন্তু তাদেরকে লেখক বিতাড়িত করে দিয়েছেন মাঝপথে, গল্পের সিমেন্ট হিসেবে ব্যবহার করেছেন, তাদের জীবন ব্যবস্থা হালকা ফুটিয়ে তোলার মাধ্যমে গল্পের গাথুনি শক্ত করেছেন। এরপর গল্পটাকে পুরো আলাদা করে ফেলেছেন। অন্য কারো গল্পে পরিণত করেছেন।

 

 
গল্পটা তাপসীর, পুরো উপন্যাস জুড়েই মঞ্চ সাজানো হচ্ছিল শেষ অঙ্কের জন্য। তাপসী চরিত্রটি একটা জায়গায় এসে আঘাত করে। চোখ রাঙানো নেই, আঙুল তোলা নেই, বিদ্রোহ নেই…..এরপরেও কিছু একটা দেখিয়ে যায়। দুর্বল করে দিয়ে যায়, আমাদের ভিত্তি নাড়িয়ে দেয়। লেখক শেষের দিকে ফুটিয়ে তোলেন অন্ধ বিশ্বাস এবং ভালোবাসার দন্দ্ব।

 
দূর থেকে কেউ একজন কিশোর কণ্ঠে বলে উঠলো,

ঐ মালাউন মাগী, কোন ভাতারের বাড়ি যাস?

 

মাঠের সবাই এই বাক্যে প্রবল আনন্দে হেসে উঠলো। আমি দূর থেকেই চিনলাম ছেলেটিকে, সদ্য গোফ উঠেছে নাকের নিচে। পৌরষত্ব দেখানোর ছুতো সে খোঁজে সর্বক্ষণ। কিছুদিন আগে তাপসীর কাছে থেকে এটা সেটা সাহায্য করাই তার পৌরষত্ব ছিল। আজ হিন্দু নারীকে গালি দিয়ে সে জাতে উঠলো। তার গর্বে ফুলে ওঠা বুক দেখলাম। তাপসী যেনো শুনতেই পায় নি, কিন্তু দ্রুত পা চালিয়ে সে এই অপমানকে পাশ কাটাতে চাইলো। একবারও ফিরে তাকালো না ছেলেটির দিকে, যে ছিল তার স্নেহধন্য, সে আজ পুরুষ হয়েছে!


 

 এরকম একটা উপন্যাসে, যেখানে বেশিরভাগ অংশ জুড়েই ছিল নির্লিপ্ততা, সেখানে এই কয়েকটি লাইন, এমনকি পুরো শেষাংশই অবাক করার মতো শক্তিশালী। যে নারী, দিনরাত এক করে দিয়ে গ্রামের কলেরা রোগীদের সেবায় নিয়োজিত ছিল, সেই নারীকেই কিছু কিছু মানুষ শুধুমাত্র বিশ্বাসের অমিল অথবা নিজ আদি বিশ্বাসের সাথে না মেলায় লাঞ্চিত করা শুরু করলো, ভালোবাসার প্রতিদান গালি দিয়ে দিলো। নারীর পিছনে লেগে পুরুষরা শুরু করলো পৌরষত্ব দেখানো। হ্যা, অনেক কিছুই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিলেন লেখক।

 

ওবায়েদ হকের লেখা এই প্রথম পড়লাম, বর্ণনার আতিশয্য নেই উনার লেখায়। উপমার ব্যবহার দুর্দান্ত হওয়ায়, অনেক কম বর্ণনায় অনেক কিছু বলে ফেলেন, পাঠকের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেন। লেখালেখির স্টাইলের মধ্যে শহীদুল জহিরকে কিছুটা খোঁজে পাওয়া যায়, এ জিনিসটা উপভোগ করেছি। উপন্যাসে কিছু জায়গা আরও একটু বর্ণনাত্মক হলে হয়তোবা ভালো হতো, কিন্তু ছোট এবং হালকা বাক্যে গল্প বলে যাওয়াই উনার শক্তিশালী দিক। এজন্য এদিকটা পাশ কাটিয়ে যাওয়া যেতে পারে।

 

 
তাপসীর জন্য এক তারা, বেদে সম্প্রদায় আর উপন্যাসের সাধারণ মানুষগুলোর জন্য আরও এক তারা, লেখকের উপমার ব্যবহারের অসাধারণ দক্ষতা এবং গ্রামের যে মানুষগুলো তাপসীকে ভালোবেসেছিল তাদের জন্য আরও একটি করে দুটো তারা। সলিড ফোর স্টার্স।


পুনশ্চ: রিফাত ম্যাডামকে ধন্যবাদ বইটি রেকমেন্ড করার জন্য।আমি সাজেস্ট করলে উনি দু' একদিনের ভিতরই পড়ে ফেলেন। সেখানে আমি এক দু' মাস দেরি করে ফেলি :(

তবে, অবশেষে শেষ করতে পেরে ভাল্লাগছে ^_^

১৬ ডিসেম্বর, ২০২০

 

 

 
Profile Image for Mahbuba Sinthia.
133 reviews97 followers
June 3, 2021
ঠিক করেছিলাম ধীরে সুস্থে বইটা পড়ব। আমি আবার অন্য সব বিষয়ে আলস্যে বিশ্বাসী হলেও বই পড়ার ক্ষেত্রে নই, বরং ' ধর তক্তা, মার পেরেক 'ই আমার মূল মন্ত্র বলা চলে। ভেবেছিলাম দু'সপ্তাহে একবার পড়ব, শেষে এক সপ্তাহে টানা দুবার পড়ে ফেললাম। আরও বহুবার বইটি পড়ব, তাতে কোন সন্দেহ নাই।

বইটা শুরু করার আগেই মায়ায় পড়েছিলাম। পুরো বইটা জুড়ে রেশ ছিল তার, বিশেষ করে প্রথম তিন অধ্যায়ে। মনে হচ্ছিল, আমিই যেন মেঘনার বুক চিড়ে ছুটে চলেছি জলেশ্বরীর পথে।

মেঘনার পাড়ের জীবন, বন্যা কবলিত মানুষের দুর্দশা, কলেরা মহামারীর প্রকোপ - সবই উঠে এসেছে লেখনীতে। নদী ও মানুষ - কোনটাই বাদ পড়েনি। নিজের চোখে না দেখা হলেও বন্যায় মেঘনা পাড়ের বাসিন্দাদের হাহাকার বড় সত্য আর প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে।

কাজল কিন্তু আমাদের তথাকথিত ' প্রোটাগনিস্ট ' নয়। তার সাহস নেই, আছে শুধু মায়া। সে বজ্রপাত আর বৃষ্টিতে ভয় পেয়ে তা প্রকাশ করে তার প্রতিবেশিনীর কাছে, পাগলের মার ঠেকাতে লুকায় সালেহার আঁচলের তলে। এমনকি ঠিক করে রাগও করতে পারে না সে। তার মধ্যে আমি কোথাও যেন শ্রীকান্তের ছায়া দেখতে পাই। তাপসীকে রাজলক্ষ্মী বলে ভ্রম হয়না যদিও।

নিজের আত্মপরিচয় খুঁজে পাওয়ার আখ্যান জলেশ্বরী। খুব শীঘ্রই আবার হারিয়ে যাব এর দু মলাটের মাঝে।

