বেশ বড়সর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগ যখন পরিণত হলো গ্রহীয় সঙ্কটে আর সেই সঙ্কট যখন নিয়ে আসে জেনেটিক বিবর্তন ব্যাপারটা তখন হয়ত শাপে বর কারো কারো ক্ষেত্রে। এরকমই এক দুর্যোগ পরবর্তী দূর ভবিষ্যতের কোন এক সময়ে শুরু হয় গল্পের সেট যেটা পরিণত হয় বহুল প্রচলিত "কন্সপিরাসি থিওরিতে", যেটা ততদিনে হাস্যকর রকমের বিনোদনের পরিভাষায় পরিণত হয়েছে।
সময়ের মাঝে হারিয়ে না যাওয়া প্রাণবন্ত কয়েকটি দল খুঁজে পায় কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য। গল্পের বেশিরভাগ বিষয়বস্তু মূলত নিষিদ্ধ ইতিহাসের পাশাপাশি কোয়ান্টাম মেটা-ফিসিক্যাল জগতে বিচরণ করে, যা পরিণতি পেতে থাকে অতি-মাত্রার জগতের দিকে। গল্প এক সময় গুরুতর দিকে যেতে থাকে যখন চরিত্রগুলোর প্রশ্ন ও উত্তর ঈশ্বর-মাত্রার দিকে ইঙ্গিত দিতে শুরু করে।
I could write a bio here--long or short. You won't know me still. Not in the way you could if you read things I wrote. But you can start here--from some of my articles. As for the books, Wisdom Revolution is out there.
হুম। শেষ পর্যন্ত নিজের বইয়ে একটা রিভিউ দিতে পারছি ... বিশেষ করে যখন, প্রারম্ভকে "আনএভেইলএবল" ঘোষণা দিচ্ছি। একা একা একটা বইয়ের কাজ করা অসম্ভব। কেন একা সেই প্রসঙ্গ বাদ। কিন্তু সেটা সম্ভব ছিল কিছু অচেনা মানুষের জন্য, যাদের সাথে কাকতালীয়ভাবে কথা হয়েছে, চেনা হয়েছে, এরপর দেখাও হয়েছে। তারা বইটা পছন্দ করেছিলো, ছড়িয়ে দিয়েছিলো সবার মাঝে, বইয়ের গ্রুপগুলোতে পোস্ট দিয়েছে, রিভিউ দিয়েছে--তাদের কাছে আমি কৃতজ্ঞ। তাদের উৎসাহেই এবং আরও কিছু ন্যাশনাল ইসুয় এর পর আমি ইংলিশে রি-রাইট করার সিদ্ধান্ত নেই। ওবাক লেগেছিলো তখন, যে তারা তখনও আমাকে উৎসাহ দিয়েছে। ইনবক্সে 'ইউনিক' 'ডিফারেন্ট' 'পরেরটা কবে আসবে'--এগুলোই ছিলো আমার প্রেরণা। বইয়ের প্রথম কিছু সাপোর্টারদের আমি ভুলিনি (In case you are thinking, I forgot you, because I'm not active in facebook anymore. I'm guessing half of them aren't active in Goodreads either.) কিছুদিন আগে আম্মু আমাকে ফোন দিয়ে বলছিলো, রকমারি থেকে নাকি ফোন দিয়ে বইয়ের প্রশংসা করে বলেছে পরের বই কবে আসবে। কথাটা শুনে আমি মুচকি হাসছিলাম, রকমারির কথা শুনে না, দ্বিতীয় বই খুঁজছে সেটা শুনেও না, অর্ধেক পৃথিবী দূর থেকে আম্মুর কণ্ঠের উৎসাহটা শুনে। সবাইকে ধন্যবাদ সাথে থাকার জন্য।
About this book: In the near future, a machinist, a monk, and a mesmerizer are looking for the Source of the universe, but among the ancient scriptures, they only find the devil …
Few humans in the future, find the secrets of what words and sound can do, for the Apocalypse and war lead them to evolve in mind and physique. Two of them end World War III with just a speech. Some say they did a mass-hypnosis. Others say it was their voice and will. Fifty years later in south-Asia, KUSHA, a twenty-three-year-old machine-geek with social awkwardness and amnesia tries to get the Devil’s Book with secrets of voice in a society that now worships the evolved High-Grades like its ancient people used to worship the Brahmins. But her idol war heroes, YUAN and RUEM, are also after it for power.
মুহাম্মদ জাফর ইকবাল স্যারের সায়েন্স ফিকশন ছাড়া আর তেমন কোন সায়েন্স ফিকশন আমার ঠিক পড়া হয়ে ওঠেনি! আর বাংলা সাহিত্যে আর কোন কোন লেখক আসলে সায়েন্স ফিকশন লিখেন তাও আমি বলতে পারবো না! এই জন্রায় আমি বড়ই আনাড়ি, আর সেই সুযোগ ব্যবহার করে আমার “কুশা” ভালো লাগা নিয়ে যদি কেউ প্রশ্ন তোলে তবে আমি এতো সহজে হার মানছি না! “কুশা” কে মোটামুটি পিওর সায়েন্স ফিকশন ই বলা যায় (যায় ই তো, তাইনা!?) এবং রীতিমতো হাই ক্যাটাগরিতে ফেলার মতোই (বাক স্বাধীনতা সবারই আছে, কারো ভালো না লাগলে সেটা তো আর আমার সমস্যা না!)। আর সবচেয়ে বড় কথা যে বইটা পড়ে নিরাশ হইনি অথচ ওই চিন্তাটাই মাথায় আসছিলো বেশি! এবারে বলি বইটার ফিসিক্যাল অ্যাপিয়ারেন্স নিয়ে! বাহ্যিক সৌন্দর্যকে খুব একটা গুরুত্ত্ব না দিলেও এই বইটা কিন্তু কিনেছিলাম ওর প্রচ্ছদ দেখেই যা কিনা লেখিকার নিজ হাতে করা! বইয়ের পৃষ্ঠার কোয়ালিটি, প্রিন্টিং( বেশ কিছু মিসটেক আছে), বইয়ের ভেতরে লেখিকার নিজের গড়া চরিত্রগুলোর চিত্র যেগুলো আবার লেখিকা নিজেই এঁকেছেন; এইসব মিলে বইটা বেশ রাজকীয়! চরিত্রগুলো নিয়ে একটু কিছু না বললে পেটের ভাত হজম হচ্ছেনা! য়্যুয়ান, যে ছেলেটা সম্ভবত সম্ভাব্য নায়ক তার চরিত্রটা একদম পারফেক্টলি উপাস্থাপন করা হয়েছে! তার ব্যক্তিত্ব, কথাবার্তা, সেন্স অফ হিউমার, তার কর্মপদ্ধতি, বুদ্ধিমত্তা, বন্ধুবৎসল মনোভাব, এককথায় শক্তিশালী একটা চরিত্র অংকন করতে যা কিছু প্রয়োজন তার সবই য়্যুয়ানের মধ্যে বিদ্যমান। এমন একটা চরিত্র কেউ ভালো না বেসে পারেনা। কিন্তু যেহেতু আমি “সালাজার স্লিদারিন” এর বংশধর সেহেতু আমার য়্যুয়ানের চেয়ে রুয়েমকেই বেশি ভালো লেগেছে! এইখানে আমার একটা কম্পলেইন আছে। রুয়েমকে এই গল্পের যথেষ্ঠ বড় এবং গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হিসেবে দেখানো হয়েছে, কিন্তু সেই হিসেবে তার চরিত্র বিশ্লেষনে লেখিকা একটু পক্ষপাতীত্ব করেছেন বলে আমার ধারনা (অনলি রুয়েম ইস রিয়াল!) একটা নেগেটিভ মানুষ কখনোই শতভাগ নেগেটিভ হয়না, তার মধ্যেও কিছু পসিটিভ ব্যাপার থাকে, কিন্তু রুয়েমের ক্ষেত্রে সেই পসিটিভ ব্যাপারগুলো আসেনি। বরং গল্পে ওর যে চিত্র দেখা যায় তাতে তাকে হিন্দি সিরিয়ালের ভিলেনদের মতোই মনে হয়েছে! তবে আশা করছি পরবর্তী বইগুলোকে রুয়েমের চরিত্র হয়তো আরেকটু পাখা মেলবে! আর কুশার কথা তেমন কিছু বলার নেই, তার ব্যাপারে য়্যুয়ান আর রুয়েমের মতো আমিও কনফিউসড! নিশচয়ই লেখিকা তার অতীত সম্পর্কে আমাদের জানাবেন, আর তাতে করে আমরা হয়তো কুশাকে আরো ভালোভাবে বুঝতে পারবো! আর অন্যান্য চরিত্রগুলো ঠিকঠাক, সংলাপগুলোতে ওদের হিউমারের ব্যাপারগুলোও যথেষ্ট সুন্দর এবং রিয়েলিস্টিক হয়েছে! গল্পের প্লট নিয়ে কথা না বলাই ভালো, বললেই সেটা স্পয়লারে রূপ নিতে পারে! “স্পয়লার কুইন” হিসেবে আমি মোটামুটি ভালোই খ্যাতি অর্জন করেছি! তবে এই গল্পের প্লট বেশ বড়সড়ই মনে হচ্ছে, কোথায় গিয়ে থামবে অথবা এর সর্বশেষ পরিনতিই বা কি হবে তা এখনি বোঝা যাচ্ছেনা! অপেক্ষা করতে হবে সেটা বেশ ভালোই বুঝতে পারছি! তবে যতো যাই বলি না কেন লেখিকাকে প্রানঢালা অভিনন্দন এতো সুন্দর একটা গল্প উপহার দেয়ার জন্য। চার তারা দিলাম, আরেকটা তারা রেখে দিলাম রুয়েম এর জন্য!
বাংলা সাহিত্যে বিশাল কলেবরে কোনো উপন্যাস বিশেষ করে সাইন্স ফিকশন জগতে খুব কমই দেখা যায়। সামাজিক উপন্যাসই মোটামুটি দখল করে আছে। সেই দিক দিয়ে বিবেচনা করলে তরুন লেখিকা মিসবার কুশাঃ প্রারম্ভ এক নতুন যুগের সূচনা করেছে বললে মনে হয় খুব বেশি দাম্ভিকতা দেখানো হবে না। তাও আবার একটা পুরো সিরিজ হবে এই থিমে যা ৩১৬ পাতার এই বইতে মাত্র শুরু হল। তাহলে আমার কেমন লাগলো তা বলি-
সাইন্স ফিকশন জগতে আমার পদচারনা হুমায়ূন আহমেদ আর জাফর ইকবালেই সীমাবদ্ধ। মানে বুঝতেই পারছেন কতটা আনাড়ি পাঠক আমি। তাও কিনা ১০-১২ বছর আগে শেষ পড়েছি। তাই হালের বইগুলো সম্পর্কে তেমন কিছু জানিই না। সে না জানা থেকে আস্তে আস্তে বেরিয়ে আসাই আমার মূল উদ্দেশ্য এখন।
কুশা নামটা দিয়েই বোঝা যায় এই গল্পের মূল চরিত্রে আছে কুশা। এমনকি এমন আভাসটা মাঝে মাঝেই পাচ্ছিলাম যে সে বিবর্তনের কোন ধাপ পার না হওয়া সত্বেও আর ইন্টিওশান বা ষষ্ঠ ইদ্রিয়ের প্রখরতার জন্যই সে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি। শুধু তাই না এমনকি বহু বছর ধরে লালিত হওয়া প্রাচীন এক রিচুয়াল সঠিকভাবে সম্পন্নের জন্যও সে অসম্ভব জরুরী একজন মানুষ। আর কুশার এই ষষ্ঠ ইদ্রিয়ের জন্যই রুয়েম তাকে ব্যবহার করতে চায় তার উদ্দেশ্য পূরণের জন্য। ঠিক যেটাই য়্যুয়ান হতে দিতে চায় না। রুয়েম আর য়্যুয়ান ছোট্টবেলার বন্ধু হওয়া পরও আদর্শের মতপাথ্যর্কের জন্য আজ শত্রুতার মুখোমুখি। কার উদ্দেশ্য সফল হবে? কে বলতে পারে???
