Jump to ratings and reviews
Rate this book

বিপুলা পৃথিবী

Rate this book
নবীন রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের মুহুর্তে আনিসুজ্জামানের এ আত্মজীবনীর সূচনা। এর পর তা ছড়িয়ে পড়েছে এদেশের ইতিহাসের তিনটি দশকের বিস্তৃত পটভূমি জুড়ে। গবেষক আনিসুজ্জামান একদিকে বিদ্যায়তনের অন্বেষণে নিবিষ্ট । অন্যদিকে এই উত্থান-পতনময় সময়ের নানা কর্তব্যের আহবানে নাগরিক আনিসুজ্জামানের জীবন মুখর। তার অন্তরঙ্গ স্মৃতিকথা এগিয়ে চলেছে সমান্তরাল এ দুই ধারার ভেদ ঘুচিয়ে দিয়ে। ইতিহাসের বহু ঘটনা তিনি দেখেছেন ভেতর থেকে। বহু উদ্যোগে সক্রিয় থেকেছেন তিনি নিজে । দেশে ও বৃহত্তর বাংলা ভূখণ্ডের রাজনীতি, সমাজ ও সংস্কৃতিতে এ সময়ের ইতিহাসের যারা নায়ক, তিনি তাদের সংস্পর্শে এসেছেন। নিবিড় সান্নিধ্য ও বন্ধুত্ব পেয়েছেন অনেকের। এ আত্মস্মৃতি তাই শুধু আনিসুজ্জামানের নিজেরই উন্মোচন নয়, এ আত্মস্মৃতি নবীন এক রাষ্ট্রের অন্তরঙ্গ সামাজিক উন্মোচন। আনিসুজ্জামানের কৌতুকপ্রিয় দৃষ্টি, ভারসাম্যপূর্ণ মন ও প্রাঞ্জল গদ্য এ আত্মস্মৃতিকে সুষমা দিয়েছে।

576 pages, Hardcover

First published February 1, 2015

9 people are currently reading
104 people want to read

About the author

Anisuzzaman

69 books12 followers
Anisuzzaman was a Bangladeshi academic of Bengali literature. He was an activist who took part in the Language Movement (1952), participated in Mass Uprising (1969), and took part in the Bangladesh Liberation War (1971).

He was a member of the Planning Commission to the Government of Bangladesh during the Bangladesh liberation war and a member of the National Education Commission set up by the government after liberation. He was inducted as a National Professor by the Government of Bangladesh in 2018.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
7 (16%)
4 stars
12 (28%)
3 stars
17 (40%)
2 stars
4 (9%)
1 star
2 (4%)
Displaying 1 - 11 of 11 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,650 reviews418 followers
July 17, 2021
বিপুলা পৃথিবী অথবা বিপুল অপচয়।

স্মৃতিকথা শুরু হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের অব্যবহিত পর থেকে।লেখক দেশের গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক ঘটনাবলি নিবিড়ভাবে প্রত্যক্ষ করায় ও নিজেও সংবিধান রচনার সাথে যুক্ত থাকায় বইয়ের প্রথম ৭০/৮০ পাতা বেশ আকর্ষণীয়। এরপরেই ছন্দপতন। সন,তারিখ,ঘটনা সব আছে কিন্তু তাতে নেই প্রাণ।শেখ মুজিব ও চার নেতার মৃত্যু,সেনা অভ্যুত্থান, জিয়া ও এরশাদের শাসনামলের প্রত্যক্ষদর্শী তিনি অথচ সবকিছুর ভাসাভাসা বর্ণনা দিয়েছেন;কোনো বিশ্লেষণ বা অন্তর্দৃষ্টি নেই।
ব্যক্তিগত জীবনের ক্ষেত্রেও কোথায়,কার সাথে,কখন,কই বেড়ালেন,কী করলেন তার বর্ণনা দিয়ে বই বোঝাই।তাঁর জীবনদর্শন,প্রজ্ঞা,আন্তর অভিজ্ঞতার কোনো চিহ্ন বইতে নেই।কোনো মানে হয় এ বই পড়ার?
কয়েক বছর আগে বিপুলায়তন অন্তঃসারশূন্য এ বই পড়তে যেয়ে আমার যে পরিমাণ সময় ও শ্রমের অপচয় হয়েছিলো,তা মনে পড়লে এখনো খারাপ লাগে।
Profile Image for Shadin Pranto.
1,470 reviews560 followers
July 21, 2022
প্রয়াত জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের আত্মকথার দ্বিতীয় খণ্ড 'বিপুলা পৃথিবী'। ওনার 'কাল নিরবধি' পড়ে সন্তুষ্ট হইনি। বিপুল সাইজের 'বিপুলা পৃথিবী' পাঠের অভিজ্ঞতা ইতিবাচক নয়।