অসংখ্য ধন্যবাদ Rifat আপুকে, এত সুন্দর একটা বই রেকমেন্ড করার জন্য।
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews34 followers
March 6, 2021
ওবায়েদ হক,বাংলা সাহিত্যের নির্জনতম লেখকদের একজন। অথচ যেসব গল্প তিনি বলেন সেগুলো একেকটি বোমা বিশেষ। আসল বোমার সাথে পার্থক্য এই যে,ওবায়েদ হকের এই বোমাগুলো সরাসর��� হৃদয়ে আঘাত হানে। 'জলেশ্বরী' ও তেমনই একটা বোমা,সেটা মনের অতলে ঢুকে আমূল নাড়িয়ে দিয়ে গেলো।
Profile Image for Israt Zaman Disha.
194 reviews622 followers
February 28, 2018
3.5/5...
অবশেষে পড়া হল ওবায়েদ হকের জলেশ্বরী। ওনার নীল পাহাড় বইটি পড়েছি আরও অনেক আগে। সেই থেকে জলেশ্বরী, তেইল্যা চোরা খুঁজছিলাম। কিন্তু ওনার বইগুলো একেকসময় একেক প্রকাশনী থেকে রিপ্রিন্ট হয়। সঠিক তথ্যের অভাবে এতদিন খুঁজে পাইনি। এবার বইমেলায় হৃদি প্রকাশ থেকে প্রকাশিত হয়েছে। প্রথম যে কথাটা না বললেই নয় সেটি হচ্ছে নতুন প্রচ্ছদ। সাধারণত প্রচ্ছদ নিয়ে আমার খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু এই বইয়ের নতুন প্রচ্ছদ দেখলেই কিনে ফেলতে ইচ্ছা করে। সুন্দর করে সাজিয়ে রাখার মত প্রচ্ছদ হয়েছে। এখন আসি কাহিনীতে।

গল্পটা সুন্দর। বেশ নাটকীয়। কখন কি হবে বোঝা যায় না। পড়তে মায়া চলে আসে। কাজলের উপর, তাপসীর উপর, মতিন, নিতাই, বুজি এদের উপর। আর একটা দিক হচ্ছে, ছোট্ট একটা উপন্যাসে বেশ কিছু চরিত্র নিয়ে এসেছেন। এবং সেগুলো এঁকেছেনও নিখুঁতভাবে। কোন চরিত্র পড়ে মনে হয়নি একে ঠিক বুঝতে পারছি না। আরও অনেক কিছুই বলতে চাচ্ছি কিন্তু স্পয়লার হয়য়ে যাবে।

এত ভালো লাগার পরও একটু কম তারা দিচ্ছি কারণ নীল পাহাড় পড়ে এক্সপেকটেশন অনেক বেশি ছিল। সেই মুগ্ধতা জলেশ্বরীতে পাইনি। আর কিছু কিছু জায়গায় হুমায়ুন আহমেদের লেখনীর ছাপ পড়েছে মনে হয়েছে, বিশেষ করে শেষে।

Profile Image for Moumita Hride.
108 reviews65 followers
July 11, 2017
প্রথমেই বলি, কিছু বই পড়ার পর থমকে যেতে হয়, কিছু বই নিশ্বাস আটকে ফেলে, ওবায়েদ হকের "জলেশ্বরী" তেমন একটা বই।

বইটা শুরু হয় কাজল (নায়কের নাম উপন্যসের প্রায় শেষের জানা যায়) নামের একটা যুবকে দিয়ে, যার বাবা সদ্য মারা গেছে এবং রেখে গেছে অনেক সম্পত্তি। গম্ভীর বাবার সাথে তার কোন কালেই খুব বেশি সখ্যতা ছিল না! বাবা মারা যাবার পর বাবার ঘর থেকে পাওয়া কিছু টুকরো কাগজ থেকে জানতে পারে একটা গ্রামের নাম "জলেশ্বরী" আর একটি লোকের নাম "ইব্রাহিম গাজী".... কে এই ইব্রাহিম গাজী আর এই লোকের সাথে তার বাবার কি সম্পর্ক? তার বাবাকে জানার অদম্য কৌতুহল থেকেই কাজল বের হয়ে পড়ে জলেশ্বরী গ্রামের উদ্দেশ্যে.... সে কি পারবে সে সব রহস্য ভেদ করতে?

উপন্যাসটির সময়কাল হল আটাশির ভয়াবহ বন্যা। লেখক খুব নিপুন হাতে সে সময়কার দুর্ভোগ, দুর্দশার কথা বর্ণনা করেছেন। গ্রামের গরীব মানুষরা কি করে অনাহারে দিন কাটিয়েছে, একটু ভাতের জন্য কি কি কষ্ট করেছে তার হৃদয়বিদারক চিত্র তুলে ধরেছে লেখক। বইটা পড়লে অজান্তেই মন ভার হয়ে যায়।

গল্পের শেষ টাও খুব সুন্দর। এর চেয়ে ভালো সমপ্তি বোধহয় হত না।

প্রথমে যখন পড়ি বেশ সহজ মনে হলেও লেখকের শব্দ চয়ন, উপমার ব্যবহার প্রশংসা করার মতই। শুধু আমার কাছে মনে হয়েছে যে উপমা লেখক একটু বেশিই ব্যবহার করে ফেলেছেন কারন প্রতি বাক্যেই উপমার ব্যবহার চেখে পড়ে।
এছাড়া অসাধারন বই, বই পড়ার পুরো সময় আপনি ঘোরে থাকবেন লেখকের লেখনীর।

রেটিং : ৪.৮/৫
#হ্যাপি_রিডিং :)
Profile Image for Sumaîya Afrôze Puspîta.
220 reviews288 followers
May 6, 2025
‘… যে শিক্ষা দিয়ে অপরাধ করা শিখান, সেই শিক্ষা দিয়ে মানুষ গড়তে পারেন না? বদলানো কি একেবারে অসম্ভব?’

‘অসম্ভব‌ই তো মনে হয়। কেউ তো পারেনি বদলাতে।’
…… …… ……

‘আপনি ভুল বলেছেন, অন্তত একজন বদলেছিল।’

▪️▪️▪️

আটাশির সময়ে চাঁদপুরের দিকে বন্যাকবলিত অঞ্চলগুলোতে কথক এক লোককে খুঁজতে বেরোন। ঘোর দুর্যোগ মাথায় নিয়ে নৌকা করে চলেছেন মানে বুঝতে হবে লোকটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ তার কাছে। এই যাত্রাপথ ঘিরেই সমস্ত গল্পটা—নদীর সৌন্দর্য-নদীর ভয়াবহতা, মানুষের সৌহার্দ্যরূপ-মানুষের নির্মমরূপ, ক্ষুধা-ভালোবাসা, শীতলতা-উষ্ণতা। কথকের সাথে সাথে আমরাও ভ্রমণ করে চলি রুদ্র প্রকৃতির মাঝে পানিবন্দী, পেটে-বন্দী মানুষগুলো কেমন আছে তা দেখতে দেখতে।

ধু ধু পানি, নদীর চর, বেদেনির দল, কলেরায় উজাড় গ্ৰাম, লাশের গন্ধ, ডাকাতদল এসব পেরিয়ে কথক যে প্রশ্নের উত্তরের পেছনে ছুটছিল–তা কি পাবে? উপন্যাসটা ছোট, তবে এর শেষ মায়াময়।
Profile Image for Shaon Arafat.
131 reviews31 followers
February 28, 2020
বিশ্বাস করুন, শাহাদুজ্জামান এবং হরিশংকর জলদাসের পরে, এ সময়ের দেশীয় সাহিত্যে ওবায়েদ হক-ই সবচেয়ে শক্তিশালী লেখক।।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
July 5, 2021
আটাশির প্রবল বন‍্যা; প্রতীক্ষারত এক সন্তানসম্ভবা মায়ের চিলচিৎকারের সাথে পরিবারের প্রাচীন থেকে নবীন সবার গলায় উৎকন্ঠার কাঁটা ফুটছে, বিঁধছে রক্তাক্ত করছে দুশ্চিন্তার দুষ্টগ্ৰহ।নয়টি বছর পরে নতুন প্রাণের আভাসের আনন্দে আত্মহারা হওয়ার বদলে দূর্যোগের ঘনঘটায় প্রসবপূর্ব জটিলতায় এই ঝড়ে জলে কোথায় কি করবে তার জন্য চিন্তিত শঙ্কিত সবার মুখেই দোয়া দুরুদ, জায়নামাজে জননীর উদাত্ত আহ্বানে মুখরিত আঁতুড়ঘরে অবশেষে এলো সে মাহেন্দ্রক্ষণ।ভূমিষ্ট হলো নূরমতি বানুর আদরের প্রথম কন‍্যার"আদরী"। স্বস্তির আর সন্তুষ্টির হাসিতে উদ্ভাসিত হলো গাজী বাড়ির আঙিনা,বড় মামা বানের পানির ধার না ধরে ময়রা বাড়ি ছুটলো মিষ্টিমুখের ব‍্যবস্থা করতে।পুরো ঘটনা আমার জন্মেরও বহু আগে,তবু সব ছবির মতোই লাগে।কারন কন‍্যাটি আমার বড় ফুপুর প্রথম সন্তান আর বড় মাতুলটি জন্মদাতা পিতা আমার।এই গল্প বহুবার পিতা ,তার মাতা , আশেপাশের সবার মুখেই শোনা।