শুধু এরা তিনজন না আরো অনেক চরিত্র আর ঘটনাবলীর সমন্বয়ে কাহিনী এগিয়ে গেছে তার নিজস্ব গতিতে। প্রথম দিকে নামগুলোতে আওলাঝাউলা লাগলেও কাহিনীতে এগিয়ে যাবার সাথে সাথে চরিত্রগুলোর সাথে মিশে গিয়েছিলাম পুরোপুরি। মাঝখানে কিছু বিদ্রোহী দলের দেখা পেলেও তাদের উদ্দেশ্য সম্পর্কে পুরোপুরি কিছু বুঝতে পারিনি। সম্ভবত পরবর্তী বইতে সেটা স্পষ্ট হবে। সব মিলিয়ে জটিল জটিল বিষয়ের একদম সহজ কিছু উপস্থাপনায় প্রাচীন বিশ্বাস আর রীতিনীতি তার সাথে আধুনিক ভাষা ও প্রযুক্তি ব্যবহার করে বইটা লিখেছেন লেখিকা। মাঝে মাঝে অবশ্য ভাষার ব্যবহার একটু বিরক্তির কারণ হয়েছিল যেমন- "ঠিক আছে" কথাটা প্রায়শই "ঠিকাছে" হয়ে গিয়েছিল। সেটা আমরা বলতে অভস্ত্য হলেও পড়তে এখনো অভস্ত্য হতে পারিনি। এরকম আরো কিছু কিছু ছিল। অবশ্য এমন চমৎকার লেখার জন্য এরকম কিছু শব্দ ভুল হিসেবে ধরা থেকে বাদ দেয়াই যায়। তাই লেখিকার জন্য শুভকামনা আর পরবর্তী বইয়ের জন্য আর্জি পেশ করে বিদায় নিচ্ছি।
ধন্যবাদ সবাইকে।
(একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছিলাম, বইয়ের মাঝে মাঝে লেখিকার আঁকা কিছু সুন্দর সুন্দর ছবি আছে। তেমনি বইয়ের সাথে সুন্দর একটা বুকমার্ক আর প্রধান চরিত্রগুলোর ক্যারেকটার কার্ডও পাওয়া যাচ্ছে)
আমাদের লেখক সমাজে একটি সিক্রেট প্রচলিত অবস্থায় রয়েছে। যদিও সেটা এক-আধটু কসরত করলে দেখা যায়। তবে কী সেটা এখনই বলছি না, লেখাটি পড়তে থাকুন─হয়তো আপনি নিজেই সেটা আবিষ্কার করে বসতে পারেন।
আজ যে বইটি নিয়ে আলোচনা করব বলে ভেবে নিয়েছি, তা বর্তমানে বাজার থেকে বহিষ্কৃত। ঠিক পড়েছেন। লেখিকা নিজেই হয়তো সেটা করেছেন। যাহোক, ইহা আক্ষরিক অর্থেই দুঃখজনক। কেন, সেই উদাহরণ টানার দরকার নেই। ইতোমধ্যে তা নিয়ে বহু আলোচনা বিভিন্ন গ্রুপের মন্তব্যের বাক্সে জমা পড়ে আছে। যা এখন ধীরে ধীরে প্রাচীন হওয়ার পথে হাঁটছে। বইটি প্রকাশিত হওয়ার সাত বছর পর এই নিয়ে আলোচনা করার কি আদৌ কোনো প্রয়োজন আছে? ─মনে মনে হয়তো আপনি এই কথাটি ভাবছেন। ভাবাটা একেবারেই অযৌক্তিক না। আমি নিজেও এই বই নিয়ে অনেক চর্চা হতে দেখেছি। তাই সংগ্রহ করে পড়ার একটা তাগিদ বারবার অনুভব করেছি। আর সেই তাগিদ থেকে এখন এই লেখাটার অবতারণা।
❛কুশা: প্রারম্ভ❜ বইটি যদি ষোলো সালে প্রকাশিত হয়, তাহলে নিশ্চিতভাবে এই গল্পটা লেখিকার মাথায় আরও আগে থেকে মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। সেই থেকে বলা যায়, লেখিকার চিন্তাশক্তি সুদূপ্রসারী। তবে এর পিছনে যে সহযোগিতা তিনি পেয়েছেন তা হলো─জাপানি অ্যানিমি। আমি শতভাগ নিশ্চিত না হলেও অন্তত এই ধারণায় আমি অটল থাকব। উক্ত বইটি যখন আপনি পড়বেন বা যারা পড়েছেন─তারা এই বিষয়টি খুব সহজে রিলেট করবেন। লেখিকার চরিত্রায়নের যে নৈপুণ্যতা দেখিয়েছেন তা অনেকটা অ্যানিমি-ঘেঁষা। তবে কি গল্পের মধ্যে কোনো নতুনত্ব নেই? আলবত আছে। কিন্তু সেটা প্রায় গল্পে আমাদের পড়া। ‘ওভারকামিং দ্য মনস্টার’ ধরনের প্রচুর প্লটের ফ্যান্টাসি উপন্যাস আমরা পড়িছি বা পড়ছি। যেহেতু এই বইটি ট্রিলজির একটি অংশ; তাই স্বাভাবিকভাবে ধরে নেওয়া যায়, যে সত্তার বিরুদ্ধে পুরো উপন্যাসের চরিত্ররা লড়াই করে যাচ্ছে তা ট্রিলজির শেষ বইয়ে গিয়ে স্তিমিত হবে। বর্তমান বলেন বা আগামী, যে-কোনো ফ্যান্টাসি বইয়ে এটা কমন ফ্যাক্টর। নতুন কাহিনি বলতে, লেখক আদতে সেটাকে কীভাবে বা কোন আঙ্গিকে উপস্থাপন করছেন তা দেখার বিষয়। আর হ্যাঁ, ম্যাজিকের ব্যবহার বা সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার তো আছেই।
সাই-ফাই বেশ পুরোনো পেশা। মানে লেখালিখির ক্ষেত্রে। সেক্ষেত্রে মৌলিকে এই নিয়ে লেখালিখি এখন ধাবমান বেগে এগিয়ে গেলেও ক’বছর বছর পূর্বে তা কিছু নির্দিষ্ট লেখকের মাঝে সীমাবদ্ধ ছিল। কারণ এই ফিকশনের সাথে ফ্যান্টাসি মিলিয়ে কোনোকিছু তৈরি করা কোয়াইট ডিফিকাল্ট। তার ওপর যদি নতুনত্ব বা আগ্রহ জাগানিয়া কিছু না থাকে তাহলে তো─সাড়ে সর্বনাশ। তবে লেখিকা যে সাহসিকতা দেখিয়েছেন এই উপন্যাসের মাধ্যমে তা প্রশংসনীয়।
◆ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
❛কুশা: প্রারম্ভ❜ স্লো বার্ন ট্রিটমেন্টের আদর্শ উদাহরণ। বইটি আপনি চাইলেও দ্রুত পড়তে পারবেন না। তাই এই বই পড়ার পূর্বে সামান্য ধৈর্য ধারণ করা অবশ্যম্ভাবী। লেখিকার লিখনপদ্ধতিতে স্বকীয়তা থাকলে পুরো বই জুড়ে অনেককিছুর বর্ণনা অপ্রয়োজনীয় মনে হতে পারে। সায়েন্স ফিকশনের কারবার সর্বপেক্ষা বেশি থাকলেও, একইসাথে তাল মিলিয়ে চলেছে প্রাচীন ইতিহাসও। বাদ যায়নি সিক্রেট সোসাইটির মতো বিষয়বস্তু। তবে ফ্যান্টাসিতে এমন ধরনের লেখা দেখতে পাওয়া যায় কম। আপনি চাইলে এটাকে পুরোপুরি ফ্যান্টাসি বলে নাকচও করতে পারেন। তবে এই উপন্যাসে যেহেতু ‘চি’ ধরনের একপ্রকার সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার’র প্রকাশ আর ব্যবহারের প্রয়োগ ঘটেছে—তাই বলা যায়, বইটি অনেকটা আরবান ঘরানারও বটে ।
এই ধারণা দেওয়ার কারণ, বইটিতে এপিক টাইপ কোনো ম্যাপ বা নতুনভাবে সৃষ্ট কোনোকিছুর আভাস দেওয়া হয়নি। যা ঘটেছে তা আমাদের এই পৃথিবীতে। আর সেটা আফটার শক, অর্থাৎ কোনো এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পরববর্তী সময়ের মধ্য দিয়ে। আর এভাবে গল্পটি সাই-ফাইতে ঢুকে পড়ে। তবে প্লট আর্ক কমন হলেও ভ্যারাইটি পাওয়া যায় চরিত্রায়নের মাধ্যমে। গল্পে কুশা-সহ একাধিক চরিত্র রয়েছে, যারা নিজ নিজ জায়গা থেকে বেশ স্বতন্ত্র। শুধুমাত্র এই দিকটি হয়তো আপনাকে উপন্যাসের শেষ পর্যন্ত টেনে নিতে বাধ্য করবে। যদি না আপনি ফ্যান্টাসির ধীর গতি সম্পন্ন কার্যক্রমের সাথে পূর্ব পরিচিত থাকেন তবেই। নাহয় বইটি আপনার কাছে মাত্রাতিরিক্ত প্রাচীন তথ্য কপচানো আর যন্ত্রাংশের একঘেয়ে বর্ণনার পাঠ্যবই মনে হবে। আবেগ যদি মনে ফোঁটা-দু’ফোঁটা থেকে থাকে তাহলে ভিন্ন কথা।
● গল্পের শুরু এবং কিছু প্রশ্ন—
উপন্যাসের শুরুটা হয় য়ুয়্যান নামক চরিত্রের চিন্তাভাবনার মাধ্যমে। এই বইয়ের একে একে অনেক চরিত্র আসবে তারা কেমন সেটা নিয়ে খানিক বাদে বলছি। য়ুয়্যানের সেই ভাবনায় দেখা দেয় তার পুরোনো বন্ধু রুয়েমকে। যারা একটা সময় জিগরি দোস্ত থাকলেও, তা আজকাল ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে। আর বন্ধু যখন শত্রু বনে যায় তখন পরিস্তিতি কেমন হয়, সেটা আশা করি জানেন। তারা দু’জন মূলত কী নিয়ে বন্ধুত্বের বন্ধন ভেঙে শত্রুতার নাগপাশে নিজেদের জড়িয়ে নিয়েছে─সেটাও বেশ ইন্টারেস্টিং বিষয়। আর ওটাই হলো এই উপন্যাসের মূল আকর্ষণ। যা ঘিরে পুরো গল্পটা ঘুরপাক খেয়েছে। এসেছে সেখানে গুপ্ত সংঘের মতো ‘আলোর দিশারী’ নামক এক ব্যক্তির ক্ষমতাধারী সংগঠন। যারা চায় এই পুরো পৃথিবীতে নিজেদের অধীনে নিয়ে আসতে। একটা নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে। অন্যদিকে কাহিনিতে আরও উত্তেজনা আনতে লেখিকা নিয়ে এসেছেন জ ঙ্গী বাহিনি। তাদের সাথে গুপ্ত সংঘের মানুষদের সম্পর্ক কী। য়ুয়্যানকে কেন রুয়েম হারাতে চায়, কেন সংঘের মানুষ য়ুয়্যানকে কবজা করে কোন বিশেষ কাজ হাসিল করতে চায়—তা বড়োসড়ো এক কোয়েশ্চান মার্ক বটে।
