ভারতীয় কবি জয় গোস্বামী (ইংরেজি: Joy Goswami নভেম্বর ১০, ১৯৫৪) বাংলা ভাষার আধুনিক কবি এবং উত্তর-জীবনানন্দ পর্বের অন্যতম জনপ্রিয় বাঙালি কবি হিসাবে পরিগণিত।
জয় গোস্বামীর জন্ম কলকাতা শহরে। ছোটবেলায় তাঁর পরিবার রানাঘাটে চলে আসে, তখন থেকেই স্থায়ী নিবাস সেখানে। পিতা রাজনীতি করতেন, তাঁর হাতেই জয় গোস্বামীর কবিতা লেখার হাতে খড়ি। ছয় বছর বয়সে তাঁর পিতার মৃত্যু হয়। মা শিক্ষকতা করে তাঁকে লালন পালন করেন।
জয় গোস্বামীর প্রথাগত লেখা পড়ার পরিসমাপ্তি ঘটে একাদশ শ্রেণীতে থাকার সময়। সাময়িকী ও সাহিত্য পত্রিকায় তিনি কবিতা লিখতেন। এভাবে অনেক দিন কাটার পর দেশ পত্রিকায় তাঁর কবিতা ছাপা হয়। এর পরপরই তাঁর খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে। কিছুদিন পরে তাঁর প্রথম কাব্য সংকলন ক্রিসমাস ও শীতের সনেটগুচ্ছ প্রকাশিত হয়। ১৯৮৯ সালে তিনি ঘুমিয়েছ, ঝাউপাতা কাব্যগ্রন্থের জন্য আনন্দ পুরস্কার লাভ করেন। ২০০০ সালের আগস্ট মাসে তিনি পাগলী তোমার সঙ্গে কাব্য সংকলনের জন্য সাহিত্য অকাদেমি পুরস্কার লাভ করেন।
খুব লজ্জা লাগলেও প্রথমেই স্বীকার করে নিই, এটি আমার জীবনে পড়া প্রথম জয় গোস্বামীর বই। ফেসবুকে অভীক নামের এক সাহিত্যপ্রেমী বন্ধুর কাছ থেকে গতকাল সকালে বইটি পড়ার রেকমেন্ডেশন পাই। তারপর বেরিয়ে পড়ি কলেজ স্ট্রিটের উদ্দেশ্যে। খুঁজে নিয়ে আসি ভগ্নাংশ নির্ণয়। এবং বলাই বাহুল্য, আজ এইমাত্র বইটা শেষ করে এক উদাসীন অথচ সুন্দর অনুভূতিতে আমার হৃদয় পূর্ণ হলো। ইনিই তাহলে স্বনামধন্য জয় গোস্বামী!
বইটিতে তিনটি উপন্যাস আছে। ভগ্নাংশ নির্ণয়, অনিমেষ ফিরছে, মরুভূমির শেষ কবিতা। ভগ্নাংশ নির্ণয় এবং অনিমেষ ফিরছে - এই দুটি উপন্যাস খুব ভালো লাগল। তবে যে দুটি উপন্যাসের নাম লিখলাম সেদুটি ভীষণভাবে মন ছুঁয়ে গেল তাদের কাহিনীর উদ্বেগসৃষ্টি করার ক্ষমতা এবং শেষ অধ্যায়ের মধ্যে দিয়ে এক যথাযথ পরিপূর্ণতা পাঠককে অনুভব করানোর জন্য। শেষ উপন্যাসটিও সুন্দর। তবে আগের দুটি আমার কাছে বেশী প্রিয় হয়ে রইলো।
যৎসামান্য একটু স্পয়লার থাকবে পরের দুটি অনুচ্ছেদে। যদি গল্পের এককণাও না জেনে আমার মতই চমকিত হতে চান ও একইসঙ্গে পরিপূর্ণতা অনুভব করতে চান, আমি অনুরোধ করবো রিভিউটি আর না পড়তে। তবে স্পষ্টভাবে গল্পের আসল প্রাণটুকু নিংড়ে নিয়ে সবার সামনে নগ্ন অবস্থায় উপস্থাপিত করতে আমি আগ্রহী নই। তাই এই রিভিউয়ের পরের কথাগুলো যদি পড়েও নেন বইটি পড়ার আগে, উপন্যাসের সৌন্দর্য গ্রহণে কোনো দুর্বলতা আসবেনা, এটুকু বিশ্বাস রাখতে পারেন।