'কাল নিরবধি' শেষ হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধের আগে। এরপর 'আমার একাত্তর' বইতে স্বাধীনতা সংগ্রামের সময়টুকু লিপিবদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের সমাপ্তি এবং স্বাধীন বাংলাদেশের সূচনার মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছে 'বিপুলা পৃথিবী'।

দেশ ১৬ তারিখ হানাদারমুক্ত হলেও তখনই মুজিবনগর সরকার দেশে ফেরেনি। ২২ ডিসেম্বর কলকাতা থেকে তাজউদ্দীনসহ বাকি নেতৃবৃন্দ ফিরতে শুরু করেন। তখনই ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন আনিসুজ্জামান। পথে পথে ধ্বংসযজ্ঞের চিহ্ন। যশোরে পৌঁছে আশ্রয় নিতে হলো সার্কিট হাউজে। খুলনার যেতে পারলেন না। তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বড্ড বেহাল দশা দেখে যশোর মুক্তিবাহিনির ক্যাম্পের দায়িত্বে থাকা ক্যাপ্টেন নুরুল হুদা জানালেন তিনি মেজর জলিলকে গ্রেফতার করতে এসেছেন। একথা শুনে আনিসুজ্জামান লিখেছেন,

' চমকে উঠলাম। মাত্র সাতদিন হয় যুদ্ধে আমরা জয়ী হয়েছি। এরইমধ্যে একজন সেক্টর কমান্ডারকে বন্দি করতে বলা হয়েছে তার অধস্তন সামরিক কর্মকর্তাকে! ক্যাপ্টেন হুদা জানালেন, মেজর জলিল প্রধান সেনাপতির আদেশ অমান্য করায় ১০/১১ তারিখেই এই আদেশ হয়েছে। '

অনেক বইতে লেখা মেজর জলিল ভারতীয় বাহিনির লুটপাটে বাধা দেওয়ার কারণে ভারতীয় কর্তৃপক্ষ তাঁকে আটক করে। আবার, এখানে জানা যায় ওসমানী নিজে মেজর সাহেবকে বন্দি করার হুকুম দিয়েছেন। ঠিক কোন নির্দেশ জলিল মানেননি তা উল্লেখ থাকলে বুঝতে সুবিধা হতো।

দেশের একটি বড় অংশ মনে করে, ভারতীয় বাহিনি মুক্তিযুদ্ধের পর ব্যাপক জিনিসপত্র নিজ দেশে নিয়ে যায়। আবার, অপরপক্ষ জোরগলায় দাবি করে তারা ছিল পূতপবিত্র। কোনো 'লুটপাটের' সাথে তাদের সংশ্লিষ্টতা নেই। আনিসুজ্জামানের আত্মকথা জানায়,

' খুলনায় নতুন জেলা প্রশাসক কামাল সিদ্দিকীর সঙ্গে দেখা হলে দুটি অভিযোগ শুনতে পেলাম। একটি মেজর জলিল ও তার মুষ্টিমেয় সহযোদ্ধার বিরুদ্ধে অবাঙালিদের সম্পত্তি লুটপাট ও অবাঙালি মেয়েদের প্রতি অত্যাচারের, অপরটি ভারতীয় সেনাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের সম্পদ-অপহরণের। '

কামাল সিদ্দিকীর কথাকে আমাদের গুরুত্ব দিতে হবে। তিনি মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা। মুজিবনগর সরকারে কাজ করেছেন। তাই নিজে মুক্তিযোদ্ধা হয়ে অপর মুক্তিযোদ্ধা মেজর জলিলের বিরুদ্ধে মিথ্যা কথা বলার কারণ দেখি না। দ্বিতীয়ত, কামাল সিদ্দিকী দাবি করেছেন ভারতীয় সেনাদের লুটপাট কথা সত্য এবং তিনি নিজে খোদ ইন্দিরা গান্ধিকে চিঠি লিখে ভারতীয় সেনাবাহিনির লুটপাট থামানোর অনুরোধ করেছিলেন! অর্থাৎ এটি পরিষ্কার, ভারতীয় বাহিনি কর্তৃক এখানে লুটপাটের ঘটনা ঘটেছিল।


