আবার সেই ঋজুদা, আবার সেই রুদ্র। এবারের অভিযান যে-জঙ্গলে, সেই অরণ্যের অধিষ্ঠাত্রী দেবীর নাম বনবিবি। বনবিবির বনে পদে পদে মৃত্যুভয়, ক্ষণে ক্ষণে আতঙ্ক, মুহূর্তে মুহুর্তে রোমাঞ্চ। যাকে ঘিরে এত রোমাঞ্চ-আতঙ্ক আর মৃত্যুভয়, সেই সোঁদরবনের বাঘের জন্যই এবারের এই দুঃসাহসী অভিযান। শীতকাল, তবু অবিরাম বৃষ্টি। ঘোর দুর্যোগ। প্রথম রাত্রে মোটরবোট নোঙর করা হল, সেখানে কাদায় বাঘের পায়ের অসংখ্য চিহ্ন। যে-কোনও মুহূর্তে বাঘ উঠে আসতে পারত মোটরবোটে। যে-কোনও একজনকে পারত নিয়ে যেতে। পরদিন সত্যিই একজনকে ধরে নিয়ে গেল বাঘটা। রাইফেল হাতে ঋজুদা একলা ঢুকে পড়লেন গহন জঙ্গলে। বহু সময় কেটে গেল, ঋজুদা ফিরলেন না। উদ্বেগে-উৎকণ্ঠায় অস্থির হয়ে কিশোর রুদ্রও ঢুকে পড়ল সেই মৃত্যুর জাল-ছড়ানো জঙ্গলে। সঙ্গী হল জেলে-নৌকোর এক ছোট্ট ছেলে। তারপর? ঋজুদা কি ফিরে এলেন? ফিরতে পারল কি কিশোর রুদ্র এবং তার কিশোর সঙ্গীটি? এক দুর্ধর্ষ কৌতুহলকর কাহিনী শুনিয়েছেন বুদ্ধদেব গুহ তাঁর এই নতুন শিকারভিত্তিক উপন্যাসে।
Buddhadeb Guha (Bengali: বুদ্ধদেব গুহ) is a popular Bengali fiction writer. He studied at the well-known St Xavier's College of the University of Calcutta.
His novels and short stories are characterized by their dreamy abstractness and romantic appeal. His essays reveal the soul of a true wanderer providing some of the most beautiful renditions of travel in Bengal. His love for forests and nature provide the background for many of his novels.
A highly successful chartered accountant by profession, and an accomplished musician, Guha is very urbane in his lifestyle. He was one of the first to create characters representing easy-going, upper middle-class modern Bengali families, whom readers could identify with, and that gave him instant popularity.
He is the recipient of many awards including Ananda Puraskar, 1976; Shiromani Puraskar; and Sharat Puraskar.
The Library of Congress has over fifty titles by him. His most famous novel, according to many, is Madhukori. It is considered a milestone in Bengali literature. He is also the creator of Rijuda, an imaginary character who moves about in jungles with his sidekick Rudra. The jungles that he wrote about were mainly in Eastern India.
সুন্দরবনে মানুষখেকো বাঘ শিকার করতে রুদ্র আর ঋজুদার অভিযান। শিকার-কাহিনী পড়তে উৎসাহ পাইনা। কিন্তু ঋজুদা আর রুদ্র তো কেবল শিকারী নয়। ওরা জঙ্গল ভালোবাসে, জঙ্গল আর জীব-জন্তু কে হৃদয় দিয়ে অনুভব করে। জঙ্গলের গল্পে শুধু জন্তু-জানোয়ার নয়, সেখানের স্থানীয় খেটে-খাওয়া মানুষের জীবন-যুদ্ধের একটা করুণ ছবিও যেন ফুটে ওঠে। যা কিছু মনকে বিষন্ন করে তাই-কি তবে ভালো লেগে যায়? অনেক সাধারণ একটা কাহিনীই বলতে হবে। তবু মনের চোখ-কান দিয়ে সুন্দরবনের গভীরে মোটরবোটে বসে জঙ্গলের রূপ দেখে-শুনে যে ভালো লাগল, সে ভালো লাগা সাধারন গল্পকে আর সাধারন থাকতে দিল কই!