আর কুশা? ─সে কে? এতসব দানবীয় সব চরিত্রের মাঝে এই চরিত্রের ভূমিকা কী? কী তার অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা? কেন তাকে সবাই পেতে চাইছে? উত্তর পাবেন উক্ত উপন্যাসে। যারা বইটি পেয়েও না পড়ে রেখে দিয়েছেন; তাদের জন্য ছোট্ট করে সমবেদনা জানিয়ে গেলাম।
● গল্প বুনট » লিখনপদ্ধতি » বর্ণনা শৈলী—
উপন্যাসের গল্প বুনন কৌশলগত দিক থেকে সেফ জোনে রয়েছে। সিকোয়েন্স পরিপাটি করে গোছানো। একতরফা চরিত্রায়ন করার মাধ্যমে সময় নষ্ট না করে বরং সেই চরিত্রের ক্ষমতা আর উদ্দেশ্য নিয়ে গল্প এগিয়ে নিতে দেখা গেছে। তবে ঝামেলা যা হওয়ার হয়েছে ওই বর্ণনায় গিয়ে। সংলাপে যেমন বেশ বিস্তৃত আলোচনা ফুটে উঠেছে; তেমনই গল্পের আবহ ধরে রাখার জন্য যেখানে যেমন বর্ণনা প্রয়োজন; সেটা সহজ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। তবে পাঠক যে বিষয়টা বাঁকা চোখে দেখতে পারে তা হলো─তথ্যবহুল বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বর্ণনা। যদিও সে���া আমার কাছে ভালোই লেগেছে। কারণ একজন লেখকের মনস্তাত্ত্বিক বিষয়বস্তু ফুটে উঠে একমাত্র দর্শনের মাধ্যমে। যেখানে লেখিকা সফল ছিলেন।
এই দর্শন কপচানো হয়তো অনেক পাঠক পছন্দ করেন না পড়ার গতি ধীর হয়ে যায় বলে। তবে ফিকশনের এই বিষয়গুলো হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই উপন্যাসে আবার সেই পুরোনো ইতিহাস, মিথ নিয়ে ভালোই আলাপ-আলোচনা রয়েছে। ধৈর্য ধরে পড়ে নিতে পারলে অনেককিছু সহজে অনুধাবন করতে পারবেন। আর এই বর্ণনাগুলো করা হয়েছে একটু যৌগিক স্টাইলে। ছোটো বাক্য যেমন পাবেন, আবার বড়ো বাক্যের সমন্বয়ও খুঁজে পাবেন। যেহেতু ফ্যান্টাসি জিন���সপাতি রয়েছে এবং সেগুলো ভিন্ন নাম-ধামও আছে, তাই কিছু বিষয় বোঝার জন্য ধীরে সুস্থে পড়াটা প্রয়োজন। যেমন, ‘চি’ কী, সেটার কাজ কী হতে পারে, কীভাবে সেটাকে চরিত্রগুলো কন্ট্রোল করে তাছাড়া ইন্টিউশন বা সজ্ঞার বিষয়বস্তু, পদার্থবিদ্যা, জীববিজ্ঞান-সহ বিজ্ঞানের সকল গলি-ঘুপচির ঘুরাঘুরি আপনি এই বইতে করে নিতে পারবেন। আরও পাবেন ভবিষ্যৎ পৃথিবী পরিবর্তনের ছোঁয়া, যা আমরা সচরাচর সাই-ফাই উপন্যাসগুলোতে খুঁজে পেয়ে থাকি।
লেখিকার কিছু কিছু উক্তি ছিল দারুণ। একটা পাতায় লেখা ছিল─❝তারুণ্যের শক্তি এভাবেই ধীরে ধীরে স্তিমিত হয়ে পড়ত পরীক্ষা, উঁচু মানের চাকরি, ব্যাংক-ব্যালেন্স আর সংসার গোছানোর ভারেই; যেখানে গোছানো সংসার মানে হলো আরও কিছু নতুন জন্ম নেওয়া সুপ্ত সম্ভবনাকে একইভাবে নিয়ন্ত্রণে আনার দীর্ঘ, একঘেয়ে পুনরাবৃত্তি।❞
এমন আরও কিছু উক্তি বা দার্শনিক কথাবার্তা পুরো বইয়ে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে। সময় অনুযায়ী লেখিকার এই ধরনের লেখালিখিকে যতটা সম্ভব গুছিয়ে আনার পূর্ণ চেষ্টা করেছেন। যা আবার পাক্ষিকভাবে তৃতীয়ে বিশ্বের দেশগুলোর দিকে ইঙ্গিত করেছে।
● যেমন ছিল গল্পের চরিত্ররা—
গল্পের চরিত্ররা হচ্ছে উপন্যাসের প্রাণ। এই বইয়েও সেটার ব্যত্যয় ঘটেনি। দারুণ সব চরিত্র তৈরি করেছেন লেখিকা। তবে কোনো চরিত্রের অতীত কথন তিনি এই উপন্যাসে তুলে ধরেননি। সেটা না করেও চরিত্রদের সাথে যথাসাধ্য একটা যোগাযোগ বা বন্ধন করিয়ে দেওয়ার প্রচেষ্টা করেছেন। উল্লেখযোগ্য চরিত্রদের মধ্যে পজিটিভ, নেগেটিভ দু’ধরনের চরিত্রের সমারোহ ঘটেছে। যা বাস্তবতার সাথে বেশ মিলে। আগামীতে এই চরিত্রগুলো ঠিক কোন পর্যায়ে নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করবে তা পড়ার আগ্রহ সবসময় থাকবে। কিন্তু সেটা পড়তে সামান্য কসরত করতে হবে কারণ, উক্ত বইগুলোর সিক্যুয়েল বাংলায় আর প্রকাশিত হবে না। হয় মূল ইংরেজি বই কিনে পড়তে হবে অথবা কেউ যদি সেই বইগুলো অনুবাদের উদ্যেগ নেয় তবেই।
তবে, আমিও চাইব না এমন একটা ট্রু ফ্যান্টাসি উপন্যাস পাঠকরা মিস করুক। যাদের ধ্যান-জ্ঞান অন্তত ফ্যান্টাসি নিয়ে তারা তো নাই-ই। বিজ্ঞানের সাথে ফ্যান্টাসির এই মিশেল আর অ্যানিমি থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এমন কিছু মৌলিকভাবে তৈরি করা যতটা সহজ মনে করা হয়; ততটাও না। লেখিকা সেটা করে দেখিয়েছেন বা দেখাতে পেরেছেন—দেখেই ভালো লেগেছে।
চরিত্রের এই দিকটা একটু মনোযোগ দিয়ে পড়তে হবে যদিও। কারণ বিস্তর চরিত্র লেখক একসাথে টেনে এনেছেন। তবে তাদের কার্যকলাপে বিস্তারিত থাকায়, সহজে তারা কে কেমন—তা ভালোভাবে আন্দাজ করে নিতে পারবেন। আর এই দিকে আরেকটু উত্তেজনা বাড়াতে লেখিকা যুক্ত করেছেন ‘ডিয়োয়’ ধরনের মনস্তাত্ত্বিক টানাপোড়েন। যা গল্পের আবহ কয়েকগুণ উসকে দিতে যথেষ্ট।
● শেষের গল্প বলা প্রয়োজন—
যেহেতু কাহিনির শেষ এখনও হয়নি তাই পরিশেষে কী হবে তা বলা যাচ্ছে না। তবে যে পর্যায়ে গিয়ে লেখিকা গল্পটির লাগাম টেনে ধরেছেন, তা আকষর্ণীয়। পুরো বইয়ে ছোটো ছোটো ঘটনার কারণে উত্তেজনা যেমন ছিল, শেষে এসে সেটা দিগুণ যে হয়েছে─তা নির্দ্বিধায় বলা যায়। অন্তত আমি তো অপেক্ষায় থাকব কখন পরের বইটি পড়ব। যদিও হাতের নাগালের বাইরে থাকার কারণে সেই সম্ভবনা অনেকটা কম।
● খুচরা আলাপ—
লেখিকার দর্শন যেমন মুগ্ধ করেছে তেমন সাইকোলজিক্যাল যে ব্যাপারগুলো ছিল পুরো উপন্যাসে, সেটাও সমানতালে ভালো লেগেছে। চরিত্রগুলোর মধ্যে যে আইডেন্টি কমপ্লেক্স বিল্ডাপ করা হয়েছে তা কাহিনিকে অন্যদিকে মোড় দিয়েছে। এত বৃহৎ প্লট নিয়ে চিন্তাভাবনা করে লেখাটা চাট্টিখানি কথা নয়। হাতে গোনা কয়েকটি বিষয়কে কেন্দ্র করে এই উপন্যাস লেখা হয়নি। বিভিন্ন ধাপ বা স্তর বা লেয়ার পুরো গল্পে ছড়িয়ে ছিল। আর সেগুলোকে বেশ ভালোভাবে তিনি জোড়া দিতে পেরেছেন। বৈজ্ঞানিক আলোচনা, যন্ত্রাংশের বর্ণনা, চরিত্রদের ক্ষমতার ব্যবহার সব কিছুর পইপইভাবে হিসাব করে লেখা। সবমিলিয়ে বলব, যদি নাগালে থাকে বা সম্ভব হয় তাহলে বইটি একবার হলেও চেখে দেখুন।
◆ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
ষোলো সালে এমন একটা প্লট নিয়ে বাংলায় ভাষায় লেখা সহজ কাজ না হলেও তিনি যতটা সম্ভব সহজভাবে উপস্থাপনা করার চেষ্টা করেছেন। লেখিকার এমন এপ্রোচ প্রশংসার দাবিদার। এমন নয় বইটি মার্কেট থেকে তুলে নিয়েছে বলে একটা চিনচিনে হাইপ বিশালাকার রূপে রূপান্তরিত হয়েছে। তিনি হয় ভেবেছেন, এই বই বোঝার ক্ষমতা দেশিয় পাঠকদের নেই অথবা যে প্লট নিয়ে লিখেছেন—সেটাকে জগাখিচুড়ি বলে ছুড়ে ফেলে দিতে অনেক পাঠক বাধ্য হবে। জানি না ঠিক কী কারণে লেখিকার এমন সিদ্ধান্ত। আর এই সিদ্ধান্তকে অনেক ফ্যান্টাসি লেখক-পাঠকরা ইতিবাচক বলে মেনে নিচ্ছেন। তাই কেউ কেউ অভিমান করে বলেন ফ্যান্টাসি লেখার জায়গা এখানে নয়!
তো কোথায়? ইউরোপে?