বঙ্গবন্ধু দেশে ফিরলেন। দায়িত্ব তার অনেক।  কিন্তু ততদিনে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অনেক বদলে গেছে। আনিসুজ্জামান দেখলেন ঢাকা শহরে প্রকাশ্যে লোকে অস্ত্র নিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে। দোকানপাট লুট হচ্ছে। পুলিশের নিয়ন্ত্রণ নেই। থানায় যোগাযোগ করলে জানা যায়, পাঠানোর মতো পর্যাপ্ত ফোর্স তাদের নেই। একদিন  বিকেলে সুফিয়া কামালের বাসায় গিয়ে দেখলেন পার্শ্ববর্তী আধা অবাঙালিদের বাসা লুটপাট হচ্ছে। অস্ত্রধারীদের পরিচয় জানতে চাইলে তারা নিজেদের মুক্তিযোদ্ধা দাবি করল। আনিসুজ্জামান লিখেছেন,

' যখন আমি তাদেরকে বললাম আমার সঙ্গে নিকটবর্তী মুক্তিযোদ্ধা-ক্যাম্পে যেতে, তারা বললো, আমাদের কাজ আমরা করছি, আপনি যেখানে ইচ্ছা যেতে পারেন। '

সত্যিই অস্ত্রধারীরা মুক্তিযোদ্ধা ছিল কিনা - এখন জানার উপায় নেই। নিশ্চয়ই কোনো গবেষক তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে লিখে জানাবেন মুক্তিযোদ্ধাদের এসব কর্মকাণ্ডের সত্যাসত্য।

মুজিববাহিনির মণি ও সিরাজুল আলম খান গ্রুপের মতদ্বৈততা ছিল। তবু তারা একত্রে অস্ত্র সমর্পণ করল। সেদিনই প্রথমবার শোনা গেল নয়া স্লোগান 'মুজিববাদ জিন্দাবাদ'। আনিসুজ্জামানের স্বীকারোক্তি,

' মুজিববাদ বলতে যে কী বোঝায়, তা আমার জানা ছিল না ; দেখা গেল অনেকেরই জানা নেই। '

পাকিস্তান আমলেই ঢাবি ছেড়ে চবিতে যোগ দিয়েছিলেন আনিসুজ্জামান। দেখেন তার বাসার অনেক মালপত্র খোয়া গেছে। কিছু জিনিসপত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের কতিপয় কর্মচারী লুটপাট করেছিল। চৌকি যে নিয়েছিল সে জানাল, পাছে লুঠ হয়ে যায় সেজন্য সে নিজের কাছে রেখেছে। এই চৌকি আনিসুজ্জামান কোনোদিন ফেরত পাননি এবং পরবর্তীতে চৌকির 'হেফাজতকারী' কর্মচারী ইউনিয়ন নেতা হিসেবে আবির্ভূত হয়।

বিজয়ের পর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘাঁটি করেছিল বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল। তারা ফিরে যাওয়ার সময় ট্রাকে করে শ্রেণিকক্ষের আসবাবপত্র, টাইপরাইটার ও টেলিফোন নিয়ে যায়। এই সেনাদলের প্রধান ব্যক্তিটি পরবর্তীতে রাজনীতিবিদ বনে যান এবং মন্ত্রির পদ অলঙ্কৃত করেন।

পরিকল্পনা কমিশনের সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল '৭১ সালের মার্চে যে যে-ক্লাসে পড়ত, ১৯৭২ সালে তাকে সেখানেই পড়তে হবে। প্রস্তাবটি মন্ত্রিপরিষদের অনুমোদনের অপেক্ষায় ছিল। কিন্তু ২২ জানুয়ারি ৭২ সালে হঠাৎ শিক্ষামন্ত্রী ইউসুফ আলী অটোপাসের ঘোষণা দেন। পরে আনিসুজ্জামান জানতে পারেন, এমন কোনো সিদ্ধান্ত মন্ত্রিপরিষদ নেয়নি। স্রেফ নিজের ইচ্ছায় অটোপাসের কথা ঘোষণা করেন শিক্ষামন্ত্রী। রাজনৈতিক কারণে সরকারের অনিচ্ছা থাকা সত্ত্বেও এই সিদ্ধান্ত মেনে নিতে হয়। যা পরবর্তীতে দেশের শিক্ষাঙ্গনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করে।

