Jump to ratings and reviews
Rate this book

দেবলোকের যৌনজীবন

Rate this book
মানুষ গোড়া থেকেই তার দেবতাকে নিজের স্বরূপে কল্পনা করে নিয়েছিল । সেজন্য মানুষের যে সব দোষ-গুণ আছে, তার দেবতাদেরও তাই ছিল । এটা বিশেষ করে লক্ষিত হয় দেবতাদের যৌনজীবনে । যৌনজীবনে মানুষের যে সব গৰ্হিত আচরণ আছে, দেবতাদেরও তাই ছিল । যৌনজীবনে সবচেয়ে গৰ্হিত আচরণ হচ্ছে ইনসেক্ট’ বা অজাচার। ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে যে যৌনসংসর্গ ঘটে, তাকেই অজাচার বলা হয় । তবে যে সমাজের মধ্যে এরূপ সংসর্গ ঘটে, সেই সমাজের নীতি-বিধানের ওপরই নির্ভর করে কোনটা অজাচার, আর কোনটা অজাচার নয়। দৃষ্টান্তস্বরূপ বলা যেতে পারে যে ভারতের উত্তর-পূর্ব অঞ্চলের কোন কোন উপজাতির মধ্যে বিধবা বিমাতা ও বিধবা শাশুড়ীকে বিবাহ করার প্রথা আছে । অন্যত্র এটা অজাচার। উত্তর ভারতে বিবাহ সপিণ্ড-বিধান ও গোত্র-প্রবর-বিধি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত । সেখানে ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের মধ্যে অজাচার ঘটবার উপায় নেই। আবার দাক্ষিণাত্যে মামা-ভাগ্নী ও পিসতুতো-মামাতে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ সামাজিক নিয়ম-কানুন দ্বারা স্বীকৃত। সেখানে এরূপ যৌন সংসর্গ অজাচার নয়। আবার প্রাচীনকালে ভ্রাতা ও ভাতৃবধূর মধ্যে যৌন-সংসর্গ অজাচার বলে গণ্য হত না । ভ্রাতা অস্বীকৃত হলে, অপরকে ডেকেও বিধবা বধূদের গর্ভসঞ্চার করানো হত। এরূপ গর্ভসঞ্চারের ফলেই মহাভারতের দুই প্রধান কুলপতি ধৃতরাষ্ট্র ও পাণ্ডুর জন্ম হয়েছিল । এ বইয়ে এসবই আলোচনা ও ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করা হয়েছে।

156 pages, Hardcover

First published April 1, 1983

8 people are currently reading
56 people want to read

About the author

Atul Sur

19 books2 followers
ডক্টর অতুল সুর প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ, ইতিহাস বিদ ও সমাজ-বিজ্ঞানী বিদ্বৎ সমাজে ‘দুধর্ষ’ পণ্ডিত রূপে আখ্যাত। বয়স ৯২ বৎসর। রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৫৪।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র ও অধ্যাপক। ‘প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্ব’ বিষয়ে এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে সুবর্ণ পদক ও পুরস্কার পেয়েছিলেন। অর্থনীতিতে সপ্রশংশ ডি.এস.সি উপাধি পেয়েছেন। দশ বৎসর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করেছেন।লেখক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’ পেয়েছেন। মধুসূদন ও রামমোহন পুরস্কার পেয়েছেন। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন থেকে সুশীলা দেবী বিড়লা পুরস্কার পেয়েছেন।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
4 (11%)
4 stars
8 (22%)
3 stars
17 (48%)
2 stars
3 (8%)
1 star
3 (8%)
Displaying 1 - 8 of 8 reviews
Profile Image for Nahid Hasan.
132 reviews20 followers
January 13, 2023
প্রতিটা বই-ই একেকজন পাঠক একেক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পাঠ করে থাকেন। আমিও তার ব্যতিক্রম নই। তবে দেবতাদের যৌন জীবন নিয়ে আমার খুব একটা আগ্রহ নেই, আমার আগ্রহ দেবতাদের উৎপত্তি নিয়ে।