ওসব দেশে মাসে তো মনে হয়ে একটা করে ফ্যান্টাসি বই প্রকাশিত হয়। তা সব বই সবার ভালো লাগে? হাতে গোনা কয়েকটা সিরিজ নিয়ে সবচেয়ে বেশি আলোচনা হতে দেখা যায়। বাকিগুলো নিয়ে পাঠকদের মাথাব্যথাও থাকে না। দেশিয় জিনিস যদি দেশেই প্রকাশ করার সাহস বা মানসিকতা না থাকে তাহলে সেখানে কিছু বলার আছে বলে মনে হয় না। এটা সম্পূর্ণ একজন লেখকের ব্যক্তিগত বিষয়। কিন্তু চেষ্টা করে দেখা উচিত। আমাদের দেশে ফ্যান্টাসির বাজার বড়ো হচ্ছে। আরও বাড়বে আগামীতে। অনেক লেখকরা লেখালিখি করছেন। আগামীতে এই জনরার আরও প্রচার আর প্রসার যে বাড়বে—তা বলে দেওয়া যায়। শুধু রুচির কথা চিন্তা করে, বিক্রি কম হবে ভেবে, পাঠক নাক সিটকাবে মনে করে, খটমট নামের কারণে গালাগালি দিবে; ইত্যাদি ভাবলে সাহিত্য আর সাহিত্য থাকবে না। গোয়ালের গোরু হয়ে যাবে নাহয় ভেড়ার পালের ভীতু ভেড়া হয়ে থাকবে।
সাহিত্য হচ্ছে বাচ্চা লালনপালন, গাছের পরিচর্যা করার মতো। হুট করে তারা বড়ো হয়ে যায় না। যত্ন নিতে হয়, ঝড়-ঝাপটা থেকে রক্ষা করতে হয়। এসব নিয়ম মেনে নিতে পারলে একটা সময়ে গিয়ে কোনো জনরা অবহেলিত হয়ে থাকবে না। লেখকদের উচিত এই বিষয়টি মানিয়ে নিয়ে চলা। নিজের কাজ নিজেকে করতে হবে। কে কী বলল শুনুন, তারপর নাহয় যে জায়গায় পরিশোধন করা দরকার বলে মনে করছেন─করুন। কেউ আপনাকে খারাপ বলেছে, এই ভেবে যদি লেখা বন্ধ করে দেন, ইগোতে নিয়ে হামকে-তুমকে শুরু করেন; তাহলে আপনাকে লাল সালাম।
● বানান ও সম্পাদনা—
যারা বানান নিয়ে খুঁতখুঁতে তারা এই বইয়ের বানান পুরোপুরিভাবে উপেক্ষা করে পড়বেন। ভুল প্রতি পৃষ্ঠায় পাবেন। তার ওপর সেটাপ জনিত ঝামেলা ব্যাপক। সরাসরি অভ্র টু বিজয় কনভার্ট করার পর কোনোকিছু ঠিকঠাক করা হয়নি। আর তখন এসব নিয়ে এত সচেতনতা দেখা যেত না যতটা এখন দেখা যায়। এই যে একটা পরিবর্তন ধীরে ধীরে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, বাকিগুলোও একদিনে হয়ে যাবে। সম্পাদনার বিষয়টিও এমন। এই বইয়ের সম্পাদনার ‘স’-এর ধারেকাছে যায়নি। তাই অনেককিছু চোখে বাধবে। সাজেশন দিব, ইগনোর করার জন্য। কারণ এই দিকটার জন্য যে পড়ার গতি কতটা নষ্ট হয়, সেই কষ্ট একজন পাঠকই কেবল বোঝে। এই বইয়ের গতি কমে যাওয়ার আরও একটা কারণ হচ্ছে বানান আর সম্পাদনা।
● প্রচ্ছদ » নামলিপি » অলংকরণ—
সবকিছুই লেখিকা করেছেন। বইয়ে কিছু ইলাস্ট্রেশন ছিল যা উপন্যাসের চরিত্রদের। আর সেগুলো দেশিয় বা ভিন্ন কোনো চরিত্র থেকে জাপানি অ্যানিমি চরিত্র মনে হয়েছে বেশি।
● মলাট » বাঁধাই » পৃষ্ঠা—
প্রকাশিত হওয়ার সাত বছর পর একটা বই যে পড়তে পেরেছি এটাই যথেষ্ট বলে মনে করি। আর সেজন্য আমি ধন্যবাদ দিব রায়হান রিফাত ভাইকে। ভাইয়ের বই বিনিময় মহৎ কর্ম সচল থাকার কারণে বইটি পড়তে পেরেছি। তবে ফন্ট সাইজ বিশ্রী। অনেক ছোটো তুলনামূলক থেকে। যা পড়ার গতি কমে যাওয়ার আরও একটি হাস্যকর কারণ।
আমার সায়েন্স ফিকশন টাইপের বই পড়া শুরু হয়েছিল কৈশোরে মুহাম্মাদ জাফর ইকবাল এর বই পড়ার মাধ্যমে, পরবর্তীতে হুমায়ূন আহমেদ এর কয়েকটা পড়েছি। আমার সাই-ফাই পড়ার দৌড় এ পর্যন্তই। কারণ এছাড়া বাংলা সাহিত্যের আর কারো সাই-ফাই পড়ার অভিজ্ঞতা আমার হয়নি। পরবর্তীতে বই পড়ার রুচিতে এসেছে নানান পরিবর্তন, নন-ফিকশন, ক্লাসিক, ধর্মীয় আর রাজনৈতিক ইতিহাসের বই-ই এখন বেশি পড়া হয়। কুশা বইটি প্রকাশিত হয়েছে ২০১৬ বইমেলাতে কিন্তু আমার হাতে আসলো ২০১৮ সালে। এর পেছনে দুটো কারণ, এক- সায়েন্স ফিকশন পড়ার আগ্রহ তেমন ছিল না, দুই- নবীন লেখকদের অনেক লেখাই আমাকে হতাশ করেছে। তাই এখন নবীনদের বই কেনার জন্য সময় নিয়ে পর্যবেক্ষণ করে তারপর কিনি। তো, দীর্ঘ সময় পর আবার সায়েন্স ফিকশন হাতে নিলাম মিসবা'র প্রথম বই 'কুশাঃপ্রারম্ভ'। লেখিকার ব্যাক্তিত্ব, সৃজনশীলতা, চিন্তাধারাই বইটি আমাকে হাতে নিতে বাধ্য করেছে। মনে হয়েছে, না, আমি বইটা পড়ে ঠকবো না।
আসলেই ঠকিনি! লেখিকার নিজের হাতে করা প্রচ্ছদ, বইয়ের জ্যাকেট, উন্নতমানের ক্রিম কালারের পেজ সবকিছুই সন্তোষজনক ছিল। তবে ফন্ট সাইজ কিছুটা ছোট হয়ে গেছে, কিছু টাইপিং মিস্টেক ছিল। তবে লেখার মানের সাথে তুলনা করলে এ ভুলগুলো ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতেই দেখা যায়।
রিভিউ লেখার একটা সাধারণ বৈশিষ্ট্য হচ্ছে কাহিনী সংক্ষেপ তুলে ধরা। তবে এ বইয়ের বিশাল প্লটের কাহিনী সংক্ষেপ আমার মত আনাড়ি পাঠকের জন্য সত্যিই খুব দুরূহ কাজ। তাই এ রিভিউতে এটা করতে পারলাম না। হয়তো, এ কারণে এটাকে ঠিক রিভিউ বলাও উচিত হবে না।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এক বিধ্বংসী ভূমিকম্পে ধ্বংসস্তুপে পরিণত হয় সবকিছু। গ্রাম কিংবা খোলা জায়গায় থাকা সৌভাগ্যবান কিছু মানুষ বেঁচে যায় ভাগ্যক্রমে। ভূমিকম্পের পর বেঁচে যাওয়া এ মানুষগুলোর টিকে থাকার সংগ্রামে তাদের মাঝে ঘটে যায় অদ্ভূত বিবর্তন। নিজেদের ভেতরের সত্ত্বাটাকে চিনতে শেখে তারা, খুঁজে পায় অসীম শক্তির এক আধার। ডিএনএ লেভেল পর্যন্ত দেহের পরিবর্তন ঘটাতে সক্ষম হয় এই বিবর্তিত মানুষগুলো। অমরত্ব অর্জন করতে না পারলেও দীর্ঘ সময় পর্যন্ত দেহকে সজীব ও প্রাণবন্ত রাখারা কৌশল শিখে যায় তারা।
বিবর্তিত মানুষগুলোর মাঝে অত্যন্ত মর্যাদা সম্পন্ন ও ক্ষমতাধর দুজন মানুষ- য়্যুয়ান ও রুয়েম। দু'জনে বাল্য বন্ধু থাকলেও আজ তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্দ্বী। চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের দিক দিয়েও দু'জন ভিন্নধর্মী। রুয়েম এক্সট্রিম ও স্যাডিস্ট একটা চরিত্র। অপরদিকে য়্যুয়ান শান্তিকামী ও দায়িত্বশীল একটা চরিত্র।
বইটার নাম যেহেতু কুশা, তাই এ চরিত্রের সাথেও পরিচিত হওয়া প্রয়োজন। কুশা নামের মেয়েটির মাঝে বিবর্তন না ঘটলেও তার মেধা ও ইন্টিউশন ক্ষমতার জন্যই বেশ গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা প্লে করেছে বইটিতে। যদিও য়্যুয়ান ও রুয়েমের পদচারণাই বেশি লক্ষ করা গিয়েছে পুরো বইটাতে। তবে, বইটার পরবর্তী সিরিজ গুলোতে যে কুশা'ই প্রধান চরিত্র হয়ে উঠবে তার স্পষ্ট ইঙ্গিতও পাওয়া গেছে।
য়্যুয়ান আর রুয়েমের দ্বন্দ্বের মধ্য দিয়েই এগিয়ে যাচ্ছিল গল্প। তবে মাঝপথে এসে পাঁচজন ওয়ার্ল্ড লিডার আর এক রহস্যময় চরিত্র 'আলোর দিশারী'র কথোপকথন পুরো গল্পেই ভিন্ন একটা মাত্রা এনে দেয়। রুয়েমকে এতক্ষণ ভিলেন মনে হলেও গল্পের মোড় পরিবর্তন করে দেয় 'আলোর দিশারী' চরিত্রটি প্রকাশিত হবার পর থেকে। এর কথোপকথন ও আভির্ভাব সংক্রান্ত আলোচনায় আপাত দৃষ্টিতে আমার কাছে এটি 'দাজ্জাল' চরিত্র মনে হয়েছে। একই সাথে ওয়ার্ল্ড কনস্পিরেসির একটা সম্যক ধারণা পাওয়া যায় এখান থেকে।
তবে আমার কাছে বইটার যে দিকটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে তা হলো এর ফিলসফিক্যাল ম্যাটারগুলো। এই ফিলসফিক বিষয়গুলো আপনাকে ভিন্ন দৃষ্টিতে ভাবতে সহায়তা করবে, চিন্তার উদ্রেক করবে। আরও একটা বিষয়ে অনেক বেশি অবাক হয়েছি পুরো বইটাতে খন্ডাকারে লেখিকার রাজনৈতিক সচেতনতার পরিচয় দেখে। প্রচলিত সমাজ ব্যাবস্থার বিরুদ্ধে এ যেন কলমের মাধ্যমে প্রতিবাদ। লেখিকা তার সামাজিক দায়বোধ ও প্রতিবাদের জায়গা থেকেই এটি করেছেন বলে মনে হয়েছে, যাতে করে পাঠকের হৃদয়ে তার প্রভাব ফেলে। এ কথা নির্দ্বিধায় বলতে পারি- সৃষ্টি রহস্য, স্রষ্টার প্রতি বিশ্বাস, দর্শন, রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে লেখিকার চিন্তাভাবনা সচেতন পাঠক হৃদয়ে অবশ্যই ছাপ ফেলবে।
শেষ কথা হচ্ছে, এ বইটার সার্বিক দিক নিয়ে আলোচনা করাটা ছোট্ট একটা রিভিউয়ের মাধ্যমে তুলে ধরা সম্ভব নয়। যেহেতু এ বইয়ে কুশা চরিত্রটি পূর্ন বিকশিত হয় নি, গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র হলেও প্রধান চরিত্র হয়ে উঠেনি, সেহেতু ধারণা করা যায় কুশা চরিত্র নিয়ে সামনে আরো অনেক কিছু করার ইচ্ছে আছে লেখিকার।
কুশা'র পরবর্তী বইয়ের জন্য অপেক্ষায় রইলাম। একই সাথে এমন প্রতিভাশীল লেখিকা ও কুশা সিরিজের জন্য শুভ কামনা রইলো।
নতুন আয়োজনে, আনকোড়া দৃষ্টিভঙ্গি থেকে গল্প বলবার জন্যে লেখিকাকে সাধুবাদ জানাই সবার আগে। ডিস্টোপিয়ান প্লট, সাই-ফাই জনরায় মৌলিক কাজ হয়েছে বাংলা ভাষায় কিন্তু “কুশাঃপ্রারম্ভ”র মতো করে নয়। প্রাসঙ্গিক বইটা আলাদা হয়েছে, মাঙ্গা বা জাপানীজ এনিমের আদল আশ্রিত হয়ে। বইয়ে আঁকা ছবিগুলোও, চরিত্রগুলোকে তেমন করে ভাবতে সাহায্য করে।
বিধ্বংসী এক ভূমিকম্পে পুরো পৃথিবীর চেহারা পাল্টে যায় আর বদলে যায় বেঁচে থাকা গুটিকতক মানুষ। তাদের বিবর্তন, তাদেরকে অত্যাশ্চর্য ক্ষমতাসম্পন্ন করে কম আর বেশি কিন্তু সবার ভেতরেও আলাদা থেকে যায় কুশা; মায়াকাড়া একটা মেয়ে। বিবর্তনের ছাপ ঠিক অন্যদের মতো তার গায়ে না পড়লেও; অদল-বদল একটা হয়েছে ঠিকই। ইন্ট্যুশান অনেক বেড়ে গেছে কুশার। ভীষণ পরাক্রমশালী আর বুদ্ধিমান দু’জন মানুষ যখন একই লক্ষ্যের দিকে ছুটছে; তখন কুশার মতো প্রবল ইন্ট্যুশান অধিকারী মেয়েকে দু’জনই চাইবে। কুশাকে মাঝখানে রেখে বিপরীত ধর্মী দু’জন মানুষের (নাকি মিউট্যান্টের?) এই চাওয়া-পাওয়া আর সেসবের ফলোয়াপ নিয়েই এগিয়ে যায় গল্প।