কাজেই জলেশ্বরী তে যাবার জন্য বন ‍্যায় কাজলের যাত্রাপথের যাত্রী হয়ে গেলাম প্রথম থেকেই, "ইব্রাহিম গাজী"নামের থেকে পিতৃপুরুষের পদবীর সাথে মিল থাকায় তার সাথে পরিচয়ের আকুলতা হলো আকাশচুম্বী।আটত্রিশ দিনের সফরে সহস্র কুলের বাঁক ঘুরেফিরে হাতড়ে বেড়িয়েছি "জলেছরি"যাবার রাস্তা।

যেতে যেতে দেখেছি নিতাই মাস্টারের ধুলোবালি মাখা ঘরে লক্ষ্মী প্রতিমা গড়া পত্মীর পেটের তাড়নায় কূলত‍্যাগী হয়েও তার প্রতি পতির ভালোবাসার প্রগাঢ়তা,ক্ষুধায় মরিয়া পিতার পনে‍্যর মতো চারশো টাকার বিনিময়ে আত্মজাকে বিকিয়ে দেওয়ার ফরিয়াদ কিংবা মতিনের মেয়ের জন্য স্নেহের জোয়ার।

এসব বহু পুরাতন গল্প,গ্ৰাম বাংলায় ঘোর বর্ষায় ঘুরতে গেলে এই রেখাচিত্রের বিশেষ কোনো পরিবর্তন আজো দেখা যায়নি।পানিতে তাদের জন্ম ,পানিতেই তাদের বাস,মরনকে তারা বরন করে পানিকে ভেবে ত্রাস;তীব্র স্রোতের তোড়ে যে ভেসে আসে ওলা বিবির বসবাস।

পড়ে বেশি দুঃখ অবশ্য আজকাল তেমন পাইনা, পেশাগত বা পড়াশোনার কারনে প্রতিকূলতা প্রতিবন্ধকতার সাথে পৃষ্ঠপ্রদর্শন আর এসবের পৃষ্ঠপোষকদের পরনিন্দা আর আত্মগরিমায় নিস্ফল আস্ফালনের প্রতিবাদে স্মারকলিপি আর তদন্ত কমিটি গঠন ছাড়া বিশেষ কিছু দেখিনা এখনো।

তাই জলেশ্বরীতে যাবার সময়ে কাজলের মায়া দেখে মুগ্ধ নয়নে ভেবেছি কঙ্কালসার শরীরের এসব মানুষের জন্য বোধহয় এমন মাতৃহারা পিতার ছায়াছাড়া অন‍্য কারো পক্ষে সম্ভব নয় এত দরদ দিয়ে ভাবার।

খাদে‍্যর তেজস্ক্রিয়তা নিয়ে গবেষণারত কাজলের সামনে ক্ষুধা তীব্র দহনে পুড়িয়ে খাওয়া শালুক,সেদ্ধ আলু বা পুঁটি মাছ,কিংবা শুকনো চিঁড়ে গুড়ের মহিমা বন‍্যাপীড়িত পল্লীতে বসবাসরত দের মতো পরম আরাধ্য আকাঙ্ক্ষার বস্তু।

বিষয়বৈভবের ভেলা থেকে চরের চোরাবালিতে জীবন মরনের দোদুল্যমান অবস্থায়;

দীর্ঘ পথে কাজলের সাথে হেঁটেছি আমি ঐ ওভারকোটের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক পরোপকারী মুক্তিযোদ্ধার কলেরায় মৃতদেহ সৎকারের সৎকাজে,বেদেদের বজরায় ভেসেছি বুজির সাথে,তাপসী কে দেখার প্রবল তৃষ্ণা নিয়ে তীর্থের কাকের মত ছটফট করেছি।পিতার নির্মমতা কে মৃত্যুর শাস্তিতে সমাধি দেওয়া কুসুমের জন্য কিছুটা কি চোখ ছলছল করেছিলো!

প্রতিটা মৃত্যু পাঁজরের প্রতিরোধ ভেঙে প্রহার করেছে আগের শোকে মুহ্যমান হয়ে থাকা মনকে।

ওবায়েদ হকের শব্দচয়ন গল্পের বুনট উপমার উপযুক্ত প্রয়োগ চরিত্র চিত্রিন কিচ্ছু নিয়ে বলার মতো ভাষা এই অধমের আঁচলে নেই।

নিজের তরতরিয়ে বেড়ে চলা তাপমাত্রা সহ অন‍্যান‍্য শারীরিক দুর্বলতার সাথে ইব্রাহিম গাজীকে খুঁজতে শুরু করা গল্পের শেষটা নিয়ে বোকা বনে যাওয়া আমার স্বপ্নে জলেশ্বরী না আসুক, অন্তত তাপসী আর কাজল যেন আসে।

রেটিং:⭐🌟🌠💥.৭০
৬/০৭/২১
Profile Image for HR Habibur Rahman.
284 reviews54 followers
April 21, 2024
লেখক স্বাধীনতা পরবর্তী সময় নিয়ে যেসব কথা বলেছেন সেসব Historically কতোটা সত্য? "নীল পাহাড়" বইয়েও ঠিক এইরকমই কথা বলেছেন। মুসলমান-হিন্দুদের যে ব্যাপারটা সেটা আরকি। ওবায়েদ হক যেমনেই হোক ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ওই টপিকে যানই। এখন কথা হচ্ছে হিস্টোরিকলি কতোটা সত্য এমন ঘটনা? নাকি লেখকের নিজস্ব কোনো অভিজ্ঞতা আছে? আমার স্বাধীনতা পরবর্তী সময় নিয়ে বই পড়া নেই তাই হয়তো মনে হচ্ছে লেখক নিশানা ধরেছেন মাত্র একদিকে।

"জন্মের সময় দাইমা মেয়ের নাড়ির বন্ধন কেটেছে, কিন্তু শাড়ির বন্ধন কাটতে পারেনি।"


            যাইহোক। ওবায়েদ হকের লেখা নিয়ে কারোর কোনো সন্দেহ থাকার কথা না। বাক্যে অলংকার, উপমা, তুলনা সব কিছুই নিপুণ কৌশলে ব্যাবহার করেন তিনি। একটু অসাবধান হলেই মিস হয়ে যাবে কোনো না কোনো একটা বাক্যের মর্মার্থ। পড়ার সময় ভাবতেছিলাম "একটা লাইন লেখার জন্য কত মিনিট করে ব্যয় করেছেন লেখক!" কারণ প্রত্যেকটা লাইনেই কোনো না কোনো অলংকার আছেই। বাংলা ব্যাকরণে কী বলে জানিনা তবে ইংরেজিতে Rhetoric বলে। Rhetoric গুলোর ব্যাবহার প্রত্যেকটা লাইনকে নতুন মাত্রা দিয়েছে। এমন কিছু বাক্যঃ