লেখক শিবলিঙ্গের উৎপত্তি, বাংলায় শিব কেন জনপ্রিয় এসব আলোচনা তো করেছেনই, সেইসাথে নৃতাত্ত্বিক দিকটা আলোচনা করে এটাও দেখিয়েছেন রুদ্র আর শিবের মধ্যে তফাৎ, কে আদি ভারতের বাসিন্দা (শিব) আর কে আর্যদের সাথে ভারতবর্ষে এসেছিল (রুদ্র)।

নৃতাত্ত্বিক দিকটা আমার ভালো লাগার আরও একটা কারণ হল প্রাচীন বৈদিক পুঁথিগুলোর ভাষা কী সে সম্বন্ধে জানা। লেখক হালকাপাতলা আলোচনা করেছেন সে সম্বন্ধে।

ভারতবর্ষে জাতিভেদে এমনকিছু কৃষ্টির চল আছে যার সম্বন্ধে এই বইতেই প্রথম জানলাম। রিভিউয়ে সেসব নিয়ে আলোচনা করতে খুবই অস্বস্তি লাগছে, আগ্রহ থাকলে নিজেরা পড়ে দেখতে পারেন
Profile Image for লোচন.
207 reviews56 followers
February 18, 2021
যা মানুষের ক্ষেত্রে অবিচার, ট্যাবু; তা-ই দেবতার ক্ষেত্রে অত্যন্ত স্বাভাবিক। এই দর্শন থেকে দেবতাদের জগতের কাম ও যৌনতা তুলে ধরেছেন লেখক। কখনো সাধনা ভঙ্গ করার জন্য, কখনো শাপে, বরে কিংবা স্রেফ চাহিদা পূরণের জন্যে গ্রীক কিংবা নর্স পুরাণের দেবতাদের চেয়েও হাজারগুণে অদ্ভুত, বিচিত্র উপায়ে উন্মুখ হয়েছেন তারা।

তবে বইয়ের অধ্যায় সাজানোতে সমস্যা আছে। শুরুতে দেব-দেবতার কিছু উদাহরণ দিয়ে লেখক চলে এসেছেন বাস্তবের মর্ত্যলোকে। প্রাচীন ভারতীয় সমাজে অজাচার (incest) ও ব্যভিচারের চর্চা নিয়ে অনেক কিছু বলেছেন। তারপর আবার চলে গেছেন অপ্সরা, বিদ্যাধরী আর মুনিদের গল্পে। সব শেষে তার মনে হয়েছে, এহহে! বেদের ইতিহাস আর দেবলোকের পরিচিতি নিয়ে কিছু বলা লাগতো মনে হয়! যে তথ্য দিয়ে বই শুরু করা উচিত ছিল, সেসব দিয়েছেন শেষে গিয়ে, দায়সারা ভঙ্গিতে।

তিন প্রধান দেবতার মাঝে ব্রহ্মা ও কৃষ্ণ সবচেয়ে সচল; কাউকেই ছাড়েননি তারা, সম্ভোগে তৃপ্তি খুঁজেছেন। ব্যতিক্রম হচ্ছেন শিব। বাংলায় তিনিই বোধহয় সবচেয়ে জনপ্রিয় দেবতা ছিলেন। মহাযোগী, মহা সংযমী। মেয়েদের আশীর্বাদ করা হতো- শিবের মত বর হোক। ধান ভানতেও শিবের গীত গাইত বাংলার মানুষ।

আমার কাছে দেবলোকের চেয়ে মর্ত্যলোকের ট্যাবু কাহিনিই চাঞ্চল্যকর লেগেছে বেশি। এখানে জানলাম প্রাচীনকালে উত্তর ভারতের পূর্ব ও মধ্যাঞ্চলে ভাই-বোনের মধ্যে বিবাহ সামাজিকভাবে স্বীকৃত প্রথা ছিল। জানলাম, আসামের আদিবাসি সমাজে বিধবা শাশুড়ি কিংবা বিমাতাকে বিয়ে করা নাকি এখনো স্বীকৃত। তারপর প্রাচীন ব্রাক্ষণসমাজের বিভিন্ন রীতি- অতিথি সৎকারের জন্য স্ত্রীকে সমর্পণ করা, জ্যৈষ্ঠ ভ্রাতার বিধবা স্ত্রীকে বিবাহ ব্যতীত গ্রহণ করা, ঋণ মেটাতে স্ত্রী কন্যাকে পাওনাদারের কাছে সমর্পণ করা ইত্যাদি ইত্যাদি তো আছেই।