মুজিবনগর সরকারে যারা ছিলেন, তারা দেশে ফিরে অন্য সহকর্মীদের সাথে রূঢ় ব্যবহার করেছিল বলে অভিযোগের কথা লিখেছেন আনিসুজ্জামান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের মুনীর চৌধুরী, মোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী শহিদ হন এবং এরপর
জ্যেষ্ঠ শিক্ষক ছিলেন কাজী দীন মোহাম্মদ। কিন্তু তিনি তখন পাকিস্তানিদের দালালি করার কারণে কারাবন্দি। বিভাগের সভাপতি কে হবেন তা নিয়ে আহমদ শরীফ ও নীলিমা ইব্রাহীমের মধ্যে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়। জ্যেষ্ঠতা বিবেচনা করলে আহমদ শরীফ সিনিয়র। কিন্তু নীলিমা ইব্রাহীমের রয়েছে শক্ত রাজনৈতিক খুঁটির জোর। তার মেয়ের স্বামী আওয়ামী লীগের প্রাদেশিক সদস্য  রাজিউদ্দীন রাজু। তিনি সরকারি দলের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করলেন এবং হলেন বিভাগের সভাপতি। তখন আহমদ শরীফ ক্ষুব্ধ হয়ে আওয়ামী লীগবিরোধী হিসেবে আবির্ভূত হন। কার্যত বাংলা বিভাগ শরীফপন্থি বনাম নীলিমা ইব্রাহীমপন্থিতে ভাগ হয়ে যায়।

ঢাবির বাংলা বিভাগে অধ্যাপকের পদ খালি হলে অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাকের সুপারিশ ও ভরসায় আনিসুজ্জামান আবদেন করেন। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতির হালচাল দেখে তাকে ক্ষান্ত হতে হয়। দীর্ঘ সময়ের জন্য ফিরে যান সেই চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে। পুরো বই জুড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক রাজনীতির খণ্ড খণ্ড চিত্র পাওয়া যায়। এই রাজনীতির নোংরামি জাতীয় রাজনীতির চাইতে কম নয়। বরং বেশি।

বাংলায় সংবিধান লেখার কাজে বন্ধু ড. কামালকে অনেক সহায়তা করেছেন আনিসুজ্জামান। সংবিধান প্রণয়নের সময় সরকারি দলের অনেক সদস্যই কিছু কিছু অনুচ্ছেদের বিরোধিতা করেছেন। যেমন: ৭০ অনুচ্ছেদের বিপক্ষে অবস্থান নেওয়া গণপরিষদ সদস্যদের বুঝিয়ে রাজি করান বঙ্গবন্ধু। কেননা পাকিস্তান ও ব্রিটিশ আমলে দলভাঙা-গড়া দেখার কুৎসিত স্মৃতি তাকে উৎসাহিত করেছিল দল থেকে চলে যাওয়া কিংবা দলের বিরুদ্ধে ভোটদানকে নিরুৎসাহিত করতে।

শিক্ষা কমিশন প্রথমে একমুখী শিক্ষায় জোর দিয়েছিল। মাদরাসা শিক্ষাকে বন্ধ করা নিয়ে আলোচনা হলেও কিছু বিচিত্র কারণে তা সম্ভব হয়নি। বিরোধিতা করেছিলেন আবুল ফজল ও মওলানা ভাসানীর মতো মানুষ।

'৭৩ সালের ৭ মার্চ দেশে প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। বেশ কিছু শিক্ষকসহ চট্টগ্রামে কেন্দ্রে গিয়ে দেখেন,

' আমাদের ভোট দেওয়া হয়ে গেছে। '

তাজউদ্দীনের সাথে বঙ্গবন্ধু দূরত্ব বেড়েই চলছিল। বঙ্গবন্ধুর সকল কাজে সমর্থন দিতে পারছিলেন না তাজউদ্দীন। আবার, মুক্তিযুদ্ধকালীন ভূমিকা জানানোর সুযোগ হচ্ছিল না তার। অতঃপর তাজউদ্দীনের অসম্মানজনক  বিধায় ও মৃত্যু।