প্রথমতঃ শিরোনাম আর প্রচ্ছদ এই বইয়ের ব্যাপারে আগ্রহ জাগিয়ে তোলার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে। অনেক বড়। দেশে শেষ এমনটা দ্যাখা গ্যাছে, “সাম্ভালা” আর “অক্টারিন” এর বেলায় (দুটোই বাতিঘর প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত)। মনে পড়লো, দেবারতি মূখার্জ্জীর “ঈশ্বর যখন বন্দী”র শিরোনাম আর প্রচ্ছদ নিয়েও এমন মন্তব্য ছিল।
দ্বিতীয়তঃ শিরোনাম আর প্রচ্ছদ দেখে আকৃষ্ট হয়ে সংগ্রহ করবার পর বইয়ের জ্যাকেট, ভিন্ন ভিন্ন শেইডের কাগজ, আঁকা ছবি আর হ্যান্ডফিল আপনাকে সুখী করবে; নাহ্ ঠকিনি এ বই কিনে।
এরপর মূল জায়গা। গল্প, লেখা, লেখনী। মিসবা’র (মিসবা সুলতানা) ল���খনী সহজিয়া, গড়গড় করে পড়ে যাবার মতো। জোর করে লেখনীতে সৌন্দর্য্য আনার চেষ্টা করেননা তিনি বরং লেখার নন্দনের ব্যাপারে এই ঔদাসীন্যই তার নন্দন। কঠিন করেও বলেননা গল্প। তবে সহজবোধ্য করতে গিয়েই কি না, একটু বেশিই বর্ণনা করে ফেললেন। যে কোন সংলাপ বা ঘটনার পেছনের কার্য-কারণ বা দর্শন ব্যখ্যা করতে গিয়ে অনেকগুলো কথা কইলেন সারা বই জুড়ে। হতে পারে, তার ভীতি ছিল অপ্রচলিত এই গল্পটা তাকে বলে বলে বুঝিয়ে যেতে হবে। সেক্ষেত্রে আরও সংযত হওয়ার প্রয়োজন ছিল। একটা সময় গিয়ে এই ব্যাখ্যা বা জবাবদিহিতার ভার বইতে পারছিলাম না আর। মনোলগ বড় বেশি, বড় বেশি।
এই যে একটা পয়েন্টে খারাপ লাগা শুরু হল, তারপর থেকে হয়তো ভাল জিনিষও মনে দাগ কাটতে পারেনি ঠিক-ঠাক। হয়তো গোছানোই ছিল অন্যান্য ব্যাপারগুলো (টেররিস্ট দল, উপাসকদের উইং), আগের খারাপ লাগাটুকু মিলে পুরো ব্যাপারটা জাস্ট ওয়ার্ক করলোনা আর।
তবে এই খারাপ লাগা দিয়ে লেখিকা কিংবা বইটাকে জাজ করলে ভুলই হবে। এ বইয়ের মন্দলাগা আছে যতখানি, ভাললাগা তার চেয়ে কম নয় মোটে। “হেনতাই” এর মতো শব্দের ব্যাবহার প্রথমে অবাক করেছে। তারপর যাকে ট্যাগ করা হল শব্দটার সঙ্গে; তার ব্যক্তিত্ব এই শব্দের ব্যাবহারকে যথার্থ করে। তখন বাহবা অাবশ্যক লেখিকার জন্যে। “কুশা” চরিত্রটিকে যেভাবে তৈরি করা হল, সেটা প্রশংসার দাবীদার। য়্যুয়ান চরিত্রটিও হারিয়ে যাবার মতো না সময়ে। “হেনতাই” এর সাথে তার বিরোধ মনে থাকবে অনেকদিন।
শেষ করতে চাই এই বলে, কুশাঃ ২য় ভাগের জন্যেও বাজি ধরবো আমি (ধারণা করছি ন্যূনতম ৩ ভাগে আসবে সিরিজটি)। লেখিকা এবং আঁকিয়ে মিসবা এটুকু আস্থা অন্ততঃ দিয়েছেন, ১ম বইয়ের অভিজ্ঞতা তাকে আরও ঋদ্ধ করবে। মাঙ্গা’র আদল আশ্রিত এই গল্পটি ভাবাই অনেক দুঃসাহসী ছিল,তারপর এর এক্সিকিউশান। স্যালুট তার জন্যে। একান্তই ব্যক্তি পর্যায় থেকে চাই, পরবর্তীতে মনোলগ এবং কার্য-কারণ বা ব্যাখ্যা দেয়ার ব্যাপারে তিনি কৃপণ হবেন ভীষণ এবং গল্পের উইং এর ট্রাঞ্জিশান আরও মিহি করবেন। আর সর্বোপরি আরও অনেক গোছালো এবং উইটি হোক সবকিছু। “কলিজা কাটা বিচ্ছেদ” গান শুনেছেন? “কলিজা কাটা বিচ্ছেদ” এর মতো জোরালো হোক ঘটনা আর তার ফলোয়াপ; তখনই না গল্পের সাথে দৌড়াতে মজা, গল্পের চরিত্রের সাথে থেকে মুক্তির স্বাদ পাওয়ার লোভ হয় পাঠকেরও।
কুশা সিরিজের জন্যে শুভকামনা থাকবে। নতুন আয়োজন,নতুন দৃষ্টিভঙ্গির এই গল্প অন্ততঃ একবার হাতে ওঠার দাবী রাখে জোরে-সোরেই।
চমৎকার! চরিত্রগুলো খুব ভালোভাবে তৈরি করা হয়েছে, প্রত্যেকের স্বকীয়তা লক্ষ্য করার মতো, বিশেষ করে য়্যুয়ান এবং রুয়েম, আর অবশ্যই কুশা। প্লটের বিশাল বিস্তৃতি, চমৎকার লেখনশৈলী, সংলাপ, হিউমার। উপভোগ করেছি ভালোই। তবে অভিযোগ একটাই, বর্ণনার আধিক্য। অনেক সময় লেগে গেছে পড়তে। কিন্তু শেষের অংশে সেটা ঠিক হয়ে গিয়েছে, খুব দ্রুতই পড়তে পেরেছি। ফিলসফিগুলো উপভোগ করেছি, মজাটা এখানেই। খুবই গোছানো প্লট, বাকিটা পড়ার ইচ্ছা জেগে রইলো। পরবর্তী বইয়ের অপেক্ষা করতে হবে এখন।
কোন কোন বইয়ের স্বয়ং উৎসর্গ পত্রটিই অনেকটা দৃষ্টি খুলে দেয়ার মতো হয়। Eye Opener. হয় যথেষ্ট Inspiring ও Enlightening. উৎসর্গ পত্রটি পড়লেই বই সম্পর্কে আগ্রহ জেগে ওঠে। উৎসর্গ পত্রটিই বইয়ের গভীরে পৌছাতে প্রেরণা জোগায়। লেখক/লেখিকার মনস্তত্ব সম্পর্কে জানতে আগ্রহী করে তোলে। আমার কাছে কোন বই পড়ার অর্থ অনেকাংশে এর স্রষ্টার মনস্তত্ব পরিভ্রমন। কোন বই পড়তে গেলে বইয়ের লেখক/লেখিকাকেও আমি কাহিনীর একটি চরিত্র হিসেবে বিবেচনা করি। অদৃশ্য একটি চরিত্র, কিন্তু কাহিনীর পরতে পরতে তার সদা উপস্হিতি বিদ্যমান। কুশাঃ প্রারম্ভ ও অনেকটা সে্ই ধরণেরই একটি বই। এর বর্ণ থেকে বর্ণে, শব্দ থেকে শব্দে, বাক্য থেকে বাক্যে, পাতার পর পাতায় লেখিকার অস্তিত্ব জানান দিতে থাকে নিদারূন বিহ্বলতায়। তেমনি এর উৎসর্গ পত্রটি পাঠককে ভ্রু কুঁচকে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করে।
.
উৎসর্গ পত্রটি নীচে তুলে দিলাম,
উৎসর্গ- “তাদের জন্য যারা কখনও হারতে জানেনা; যাদের কাছে বাঁধা একটা নতুন চ্যালেন্জ; যারা প্রশ্ন করে- কে আমরা? কেন আমরা? কোথায় আমরা? কি করছি আমরা? যাদের কাছে জিত মানে অন্যকে হারিয়ে দেয়া না; এবং তাদের জন্য যারা অনেক রহস্য জানতে পেরেও ধৈর্য ধরে সবার জেগে ওঠার অপেক্ষা করছে; আর সঙ্গোপনে ভালোবাসা ছড়িয়ে বেড়াচ্ছে। যদিও এই শেষ দলের মানুষের কাছে এই ছোট্ট নিবেদন তেমন কিছু আসে যায় না। কারণ, আমি নিশ্চিত- তাদের কাছে মুখের বুলির চেয়ে অনুভূতি বেশী গুরুত্বপূর্ণ।”
.
এহেন উৎসর্গ পত্র পড়ে মনে হয় বইটি পড়া বেশ সুখকর অভিজ্ঞতাই হবে। মনে হয়, বইটির স্রষ্টার অনুভূতি এবং পাঠকের অনুভূতি হয়তো কিছুটা হলেও মিলে যাবে। মনে তখন একটা স্বস্তি কাজ করে। আর কোন বই যদি নতুন ভাবনার খোরাক না জোগায় তবে সে বইকে সার্থক বলাটা আনেকটা তেলাপোকাকে পাখি বলার মতো। এমন অনেক বইয়ের মুখোমুখি হয়েছি জীবনে।। আবার এমন অনেক বই আছে যার শুরুতেই পাঠক এমন কিছুর মুখোমুখি হন, যা তার মন ও মগজে এমন কিছু ইনপুট দেয় যা পাঠকের নিজের ভাবনার সাথেও অনেকটা মিলে যায়। পাঠকের পড়ার আগ্রহ তখন হয়তো দ্বিগুন/তিনগুন হয়ে যায়।
.
কুশাঃ প্রারম্ভ শুরু করতে গিয়ে আমিও তেমন অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হই। বারবার কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে কোন কোন প্যারাগ্রাফের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়। বিশেষ ভাবতে হয়। আর যখন ভাবি যে এটি লেখিকার প্রথম বই, ভ্রু কুঞ্চন তখন কপালে চিন্তার রেখাতে পরিণত হতে খুব একটা বিলম্ব হয় না। কুশাঃ প্রারম্ভ পড়তে গিয়ে এমনি ভাবে বার বার ভ্রু কিংবা কপাল কুঁচকাতে বাধ্য হচ্ছি। বই থেকে তুলে দেয়া নীচের অংশটুকুতে আমাদের প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্হা এবং প্রথাগত ক্যারিয়ার গঠন প্রণালীর প্রতি আঙ্গুলি নির্দেশ করে বিশাল একটি প্রশ্নবোধক চিহ্ন অংকিত হয়েছে। কপাল কুঁচকানোর মতোই ভাবনা।
.
"আগে মানুষের জন্ম হতো একটা শেকলে আটকে থেকে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট কিছু কাজ করার জন্য। জীবনের নির্দিষ্ট একটা সময় শিশুদের ব্যয় করতে হত স্কুল নামক একটা জায়গায়; যেখানে তাদের নির্দিষ্ট কিছু জ্ঞান মুখস্ত করতে দেয়া হতো। প্রতি দশকে পৃথিবীর জ্ঞান ভান্ডার দ্বিগুণ হতো; নতুন নতুন জ্ঞান জমা হতো পৃথিবীর এসাইক্লোপিডিয়ায়, খুঁজে পাওয়া যেত সমুদ্রের নিচের কোন উত্তেজনাময় শহর, জানা যেত বহু আলোকবর্ষ দূরের কোন উত্তেজনাপূর্ণ ঘটনা, পাওয়া যেত পিরামিডের নতুন রহস্য, অথবা হাজার বছরের পুরনো কোন সভ্যতার জাদুকরি সব প্রযুক্তি - যা মোটেও ঐ সময়ের সাথে খাপ খায় না; সেই সাথে তৈরী হতো একটার পর এটা নতুন নতুন প্রযুক্তি। অথচ সেসবের কিছুই থাকতো না পাঠ্যবইয়ের পাতায়। এমনকি প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহারও শেখানো হতো না এসব শিশুদের। মান্ধাতা আমলের জ্ঞান নিয়েই ছেলেমেয়েদের খুশী থাকতে হতো। তাদের মাথায় তথ্য ধরে রাখার ক্ষমতা যাচাই করে সমাজের পেশাক্ষেত্রের বিভিন্ন জায়গায় পাঠানো হতো। আর এসবের মাঝে সফল হওয়া কিছু ছেলেমেয়েরা নিজেদের বোঝাত যে, তারা দেশ ও সমাজের জন্য অনেক কিছু করছে। আর যদি কোন ভাবে কেউ এই সফলতার দৌড়ে কোন একটা পদে বাধা পেয়ে মুখ থুবড়ে পড়তো, তাহলে তো সবই গেল; তার নাম তখন হতাশাচ্ছন্ন বিকরগ্রস্তদের খাতায় উঠতো। এরা ধরেই নিত যে, তাদের জীবন শেষ। পরীক্ষা আর ভাল চাকরীর গোলক ধাঁধায় সবাইকে আটকিয়ে সফল বিফল প্রত্যেকের ইচ্ছেশক্তিকে মেরে ফেলার এই ষড়যন্ত্রে হয়তো সফলতার উল্লাস করে বেড়াতো পৃথিবীর ভয়ঙ্কর কিছু মাস্টারমাইন্ড।" [কুশা - প্রারম্ভ, পৃষ্টা: ৩-৪]
.