তবে বিকৃত প্রথার দিক থেকে বিবেচনা করলে লেখকের পছন্দের টপিক সম্ভবতঃ তন্ত্রসাধনা। তিনি আনন্দের সাথে জানাচ্ছেন, এই সাধনায় তিনটি মার্গ আছে, পশ্বাচার – ভেতরের পশুকে জয়, বীরাচার – ভয়কে জয়, আর দিব্যাচার - প্রকৃত সাধন।

পশ্বাচারের মূল বিষয় পাঁচ ম-তে প্রকাশ্য – মদ, মাংস, মৎস্য, মুদ্রা, মৈথুন। তিনি বলছেন, যেহেতু ভোগ না করলে ত্যাগ করা যায় না, তাই পুনঃপুনঃ ভোগের মাধ্যমে এই পাঁচ জিনিসের প্রতি বিতৃষ্ণা তৈরি করে তারপর ত্যাগ করাই তন্ত্রসাধকের কাজ। যেমন, মৈথুন বলতে বোঝায় কোনো বিবাহিত নারীর সাথে সঙ্গম। কোনো বিবাহিত রমণী যদি না রাজি হয়? শাস্ত্রে সমাধান আছে:

“অন্যা যদি ন গচ্ছেতু, নিজকন্যা নিজানুজা
অগ্রজা মাতুলানি বা মাতা বা তৎ সপত্নিকা
পূর্বাভাবে পরা পূজ্যা মদংশা যোযিতো মতাঃ
একা চেৎ কুলশাস্ত্রজ্ঞ পূজার্হা তত্র ভৈরব।”

অর্থাৎ, সেক্ষেত্রে নিজের কন্যা, নিজের কনিষ্ঠা বা জ্যৈষ্ঠা ভগিনী, মাতুলানি, মাতা বা বিমাতাকে নিয়ে কুলপূজা করবে।

কুলপূজা কিভাবে করে? লেখক শালীনতার স্বার্থে আর বাংলা করেননি, সংস্কৃত শ্লোক তুলে দিয়েছেন:

“আলিঙ্গনং চুম্বনঞ্চ স্তনয়োর্মদনস্তথা
দর্শনং স্পর্শণং যোনের্বিকাশো লিঙ্গঘর্ষনম
প্রবেশ স্থাপনং শক্তের্ণব পুষ্পানিপুজনে।”

এসব তো তাও একই প্রজাতির মধ্যে আছে। কিন্তু কিছু তথ্য হজম করা শক্ত। লেখক এক জায়গায় বলছেন, প্রাচীন ভারতে অশ্বমেধযজ্ঞের প্রধান একটি অংশ ছিল: যজ্ঞস্থানে সবার সামনে উক্ত অশ্বের সাথে রাজমহিষী মিলিত হবেন (কিংবা অশ্বের রেতঃস্খলন করে দেবেন?)। এই ঘোড়া যেহেতু বহিঃজগতে রাজার ডিরেক্ট অবতার হিসেবে বিবেচিত হবে, তাই রাজার ‘প্রিভিলেজ’ তাকেও ভোগ করতে দেওয়া হচ্ছে।

তো, ইয়ে মানে এই আরকি। ঋষি-মুনিদের নিয়ে কিছু কথা আছে। কামসূত্র সহ অন্যান্য মিলন-পুস্তক কেন কিভাবে এলো, মন্দিরে কেন সঙ্গমচিত্র বা মিথুনমূর্তি থাকে – এসবের বর্ণনা পাবেন।

