বহু বছর পর বাদামপাহাড়ে ফিরে এসেছে বিহান। রিজুল নতুন চাকরি নিয়ে এসেছে বাদামপাহাড়ে। আর ফলক ছোট থেকেই এই বাদামপাহাড়ে থাকে। অতীতের ক্ষত এখনও বিহানকে রক্তাক্ত করে। তবে আজও মিতুকে ভুলতে পারেনি সে। তাই নিজের অজান্তেই আবার মিতুর জীবনে জড়িয়ে পড়ে বিহান। মিতুর ছেলের দিকে অনুভব করে এক অজানা টান। অ্যাস্ট্রোফিজিসিস্ট রিজুল মিতুদের বাড়িতেই পেয়িং গেস্ট হিসেবে থাকে। আর চাকরি করে কাছের অবজারভেটারিতে৷ ঝিলকে পছন্দ রিজুলের। কিন্তু ঝিল নিস্তব্ধ এক মেয়ে। মনের যন্ত্রণা চেপে আত্মীয় রবির বাড়িতে থাকে সে। রিজুলের প্রেম স্বীকার করতে কোথায় যেন বাধা পায়। তবু ভেতরে ভেতরে সেই প্রেমের কারণেই নতুন এক উত্তাপ টের পায় ঝিল। রবি এক গোপন স্বার্থে ব্যবহার করবে বলে ঝিলকে সবার থেকে আড়াল করে রাখতে চায়। রবির সৎভাই ফলক সবটাই বোঝে, কিন্তু নিজের অসুস্থ ভাই আর মাকে নিয়ে কোথাও যাওয়ার নেই বলে মুখ বুঝে সহ্য করে রবির অত্যাচার। রবির অসামাজিক কাজে জড়িয়ে পড়ে নিরুপায় হয়ে। নুড়ি ওকে বলে এই দাসত্ব থেকে মুক্ত হতে। আর এদের সবার মাঝে ঘুরে বেড়ায় ফলকের ভাই বিপ্লব। অপ্রকৃতিস্থ বিপ্লব চায় সবকিছু পালটে দিতে। চায় বিপ্লব করতে। বিভিন্ন গল্প এসে মেশে একে অপরের সঙ্গে। দ্বেষ, স্বার্থপরতা, লোভ ও বিশ্বাসঘাতকতার মাঝে দাঁড়িয়েও কোথায় যেন জায়গা করে নিতে চায় প্রেম। মোহন নামক একজন বলেন, বৈদিক ঋষিদের উচ্চারিত ‘ওম’ আসলে সূর্যের থেকে উষ্ণতা প্রার্থনামাত্র। শীতের পাহাড়তলিতে এই উষ্ণতাটুকুই খোঁজে এই মানুষগুলো। আর তাদের এই অনুসন্ধান আর ভালবাসার কাহিনিই শোনায় ‘ওম’।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
প্রেম! শালা আবার প্রেম! আবার এই গল্পটাকে প্রেমের গল্প বানাবার কন্সপিরেসি! সেই উত্তমকুমারের মোটরবাইকে চড়ার ইচ্ছে! আধার কার্ডের বাইরে সুচিত্রা সেনের ছবি তোলার ধান্দা? এই ভারতবাসী, তুই শালা দেবদাস হয়েই থেকে যাবি, চে হতে পারবি না! প্রেমপত্রগুলো জ্বালিয়ে সেই আগুনে ভাত রান্না করার প্রোপোজ়ালটার কী হল? তার জন্যও বাজেট স্যাংশন করাতে হবে নাকি? বিপ্লবের জন্য বাজেট স্যাংশন করাতে হবে এখন? প্রেমের নিকুচি করে বিপ্লবের গল্প শুরু হতে গিয়েও প্রেম ঢুকে পড়ার গল্প এটা।
আসলে স্মরণজিৎ এর গল্প উপন্যাস কম,সিনেমা বেশি। ধরাবাঁধা গল্পের কোনো হিরো না থাকা, পেট ভর্তি হাসির খোরাক ও আবেগ মিশ্রিত মন ভালো করার আস্ত একটা মুহূর্ত যেন। ( নাটকীয় ডায়লগের মাত্রা টা আরেকটু কমানো উচিৎ ছিলো।)
সবই ঠিক ছিল; কিন্তু সংলাপগুলোই সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে। এরকম কেউ কথা বলে? যেসব ডায়ালগ গল্পের নায়ক নায়িকারা দিয়েছে তা আজকাল সিনেমায়ও চলবে না। বইয়ের পাতা তো অনেক দূরের কথা।
'পাতাঝরার মরশুমে' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। 'ফিঙে' উপন্যাসটাও মোটামুটি চলনসই ছিল, কিন্তু এটা ঠিক জমলো না।
