প্রতিশোধের রং কী ? এটা কি লাল, নাকি নীল না আগুনরঙা ?
প্রখ্যাত রহস্যরোমাঞ্চ লেখক ওবায়েদ রহমানের একমাত্র ছেলে ইশতিয়াক রহমান অফিস থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় । তার অর্ন্তধানের এক সপ্তাহ পর দোরগোড়ায় হাজির হয় রহস্যময় এক ভিডিও ও একটি কাটা আঙুল ! ভিডিওতে কি জানি বিড়বিড় করে যায় হেলমেটধারি এক উন্মাদ । ডাক পড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার আলী রেজা বখতিয়ারের, সাথে ইশতিয়াকের দুই বন্ধু ইফতি ও রোমেল । তারা তিনজন মিলে কি পারবে উন্মাদটাকে থামাতে ? ইশতিয়াককে ঘরে ফিরিয়ে আনতে ?
এদিকে মুরাদপুর শান্ত, নিস্তরঙ্গ এক গ্রাম । কিন্তু হঠাৎই এক অশুভ ছায়া গ্রাস করে ফেলে গ্রামটিকে । নৃশংসভাবে খুন হন অকৃতদার ডাঃ মইনুল হক । ঘটনা তদন্তে পাঠানো হয় ডিবির তরুণ তুর্কি সায়েম সোবহানকে । কিন্তু একের পর এক নৃশংস খুন ঘটতেই থাকে । এ সবগুলো খুন কি একসূত্রে গাঁথা ? কী প্রমাণ করতে চায় খুনি ? কিসেরই বা প্রতিহিংসা তার ?
পুরাণের অগ্নিবর্ণ ফিনিক্স পাখি আপন ছাইভস্ম থেকে পুণরায় জেগে ওঠে । ফিনিক্স পুণর্জাগরণের প্রতীক, পুনরুত্থানের প্রতীক । কাগুজে ফিনিক্স কি পুণরায় জেগে উঠবে, কারই বা হবে পুণরুত্থান ? কার প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে ছারখার হবে সব ?
‘ঈশ্বরের মুখোশ’-খ্যাত জাহিদ হোসেনের রিভেঞ্জ ট্রিলজির দ্বিতীয় উপ্যাখ্যান ফিনিক্স।
জাহিদ হোসেনের জন্ম সিলেটে, বেড়ে উঠা ঢাকায়। পড়াশোনা করেছেন নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ে। পেশায় ব্যাংকার হলেও বইপড়ার প্রতি অসম্ভব ঝোঁক থেকেই লেখালেখিতে আগ্রহ। শুরু অনুবাদ দিয়ে। পরপর দু’টি অনুবাদ প্রকাশিত হয় তার - অ্যাম্বার রুম ও ম্যাক্সিমাম রাইডঃ দ্য অ্যাঞ্জেল এক্সপেরিমেন্ট। তারপর তিনি প্রবেশ করেন মৌলিক লেখালেখির জগতে। মৌলিক থ্রিলার হিসেবে তার প্রথম প্রয়াস ঈশ্বরের মুখোশ যা ২০১৫ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশিত হয়েছিল। তারপর একে একে বের হয় ফিনিক্স, কাদ্যুসেয়াস, একজোড়া চোখ খোঁজে আরেকজোড়া চোখকে, দুধ চা খেয়ে তোকে গুলি করে দেব, গিলগামেশ, নৈর্ঋত, পরশুরামের কঠোর কুঠার, ইথাকা ও স্বর্গরাজ্য। লেখালেখিতে স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের জন্য তিনি আলাদা পরিচিতি লাভ করেছেন।
তার প্রকাশিত বই ওপার বাংলাতেও ব্যাপক সমাদৃত ও প্রশংসিত। কলকাতার অভিযান পাবলিশার্স ও বুকিকার্ট থেকে ইতিমধ্যে তার কয়েকটি বইয়ের ভারতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়ে বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে।
আচ্ছা সত্যি করে বলুন তো, কোনটা আপনার কাছে ভালো লাগে? কাউকে নি:শর্ত ক্ষমা করে দিতে, নাকি নির্মম প্রতিশোধ নিতে? যার ওপর প্রতিশোধ নিবেন, সে যদি আপনার পুরো জীবনের নকশাটাই বদলে দেয় কিংবা ছিনিয়ে নেয় আপনার পরিবার, শুধু ক্ষমা করে দিয়ে শান্ত হয়ে বসে থাকতে পারবেন? হোক না ক্ষমা মহৎ গুণ। কিন্তু প্রতিশোধের ছাইচাপা আগুন কি নিভবে আপনার ভেতরে? নাকি ফিনিক্স পাখির মত সেখান থেকে পাখা মেলবে আপনার ভেতরে লুকিয়ে থাকা সে আদিম দানবের। এই বইটা সে আদিম অনুভূতির কাব্য, প্রতিশোধের কাব্য। যদি বইয়ের শেষ প্রান্তে গিয়ে হ্যাপি এন্ডিং নিয়ে 'হ্যাপি' হতে চান, তাহলে কিন্তু হতাশ হতে হবে। গত বছর পড়া আমার সেরা বইগুলোর মধ্যে একটা ছিল জাহিদ হোসেন ভাইয়ার ঈশ্বরের মুখোশ। সুতরাং এ বছর যখন দেখলাম যে রিভেঞ্জ ট্রিলোজির দ্বিতীয় বই 'ফিনিক্স' আসছে, অপেক্ষায় ছিলাম পড়ার জন্যে। সাধ মিটেছে? হ্যা মিটেছে বৈকি! পয়সা উশুল। দুর্দান্ত আরেকটা প্রতিশোধ আখ্যান পড়ে ফেললাম। এখন আবার অপেক্ষা সামনের বইয়ের জন্য। গল্পের শুরু খুন দিয়ে, শেষ খুন দিয়ে। আর হ্যা, মাঝেও ছড়িয়ে ছিটিয়ে গোটা কয়েক খুন। সেই সাথে আছে সে খুনের পেছনের লোকগুলোকে ধরবার জন্যে কিছু মানুষের দৌড়াদৌড়ি। তারা কতটুকু সফল? সেটা নাহয় পড়লেই বুঝবেন। কাহিনী এক মফস্বল শহর 'মুরাদপুর' আর ঢাকায়। মুরাদপুরে ঘটছে একের পর এক বীভৎস খুন আর ঢাকাতে এক যুবককে অপহরণের পর তার বাসায় পাঠানো হচ্ছে কাটা আঙুল। তদন্ত চলেছে সরকারি ও বেসরকারিভাবে। গল্প বর্ণিত হয়েছে ফাস্ট পার্সন ন্যারেটিভে। সাবলীল বর্ণনাভঙ্গি বইয়ের আরেক আকর্ষণ। কোন চাপ পোহাতে হয় নি বইটা শেষ করার জন্য। একটানা পড়ে গিয়েছি। :) থ্রিলার ভালো লাগে যাদের তাদের আশা করি খারাপ কাটবে না সময়।
বইটা ভালো লাগল। একটা জটিল, নন-লিনিয়ার ন্যারেটিভের বইকে এমন রুদ্ধশ্বাস ভঙ্গিতে টেনে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়। লেখক সেটা করতে পেরেছেন। হয়তো গল্পের শেষে গিয়ে মাথা চুলকে আপনি ভাবতে বাধ্য হবেন যে এত ওভার-দ্য-টপ আর ব্যাটম্যান সিনেমায় জোকারের মতো করে প্রতিশোধ নেওয়ার কোনো দরকার ছিল কি না। কিন্তু এটাও আপনি মানবেন যে এত চরিত্র, ঘটনাস্থল আর মোটিভের মধ্য দিয়ে গল্পটাকে ঠিকঠাক এগিয়ে নেওয়া একটা অ্যাচিভমেন্ট। সুযোগ পেলে পড়ে ফেলুন।
আপনার হাতে যদি অফুরন্ত অবসর থাকে,যদি চারপাশের কাজেরা গিজগিজ না করে, ক্লাস পরীক্ষা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক খেজুরে কাজকাম না থাকে তাইলেই বইটা ধরবেন,অন্যথা একটা পাতায় যে গিট্টু লেগে থাকে পড়ার পর তা খোলার জন্য আরেক পাতায় যাওয়াই লাগবে এবং আল্টিমেটলি আপনি যদি একদম বেকার না হন তাহলে কাজের ফাঁকে ফাঁকে,ক্লাসের পেছন বসে বসে আপনার একটা চিন্তাই ঘুরপাক খাবে
"শালা ফিনিক্স পাখি,হ্যারিপটারে থেকে মন ভরে নাই,এখন আশেপাশে এসে অযথা ডানা ঝাপটা ঝাপটি করে মানুষের মাথায় অহেতুক ঝঞ্ঝাট বানায়ে সত্য সতি্যই আরেকটা নবজন্মের ব্র্যাঞ্চ খুলতে চাও?"