সব মিলিয়ে অত্যন্ত শিক্ষামূলক বই।
Profile Image for Avishek Bhattacharjee.
370 reviews79 followers
December 14, 2020
ডঃ অতুল সুরের দেবলোকের যৌনজীবন পড়ার সাধ অনেকদিনের। একে তো দেবতাদের কথা তার উপরে তাদের যৌনতা, ব্যাপারখানাই ইন্টারেস্টিং। হিন্দু হবার সুবাদে এসব অনেক গল্পই আমার আগেই পড়া। কিন্তু তারপরেও এসব কালেকশন একত্রে পাওয়া দুর্লভ ব্যাপার। তাই এবই পড়া শুরু করলাম।
বইয়ের নাম শুনেই অনুমেয় যে কি ঘটনা আছে ভেতরে। কিন্তু কথা হচ্ছে শুধু দেবতাদের নিয়ে লেখক ক্ষান্ত দেন নাই৷ ক্রমেই উনি রাজা, মুনি, ঋষি, চিত্রকলা সবদিকেই গিয়েছেন। লেখা পড়লে মনে হবে প্রাচীর যুগের সেসব মানুষ আর দেবতাগন অত্যন্ত কুরুচিপূর্ণ ছিলেন। যে যেদিকে পারছে সেদিকে উপগমন করছে। এমনকি নিজ পুত্র কন্যাকেও ছাড় দিচ্ছেন না। বইটিতে হিন্দু ধর্মের বেদ, পুরান এবং তন্ত্র তিনদিক থেকেই যৌনতাকে বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সাথে বৌদ্ধ ধর্মের অনেক দিক টেনে আনা হয়েছে যা অনেকটা হিন্দু ধর্মেরই অনুরুপ। লেখক আর্যতত্ত্ব (আর্যদের বাইরের থেকে আগমন) বিশ্বাস করেন। যদিও আধুনিক অনেক বিশেষজ্ঞই এই তত্ত্বকে ভুল হিসেবে প্রমাণ করেছেন বলেই জানি।
বইটার নেগেটিভ দিক বলতে গেলে বলব অনেক অসামঞ্জস্যপূর্ণতা রয়েছে৷ আসলে অনেকগুলা প্রবন্ধ ভিন্ন ভিন্ন জায়গা থেকে সংগ্রহ করেই বইটা বানানো হয়েছে৷ সে জন্য রিপিটেশন অনেক পরিমাণেই বেশী। শেষের দিকে বিভিন্ন পৌরানিক গল্প টেনেছেন যাকিনা বইয়ের নামের সাথে বেমানান। ভাল দিক বলতে গেলে অনেক তথ্যবহুল একটা বই বলা যায়। মাঝখানে দর্শন না নিয়ে এলে আরাম করেই পড়া যায়। তবে সেক্ষেত্রে লেখক দায়ী নন। যেকোন দর্শন পড়তে গেলেই মাথা আউলাবে তাই স্বাভাবিক।
যাই হোক, পড়ে লস হয়েছে তা বলা যাবে না।
May 18, 2025
হিন্দুদের ৩৩ কোটি দেবতা কিন্তু স্বর্গের অপ্সরদের সংখ্যা ৬০ কোটি। ৩৩ কোটি দেবতা ৬০ কোটি অপ্সরাদের সাথে কি করতেন, সেটাই এই বইতে চমৎকারভাবে ফুটে উঠেছে। ‌
লেখক বইয়ের শুরুতেই গ্রীক দেশের পুরান থেকে হিন্দুদের দেব-দেবী পর্যন্ত একটা সীমারেখা টানার চেষ্টা করেছেন। যেখানে দেখাতে চেয়েছেন মনুষ্য সমাজে নারী ও পুরুষের মধ্যে যেসব লালসা প্���কাশ করা হতো বা অজাচারে লিপ্ত হতো, ঠিক সেটাই হিন্দু দেব দেবীদের মধ্যেও হতো। ‌ হিন্দু দেব-দেবীদের বেশিরভাগই আদর্শ চরিত্রের ছিল না। ‌ ঠিক যেমন গ্রীক দেব-দেবীদের চরিত্র। প্রায়শই দেখা যায় এই দেব-দেবীরা নিজেদের মধ্যে মাতৃত্ব কিংবা ভাই বোনের সম্পর্কের কথাটাও পরোয়া করতেন না। নিজের চাহিদার পূরণ করার জন্য কোন রকম বাছবিচারও করতেন না। অথচ মনুষ্য সমাজে এইসমস্ত যৌন আচরণ সামাজিকভাবে বয়কট করার মতো। দেবতাদের ক্ষেত্রেও ঠিক একই রকমের ঘটনা ঘটত, বিশেষ করে ইনসেস্ট বা অজাচার। মনুষ্য সমাজে তাও সামাজিক নীতি নীতি মেনে চলা হত, কিন্তু দেবদেবীদের ক্ষেত্রে এই ধরনের কোন নীতি-বিধানের অস্তিত্বও ছিল না। পিতা পুত্রের ভ্রাতা ভাগ্নির মধ্যে অজাচারে প্রচুর উল্লেখ খুঁজে পাওয়া যায় এই বইয়ের বিভিন্ন পাতায়।