"দূরে গ্রামের গাছগুলো নিম্নবিত্ত সমাজের মতো কোমর সোজা করে দাঁড়াতেই পারছে না।"

"নিচে ধানের জমির গোরস্থান।"

"পাশের গ্রামের গাছগুলোর চুলের মুঠি ধরে কেউ যেন ঝাঁকাচ্ছে।"


              ভালো লেগেছে গল্পের চরিত্র গঠন। গল্পের কোনো চরিত্ররই মাত্রাতিরিক্ত শক্তি নেই। সাধারণত মেডিইভাল হিরোদের যেমন হিরোইক শক্তি থাকে আর সব কিছুতেই নিজেদের শ্রেষ্ঠত্ব জাহির করতে চায়। এই গল্পের চরিত্রগুলো আমাদের মতো সাধারণ মানুষের মতোই। তারা সমস্যার সম্মুখীন হয়, অন্যের সমস্যা দেখে তারপরও কিছু করেনা বা করতে পারেনা। হাঁটে গন্ডগোল লেগেছে? কিছু করার নেই। পাশ কেটে চলে যাওয়াই মঙ্গল।

শওকত, বজলু, লিয়াকত, নিতাই মাস্টার থেকে শুরু করে তাপসী, কুসুম, আসাদ উদ্দীন, কাজল, বুজি, লতিফ মিয়া, সালেহা সবাই সবার জায়গাতে পারফেক্ট। এই চিরিত্র গুলোর চরিত্রগঠন আর ডায়লগ গুলো এত সুন্দর যে মনের অজান্তেই সত্য বলে মনে হবে।


         অতিনাটকীয় চ্যাপ্টার কিছু আছে যেগুলো আসলে মানানসই না এরকম লেখার ক্ষেত্রে। এরকম ভাবগাম্ভীর লেখার মধ্যে ওমন নাটকীয়তা আসলে স্বাদ চলে যায়। নাটকীয়তা বজলু, লিয়কতের মধ্যে। নাটকীয়তা তাপসীর বটগাছে ওঠার ক্ষেত্রে, নাটকীয়তা তাপসীর ডাক্তার হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে, আর কাজলের অপরিপক্কতার নাটক তো আছেই। লেখক যেমন গ্রামে চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলেছেন, লোকজন যদি তেমোনি হয় তবে তারা অতো পরে বিরোধিতা করবেনা। প্রথম থেকেই করবে। সেটা না হয় পরের কথা কিন্তু সে কী তালা ভেঙ্গেছিল?  নাকি ডাক্তার সাব ওষুধ পত্র সব সহ বাড়িটা দরজা খোলা রেখে চলে গেছিলো? যেরকম কুসংস্কার সম্পন্ন গ্রামের কথা লেখক বলেছেন তেমন গ্রামে হুট করেই জেঁকে বসা যায়না। প্রচুর সময় লাগে। হটাৎ করে চলচিত্রের মতো টাইম স্পান দেখালেও মানা যেত। যেখানে লেখক একটা স্কুলের অবস্থা দেখিয়েছেন এত করুণ সেখানে রাতারাতি ফেমাস ডাক্তার হয়ে যাওয়া বিলাসিতা। 

আর কাজলের নাটকীয়তা তো আল্ট্রা লেভেলের। তার কানের কাছে এসে বলে যাচ্ছে তারা কী করবে, ইশারা ইঙ্গিতে ৫ বছরের বাচ্চাও জেনে যাবার কথা, তারপরও তার কিছুই মনে হয়না। ভালো করে ঘুম দিবে সে এখন।


গল্প সমন্ধে অল্পকিছু বলি। গল্প কাজলের ভ্রমন ঘিরে। যদিও কাজল নামটাও শেষে ছাড়া জানা যায়না। কোনো এক কারনে জলেশ্বরী যাওয়া নিয়ে গল্প আর তার সাথেই শুরু হয় স্বাধীনতা পরবর্তী বাংলাদেশের অবস্থা আর সেসময়ের মানুষের করুণ অবস্থা। ( বর্তমানও খুব বেশি এগিয়ে যায়নি সে-সময় থেকে )। গল্পে মানুষের হাহাকার, বন্যার কারনে অবস্থা, খেতে না পারার কারনে কী করতে পারে মানুষ এসবের বীভৎস বর্ননা ফুটে উঠেছে। যাত্রপথে গল্পের হিরো মানুষের দুঃখ দেখেছেন, মানুষের দুঃখের ভাগিদার হয়েছেন, নিজে সেই দুঃখে জড়িয়েছেন।

লেখার মাধ্যমে চোখের সামনে ছবি ভাসিয়ে তুলতে ওয়াবেদ হক কখোনো ভুল করেননা।.
Profile Image for Rakib Hasan.
455 reviews80 followers
October 21, 2022
বইটা অসম্ভব ভালো লাগলো। অনেক সময় দেখা যায় কিছু বই অনেক ভালো লাগে কিন্তু কিছু বলা যায়না আমার ক্ষেত্রেও তেমন। অনেকে গুডরিডস এ সুন্দর সুন্দর রিভিউ দিয়েছেন বইটা নিয়ে। লেখকের লেখনী অনেক ভালো লেগেছে, আমার পড়া ওবায়েদ হক এর দ্বিতীয় বই এটা, বাকিগুলোও ইন শা আল্লাহ পড়ার ইচ্ছা আছে।
Profile Image for শুভাগত দীপ.
274 reviews47 followers
January 1, 2020
|| রিভিউ ||

বইঃ জলেশ্বরী
লেখকঃ ওবায়েদ হক
প্রকাশকঃ বায়ান্ন ('৫২)
প্রথম প্রকাশঃ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬
প্রথম বায়ান্ন ('৫২) সংস্করণঃ সেপ্টেম্বর, ২০১৯
ঘরানাঃ সমকালীন উপন্যাস
প্রচ্ছদঃ তৃত
পৃষ্ঠাঃ ১২৭
মুদ্রিত মূল্যঃ ২৫২ টাকা
ধরণঃ হার্ডকভার

কাহিনি সংক্ষেপঃ কাজল একজন আমেরিকা প্রবাসী যুবক। বাবার অকস্মাৎ মৃত্যুর খবরে দেশে ফিরতে হলো তাকে। চিরজীবন কাজলকে দূরে দূরে রাখা বাবা তার জন্য অদ্ভুত এক ধাঁধা রেখে গেলেন। আর সেই ধাঁধায় নাম ইব্রাহীম গাজী। ইব্রাহীম গাজীকে খুঁজতে কাজল ভেসে পড়লো মেঘনার বুকে। গন্তব্য জলেশ্বরী গ্রাম।

১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যায় তখন তলিয়ে আছে মেঘনার আশেপাশের চরাচর আর গ্রাম৷ ফুলেফেঁপে ওঠা নদীতে ভেসে বেড়াচ্ছে মৃত মানুষের লাশ। গ্রামের পর গ্রাম যেন একবারে শ্মশানে পরিণত হয়েছে। আর এসবের মাঝেই একটা বজরা ও এর দুই মাঝি বজলু আর লিয়াকতকে নিয়ে কাজল ভেসে বেড়াচ্ছে কোন এক ইব্রাহীম গাজীর খোঁজে। আর এই খোঁজই এই অনভিজ্ঞ শহুরে যুবককে কয়েকটা বিচিত্র গল্প আর ততোধিক বিচিত্র অভিজ্ঞতার মুখোমুখি নিয়ে এসে দাঁড় করালো।

জলেশ্বরীর দিকে এগোতে গিয়ে বন্যাদুর্গত গ্রামগুলোর বীভৎস রূপ একের পর এক এসে ধরা দিতে লাগলো কাজলের সামনে। যেখানে সত্য আসলে ভয়াবহ কদর্য। ক্ষুধার তাড়নায় যে নরকে বাবা বিক্রি করে দিচ্ছে তার কিশোরী মেয়েকে, খেটে খাওয়া মানুষ ভাতের অভাবে পাতছে হাত, আর নিরীহ মানুষ হয়ে উঠছে হিংস্র ডাকাত। আলাদা আলাদা একেকটা গল্প, একেকটা জীবন। কিন্তু সবই জড়িত রাক্ষুসে মেঘনার প্রলয়ঙ্করী বন্যার সাথে।