আনিসুজ্জামান সাহেব পড়াতেন কখন বুঝতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজনীতিতে অংশগ্রহণ এবং দেশে-বিদেশে  অসংখ্য সভা-সমাবেশ যোগদানের বর্ণনায় পুরো বই ভর্তি। কোনো জাদুবলে সকল সরকারের আমলেই তার দেশে-বিদেশে ঘোরাঘুরি চলতো। এমনকি বিএনপি আমলেও তিনি নজরুল ইন্সটিটিউটের কর্তা এবং সরকারি প্রতিনিধিদলের সদস্য হয়ে ভারত সফরে গিয়েছেন।

ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় কর্তাব্যক্তি ছিলেন তিনি। গোলাম আজমের বিচারের দিনের স্মৃতিচারণ করে লিখেছেন, বিচারে গোলাম আজমকে ফাঁসি দেওয়ার কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বরং এই কথা জাহানারা ইমাম মুখ ফসকে সাংবাদিকদের বলে ফেলেন। আর, পরবর্তীতে লোকে এটাকেই সত্য ধরে নেয়।

আনিসুজ্জামান বুদ্ধিমান মানুষ ছিলেন। অনেক তথ্য তিনি সরাসরি দেননি। ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন। নিশ্চয়ই পাঠক যা বোঝার বুঝে নেবে।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books356 followers
September 14, 2018
নামের সঙ্গে বইয়ের মিল এই যে, কেবল দেশ নয়, বিদেশের কথাও আছে। অর্থাৎ পুরো পৃথিবীর যে অংশগুলোকে লেখক নিজে দেখেছেন, তার কথা লিখেছেন।

বইয়ের শুরু ১৯৭২ থেকে এবং ২০০০ সালে সমাপ্তি। এর মাঝে ঘটে যাওয়া ঘটনা সমূহ লেখক যেভাবে যেটুকু দেখেছেন, তা নিয়ে এই বই। তবে একথা ভাবা ভুল হবে যে লেখক এই সময়ের ঘটনাবলী বিশ্লেষণ করেছেন, কিংবা প্রচলিত অনেক ভ্রমের সংশোধন করেছেন।

ড. আনিসুজ্জামান দীর্ঘকাল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেছেন। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সাহচর্যে এসেছেন এমন অনেক মানুষের যাদের আজ আমরা একনামে চিনি। তারা কেউ তার সহকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এমনকি প্রতিপক্ষও। সে সব মানুষের সাথে তার সম্পর্ক, স্মৃতি তুলে ধরেছেন। কর্মসূত্রে ভ্রমণ করেছেন অনেক দেশ। সেসব ভ্রমণের কথা লিখেছেন।

স্মৃতিকথা হিসেবে সুখপাঠ্য বলা চলে। কিন্তু যেন এই বই পাঠককে খুব একটা ভাবায় না। লেখক নিজেই কোন ঘটনার খুব গভীরে যাননি। দুটো রাজনৈতিক হত্যাকান্ড, স্বৈরাচার পতন নিয়ে কেবল উল্লেখ করেছেন, এর বেমি কিছু না। হয়তো তিনি চাননি। তবে পাঠকের চাওয়া থাকা স্বাভাবিক।

বইটা কোন মাস্টারপিস না। অনেক আগ্রহ নিয়ে পড়া শুরু করলে আশাহত হতে হবে। তবে জানা যাবে কালক্রমিক বহু ঘটনা। বাংলাদেশের সূচনার রাজনীতির বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দেশের দুটো বিশ্ববিদ্যালয় এবং তার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের কথা।
Profile Image for Ashik.
220 reviews40 followers
December 1, 2024
২০ সালের দিকে বইটা পড়েছিলাম।
আজ বইপত্র ঘাটতে গিয়ে চোখে পড়লো, মনে হলো এই বইটা সম্পর্কে দুইটা কটুবাক্য বলা জরুরি।