ইন্দ্রের দেব সভা কিংবা মর্তের রাজাদের কর্মকাণ্ড এই দুইয়ের মধ্যে আসলে খুব বেশি পার্থক্য দেখতে পাওয়া যায় না। এমনকি সেটা ঋগ্বেদ থেকে শুরু করে বিভিন্ন হিন্দু ধর্মগ্রন্থে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে। এখানেই দেওয়া আছে অজাচারের মাধ্যমে মনুষ্যজাতির উদ্ভব হয়। অর্থাৎ দাবি করা হয় মনুষ্যজাতির রক্তের মধ্যেই অজাচারে বীজ শুরু থেকেই রোপন করা হয়েছিল।
হিন্দু ধর্মে বেশিরভাগ দেবতাদেরই দেখা যায় যে ব্যভিচারের লিপ্ত হতে। এমনকি তারা অন্য দেবতার স্ত্রী কিংবা বোন কিংবা সন্তানদেরও তাদের লালসা থেকে কোনভাবে নিস্তার পেতে দেয়নি।
বেশিরভাগ নামকরা দেবতাদের চরিত্র আসলে খুবই খারাপ হিসাবেই এই বইতে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। যেমন বৈদিক দেবতাদের প্রধান ইন্দ্র অত্যন্ত সুরা-পায়ী ছিলেন। বইয়ের বিভিন্ন পাতায় ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে যে ইন্দ্র আসলে ইন্দ্রিয় দোষে পুরোপুরি দুষ্ট ছিলেন। সোমরস পান করে ইন্দ্র বেশিরভাগ সময় নেশাগ্রস্ত অবস্থায় থাকতেন এবং তপস্বীদের তপস্যা ও সাধনার মধ্যে বিঘ্ন ঘটাতেন বিভিন্ন অপ্সরীদের পাঠিয়ে দিয়ে। যদি কেউ ইন্দ্রের আসন দখল করে নেয়, এই ভয় ইন্দ্রের মধ্যে সব সময় কাজ করত। তাই তার রাজ দরবারে অসংখ্য অপ্সরীদেরকে রাখা হতো এবং তাদেরকে যখন ইচ্ছা বিভিন্ন তপস্বীদের কাছে পাঠিয়ে দিয়ে তাদের চরিত্রনাশ করা হতো, যেন তারা আর কখনো কোন সাধনা করে উঁচু পর্যায়ে এসে দেবতাদের রাজ সিংহাসনে প্রতিদ্বন্দ্বী হতে না পারে।