পথ চলতে চলতে কাজল পরিচিত হলো বেদে দলের সর্দার মেকু ও মমতাময়ী বৃদ্ধা বুজির সাথ���। জীবনে দোলা দিয়ে গেলো তাপসীর গভীর চোখ জোড়া। ধর্মকে পুঁজি করে জীবন কাটানো সগির মুন্সির চেহারারও কয়েকটা দিক তার দেখা হয়ে গেলো। জানা হলো ক্ষুধার স্বরূপ, যা এই জগতের সবচেয়ে প্রাচীন অনুভব গুলোর একটা। মায়ায় ভরা পৃথিবী যেমন চেনা হলো কাজলের, তেমনি বারবার ওর এই পৃথিবী ঢেকে গেলো ক্রুরতা আর হিংস্রতার কালি গোলা অন্ধকারে। আসাদ পাগলা তাকে শেখালো, মৃত্যু সুন্দর; সুশৃঙ্খল। এমন আরো কতো মানুষ, আর সেই সাথে কতো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা কাজলকে সম্পূর্ণ অন্য এক পৃথিবীর সন্ধান দিলো। যে পৃথিবী একইসাথে বিস্ময়কর রকম সুন্দর আর বীভৎস রকম ঘোলাটে।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ 'জলেশ্বরী' যখন শেষ করলাম, বেশ কিছুক্ষণ বইটাকে ছুঁয়ে নিশ্চুপ নিশ্চল হয়ে বসে ছিলাম। এতো গভীর মায়ায় জড়ানো কোনকিছু আমি অনেকদিন পড়িনি। বিহ্বল অনুভূতিটা এই এখনো আমাকে ছেড়ে যায়নি একটুও। আমি জানিনা, আমি আমার প্রতিক্রিয়ার ঠ��ক কতো ভাগ ঠিকমতো ব্যক্ত কর‍তে পারবো। শুধু এইটুকু জানি যে ওবায়েদ হক 'জলেশ্বরী' নামের যে জগতের সন্ধান আমাকে দিয়েছেন, সেই জগতটাকে আমি কখনোই ভুলতে পারবোনা।

ওবায়েদ হকের লেখনী নিয়ে আসলে নতুন করে বলার মতো কিছুই পাচ্ছিনা। সবসময় অন্তরালে থাকা এই লেখক যে কতো চমৎকার সাবলীল ভঙ্গিতে গল্প বলে যান, তা তাঁর পাঠক মাত্রই জানেন। 'জলেশ্বরী'-ও তাঁর অনবদ্য আরেক সাহিত্যকীর্তি। আমার মনে হয়না, ১৯৮৮ সালের ভয়াবহ বন্যাকে নিয়ে এতোটা গভীর ভাবে কোন কেউ কোন গল্প বলেছেন। মানবিক আবেগে পরিপূর্ণ এমন এক উপন্যাস এটা, যার ভেতরের প্রত্যেকটা চরিত্রই যেন বাস্তবের একেকজন রক্তমাংসের মানুষ।

২০২০ সালের শুরু এমন অসাধারণ একটা উপন্যাস দিয়ে হয়েছে ভেবে বেশ ভালো লাগছে। এই ভালো লাগার সাথে মিশে আছে অদ্ভুত এক বিষন্নতা। আর এই বিষন্নতার জন্ম দিয়েছে 'জলেশ্বরী'। মনে থাকবে কাজল, তাপসী আর জলেশ্বরীকে।

তৃত'র করা প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে। এই বইটা দিয়েই নতুন প্রকাশনী বায়ান্ন ('৫২)-এর যাত্রা শুরু। যদিও ইতিমধ্যে আরো বেশ কিছু বই প্রকাশ করে ফেলেছে এই প্রকাশনী। 'জলেশ্বরী'-এর প্রোডাকশন কোয়ালিটি সন্তোষজনক। বায়ান্ন ('৫২) এগিয়ে যাক।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৭৫/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৪.৩৬/৫

© শুভাগত দীপ

(১ জানুয়ারি, ২০২০, রাত ১১ টা ৫০ মিনিট; ব্যাচেলর'স ডেন, নাটোর)
Profile Image for Momin আহমেদ .
112 reviews49 followers
April 9, 2021
বর্তমান বাংলাদেশের লেখকবৃন্দ যেভাবে থ্রিলার লিখে চলেছেন এর মধ্যে এমন একটি ভালো বই লেখার চেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবি রাখে।
Profile Image for তান জীম.
Author 4 books279 followers
December 23, 2020
বইটা পড়ে পুরো স্তব্ধ হয়ে গেছি! একটা মানুষ যে এতটা চমৎকারভাবে লিখতে পারে, এতটা জীবনবোধ তার কলমের কালিতে প্রস্ফুটিত করতে পারে এটা হয়তো ওবায়েদ হকের বই না পড়তে এতটা ভালোভাবে কখনোই অনুভব করতে পারতাম না। মসৃণ সাবলীল লেখায় কখন যে বইটা শুরু করলাম আর কখন যে পড়তে পড়তে একদম শেষে চলে আসলাম একদম বুঝতেই পারলাম না৷ এই যাত্রা টুকুর মাঝে পেয়েছি সহজভাবে বলা অনেক বড় বড় ফিলোসফি, জীবন-মানুষ-মনস্তত্ব নিয়ে অন্যমাত্রায় ভাববার খোরাক। আর পরিমিত রসবোধের সাথে অসাধারণ শব্দচয়নে প্রাঞ্জল উপ্যনাসিকা 'জলেশ্বরী', আমার মনে হয় প্রতিটি পাঠক লেখকের পড়া উচিৎ। আরো অনেক কিছু বলার ছিলো এই বইটি নিয়ে, কিন্তু কেন যেন মনে হচ্ছে আমার মুগ্ধতা ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। সেই ব্যর্থতা মেনে নিয়ে শুধু বলছি, প্রিয় ওবায়েদ হক, আপনি সবসময়ই থাকবেন আমার প্রিয় লেখকদের নিয়ে করা তালিকার শীর্ষে। আপনি ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
Profile Image for তানজুম ফেরদৌস.
56 reviews5 followers
June 8, 2025
ঈদের দিনের বই!

উপন্যাসটা শেষ করে মনে হয়েছে একটা কোটেশন আছে না? "the journey is better than the destination"
তো ইব্রাহিম গাজির খোঁজে গিয়ে গল্পের নায়ক কাজলের যে জার্নি তাতেই গল্পের প্রায় শেষে চলে গিয়েছি! জার্নিতেই যেন পরিচয়, পথ চলাতেই আনন্দ!
ভালোই কাটলো ২৫ এর ঈদুল আযহা! বই ভালোই লেগেছে আমার.....
Profile Image for Akash Saha.
156 reviews26 followers
July 16, 2022
লেখনী চমৎকার!!! এত সুন্দর বর্ণনা খুব কম লেখকের হাত দিয়েই বের হয়। তবে প্লট একটু বেশিই ড্রামাটিক।
Profile Image for শাহ্‌ পরাণ.
259 reviews74 followers
November 8, 2022
সবার লাস্টের টুইস্টটা ভালো ছিলো।
গল্পে অসাধারণ কিছু ব্যপার ছিলো, বন্যাকবলিত অঞ্চলের দুর্দশা কতটা তীব্র হতে পারে তার এত স্পষ্ট বিবরণ এর আগে কোথাও পড়িনি। খাবারের অভাবে মানুষের মনুষ্যত্যের অবনতির যে রূপ লেখক দেখিয়েছেন তা সত্যিই প্রসংশনীয়।