কুৎসিত একটা বই, এতগুলো পৃষ্ঠার মধ্যে কাজের কিছুই নেই, জানার মতো কিছুই নেই। দেশের ক্রিটিকাল সময়ে, অনেকগুলো পটপরিবর্তনের সাক্ষী ছিলেন তিনি, দেখেছেন অনেক কাছে থেকেই সবকিছু। সেসব কিছুই লেখেননি, ৭২ থেকে ৭৫ এর কাহিনি বলেছেন আধা পৃষ্ঠায়।
কোথায় কোথায় ঘুরলেন, কী কী পানীয় গলায় ঢাললেন, জাপানি খাবারে ঝাল নুন কেমন সেসব দিয়ে ভর্তি বিপুল একটা ফালতু বই বিপুলা পৃথিবী।

বইয়ের অভাবে ১০ বছর কিছু না পড়ে থাকলেও এই বই কারো পড়া উচিত না।
Profile Image for Khalid Hasan Siam.
57 reviews19 followers
January 9, 2023
আনিসুজ্জামানের এই বইয়ে স্থান পেয়েছে বাহাত্তর থেকে ২০০০ সাল অব্দি সময়কালের আখ্যান। একাত্তরের এপ্রিলেই ছেড়েছিলেন দেশ। তারপর যখন দেশ স্বাধীন হয় তখন দেশে ফেরার তাড়া, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়- নিজ কর্মক্ষেত্রে ফেরার আকুতি। চট্টগ্রামে ফিরে তিনি নতুন করে সংসার পাতলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত এখানে অতটা মানবসম্পদের ক্ষতি হয়নি। এরমধ্যেই গণপরিষদের অধিবেশন শুরু হলো, নতুন দেশের যে একটা নতুন সংবিধান লাগবে। সংবিধান লেখার ভার পড়লো কামাল হোসেনের উপর। কামাল হোসেন দেশ বিদেশ ঘুরে সংবিধান খসড়া সংবিধান লিখতে লাগলেন আর অনুবাদের দায়িত্ব দিলেন আনিসুজ্জামানকে। আনিসুজ্জামান প্রতি মাসে পনের দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকায় আসতেন অনুবাদের কাজ করতে।


দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে থেকেই শিক্ষা ব্যবস্থার ভবিষ্যৎ কী তা নিয়ে একটা আলোচনার সৃষ্টি হয়। মাদ্রাসা শিক্ষা থাকবে কি না তা নিয়েও এক প্রকার বিতর্কের জন্ম নেয়। তখন সরকারের পক্ষ থেকে শিক্ষা ব্যবস্থাকে ঢেলে সাজাবার জন্য কমিশন গঠন করা হয়। প্রায় শিক্ষাবিদই চাচ্ছিলেন যেন যুদ্ধের সময়টাকে হিসাব করে ছাত্রদের নতুন ক্লাসে উঠানো না হয়। অর্থাৎ ১ মার্চ ১৯৭১ সালে যে ছেলেটা ক্লাস সিক্সে ছিল সে ১ মার্চ ১৯৭২-এ সিক্স থেকেই আবার পড়াশোনা শুরু করবে। এই এক বছরের ক্ষতিটা সবার জন্যই প্রযোজ্য হবে জাতীয় ক্ষতি হিসেবে। কিন্তু এক উৎসাহী নেতা তার ভাষণে বলে ফেলে যে সরকার ছাত্রদের অটো পাশ দেওয়ার কথা চিন্তা করছে। এই বক্তব্য ছাত্রদের মধ্যে ব্যাপকভাবে আলোড়ন তোলে এবং পরবর্তীতে সরকার বাধ্য হয়ে অটো পাশের ব্যবস্থা করে। এই অটো পাশের ফল হয়েছিল ভয়াবহ, বাহাত্তরের মার্চেই ছাত্ররা শর্ট সিলেবাসে পরীক্ষা নেয়ার দাবি জানায়!


চবিতে আনিসুজ্জামান ছিলেন এ এফ রহমান হলের প্রভোস্ট। তিনি মেধার ভিত্তিতে ৬০% সিটের বরাদ্দ দিতেন। বাকি ৪০% ছিল বিভাগের অধ্যক্ষের সুপারিশের জন্য, যেন দূরদূরান্ত থেকে আগতরা বিশেষ বিবেচনায় সুযোগ পেতে পারে। তিনি নিজের বিবেচনার জন্য হাতে কোনো সিট রাখেননি। এজন্য অনেক বন্ধু ও পরিচিতজনের অনুরোধ রাখতে পারেননি! আজকাল দেখি হলের সিট পেতে বড় ভাইদের হস্তক্ষেপ ���াগে। প্রভোস্টরা যেন সেখানে পুতুলমাত্র। সিট নিয়ে আমার নিজেরও আক্ষেপ জড়িত। বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বের ইতিহাস পড়ার সময় এক প্রকার দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসে!