বইটি পড়তে গেলে এমন অনেক চিন্তার সাথে পরিচিত হতে হয়, যা আমাদের প্রথাগত সমাজের নানা সিস্টেমের প্রতি এমন প্রশ্নবোধক চিহ্ন নির্দেশ করে। মনে হয়, বইটি চিৎকার করে আমাদের সমাজের নানা অসংগতিপূর্ণ সিস্টেমের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করছে।
.
এই বইটির জনরা নিয়েও বেশ দ্বিধা-দ্বন্ধে পড়তে হয়। ঠিক ক্যাটাগরাইজ করা যায় না এটাকে কোন জনরাতে ফেলবো। বইয়ের ফ্ল্যাপ অনুযায়ী উপন্যাসের ধরণ সাইন্স ফিকশন। সাথে রয়েছে স্পিরিচ্যুয়ালিটি, সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার, হিউম্যান এভোল্যুশন, মিথ, প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় ইতিহাস, ফিলসফি, মিস্ট্রি আর এ্যাডভেন্চার। ফ্ল্যাপ পড়লে জনরা নিয়ে একটা ধারণা পাওয়া যায়। আসলেই বইটি সবকিছুর মিশেল। সাইন্সের অলিগলি থেকে শুরু করে, ধর্ম, পুরাণ, ইতিহাস, দর্শন, গোপন সংগঠন, ষড়যন্ত্র, পাল্টা-ষড়যন্ত্র মানব মনের গতি প্রকৃতির রাজপথে ভ্রমন- সবকিছু যেন মলাটবদ্ধ হয়েছে একটি বইতে। চিন্তা-চেতনায় বইটি বেশ সমৃদ্ধ বলেই মনে হয়।
.
সবচেয়ে আকর্ষন করে বইটির কাহিনী। যদিও নাম ভূমিকায় রয়েছে কুশা নামের এক তরুণী, কিন্তু কাহিনীর শুরু হয় মেডিটেশনরত য়্যুয়ান নামের বিবর্তিত এক মানুষকে দিয়ে। প্রায় শত বছর আগে ভয়ংকর এক ভূমিকম্পে দক্ষিণ ও পূর্ব এশিয়ার অধিকাংশ জনপদই ধ্বংস হয়ে গিয়েছিলো। ভাগ্যক্রমে বেঁচে গিয়েছিলো গুটিকয় মানুষ। পোষ্ট এ্যাপোকেলিপ্টিক এই অঞ্চলে শুরু হয় তাদের বেঁচে থাকার সংগ্রাম। ধীরে ধীরে বেঁচে থাকা মানুষগুলো টের পায় প্রাকৃতিক দুর্যোগে পুরো জনপদ ধ্বংস হয়ে গেলেও তাদের মধ্যে ঘটে গিয়েছে দুর্দান্ত এক জেনেটিক পরিবর্তন। অশেষ চেষ্টায় তারা পুন:সংস্কার করে সমাজ ব্যবস্হাকে। গড়ে তোলে কৃষি ব্যবস্হা, নগর ব্যবস্হা, অর্থনীতি, শিক্ষা, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি, সরকার ও রাজনীতি। নগরগুলোকে তারা নাম দেয় গ্রিক বর্ণমালার অক্ষরের নামানুসারে আলফা, বেটা, গামা এমনভাবে। য়্যুয়ান সেই বেঁচে যাওয়া মানুষগুলোরই একজন। জেনেটিক বিবর্তনে তার শরীরের কোষে এমন এক পরিবর্তন এসেছে যে তার বয়স বাড়ছে খুবই স্বল্প হারে। বয়স প্রায় শতাধিক বছর হলেও তাকে দেখলে এখনও ত্রিশোর্ধ যুবক মনে হয়। সে আলফাটেক নামক একটি গাড়ী প্রস্তুতকারক অর্গানাইজেশনের প্রধান। কিন্তু এর আড়ালে তার রয়েছে এক গোপন মিশন।
.
রুয়েম নামক বিবর্তিত আরেকজন ছিলো য়্যুয়ানের বন্ধু। তারা দুজনে মিলে দুর্যোগ পরবর্তী মানবতাকে পুনরায় গড়ে তুলতে বেশ মুখ্য ভূমিকা পালন করে। কিন্তু আদর্শগত কারনে পরে তাদের মাঝে ঘটে যায় এক বেদনা বিধূর বিচ্ছেদ। তারা অনেকটাই যেন X-Men সিরিজের প্রফেসর এক্স (চার্লস য্যাভিয়ার) ও ম্যাগনেটোর মতো। প্রথমে বন্ধু থাকলেও পরে নানা ঘটনায়া তারা পরস্পরের প্রতিদ্বন্ধীতে পরিণত হয়। যদিও একমাত্র ২/১ বাক্যের আভাস ছাড়া লেখিকা সেসব কাহিনীর কোন কিছুই বিধৃত করেন না এই কয়েক পাতায়। তবুও আভাসে বোঝা যায় সামনের কোন এক ভলিউমে এ নিয়ে বিস্তারিত কাহিনী থাকবে।
.
এই রুয়েমও একটি শহরের বেশ উচ্চপদস্হ এক কর্তা ব্যক্তি। তারও রয়েছে অনেক সুপার পাওয়ার। এবং চরিত্রগত দিক দিয়ে সে তার প্রতিদ্বন্ধী য়্যুয়ানে সম্পূর্ণ বিপরীত। সবকিছুর আড়ালে তারও রয়েছে এক গোপন মিশন। সেই মিশন সম্পর্কে আগেভাগে জানিয়ে পাঠকের বিরক্তির কারণ হতে চাচ্ছি না।
.
রুয়েমের চরিত্রটি আমাকে বেশ টেনেছে। সে বেশ একটু চরমপন্হী কিসিমের লোক। একটা ঘটনায় তার মনস্তত্বের সাথে ব্লু হোয়েল গেমের স্রষ্টা ফিলিপ বুদেকিনের মনস্তত্বের বেশ মিল পাওয়া যায়।
.
কাহিনীর একেবারে প্রথম দিকেই দেখা যায় য়্যুয়ান রুয়েমের সাথে আলফা নগরের একটি নির্জন স্হানে দেখা করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রুয়েমই য়্যুয়ানের সাথে দেখা করার আগ্রহ ব্যক্ত করে। বর্তমানে চির প্রতিদ্বন্ধী হলেও পুরোন বন্ধুর ডাকে অবহেলা করতে পারে না য়্যুয়ান। তো সময় মতো সেই নির্জন স্হানে রুয়েম গিয়ে দেখলো সেখানে য়্যুয়ান অনুপস্হিত। অপেক্ষার সময়টাতে সেখানে হাজির হয় ৪/৫ জন মাতালের একটি দল। একটি মেয়েকে ধর্ষন করতে গেলে রুয়েম মেয়েটিকে মাতালগুলোর হাত থেকে রক্ষা করে মাতালগুলোকে মৃত্যদন্ড দিয়ে। এবং সবচেয়ে আশ্চর্যের ব্যাপার এরপর সে ধর্ষিতা মেয়েটিকেও মেরে ফেলে। এর মাঝেই য়্যুয়ান এসে হাজির হয় সেখানে। সে এই হত্যাকান্ডের কৈফিয়ত দাবী করে রুয়েমের কাছে। এবার আমরা রুয়েমের ভাষ্যে শুনি সে কি ভাবছে এদের নিয়ে,
“রুয়েম এবার ব্যাখ্যার সুরে বোঝানোর চেষ্টা করে বললো, “দেখো, পৃথিবী থেকে যদি এসব অধম প্রাণীদের উৎখাত করি তাহলে পৃথিবীর অনেক উপকার হবে। মেয়েটাকে যেভাবে রেইপ –” “আর মেয়েটা?” য়্যয়ানের কন্ঠস্বর এখনও আশ্চর্য রকম শান্ত অথচ কঠিন আর শিউরে ওঠার মতো ঠান্ডা। এবার রুয়েম য়্যুয়ানের চোখ থেকে দৃষ্ট সরিয়ে নিল। উল্টো দিকে ঘুরে কিছুক্ষন পর জবাবা দিলো, “যার বেঁচে থাকার কোন স্পৃহা নাই তার বেঁচে থাকার কোন অধিকার নাই।” “সেটা তুমি বিচার করার কে?” - এবারও কন্ঠ শান্ত রেখে বললো য়্যুয়ান। “মেয়েটার চোখ দু’টো বলছিল – আমাকে মেরে ফেলো – তাই বাঁচতে দেইনি। যার বেঁচে থাকার ইচ্ছা নাই, সে বেঁচে থেকে পৃথিবীর কিছু অক্সিজেন পুড়িয়ে কার্বন-ডাই-অক্সাইড তৈরী করা ছাড়া আর কিছু করতে পারবে না।” - নির্লিপ্ত কন্ঠে বললো রুয়েম। তার কন্ঠে এবার কোন রসিকতার সুর নেই। অর্থাৎ, সে যা বলছে তা মনে প্রাণে বিশ্বাস করে।
.
এমন উন্মাদ ও স্যাডিষ্ট চরিত্রের সাক্ষাত পাওয়া আমার জন্য বেশ এক্সাইটিং।
.
আর কুশা হচ্ছে এমন একজন তরুণী যার উপর বিবর্তন খুব একটা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি। অনেকটা আমাদের মতোই সাধারণ একজন মানুষ সে। তাকে আমরা প্রথম থেকেই দেখতে পাই প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা রাশাদের গৃহে। পুরো বইতেই তার মা-বাবার কোন পরিচয় আমরা পাইনা। রাশাদের গৃহেই সে তাদের পালিতা কন্যা হিসেবে বড়ো হয়ে ওঠে। সেখানে তার সাথে থাকে রাশাদের মেয়ে ত্বাহা ও স্ত্রী মিরা। কুশার শরীরে বিবর্তন খুব একটা প্রভাব বিস্তার না করতে পারলেও তার রয়েছে অত্যন্ত প্রখর ইনট্যুইশন পাওয়ার। অনেক ছোটবড় ব্যাপারই সে নিজের ইনট্যুইশন পাওয়ার ব্যবহার করে আগে ভাগেই বলে দিতে পারে। সে আবার প্রোগ্রামিং জিনিয়াস। অনেকটা প্রডিজি লেভেলের প্রতিভা তার মাঝে আমরা দেখতে পাই। অনলাইনে প্রোগ্রামিং প্রতিযোগীতা গুলোতে সে সর্বদা সর্বোচ্চ স্কোর হিট করে। নিজেই আবার নিজের রেকর্ড ব্রেক করে।
.
তবে কুশার চরিত্রের সবচেয়ে নিগেটিভ দিক হলো, সে ঠিক সামাজিক মানুষ নয়। প্রাতিষ্ঠানিক বিদ্যা শিক্ষার জন্য স্কুল-কলেজ-ভার্সিটিতে না যাওয়ার কারণে সে রীতিমতো নি:সঙ্গ মানুষ হিসেবেই বড়ো হয়েছে। তার পৃথিবী রাশাদ, ত্বাহা ও মিরার মাঝেই সীমাবদ্ধ। দুর্দান্ত ইনট্যুইশন ও প্রডিজি লেভের প্রতিভার অধিকারিণী হয়েও বাইরের সমাজে গেলে কুশাকে খুব কনফিউজ এবং ভীত হিসেবেই আমরা দেখতে পাই।
.