গল্পে প্রচুর আপস এন্ড ডাউন ছিলো। মূহুর্তে মূহুর্তে বাস্তবতা বদলে যাচ্ছিলো। পুরাই সিনামার মতো। লেখক প্রচুর সিনেমা দেখেন স্বীকার করতেই হবে। এর আগে কোন বাঙলা বইয়ে ইনসেস্টের মতো ব্যপার নিয়ে লিখতে দেখিনি। এই বইয়ে প্রথম দেখলাম। মানুষের ডার্ক সাইড লেখক চমৎকার ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।

আগে পড়া উনার দুইটা বইয়ের মতো এই বইয়েও অতি নাটকীয়তার ছাপ ভালো লাগেনি। নাটকীয়তা না থাকলে ৪/৫ দিতাম হয়তো। বইয়ের তিনটি অংশ খুবই দুর্বল লেগেছেঃ

১। জলেশ্বরী যাত্রার পেছনের কারণটা আমার কাছে যথেষ্ট শক্তিশালী লাগেনি। আরেকটু বেকগ্রাউন্ড স্টোরি দিলে ভালো হতো।

২। পি এইচ ডি করা একটা লোক ধুতুরা ফুলের মতো ব্যপারটা বুঝতে পারলো না, এটা কেমন কথা! ব্যপারটা সেই গানের মতো হয়ে গেছে, “আমি জেনে শুনে বিষ করেছি পান।”

৩। তাপসীর সাথে নির্জন চরে সাক্ষাত এবং নায়ককে সাহায্য করা এবং চর থেকে উদ্ধারের গল্প একেবারে রূপকথার গল্পের মতো লেগেছে। ভাই! উপন্যাসে এতো রূপকথা কেন থাকবে?

তাছাড়াও গল্পে ভালো লাগার মতো অনেক কিছু ছিলো আবার অতি নাটকীয়তার জন্য অনেক কিছুই ভালো লাগেনি। ভালো লাগা এবং না লাগার এক মিশ্র অনুভূতি হচ্ছে। বইয়ের দুটো ভালো লাগা লাইনঃ

পৃথিবীতে সবচেয়ে সফল মানুষগুলো সবচেয়ে দৃঢ়ভাবে ‘না’ বলতে পারে।
দরিদ্র মানুষ উচ্চবিত্তদের দেখলেই ভয় পায়, নয়তো ভয় পাওয়ার অভিনয় করে।
Profile Image for Md. Al Fidah.
Author 126 books549 followers
February 28, 2016
বেশ কিছু দিন শুধু থ্রিলার না হয় বাচ্চাদের বই পড়তে পড়তে একটু বিরক্ত হচ্ছিলাম। থ্রিলার থেকে ব্রেক নেয়ার দরকার ছিল।

বইটা ছোট। এধরণের বই পড়তে লাগার কথা ২/৩ ঘন্টা। সেখানে লাগল ৫ ঘন্টার মতো! নাহ, খারাপ লেখেছে সে কারণে না, ধীরে ধীরে রয়ে সয়ে পড়েছি বলে।

প্রতিটা চরিত্র চিত্রণ হয়েছে খুব সুন্দর করে, ঘটনার প্রবাহটাও ভালো। তবে দুই এক ক্ষেত্রে এক ঘটনা থেকে আরেক ঘটনায় যেতে আরেকটু সময় দিলে ভালো হতো। একটু দ্রুত বলে, কাকতালীয় বলে মনে হয়।

ওবায়েদ হক উঠতি লেখক নন। এটি তার চতুর্থ বই। আগের সবগুলো কিনব বা যোগাড় করব ইনশাল্লাহ। হুমায়ুন আহমেদ মারা যাবার পর, অনেকেই তার অনুকরণে লিখে নাম কামিয়েছেন। কিন্তু ইনি ব্যতিক্রম, যদি কারো সাথে তুলনা দিতেই হয় তো আমি বলব, ইনি শহীদুল জহিরের মতো। আমি অবশ্য শহীদুল জহিরের দুই/তিনটা উপন্যাস পড়েছি মাত্র। পার্থক্য হলো, ওবায়েদ হকের লেখা অনেক বেশি সহজ, পড়তে অত বেশি সময় লাগে না।

লেখকের হাত থেকে আরও লেখা বেরিয়ে আসুক, এই কামনা করি।
Profile Image for Royhana Akter Rimu.
73 reviews4 followers
October 21, 2020
A very long journey to জলেশ্বরী
উঁচু দালান আর ধন সম্পত্তির বাইরে যে একটা জগৎ থাকে সেই জগতে ধীরে ধীরে প্রবেশ। মাথায় কয়েকটা প্রশ্ন আর এক অজানা লোককে অনুসন্ধানের ইচ্ছা যিনি থাকেন জলেশ্বরীতে।
এ জগতে পেটের ক্ষুধা মেটাতে সামান্য কিছু অর্থের বিনিময়ে নিজের কন্যাকে বিক্রি করে দেয়, বউকে তুলে দেয় পরপুরুষের হাতে। মৃত্যুও যেন ক্ষুধার জ্বালা থেকে সহজ।
পথগুলো কঠিন অভিজ্ঞতায় ঘেরা। মৃত্যু যখন আলিঙ্গন করে দেহটা তখন অনাদরে পড়ে থাকে আর শেয়াল কুকুরের আহারে পরিণত হয়। কেউ কারো কান্নার সাড়া দেয় না।


বুকের মধ্যখানটা ঢিপ ঢিপ করছে। কি লিখবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। :)
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
June 2, 2020
নীল পাহাড় অসম্ভব সুন্দর৷ ৫ তারা দিয়েও মনে হয় আরও কিছু তারা দিয়ে দেই বইটাকে। তেইল্যাচোরাও বেশ ভালো লেগেছে, একটু অন্যরকম। কিন্তু জলেশ্বরী বইটা অই দুটো বইয়ের তুলনায় আমাকে হতাশ করেছে বলা চলে 🐸 ভালো, তবে খুব ভালো লাগেনি।
Profile Image for Fatema-tuz    Shammi.
126 reviews21 followers
February 8, 2021
"ছাতিম গাছের নিচে কবর খুঁড়ে আসাদ উদ্দিন কে শোয়ালাম। ময়লা ছেড়া ওভার কোটটি জীবিত অবস্থায় সে কোনদিন কাছ ছাড়া করেনি।আমি ওভার কোটটি দিয়ে তাকে ঢেকে দিলাম। তারই কোদাল দিয়ে টেনে মাটি নামালাম কবরে।এই প্রথম আমি একা একজন মানুষকে কবর দিলাম। অনেক্ক্ষণ বসে ছিলাম তার কবরের পাশে,আমার বারবার মনে হচ্ছিল আসাদ উদ্দিন আমাকে বলছে,
কাজল যেও না,আমার ভয় লাগছে।"

জলেশ্বরী
~ওবায়েদ হক

দ্বিতীয়বার পড়লাম। তাও এত ভালো লাগল। দু'একটা ব্যপার ছাড়া পুরো উপন্যাস টা উপভোগ্য ছিল। কখনো এত খারাপ লেগেছে আবার তার মধ্যে ও মুগ্ধ হওয়ার মত ব্যপার গুলি ছিল। কাহিনীর পরিক্রমা গুলা অনেক গোছানো ছিল। একদম সমাপ্তি পর্যন্ত। এবার একটু ধীরে সুস্থে পড়ছিলাম আর বুঝতে পারলাম ধীরে পড়ার মধ্যে আলাদা একটা সৌন্দর্য আছে।
Profile Image for Rohun.
120 reviews58 followers
October 6, 2021
একজন লেখক, একজন জাদুকর হতে পারে! এই বছরের পড়া অন্যতম সেরা উপন্যাসিকা!
Profile Image for Adham Alif.
334 reviews80 followers
September 20, 2022
"নীল পাহাড়ে" তে চড়ে পাড়ি জমিয়েছিলাম দেশের পার্বত্য অঞ্চলে। এবার পাহাড় থেকে সোজা দেশের বানভাসি এলাকায়। দুই বইতেই অবশ্য একটা ব্যাপার কমন। অসংখ্য বিষাদের গল্প।