--------------------------------------------------------------------------- "ফিনিক্স" গল্পটি শুরু হয় বিখ্যাত থ্রিলার গল্প লেখক ওবায়েদ রহমানের ছেলে ইশতিয়াকের অপহরণের মাধ্যমে।এর ভিতরে জড়িয়ে পড়ে তার পরিবার, এক্স মিলিটারি আলী রেজা বখতিয়ার আর তার দুই বন্ধু ইফতি আর রোমেল।এদিকে মুরাদপুর গ্রামে শুরু হয় অদ্ভুত ধরনের খুন।কেউ মস্তকহীন হচ্ছে আবার কেউ মাছের খাবার হচ্ছে।এতে জড়িয়ে পরে ডিটেকটিভ সায়েম সোবাহান।একই সাথে এগিয়ে যেতে থাকে দুইটি রহস্য।এখন এই দুই ঘটনা আর পুনর্জন্মের প্রতীক ফিনিক্স পাখির ভিতরে কি সম্পর্ক তা জানতে হলে পড়তে হবে "ফিনিক্স". -------------------------------------------------------------------------- রেটিং : ৮.৫/১০ ( ফিনিক্স রিভেঞ্জ ট্রিলজির দ্বিতীয় গল্প হলেও এর সাথে " ঈশ্বরের মুখোশ " এর কাহিনীর কোনো মিল নেই।গল্পের পূর্বাভাস থেকেই মূল কাহিনীর ৮০% বোঝা যায়।তবে শেষ ২০ পেইজ একেবারে রোলার কোস্টার রাইড যা পূর্বাভাস থেকে কোনোভাবেই বুঝতে পারেনি।গল্পের প্রথমেই বলা হয়েছে এই গল্পে কোনো হ্যাপি এন্ডিং নেই , তবে যে এন্ডিং আছে তাই পারফেক্ট এন্ডিং মনে হয়েছে। অনেক চরিত্র আছে বইতে যার কয়েকটিকে অহেতুক মনে হয়েছে ( ইশতিয়াকের বান্ধবী , সাদমান হক এইরকম কিছু ).কাহিনী মাঝপথে একটু স্লো মনে হলেও ফিনিশিং তা পুষিয়ে দিয়েছে।গল্পের প্লট ,বিল্ডআপ আর এন্ডিং সবগুলোই আগের গল্পের চেয়ে অনেক বাস্তবসম্পন্ন মনে হয়েছে।আর বাতিঘরের অন্যন্য বইয়ের মতো বানান ভুল খুব একটা চোখে পড়েনি। অহেতুক কিছু কথা বাদ দিলে বইটি ২২০ পেইজের ভিতরে শেষ করা যেত। তবে এক কথায় , থ্রিলার আর মিষ্ট্রি নভেল পাঠকের জন্য " ফিনিক্স " একটি মাস্ট রিড বই।রিভেঞ্জ ট্রিলজির তৃতীয় বই এর জন্য অপেক্ষায় থাকলাম )
জাহিদ হোসেন বাংলাদেশের একজন পটেনশিয়াল থ্রিলার লেখক নিঃসন্দেহে। 'ঈশ্বরের মুখোশ' আমার প্রিয় থ্রিলারের একটি, কাওকে সাজেস্ট করলে নামটা রাখি প্রায়সময়ই। যখন শুনলাম এরকম আরও বই আছে, যেটা 'রিভেঞ্জ ট্রিলোজি' হতে যাচ্ছে তখন আমার খুশির সীমানা চিন্তা করতেই পারছেন। শেষপৃষ্ঠার টুইস্টকেন্দ্রিক বই নিয়ে কথা বলা খুব ঝামেলা আসলে। কিসে স্বাদ নষ্ট করে ফেলি, কিসে ক্লু দিয়ে ফেলি...আর আমিও খুব একটা খুশি হইনা এ ধরণের বইতে যদিনা মাঝের গল্প সুন্দর না হয়। জাহিদ হোসেন সেটা পারেন খুব দক্ষতার সাথেই। সুন্দর মতো কাহিনী বিল্ডাপ হয়। জমতে থাকে প্রত্যাশার পারদ! সবচেয়ে মজার হয় তার হিউমার আর ক্যামিও গুলো। সুন্দর সহজভাবে গল্প আগিয়েছে, তবে শেষে গিয়ে মনে হলো ফিনিক্স পাখির গায়ে ওয়াল্টন ফ্রিজের ঠান্ডা পানি ঢেলে দেয়া হলো! মানে জানতাম টুইস্ট হবে, পূর্বঅভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছিলাম একটা উরাধুরা টুইস্ট পাবো। কিন্তু অতিনাটকীয় ছাড়া আর কিছুই লাগলোনা শেষে এসে। অনেকগুলো সিরিয়াল টুইস্ট ছিলো বটে, কয়েকটা চমৎকার ও বলা যায়। তবে এইভাবে সিনেমার মতো এসে কাহিনী মেলানো টা ভালো লাগলোনা আসলে। পুরোটা বইই ভালোই। ২৫০ পৃষ্ঠার পর গিয়ে শেষের শুরু হয়। ৩দিন ধরে একটা প্রায় তিনশো পৃষ্ঠার বই পড়ে শেষে এসে আশাভঙ্গ হলে ভালো লাগে বলেন?
যাহোক, বইটার রিভিউ কিন্���ু অনেক ভালো গুডরিডসে। হয়তো আমার পছন্দের সাথে মেলেনাই। অন্যদের মতো আপনারও ভালো লাগতে পারে। তবে আমি দুঃখিত আসলে।
"ঈশ্বরের মুখোশ" শেষ করার পরপরই রিভেঞ্জ ট্রিলজির দ্বিতীয় বই "ফিনিক্স" শুরু করে দেই। এমন নয় যে, ঈশ্বরের মুখোশ খুব মুগ্ধ করেছিল। তবে লেখকের লেখনী, স্টোরি বিল্ডাপ ভালো লেগেছিল বটে।
ফিনিক্স একই ধারায় লেখা, ভিন্ন প্লটের বই। লেখনী, স্টোরি বিল্ডাপ বরাবরের মতোই দারুণ। গল্পের স্টার্টিংটা আগের বইয়ের চেয়ে বেটার। ট্রিলজির প্রথম বইয়ের মত শুরুতেই অনেক অনেক চরিত্র, প্লট, টাইমলাইন নিয়ে এসে 'জটিল' করে ফেলা হয় নি।
তবে প্রথম বইয়ের মতো, এই বইয়েও অযথা কাহিনী টেনে বড় করে গেছেন লেখক। প্রথম বইয়ে বিরক্তিটা একটু ধীরে ধীরে চেপে বসেছিল, পুর্ব অভিজ্ঞতার কারণে ফিনিক্সে বিরক্তিটা জলদিই চলে আসে।
ঈশ্বরের মুখোশ বইয়ে ২০০পেজের পর থেকে গল্প স্পিড নেয়। ফিনিক্সের বেলায় সেজন্য অপেক্ষা করতে হয় ২৫০পেজ পর্যন্ত।
বই দুইটো ২০৮/২২৪ পেজে শেষ করলে ক্ষতি কি হতো আমার জানা নেই। বইয়ের পৃষ্ঠা বাড়ানো ছাড়া আর কোনো কারণ চোখে পড়ে না। লেখক গল্প টেনে বড় করে ঠিক ২৮৮ পেজে (১৮ ফর্মায়) গিয়ে থামেন। ( ঈশ্বরের মুখোশ, ফিনিক্স, কাদ্যুসেয়াস - ২৮৮পেজের)
গল্পে বেশ কিছু Logical Error ও ছিলো। সেগুলো আলোচনায় আনতে গেলে লেখা অনেক দীর্ঘায়িত হয়ে পড়বে। সে আলোচনায় আজ যাচ্ছি না৷
"ফিনিক্স" গল্পে হ্যাপি এন্ডিং নেই। তবে সমাপ্তি ট্রিলজির প্রথম বইয়ের চেয়ে বেটার।
শেষ কথা, লেখকের গল্প বলার আন্দাজ, গল্প সাজানো - সবকিছুই দারুণ। লেখক জাহিদ হোসেনের পটেনশিয়াল অনেক বেশি।
