অশ্রু, রক্ত, ঘামময় যে জীবনটা না দেখলে কেউ মানুষ হিসেবে নিজেকেই কখনো চিনতে পারবে না, তার নাম সীরাতুর রাসুল। যে জীবনটা না জানলে কেউ দুনিয়া এবং আখিরাতে সফল হতে পারবে না, তার নাম সীরাতুর রাসুল। যে হাসি, কান্না আর প্রেম ভালোবাসার জীবনটা না বুঝলে কারো জীবনের কানা কড়িরও দাম থাকে না তার নাম সীরাতুর রাসুল। অথচ আল্লাহর কসম, এই সীরাতুর রাসুলের হক আদায় করতে আমাদের প্রজন্ম ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতা ঘোচাতেই আমাদের এই যৎসামান্য প্রচেষ্টা, আল্লাহ রাব্বুল আলামিন কবুল করুন। আমিন।
Based on "The Noble Life of The Prophet" by Dr. 'Ali Muhammad As-Sallaabee and "Ar-Raheeq Al-Makhtum" by Safiur-Rahman Al-Mubarakpuri.
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন " তোমাদের কেউ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই " অর্থ্যাৎ রাসুলুল্লাহকে (সা.) সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যাবে না। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.) কে ভালবাসা হলো ইসলামের একটি অংশ। কিন্তু কারও সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তাকে মনের গভীর থেকে, আন্তরিকভাবে ভালোবাসা যায় না। কাউকে ভালোবাসতে হলে তার সম্পর্কে জানা চাই। আর নবীজির ক্ষেত্রেও এটি বিশেষভাবে সত্য, কেননা তিনি এমন একজন মানুষ তার সম্পর্কে যত বেশি জানা হয় ততই তার ব্যক্তিত্ব পাঠকে মুগ্ধ করে, তার প্রতি ভালোবাসা তৈরী হয়।
রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাকে জেনেছে, তারা তাকে ভালোবেসেছে ; যত বেশি জেনেছে তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাকে জানেনি, তারা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না- দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে তিনিই হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।
আর তাকে নিয়েই রেইন ড্রপ্সের এই দুই খন্ডের সীরাহ।
সীরাহ - মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ❤
"মক্কার মেষ চরানো এক যুবক হয়ে গেলেন অসাধারণ এক নেতা, আরবের অধিপতি, সাহাবীদের কাঙ্ক্ষিত আশ্রয়। মৃত্যুর পরেও যাঁর ছায়া আমাদেরকে আগলে রেখেছে।"
যার সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না। 'বাসীরার', আপনাকে কেনো ভালোবাসি ইয়া রাসুলুল্লাহ? এই অডিও লেকচারটা শুনলেই অনর্গল চোখ দিয়ে পানি পড়ে। যতবার শুনি ততবারই! আসলে মানুষটা ছিলেনই তেমন।
তাড়াহুড়ো করে শেষ করার মতো বই না এটা, অনেক সময় নিয়ে পড়েছি। সবটা বুঝার চেষ্টা করেছি, তবুও ধীরে ধীরে পড়েছি। জানি না এতো গুছানো সীরাহ আর আছে কি না!! দ্বিতীয় খন্ড শুরু করবো, শীঘ্রই.....
আমি কাউকে সীরাহ পড়তে বললে প্রথমেই এই সিরিজের সাজেশন দেই। এতো সুন্দর করে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর জীবনী বর্ণিত হয়েছে, পাঠক নিজেকে ইসলামের প্রথম যুগের সেই মক্কা মদীনাতে খুঁজে পাবেন।
খুব সুন্দর একটি সিরাহ মা শা আল্লাহ!! দারসের স্টাইলে সাজানো হয়েছে পুরো বইটি। মনে হবে যেন কোনো দারসে বসে আছেন। আর কোনো শায়েখ ঘটনাগুলো বর্ণনা করে যাচ্ছেন। আর এ ঘটনাগুলো থেকে সব গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষাগুলো আলাদা করে চিহ্নিত করে খুব সহজ ও সুন্দরভাবে ব্যখ্যা করা হয়েছে। যাতে নিজের জীবনে এ শিক্ষাগুলো আমরা প্রয়োগ করতে পারি। দ্বীনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় এর মধ্যে অলোচনায় চলে এসেছে, যেমনঃ- জিহাদ, আল ওয়ালা আল বারা, কাফিরদের বিভিন্ন ইসলাম বিদ্বেষী নীতি, কাফিরদের সাথে আচার আচরণের ধরণ ইত্যাদি।
বুখারীতে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, যেখানে উমর ইবনুল খাত্তাব রাদিয়াল্লাহু 'আনহু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে এসে বলেন, আমি আমার নিজের পরেই আপনাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। কিন্তু রাসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে জানিয়ে দিলেন যে তা যথেষ্ট নয়। যতক্ষন পর্যন্ত না তুমি আমাকে সবার চেয়ে বেশি ভালোবাসবে তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হবে না। একথা শুনে উমর রাদিয়াল্লাহু 'আনহু তখনই বলে উঠলেন তাহলে আমি আপনাকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসি। আর আল্লাহর রাসূল উনাকে জানালেন যে, এখন তোমার ঈমান পরিপূর্ণ হয়েছে। (ভাবানুবাদ)
সীরাহ পড়ার গুরুত্ব বুঝতে এই একটি হাদিসই যথেষ্ট ইন শা আল্লাহ!!
বইয়ের প্রচ্ছদ,কাভার,কাগজ,ফন্ট সবকিছু অত্যন্ত মানসম্পন্ন। অনুবাদও খুব ঝরঝরা,সহজ ও সুখপাঠ্য। আল্লাহ তা'য়ালা সংশ্লিষ্ট সকলকে উত্তম প্রতিদান দিন। সকল প্রশংসা এই বিশ্বজাহানের একক স্রষ্টা ও প্রতিপালক আল্লাহর!!