বইটিতে দেখা যায় যে দেবতারা শুধুমাত্র দেবতাদের স্বীয় স্ত্রী বা কন্যাদেরই নয়, বরং অনেক সময় পৃথিবীতে নেমে এসে জোর করে মানবীদের সাথেও মিলিত হতেন। এভাবেই হিন্দু দেবতা হনুমানের জন্ম হয়েছিল। এমনই এক দুর্ঘটনার মধ্যে দিয়ে অহল্যার সতীত্ব নাশের কারণে দেবতাদের প্রধান ইন্দ্রের একবার ভয়াবহ দুর্গতি হয়েছিল। কারণ ইন্দ্র জোর করে পরস্ত্রীর সতীত্ব নষ্ট করেছিল। এমনকি তার গর্ভের সন্তানও নষ্ট করে দিয়েছিল।
দেবতাদের মধ্যে একমাত্র শিবকে দেখা যায় সংযমী দেবতা। তিনি পত্নী পরায়ন দেবতা। তাই দেখা যায় যে হিন্দু মেয়েরা সব সময় শিবের মতন পতির পাওয়ার জন্য প্রতিনিয়ত প্রার্থনা করে থাকে।
এই বইতে একটা অদ্ভুত ঘটনার উল্লেখ পাওয়া যায়। আগের দিনে দেবতারা যেমন পৃথিবীতে নেমে আসতেন, তেমনি মর্তের লোককে স্বর্গে চলে যেতে পারত। অনেক সময় মর্তের রাজারা দেব সভায় চলে যেত।
যদিও লেখক দেখিয়েছেন যে এসব অগ্রহণযোগ্য যৌনকর্ম সামাজিক রীতিনীতি অনুযায়ী অবশ্যই গর্হিত আচরণের মধ্যে পড়ে এবং সমাজে এই ধরনের কর্মকাণ্ড প্রতিনিয়ত চলতে থাকলে তার স্থিতিশীলতা পুরোপুরি নষ্ট হয়ে যায়। কিন্তু হিন্দু ধর্মের কিছু কিছু বৈদিক শাস্ত্রে দেওয়া আছে যে রাজা ও দেবতাদের বেলায় কোন নিয়ম কানুন খাটবে না।
এমনই এক অপ্সরার অভিশাপের ফলে পৃথিবীতে নেমে আসার পরে কুমারী অবস্থায় তাকে পরাশর মুনি ধর্ষণ করার পরে কৃষ্ণ দ্বৈপায়ন ব্যাসের জন্ম হয়। যিনি পরবর্তীতে হিন্দু ধর্মের খুব নামকরা একটা ধর্ম পুস্তক লেখার জন্য বিখ্যাত হয়েছেন। ‌
এই বইতে লেখক দেখাতে চেয়েছেন যে এই সমস্ত দেব-দেবীদের সমাজের যে চিত্র সেটা মানুষের সমাজের চিত্রের সাথেই মিল ছিল। অর্থাৎ মানুষজন নিজেদের সমাজ ও আচরণের সাথে মিল রেখে এই সমস্ত দেব-দেবীদের আচরণের কথা ধর্ম পুস্তকে তুলে নিয়ে এসেছেন।
তবে দেবলোকে যে শুধুমাত্র পুরুষরাই ও ব্যভিচার করতে ব্যাপারটা তা না। দেব লোকের মেয়েরাও ব্যভিচারের সাথে লিপ্ত থাকতো এবং দেখা যেত যে অনেক সময় নিজের স্বামী রেখে দেবলোকের মেয়েরা গোপনে অন্যের সাথে ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে উঠতো। অর্থাৎ পুরুষ বা মহিলা উভয়ই আসলে এই সমস্ত অজাচার এবং ব্যভিচারের সাথে জড়িত থাকতো‌।
লেখক বইটি স্পষ্টভাবে লিখে দিয়েছেন যে নৃতত্ত্ববিদগণের ভাষ্যমতে এই সমস্ত প্রতিটা কাহিনী ছিল আসলে মানুষের মনগড়া। ঐসময়কার সমাজের মানুষরা নিজেদের আচার-আচরণগুলোকে দেবতাদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করত। সামাজিক রীতিনীতি ও প্রতিক্রিয়াতে মানুষের মাঝে অজাচার সম্পর্কে ধারণা গড়ে উঠেছিল এবং যেটা পরবর্তীতে দেব-দেবীদের সমাজের মধ্যেও প্রচলিত ছিল বলে ধর্ম পুস্তকে উঠে এসেছে।
শুধু কি হিন্দু শাস্ত্র, বরং বৌদ্ধ সাহিত্যেও এই সমস্ত অজাচার এবং ব্যভিচারের প্রচুর দৃষ্টান্ত দেখতে পাওয়া যায়। রাম শুধুমাত্র নিজ বোনকে বিয়ে করেনি, বরং তার পিতা দশরথও ঠিক একই কাজ করেছিলেন।