ফিনিক্সের পর কাদ্যুসেয়াস শুরু করব ভেবেছিলাম। আপাতত সেটা আর করছি না। লেখকের নতুন বই "গিলগামেশ" পাঠকমহলে বেশ প্রশংসা পেয়েছে। সেটা দিয়েই না হয় আবার লেখক জাহিদ হোসেনের লেখার সাথে দেখা হবে।
প্রতিশোধ যত দেরিতে হত ততই ভয়ংকর হয়৷ এজন্যই বলে revenge is a dish best served cold
বইয়ের শুরুতেই ইফতি বলে উঠে এটার হ্যাপি এন্ডিং নেই। কিন্তু শেষের দিকের ন্রুটালিটির পরও কোন হা হুতাশ পাঠক অনুভব করবে না। এটা মানুষের সাইকোলজির কেমন অংশ জানি না তবে মানুষ অত্যাচারিত যখন অত্যাচারির উপর প্রতিশোধ নেয়ার জন্য ন্যায় অন্যায়ের সব সীমা অতিক্রম করে তখনও মানুষের সাপোর্ট অত্যাচারিত এর প্রতিই থাকে। এর আরেকটা প্রমাণ পায় ২৪ এর গণ আন্দোলনে। পুলিশের গুলিতে মৃতদের আহাজারিতে মানুষ আবেগতাড়িত হচ্ছে। কিন্তু কোন পুলিশ সদস্য যখন গনপিটুনিতে মারা যাচ্ছে, তখন সেই পুলিশ সদস্যদের আহাজারি মানুষ উপহাসের দৃষ্টিতে দেখছে। অথচ দুই ধরনের পরিবারই তাদের অবলম্বন হারিয়েছে, তাদের বেদনা/যন্ত্রণা বলতে গেলে একই।
"ঈশ্বরের মুখোশ" পরার পর প্রত্যাশার পারদ এতই উঁচুতে উঠে গিয়েছিল যে,এরপর সেটা ধরে রাখা বেশ কষ্টকর বিষয়।পুরো বই মোটামুটি এক বসাইয় শেষ করেছি,তবে শেষ্টা ঠিক পছন্দ হয় নাই,দু'টো বই আসলে একই রকম ধাঁচের লেগেছে অনেকটাই।সম্ভবত লেখকও তা বুঝতে পেরেই আপাতত রিভেঞ্জ ট্রিলোজির কাজ বাদ দিয়ে ফ্যান্টাসিতে মনোযোগ দিয়েছেন। তবে সব মিলিয়ে বেশ সুখপাঠ্য,অন্য কেউ রচয়িতা হলে আমি হয়ত সোজা ৫ রেটিং দিয়ে দিতাম।
১ পরিচালক হিসেবে ডেভিড ফিঞ্চারের অভিষেক ঘটে আমেরিকান সঙ্গিতের জগতে। ম্যাডোনা, পলা আবদুল, অ্যারোস্মিথ, মাইকেল জ্যাকসন এবং আরও অনেক বিখ্যাত সঙ্গিতশিল্পীদের গানের মিউজিক ভিডিও বানিয়ে নিজের ক্যারিয়ারের যাত্রা শুরু করেন। সিনেমায় তার প্রথম কাজ ছিলো ১৯৯২ সালে রিডলি স্কটের বিখ্যাত-কুখ্যাত এলিয়েন ফ্র্যাঞ্চাইজের তৃতীয় সিনেমা এলিয়েন থ্রি-তে। সিনেমাটির এক বিশেষ ভূমিকায় ছিলেন আমাদের প্রিয় টাইউইন ল্যানিস্টার, বর্ষিয়ান অভিনেতা চার্লস ড্যান্স।
সিনেমাটিকে দ্য নিউইয়র্ক টাইমস, রোলিং স্টোনের মতো বিশাল মাপের ম্যাগাজিনগুলো বাহবা দিলেও ধুয়ে দিয়েছিলো দ্য হলিউড রিপোর্টার, ভ্যারাইটির মতো ম্যাগাজিনগুলো। সিনেমাটি তবুও একটা অ্যাকাডেমী অ্যাওয়ার্ড তথাকার অস্কার মনোনয়ন পেয়েছিলো। অবশ্য সেটা ছিলো সেরা ভিজুয়াল ইফেক্টের জন্য। এছাড়াও বাফটাসহ আরও বেশ কয়েকটি পুরষ্কারের মনোনয়ন পেয়েছিলো যার বেশীরভাগ একই ক্যাটাগরির জন্যই।
২ একজন বিখ্যাত লেখকের একমাত্র ছেলে অপহরণ হয়ে গেলো। অপহরণকারী পাঠালো একটা ভিডিও আর সাথে একটা কাটা আঙ্গুল। নিখোঁজ মানুষটির খোঁজ করতে অভিযানে নামলেন দুজন মানুষ। ওদিকে মুরাদপুর নামের এক গ্রামে পাওয়া গেলো একজন ডাক্তারের মাছে খাওয়া লাশ। কদিন আগেই সেখান থেকে উদ্ধার হয়েছে আরেকটা মস্তকহীন লাশ। হত্যারহস্য সমাধান করতে ঢাকা থেকে আসলো একজন পুলিশ অফিসার। আপাতদৃষ্টিতে এই দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনার যোগসূত্র দেখা যাচ্ছে না। তবে যোগসূত্র আছে ঠিকই। যার কারণ দুটো সংখ্যা। যার কারণ পৌরাণিক কাহিনীতে বর্ণিত এক ঐশ্বরিক পাখি। নাম তার ফিনিক্স।
জাহিদ হোসেনের রিভেঞ্জ ট্রিলোজির দ্বিতীয় উপাখ্যান ফিনিক্সের ব্যাপারে পাঠ পর্যালোচনা শুরু করার আগে আরেকটি কাজ করা যাক। আমরা রিভেঞ্জ ট্রিলোজির প্রথম উপাখ্যান ঈশ্বরের মুখোশ নিয়ে একটু কথা বলি। এই বইটা বের হওয়ার পর তৎকালীন সময়ে ফেসবুকের বইসম্পর্কিত গ্রুপগুলোয় তুমুল উন্মাদনা ছড়িয়ে যেতে দেখেছিলাম। প্রায় সমস্ত পাঠক, এমনকি বেশকিছু উদীয়মান লেখক যারা বর্তমানে বেশ প্রতিষ্ঠিত; তারাও বলেছিলেন বাংলার ইতিহাসের “সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ” থ্রিলার নাকি ঈশ্বরের মুখোশ। আমি বইটি পড়েছি কিছুদিন আগে। তারও কয়েকদিন আগে দেখেছিলাম একটা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারধর্মী সিনেমা। ঈশ্বরের মুখোশ পড়া শেষে মনে হয়েছিলো, লেখক টুইস্টে এপিক কিছু করতে যেয়ে কিছুটা বাজেভাবেই গোলমাল পাকিয়ে ফেলেছিলেন। এছাড়া বইয়ের শুরু থেকে আরও কিছু সমস্যা তো ছিলোই। বইটি নিয়ে আমার পাঠ পর্যালোচনায় সেটি নিয়ে অনেক কিছুই বলেছিলাম। দেখলাম, কেউকেউ ছিলো যাদের কাছে এটা সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মনে হয়নি। কেউ তো আবার আফসোসও করেছিলো বইটি পড়ে।
৩ ঈশ্বরের মুখোশ শেষ করেই ফিনিক্স পড়া শুরু করেছিলাম। আবারও একটা মার্ডার মিস্ট্রি বই। আগের মতো এবারও কাহিনী দুটো ভিন্ন সময়ে বা পরিস্থিতিতে বা প্রেক্ষাপটে। আগের বইয়ের স্মৃতি মনে থাকাতে কিছুটা বিচ্ছিন্ন হয়ে যাই কিছুদূর আগানোর পরই। ভেবেছিলাম, আবারও লেখক হয়তো নতুন কিছু করতে যেয়ে তালগোল পাকিয়ে ফেলবেন। তাই বেশ খানিকটা সময় লেগে যায় ফিনিক্স পড়ে শেষ করতে। বিশদভাবে বললে, প্রথম ১৪০ পাতা পড়তে লেগেছে আমার পাক্কা দুমাস!
