Anish Deb (22 October 1951 – 28 April 2021) was an Indian Bengali writer and academic. He was noted for his writings in the science fiction and thriller genre. He received several literary awards including Vidyasagar Award in 2019.
Anish Deb was born in 1951 in Kolkata. He completed his B.Tech. (1974), M.Tech. (1976) and Ph.D. (Tech.) with 1 silver and 2 university gold medals in Applied Physics from the Rajabazar Science College campus of University of Calcutta.
Anish Deb started his writing career in 1968. He also edited a number of collections of popular fictions, novels and detective stories. Some of his notable writings are: Ghaser Sheesh Nei, Saper Chokh, Teerbiddho, Teish Ghanta Shat Minute, Hate Kalome Computer, Bignyaner Dashdiganto, Jibon Jokhon Phuriye Jay.
একটা গেমশো যার প্রতিটা লেভেল এ জিততে পারলে অনেক অনেক টাকা আর হারলেই মৃত্যু। একটার পর একটা রুদ্ধশ্বাস রাউন্ড, এলিমিনেট হলেই মৃত্যু। আপনারা অনেকেই ভাবছেন আমি নেটফ্লিক্স অরিজিনালস স্কুইড গেম অথবা হাঙ্গার গেমস এর কথা বলছি, তাহলে আপনি ভুল ভাবছেন। আমিই বলছি সময় ২০১০ সালের অণীশ দেব এর লেখা তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিটস আর ষাট মিনিট তেইশ ঘন্টা উপন্যাস এর। ২০১০ সাল, ইন্টারনেট তখন দুরস্ত, রিয়ালিটি শো কি জিনিস আমরা জানিনা সেই সময়ে দাঁড়িয়ে এই ধরণ এর দুর্দান্ত ফিউচারিস্টিক থ্রিলার, সত্যিই কল্পনার বাইরে। আজ আমি লিখছি বইটি সম্পর্কে, লেখা উচিত ছিল অনেক আগেই, এখন এই বই ভালো লাগবে কী লাগবে না সেটা একটা তর্কের বিষয়, কারণ এখনকার মতো হাতের মুঠোয় সব আমাদের কাছে ২০১০ সালে ছিল না.
পটভূমি -
শহরের মধ্যে দুটি ভাগ, ওল্ড এবং নিউ সিটি। সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ এর বসবাস ওল্ড সিটি তে, শ্রীহীন রুক্ষ, জরা জীর্ণ, রোগ-ব্যাধিগ্রস্ত। শিক্ষা বা স্বাস্থ্য কোনোটিতেই আধুনিকতার লেশমাত্র নেই। সেই তুলনায় নিউ সিটি অনেক আধুনিক, মানুষেরা অনেক শৌখিন, ব্যবস্থা, প্রযুক্তি সবই যন্ত্রচালিত, মানুষ ও তাদের অনুভূতি, কার্যকলাপ, চিন্তাভাবনা সব কিছুই যেন রিমোট কন্ট্রোল্ড। এই নিউ সিটিতেই হয় সব ভয়ঙ্কর ভয়ঙ্কর রিয়ালিটি গেম শো, প্রচুর টাকা প্রাইজ মানি, ঝুঁকিসম্পন্ন গেম, দমবন্ধ করা টানটান উত্তেজনা ব্যাপার। 