দেবলোকে হোক কিংবা মনুষ্য লোকে হোক, নিজের মা বা মাসিকে বিয়ে করা যে অজাচার, সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু ভারতের বিভিন্ন সমাজের মধ্যে এটা প্রচলিত ছিল একসময় এবং এটাই পরবর্তীতে দেব লোকের বিভিন্ন বর্ণনার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। হিন্দু পুরাণ অনুযায়ী ব্রহ্মা তার নিজ কন্যা শতরূপাকে বিবাহ করেছিল। শুধু কি হিন্দু সমাজ, বরং গ্রিক দেবদেবীদের মধ্যেও এই ধরনের কর্মকাণ্ডে প্রচুর উদাহরণ এই বইতে উঠে এসেছে। যার বড় একটা প্রমাণ ছিল ইডিপাস, যিনি নিজের গর্ভধারিনী মাকেই বিবাহ করেছিল এবং তারপরে দুইটা পুত্র সন্তানের জন্মগ্রহণ করেছিল।
দেবলোকের বিভিন্ন দেব-দেবী এবং তাদের সাথে মনুষ্য সমাজের যে বিভিন্ন যৌন অপকর্মগুলো অজাচার এবং ব্যভিচারের দৃষ্টান্ত হিসেবে এই. বইয়ের বিভিন্ন পাতায় পাতায় উঠে এসেছে। ‌ বর্তমানে কেউ এই বইতে দেওয়া ঘটনাগুলো পড়ে বর্তমান সমাজের সাথে মেলাতে গেলে রীতিমতো হোঁচট খাবে। অথচ তৎকালীন হিন্দু সমাজে এই জিনিসগুলো খুব সহজভাবে গ্রহণযোগ্য মনে করা হতো এমনকি ধর্মীয়ভাবে সেগুলোকে সমর্থন দেওয়া হতো, ধর্মীয় লাম্পট্য খুব সহজেই ধর্মের আড়ালে মেনে নেওয়া হতো।
এই বইয়ের সবচেয়ে নোংরা দিচ্ছে এটা সেটা হচ্ছে নিয়োগ প্রথা অর্থাৎ কোনো কারণে যদি কোন মৃত পুরুষ সন্তান গর্ভে দান করতে না পারে তখন সেই মহিলাকে গর্ভধারণ করার জন্য নিয়োগ প্রথা অনুযায়ী এক বা একের অধিক সন্তান জন্মের জন্য নিজের শ্বশুর কিংবা নিকটাত্মীয় কিংবা ভ্রাতা কিংবা এমন কাউকে নিযুক্ত করা হতো যে সে মহিলার সাথে ধর্মীয় নিয়ম-কানুন মেনেই যৌনকর্মে লিপ্ত হবে। শুধুমাত্র তার উদ্দেশ্য ছিল গর্ভধারণ করা অর্থাৎ সে মহিলার গর্ভে পুরুষ সন্তান জন্মগ্রহণ করানো। ‌
সতী স্ত্রী কিংবা পতিপ্রথা স্ত্রীর সংজ্ঞা সেই সময়কার সমাজ অলিগলিতে তখন প্রচলিত ছিল না এবং সেগুলোকে তখন অজাচার বা ব্যভিচার হিসেবেও গণ্য করা হতো না। এমনকি দেখা যায় যে স্বয়ং যমরাজ বিভিন্ন বেশ নিয়ে অন্যের স্ত্রীর সাথে অজাচারে লিপ্ত হতেন।
লেখক ৫৯ পৃষ্ঠায় ভয়ংকর এক তথ্য দিয়েছেন তৎকালীন হিন্দু সমাজে ধর্ম অনুষ্ঠানে মৃত কিংবা অপরিচিত কোন নারীর সাথে যৌন মিলনে অনুমোদন আছে বলে দাবি করেছেন। তান্ত্রিক সাধনার মূল কথা হচ্ছে প্রকৃতি ও পুরুষের মিলন অর্থাৎ তন্ত্র শাস্ত্র হিসেবে এই যৌন মিলনকে দিক থেকে বৈধতা দেয়া হয়েছে। যেমন তন্ত্রে বলা হয়েছে যে শক্তি সাধকরা যদ��� কোন অপর কোন পুরুষের সাথে বিবাহিত নারীর সাথে যৌন মিলনের নিমিত্ত না হতে পারে তাহলে সে পুরোপুরি শক্তি অর্জন করতে পারবে না। কিংবা কুল পূজার জন্য যদি কোন নারীর সাময়িকভাবে স্বামীকে পরিহার করে, তবে তার কোন পাপ হবে না এবং এটাকে অপরাধ হিসেবেও মেনে নেওয়া হবে না। এমনকি এটাও বলা আছে যে অন্য কোন রমণী যদি না পাওয়া যায় তাহলে নিজের মাতা বা কন্যাকে নিয়েও কুল পূজার নামে যৌন মিলনের মিলিত হওয়া যা��ে।