মহানবী হযরত মোহাম্মদ (সা:)। মহান আল্লাহ তা'আলা হতে প্রেরিত সর্বশেষ নবী, ইসলাম ধর্মের সূচনাকারী। মানব জীবনের পূর্ণাঙ্গ জীবন বিধান পবিত্র কুরআন শরীফ যার উপর নাজিল হয়েছে। যার উম্মত এই আমরা মুসলিমরা।
সেই ছোটবেলায় ধর্ম শিক্ষা বইয়ের মাধ্যমে নবীজী (সা:) এর সাথে আমাদের পরিচয়। এসএসসি পর্যন্ত ধর্ম বইয়ে যতোটুকু পড়েছি ততটুকুই উনার ব্যাপারে আমার জানাশোনা ছিলো দীর্ঘদিন পর্যন্ত। এই গত রমজান মাসে তারিখে ইসলাম বইটি থেকে ইসলামের ইতিহাসের পাশাপাশি মহানবী (সা:) এর ব্যাপারে অনেক কিছুই নতুন করে জানতে পারি। আর এবার কুরবানির আগে সীরাহ পড়ে জানার সুযোগ হলো আরো বেশী।
সীরাহ শব্দের শাব্দিক অর্থ 'জীবনী'। সীরাহ যেকোনো মানুষের জীবনী হতে পারে। তবে মহানবী (সা:) এর নামের সাথে সীরাহ শব্দটা এতোবেশী ব্যবহৃত হয়েছে যে, এখন এটা দ্বারা নবীজী (সা:) এর জীবনীকেই বুঝে বেশীরভাগ মানুষ। নবীজী (সা:) এর হাদিস সমূহ ছাড়াই উনার জীবনবৃত্তান্ত অনেক বিশাল পরিধি নিয়ে। আর সেই বিশালতা কিছুটা ছোট করে, নবীজী (সা:) এর জীবনী নিয়ে আগ্রহী এমন মানুষদের জন্য বিগিনার লেভেলের সীরাহ নিয়ে এসেছে রেইনড্রপস প্রকাশনী। মানব ইতিহাসকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করেছেন এমন ১০০ জন মনিষীর নামের তালিকায় মাইকেল এইচ হার্ট প্রথমে রেখেছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা:) কে। মরু এলাকায় জন্ম নেওয়া একজন নিরক্ষর এতিম থেকে কিভাবে মানববিশ্বের সবচেয়ে প্রভাবশালী ব্যক্তি, ধর্মীয় ও রাজনৈতিক উভয় ক্ষেত্রে সর্বাধিক সফল ব্যক্তিত্ব হিসাবে উত্থান হয়েছে এক সাধারণ মেষপালকের সেটারই আখ্যান এই সীরাহ।
ইসলাম ধর্মাবলম্বী সবাই মোটামুটি নবীজী (সা:) এর জীবনের ঘটনাবলী সম্পর্কে কিছু না কিছু ধারণা রাখেন। কিন্তু ওই ধারণা পর্যন্তই। উনার আদর্শ অনুসরণ করা, উনার প্রতিটা কথা বা কর্মকান্ড থেকেই শিক্ষা নেয়ার যে ব্যাপারটা সেটাতে বেশীরভাগ মুসলিমই পিছিয়ে আছে যোজন যোজন দূরত্বে। আমি তাই আজকের রিভিউতে উনার জীবনের ঘটনাবলীর চেয়ে কি কি শিক্ষা পেয়েছি নতুন ক���ে, আর কোন কোন শিক্ষা জানা থাকা সত্ত্বেও নতুন করে উপলব্ধি করেছি সেগুলো নিয়েই লিখবো।
শুরুতেই একটা কথা বলতে হয়, বইটা পড়তে অত্যন্ত চমৎকার। কিছুদিন পূর্বেই কাছাকাছি ধরণের একটা বই পড়ার কারনে সব ঘটনা মোটামুটি আগে থেকে জানা থাকা সত্ত্বেও, বইটা বেশ উপভোগ করেছি। এখানে নবীজী (সা:) এর জীবনের উল্লেখযোগ্য ঘটনাবলীর বর্ণনার পাশাপাশি, প্রতিটা ঘটনার প্রেক্ষাপট, ব্যাখ্যা এবং শিক্ষা আলাদাভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। এই ব্যাপারটা আমার অসম্ভব ভালো লেগেছে। আমি নিয়মিত থ্রিলার পড়ি, ধর্মীয় বই খুব কম পড়া হয়। তবুও বইটা পড়ার সময় বারবার মনে হচ্ছিলো আমি বোধহয় ১৪০০ বছর সেই আগের সময়টায় ফিরে গিয়েছি। এ থেকেই বুঝা যায় বইটা কতোটা সুখপাঠ্য ছিলো।
বইয়ের শুরুতেই ব্যাখ্যা করা হয়েছে কেনো সকল মুসলিমের জীবনে একবার হলেও সীরাহ পাঠ করা জরুরী। আমরা ভাবি শুধু নামাজ পড়লেই ধর্ম পালন করা হয়ে গেলো। সেই নামাজও আবার বেশীরভাগ মানুষ স্রেফ ফরজটুকু পড়েই ভাবে ইবাদত করা শেষ হয়ে গেলো। অথচ ইসলামকে ভালোবাসার সবচেয়ে বড় শর্ত হলো নবীজী (সা:) কে ভালোবাসা। কেনো উনাকে ভালোবাসা এতো জরুরি, তা আমি জানতে পেরেছি বইয়ের এই ভূমিকার অংশ থেকে। সীরাহ মূলত ইতিহাসগ্রন্থ হলেও, এটা পড়াও একটা ইবাদতের সমতূল্য।