ব্যাপারটা এখানেই শেষ নয় কিন্তু। আজ সকালে হঠাৎ কী মনে করে পড়া শুরু করলাম বইটা। আর বাকি ছিলো ১৪০ পাতার কিছু বেশী সকালেই পড়ে শেষ করেছি।
৪ ফিনিক্সের ব্যাপারে প্রথমেই যেটা বলতে চাই, এই বইয়ের গল্পের বাঁধাই এককথায় অনন্য। লেখক দুটো ঘটনাকে খুবই সমান্তরালভাবে পাশাপাশি চালিয়েছেন এবং একদম ঠিকসময়��� তাদের সম্মেলন ঘটিয়েছেন। প্রতিটি ঘটনাকে নিজেদের স্থানে গুছিয়ে রেখেছিলেন বেশ ভালোভাবেই। প্রতিটি পরিচ্ছদ ছোটখাটো ক্লিফহ্যাঙার দিয়ে শেষ করেছেন। পুরো লেখাজুড়ে একটা প্রচ্ছন্ন রসিকতা লক্ষ্য করা গেছে বিভিন্ন মুহূর্তে।
বইটিতে সাকুল্যে দুটো জঁরাকে ব্যবহার করা হয়েছে। এবং দুটোর সিংক্রোনাইজেশন বেশ দক্ষভাবেই করা হয়েছে। শুরুর দিকটা বাদে কোথাও খুব একটা ধীরতা নেই। কোথাও কাহিন��� একঘেয়ে কিংবা আটকেও যায়নি। ছিলো না ঝুলে যাওয়ার কোন আলামত। কাহিনীর পটভূমি আগের বারের মতোই বেশ ছিমছাম এবং অভিনব। এই গল্পটাকে চাইলে সামনে বাড়িয়ে নেওয়াও সম্ভব। তবে আমি বিশ্বাস করি সেটা না করাটাই ভালো হবে। করলেও টিপিক্যাল সিক্যুয়েল স্টাইল অনুসরণ করা হবে না বলে আশা করি।
ঈশ্বরের মুখোশে মূল সমস্যা ছিলো অযথা বাড়তি চরিত্র নিয়ে আসা এবং গতানুগতিক মার্ডার মিস্ট্রি স্টাইলে গল্প চালিয়ে যাওয়া। কিন্তু ফিনিক্সে কোন চরিত্রের অপচয় নেই। মাছে খাওয়া লাশ থেকে নিখোঁজ মানুষটির বন্ধু, মোটামুটি সবাইকে লেখক বেশ ভালো মনোযোগ দিয়েছেন এবং তাদের সবাইকেই যথাযথ সমাপ্তি প্রদান করেছেন।
তবে সবকিছু ছাপিয়ে গিয়েছে অন্য আরেকটি ব্যাপার। সেটি হলো গল্পের টুইস্ট। টুইস্ট জিনিষটা বাঙালী সাহিত্যে বেশ জেনেরিকভাবে তুলে ধরা হয়। কোয়াইট লেভেল মার্ডার মিস্ট্রিতে হুট করে লাউড টুইস্ট, সাইকোলজিক্যাল থ্রিলারে দুর্বল “প্রটাগনিস্টের পরিচিত মানুষ” টুইস্ট দেখে আমরা বেশ ভালোভাবে অভ্যস্ত এবং বিরক্ত। ফিনিক্স এখানেই গতানুগতিক টুইস্ট প্রথাকে দাপটের সাথে পরাস্ত করে দিয়েছে। কোয়াইট লেভেল থেকে শুরু হওয়া গল্পটাকে খুব যত্ন নিয়ে উন্নিত করা হয়েছে লাউড লেভেলে, যেটা ছিলো আসলে পুরোপুরি ধাপ্পাবাজি। ঠিক যেখানে এসে গল্পটা পাঠকের কাছে পুরোপুরি লাউড হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারতো, ঠিক সেখানে এসেই পাঠককে প্রবল নাড়া দিয়ে গল্পটা আবার পার্সোনাল হিসেবে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মূল টুইস্টটার কিছুক্ষণ আগে, বইয়ের তিন চতুর্থাংশ শেষ হওয়ার আগে আরেকটা ক্ষণস্থায়ী টুইস্ট আছে। ঈশ্বরের মুখোশ পড়া থাকলে আপনি সেখানেও ভড়কে যেতে বাধ্য।
আধুনিক হলিউড ইতিহাসের সর্বশ্রেষ্ঠ পরিচালকদের একজন কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনো টুইস্টের সংজ্ঞা নিয়ে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেন, টুইস্ট জিনিষটা হলো রাবার টানার মতো। আপনি যতোক্ষণ পারেন, যতো জোর দিয়ে পারেন রাবারটা টানতে থাকুন। ঠিক যখন রাবারটার গায়ে ফাটল ধরার লক্ষণ দেখা দেওয়ার সময় হবে তখনই আপনি রাবারটা ছেড়ে দিন। রাবারটা যে গতি নিয়ে সংকুচিত হয়ে নিজের পূর্বের আয়তনে ফিরে যাবে সেটাকেই বলে টুইস্ট।
কথাটা বলার কারণ হলো, বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে টুইস্টের সদ্ব্যবহার ভয়ানক পরিমাণে কম। প্রেডিক্টেবল টুইস্টগুলোর কথা বাদ দিলেও যেগুলো বাকী থাকে সেগুলোতে হয় টুইস্টটা খুবই বাজে, অথবা খুবই অসামঞ্জস্যপূর্ণ, অথবা খুব একটা কাজে দেয় না। ঈশ্বরের মুখোশেই টুইস্ট প্রবলেম আছে। কিন্তু, ফিনিক্স আমার পড়া প্রথম এবং সম্ভবত বাংলা থ্রিলার সাহিত্যের ইতিহাসেই প্রথম বই যেটা ট্যারান্টিনোর সংজ্ঞাটাকে জীবন্ত প্রতিরূপ দিতে পেরেছে।
প্রশ্ন আসতে পারে, এটাকে আমি বাংলা ইতিহাসের সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ট্যাগটা দিতে চাইছি কিনা। উত্তরটা হলো, না। তবে ঈশ্বরের মুখোশ বাদ দিলেও আরও অনেক তথাকথিত সর্বকালের সেরা থ্রিলার থেকে ফিনিক্স হাজারগুণে, লক্ষগুণে ভালো। সুতরাং, অন্তত অন্যতম শ্রেষ্ঠ হিসেবে ধরে নিতে চাইলে খুব একটা ভুল হবে বলে আমার মনে হয় না। আমার কাছে এটা বাংলা সাহিত্যের সেরা দশটি থ্রিলারের একটি হিসেবে অবশ্যই থাকবে।
৫ ফিনিক্সেও সমস্যা আছে। তবে এই বইটির সমস্যাগুলো খুব একটা প্রত্যক্ষভাবে কাজ করে না। বরং এই বইটির সমস্যাগুলো অনেকটা পরোক্ষ। ঈশ্বরের মুখোশ প্রকাশিত হওয়ার অনেক পরে এসে পাঠককুল একটা ব্যাপার বুঝতে পেরেছিলো। যতোটা উপরে তারা তুলেছিলো বইটিকে, বইটি তার অর্ধেক পর্যন্ত যায়নি। যেটার বিরূপ প্রতিক্রিয়া কাজ করেছে ফিনিক্সে। আবার এই বইয়ের শুরুতেও আগের সমস্যাগুলো ফিরে এসেছিলো। যেমন, ধীরগতির উপস্থাপনা কিংবা দ্রুত দৃশ্যগুলোর শেষ হয়ে যাওয়া। কোথাও কোথাও অতিরিক্ত বর্ণনার কথাও বলা যেতে পারে। তবে সেগুলো বইয়ের মোটামুটি অর্ধেক পার হওয়ার উবে গিয়েছে।
অনেক পাঠককে দেখেছি টুইস্ট নিয়ে অভিযোগ করতে। অনেককে দেখেছি সমাপ্তি নিয়ে অভিযোগ করতে। আগেই আমি বলেছি, বাঙালী পাঠককুল গতানুগতিক টুইস্ট রেসিপিতে খুব ভালোভাবে (পড়ুন বাজেভাবে) অভ্যস্ত। সেজন্য এই বদহজম হওয়াটাই স্বাভাবিক। সমাপ্তি যেটা দেওয়া হয়েছে, টুইস্টের বিচারে সেটাও ঠিক আছে। বেশী বর্ণনায় গেলে ঝুলে যাওয়ার সমূহ সম্ভবনা ছিলো। যেটা লেখক সিদ্ধহস্তে সামলে নেওয়ায় তাকে ধন্যবাদ জানাই।