আরও দশটা সাধারণ গল্পের মতো; না পড়লে খুব একটা ক্ষতি নেই।
Again one of my favourite bengali authors ! লেখকের নাম দেখেই আগ্রহ পড়লাম। আনন্দ publishers থেকে প্রকাশিত। দাম-200inr। স্মরঞ্জিত চক্রবর্তী। তার লেখা আমার পড়া চতুর্থ বই। দারুন লেগেছে কভারিং। মন ভালো করে দেয়ার মতো কভার। আর হার্ডবুক কভার।। অন্য উপন্যাস গুলির মতো চরিত্রের ঘনঘটা নেই। শহুরে কলরব ও নেই। যা আছে একরাশ প্রেম। প্রেমে ব্যর্থতা-নবপ্রেম সব কিছু আছে। সমসাময়িক সমাজের চিত্র। সবকিছু মিলিয়ে 2017 এর অন্য তম প্রিয়বই।তবে তার লেখা #পাল্টাহাওয়ার মতো এই বইটি না হলেও বেশ ভাল। আশা থাকে ঋজুল আর ঝিলের জন্য। আবার কৌতূহল ও থেকে যায় বিহান আর মিতুর জন্য। মন খারাপ থেকে যায় ফলকের মা আর নারীর জন্য। বাঙালি হলে অবশ্যই একবার পড়ে দেখা যায়।।।
.....মিতু তারপর পায়ে পায়ে পায়ে এগিয়ে গিয়েছিল ঝরনার দিকে । পাথরের গায়ে ঝুলে থাকা লতাগুল্ম সরিয়ে একটা ইটের টুকরো দিয়ে লিখেছিল - ‛এখানে আমরা ছিলাম ।’
মাথা তুলে আকাশের দিকে তাকালো বিহান । আজ ঠান্ডা পড়েছে খুব । কুয়াশার মসলিনটা ধীরে ধীরে নেমে আসছে মাটির দিকে । ‛এখানে আমরা ছিলাম ।’ এখানেই তো ছিল ওরা, এখানেই তো । এই হাওয়া, এই পাহাড়, এই রোদ, আর রোদের ভিতর থেকে মাথা তোলা বন্ধুর মতো পাইন, রডোডেনড্রন আর রেন ট্রির ফাঁকে, এখানেই তো ওরা ছিল এক দিন । আরও নতুন হয়ে, আরও সহজ, সুন্দর হয়ে ছিল । এখানেই তো একসঙ্গে থাকার কথা ভেবেছিল ওরা । শীতে, কুয়াশায় আবছা হয়ে আসা শহরটায় একমাত্র স্পষ্ট হয়ে ওরাই তো থাকতে চেয়েছিল ।
🔸 আহা !! প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য আর সারাজীবন বয়ে নিয়ে চলা চিরন্তন প্রেম মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে উপন্যাসটির পাতায় পাতায় । পড়তে পড়তে নিজেই যেন পৌঁছে গেছিলাম বাদাম পাহাড়ের কুয়াশা মোড়া রাস্তায়, যেখানে রিজুল দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে ঝিলের জন্য ।
অপূর্ব সুন্দর একটি গল্প যেখানে প্রকৃতির সাথে সামঞ্জস্য রেখে লেখক ভিন্ন সময় ভিন্ন রূপ ফুটিয়ে তুলেছেন। আরকটা কথা না বলে পারলম না সেটি হলো এই বইটির নামকরন। আমি আর বেশি কথা বললাম না আপনারা নিজেরা পড়ে সেটা বুঝবেন😅😅😅
"ওম" পড়তে পড়তে হঠাৎ করেই মনটা চলে গেছিলো সেই বাদামপাহাড়ের নির্জন নিস্তব্ধতায়। বাটারফ্লাই ফলসের পাশে যেখানে মিতু পাহাড়ের গায়ে লিখে রেখেছিল "আমরা এখানে ছিলাম"। প্রতিদিন কোচিংয়ের শেষে ঝিলের জন্য সাইকেল নিয়ে অপেক্ষমান ফর্সা, কোঁকড়া চুলের ছেলেটি, রিজুল ; রবিদার সমস্ত অন্যায় জুলুম, অত্যাচার নিরুপায় হয়ে মুখ বুজে সহ্য করা ফলক; নুড়ি র জন্য তার অকৃত্রিম ভালোবাসা, সব দাসত্ব থেকে পালিয়ে এসে নতুন করে শুরু করার প্রবল ইচ্ছা; প্রায় চোদ্দো বছর কেটে যাওয়ার পরও মিতুর জন্য সেই একইরকম টান অনুভব করা বিহান, ঝিলের এই বন্দিজীবন থেকে মুক্তি পাওয়ার প্রবল বাসনা সবকিছুই যেন মনের মধ্যে আলাদা জায়গা করে নেয়। শেষে ফলক আর নুড়ির জন্য মনটা যেমন ভার হয়ে যায়, ঠিক তেমনই রিজুল , ঝিলের জন্য থাকে শুভকামনা; আর বিহান মিতুর জন্য একরাশ ভালোবাসা। বিপ্লবের কথাগুলি যেন বাস্তবিকভাবে ভীষণ সত্যি হয়ে যায় যে "প্রাণ বাঁচায়, টাকা প্রাণ বাঁচায়!"