আনিসুজ্জামান বিভিন্ন দেশ থেকে কনফারেন্সের জন্য আমন্ত্রিত হতেন। একবার কুয়েত যাওয়ার আমন্ত্রণ পেলেন। তো উপাচার্য বলে দিলেন জয়তুনের তেল নিয়ে আসতে ওখান থেকে। মানে অলিভ অয়েল! সেখানে তাঁর ছাত্রকে দিয়ে তিনি এক আধা গ্যালনের কন্টেইনার তেল যোগাড় করে ফেললেন। চবিতে এসে যখন সেই গ্যালন নিয়ে উপাচার্যের রুমের দিকে যাচ্ছিলেন তখন সবাই অবাক বিস্ময়ে জিজ্ঞেস করছিল ওটা কী? জবাবে তিনি বললেন- তেল, উপাচার্যকে দিতে যাচ্ছি!


অধ্যাপক আব্দুর রাজ্জাকের সাথে তাঁর ছিল সুসম্পর্ক। আব্দুর রাজ্জাকের কথা সর্বপ্রথম পড়ি আহমদ ছফার সেই বিখ্যাত 'যদ্যপি আমার গুরু' বইতে। তারপর এখানে ওখানে টুকরো টাকরা লেখা। এই বইতে বেশ খানিকটা অংশ জুড়ে রয়েছে আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আনিসুজ্জামানের সুসম্পর্কের প্রসঙ্গ। রাজ্জাক স্যার আনিসুজ্জামানকে অনেক স্নেহ করতেন। তাঁর কাছে স্যারের অনেক আশা ছিল তবে লেখকের ভাষ্যমতে তিনি সেগুলো পূরণ করতে পারেননি।


নব্বইয়ের দশকে গোলাম আযমকে জামাতে ইসলামের আমির ঘোষণা করা হয়। এ নিয়ে অনেক বিতর্কের সৃষ্টি হয়। জাহানারা ইমাম গণ আদালতের মাধ্যমে তাঁর শাস্তির ঘোষণা দিতে চান। এর সাথে যুক্ত হয় নানা সুধীজন। আনিসুজ্জামান ছিলেন গণ আদালতের একজন সাক্ষী। তিনি একাত্তর-পরবর্তী সময়ে গোলাম আযমের কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি দিয়ে সাক্ষ্য প্রদান করেন। গণ আদালত ও সেই সময়কার কর্মকাণ্ডের বিস্তারিত তথ্য উঠে এসেছে লেখকের বয়ানে।


এছাড়াও এরশাদ বিরোধী আন্দোলন এবং তাৎকালিন রাজনীতির কথাও লিখছেন অকপটে। শুধু আত্মজীবনী হিসেবেই না, তৎকালীন রাজনীতি এবং ইতিহাসের সাক্ষী হিসেবে এই বইটা যুগ যুগ থেকে যাবে। কিনেছিলাম গত বাইশের বইমেলা থেকে। পড়া শেষ করতে করতে আরেকটা বইমেলা চলেই আসলো! আনিসুজ্জামানের বর্ণাঢ্য জীবনের যে ফিরিস্তি এখানে পেলাম তাতে তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাবোধ অনেক বেশি বেড়ে গেলো।
40 reviews3 followers
June 1, 2017
গদ্য হিসাবে সুখপাঠ্য। লেখক যে সময় সমাজের সাথে বেশী ইন্টারেক্ট করছেন, সেই জায়গার বর্ণনাও ওরকম জীবন্ত। আবার লেখক এক সময় যায়া ইন্টারেকশন কমায়ে দিছেন, সেই জায়গায় বইটাও ঝুলে গেছে। মেমোয়ার এইরকমই। কিছু তথ্য টথ্য পাইছি, অবশ্য সেগুলা এমন কিছু ইউনিক না। অল্প কিছু ঘটনা বেশ নাড়া দিছে। আর সংবিধান প্রণয়নের ঘটনাবলি সম্পর্কে কিছু মূল্যবান তথ্য আছে। বইয়ের কলেবরের তুলনায় মালমশলা কম মনে হইছে। কারো পড়ে সময় নষ্ট হইলে দোষ দেওয়া যায় না। প্রফেসরদের মেমোয়ারে এই ব্যাপারটা লক্ষ্য করছি। তপন রায় চৌধুরীর বাঙালনামা অর্ধেক যাবার পরে বিরক্তির চূড়ান্ত করছিলো, এইটাও একটা সময় বোর করছে। অন্যদিকে সুনীলের অর্ধেক জীবন, কী সজীব, কী প্রাণবন্ত।