বইয়ের এরপরের প্রাক কথন অংশে মহানবী (সা:) নবুওয়াত প্রাপ্তির পূর্বে আরবের অবস্থার ব্যাপারে খুব অল্প কথায় কিছু ধারণা দেয়া হয়। যমযম কূপের উদ্ভব থেকে মক্কায় গোত্র ভিত্তিক জনবসতি স্থাপনের ঘটনা এবং কুরাইশ বংশের উৎপত্তির ব্যাপারে ধারণা দেয়া হয় এই পর্বে। তৎকালীন আরবের ধর্মীয় এবং রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটও কিছুটা জানা যায় এখান থেকে। প্রাক কথনের এই পর্বে আরবে ইহুদি মতবাদের প্রচলনের কারন যেমন বলা হয়েছে, তেমনি আরবে খ্রিস্টান ধর্মের আবির্ভাবের ব্যাপারেও বলা হয়েছে। খ্রিস্টধর্মের আগমনের অংশে একজন রাজা এবং একটি কমবয়সী ছেলের গল্প বলা হয়েছে। তবে গল্পটা নিয়ে আমার একটু খটকা আছে। গল্পটার শেষে যে ঘটনা ঘটে সেখানে বলা হয় যে ছেলেটার আত্মত্যাগে উপস্থিত সবাই মুসলিম হয়ে যায়। কিন্তু নবীজী (সা:) তো তখনো জন্মগ্রহণই করেননি, আর ইসলাম ধর্মের আবির্ভাব তো উনার নবুওয়ত প্রপ্তির পর থেকেই হয়!! আমার মনে হয় এখানে কোথাও একটু ভুল হয়েছে। কেনো না তখনো ঈসা (আ:) এর সরাসরি কিছু উম্মত উনার মূল বক্তব্য তাওহীদের অনুসারি ছিলো; যা মহান আল্লাহ তা'আলাকেই একমাত্র উপাস্য বলে ঘোষনা করে। সম্ভবত সেটা বুঝাতে গিয়ে ভুল বশত মুসলিম লেখা হয়েছে। আবার আমারও ভুল হতে পারে, যেহেতু আম ধর্মের ব্যাপারে খুব খুব কম জানি। কেউ এটা পড়ে থাকলে দয়া করে কমেন্টবক্সে আলোচনা করবেন।
বইয়ের এর পরের অংশ রাসূলুল্লাহ (সা:) এর জন্ম, শৈশব, পেশা এবং উনার বৈবাহিক জীবনকে নিয়ে লেখা। এই অংশে নবী করিম (সা:) দুধ মা হালিমা এর একটা কাহিনী পড়ে বেশ অবাক হয়েছি। এটা আমার জন্য নতুন ছিলো। ওই রকম জাহেলিয়াতের যুগে নবীজী (সা:) কিভাবে সকল পাপ, অনাচার আর ব্যাভিচার থেকে দূরে সড়ে ছিলেন তা ভেবে আমার সব সময় অবাক লাগতো। এখানে একটা ঘটনা পড়ে অবশ্য বুঝতে পারলাম আসলে মহান আল্লাহ তা'আলার ইচ্ছাতেই অমনটা হয়েছে। নবীজী (সা:) যে আসরে গিয়ে গান শুনতে চেয়েছিলেন আর প্রতিবারই গান শুরু হওয়া মাত্রই উনি গভীর ঘুমে তলিয়ে যাচ্ছিলেন, সেটা পড়েই বুঝা যায় আসলে উনাকে আল্লাহ তা'আলাই সকল পাপ থেকে সব সময় দূরে সড়িয়ে রেখেছিলেন। কেনো যুগে যুগে আগত সকল নবীরাই জীবনের কোনো না কোনো পর্যায়ে মেষপালক ছিলেন তার চমৎকার কিছু ব্যাখ্যা এবং শিক্ষা রয়েছে এই পর্বে। তবে এই পর্ব থেকে আমার পাওয়া সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা হলো হিলফুল ফুদ্বুল চুক্তি থেকে পাওয়া শিক্ষা।
"বর্তমানে আমরা অমুক দেশের তমুক ধর্মের মানুষ মারা গেছে শুনলে খুশী হই। অথচ নবী করিম (সা:) বলে গিয়েছেন চাইলে এমনকি ভিন্ন ধর্মবিশ্বাসীদের সাথেও এমন চুক্তি করা বৈধ; যে চুক্তির ফলে কোনো অন্যায় বা জুলুমের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে উঠে কিংবা যালিমের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া যায়। ইসলাম সকল মুসলিমকে বলে ভালো কাজে সহায়তা করার জন্য। সেই ভালো কাজে কোন ধর্মের মানুষ উপকৃত হচ্ছে সেটা দেখার বিষয় নয়। আল্লাহ তা'আলা ভালো কাজে সহযোগিতা করাকে একজন মুসলিমের উপর একান্ত কর্তব্য হিসাবে নির্ধারণ করেছেন।"
নবীজী (সা:) বৈবাহিক জীবন অংশের অনেকটাই লিখা হয়েছে খাদিজা (রা:) এর প্রতি উনার অগাধ ভালোবাসা এবং টান নিয়ে। এখানে নবীজী (সা:) এর বিয়ে নিয়ে করা সমালোচনাগুলোর বেশ চমৎকার জবাব দেয়া হয়েছে। এরপর কাবা শরীফ পূন নির্মাণ নিয়ে একটা ছোট অধ্যায় রয়েছে৷
প্রাক ইসলামী যুগের কিছু মানুষকে নিয়ে চমৎকার একটা অংশ রয়েছে এরপর। যেখানে আমরা জানতে পারি যায়িদ ইবন নাওফাল, ওয়ারাকাহ ইবন নাওফাল, সালমান আল ফারিসীর কথা। শত অন্ধকারের মাঝেও যে কিছু মানুষের মাঝে আলোর দিশা থাকে তার প্রমান এই ৩জন মানুষ। আল্লাহ তা'আলা কাউকে হেদায়েত দান করলে সে মানুষ যেভাবেই হোক ইসলামের ছায়াতলে পৌছাবেই, সালমান আল ফারিসীর কাহিনী আমাদেরকে এটাই মনে করিয়ে দিবে। তাই আমাদের ঈমান দৃঢ় করার জন্য সর্বদা আল্লাহর কাছে হেদায়েত চাওয়া উচিত।
অবশেষে চলে আসলাম বইয়ের সেই মাহেন্দ্রক্ষণে, নবীজী (সা:) এর নবুওয়াতপ্রাপ্তির ঘটনায়। হেরা পর্বতের গুহায় ধ্যানমগ্ন অবস্থায় হঠাৎ একদিন জিবরীল (আ:) এসে হাজির হলেন মহানবীর সামনে। এসে বললেন, 'ইক্বরা'। এই একটি শব্দের মাধ্যমে বদলে গেলো পুরো বিশ্বের মুসলিমদের অবস্থান। এর মাধ্যমে আমাদেরকে বলা হয়েছে অধ্যয়ন করে, গবেষনা করে জ্ঞানার্জন করার জন্য। এই সময় পুরো বিশ্বে অল্প সময়ের মাঝেই মুসলিমরা উচ্চ শিক্ষিত ও জ্ঞানী জাতিতে পরিণত হয়েছে। অথচ আজ আমরা সেই শিক্ষা থেকে কতো দূরে সড়ে গিয়েছি!!
নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে নিজের বংশের কাছ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন এক অভিজ্ঞতার সম্মুখীন হন নবীজী (সা:)। সেই অভিজ্ঞতা ছিলো নারকীয় এবং নিদারুণ কষ্টের। সেই সময়ের মাঝেও অল্প কিছু মানুষ নবীজীর পাশে দাঁড়িয়ে যায়। শত কষ্ট আর বঞ্চনা সয়েও তারা ইসলামের বিশ্বাসে অটল থাকে। মক্কার কাফিরদের অত্যাচারের ব্যাপারে আমরা সবাইই কমবেশ জানি। ব্যঙ্গ-বিদ্রূপ, অপমান, মিথ্যা অপবাদ, ইসলামের বিকৃত উপস্থাপনা থেকে শুরু করে আপস করার চেষ্টা, প্রলোভন দেখানো, অত্যাচার করা হেন কোনো কর্মকান্ড নেই যা সেই সময়ে মক্কার কুরাইশরা করেনি ইসলামের প্রচারকে রোধ করার জন্য।
তবুও এতোসব প্রচেষ্টার পরেও দিকে দিকে ইসলামের বানী ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে। মক্কার বাইরের লোকেরা আসতে শুরু করে ইসলামের ছায়াতলে। এই ঘটনাগুলোর বর্ণনা খুব চমৎকারভাবে বইটিতে উল্লেখ করা হয়েছে। নবুওয়াত প্রাপ্তির পর থেকে ইসলাম প্রচারের অংশ থেকে যে শিক্ষা আমি পাই, তা হলো শত কষ্ট পেলেও হাল ছাড়া যাবে না, নিজের ঈমানের উপর বিশ্বাস ধরে রাখতে জানতে হবে। একটা মাত্র আয়াত জানলেও তা প্রচার করতে হবে। শুধু নিজে ইসলাম জানলেই হবে না, ইসলামের দাওয়াতও দিতে হবে।
এরপর একে একে অল্প করে গুরুত্বপূর্ণ সাহাবীদের ইসলাম গ্রহণের ঘটনাবলী বর্ণনা করা হয় বইয়ের। প্রতিটা ঘটনার সাথে তার শিক্ষনীয় ব্যাপারগুলোও বেশ গুছালোভাবে উপস্থাপন করা হয়। পরবর্তীতে মহানবী (সা:) এর বিভিন্ন মু'জিযার ঘটনা সম্পর্কে লিখা হয়েছে।
মাক্কী জীবনের ১০ম বছর ছিলো নবীজী (সা:) এর জীবনের সবচেয়ে দু:খের বছর। দীর্ঘ ৪২ বছর ধরে সুখ দুখের সঙ্গী, বিপদে পাশে দাঁড়ানো চাচা আবু তালিব মারা যান এই বছরেই। আবু তালিবের মৃত্যু শোক কাটিয়ে উঠার আগেই মাত্র দুই মাসের ব্যবধানে মারা য���ন নবীজী (সা:) এর জীবনের সবচেয়ে বেশী ভালোবাসার মানুষ খাদিজা (রা:)। সবচেয়ে কাছের প্রিয় দুই মানুষকে হারিয়ে দিশেহারা মহানবী একই সাথে সবচেয়ে ভয়াবহ আক্রোশের শিকার হন কাফিরদের কাছ থেকে। এতোদিন এই আক্রোশ থেকে রক্ষা করে যাচ্ছিলেন চাচা আবু তালিব, আর আঘাত অপমান নিরসন করতেন খাদিজা (রা:)। ঘরে বাইরের দুই প্রিয় মানুষকে হারানো নবীজী (সা:) এর ওই সময়ের কষ্টের কথা ভাবলে যেকোনো সাচ্চা মুসলিমের হৃদয় ভারাক্রান্ত হতে বাধ্য।
তবে কষ্টের পরিমাণ যতো বেশী হবে আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে অনুগ্রহের পরিমাণও অনেক বেশী হবে। আল ইসরা ওয়াল মিরাজ হলো নবীজী (সা:) এর প্রতি আল্লাহ তা'আলার পক্ষ থেকে আসা সেই অনুগ্রহ। জিবরীল (আ:) এর সাথে নবীজী (সা:) ভ্রমণ করেন ৭ আসমান এবং সরাসরি দেখা করেন মহান আল্লাহ তা'আলা রাব্বুল আলামিনের সাথে। এছাড়াও এই ভ্রমণে উনার দেখা হয় আদম (আ:), মূসা (আ:), ঈসা (আ:) সহ আরো বেশ কিছু নবী রাসুলের সাথে। এখানেই আল্লাহ তা'আলা উনাকে দৈনিক ৫০ ওয়াক্ত সালাত আদায় করার নির্দেশ দেন। যা মূসা (আ:) এর কথায় বারবার অনুরোধ করে শেষ পর্যন্ত ৫ ওয়াক্ততে নামিয়ে আনেন মহানবী (সা:)। এই ৫ ওয়াক্ত পড়তেই আমরা হিমশিম খেয়ে যাই, ৫০ ওয়াক্ত হলে কি করতাম আল্লাহই ভালো জানেন। মিরাজের ঘটনাবলীর বর্ণনা পড়ে একই সাথে বিস্মিত এবং বিমোহিত হয়েছি।
অবশেষে নবুওয়াত প্রাপ্তির দীর্ঘ ১৩ বছর পর নবীজী (সা:) নিজের জন্মভূমি মক্কা ছেড়ে মদিনাতে হিজরত করার অনুমতি পান। আর এই মদিনা থেকেই ইসলামের পরিপূর্ণ দাওয়াত কার্যক্রম শুরু হয় বিশ্বব্যাপি। মহানবী (সা:) মক্কার একজন সাধারণ মানুষ থেকে নওমুসলিমদের নেতা হিসাবেই মদিনাতে প্রবেশ করেন। প্রথম ইসলামি রাস্ট্র হিসাবে প্রতিষ্ঠা করা হয় মদিনাকে। প্রথমেই শুরু হয় মসজিদ-ই-নববীর নির্মাণ কাজ। মসজিদ এখন স্রেফ ইবাদত করার স্থান হিসাবে বিবেচিত হলেও, তখন মসজিদ ছিলো একটা ধর্মীয় ও সামাজিক শিক্ষার স্থান। মসজিদে তখন সালাত আদায়ের পাশাপাশি