এছাড়াও তাকে ধন্যবাদ ঈশ্বরের মুখোশে করা ভুলগুলো ফিনিক্সে পুনরাবৃত্তি হয়নি দেখে। বেশীরভাগ লেখকই বিশ্বাস করেন না যে তার লেখনীতে ভুল বা সমস্যা থাকতে পারে। বিশেষ করে বাংলা লেখকদের মধ্যে তো এটাই নেই বললেই চলে। খুব কম লেখকই নিজের ভুলগুলো বুঝতে পারেন এবং সেগুলোকে ব্যবহার করে নিজের লেখনীকে আরও পরিশুদ্ধ এবং চুম্বকীয় করে তুলতে পারেন। জাহিদ হোসেন তাদেরই একজন।
৬ আমি আবারও বলছি, ফিনিক্স হচ্ছে টুইস্টের জন্য সেরা। হ্যাঁ, এর কাহিনী পটভূমিও বেশ চমকপ্রদ এবং অভিনব। তবে টুইস্টাই এর মূল আকর্ষণ। তাই যারা টুইস্টের ভক্ত, তাদের জন্য ফিনিক্স অবশ্যপাঠ্য। যারা ভড়কে যেতে পছন্দ করেন, তাদের জন্য ফিনিক্স অবশ্যপাঠ্য। যারা সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার পছন্দ করেন, তাদের জন্য ফিনিক্স অবশ্যপাঠ্য। যারা মার্ডার মিস্ট্রি পছন্দ করেন, তাদের জন্য ফিনিক্স বেশ ভালো সময় কাটানোর মতো বই। বইটিকে আমি দশে সাড়ে আট দিচ্ছি।
৭ প্রথম সিনেমার ভরাডুবি আর সমালোচনা ছাপিয়ে ১৯৯৫ সালে ডেভিড ফিঞ্চারের দ্বিতীয় সিনেমা মুক্তি পায়। সেভেন নামের সেই সিনেমাটিতে অভিনয় করেছিলেন ব্র্যাড পিট, মরগ্যান ফ্রিম্যান, গিনেথ প্যালেট্রোর মতো অভিনয়শিল্পীরা। মানব জীবনের আদিম সাতটি পাপ, সপ্তরিপু নিয়ে সৃষ সাইকোলজিক্যাল ঘরানার সিনেমাটি দর্শক এবং সমালোচক; সবাইকেই অবাক করে দেয়। সিনেমাটি জিতে নেয় বিশটিরও বেশী পুরষ্কার। এমনকি পেয়ে যায় বাফটা অ্যাওয়ার্ডে সেরা চিত্রনাট্যের মনোনয়ন।
এই সেভেন সিনেমাটি বিশেষভাবে বিখ্যাত হয়েছিলো একটি কারণে। হলিউডের ইতিহাসে অন্যতম সেরা সিনেমা হওয়ার মূল কারিগরই সেই কারণটিই। ডেভিড ফিঞ্চার এই কারণটির জন্যই পরবর্তীতে হলিউডে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন এক অনন্য আসনে।
অনেক স্লো একটা বই। প্লট ভালো হলেও শেষে গিয়ে সব গুবলেট হয়ে গিয়েছে। বলা যায় শেষটা একদম ই ভালো হয়নি। টুইস্ট নিয়ে ভাবিনি তবে যেটা দেয়া হয়েছে সেটাও সেভাবে আশ্চর্য করেনি। মোটামুটি আরকি।
মৃত্যু মানে কি? মৃত্যু মানে কি শুধুই শেষ? নাকি শুরুও হয় কোনোকিছুর? আর যদি স���ই শুরুটা হয় নারকীয়ভাবে? সেই শুরুর নারকীয়তা কতটা ভয়াবহ হয় যারা বেঁচে থাকে তাদের জন্য? কি অপেক্ষা করে তাদের শেষ সময়ে? তাদের শেষ কি রক্ত দিয়ে হয়? রক্তের রঙ লাল হলে প্রতিশোধের রং কি?
"ফিনিক্স মিথিক্যাল পাখি, বাঁচে অনেক বছর। জীবনের শেষ পর্যায়ে নীড়ে আগুন লাগিয়ে পরিণত হয় ছাইভস্মে। এখানেই ফিনিক্স পাখির খেল খতম ভাবলে ভুল হবে। খেলা যে আরো বাকি! কারণ, সেই ছাইভস্ম থেকে পুণর্জন��ম হয় নতুন আরেক ফিনিক্স পাখির। পাখি ডানা মেলে উড়ে যায় সুনীল আকাশে...”
প্লটঃ প্রখ্যাত থ্রিলার লেখক ওবায়েদ রহমানের দোরগোড়ায় এসে হাজির হয় একটা কাটা আঙুল আর সাথে এক রহস্যময় ভিডিও। আঙুলটি তার সপ্তাখানেক আগে নিখোঁজ হয়ে যাওয়া ছেলে ইশতিয়াক রহমানের। পুলিশের শরণাপন্ন না হয়ে ডাক দেন মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার আলী রেজা বখতিয়ারকে। তিনি সাথে নেন ইশতিয়াকের দুই বন্ধু ইফতি ও রোমেলকে। এগিয়ে চলে তাদের রহস্য উদ্ঘাটন।
একই সময়ে মুরাদপুর গ্রামে চলছিলো এক নারকীয় হত্যাযজ্ঞ। খুন হয়ে মাছের খাবারে পরিনত হন ডা. মইনুল হক। গ্রামে প্রবেশ করে দুই আগন্তুক। একই গ্রামের আরেকজনের খুনের খবরও আসে। মুদি দোকানদার ময়না মিয়ার কর্তিত মাথা পাওয়া যায় তারই কোলের উপর, তারই দোকানের ভেতরে। এর তদন্তের ভার পরে ডিবি অফিসার সায়েম সোবহানের উপর। কিন্তু বিধি বাম! খুন হয় আরও কয়েকটা; নারকীয়ভাবে অবশ্যই!!
পাঠ্যালাপঃ 10-9-8-7-6-5-4-3-2-1- এরপর যা হলো তারজন্য মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না। এর আগেই তো যথেষ্ট টুইস্ট পাইছি। একেরপর এক আসতেছিলো শেষে এসে। প্রথমদিকে খুব আহামরি কিছু ছিলোনা। স্বাভাবিক খুন-খারাবি, তার তদন্ত। কিন্তু মাঝের পর থেকে রোলার কোস্টারের গতি! কাকে ছেড়ে কাকে ধরি অবস্থা! তবে শেষদিকে যদি আরেকটু সময় নিয়ে আরও বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা যেত তাহলে আরও অসাধারণ হতো।
জাহিদ হোসেনের লেখা আগেও পড়া থাকায় আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়ে ছিলাম চরিত্রের ব্যাপারে। চরিত্রগুলাকে ভালোমতো পড়তে হবে। অনেক চরিত্র একসাথে ঢুকিয়ে জগাখিচুরি পাকাইছিলাম "দুধ চা" তে। তবে এ বইতে অবশ্য তুলনামূলকভাবে চরিত্রের সংখ্যা কমই। তাই খুব একটা সমস্যা হয়নি। সমস্যা হয়ছে চরিত্রের নিক নেমে। সবগুলা চরিত্রেই মনে হয় একটা করে নিকনেম দেয়া। এইটা আমার কাছে বিরক্তিকরই লাগছে কিছুটা। এছাড়া ইংলিশ গানের আধিক্যও তার লেখার সাধারণ একটা বিষয়!
সবকিছু মিলিয়ে পার্ফেক্ট একটা রিভেঞ্জ থ্রিলার। যাদের কাছে রিভেঞ্জ থ্রিলার পছন্দের তারা 'ফিনিক্স' পড়তে পারেন। এছাড়া একই জনরার "ঈশ্বরের মুখোশ" টাও অসাধারন। তবে অবশ্যই পড়ার জন্য হাতে সময় নিয়ে বসবেন!!!
