রাজর্ষির লেখা থেকে আমরা জানতে পারি কীভাবে ন্যাশনাল সার্কাসের পাততাড়ি গুটিয়ে নবগোপালবাবু গড়ের মাঠে বেলুন ওড়ানোর ব্যাপারে গোরা সাহেবদের টক্কর দিতে শুরু করলেন। রাজর্ষির গল্পে ছড়িয়ে থাকে হাই স্কুলের ফ্রি বিটনুন, ভাঙা বেঞ্চের কাঠামো ভেঙে রুটি সেঁকা, হস্টেলের ফেয়ারওয়েলে কিশোরকুমার, নীল কালির ওপর গুঁড়ো গুঁড়ো মধুসূদন, মঞ্জুষা নামক এক কিশোরীর প্রতি লোভ, বেশ্যা ও ব্রাহ্মণের সহাবস্থান। স্বভাবতই এই বইতে সিন্দুক কেঁপে উঠছে মাঝে মধ্যেই।
রাজর্ষি দাশ ভৌমিকের জন্ম ১৯৮৭ সালে কলকাতায়। সাত বছর বয়েসে যৌথপরিবার থেকে আলাদা হয়ে বাবামায়ের সঙ্গে মফস্বল শহর বারাসাতে চলে আসা। বাবা-মা সরকারী কর্মচারি। মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পাশ করেন বারাসাত মহাত্মা গান্ধী মেমোরিয়াল উচ্চ বিদ্যালয় থেকে। কবিতা লেখার শুরু ক্লাস এইট থেকে, প্রথম কবিতার বই সতেরো বছর বয়েসে। এঞ্জিনিয়ারিং পড়েছেন শিবপুর বিই কলেজ থেকে, পরবর্তীতে আই আই টি কানপুরে। পিএইচডি নর্থ ক্যারোলিনা স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে। গবেষণার বিষয় জলসম্পদ এবং জলবায়ু পরিবর্তন। বর্তমানে ব্যাঙ্গালোরের ভারতীয় বিজ্ঞান সংস্থানে অধ্যাপনা করছেন। প্রকাশিত কবিতার বইয়ের সঙ্গে পাঁচ; একটি বাদে সব কবিতাবই স্বউদ্যোগে প্রকাশিত। গল্প-উপন্যাসের বই এযাবত আটটি; তিন প্রকাশক সৃষ্টিসুখ, বৈভাষিক এবং একতারা। গোয়েন্দা কানাইচরণ চরিত্রটির স্রষ্টা। কানাইচরণের উপন্যাসিকা 'চড়াই হত্যা রহস্য' অবলম্বনে নির্মিত হয়েছে ওয়েবসিরিজ 'ব্যাধ'। সম্প্রতি কয়েকটি বইয়ের ইংরিজি অনুবাদের কাজ শুরু হয়েছে।
রাজর্ষি দাস ভৌমিকের লেখা— এটুকু শুনলে বা পড়লেই আপনার মাথায় কোন শব্দটি আসে? আমার আসে: কানাইচরণ! এই বইয়ের ছোটোগল্পগুলো অবশ্য তার অনেক আগের। তখনও কানাইচরণ বোধহয় ইচ্ছে হয়ে লেখকের মনের মাঝারেই লুকিয়ে ছিলেন। তবে এই বারোটি ছোট্ট গল্পের মধ্যেও তিনটি জিনিস বেশ স্পষ্ট। প্রথমত, লেখকের কালচেতনাটি তদ্দিনেই বেশ পোক্ত হয়ে গেছিল। দ্বিতীয়ত, সমাজের যে অংশটাকে আমরা আড়চোখে দেখি, বা দেখেও না-দেখা করে পাশ কাটাই, সেই অংশটাকে তিনি বিলক্ষণ চেনেন। তৃতীয়ত, ডার্ক হিউমারের একটা স্রোত তাঁর এই গল্পগুলোর নীচ দিয়ে দিব্যি বয়ে গেছে। ছোটো গল্পের অনুরাগী হলে এই ছিমছাম, নির্ভার বইটিকে পড়ে দেখতে পারেন। মন্দ লাগবে না।