প্রাপ্তবয়স্ক পাঠকের জন্য এযাবৎ এপার বাংলার শ্রেষ্ঠ ও সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক সংকলন হিসেবে বিবেচিত হত আনন্দ পাবলিশার্স থেকে প্রকাশিত, রঞ্জিৎ চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত 'নির্বাচিত ভূতের গল্প।' সেটিকে স্থানচ্যূত করতে না পারলেও পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায় সম্পাদিত এই সংকলনটি অনেকগুলো পড়ার মতো গল্পকে দু' মলাটের মধ্যে সাজিয়ে দিয়েছে। প্রথম সংস্করণের সঙ্গে এটির অনেকখানি পার্থক্য রয়েছে। বাদ পড়েছে তিনটি উপন্যাসই। গল্পের সঙ্গে সাঁইত্রিশ থেকে বেড়ে হয়েছে মোট বাহান্ন। তাদের মধ্যে বহু গল্প আমরা ইতিপূর্বেই অন্য নানা সংকলনে পেয়েছি। বহু গল্প আজ পড়তে গেলে বড়ো খেলো লাগে, যেহেতু অন্ধকার এবং জল-জঙ্গলে ভরা সেই ভৌগোলিক আবহ আজ অতীত। তবে হ্যাঁ, মানবমনের অন্ধকার এবং লেখকের নিজস্ব মুনশিয়ানায় গড়ে তোলা কিছু গল্প এই সংকলনকে ভাস্বর করে তোলে। তাদের মধ্যে থাকবে~ ১. খগেন্দ্রনাথ মিত্রের 'ডাকিনীর ডাক'; ২. গজেন্দ্রকুমার মিত্রের 'ছায়ার মায়া'; ৩. সৈয়দ মুস্তাফা সিরাজের 'মোতিবিবির দরগা'। শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়, সত্যজিৎ রায়, অনীশ দেব প্রমুখের গল্পের কথা আর উল্লেখ করছি না। ওগুলো আমাদের শুধু পঠিত নয়, প্রায় মুখস্থ বললেই চলে। সম্পাদকীয় নির্বাচন নিয়ে আমার অবশ্য বিস্তর আপত্তি আছে। বিদেশি গল্প অবলম্বনে লেখা বহু গল্প এতে রয়েছে, যা একেবারেই কাঙ্ক্ষিত ছিল না। বেশ কিছু বিদেশি 'অনুপ্রাণিত' গল্পকে সম্পাদক চিহ্নিতই করতে পারেননি। সর্বোপরি, বহু ক্ষেত্রেই লেখকের এমন কোনো গল্পকে বাছাই করা হয়েছে, যা তাঁর প্রতিনিধিত্বমূলক রচনা নয়। হ্যাঁ, বর্ষণমুখর অলস সন্ধ্যা এই বই নিয়ে কেটে যাবে। কিন্তু ভয়? নাহ্! আপনাকে, মানে আজকের খবরের কাগজ দেখা পাঠককে ভয় পাওয়ানোর সাধ্য এই বইয়ের নেই।