"If you are interested in stories with happy endings, you would be better off reading some other books.In this book not only is there no happy ending, there is no happy beginning"
লেমনি স্নিকেট এর এই কোটেশন টা এই বই এর সাথে পারফেক্টলি ম্যাচ করে। তাছাড়া আমার হ্যাপি এন্ডিং পছন্দের না।তাই মনে হয় বেশি ভালো লাগছে। ফিনিক্স বই, ফিনিক্স পাখির মতোই....অনেক ইন্টারেস্টিং এন্ড দ্য ব্রিলিয়ান্ট ওয়ান। থ্রিলারপ্রেমীদের অবশ্যই ভালো লাগবে।ঈশ্বরের মুখোশখ্যাত জাহিদ হোসেনের রিভেঞ্জ ট্রিলজির তৃতীয় উপাখ্যান "..........." এর জন্য শুভকামনা রইলো। :)
বাই দ্য ওয়ে, রিভেঞ্জ নিতে কার না ভালো লাগে? আমার কিন্তু সেইই লাগে,তার থেকে বেশি ভালো লাগে তার প্ল্যান করতে(তবে আমি কিন্তু বইয়ের মতো কিছু করার প্ল্যান কখনো করিনি) :p Because.... "Revenge is a dish best served cold"
I could have given it a bit more, but I guess Jahid Hossain is a bit of misogynist at heart, as whenever he describes a woman, he demeans her. Despite this the book is not a bad read.
প্রতিশোধের রং কি? এটা কি লাল, নাকি নীল না আগুনরঙা?
প্রখ্যাত থ্রিলার লেখক ওবায়েদ রহমানের ছেলে ইশতিয়াককে কিডন্যাপ করা হয়। পাঠানো হয় একটি ভিডিও ক্লিপ ও হাতের কাটা আঙুল! পুলিশ কোন দিশা খুঁজে পায় না। তার পরিবার ও ইশতিয়াকের বন্ধুরা শরণাপন্ন হয় স্বেচ্ছায় অবসরপ্রাপ্ত আর্মি ইন্টেলিজেন্স অফিসারের আলী রেজা বখতিয়ারের কাছে। তদন্ত করতে রাজি হয় কারণ সে নিজেও ওবায়েদ রহমানের ফ্যান!
এদিকে মুরাদপুর গ্রামে অভিনব পদ্ধতিতে খুন হতে থাকে আপাতদৃষ্টিতে নিরীহ মানুষ। তাদের খুন করার প্রক্রিয়া অদ্ভূতভাবে মিলে যায় ওবায়েদ রহমানের বইগুলোর সাথে! পাঠানো হয় ডিবির এলিট ফোর্সের উদীয়মান ডিটেকটিভ সায়েম-কে। কিন্তু নিজেকে সমুদ্রের অথৈজলে খুঁজে পায় সে!
তার মানে কি এই খুনগুলো এবং কিডন্যাপ সাদৃশ্যপূর্ণ! বখতিয়ার বা সায়েম, কেউ কোন সমাধান খুঁজে পায় না!
কাদ্যুসেয়াস আর ঈশ্বরের মুখোশের পর আরো একবার জাহিদ হোসেনের ফিনিক্স পড়ে অভিভূত হলাম। বিশেষ করে এই 'Revenge is a dish best served cold..' মানে ট্রিলজির বইগুলো আলাদা একরম শিহরণ দেয়!
কিন্তু...
১) প্রথমেই আসি আলি রেজা বখতিয়ারের কাছে। একজন আর্মি ইন্টেলিজেন্স অফিসার তার ব্যানার লাগিয়ে বেড়ায়- জানা ছিল না। তদন্তের স্বার্থে যেখানেই যান আমি 'তমুক' বলে নিজের পরিচয় দিয়ে নেন! এমনকি নিজের মেয়াদোত্তীর্ণ 'আইডি কার্ড' তদন্ততের সাহায্যে ব্যবহার করেন। (একজন ইন্টেলিজেন্স অফিসার এসব করতে পারেন বা তার আইডি কার্ড তা কাছেই থাকতে পারে? আমার অজ্ঞাতও হতে পারে!)
২) সায়েম সোবহান। ডিবির এলিট ফোর্সের উদীয়মান ডিটেকটিভ! কিন্তু পদবির সাপেক্ষে তার কাজকর্ম একেবারেই মানহীন। তার বউ, থানার এসআই সবাই তারে ধরায়া দেয় (সে ধরতে পারে!)
৩) ইব্রহিম খলিল! ওবায়েদ হাসানের সৃষ্ট চরিত্র 'রায়হান রশিদে'র ডাই হার্ড ফ্যানের চেয়েও বড় কিছু! কিন্তু যে শার্লক হোমস, জেমস বন্ড, এরকুল পোয়ারো, জেসন বর্ন পড়ে সে রায়হান রশিদের এমন ফ্যান কিভাবে হয়? যদি সে কখনো এই টাইপের বই না পড়ত তবে এই 'রায়হান রশিদ'-ই হতো ওয়ান ম্যান আর্মি! ব্যাপরটা কি সাইকোলজিক্যালি ঠিক? (এখানেও আমার অজ্ঞতা থাকতে পারে!)
৪) 'ঈশ্বরের মুখোশ' বইয়ে নিকটজনের মধ্যে একজন ছিল যে সরাসরি প্রতিশোধের সাথে যুক্ত। একি ব্যাপার রিপিট হইছে বইলা মনে হইলো!
৫) জাহিদ হোসেন বব ডিলান, দ্য ডোরস ব্যান্ডের জিম মরিসন, জন লেনন এসব নামি-দামী সংগীতজ্ঞের পাশাপাশি হলিইড মুভির বেশ বড়সড় ফ্যান এটার ছাপ তিনি বইয়ে রাখেন! (এতে কি আমার কোন সমস্যা আাছে? নাই!)
..এই আরকি
সবমিলিয়ে, জাহিদ হোসেন বেশ ভালো গল্প বলিয়ে! প্লট আর প্রতিশোধের অভিনব পরিকল্পনাই আমাকে তারগুলো দিতে বাধ্য করে!
This entire review has been hidden because of spoilers.
প্রতিশোধের রং কী ? এটা কি লাল, নাকি নীল না আগুনরঙা ?
প্রখ্যাত রহস্যরোমাঞ্চ লেখক ওবায়েদ রহমানের একমাত্র ছেলে ইশতিয়াক রহমান অফিস থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় । তার অর্ন্তধানের এক সপ্তাহ পর দোরগোড়ায় হাজির হয় রহস্যময় এক ভিডিও ও একটি কাটা আঙুল ! ভিডিওতে কি জানি বিড়বিড় করে যায় হেলমেটধারি এক উন্মাদ । ডাক পড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার আলী রেজা বখতিয়ারের, সাথে ইশতিয়াকের দুই বন্ধু ইফতি ও রোমেল । তারা তিনজন মিলে কি পারবে উন্মাদটাকে থামাতে ? ইশতিয়াককে ঘরে ফিরিয়ে আনতে ?
এদিকে মুরাদপুর শান্ত, নিস্তরঙ্গ এক গ্রাম । কিন্তু হঠাৎই এক অশুভ ছায়া গ্রাস করে ফেলে গ্রামটিকে । নৃশংসভাবে খুন হন অকৃতদার ডাঃ মইনুল হক । ঘটনা তদন্তে পাঠানো হয় ডিবির তরুণ তুর্কি সায়েম সোবহানকে । কিন্তু একের পর এক নৃশংস খুন ঘটতেই থাকে । এ সবগুলো খুন কি একসূত্রে গাঁথা ? কী প্রমাণ করতে চায় খুনি ? কিসেরই বা প্রতিহিংসা তার ?
পুরাণের অগ্নিবর্ণ ফিনিক্স প��খি আপন ছাইভস্ম থেকে পুণরায় জেগে ওঠে । ফিনিক্স পুণর্জাগরণের প্রতীক, পুনরুত্থানের প্রতীক । কাগুজে ফিনিক্স কি পুণরায় জেগে উঠবে, কারই বা হবে পুণরুত্থান ? কার প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে ছারখার হবে সব ?