এই বইয়ে ৭৫ পৃষ্ঠায় অশ্বমেধ যজ্ঞের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া আছে এবং কিভাবে রানীরা সাম্রাজ্য রক্ষা করার জন্য যজ্ঞের সময় টানা তিনদিন ঘোড়ার সাথে যৌনকর্মে লিপ্ত হতেন সেটা বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়েছে। ‌ যথেষ্ট নোংরা বিষয় হওয়ার কারণে এটা এখানে আর বিস্তারিতভাবে দেওয়া হলো না। তবে পড়ার সময় আমি রীতিমত চমকে উঠেছিলাম।
এই বইটাতে পাতার পর পাতা লেখক এই সমস্ত অজাচার এবং ব্যভিচারে বিস্তারিত উদাহরণসহ এবং ধর্মীয় পুস্তকের রেফারেন্স সহ বিভিন্ন ঘটনা তুলে ধরেছেন যেটা আসলে রীতিমতো প্রশ্নবিদ্ধ মনে হয় পড়ার সময়।
সনাতন ধর্মীয় এই বিষয়গুলো নিয়ে লেখা খুবই বিপদজনক। বইয়ের রিভিউতে এসে উপরে যা যা লেখা হয়েছে সেটা সবকিছুই বইয়ের রেফারেন্স হিসাবে এবং বইতে তুলে দেওয়া ঘটনাগুলোকে সারসংক্ষেপ হিসেবে দেওয়া হয়েছে। এটা কোন ধর্মকে অবমাননা কিংবা ছোট করা কিংবা তার প্রতি বিরূপ সমালোচনা উদাহরণ হিসেবে দেওয়া হয়নি। সুতরাং আশা করব পাঠকরা বিষয়টাকে খুব সহজভাবে দেখবেন।
ধর্মীয় বিষয়গুলো যার যার ব্যক্তিগত হিসেবেই ধরে নেওয়া উচিত। এবং অন্যের ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কটাক্ষ করা কিংবা সমালোচনা করা কিংবা নোংরা মন্তব্য করাটাও আসলে উচিত না। ‌লেখক এক্ষেত্রে হিন্দু ধর্মের অত্যন্ত গোপন একটা বিষয় পাঠকদের সামনে তুলে ধরেছেন জ্ঞান বিতরণ ও জানার জন্য। সেক্ষেত্রে লেখক যথেষ্ট কষ্ট করেছেন এই বইটা লেখার জন্য। সেই জন্য তাকে একটা বাহবা দিতেই হয় এবং প্রশংসা করতেই হয়।
বইটা পড়ার সময় অনেকেরই হয়তো তীব্র অস্বস্তি বোধ হবে। ভালো না লাগলে এটা জোর করে পড়ার কোন দরকার নেই। এটা এমন কোন বই না যে সবাইকে পড়তেই হবে। আমি হিন্দু ধর্ম সম্পর্কে জানার জন্য এই বইটা পড়েছি, এর বেশি কিছু না। ‌বইয়ের মূল বিষয়বস্তু ও ঘটনাগুলো আমার নিজের ধর্মীয় বিশ্বাসের সাথে সংঘর্ষিক হিসেবে এগুলোকে আর গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি।
বড় একটা রিভিউ লিখলাম আশা করছি সবাই ছোটখাটো ভুলগুলোকে খবর সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। ধন্যবাদ সবাইকে।
Profile Image for Shafayat Arpon.
6 reviews1 follower
December 5, 2025
দেব দেবীদেরকে মানবীয় গুণ প্রদান করায়, আদি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের নিজস্ব চিন্তাধারা প্রতিফলিত হয় হিন্দু মিথলজির বিশাল পটভূমিতে। দেব-দেবী, অপ্সরা, সাধক-তান্ত্রিকদের আচার আচরন তথা লদকা-লদকির বিবরণ সমূহ তুলে ধরা হয়েছে এ বইয়ে। তথ্যগত অ্যাকারেসি কতটা জানিনা, স্পাইসি অবশ্যই 🥴।
1 review
April 5, 2025
❝ সমাজই বিধান দেয়, কোনটা অজাচার, আর কোনটা অজাচার নয়। ❞
Displaying 1 - 8 of 8 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.