'স্নেকস অ্যlন্ড জেমস', 'ম্যানিম্যাল রেস', 'ফাইট গেম', 'হাংরি ডলফিন', 'পিট ফাইট', জনপ্রিয়তার শিখরে রয়েছে 'কিল গেম'। বেশিরভাগ খেলোয়াড় ওল্ড সিটির বাসিন্দা। মানুষ এর অভাব বড়োই বিষম বস্তু আর সেই অভাব এর তাড়না থেকে মুক্তি পেতেই নির্ঘাত মৃত্যু জেনেও ওল্ড সিটি এর এই গরিব রাই অংশগ্রহণ করে এই রিয়ালিটি শো গুলোয়। নিশ্চিত মৃত্যু জেনেও শ'কোটি টাকা পুরস্কারের লোভে ২৪ঘন্টা একটানা খেলা চালায় 'সুপার গেমস কর্পোরেশন', যার সর্বেসর্বা মালিক শ্রীধর পাট্টা। জিশান পালচৌধুরী। ২৯ বছরের ওল্ড সিটির এই নায়কের ছোট্ট সংসার স্ত্রী মিনি আর ফুটফুটে অর্কনিশানকে নিয়ে। জিসান কে একরকম ভাবে ব্ল্যাকমেল করে কিল গেম এই পার্টিসিপেট করায় শ্রীধর পাট্টা। যত ভালো প্রতিদ্বন্দ্বী ততো টানটান লড়াই ততটাই উত্তেজনা, আর এইসব এর উপর হলো নির্ভর করছে বিনোদন, এতোটাই নিষ্ঠুর এই দুনিয়া। এই গেম শুধু শারীরিক শক্তি আর দক্ষতার মোকাবিলা নয়, বুদ্ধির উদ্ভাবনী ক্ষমতা আর ধারেরও লড়াই। আর গেম কে আরও উত্তেজনায় ভরপুর রাখতেই জিসান এর সঙ্গে বিপক্ষে রাখা হয় কানোরিয়া, সুখরাম নস্কর, প্রোটন এর মতো পোড়খাওয়া সুপারি কিলারদের জিসান কে শেষ করার জন্য। জিসান কী পারবে এই গেম থেকে বেঁচে ফিরতে? বেঁচে থাকতে হলে জিসান ক নিজেকে তৈরী করতে হবে দক্ষ একজন লড়াকু, জিসান কী পারবে কিল গেম শেষ করতে? কিভাবে একজন খুব সাধারণ দিন আনা দিন খাওয়া মানুষ সুখী পরিবারের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পোড়খাওয়া দক্ষ ফাইটারের জীবন শুরু করে সেটা জানতে অবশ্যই বইটি পড়তে হবে।
পাঠ প্রতিক্রিয়া -
বইয়ের ফার্স্ট পার্ট আমিই পড়েছিলাম সেই ২০১০ সালে, তখন একটা আলাদা থ্রিল আলাদা উত্তেজনা অনুভব করেছিলাম, সেই সময় এই প্লট একদম নুতুন, তাই এই উপন্যাস টি ফিউচারিস্টিক থ্রিলার। লেখক হয়তো জানতো যে এই প্লট এর উপর ভিত্তি করেই একের পর এক রিয়ালিটি শো, নেটফ্লিক্স অরিজিনালস তৈরী হতে পারে সুদূর ভবিষ্যতে, তাই এই উপন্যাস টি সত্যি কালজয়ী এবং আন্ডাররেটেড। এখন যারা উপন্যাস টিকে পড়ছেন অথবা পড়বেন বলে ভাবছেন তাদের নাও ভালো লাগতে পারে, কারণ এখন আমাদের কাছে সব কিছুই খুব সহজেই অ্যাভেলাবেল, কিন্তু সেই সময় দাঁড়িয়ে এই উপন্যাস টি নিজের সময়কাল এর থেকে অনেকটাই এগিয়ে ছিল।
❛স্কুইড গেম❜ নামক netflix সিরিজের কথা জানে না আজকালকার এমন সিরিজ লাভার খুঁজে পাওয়া যাবে না। মনে আছে বিশাল হাড়ি ভর্তি টাকার জন্য অংশগ্রহণকারীদের খেলতে হতো বিপদজনক সব খেলা? প্রতি রাউন্ড জিতলেই ঝুলিতে চলে যাবে টাকা আর হারলেই? হার বলে এখানে কোনো কথা নাই। মূল স্লোগান ❛Do or Di e❜। শেষতক যে টিকে থাকবে সেই পাবে অগণিত টাকা। স্কুইড গেমের ম্যানেজমেন্ট বেছে বেছে কাদের এই খেলার জন্য বাছাই