লেখিকা কুশার চরিত্রটি খুব দরদ দিয়ে সৃষ্ট করেছেন বলেই তাকে এমন জীবন্ত মনে হয়। কাহিনীর এক পর্যায়ে এই কুশাকে নিজেদের কাজে ব্যবহার করা নিয়েই য়্যুয়ান ও রুয়েম দুই চির প্রতিদ্বন্ধীর মাঝে শুরু হয় এক ক্ষমতার লড়াই। তারা দু’জনেই তাদের গোপন মিশনের স্বার্থে কুশার প্রতিভাকে কাজে লাগাতে চায়। পাশাপাশি থাকে তাদের গোপন মিশনের পথ চলা।
.
মূলত: এই তিন চরিত্রকেই কেন্দ্র করে কাহিনী এগিয়ে যায়। আর পাশাপাশি কাহিনীর প্রয়োজনে আসে আরো নানা চরিত্র। য়্যুয়ান, রুয়েম, কুশা, টিজে, ত্বাহা, রেন এবং আরো হাজারো রকম চরিত্রের উপস্হিতি, মজার মজার সব ডায়লগে পরিপূর্ণ কাহিনীটি বেশ দুর্দান্ত এবং ইন্টারেস্টিং একটি প্লট হিসেবে বিবেচিত হয় আমার কাছে।
.
এক পর্যায়ে মঞ্চে আভির্ভূত হয় এক গোপন সংগঠন। সংগঠনটির পাঁচ জন সদস্যের উল্লেখ পাওয়া যায় কাহিনীতে। আর তাদের নেতা পুরোই এক ডেমনিক কারেক্টার। যাকে সবাই সম্বোধন করে ‘আলোর দিশারী’ নামে। নামটার মাঝে বেশ একটা নাটকীয়তার সুর রয়েছে। তবে সে কিভাবে ডেমনিক কারেক্টার তা পাঠককে পড়ার পরই বুঝতে হবে।
.
এ সংগঠন ও তার নেতার ভাব-ভঙ্গি অনেকট�� এখনকার যুগের বিশ্বনেতাদের মতো। তারাই যেন পুরো পৃথিবীর নিয়ন্ত্রনকারী। এমনই তাদের ভাব-সাব। তারা এসে কাহিনীতে বিশাল এক মোড় দিয়ে দেয়। তারা সকলের অগোচরেই সকলের উপর গোপনে স্পাইং চালায়। সকলকে নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করে। যদিও তাদের মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে তেমন কিছুই ঠিক বোঝা যায় না। তবে এটুকু আভাস পাওয়া যায় গল্পে তাদের বেশ শক্তিশালী একটি ভূমিকা রয়েছে।
.
গল্প যাই হোক, প্রথম এক চ্যাপ্টার পড়লেই যেটা ধরে ফেলা যায় তা হলো লেখিকার লেখনী। এতোদূর পড়ার পর মনেই হয়না লেখিকা নিতান্তই নতুন এবং এটি তার প্রথম প্রকাশিত গ্রন্হ। বেশ সহজ-সরল বর্ণনা এবং শব্দ চয়নেও তিনি বেশ সাবলীল। যদিও ইংরেজী শব্দের আধিক্য আমার মতো পাঠকদের জন্য বেশ একটু অস্বস্তি সৃষ্টি করে। তবে কিছুদূর পড়লেই সেটাকে আর কোন বাঁধা মনে হয় না। আর তার গল্প বলার ঢংও খুব সুন্দর। Step-by-Step কাহিনী এগিয়ে যায় তরতর করে। আরেকটি ব্যাপার যা ভালো লেগেছে, সেটি হলো কাহিনীর নতুনত্ব। অন্তত আমার পড়াশুনার ডোমেইনের বাইরের কাহিনী বলা যায় একে।
.
সাইন্স ফিকশন বলতে আমার চোখে গ্রহ-নক্ষত্র-মহাকাশযান ছাড়া আর কিছুই ভেসে ওঠে না। আমাদের দেশের সাইন্স ফিকশন লেখকেরা যেন সাইন্স ফিকশনকে গ্রহ-নক্ষত্রেই আবদ্ধ করে রেখেছেন। সেই তুলনায় এই বইটি বেশ ইউনিক কিছু আইডিয়া নিয়ে হাজির হয় পাঠকের সামনে। তিনি সাইন্স ফিকশনের সাথে অন্যান্য জনরাগুলোকেও মিলেমিশে একাকার করে দেন। যা পড়লে পরিপূর্ন একটি জীবন দর্শনের সম্মুখিন হওয়া যায়। নতুন নতুন আইডিয়া ও টার্ম সম্পর্কে জানতে পাঠককেও গুগল করে বেড়াতে হয় দীর্ঘক্ষণ।
.
মৌলিক কাহিনী হিসেবে লেখিকাকে সাহসী আখ্যা এবং সাধুবাদ জানানোই যায়। কারেক্টার ডেভলেপমেন্ট যদিও বেশ ধীর গতির, তবে বিশাল একটি কাহিনীতে এটি হওয়াই স্বাভাবিক। অনেকের ধীর গতিতে বিরক্তি আসলেও আমার কাছে খুব খারাপ লাগে না। এটি অনেকটা মজার কোন ক্যান্ডি চোষে চোষে খাওয়ার মতো। মুখের ভেতর ক্যান্ডি যেমন খুব ধীরে ধীরে মিলিয়ে যায়, বইটির সব কারেক্টারও তেমনি খুব ধীরে ধীরে ডেভেলপ হতে থাকে। আরেকটি সুন্দর বিষয় হচ্ছে কাহিনীর প্রয়োজনে কারেক্টারগুলোর মাঝে আন্ত:সংযোগ।
.
আরেকটি বিষয় ভালো লাগা ও মন্দ লাগা দু’টোর সাথেই পরিচিত করে। যা ভালো লাগলো বইটির ভেতর লেখিকার নিজেরই হাতে আঁকা বেশ কিছু মোহনীয় আর্ট ওয়ার্ক। আর যা খারাপ লাগলো আর্ট ওয়ার্কের অপ্রতুলতা। আর্ট ওয়ার্কের পরিমান আরেকটু বাড়ানো যেতো।
.
পুরো বই জুড়ে এ্যাকশন-এ্যাডভেঞ্চারের পরিমানও বেশ কম মনে হয়েছে। আশা করি পরবর্তী পর্বগুলোতে সেই অভাব কিছুটা মেটানো হবে। লেখিকার লেখার ঢঙ্গে এটা স্পষ্ট যে তিনি খুব ধীরে ধীরে পাঠককে কাহিনীর গভীরে নিয়ে যেতে চাচ্ছেন। ২০ নাম্বার অধ্যায়ে অবশ্য তেমনই আভাস পাই আমরা বইটি থেকে। জটিলতার সৃষ্ট হলো বলে।
.
বইয়ের সবচেয়ে নেগেটিভ দিক হচ্ছে এর মুদ্রিত মূল্য। অন্যান্য থ্রিলার বইয়ের দামের তুলনায় এ বইয়ের দামটা তুলনামূলক ভাবে একটু বেশীই মনে হয়। প্রথম বই হিসেবে প্রকাশককে এদিকে একটু দৃষ্টি দেয়া উচিত ছিলো। যদিও বইটি হাতে নিলে দামের জন্য আর খুব একটা হতাশা কাজ করে না। ক্রিম কালারের কাগজে গোটা গোটা অক্ষরে ছাপা দুর্দান্ত বাঁধাইয়ে বইটি হাতে নিয়ে ধরে থাকতেই ইচ্ছে হয় সারক্ষণ। স্বয়ং লেখিকার নিজ হাতে করা প্রচ্ছদও বেশ একটা দ্যোতনার সৃষ্টি করে মনে। তবে কাগজ, বাঁধাই এসবের মান একটু কমিয়ে দিয়েও প্রাইসটা একটু কম্পিটিটিভ করা যেতো।
.
দিন শেষে, থ্রিলার ঘরানার বেশ কিছু লেখকের প্রথম মৌলিক বই পঠনের অভিজ্ঞতা থেকে এটুকু বলতে পারি যে, লেখিকা মিসবা তার প্রথম বইতেই বেশ প্রতিভার সাক্ষর রেখেছেন। অন্তত আমার কাছে মোটেও মনে হয় না এটি লেখিকার প্রথম বই। বেশ পরিপক্ক তার ভাষাশৈলী এবং বর্ণনা ভঙ্গি। এটি আরো একটি গর্বের বিষয় যে, আমাদের দেশের লেখক/লেখিকাদের মাঝে আমরা মিসবার মতো প্রতিভাশীল এবং কল্পনাশক্তির অধিকারী একজনকে পেয়ে গেলাম। আশা করি বইয়ের পরবর্তী কাহিনীতে তিনি তার পাঠক/পাঠিকাদের এমনভাবেই রোমাঞ্চের আস্বাদ দেবেন।
বড় দ্বিধায় পরে গেলাম। লেখিকা বিশাল এক প্লট নিয়ে আগাচ্ছেন। পরের গুলো শেষ না করা পর্যন্ত ঠিক কিছু বলতে চাচ্ছিনা। কতটুকু বুঝেছি, তাও বুঝতে পারছিনা। আবার যেটুকু বুঝেছি, তা ঠিক কিনা তাও বুঝতে পারছিনা। তবে যেটুকু মনে হয়েছে, দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বিশাল কাজ হয়েছে। আর সেটা আরও গভীর হলে বুঝতে আরও ভালো লাগত।
কথোপকথন গুলোর পাশাপাশি চরিত্র গুলোর গভীরতা পাঠকদের বুঝানোর জন্য আরও কাজ হলে ভালো লাগত, মনে গেঁথে যাওয়ার মত 'হত'।
বারবার "নাই" এর ব্যবহার বেশ বেমানান লেগেছে।
" যদি কোন কিছু আমি অর্জন করে নিজের কাছেই সেটা রেখে দেই, তাহলে আমি নতুন কিছু পাব না। আর নতুন কিছু না আসতে পারা মানে বদ্ধ জলাশয়ে পরিণত হওয়া, যেটা একসময় ডোবায় পরিণত হয়। কিন্তু যে নদী নতুন পানি গ্রহণ করতে পারে এবং একই সাথে সেটা দিয়েও দিতে পারে, সেই নদীই অনন্ত যৌবনা " - বেশ মনে ধরেছে কথাটা :')
বেশিরভাগ মানুষ তার জীবনের প্রায় পুরোটাই ব্যয় করে নিজেদের জীবনের লক্ষ্যকে জানার,বোঝার চেষ্টা না করে।অন্যের তৈরী করে দেয়া সমস্যাগুলোর সমাধানে ব্যস্ত থেকেই তারা তাদের সমগ্র জীবন কাটিয়ে দেয়।নিজেকে,নিজের ভেতরটাকে,নিজের স্বত্তাকে এক্সপ্লোর করা বা হাতড়ে দেখার কোনো তৃষ্ণাই তারা নিজেদের মধ্যে অনুভব করে না।কদাচিৎ যদি করেওবা,সে চিন্তা পরিণতি পাবার আগেই তাকে নিজেদের ভেতরে ধামাচাপা দেয় তারা অন্যান্য অর্থহীন কাজের অজুহাতে। . অর্জন-ত্যাগের ধর্মকে তারা নিজেকে দিয়ে উপলব্ধি করার চেষ্টা করে না।তাদের জীবনে জানার পরিধিটা বিশাল হলেও অনুধাবনের,উপলব্ধির স্থান তাতে নেই বললেই চলে। .
নিজেদের সাথে সমগ্র সৃষ্টিজগতের বিনিময়ের সম্পর্ককে বোঝার চেষ্টাও কদাচিৎ দেখা যায়।প্রতিটা সৃষ্টিই সমগ্র সৃষ্টিজগতে সৃষ্ট অন্যান্য সৃষ্টির সাথে ওতোপ্রোতভাবে জড়িত। হিংসা,লোভ মানুষের চূড়ান্ত ধ্বংসের কারণ হয়।মানুষের চিন্তা-চেতনাকে নিম্নস্তরে নামিয়ে আনে।নিজে 'জেতা'র চেয়ে অন্যকে 'হারানো'টাই মুখ্য উদ্দেশ্য হয়ে দাঁড়ায় তখন। .