আজ নয়, বহু-বহু বছর আগে এক বইমেলা থেকে কেনা হয়েছিল এই ছোট্ট বইটা। তাতে ছিল চমৎকার সব অলংকরণ। দারুণ প্রচ্ছদে আর অদ্ভুত বিন্যাসে ছিল এক অজানা জল-মাটি-বাতাসকে ছোঁয়ার চ্যালেঞ্জ। আর ছিল রোমাঞ্চ। এখন লেখাটা পড়লে খুব সম্ভবত ঋজু বোসকে খালি হাতে সুন্দরবনে ছেড়ে আসার ইচ্ছে হবে— মানে এইরকম পশ্চাৎপক্ক যেকোনো চরিত্রেরই ওইরকম পরিণতি হওয়া উচিত। তবে ছোটোবেলায় এঁরাই মুগ্ধ করতেন। তাই এইসব দাদা আর কাকা-রা তখন মডেল ছিলেন। এখনকার প্রজন্মের হাতে এঁরা পড়লে এঁদের খবর ছিল। যাইহোক, হাতে কিছুটা সময় থাকলে পড়ে নিয়েন আর কি। না পড়লেও ক্ষতি নাই।
মায়ের প্রচুর আপত্তি ছিল রুদ্রকে আসতে দিতে, কিন্তু বাবার পারমিশানে মায়ের অনিচ্ছা ওভাররুল্ড হয়ে গেছিল। অবশ্য ঋজুদার সঙ্গে না এলে বাবাও সুন্দরবনে আসতে দিতেন কিনা সন্দেহ। ক্যানিং থেকে রাতে বোটে রওনা হওয়া হয়েছিল। সারারাত বোট চালিয়ে পরদিন দুপুরে চামটার কাছে এসে নোঙর করেছিল ওরা। সারেঙ ও মাল্লাদের বিশ্রাম ও সকলের খাওয়া-দাওয়ার জন্যে। তারপর বিকেল-বিকেল বোট ছেড়ে গভীর রাতে ছোট বালিতে এসে পৌঁছেছিল ওরা।
কিন্তু এসে থেকে বোটেই আটকে আছে। শুধু ঝুম বৃষ্টি, বাতাস প্রতিকূল পরিবেশ। তবে এমন পরিবেশে জমিয়ে খাওয়া দাওয়া কিন্তু বেশ জমে।তাই ঋজুদা রুদ্রকে হুকুম দিলো, "গদাধরকে বল তো চায়ের জল চড়াবে। আর হ্যাঁ, সঙ্গে পাঁপড় ভাজতে বল। তারপর বলল, আজ রাতে ভুনা-খিচুড়ি পেলে কেমন হয় বল তো? বাদাম কড়াইশুঁটি ছাড়িয়ে, মুগের ডালের খিচুড়ি, একটু ঘন করে, সঙ্গে ডিমের বড়া, পেঁয়াজি আর শুকনো-লঙ্কা ভাজা করবে!"
রুদ্র আর ঋজুদা জমিয়ে গল্প করছিল। হঠাৎ বনের গভীর থেকে রিয়্যাল রয়েল বেঙ্গল টাইগার ডেকে উঠল হা-হুঁম্ করে। সুন্দরবনে নদী-নালা-ভরা বর্ষণসিক্ত গা-ছমছম জঙ্গলের মধ্যে যে বাঘের ডাক শোনেনি, জীবনে একটা পরম অভিজ্ঞতা থেকে তাকে বঞ্চিত থাকতে হয়েছে। ঋজুদার চাকর গদাধর বললো, বাবু, মামা যে বড় ডাকাডাকি করে। আজ একটু রাতে নামলি হত না? মামা কি যদি পাওয়া যায়?
ঋজুদা বললো, দুর্যোগ না কমলে নামা ঠিক হবে না গদাধর। এইরকম আবহাওয়ায় মাংসাশী জানোয়ারদের খুব সুবিধে। অন্য জানোয়ারদের সজাগ কান এই হাওয়া আর বৃষ্টির শব্দে কাজে লাগে না–আর এই-ই সুবিধে হিংস্র জানোয়ারের। জঙ্গলে তো আর খালি চোখ দিয়ে কোনও কাজ হয় না–কান সেখানে মস্ত বড় জিনিস। কানে কিছু শুনতে না পেলে রাতের অন্ধকারে এই আবহাওয়ায় জঙ্গলে নেমে খামোখা বাঘের মুখের খাবার হয়ে লাভ নেই। তারপর একটু চুপ করে থেকে বললো, বাঘের সঙ্গে মোলাকাত হবে, ভয় নেই। তোর গদাধর। তোর বাবার খুনের বদলা নেব। আমি এখানে খিচুড়ি খেয়ে মজা করতে আসিনি।
হ্যাঁ ঠিক তাই, ঋজুদার কোলকাতার ফ্ল্যাট পরম যত্নে আগলে রাখা এই চাকরটির বাবাকে বাঘে ধরে নিয়ে গেছে। গদাধরের মনকে শান্ত করতে এবার ঋজুদার সুন্দরবনে আগমন। বাঘ শিকার করে বেচারাকে একটু স্বান্তনা দিতে চায় সে। এবং ঋজুদার সাথে রুদ্রর এমন বনে জঙ্গলে ঘুরতে কোনো আপত্তি নেই। বড় ভক্ত সে ঋজুদার। তাই এখানে এসে ওর নিজের কাছে নতুন সব অভিজ্ঞতা হচ্ছে। বনবিবির এই বন বড়ই রহস্যময়।
অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি এই সুন্দরবন। রুদ্র যে দিকে তাকাচ্ছে মুগ্ধ হয়ে ডুবে যাচ্ছে গভীরে। ঋজুদার থেকেও মজার মজার শিকারের গল্প শুনছে। ঋজুদা ওকেও একটা ব*ন্দুক দিয়ে রেখেছে আত্মরক্ষার জন্য। দেখা যাক শেষমেশ ঋজুদা গদাধরের বাবার জন্য প্রতিশোধ নিতে পারে কী না।
