Harishankar is a promising Bangladeshi author. The most significant point to notice is that all the four novels produced from Harishankar's pen sketch the life of the downtrodden, some of whom are from among fisherfolks, some from among prostitutes and some others are the 'harijons' or 'methors'.
কোনো এক সাঁঝের আঁধারে একবুক কষ্ট আর হতাশার ভার সইতে না পেরে নিজের প্রাণ ট্রেনের যান্ত্রিক চাকার নিচে পিষে নিঃশেষ করে দিতে চেয়েছিল তনয়। কিন্তু ছোটবেলার বন্ধু সঞ্জীবের কারণে তা সম্ভব হয়নি। আর সেই থেকে শুরু হয় হরিসংকর জলদাসের গল্প প্রতিদ্বন্দ্বী। প্রতিদ্বন্দ্বী গল্পের কাহিনী আবর্তিত হয়েছে দু'টি ভিন্ন পরিবারের ভিন্ন গল্প দিয়ে। গল্পের শুরুটা সাবলীল ছিল। লেখক বেশ দক্ষ হাতে চরিত্রগুলো গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। প্রতিটি চরিত্রের একে অপরের সাথে পারিবারিক, ব্যক্তিগত, রাজনৈতিক কিংবা নৈতিক দ্বন্দ্ব স্পষ্টরূপে পরিলক্ষিত হয়েছে। সবার মাঝে এক পরোক্ষ প্রতিযোগিতার ছোঁয়ায় বুঁদ হয়ে এগিয়ে চলেছিলাম সমান তালে। একসময় চরিত্রগুলোর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব দুই ভিন্ন পরিবারের সাধারণ দ্বন্দ্বে পরিণত হয়। শেষমেশ পুনরায় সকল দ্বন্দ্বের চূড়ান্ত পরিণতির মাধ্যমে গল্পের সমাপ্তি। শুনতে একদমই মন্দ লাগছে না, তাই না?
কিন্তু গল্পের শুরু বেশ সুন্দরভাবে হলেও ঠিক যেখানে দুই পরিবারের দ্বন্দ্ব এক হয়ে যাওয়ার শুরু, সেখানে মুন্সিয়ানা দেখাতে দারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন হরিসংকর জলদাস। শেষের পরিণতির সাথে প্রধান চরিত্রের কোনো মোটিভ আমার বুঝে আসেনি। অন্যভাবে বললে, লেখক আমাকে বুঝাতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি বেশ তাড়াহুড়োর মাধ্যমে বাংলা সিনেমার মতো করে শেষ করে মুক্ত হলেন যেন। এই ছোট গলদটুকু না হলে নির্দ্বিধায় ভালো গল্প বলে চালিয়ে দেয়া যেত।
লেখকের লেখার সাথে পরিচিত হওয়ার ইচ্ছে ছিল অনেকদিন আগে থেকেই। তবে কোনো বই সংগ্রহে না থাকায় পড়া হয়ে উঠছিল না। তাই এই বইটা সম্প্রতি শেলফ থেকে পুরনো বইপত্তরের মধ্যে পেয়ে বেশ খুশিই হয়েছিলাম।
গল্পের শুরুটা রেলস্টেশনে। দাম্পত্য কলহে অতিষ্ঠ হয়ে তনয় সে সন্ধ্যায় আত্মহত্যা করতে গিয়েছিল। তবে তার বন্ধু সঞ্জয় ডিউটি শেষে বাড়ি ফিরতে গিয়ে তনয়কে বিধ্বস্ত অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাকে নিয়ে আসে নিজের বাড়িতে।
ঘটনার শুরুটা বেশ আগ্রহ জাগানিয়া ছিল। লেখক প্রাথমিকভাবে দুটো পরিবারের, দুটো দাম্পত্যজীবনের দ্বন্দ্বের মাঝে একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার গল্প দাঁড় করেছেন। তনয়ের বাবা অমিতাভ তার নিজের জীবন থেকে নেয়া শিক্ষার বদৌলতে নিজের সন্তানের জীবনের আর্থিক নিরাপত্তার স্বার্থে একচেটিয়া হয়ে পরিবারের সকলের মতামতের বিরুদ্ধে গিয়ে তনয়ের সাথে শ্রাবণীর বিয়ে দিয়েছিলেন। পুরো বইয়ের অনেকটা জুড়েই শ্রাবণী ও তনয়ের বিয়ের পূর্ববর্তী ও পরবর্তী ঘটনাগুলো উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে লেখক বাবা হিসেবে ডা. অমিতাভ সেনের কঠোর অবস্থান ও তনয়ের কোণঠাসা অবস্থার মধ্যস্থতাস্বরূপ সাগরিকাকে নিয়োজিত করলেও সাগরিকার চারিত্রিক দৃঢ়তা যেন অমিতাভ সেনের ভিত নাড়িয়ে দিয়েছিল। তবে মূল গল্পে এ অবস্থান খুব একটা ভূমিকা রাখতে পারেনি।