করতেন? গরীব, দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাওয়া মানুষদের, মোদ্দাকথা গরীবদের। না, আমি সিরিজের রিভিউ করতে আসিনি। বলছিলাম আজকের ঝকঝকে কলকাতা যেখানে বাস, ট্রাম আর স্বপ্নেরা ঘুরে বেড়ায়। ঘুরে বেড়ায় পানি পুরির সুবাসের সাথে কফি হাউজের কফির মন মাতানো গন্ধ কিংবা কলেজ স্ট্রিটের নতুন পুরোনো মলাটের বইয়ের নেশা করা ঘ্রাণ সেই কলকাতা কয়কেশ বছর পর আর সেই কলকাতা থাকবে না। কলকাতা হয়ে যায় এক ডিস্টোপিয়ান নগরী। ভাগ হয়ে যায় ❛ওল্ড সিটি❜ আর ❛নিউ সিটি❜ নামে। যার একপাশে জৌলুস, টাকা, আলো আর বিলাসিতা তো অন্যপাশে জঞ্জাল,ময়লা, অভাব আর মনুষ্যত্বের বিসর্জন দেয়া অন্ধকার। আর পুরো সিটির সর্বেসর্বা মার্শাল শ্রীধর পাট্টা। যেখানেই পাট্টাই শেষ কথা। এমনই এক কঠিন সময়ে ওল্ড সিটিতে জিশান পাল চৌধুরী বাস করতো তার স্ত্রী মিনি আর ছোট্ট ছেলে অর্কনিশানকে নিয়ে। অভাব ছিল, বস্তির দমবন্ধ করা পরিবেশে দিনাতিপাত করতে হলেও তিনজনের পরিবারে অফুরন্ত ভালোবাসা ছিল। সেই সুখেই ছেদ পড়ল এক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার মাধ্যমে। রেসলিং গেমে নিয়মের তোয়াক্কা না করে প্রতিদ্বন্দ্বীকে মে রে ফেলেছিল জিশান। যদিও ইচ্ছাকৃত ছিল না কাজটা। বন্ধুর হ ত্যার শোধ আর গায়ে উঠা অসীম রাগকে দমন করতে না পেরেই অঘটন ঘটে যায়। ফলাফল তার জীর্ণ বাড়িতে মার্শাল শ্রীধর পাট্টা নামক কুরুচিপূর্ণ লোকের আবির্ভাব। পাট্টা প্রস্তাব দিলো, হয় ❛সুপার গেম কর্পোরেশন❜ এর ❛কি ল গেম❜ খেলায় নাম দাও নয়তো খু নের সাজা ভোগ করো। উপায়ান্তর না দেখে জিশানকে জীবন ম র ণ সে খেলাতেই নাম লেখাতে হয়।
❛সুপার গেম কর্পোরেশন❜ এর ভয়ানক সেই খেলা কতগুলো ধাপে হয়। যার প্রতিটার মূল কথা জিততে হবে না হয় প্রাণ ভাগাড়ে। জিতলে বিপুল টাকা ম র লে কাঁচ কলা। বাহারি সব খেলা আর তার নাম আছে। এই যেমন, ❛স্নেকস অ্যlন্ড জেমস❜, ❛ম্যানিম্যাল রেস❜, ❛ফাইট গেম❜, ❛হাংরি ডলফিন❜, ❛পিট ফাইট❜, আর ❛কি ল গেম❜। বলাই বাহুল্য এইটাই সবথেকে জনপ্রিয় আর এই খেলা জেতার প্রাইজমানি কল্পনাতীত। জিশানকে খেলতে হবে এই সবগুলো খেলা আর সবশেষে ❛কি ল গেম❜ এ দীর্ঘ ২৪ ঘণ্টা কিংবা তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট কিংবা ষাট মিনিট তেইশ ঘণ্টা টিকে থাকতে হবে ভয়ঙ্কর তিনজন খু নে র সাথে লড়াই করে। তবেই মুক্তি। ওল্ড সিটির মানুষই কেবল এসব খেলায় অংশ নিতে পারে। নিউ সিটির বাসিন্দারা দর্শক। প্লেট টিভিতে উপভোগ করে ওল্ড সিটির বাসিন্দাদের ম র ণ খেলা। আবার নানারকম বাজি ধরা আর তার থেকে ইনকাম তো আছেই। কী অদ্ভুত এক জগৎ!