🥯পাঠ প্রতিক্রিয়া 🥯
ছোট্ট এক কিশোর উপন্যাস। ঋজুদা সিরিজ আগে পড়া হয়নি এবং বলা যায় এই বইটা থেকে শুরু।বুদ্ধদেব গুহর লেখনী আপনাকে মুগ্ধ করবে যদি আপনার কিশোর উপন্যাস পড়ার অভ্যাস থাকে। এত সুন্দর করে বর্ণনা দেন তিনি আমার কাছে বরাবর খুব ভালো লাগে। এই বইয়ে আমি যদি রেটিং এ মার্ক যা দেই মনে রাখবেন অর্ধেকের বেশি মার্ক শুধু বুদ্ধদেব বাবুর দারুন বর্ণনার ভাষার জন্য। মানে মশাই সুন্দরবন যেন চোখের সামনে উঠে এসেছিল।
এই ধরনের বই এর আগে পড়েছিলাম ওনার লেখা "ঋভুর শ্রাবণ"। এবং এই বইটিও বর্ণনাশৈলী এত চমৎকার যে কিশোরদের জন্য বইটি দারুন এক সাজেশন। আমার কাছে কেন জানি কিশোর উপন্যাস ভালো লাগে। প্রচুর কিশোর উপন্যাস পড়ি এখনো। এই ধরনের বই ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি দিনে গরম খিচুড়ির সাথে আমার কাছে আরো আকর্ষণীয় লাগে।
একটু ছিমছাম, মায়াময় বর্ণনা কিংবা প্রশান্তিময় প্রাকৃতিক পরিবেশের কথা বইটিকে কিন্তু বোরিং করবে না বরং পড়া শেষে ভালো লাগা কাজ করবে। কিশোর উপন্যাস আসলে এরকম হলে ভালো লাগে। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে এখানে আপনি উত্তেজনা তেমন পাবেন না গল্পের প্লটে। কিন্তু পড়তে ভালো লাগবে যদি প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নিয়ে আগ্ৰহী থাকেন।
মাঝে মাঝে এমন কিছু বই পড়া উচিত যা খুব আহামরি কিছু না কিন্তু একটা ভালো অনুভূতি দেবে। "ঋভুর শ্রাবণ" আমার ভালো লেগেছিল। এটাও ভালো লেগেছে। পরবর্তী দেখি কী পড়া যায়।
ঋজুদা আর রুদ্রর সুন্দরবন অভিযানের গল্প। কিন্তু আদতে না আছে সুন্দরবনের কোন বর্নণা, না আছে সুন্দরবনের বাঘ সম্পর্কে কোন কথা। শিকার, মূলত সুন্দরবনে বাঘ শিকার সম্পর্কে যাদের পড়াশোনা আছে, তারা সহজেই বুঝতে পারবেন লেখক এই বইতে ফাঁকিবাজি করেছেন।
আনন্দমেলার অবদান হিসেবে বাংলা সাহিত্যে আত্মীয়ের অভাব নেই। ফেলুদা, কাকাবাবু, মিতিন-মাসি। দাদাদের পাল্লা কিন্তু বরাবরই ভারী। ফেলুদার পাশাপাশি ঘনাদা, টেনিদা... এবং ঋজুদা। গোয়েন্দাদের যেমন মানুষ শিকার, তেমনই ঋজুদার টেরিটোরি হল আসল শিকার। বনজঙ্গলের পশুদের ধাওয়া করা। এই প্রথম কোন ঋজুদা কাহিনি পড়া গেল। ঋজু-রুদ্র জুটির শিকার অভিযান সিরিজ। আলোচ্য কাহিনিটি সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে। একটি প্রতিশোধগ্রহণের অভিযান, বাঘ শিকারের। মাঝে কিছু গল্প-বলা, স্মৃতিচারণা, বনের মানুষ/শহরের মানুষ ফিলোজফি ইত্যাদির মধ্যে দিয়ে মূল অভিযান। সুন্দর, মৃদুমন্দ গতি, মার্মিক উপস্থাপন। লেখকের নিজের শিকার অভিজ্ঞতা অনেকাংশের রসদ। তবে ব্যাপার হল এই সিরিজ বছরে এক-দুইবার পড়ার মত���। গোগ্রাসে পরপর গিললে কিছুদূর গিয়েই একঘেয়ে লাগবে কারণ পশুদের টেরিটোরিতে মানুষের মতন অগুনতি মুখোশের সমাহার নেই যে চূড়ান্ত বৈচিত্র্যের আভাস পাওয়া যাবে বারবার।
সুন্দরবনের মানুষদের জীবনযাত্রা খুব ছোট্ট একটি অংশ এত সুন্দর ভাবে তুলে ধরা হয়েছে যা বলার নয়। আর সুন্দরবনের বর্ণনাটি এত সুন্দর দেয়া হয়েছে যেন মনে হচ্ছে এক্ষুনি ছুট্টে একবার চলে যাই সুন্দরবনকে ওই ভাবেই দেখার জন্য।
This entire review has been hidden because of spoilers.