শুরু থেকেই গল্পে পাঠককে ধরে রাখার উত্তম গুণ আছে জাহিদ হোসেনের। সমান্তরালে এগিয়েছে দুইটি ইনভেস্টিগেটিভ স্টোরিলাইন। একটি পুলিশ প্রসিডিউরাল, অপরটি প্রাইভেট ডিটেক্টিভ। শেষে এসে মিলে গেছে দুইটা। চরিত্রায়নে বেশ মুন্সিয়ানাই দেখিয়েছেন। তদন্তের দুইজনেই বেশ বুদ্ধিমান এবং সিদ্ধান্ত নিতে পারদর্শী ছিল। তবে ইফতির ফার্স্ট পার্সন ন্যারেটিভে সব কিছু বর্ণনা করার সিদ্ধান্ত সঠিক ছিল না। মনে হয়েছে সে কোনো অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা, যে দূর দূরান্তে কি ঘটে চলেছে সব দেখতে পায়। এটা লেখনকৌশলের দুর্বলতা ছিল। এবার আসি এর এন্ডিংএ। লেখক চেয়েছেন ঠেসে ঠেসে টুইস্ট ভরতে। আমি এন্ডিংটাকে কিছুটা জাস্টিফাই করবো রিভেঞ্জ জঁরার সাফল্য হিসেবে। কিন্তু বেশি জটিল হয়ে গেছে মনে হল। আরো নিবিড় কানেকশন আশা করেছিলাম ঘটনাগুলার মাঝে। আর ক্লাইম্যাক্সে এসে কেন যেন দেখা যায় রিভেঞ্জের পাশাপাশি আরেকটা এজেন্ডা চলে আসে। এটা "ঈশ্বরের মুখোশ"এও দেখতে পেয়েছি, জিনিসটা একজন পাঠকের জন্য খুবই হতাশাকর। আমি তো রিভেঞ্জ থ্রিলার পড়তে চাই, যেখানে বিশুদ্ধ রিভেঞ্জের তারণাই এন্টাগনিস্টকে চালনা করবে। তার মধ্যে এরকম থার্ড পার্টি নিখাদ বিরিয়ানিতে এলাচ। ব্যক্তিগতভাবে এই বইকে ৩ এর বেশি দেয়া গেলো না ৫ এ।
Like the Legend of the Phonix All ends with beginnings -Phonex, Daft Punks
বইটির উপরে যথেষ্ট প্রভাব রেখেছে ফিনিক্স পাখিটির অদ্ভুদ এক বৈশিষ্ট । তা যখন বইটি পড়তে শুরু করি তখন ফিনিক্স সম্পর্কে জানার ইচ্ছে হয় । তাই আপনাদের সম্পর্কে ফিনিক্স পাখিটির কিছু তথ্য শেয়ার করলাম।
গ্রীক উপকথার এক চিরঞ্জীব আগুনপাখির নাম ফিনিক্স। গ্রিক ভাষায় phoenix মানে ‘দি ব্রিলিয়ান্ট ওয়ান’ কিংবা পার্পল বা লাল এবং নীলের মিশ্রণে সৃষ্ট রং। প্রাচীন মিথ অনুসারে ওই আগুনরঙা ফিনিক্স পাখিটি নাকি ৫০০ বছর বেঁচে থাকত। তারপর জীবনের একেবারে শেষ প্রান্তে এসে পাখিটি দারুচিনি, গন্ধরস প্রভৃতি সুগন্ধী উদ্ভিদ দিয়ে তৈরি করত একটি নীড়, তারপর সে নীড়ে ধরিয়ে দিত আগুন। নীড়সহ ফিনিক্স পাখিটি পুড়ে ছাই হয়ে যেত। কিন্তু এখানেই সব শেষ নয়, কারণ ভস্মিভূত ছাই থেকে আবার জেগে উঠত আরেকটি অগ্নিবর্ণ ফিনিক্স পাখি। তারপর নতুন পাখিটি হেলিওপোলিস নামে প্রাচীন মিশরের একটি নগরে যেত সেখানকার সূর্য দেবতাকে শ্রদ্ধা জানাতে। এমন সব বিচিত্র স্বভাবের অধিকারী ছিল এই ফিনিক্স পাখি।
প্রথম ফিনিক্স পাখির কল্পনা করেছিল ফিনিশিয় সভ্যতা। ফিনিশিয় (Phoenicia) সভ্যতা আর ফিনিক্স পাখির গ্রিক নামের মধ্যে একটি যোগসূত্র পাওয়া যায়। প্রাচীন মিশরে ফিনিক্স পাখিকে বলা হত বেনু বা বেন্নু।মিশরীয় ধর্মে এই বেনু পাখি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল। আসলে বেনু হল এক ধরণের পার্পল হিরণ। নীল নদের প্লাবনের সময় নীল রঙের সুন্দর এই পাখিটি আশ্রয় নেয় উঁচু জায়গায় । তখন মনে হয় পানিতে সূর্য ভাসছে। এই কারণে এ পাখির নাম হয়েছে ‘উদিত জন’ বা ‘দি অ্যাসেন্ডিং ওয়ান’ মানে, যা উঠছে, যা মনে করিয়ে দেয় সূর্য দেবতা ‘রা ’ কে। প্রাচীন মিশরে আত্মাকে বলা হত,‘বা। বেনু পাখিকে সূর্য দেবতা ‘রা ’ এর আত্মা মনে করা হত। এভাবেই পার্পল হিরণ পাখিটির নাম হয়, বেনু বা বেন্নু। হেলিওপোলিস মানে সূর্যের নগরী। এটি প্রাচীন মিশরে অবস্থিত ছিল। প্রাচীন হেলিওপোলিস নগরে অধিবাসীরা বেনু পাখি কে ভীষণ শ্রদ্ধা করত।
ফিনিক্স দেখতে অপূর্ব সুন্দর। এর পালক ও লেজ সোনালি ও টকটকে লাল রঙের। কারণ, লাল রং সূর্যর প্রতীক। ফিনিক্স পুর্নজন্ম ও নিরাময়ের প্রতীক। প্রাকৃতিক বিপর্যয়ের পর নতুন জীবনের দিকনির্দেশনা। ফিনিক্স পাখি শীতল কুয়ার ধারে বাস করত, সকালে আসত কুয়ার কাছে, স্নান করত, গাইত গান । এত সুন্দর পাখি আর এত সুন্দর তার কন্ঠস্বর যে সূর্যও নাকি সে গান শোনার জন্য থেমে যেত। পাখিটি কখনও আহত হলে নিজেই সারিয়ে তুলতে পারে। সূর্যর অস্ত যাওয়া ও উদয় হওয়া মানবজীবনের জীবন-মৃত্যুর রূপকও বটে। তবে জীবনদাতা সূর্য ও ফিনিক্স পাখি উভয়ই শান্তির প্রতীক।
প্রতিশোধের রং কী ? এটা কি লাল, নাকি নীল না আগুনরঙা ?
যদি শুরটা হয় এমন একটা হাই লেভেলের প্রশ্ন দিয়ে তখন একটা বারের জন্য হলেও বইটি হাতে নিয়ে ইচ্ছে করবে। মানুষ আগ্রহ বোধ করবে বইই পড়ার জন্য একটি বারের জন্য হলেও । আর যাদের লেখকের আগের লেখা ‘ঈশ্বরের মুখোশ’ পড়া হয়েছে তারা বোধ আমার মতো হাসফাস করবেন বইটি পড়ার জন্য। হয়তো এত দিনে অনেকেই পড়ে ফেলেছেন হয়তোবা। যারা পড়েন নি তারা হয়তো বা হাত ধুয়ে প্লেট নিয়ে বসে আছেন :p
প্রখ্যাত রহস্যরোমাঞ্চ লেখক ওবায়েদ রহমানের একমাত্র ছেলে ইশতিয়াক রহমান অফিস থেকে ফেরার পথে নিখোঁজ হয় । তার অর্ন্তধানের এক সপ্তাহ পর দোরগোড়ায় হাজির হয় রহস্যময় এক ভিডিও ও পার্সেলে একটি কাটা আঙুল ! ভিডিওতে কি জানি বিড়বিড় করে যায় হেলমেটধারি এক উন্মাদ । ডাক পড়ে স্বেচ্ছানির্বাসনে থাকা মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার আলী রেজা বখতিয়ারের, সাথে ইশতিয়াকের দুই বন্ধু ইফতি ও রোমেল । তারা তিনজন মিলে কি পারবে উন্মাদটাকে থামাতে ? ইশতিয়াককে ঘরে ফিরিয়ে আনতে ?