ইসলামের ব্যাপারে শিক্ষা দেয়া হতো, দূর দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের আশ্রয় দেয়া হতো এবং এখানে ইসলামের দাওয়াতও দেয়া হতো। মদিনায় এসে নবী করিম (সা:) আনসার এবং মুজাহিরদের মধ্যে যে ভাতৃত্ব বন্ধন স্থাপন করেন, অমন কিছু এর আগে পড়া হয়নি। এখানে এসে রাসুলুল্লাহ (সা:) একটি চুক্তিপত্র তৈরী করেন, যেখানে মদিনায় অবস্থিত ইহুদি ধর্মাবলম্বীদের প্রতি বেশ সহনশীলতা প্রকাশ করা হয়। তাদেরকে ইসলামি রাস্ট্রের নাগরিক হিসাবে স্বীকৃতির পাশাপাশি ধর্মীয় স্বাধীনতাও দেয়া হয়। এবং তাদের নিরাপত্তা দেয়ার দায়িত্ব ছিলো ইসলামি রাস্ট্রেরই। এখানে আসার পরেই ক্বিবলার দিক পরিবর্তন করার বিষয়ক আয়াত নাযিল করা হয় রাসুলুল্লাহ (সা:) এর প্রতি।
জিহাদের অনুমতি প্রদান করা হয় মুসলমানদের জন্য। জিহাদ একটা ইবাদত। তবে এই ইবাদত শুধুমাত্র ইসলামের শত্রুদের বিরুদ্ধেই করার অনুমতি রয়েছে। ভিন্ন ধর্মাবলম্বী মানেই যে ইসলামের শত্রু, ব্যাপারটা কিন্তু তেমন নয়। ইসলামের শত্রু তারাই যারা প্রকাশ্যে ইসলাম পালন করাকে বাঁধা প্রদান করে, সরাসরি ইসলামের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষনা করে কিংবা মুসলিমদের উপর অত্যাচার করে। সুদীর্ঘ ১৪টি বছর ধরে হাজারো রকমের অত্যাচার আর শারীরিক নির্যাতন সইবার পরে অবশেষে প্রতিরোধ করার অনুমতি পায় মুসলিমরা। কুরাইশদের বিরুদ্ধে সর্ব প্রথম বৃহৎ যুদ্ধ বদরের যুদ্ধের বর্ণনা নিয়ে এগিয়েছে বইয়ের বাকী অংশটুকু। যুদ্ধের কারন, যুদ্ধের বিভিন্ন ঘটনাবলী, সামরিক কৌশল, আল্লাহ তা'আলা হতে প্রেরিত সাহায্য সবকিছুই বেশ চমৎকারভাবে ফুঁটিয়ে তোলা হয়েছে এখানে। মনে হচ্ছিলো যেনো আমার চোখের সামনেই ঘটছে বদরের যুদ্ধ। বদরের যুদ্ধে ইসলামের সবচেয়ে বড় শত্রু আবু জাহেলের মৃত্যু হয়। যুদ্ধ শেষে যুদ্ধবন্দীদের প্রতি নবীজী (সা:) যে আচরণ করেছেন এবং সহানুভূতি দেখিয়েছেন তা থেকে শিক্ষা নেয়ার আছে অনেক কিছু।
বদরের যুদ্ধ পরবর্তী মক্কার কিছু ঘটনাবলী বর্ণনার মাধ্যমে শেষ হয় রেইনড্রপস প্রকাশনীর 'সীরাহ' গ্রন্থের এই প্রথম খন্ড। মাত্র ৬ বছর পরেই মক্কা বিজয় করে বিজয়ীর বেশে নিজ জন্মস্থানে ফিরে আসেন নবীজী (সা:)।
এই সীরাহ এর ১ম খন্ড পড়ে নবীজী (সা:) বিভিন্ন রকমের চারিত্রিক গুণাবলি সম্পর্কে জানতে পেরে আমি মুগ্ধ হয়ে গিয়েছি। আমরা সেই তুলনায় উনার আদর্শের বলতে গেলে কিছুই ধরে রাখতে পারিনি। আর তাই আমি মনে করি প্রত্যেক মুসলিমের একবার করে হলেও নবীজী (সা:) এর সীরাহ পড়া উচিত অবশ্যই।
ইসলামী বইয়ের প্রোডাকশন বরাবারই বেশ ভালো হয়। এই বইটাও তার ব্যতিক্রম নয়। পেইজ কোয়ালিটি, পেইজ কালার, ফন্ট সাইজ সবই অত্যন্ত ভালো লেগেছে আমার কাছে। তবে বইটার বাঁধাই নমনীয় হলেও, কিছুটা দূর্বল মনে হয়েছে আমার কাছে। পেইজগুলো কেমন একটু খুলে খুলে এসেছে।
আম্মু সবসময় বলতেন, এত বই পড়লি জীবনে, কই, সীরাতুন্নবী তো পড়লি না? এই প্রশ্ন প্রথমবার শুনে লজ্জা পেয়েছিলাম। পরবর্তীতে আর রাহীকুল মাখতুম পড়ার চেষ্টা করেছি, কিন্তু কিছু পৃষ্ঠা পড়েই রাজ্যের ক্লান্তি এসে ভর করে। প্রথম অধ্যায়েই মক্কার তৎকালীন গোত্রগুলোর দীর্ঘ বর্ণনা, তৎকালীন সামাজিক-রাজনৈতিক অবস্থার বিশদ আলোচনা। একটা সহজপাঠ্য সীরাহ খুঁজছিলাম, যেন আমার মত নাদান পাঠকের মগজ সেটা সইতে পারে। রেইনড্রপসের সীরাহ আমার মত পাঠকদের উদ্দেশ্যেই বোধহয় লেখা। আর রাহীকুল মাখতুমের মত বইগুলোর অনুবাদের কাঠখোট্টা ভাষা পরিহার করে সাবলীল ও প্রাঞ্জল ভাষায় বইটি লেখা হয়েছে। অধ্যায়গুলো সুশৃঙ্খলভাবে বিন্যস্ত করা হয়েছে এবং প্রতিটি ঘটনার পটভূমি সুন্দরভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। ঘটনাপ্রবাহ পড়তে গিয়ে এতটুকু একঘেয়েমিতা আসে নি। অতিরিক্ত তথ্যবহুল না হওয়াতেই এই সীরাহটি এতটা সুখপাঠ্য হতে পেরেছে। অন্যান্য সীরাহর সঙ্গে এই বইটির পার্থক্য বোধহয় এই- সম্পাদকমণ্ডলী বইটিকে আধুনিক যুগের