এককথায় শহরের কোলাহল থেকে বেরিয়ে এসে পাহাড়ে রেইন ট্রির মাঝে মনকে শান্তি দেওয়ার মতো একটি বই ♥️♥️
এই গল্পটা ঠিক এই বইটার প্রচ্ছদ এর মতো উজ্জ্বল। পাহাড়ের পটভূমি তে স্মরণজিৎ এর লেখা এক পাহাড়ি প্রেমের গল্প। গতবছর জন্মদিন এ বইটা উপহার পেয়েছিলাম বউ এর থেকে, অবশেষে পড়া শেষ করলাম, আর মনে হচ্ছে আমি যেন এখনও বাদামপাহাড়ে পড়ে আছি । হয় বিহান এর বাইকটা চালাচ্ছি বা রিজুল এর কালো রঙের টেলিস্কোপ দিয়ে আকাশ দেখছি ।
গল্প শুরু হয় বাদামপাহাড় নামে একটা ছোট্ট পাহাড়ি গ্রামে। ১৪ বছর পর ফিরে আসে বিহান, এখনো সে ভুলতে পারেনি মিতুকে, কিছুটা বাকি আছে ওদের একটা অসমাপ্ত গল্প। এই বাদামপাহাড়ে নতুন চাকরি নিয়ে এসেছে এস্ট্রোফিজিসিস্ট রিজুল। ওর আবার মন আটকে যায় ঝিল এর ওপর , নিঃশব্দ অথচ গভীর এক মেয়ে ঝিল ।
আর আছে— 🔸ভয়ংকর রবি (স্মরণজিৎ-এর লেখা সবচেয়ে chilling ভিলেন বলতে পারি), 🔸তার পোষা ভাই ফলক, যাকে সে নিজের পাপের কাজে ব্যবহার করে, কিন্তু ফলক চায় শুধু নুড়িকে ভালোবাসতে। 🔸আর আছে ফলকের ভাই বিপ্লব, যে মানসিক দিক থেকে একটু আলাদা হলেও চিন্তাভাবনা পরিষ্কার । ও চায় বিপ্লব করতে, সবকিছু পাল্টে দিতে ।
🍂এই ছোট্ট পাহাড়তলিতে, প্রতিটা চরিত্র যেন নিজেদের মতো করে খোঁজে একটুকরো “ওম” – উষ্ণতা, আশ্রয়, ভালোবাসা।
ব্যক্তিগত অভিমত 🔹 গল্পের নামকরণ টা দারুণ, এই নামকরণের সার্থকতা বুঝতে পারা যাবে একদম শেষ পাতায় । নামকরণটা এতটাই perfect যে শেষ পাতায় গিয়ে গায়ে কাঁটা দেবেই। 🔹 স্মরণজিৎ এর উপন্যাস সবসময় পজিটিভিটি নিয়ে আসে, এই গল্পও তার ব্যতিক্রম নয় । এই জন্যই স্মরণজিৎ পড়তে ভালো লাগে । 🔹অন্য সব উপন্যাস এর মতো অনেক চরিত্রের ঘনঘটা নেই, তবে আছে সুন্দর সব নামের চরিত্রের মেলবন্ধন । 🔹 অপ্রকৃতিস্থ বিপ্লবের চরিত্র টা দারুণ লেগেছে । মেঘলা আকাশে হঠাৎ ওঠা রোদের মতো,যাকে উপেক্ষা করা যাবে না । 🔹 বিহান আর রিজুল এর সম্পর্ক টা দারুণ লাগে, অল্প সময় ওদের দাদা ভাই এর সম্পর্ক টা দারুণ গড়ে উঠেছে । 🔹 রিজুল আর ঝিল এর জন্য অনেক আশা থেকে যায় , অন্যদিকে কৌতূহল থেকে যায় বিহান ও মিতু এর জন্য । 🔹 কিছুটা খারাপ লাগে ফলক এর মা ও নুড়ি এর জন্য । 🔹কিছু জায়গায় সিনেমার মতো লাগে- but that’s the charm! বাস্তবের মাঝে এমনই একটু স্বপ্ন খুঁজি আমরা, তাই না? এই জন্যই তো ফিকশন পড়ছি ।
“ওম” শুধু একটা উপন্যাস না, এটা একরকম উষ্ণতা, একরকম ভালোলাগার কম্বল। স্মরণজিৎ আবার প্রমাণ করলেন—তাঁর লেখায় জীবনের সব রঙ লুকিয়ে থাকে।