এদিকে মুরাদপুর শান্ত, নিস্তরঙ্গ এক গ্রাম । কিন্তু হঠাৎই এক অশুভ ছায়া গ্রাস করে ফেলে গ্রামটিকে । নৃশংসভাবে খুন হন অকৃতদার ডাঃ মইনুল হক । ঘটনা তদন্তে পাঠানো হয় ডিবির তরুণ তুর্কি সায়েম সোবহানকে । কিন্তু একের পর এক নৃশংস খুন ঘটতেই থাকে । খুন করার কৌশল গুলোও অদ্ভুদ।রহস্যরোমাঞ্চ লেখক ওবায়েদ রহমানের বই গুলোর অবলম্বনে করা হয়েছে । তাহলে কি খুনী লেখকের কোনো অন্ধ ভক্ত ফ্যান।
কেন করছে সে খুন গুলো??? এ সবগুলো খুন কি একসূত্রে গাঁথা ? কী প্রমাণ করতে চায় খুনি ? কিসেরই বা প্রতিহিংসা তার ?
পুরাণের অগ্নিবর্ণ ফিনিক্স পাখি আপন ছাইভস্ম থেকে পুণরায় জেগে ওঠে ।ফিনিক্স পুণর্জাগরণের প্রতীক, পুনরুত্থানের প্রতীক । কাগুজে ফিনিক্স কি পুণরায় জেগে উঠবে, কারই বা হবে পুণরুত্থান ? কার প্রতিশোধের আগুনে পুড়ে ছারখার হবে সব ? কে চাইছে এমন প্রতিশোধ?? মুরাদ পুরের মতো শান্ত গ্রামে কি তবে আসলেই অশুভ কোনো অপশক্তির আগমন ঘটেছে?? জানতে হলে পড়তে হবে ঈশ্বরের মুখোশ খ্যাত জাহিদ হাসানের রিভেঞ্জ ট্রিলোজির দ্বিতীয় উপাখ্যান ফিনিক্স ।
প্লট টা বেশ ছিল। আর লেখকের অসাধারণ গাথুনীতে বেশ ভালো ভাবেই গুছিয়ে এনেছেন রহস্যের জাল। চুম্বকের মতো অদ্ভুট টান ছিলো শুরুর পর থেকেই।তবে কিছু চরিত্রের অনাহুত আগমণ মাঝে মাঝে ঝুলিয়ে দিতে চাইলেও লেখকের লেখন শৈলী তা বেশ ভালো ভাবেই টান টান করে রেখেছেন। তবে শেষের দিকে তাড়াহুড়োর ছাপ সুস্পষ্ট। পৃষ্ঠা সংখ্যা ২৮৫ কে কমাতে পারলে একটা সিক্স প্যাক সম্বলিত বই হতে পারতো।
চরিত্রের নাম গুলোও বেশ নজর করা :P যেমন গাঞ্জা গাজী :D :D
এই উপন্যাসটির শ্রেষ্ঠ সম্পদ কি প্রশ্ন করলে রহস্য,গতিময়তা,মারাত্মক সব টুইস্ট সহ নানা উত্তর দেওয়া যেতে পারে।কিন্তু প্রকৃতপক্ষে এগুলোর একটিও সঠিক উত্তর নয়।দুর্দান্ত সাবলীল,প্রাঞ্জল ভাষায় কাহিনীর বর্ণনা করেছেন তিনি।তবে এ কারনে আমি একে সঠিক উত্তর বলছি না।আরও স্পষ্ট করে বললে এই উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ সম্পদ লেখকের লেখার লেখন শৈলী ।এর কোন উদাহরণ দিতে যাচ্ছি না,কারন পুরো উপন্যাসটিই বলতে গেলে এর উদাহরণ। এই লেখকের বদলে অন্যকেউ হলে হয়তো এতটা গুছিয়ে পাঠকের সামন্যে উপস্থাপন করতে পারতো না।লেখকের গ্রিক মিথোলজির উপরে মায়া তা বোঝা যা���় বেশ ভাল ভাবেই বইয়ের নাম গুলোর দিকে তাকালেই।
আর খুটিনাটি কিছু অসংগতি রয়েছে। বইটিতে ঈশ্বরের মুখোশের ছাপ রয়ে গিয়েছে বেশ ভালো ভাবেই।
Not the end, Not the end Death is not the end
আর হ্যা রেভেঞ্জ ইস এ ডিস বেষ্ট সার্ভড কোল্ড । কথাটার সাথে আবারো পরিচয় করিয়ে দেবেন লেখক। নতুন ভাবে নতুন আঙ্গিকে এই আশায় রইলাম।
আসলেই প্রতিশোধের রঙ কী? লাল? নীল? নাকি আগুনরঙা!? কারো প্রতি রাগ পুষে রেখে প্রতিশোধ নেওয়া উচিত নাকি নিঃশর্তভাবে ক্ষমা করে দেওয়া উচিত? তা অবশ্য পরিস্থিতি সাপেক্ষে!
প্রথমে উধাও হয়ে যায় লেখক ওবায়েদ রহমানের ছেলে ইশতিয়াক। পাওয়া যায় না তার কোনো হদিস! হঠাৎ আসে একটা ভিডিও তার সাথে একটা কাঁটা আঙুল। আর এই ঘটনার তদন্ত শুরু করেন সাবেক মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স অফিসার আলী রেজা বখতিয়ার।
অপরদিকে মুরাদপুরে ঘটে যায় একের পর এক খুন। তাও আবার ওবায়েদ রহমানের বইয়ের কাহিনী অবলম্বনে! ডা. মইনুল হক খুন হওয়ার পর, তার খুনের তদন্ত করার জন্য ডাক পড়ে ডিবির তরুণ তুর্কি সায়েম সোবহানের।
দু'টো ঘটনা কী একসূত্রে গাঁথা? আর বারবার ফিনিক্স পাখির কথাই বা কেনো আসছে?
[একটা ব্যাপার বুঝতে পারলাম না, সালমান হকের ছেলে সাদমান হক কেনো ওই চিরকুট লিখে গেলো? আর সে কোথায় গেলো?]
ফিনিক্স বইটা যখন আমার কাছে আসে তখন নতুন লেখক হিসেবে কেমন লিখেছে তা নিয়ে একটা সঙ্কায় ছিলাম। কিন্তু না বইটা পড়া শুরু করতেই আর থামতে হয়নি। বইটার সবচেয়ে ভালো দিক লেগেছে বেশ কিছু ব্যান্ডের গান কে বিভিন্ন ধাঁধার মতো ব্যবহার করা হয়েছে। সত্যিই লেখকের প্রশংসা করতেই হয়।
বাংলাদেশি প্রেক্ষাপটের উপর তৈরি এর চেয়ে ভালো ক্রাইম থ্রিলার আর হয়ই না।
অসাধারণ একটা বই, এক মুহুর্তের জন্যও মনে হয় নি আমি বইয়ের পাতা থেকে মনোযোগ হারাচ্ছি। লেখক পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখতে সক্ষম নিসন্দেহে। থ্রিলার বই যেমন হওয়া দরকার, আমার কাছে মনে হয়েছে এটাই উপযুক্ত একটা থ্রিলার বই। সেই শুরু থেকে শেষ অবধি 'এর পর কি হবে' ভাবটা ছিল।
প্রথমদিকে কাহিনী বিল্ড-আপে একটু সময় নিলেও পরবর্তীতে ভালোই ফাস্ট এগিয়েছে৷ একই সাথে দুদিক থেকে তদন্ত শুরু হয়ে শেষের দিকে একই কেন্দ্রবিন্দুতে মেলানোর ব্যাপারটা লেখক ভালোই মিলিয়েছেন। তবু বড্ড সিনেমাটিক 🥺 হতে পারে জীবন আসলেই এমন সিনেমাটিক হয়!
অবশেষে লেখকের থেকে ভালো সমাপ্তি পাইলাম। এর আগে দুইটা বই পড়ছি। তার মাঝে গিলগামেশ শেষে একদম আশাহত করে। ভালো একটা বইয়ের জান কবজ করে ফেলছিল। তবে এই বইয়ে তুলনামূলক অনেক ভালো সমাপ্তিই দিছে। তার