জিশান ওল্ড সিটি থেকে নিউ সিটিতে পদার্পণ করলো দীর্ঘ ষোলো বছর পর। একসময় নিউ সিটির জৌলুসের বাসিন্দা ছিল সেও। ভাগ্যের পরিহাসে জায়গা হয় ওল্ড সিটিতে। আবার একই পরিহাসে জীবন ম র ণ খেলা খেলতে নিউ সিটিতে পা দিলো সে। এই খেলার শুরু থেকেই জিশান কেমন একটা ভালো প্রভাব ফেলেছিল সকলের মাঝে। তার উদ্দেশ্য ❛কি ল গেম❜ জেতা থেকেও অনেক বেশি। পোড় খেয়ে খেয়ে ���ক্ত হলেও জিশান যেন ডাবের মতো। বাইরের শক্ত আবরণের নিচে আছে নরম এক মন। যে প্রয়োজনে মা র তে জানে আবার হাতের শিকারকে প্রাণ ভিক্ষে দিতেও জানে। নিউ সিটির ইতিহাসে এমন কোনো পার্টিসিপেন্ট আসেনি। কেউ এতটা মানবিক সাথে দুর্ধর্ষও ছিল না। এবারের খেলাও আগের সব রেকর্ডকে ভেঙে দিয়েছে। জিশানের জনপ্রিয়তা মানেই ❛সুপার গেম কর্পোরেশন❜ এর আয়। কিন্তু ক্ষমতালোভী, নিষ্ঠুর, স্বৈরাচারী পাট্টার জন্য জিশানের এত জনপ্রিয়তা হুমকির। সে নানা ছক কষছে জিশানকে রুখে দেবার। গা জ্বালানো কথা বলছে, অভিনব সব শাস্তি দিচ্ছে কিন্তু জিশান এক পিসই। সব সয়ে নিচ্ছে দাঁতে দাঁত চেপে। লক্ষ্য পরিবারের কাছে ফিরে যাওয়া। কিন্তু সম্ভব হবে কি? কারণ ❛কি ল গেম❜ এর ফলস সারভাইভাল ফ্যাক্টর ০.০৭ আর আসলটা ০.০০ বা একটু দয়া করে ০.০১! ওল্ড সিটি, নিউ সিটিতে জিশানের জয়জয়কার। একরোখা ২৯ বছরের এই ফ্যমিলি ম্যান সবাইকে অবাক করে দিয়ে জিতে যাচ্ছে কঠিন সব খেলা। আর একটু একটু করে এগিয়ে যাচ্ছে দীর্ঘ ২৪ বা ২২ ঘণ্টার মা র ণ খেলার দিকে। জেতা ভিন্ন অন্য উপায় নেই। নিজের শক্তি সামর্থ্য থাকলেও ভবিষ্যতের পৃথিবীর তথ্য প্রযুক্তি আর তাকে ব্যবহার করে শয় তানি কারবার করা লোকের অভাব নেই। প্রযুক্তিকে একেবারে খাপে খাপ ভাবে ব্যবহার করেছেন পাট্টা মিয়া। তবে কে এই পাট্টা? তার অতীত কী? কারণ কথায় বলে, ❛Villans are made not born❜ । শ্রীধরের শ্রীধর হওয়ার ঘটনা কী? মা র ণ খেলায় জিশান যেমন শত্রু পেয়েছে তার থেকে বেশি পেয়েছে বন্ধু। মনোহর সিং, রিমিয়া, গার্ড, পান্ডা, সুধাসুন্দরী, প্যাসকো কিংবা শেষ মুহূর্তে রউফ। টাকা, জৌলুস, ক্ষমতা আর উপভোগের মাঝে মনুষ্যত্বকে বিকিয়ে দেয়া দুই সিটির জনগণকে এক করে ফেলেছে এক জিশান। সেই একত্ব কি পারবে দুই সিটির এই আকাশ পাতাল তফাতকে গুড়িয়ে দিতে?