সাথে সাযুজ্যপূর্ণ করে তোলার জন্য অধুনা মুসলিম সমাজ আলোচ্য অধ্যায় থেকে কী শিক্ষা গ্রহণ করতে পারেন, প্রতিটি অধ্যায়ের শেষে সে বিষয়টি যুক্ত করেছেন। এটি নিঃসন্দেহে অনন্য একটি উদ্যোগ। সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব, আল্লাহ্র রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এতকাল আমার কাছে যেমন ছিলেন, সীরাহ প্রথম খণ্ড পড়ার পর তাঁর প্রতি মুগ্ধতা ও ভালোবাসা বহুগুণে বেড়ে গেছে। আল্লাহ্র রাসুলের জীবন সম্পর্কে টুকরো টুকরো ঘটনা শুনে ভালো লাগতো বটে, কিন্তু যখন পুরো মাক্কী জীবন, হিজরত, বদরের যুদ্ধ সম্পর্কে একসঙ্গে পড়লাম, তখন তাঁর ঐ সময়কার পুরো জীবন চোখের সামনে ভেসে উঠলো। এ এক অসাধারণ অনুভূতি।
সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য, যিনি তাঁর নগণ্য কিছু বান্দাকে তাঁর শ্রেষ্ঠতম বান্দার জীবনকথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার তৌফিক দিয়েছেন।
রাসূলুল্লাহ মুহাম্মাদﷺ হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাকে জেনেছে, তারা তাঁকে ভালোবেসেছে; যত বেশি জেনেছে, তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাঁকে জানেনি, তাঁরা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না-দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে, তিনি হলেন রাসূলুল্লাহ।
গল্পের নায়কদের কথা মানুষ খানিক বাদেই ভুলে যায়, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্বদের প্রভাব টিকে থাকে বড়জোর কয়েকটা বছর, কিন্তু রাসূলুল্লাহ এমন একজন যাকে এত বছর পরেও লোকেরা ভালোবাসে, তাঁর অনুসরণ করে, তাঁর সম্মানে নিজের জীবন। দিয়ে দেয়। জীবদ্দশায় আবু জাহেলরা তাঁকে ভয় করতো, মৃত্যুর পরে আবু জাহেলের উত্তরসূরিরা তাঁর অনুসারীদের ভয় করে।
কিন্���ু দুর্ভাগ্য, যে জাতির কাছে 'মুহাম্মাদ' আছে, সে জাতিকে আজ টং এর মামা থেকে শুরু করে বারাক ওবামা প্রত্যেকেই দিকনির্দেশনা দিতে ব্যতিব্যস্ত। মুসলিমদের আজকে অমুসলিমরা ইসলাম শেখায়, উন্নয়ন আর সমৃদ্ধির সবক দেয়। বিষয়টা লজ্জা আর গ্লানির।
আমরা রাসূলুল্লাহকে চিনলেও তাঁকে আমরা জানিনা। জানিনা বলেই তিনি কারো কাছে নিছক একজন ভালো মানুষ', আর দশজন মনীষির মতো, যারা কিনা কিছু দার্শনিক তত্ত্ব আর নীতিকথা বলে খালাস! কিংবা কারো কাছে তিনি একজন ‘ধর্মপ্রচারক', কিছু ভালো ভালো কাজ করেছেন, এই যা!
কিন্তু তাঁর আসল পরিচয় হচ্ছে তিনি একজন রাসূল। তিনি একটা গ্লোবাল মিশন নিয়ে এসেছিলেন এবং আমরা সেই মিশনের অংশ। আল্লাহ এই সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটিকে পাঠিয়েছেন আমাদের জীবনের প্রতিটি বিষয়ে পথ দেখানোর জন্য। তিনি মানুষকে সেই পথ দেখিয়ে গেছেন যে পথ খুঁজে পেতে আমাদের বুদ্ধিজীবী-দার্শনিক-বিজ্ঞানী- আমলারা মাথা কুটে মরে, কিন্তু সমাধান খুঁজে পায় না।
এই সমস্যার একটিই সমাধান। তা হলো রাসূলুল্লাহকে জানা। আর জানার জন্যই তাঁর সীরাহ পড়া। রাসূলুল্লাহর ৪ সীরাহ হচ্ছে তাঁর ব্যক্তিত্ব, তাঁর ব্যক্তি জীবন, তাঁর নবুওয়াত, তাঁর নেতৃত্ব এবং তাঁর চারপাশের মানুষগুলো নিয়ে একটি চমৎকার কাহিনীপ্রবাহ। রাসূলুল্লাহর সীরাহ পড়লে ইনশা আল্লাহ, ইসলাম সম্পর্কে আমাদের সংকীর্ণ ধারণার দেয়ালগুলো ভেঙে যাবে। রাসূলুল্লাহর জীবন সম্পর্কে জানলে, ইসলামবিদ্বেষীদের প্রোপাগান্ডা শুনে আমাদের মনে যে 'খচখচ' হয় সেটা দূর হয়ে যাবে, বিইযনিল্লাহ। আমরা জানব রাসূলুল্লাহ কত চমৎকার একজন মানুষ ছিলেন। তিনি কারো মন জয় করতেন, কাউকে রুখে দিতেন, আর কাউকে মোকাবিলা করতেন। নিজের ঘর থেকে শুরু করে যুদ্ধের ময়দান - প্রতিটি ক্ষেত্রে তিনি ছিলেন একজন বুদ্ধিদীপ্ত ব্যক্তিত্ব। যারা তাঁকে ভালোবেসেছে, তাদের জীবন আমূল বদলে গেছে, যে জাতি তাঁর অনুসরণ করেছে, তাদের ভাগ্য বদলে গেছে। এমন একজন মানুষ সম্বন্ধে যদি আমরা না জানি, না মানি, তাহলে তো আমরাই 'মিস' করলাম!