অন্যদিকে শ্রাবণীর বাবা অর্থাৎ মিহিরবাবু, প্রচণ্ড ধনাঢ্য হওয়ায় স্বভাবতই লোভী। বন্ধুর ছেলের সাথে নিজের মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করে একদিকে তিনি যেমন ঘাড় থেকে কু-স্বভাবের কন্যাকে পার করিয়ে দিয়েছেন, তেমনি সামাজিক প্রতিপত্তির দিকটিও সমানভাবে বজায় রেখেছেন। উপন্যাসে মিহিরবাবুর চরিত্রকে সরাসরি বড় করে না দেখানো হলেও তার কার্যক্রমের মাধ্যমে লেখক ধনশালীদের প্রতি এক প্রকার বিদ্বেষ দেখাতে সক্ষম হয়েছেন। মূলত "প্রতিদ্বন্দ্বী"-র মূল আখ্যানের বিশাল অংশজুড়ে যে দত্তবাড়ির ইতিহাস উঠে আসে, তা শেষবেলায় মিহিরবাবুর লোভের সাথে জুড়ে দিয়ে এই ধারণাকে আরো পাকাপোক্ত করেছেন তিনি।
লেখার ধরণ বিবেচনায় পুরো উপন্যাসের ভাষা বেশ সাবলীল ছিল৷ তবে ব্যক্তিগতভাবে মনে হয়েছে তনয় আর শ্রাবণীদের পটভূমির তুলনায় দত্তবাড়ির আখ্যানভাগের বর্ণনায় লেখক মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন বেশি। ইতিহাসআশ্রিত গল্প না হলেও দত্তবাড়িতে বংশানুক্রমে একদিকে কালিসাধন থেকে বিন্দুকান্ত, অন্যদিকে বীরেন্দ্র থেকে প্রতিমা - দুটো পরিবারের মধ্যে অকৃত্রিম ভালোবাসার সম্পর্ক স্থাপন, প্রতিমার সাথে সন্তানবিহীন বিন্দুকান্তের স্নেহসুলভ সম্পর্ক এবং এর মধ্য দিয়ে ইতিহাসের প্রতি প্রতিমার আগ্রহ, মুঘল সাম্রাজ্য নিয়ে তথ্যবহুল আলোচনা সবটা দারুণভাবে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন তিনি। উপন্যাসের শেষদিকে মূল কাহিনীর সাথে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপট, প্রতিমার আমূল পরিবর্তন এবং সেখান থেকে অর্থ ও অধিকারের লড়াইয়ে মিহিরবাবু এবং প্রতিমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে ওঠার গল্পটা টানটান উত্তেজনায় পরিপূর্ণ ছিল।
নিঃসন্দেহে এটুকু পড়ে গল্পটাকে বেশ ভালো বলা যায়। কিন্তু উপন্যাসের ইতিপর্বে লেখক পুরো কাঠামোটাকেই ভণ্ডুল করে দিয়েছেন মনে হলো। দীর্ঘ একটা সময় ধরে প্রতিমার চরিত্রায়ন করে লোভের বিরুদ্ধে তার লড়াইয়ে তাকে খুব বেশি সক্রিয় দেখাতে পারেননি লেখক। উপরন্তু তরুণদের জুড়ে দিয়ে আবার বিশ্বাসঘাতকতার করুণ অথচ বাস্তব রূপ দেখিয়ে সবটাকে মিহিরবাবুর অনুকূলে নিয়ে এসেছিলেন। এই পর্যায়ে উপন্যাসটার দারুণভাবে মোড় ঘুরিয়ে দেয়া কোনো সমাপ্তির অপেক্ষায়ই থাকবে যেকোনো পাঠক। তবে গ্রাফের সর্বোচ্চ বিন্দু অর্থাৎ ক্লাইম্যাক্স থেকে গোটা উপন্যাসই যেন মুখ থুবড়ে পড়েছে। কেমন যেন কাহিনী মিলিয়ে দেবার জন্য লেখক তনয়ের মাধ্যমে গল্পের ইতি টানতে চেয়েছেন। অথচ তনয়ের চরিত্রায়নে যে নির্লোভ এবং শক্তিশালী ব্যক্তিত্ব নির্মাণ করেছেন তার বিন্দুমাত্র তিনি ব্যবহার করেননি! অতঃপর সিনেম্যাটিকভাবে কোনো ভিত্তি ছাড়াই উপসংহার! মোদ্দাকথা চরিত্রগুলো, বিশেষত খল চরিত্রে অমিতাভ, শ্রাবণী, মিহিরদের এবং এর বিপরীতে সাগরিকা, তনয় এবং অবশ্যই প্রতিমাদেবীর ব্যাকগ্রাউন্ড লেখক সফলভাবে তৈরি করলেও চূড়ান্ত পরিণতিতে নিদারুণভাবে ব্যর্থ হয়েছেন।
লেখকের লেখার সাথে পরিচিত হতে চাইলে এই বইটা প্রথমে পড়লে পাঠককে হতাশ হতে হবে। আগ্রহের পাল্লার সাথে সমাপ্তির হিসেব না মেলায় শেষে গিয়ে যে ধাক্কাটা খেতে হবে তা সব আগ্রহে জল ঢেলে দেবার জন্য যথেষ্ট৷ তবে ইতিহাসের সাথে বর্তমানের মিশেলে লোভ, প্রতিপত্তি, সামাজিক দায়বদ্ধতার চাপে পদপিষ্ট জীবনের তিক্ত অভিজ্ঞতা- সবটা মিলিয়ে বহুমাত্রিক কিছু প্রেক্ষাপট এবং সে সম্পর্কে লেখকের দর্শন মাথায় কিছুটা হলেও ভাবনার ঝড় তুলতে বাধ্য করবে৷