সময় বেশি নেই সামনেই শেষ খেলা শুরু। যাকে বলে, ❛খেলার নাম খু ন❜। শেষ কিস্তিতে কারা লড়বে জিশানের সাথে? ইতিহাস বদলে যাবে নাকি মৃ ত্যুর মিছিলে পাল চৌধুরী নামে আরেকটা নাম যোগ হবে?
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❝তেইশ ঘন্টা ষাট মিনিট❞ এবং ❝ষাট মিনিট তেইশ ঘন্টা❞ অনীশ দেবের ডিস্টোপিয়ান কল্পবিজ্ঞান কাহিনি। ২০০৪ সালে উপন্যাসের প্রথম খণ্ড প্রথম লিখেছিলেন তিনি। এরপর দ্বিতীয় খন্ড পর্ব আকারে পত্রিকায় প্রকাশ পায়। ২০১০ সালে প্রথম বই এবং ২০১৪ সালে দ্বিতীয় খণ্ড বই আকারে প্রকাশ পায়। আজ থেকে বিশ বছর আগেও তথ্য প্রযুক্তি এতটা উন্নত ছিল না। সে সময় বসে কয়েকশো বছর ভবিষ্যতের পৃথিবীর কল্পনা যেভাবে করেছেন লেখক সেটা সত্যিই প্রশংসনীয়। আর সবথেকে অবাক করা ব্যাপার সে সময় লেখক যে খেলাকে কেন্দ্র করে বা কল্পনা করে পুরো উপন্যাসের অবতারণা করেছেন তার ১৮ বা ১৭ বছর পর একই ধরনের এক সিরিজ এবং রিয়েলিটি শো এসেছিল। যাই হোক খুচরা কথা বাদ। উপন্যাস বিষয়ে বলি। প্লট সে সময়ের হিসেবে ইউনিক কোনো তর্ক নেই। লেখার গতি ছিল বেশ দ্রুত। বইটা পড়তে গিয়ে আমি বেশ অবাক হয়েছি। দিন যত যায়, যাচ্ছে র ক্ত মাংসের মানুষের আবেগ তত কমছে। তারা আবেগহীন, নির্মম হচ্ছে। তাইতো শত শত বছর পরের সেই নিউ সিটির মানুষগুলো খেলার নামে আরেকজনের মৃ ত্যু উপভোগ করে টাকা দিয়ে। আবার বাজিও ধরে। বর্তমানের আমরাও কি সেই পথেই যাচ্ছি না? এখন রাস্তায় কেউ বিপদে পড়লে আমরা এগিয়ে গিয়ে সাহায্য করা থেকে স্মার্ট ফোনে সে চিত্র ধারন করাকেই আসল কর্তব্য বলে মনে করি। এখনো টাকাই আমাদের শেষ কথা। টাকা দিয়ে সুখ কিনে নেই। তবে এই কেনা সুখে কি আমরা আসলেও সুখি? জিশান একটা উদাহরণ মাত্র। নষ্ট জং ধরে যাওয়া ভবিষ্যতে জিশান সবুজ এক আশার আলো। উপন্যাসের শুরু থেকে অর্ধেকের কিছু বেশি ঘটনা জিশান কেন্দ্রিক ছিল। এরপর সেটা ঘুরে অন্য তো চরিত্রের দিকেও লেখক নজর দিয়েছেন। তারই ফলে প্যাসকো, সুধাসুন্দরী, সুখারাম, মনোহর সিং কিংবা রিমিয়ার গল্প জানা গেছে। জানা গেছে চাল চুলোহীন পিলটুর গল্প। গুরুত্বপূর্ণ থেকে গল্পের খাতিরে আসা চরিত্রদের ব্যাক স্টোরি লেখক দারুণভাবে প্রকাশ করেছেন। তবে