পিতার অজানা রহস্যের সমাধান খুজতে যাওয়া যুবকের সামনে উন্মোচিত হতে থাকে নির্মম বাস্তবিকতার। খাদ্যের অভাবে মানুষ কতোটা উন্মাদ হয়ে যেতে পারে তারই একটা রেখাচিত্র একেছেন। প্রতি পাতায় নতুন করে গল্প এসেছে সঙ্গে এনেছে একরাশ মায়া। বইটাকে চমৎকার না বলে উপায় নেই।

লেখক তার সব বইয়ের শেষেই দেখলাম একটু বেশিই দৈবঘটনার আশ্রয় নেন। সর্বাপেক্ষা কম সম্ভাবনার যতো ঘটনা আছে তা ঘটতে থাকে ক্রমাগত। এই ব্যাপারটা আরেকটু লজিক্যাল করা গেলে ভালো লাগত।
Profile Image for নিশাত জাহান ঊষা.
63 reviews30 followers
July 14, 2025
আশ্চর্য!!! এটা কি হলো!! এরকম হবে তা তো চিন্তা করিনি!!!🤯


মাঝে মাঝে মন অশান্ত থাকলে অথবা অসুস্থ থাকলে একরকম স্বপ্ন দেখি। হয়তো কিছু করবো বা কোথাও যাবো কিন্তু একের পর এক ঘটনা-দুর্ঘটনা ঘটতেই থাকে। আমার আর সেখানে যাওয়া হয়না, কাজটা করা হয়না। অথচ সেটা খুব দরকারী ছিলো!!! 

এই বইটা সেরকম, মোটিভ মাথায় নিয়ে বিক্ষপ্ত, উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটে বেড়ানো। পার্থক্য এই যে স্বপ্নে কাজটা শেষ হবার আগেই ঘুমটা ভে‌‌‌ঙ্গে যায়। এখানে মনে হলো যেন ঘুমটা না ভেঙ্গে আরেকটা স্বপ্ন শুরু হলো শেষে!! 

এটা একটা অদ্ভুত বই!
Profile Image for Dystopian.
434 reviews228 followers
March 12, 2023
গল্পের শেষ টা ঠিক ঘোরের ভেতর নিয়ে গেল আমাকে। নিজেকে আবেগগ্রস্থ নেশার ঘোরে মনে হচ্ছে।
গল্প লেখক কিছু নিয়েই রিএকশন লিখতে ইচ্ছে হচ্ছে না। শুধু ভাবতে ইচ্ছা করছে।
সব গল্প নিয়েই গঠনমূলক আলোচনা করা কি দরকার?
Profile Image for Shotabdi.
818 reviews194 followers
September 22, 2022
আটাশি সালের বন্যা। এমন এক প্রলয়ঙ্করী বন্যা যে নিমজ্জিত হয়ে ছিল প্রায় সারা দেশ দিনের পর দিন। স্যাঁতসেঁতে গ্রামীণ জীবন, মানুষের অশেষ দুর্ভোগ। একুশ দিন বা তারও বেশি সময় ধরে না খেতে পেয়ে অমানুষ হয়ে যাওয়া মানুষ, যেখানে কেবল পেটের দায়ে মেয়েকে বিক্রি করতে আসে বাবা। বন্যা মানেই সাথে মহামারী অবধারিত। সেখানেও ঝাঁকে ঝাঁকে লাশ আর সেইসব লাশ এসে লাগছে উজানের গাঁয়ে, নৌকায়। গ্রামের সাধারণ জীবনযাপনে আরো এক উপদ্রব ডাকাতি যা যেকোন দুর্যোগে অবধারিতভাবে আরো বেড়ে যায়।
এমন এক ভয়ঙ্কর সময়ে উপন্যাসের নায়ক কাজল জলেশ্বরী গ্রাম খুঁজতে বেরোয়, কোন এক ইব্রাহিম গাজীকে খুঁজে বের করার আশায়। কে এই ইব্রাহিম গাজী, কাজল নিজেও জানে না।
স্বচ্ছল পরিবার এর একমাত্র ছেলে কাজল, যে কলেজজীবনে টানবাজারে যাবার অপরাধে বাবা কর্তৃক নির্বাসিত হয় লস এঞ্জেলসে। সেখানে খাদ্যের রেডিওএক্টিভিটির উপর উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আসে বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে। বাবার সাথে এক অচ্ছেদ্য বন্ধন থাকলেও সম্পর্কে ছিল আশ্চর্য শীতলতা। কিন্তু মৃত্যুর পরেই যেন আরেকটু গভীর হয়ে ওঠে তা।
জলেশ্বরীর খোঁজে কাজল বের হয় কিন্তু নৌকার মাঝি দুজন, বজলু আর লিয়াকত বড়লোক সওয়ারী পেয়ে মাঝপথে বিগড়ে বসে। ফলশ্রুতিতে প্রায় মরতে বসে কাজল। এক চরে একাকী জীবনযুদ্ধে লড়ার সময় পরিচয় হয় রহস্যময়ী এক নারীর সাথে। তাপসী তার নাম। পরবর্তীতে বেদেনৌকায় ঠাঁই হয় দুজনের। ধীরে ধীরে এগিয়ে চলে গল্প, ঘটতে থাকে নাটকীয় সব ঘটনা৷
এই তিন মাস আগে সিলেট অঞ্চলে যে বন্যা হয়ে গেছে সেই অভিজ্ঞতা থেকে এই বন্যা, কোমরপানি, সাপখোপ, লাশ ভেসে আসা, বানভাসী মানুষ, মাচায় ঘর বেঁধে কোনমতে বেঁচে থাকা মানুষ, সারি সারি লাশ এইসব প্রতিটা জিনিস যেন অনুভব করতে পারছিলাম। কী যে দুর্ভোগ হয় জলবন্দী মানুষের, ত্রাণকার্যে যাওয়া মানুষ তা ঠিকভাবে বুঝে উঠতে পারবে না৷ খাদ্যের অভাব, মহামারী এইসব কারণে জীবনযাত্রার মান নেমে যায় অনেক নীচে।
ওবায়েদ হকের উপন্যাস বলার ভঙ্গিটি মনোহর। দারুণ কিছু হতে গিয়েও গল্পের কিছু অসামঞ্জস্য এবং অতি নাটকীয়টাতার কারণে উপন্যাসটি শেষপর্যন্ত খুব সার্থক হয়ে উঠল না। সাবপ্লটগুলো আরেকটু পরিষ্কার, আরেকটু মেদহীন হলে ভালো হত। মূল চরিত্রের মমত্ব, মহত্ব অনেকবারই প্রকাশিত হয়েছে, লেখক এক্ষেত্রে নিস্পৃহ থাকার চেষ্টা করেছেন তাও কেন যেন সেগুলো আরোপিত মনে হয়েছে।
মৃত্যুগুলো সব কি প্রয়োজনীয় ছিল? কেবল কেউ মারা গেলেই কি উপন্যাস বা জীবন সার্থক?
উপন্যাসটা শুরুর দিকে যেমন লাগছিল, মাঝপথে হুট করে যেন বিশ্বাসযোগ্যতা হারিয়ে বসে, যার ফলে না হয়ে উঠেছে একটি খাঁটি সামাজিক উপন্যাস, না হয়েছে অ্যাডভেঞ্চার। দুটোর মিশেলে অসাধারণ কিছু, তাও নয়।
তবুও লেখক বেশ অভিনব কিছু ধারণা দেয়ার চেষ্টা করেছেন৷ প্রয়াসটা নিঃসন্দেহে চমৎকার।
Profile Image for Sneha.
56 reviews96 followers
October 6, 2022
আর্থিক এবং সামাজিক ভাবে প্রভাবশালী মাহাতাব ভূইয়া হঠাৎ করেই ছয়তলার ছাদ থেকে মাথা ঘুরে পড়ে যান। বাবার মৃত্যুর সংবাদ শুনে নয় বছর পর লস এঞ্জেলস থেকে দেশে ফেরেন একমাত্র পুত্র কাজল। সেখানে খাবারের রেডিও এক্টিভিটির উপর গবেষণা করে কাজল। বাবার মৃত্যু কে সহজ ভাবে নিতে চাইলেও একটা সাদা কাগজের দুটো লাইন সব উলটপালট করে দিয়েছিল তার! একদিন বাবার জিনিসপত্র দেখার সময় হঠাৎ করেই কিছু টুকরো টুকরো কাগজ পেয়েছিল কাজল, তার একটাতে ছিল
" ইব্রাহিম গাজি, আর কত? জলেশ্বরী আর মেঘনাও তোমাকে গিলতে পারেনি!  আমাকে কেন ঘুমুতে দাও না, আমি ছাদ থেকে লাফিয়ে পড়লেই কি তুমি শান্তি পাবে? "
বাবার মৃত্যুর রহস্য কি, কে এই ইব্রাহিম গাজী?  কেন তার বাবা আত্মহত্যা করল?  সব রহস্যের সমাধান আছে একমাত্র ইব্রাহিম গাজীর  কাছে । তাকে খুঁজতেই কাজল বেরিয়ে পরে জলেশ্বরী গ্রামের দিকে।   সাচ্ছন্দ্য জীবনকে পিছনে ফেলে দেখা পায় নির্মম বাস্তবতার। দেশে তখন ভয়াবহ বন্যা। চারদিকে শুধু পানি, মহামারী, খাবারের অভাবে মানুষ অমানুষ হয়ে যাচ্ছে, ডাকাতি হচ্ছে।  নৌকার পাশ দিয়ে পশু পাখি এমনকি মানুষের লাশ ভেসে যাচ্ছে। এক ভয়াবহ পরিস্থিতি। নরক শুধু জলন্ত হয় না ডুবন্তও হয়!