থাকগা, বই তো বই-ই। তার ওপর আনন্দ পুরষ্কার পাইছে। আমার তো সময়টা খারাপ যায় নাই। তাই, তিন তারকা থাকলো।
Profile Image for Alimur Razi Rana.
95 reviews5 followers
January 4, 2018
অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের দেখা ১৯৭২ সাল থেকে ২০০০ সাল পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে এই বই । এখানে যেমন তার পারিবারিক ঘটনা আছে , তেমনি আছে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের মধ্যে চলা ক্ষমতার লড়াই কিংবা দেশের পরিবর্তনশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি । অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের পরিচিত মানুষের মধ্যে অনেক বিখ্যাত মানুষ থাকায় , তাদের সম্পর্কেও অনেক কিছু জানা যাবে ।

গুরুত্বপূর্ণ পদে থাকায় অনেক ঘটনার সাক্ষী তিনি । ছোট অথচ তথ্যবহুল প্রচুর ঘটনা আছে বইটিতে । যেমন , আগে জানতাম , বঙ্গবন্ধুর আদেশে তাজউদ্দীন আহমেদ পদত্যাগ করেন । তাজউদ্দীন আহমেদের সাথে আনিসুজ্জামানের প্রায়ই আড্ডা হত । সেখানেই একদিন তাজউদ্দীন পদত্যাগের কথা বলেন । এবং নতুন দল করারও ইচ্ছা করেন । বঙ্গবন্ধু তাকে পদত্যাগের নির্দেশ না দিলেও অচিরেই তিনি নিজেই পদত্যাগ করতেন ।

আগে মনে হত , বাংলা পড়ে কি হয় । এই বইটা পড়ে অন্তত বাংলা ভাষার শিক্ষার্থীদের প্রতি আলাদা সম্মানবোধ তৈরি হয়েছে । বাংলার শিক্ষক হয়ে দেশ বিদেশে বাংলার ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে সভা সমিতি করে বেড়ান , তা পড়তেও ভাল লাগে ।

মদ খাওয়ার কথা অনেকবার এসেছে । আমাদের দেশে যে মদ খায় , তাকে বেশ নেগেটিভ ভাবে দেখা হয় , আমার মনে এ বিষয়গুলো তিনি উল্লেখ না করলেও পারতেন ।
Profile Image for Hadi Zaman.
139 reviews10 followers
May 12, 2023
Such a great book. বই তো নয়, যেন ইতিহাসের সাক্ষী।
Profile Image for Muin Mohammad Mozammel.
61 reviews9 followers
July 25, 2024
বইটার অর্ধেকের বেশি পড়ার পরও বইটা শুরু করার উদ্দেশ্য খুব একটা সফল হয়নি। আমার আকাঙ্ক্ষা ছিল বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহের সাক্ষী আনিসুজ্জামান সাহেবের চোখে মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী বিভিন্ন ঘটনাকে দেখা। কিন্তু, বেশি বর্ণনা এসেছে কোথায় কনফারেন্সে গিয়েছেন, পিএইচডি কেমন আগাচ্ছে, আতিথেয়তা কোথায় কেমন পেয়েছেন এসব নিয়ে। তাই শেষতক পড়ার মত আর ধৈর্য রাখা সম্ভব হল না।
Profile Image for Gain Manik.
335 reviews4 followers
April 26, 2024
When I was reading this book I was in that time not in present
59 reviews3 followers
August 4, 2024
This book is an amalgamation of history and autobiography.
Best book I have read in a while.
Displaying 1 - 11 of 11 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.