আদর্শিক দৈন্যতার কারণে ইতিহাস বলতে হয়তো আমরা ৫২ বা ৭১ এর আগে কিছু চিন্তা করতে পারি না, কিন্তু রাসূলুল্লাহ ও তাঁর সাহাবাদের ইতিহাসের সামনে সকল ইতিহাসই ম্লান। পৃথিবীর যত বিপ্লব, তার সবক'টা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক কিছু পরিবর্তন করে কয়েক দশক বা সর্বোচ্চ কয়েক শতক পরেই হুমড়ি খেয়ে পড়েছে। কিন্তু যে বিপ্লবের সূচনা রাসূলুল্লাহ করেছেন, সেটা চলবে ততদিন, যতদিন না মুসলিম জাতির সমগ্র পৃথিবীর উপর বিজয়ী হবে।
বাংলা ভাষায় রাসূলুল্লাহরﷺ একাধিক সীরাহ থাকা সত্ত্বেও আমরা এই সীরাহতে হাত দিয়েছি মূলত দুটি কারণে। একটা হলো, মুসলিমরা সীরাহকে গল্প হিসেবে পড়ে, কিন্তু সেখান থেকে কিছু শেখে না। এই সমাজের আবু জাহেল কিংবা মুনাফিক আবদুল্লাহ ইবন উবাইদেররকে তারা চিনতে পারে না। এই সীরাহতে প্রায় প্রতিটি ঘটনা থেকে কী শেখার আছে তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
দ্বিতীয় ব্যাপারটি ভাষাগত। দীর্ঘদিন ধরে ইসলামকে আমাদের দেশের মূলধারার শিক্ষা থেকে দূরে ঠেলে দেওয়ায় ইসলামী সাহিত্যের সাথে সাধারণ মানুষের বেশ দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে। আমাদের দেশের স্কুল-কলেজগুলোতে যে ধরনের সাহিত্য আমরা পড়েছি, সেগুলোর সাথে ইসলামী সাহিত্যকর্মের ভাষাগত ব্যবধান তৈরি হওয়ায় বরেণ্য আলিমদের লেখা বইগুলো পড়েও মানুষ যথাযথভাবে উপকৃত হতে ব্যর্থ হচ্ছে। এই সীরাহ সেই ব্যবধানকে কমিয়ে আনার প্রয়াস। চৌদ্দশো বছর আগের কথাগুলো যেন আমরা আমাদের পরিস্থিতির সাথে মেলাতে পারি, সেই সময়ের আলোয় নিজেদের দেখতে পারি সে জন্য প্রয়োজন ভাষাগত দেয়ালটি ভেঙে ফেলা। সে উদ্দেশ্যে এই সীরাহতে কাহিনিগুলোকে বর্ণনা করা হয়েছে কিছুটা আধুনিক যুগের ঢঙে, যেন পাঠক স্বাচ্ছন্দ্যের সাথে নবীজির যুগে প্রবেশ করতে পারে।
এই সীরাহর বিষয়বস্তুগুলো মূলত নেওয়া হয়েছে শাইখ আলি আস-সাল্লাবির রচিত সীরাহ এবং আর-রাহীকুল মাখতুম থেকে। রেইনড্রপস এর ভাইবোনেরা চেয়েছে কেবল একটি প্রাণবন্ত ও আকর্ষণীয় সীরাহ উপহার দিতে, যেন রাসূলুল্লাহকে আমরা ভালোবাসতে পারি, তাঁর জন্য জীবন দিতে পারি। সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া সাল্লাম। - জীম তানভীর
বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম আসসালামু আলাইকুম। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ ছাড়া কোন মাবুদ নাই। সুতরাং তার শুকরিয়া আদায় করছি তিনি আমাকে এখন পর্যন্ত বাচিয়ে রেখেছেন। রমজান ২০১৯ উপলক্ষে উক্ত বইটি পড়া শুরু করেছিলাম। মা শা আল্লাহ, বইটি সত্যিই অসাধারণ। লেখা এবং বর্ণবিন্যাস সত্যিই আমাকে মুগ্ধ করেছে। আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ সুবহানুতায়ালা আমাকে এই বইটি পড়তে তাওফিক দান করেছেন। রেইনড্রপস টিমকে আল্লাহ উত্তম প্রতিদান দিক, আমিন। সীরাহ গ্রন্থ পড়ার ইচ্ছা থাকলে অনুরোধ থাকবে উপরোক্ত বইটি পড়ার জন্য।
রাসূলুল্লাহ ﷺ। সকল মুসলিমের মধ্যমণি। সকল মুসলিমের জান তাঁর ﷺ জন্যে কুরবান হোক। তাঁর ﷺ এর জীবনের প্রতিটা মুহূর্ত আমাদের জন্যে শিক্ষণীয়, আদর্শিক, গ্রহণীয়। তাঁর ﷺ জীবনী আমাদের বুকে লালন করা ফরজ। নববী মানহাজ মুমিনের মুক্তির পথ। বইয়ের ভালো দিকটা হলো প্রতিটা ঘটনার সাথে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আলাদা করে দেয়া আছে। তাই জীবনী থেকে শিক্ষাগুলো আমরা আমাদের জীবনে ধারণ লালন করতে পারবো।
আমরা জানি কুরআণের সকল আয়াত একত্রে নাযীল হয়নি। বিভিন্ন সময়ের প্রেক্ষাপটে কিংবা বিভিন্ন ঘটনার প্রেক্ষাপটে নাযীল হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) এর দীর্ঘ ২৩ বছরের নব্যুয়াত জীবনের পাথেয় হচ্ছে এসব আয়াত যা ওয়াহীরূপে এসেছে। আমরা যখন কুরআন পড়ি তখন সমস্ত আয়াত একত্রে পড়ি বিধায় কেবল অর্থগুলো দেখি, এর পেছনের কারণ কিংবা শানে নুযূল দেখি না। সীরাহ অর্থ পথ। এই বইটি একাধারে যেমন রাসূল (সঃ) জীবনী তেমনি এটা সকল মুসলিমের পথ। বইটিতে যেসব আয়াত আছে তা সময় কিংবা ঘটনার প্রেক্ষাপট বিচার করে সুন্দর করে সাজানো। এতে মুসলিমরা ধারণা পাবে সময়ের, কাজের, ন্যায় অন্যায়ের, জীবনধারার, আনুগত্যের, বিশ্বাসের - সবচেয়ে বড় কথা ঈমান ও ঐক্যের। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, সূরা আনফালের কথা। এ সূরার অধিকাংশ আয়াতই বদর যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে নাযীল হয়েছে। বদর যুদ্ধের সকল অংশগ্রহণকারী জান্নাত পাবেন! কতটা মর্যাদাসম্পন্ন সে জিহাদ। আল্লাহ্ আযযা ওয়াযাল তাঁর মহিমা ও শক্তি দিয়ে মুসলিমদের করেছেন জয়যুক্ত এবং কাফিরদের করেছেন বিপর্যস্ত ও অপমানিত। কতই না ঘটনার সাক্ষী হই আমরা দৈনন্দিন জীবনে। মক্কার কুরাইশরাও এসবের সাক্ষী ছিল। আমার নবী সকল ঘটনার জন্য আল্লাহর সাহায্য প্রাথনা করেছেন, সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিয়েছেন। তারই কিছু বর্ণনা রয়েছে সীরাহ ১ম খন্ডে, যা পড়লে আপনার ইচ্ছা হবে একবার প্রিয় নবীকে কাছে পেতে, তাঁর সান্নিধ্যে ঈমানকে দৃঢ় ও পরিপূর্ণ করতে। এ খন্ডে নবীর বাল্যকাল থেকে শুরু করে মদীনায় হিজরতের বর্ননা রয়েছে। মক্কা জীবনের ১০ বছরে তাঁর দ্বীনের দাওয়াতের সংক্ষিপ্ত বর��ণনা আছে। ইসলামকে জানতে, নবীকে জানতে, তাঁর সত্তার মহিমা জানতে এ বই অবশ্য পাঠ্য।
পৃথিবীর সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষটির জীবনটা খুব প্রাঞ্জল এবং সহজ ভাষায় বর্ণনা করা হয়েছে এই দুই খণ্ডের বইয়ে। বিভিন্ন ঘটনার পটভূমি এবং তা থেকে শিক্ষণীয় বিষয়গুলো আলাদা করা এই সীরাহ গ্রন্থটির অন্যরকম বিশেষত্ব। আমি রেইনড্রপস এর ইউটিউব চ্যানেলে অন্যান্য নবীদের জীবনী নিয়ে তৈরি অডিও সিরিজগুলো শুনেছি। তাদের কাজ সুন্দর। আল্লাহ তাদের ইসলামের প্রচার এবং প্রসারের জন্য কবুল করে নিক এই দোয়া থাকলো। আমিন।
রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেন, “তোমাদের কেউ মু’মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং কাছের মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই”।
রিভিউ নয়, ভালো লাগা ব্যক্ত করছি।
কারো সম্পর্কে না জেনে তাকে আন্তরিকভাবে ভালোবাসা যায় না। আর নবীজি (ﷺ) সম্পর্কে যত জানবে তার ব্যক্তিত্ব পাঠকদের ততই মুগ্ধ করবে, তাকে ভালোবাসতে বাধ্য করবে। মু’মিন হতে হলে রাসূল (ﷺ ) কে ভালোবাসতে হবে, আর ভালোবাসতে হলে তার (ﷺ) সম্পর্কে পড়তে হবে।
কোনো বই পড়ে আগে আমি এতো অভিভূত হইনি। কোনো সাহিত্যের বই নয়, দুনিয়ার সর্বশ্রেষ্ঠ মানুষ, সায়্যেদুল মুরসালিন মুহাম্মদ (ﷺ) এর জীবনী, যার জন্যে জীবন কুরবান।
নবুয়তের পূর্বের আরব, শৈশব, নবুয়াহ, দাওয়াত, হিজরত, বদরের যুদ্ধ থেকে শুরু করে মক্কা বিজয়, তাবুকের যুদ্ধ পর্যন্ত সবকিছু খুব সুন্দর করে উপস্থাপন করা হয়েছে ।মনে হচ্ছিলো আনসার ও মুহাজির বাহিনীর সাথে আমিও হেঁটে চলেছি প্রতিটি যুদ্ধের ময়দানে। বইটির দু’টি বিষয় সবচেয়ে ভালো লেগেছে, ১) সীরাতের প্রতিটা ঘটনা এবং ২) প্রতিটা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট এবং তার থেকে কি শেখার আছে তা পয়েন্ট আকারে তুলে ধরা হয়েছে।
যারা নবী করিম (ﷺ ) এর সিরাত পড়বেন বলে আশা করেছেন তাদের জন্যে অবশ্যপাঠ্য একটা বই। সিরিজটা ‘রেইনড্রপ মিডিয়া’র একটা মাস্টারপিস।
দুনিয়াতে নবিজী (ﷺ) -র শেষ সময় সম্পর্কিত ‘বিদায়বেলা’ চ্যাপ্টারটা পড়তে গিয়ে বারবার চোখ ভিজে যাচ্ছিলো। আল্লাহ সুবহানাহু তা’য়ালা সবাইকে হিদায়াত দান করুক এবং তার নবী (ﷺ) -র জন্যে প্রত্যেক উম্মতের হৃদয়ে ভালোবাসা সঞ্চার করুক।
রাসুলুল্লাহ সা. বলেছেন " তোমাদের কেউ মু'মিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না আমি তার কাছে তার পিতা, সন্তান এবং সব মানুষের চেয়ে বেশি প্রিয় হই " অর্থ্যাৎ রাসুলুল্লাহকে (সা.) সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসতে না পারা পর্যন্ত পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া যাবে না। সুতরাং মুহাম্মদ (সা.) কে ভালবাসা হলো ইসলামের একটি অংশ। কিন্তু কারও সম্পর্কে ভালোভাবে না জেনে তাকে মনের গভীর থেকে, আন্তরিকভাবে ভালোবাসা যায় না। কাউকে ভালোবাসতে হলে তার সম্পর্কে জানা চাই। আর নবীজির ক্ষেত্রেও এটি বিশেষভাবে সত্য, কেননা তিনি এমন একজন মানুষ তার সম্পর্কে যত বেশি জানা হয় ততই তার ব্যক্তিত্ব পাঠকে মুগ্ধ করে, তার প্রতি ভালোবাসা তৈরী হয়।
রাসূলুল্লাহ মুহাম্মদ (সা.) হচ্ছেন এমন একজন, চৌদ্দশ বছর পরেও যাকে নিয়ে মুগ্ধতা এতটুকু কমেনি। যারা তাকে জেনেছে, তারা তাকে ভালোবেসেছে ; যত বেশি জেনেছে তত বেশি ভালোবেসেছে। যারা তাকে জানেনি, তারা ভালোবাসার নদী দেখলেও মহাসমুদ্র দেখেনি। না- দেখেও যাকে পৃথিবীর মানুষ সবচাইতে বেশি ভালোবেসেছে তিনিই হলে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।