এই ডুবন্ত নরকে যখন সব হারিয়ে অসহায় হয়ে পড়েছিল তখন তাকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে এসেছিল তাপসী। নানান রকম পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে দুজন। এতোসব প্রতিকূল পরিস্থিতিতে ধীরে ধীরে পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে কাজল।।
এখানে ক্ষুধার জন্য বাবা মেয়েকে বেচতে চায়,স্ত্রী স্বামীকে ছাড়ে,  ধর্ম ছাড়ে! সমাজ, ধর্ম,সংস্কার, ক্ষুধার কাছে এখানে সচরাচর পরাজিত হয়। এখানে মানুষ খোদার চেয়ে ক্ষুধা কে বেশি ভয় পায়।  ক্ষুধার্ত মানুষের ক্ষোভ সবচেয়ে ভয়ানক হয়।
কাজল একসময় ভাবে চারদিকে মানুষ খাবারের অভাবে মরে যাচ্ছে আর সে বিদেশে বসে খাবারের রেডিও এক্টিভিটি নিয়ে গবেষণা করছে!  কত তুচ্ছ মনে হয় তার কাজটাকে!  জীবনের এই চরম বাস্তবতার সম্মুখীন হতে হতেই একসময় গিয়ে পৌঁছায় জলেশ্বরী গ্রামে। সেখানে এক অদ্ভুত চমক অপেক্ষা করছিল তার জন্য। যা স্তব্ধ করে দেবে সকল পাঠক কে! কাজল কি খুঁজে পেয়েছিল ইব্রাহিম গাজীকে? জানতে পেরেছিল তার বাবার মৃত্যু রহস্য?  কি হয়েছিল শেষে জানতে বইটি অবশ্যই পড়ুন।
ভীষণ চমৎকার এক  সমাপ্তি।  থ্রিলার, সামাজিক উপন্যাস, অ্যাডভেঞ্চার সবগুলো একসাথে জুড়ে দিয়েছে লেখক। চমৎকার একটা বই জলেশ্বরী।
Profile Image for Eshaan Kabir.
46 reviews21 followers
October 7, 2021
উপন্যাস এর নায়ক কাজল, আমেরিকায় পড়াশুনা করেন। বাবার আত্মহত্যার খবরে দেশে ফিরে কিছুই মিলাতে পারছেন না। চিরচেনা বাবাকে কখনোই সত্যিকারের চিনতে না পারার আক্ষেপ থেকে, দুই মাঝি আর এক নৌকা নিয়ে বন্যার থই থই পানিতে যাত্রা শুরু করেন জলেশ্বরী গ্রামের উদ্দেশ্যে। ইব্রাহিম গাজীর খুঁজে।
"আর পারছিনা। জলেশ্বরীর ইব্রাহিম গাজী আমাকে ঘুমাতে দেয় না। মাঝে মাঝে মনে হয় লাফিয়ে পড়ি ছাদ থেকে।"
বাবার লেখা এই চিরকুটই ভরসা।
গল্পের শুরুটা সাদামাটা, তিন নম্বর অধ্যায় থেকে শুরু একদম শেষ লাইন অব্ধি বুক ধুকধুকানি আর চোখে কোণে পানি নিয়ে পড়েছি।
কাজলের মৃত বাবাকে খুঁজে ফেরার এই রুপক প্রচেষ্টার মধ্য দিয়ে ওবায়েদ হক লিখেছেন ভয়ংকর বন্যা আর এই বন্যা কবলিত মানুষের দৈনন্দিন দুঃখ দূর্দশাকে ছাপিয়ে ক্ষুধার কথা। ক্ষুধার কাছে হার মেনে পেটের দায়ে নিজে মেয়েকে বিক্রি করতে চাওয়া বাবার অশ্রুজলের দুই লাইনের বর্ণনা পাবেন বইটাতে। আটশ ছত্রিশটা লাশ কবর দেয়া আসাদউদ্দিন নামে এক মুক্তিযুদ্ধার গল্প পাবেন। পাবেন মানুষের ভালবাসায় সর্বস্ব হারানো এক তরুণী তাপসীকে।
এই তাপসী আর কাজলের মাধ্যমে লেখক অল্প কটা পৃষ্ঠায় অনেক কিছু সাজিয়েছেন অতি দক্ষতার সাথে। কুসংস্কার, ধর্মান্ধতা ভরা পুরুষতান্ত্রিক সমাজ, শ্রেণীবৈষম্য এবং এগুলা ছাপিয়ে সাম্যবাদ। যা বর্ণনা করা হয়েছে নিষ্ঠুর বাস্তবতার নিরিখে।

অন্তর ছেড়া গল্প এবং অসাধারণ সব চরিত্র তবুও বইয়ের সবচেয়ে আকর্ষণীয় দিক ওবায়েদ হক এর লেখনী। ঝরঝরে এবং প্রাঞ্জল কিন্তু প্রাণহীন নয়। প্রতিটা শব্দ প্রয়োজনীয়। এবং প্রতিটা বাক্যের ক্ষমতা আছে আপনা মনে আঘাত করার৷

কিছু বই শেষ করা পর ঐখানেই তা শেষ, আর কিছু বই শেষ হওয়ার পরও শেষ হয় না। মনে মধ্যে রয়ে যায় অনেক দিন। সাদা শার্টের নাছোড়বান্দা কোন দাগের মত। যা চাইলে ধুয়ে ফেলা যায় না। ওবায়েদ হক এর জলেশ্বরী এরকমই একটা বই। মনে দাগ রেখে যাওয়ার মত বই।
Displaying 1 - 30 of 234 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.