শুরুটা যেমন ২০০০ সিসি বাইকের মতো ছিল গল্প এগিয়ে দ্বিতীয় খন্ডে আসতে আসতে তার গতি অনেকটাই মিইয়ে গেছিলো। কিছুক্ষেত্রে আমার মনে হয়েছে লেখক ইচ্ছাকৃতভাবে লেখাকে টেনে বড়ো করেছেন। বর্ণনা দরকার না হলেও সেখানে বাড়তি আবেগের মিশেল দিয়ে গল্প বাড়িয়েছেন। যার সিংহভাগ ❝ষাট মিনিট তেইশ ঘন্টা❞ অংশেই পড়েছে। বিধায় দ্বিতীয় খন্ড পড়তে গিয়ে একঘেয়ে ভাব এসেছে কোথাও বিরক্তি ধরেছে। চাইলেই এক এক খন্ডে শেষ করে দেয়া যেতো। দ্বিতীয় বইয়ের সিংহভাগ অতীত ইতিহাস দিয়ে বর্তমানের সাথে সংযোগ করলেও অতীতের কপচানি অনেকটা ছোটো করে দিলেও মূল কাহিনীতে তেমন ফারাক পড়তো না। সাথে পাঠক হিসেবে ধৈর্যহারা হতে হতো না।
কিছু প্রযুক্তির ব্যবহার বর্ণনা বেশ দারুণ ছিল। বিশেষ করে পাখির মুক্তভাবে চলার মাঝেও ❛কন্ট্রোলড ফ্রিডম❜ এর কন্সেপ্টটা দারুণ ছিল সাথে অবশ্যই নির্মম ছিল। গেমের নিয়ম, গেমের বিস্তারিত গুলো নির্মম ছিল যাতে করে এই খেলার নিষ্ঠুরতাই পাঠকের চোখে ধরা দেয়। বারবার এটাই ভাবতে বাধ্য করে কী এক বিবেকহীন সময়ের দিকে আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। ফিকশনে জিশান ছিল কিন্তু বাস্তবের জিশান কে বা কারা?
চরিত্রের কথা বললে মূল দুইজন। একজন নায়ক আরেকজন খলনায়ক। খল নায়ককে লেখক মনের মাধুরী মিশিয়ে নির্মমতা দিয়েছেন। দিয়েছেন বিশ্রী গা জ্বালানো রসিকতার গুন। পাট্টার উত্থান ছিল অবাক করার মতো। জিশান চরিত্রটাও অবশ্যই দারুণ। এছাড়াও সাথে যেসব চরিত্র ছিল সবগুলোই তাদের অবস্থানে ঠিক ছিল।
উপন্যাসের শুরুটা আমার বেশ লাগলেও পরে গিয়ে একঘেয়েমির জন্য ভালো লাগার স্কেল নিচে নেমেছে। তবে সবথেকে বেশি হতাশ হয়েছি আমি সমাপ্তিতে। ওঠ ছেঁড়ি তোর বিয়া স্টাইলে কীভাবে উপন্যাসের লাগাম টেনে দিলেন লেখক বুঝলাম না। এত এত উত্তেজনা তৈরী করে শেষটা যেন হুট করেই দিলেন যেন লিখতে লিখতে হাতে ব্যথা হয়ে গেছে। আর লিখব না বলে সমাপ্তির টান দিয়ে দিলেন। শেষটা আশানুরূপ হয়নি বিধায় পুরো উপন্যাসকে খুব ভালো লেগেছে এই ট্যাগ দিতে পারলাম না।
শেষমেষ জিশান কি পেরেছিল অন্যায়ের এই শিকল ভেঙে দিতে? জানতে হলে তেইশ ঘন্টা ঊনষাট মিনিট ষাট সেকেন্ড অপেক্ষা করতেই হবে!