ধর্ম-দর্শনকে জীবন থেকে বিচ্ছিন্ন করে রেখে প্রতিদিনের জীবনের সাথে মিলিয়ে দেখার চর্চাটাও অনুপস্থিত মানুষের মধ্যে।
.
কুশা এমন একটা সময়ের পটভূমিতে রচিত,যখন মানব সম্প্রদায় বড় ধরনের এক দূর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি সামলে উঠে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের চিন্তা-চেতনা,জ্ঞান-বিজ্ঞান এবং সর্বোপরি 'নিজেকে' উন্নত করার চেষ্টা করছে মানবজাতি।আবার তাদেরই মাঝে কিছু লোভী মানুষ নিজেদের আধিপত্য সৃষ্টির লক্ষ্যে মূর্খের মতো নিজ জাতির ধ্বংস সাধনে বদ্ধপরিকর।
কুশা প্রবল প্রতিভাধর ও আশ্চর্যজনক পর্যায়ের অনুভূতিকে রিড করতে পারা অতীতকাতর এক মানবীর গল্প। .
কুশা এক মহান বিজ্ঞানীর নিজ রিপুকে দমন করে সামনে এগিয়ে যাওয়া,অব্যক্ত ভালোবাসার গল্প।
.
কুশা এক বিভীষাকাময়,মানবসভ্যতাকে পেছনের দিকে ধাবিত করা এক 'সিস্টেম' থেকে বেরিয়ে আসার গল্প।
.
'কুশা' উপন্যাসটির সীমাবদ্ধতা বা কমতি হিসেবে যেগুলো আমার কাছে ধরা দিয়েছে সেগুলো হলো, ★রুয়েম-য়্যুয়ান-কুশা...এই তিনটি চরিত্র ছাড়া অন্য চরিত্রগুলোর বেশিরভাগেরই খুব একটা ভেতরে প্রবেশ না করা। ★ভাষার ক্ষেত্রে কোথাও কোথাও অনানুষ্ঠানিক কথ্য ভাষা ব্যবহৃত হয়েছে(করসো,খাইসো)মতো,কিন্তু একই চরিত্রগুলো সবক্ষেত্রে এই অনানুষ্ঠানিক কথ্য ভাষায় কথা বলছে না।কথ্য ভাষায় আমার কোনো আপত্তি নেই,সেটা হলে বরং ভালো আমার মতে...কারণ,আমার মতে,আমার যেভাবে কথা বলি,লেখাতে সেভাবেই আসা উচিৎ(মোস্তফা সরওয়ার ফারুকীর নাটকের মতো😬)।তাই বর্ণনার অংশগুলো যদি প্রমিত রীতিতে লিখে শুধু কথোপকথনের অংশগুলো কথ্য ভাষায় ব্যবহৃত হয়,তাহলে আমার মতে,সমস্যা হওয়ার কথা না।
এখানে সব জায়গায় একই ক্যারেক্টারগুলো একই ক্যারেক্টারগুলোর সাথে সব সময় একই ভাষায় কথা বলছে না,সেখানেই আমার আপত্তি। ★আর বইয়ের ব্যাপারে, ★লেখার ফন্টগুলো খুব ছোট,যা চোখের জন্য আরামদায়ক নয় ★লেখার রং কোনো কোনো পৃষ্ঠায় বেশ হালকা ★মার্ক করার ফিতেটি নিচ থেকে ছেঁড়া ★নিচের ফাঁকা জায়গাটির পরিমাণ সব পৃষ্ঠায় সমান নয় ★বাইন্ডিং খুব একটা সুবিধার মনে হয়নি
তবে এটা যেহেতু ধারাবাহিকটির প্রথম উপন্যাস,তাই এর পরের উপন্যাসগুলো এই ঘাটতিগুলো(আমার চোখে)পূরণ করে দেবে বলেই আমি মনে করি।
এরকম কোনো বিষয় নিয়ে বাংলা ভাষায় লেখা,যা কিনা এতোদিন শুধু জাপানি অ্যানিমে সিরিজগুলোতেই দেখেছি নিঃসন্দেহে বাহবার দাবী রাখে।আর বইয়ে ব্যবহৃত ছবিগুলো চরিত্রগুলো সম্বন্ধে ধারণাকে স্পষ্টতর করতে সাহায্য করেছে।লেখিকা আঁকিয়ে হিসেবেও বেশ সফল এখানে। আর তাই ঔপন্যাসিকার প্রতি প্রত্যাশার পারদটাও বেশ উর্ধমুখী।(এটা নিয়ে একটা অ্যানিমে সিরিজ বানাতে পারলে কিন্তু খারাপ হয় না!)
একরাশ শান্তিময়তার শুভেচ্ছা আর অভিনন্দন রইলো 'কুশা' বইটির সাথে প্রত্যক্ষ-পরোক্ষ ভাবে যুক্ত সকলের প্রতি।:) কুশা রচয়িতা:মিসবা জন্রা:সাই-ফাই টেরাকোটা ক্রিয়েটিভস মলাট মূল্য:৬০০(আমি ২৭০দিয়ে কিনেছি Akalikha page থেকে ৫৫% ডিসকাউন্টে) https://www.facebook.com/akalikhaar...
প্রথম প্রথম য়্যুয়ানকে যতটা ভালো ভেবেছিলাম পরে দেখি ততটা না। আর রুয়েমকে প্রথমদিকে খুবই বিরক্তিকর লাগত, পরে দেখি আসলে তার চিন্তাধারা-কাজকর্ম বেশ মজার! যতবার অন্যদের সাথে তার কথোপকথনগুলো আসছে, কিছু কিছু জায়গায় তো রীতিমত হেসে উঠছি। আর কুশা... কুশার অতীত, তার ক্ষমতার স্বরূপ, সে কী চায় আর আদতে কী করবে, তা এখনও ধোঁয়াটে। দেখা যাক, কী হয়, কারণ বইটার নামই আভাস দিচ্ছে, তার ভূমিকা কতখানি এ গল্পে... আর এতগুলো দল/ সংঘ পরস্পরের বিরুদ্ধে বা অন্তত ভিন্ন নীতিতে বিশ্বাসী হয়ে কাজ করছে, কে কার সাথে শেষ পর্যন্ত হাত মিলায়, সেটা জানার একটা অদম্য আগ্রহ কাজ করছে। বইটার প্রায় তিন-চতুর্থাংশই শেষ। বাকিটা দ্রুত শেষ করতে মনও চাচ্ছে, আবার কীভাবে শেষ হয় (নতুন কোন রহস্য রেখে) সেটা নিয়েও ভাবনা হচ্ছে, যেহেতু এ কাহিনীটার আরও খণ্ড আসার কথা।
বইটা শেষ করার পর:
পরের বইটা কবে আসবে?!! (এখন অপেক্ষার পালা... এ এক ভয়াবহ পরীক্ষা, বই-পড়ুয়াদের জন্য।)
আমার পড়া সেরা মৌলিক সাইফাই-ফ্যান্টাসি। কিন্তু কথা হচ্ছে বইটা এখন এভেইলেভেল না+পরের বইগুলো এসেছে ইংরেজিতে! লেখিকার এই সিদ্ধান্ত একদমই মেনে নিতে পারছি না! বাংলা সাহিত্যে এরূপ কাজ আর নেই। (হয়তোবা আছে, আমি জানি না। কিন্তু যেগুলো সম্পর্কে জানি সেগুলো থেকে এটি ভিন্ন।) সবকিছু বোঝার পরও এমন সিদ্ধান্ত তিনি কেন নিলেন কে জানে!
This book is superb! Incredibly awesome! Was dying to have the next book but ..... :( Now, can anyone tell me are these books ( the high auction, oldest dance, cheat code) connected or linked to each other?
বইঃ- কুশাঃপ্রারম্ভ লেখিকাঃ- মিসবা ধরণঃ- সায়েন্স ফিকশন, স্পিরিচ্যুয়ালিটি, সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার, হিউম্যান এভোল্যুশন, মিথ, প্রাচীন ইতিহাস, ধর্মীয় ইতিহাস, ফিলসফি, মিস্ট্রি আর এ্যডভেঞ্জার।
পড়তে সময় নিলামঃ- ৫ দিন (অপচয়)
আমার রেটিংঃ- ২/৫
রেটিং দুই দিলাম শুধুমাত্র বইতে সায়েন্স ফিকশন, সুপার ন্যাচারাল পাওয়ার আর এ্যডভেঞ্জার আছে। এই তিনটিই ভালো লেগেছে। বাকি গুলো ভালো লাগেনি। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে বইটা শেষ হয়নি! মাত্র শুরু আরো কত পার্ট বের হয় কে জানে। যতই বের হোক আমি আর কিনছি না।
গল্পের ভিলেন রুয়েমকে ভালো লেগেছে। কারণ আমার ভাবনা গুলো তার সাথে মিলে যায়। আমি সবসময়ই গল্পের ভিলেন হতে চাই। গল্পের আরেক চরিত্র কুশাকেও ভালো লেগেছে কারণ তার মধ্যে আমাকে খুজে পেয়েছি। সে আমার মতোই অসামাজিক, বাইরের পৃথিবীর প্রতি ভয়, মানুষের সাথে মিশতে না পারা, আর সবচেয়ে বড় কথা হলো প্রচন্ড আবেগ প্রবন। আর গল্পের নায়কের সাথে থাকা হেনতাই কে আমার চাই। ইশ্ যদি হেনতাই থাকতো তবে কখনো আর কথা বলার জন্য মানুষ খুজতে হবে না, কথা বলবো মনে মনে। আহারে জীবন.... 😍
পড়ার সময় ভেবেছিলাম বইটা নিয়ে রিভিউ লিখব, কিন্তু এখন কেন যেন লিখতে পারছিনা। অনেক দিন ধরেই এমটা হচ্ছে। আর বইটা তেমন ভালো লাগেনি তাই রিভিউ লিখলাম না.. নিজ দায়িত্বে কিনুন আর পড়ুন। হ্যাপি রিডিং.. 😒
In an era, where metaphysical evolution has redefined their vision of reality, people start to seek knowledge. In a point of view, Kusha is a "post-apocalyptic like" world as earthquake has changed geography of the environment. As a fan of this genre, it caught my attention. In an addition to that the eastern flavor, as it is based on the concept of "chi" also grew a curiosity in me.
In a nutshell, main character Kusha who is not yet in control of her abilities has yet to find out her gifts that can make anyone envious. Eventually her meeting with other lead characters is likely to directly get her involved in the conspiracy theory in the later sequels.
This book rather being a story acts more like a prologue to a journey. The characters were visualized with care and story was delivered with elegance. Details to the events were neither abridged nor exaggerated, rather it was precise, which shows the brilliance of the writer.
সায়েন্স ফিকশন গল্পটি হার্ডকোর জনরার না। অর্থাৎ, গল্পটি বিজ্ঞানের নিয়ম নির্ভূলভাবে অনুসরণ করেনি। অনেক আধিভৌতিক ব্যাপার টেনে আনা হয়েছে। অবশ্য, অনেক বড় বড় বিশ্ববিখ্যাত সায়েন্স ফিকশন রাইটারদের ক্ষেত্রেও ব্যাপারটা সত্য। অনেকেই সায়েন্স ফিকশন লিখে, কিন্তু সায়েন্স ফিকশনের পেছনের সায়েন্সটুকু একদম পিয়োর হয় না। তাই, আমার কাছে গল্পটি ফ্যান্টাসির জালে আটকে পরা সায়েন্স ফিকশন বলে মনে হয়েছে। তবু, গল্পটি সাবল���ল ছিল। পড���তে ভালো লেগেছে। গল্পটাও ভিন্নধারার একটা গল্প ছিল। প্রচুর ডিটেইলস ছিল গল্পে। এবং যেটা না বললেই না, সেটা হচ্ছে গল্পটা শেষ হয়নি। শেষ করার পর একধরনের অপূর্ণতা থেকে যাবে। আশা করি, লেখিকা যে বিস্তৃত প্লট নিয়ে সামনে আগাচ্ছেন, সেটা খুব গুছিয়ে শেষ করবেন।