প্রথম উপন্যাসটির নাম ”ভগ্নাংশ নির্ণয়”, এবং যথার্থ এই নামকরণ। গল্পের মূল চরিত্র বেশ কয়েকজন থাকলেও একটি বিশেষ চরিত্রের চারপাশ দিয়ে উপন্যাসটির বিভিন্ন পর্ব লেখা হয়েছে। মধ্যবিত্ত পরিবারের দীনতা, সামাজিক এবং চারিত্রিক পাপ-পুণ্যের হিসেবের সঙ্গে সেই দীনতার নৈতিক ও মানসিক লড়াই এবং সুন্দর মনের এক মানুষের কিশোরকাল থেকে শুরু করে বৃদ্ধাবস্থায় উপনীত হয়েও মনের সুরেলা সৌন্দর্যের ছটায় উপন্যাসটি খুব সুন্দরভাবে আলোকিত হয়েছে। সম্পূর্ণ উপন্যাসটির মধ্যে যেমন দরিদ্র কয়েকটি চরিত্রর জীবনযাপনের কষ্ট ও প্রতিকূলতা পাঠকের বুকে এসে আঘাত করে, ঠিক তেমনই কাহিনীর শেষের দিকে এসে গল্পের অন্যতম মূল চরিত্রের নিষ্পাপ সৌন্দর্যের পরিচয় পেয়ে পাঠকের হৃদয় যেন স্নিগ্ধ হয়ে যায়। উপন্যাসটি একবার পড়ে মন ভরেনি। আমার সারাজীবনে পড়া অন্যতম এক সামাজিক উপন্যাস হয়ে রইল সুদীর্ঘ উপন্যাসটি।
দ্বিতীয় উপন্যাসটির নাম “অনিমেষ ফিরছে”, এটি পড়ে প্রথম উপন্যাসের শেষ অধ্যায় পড়ার মতই আশ্চর্য হলাম, এও কি সম্ভব? একটা কাহিনীর মধ্যেই আরেকটা কাহিনী লেখা হয়ে চলেছে? এরকম পরিণতি এর আগে কোনো উপন্যাসে পড়ার সৌভাগ্য আমার হয়নি। আরো ভালো লাগত যদি “কাহিনীর মধ্যে কাহিনী”-টির একটা সুন্দর পরিণতি দেখতে পেতাম। কিন্তু সঙ্গত ভাবেই সেই কাহিনী অসমাপ্ত। লেখক ও তাঁর লেখা - এই দুটি একে অপরকে জড়িয়ে ধরে এত সুন্দরভাবে এগোচ্ছিল যে শেষটুকু পড়ে আসলে কি ঘটছে সেটা বুঝতে পেরে একটু হতভম্ব হয়ে বসে রইলাম। অনিমেষের শেফালিদিকে যে আমিও ভালোবেসে ফেলছিলাম একটু একটু করে ...।
শেষ উপন্যাসটি, “মরুভূমির শেষ কবিতা”-য়, এক প্রয়াত কবির চেনা জানা মানুষ ও মুখগুলোকে নিয়ে রচিত হয়েছে, যার শেষটুকু হল এক সাররিয়ালিজমে রঙীন উদাসীনতা। শেষের উদাসীন কথাগুলি ভালো লাগলেও অন্য দুটির মত প্রাণ আমি এই উপন্যাসটিতে পাইনি। তবে এটি আমার ব্যক্তিগত মতামত। তবে রচনার সৌন্দর্য এবং মূল চরিত্রের বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গী ও বিভিন্ন মানুষের চোখ দিয়ে মূল্যায়ণের জন্য উপন্যাসটি অবশ্যপাঠ্য।
প্রথম আপনার প্রিয় লেখক বা কবির কোন বই পড়েছিলেন, মনে পড়ে কি? কোন বইটা হাতে নিয়ে উলটে পালটে কিনবেন কি কিনবেন না ভেবে শেষ অবধি কিনেছিলেন এবং সারাজীবন সেই বইটিকে ভালোবেসেছিলেন? অনেকে আছেন, জানি। লেখক বা কবির রচনার সৌন্দর্য পাঠকের বুকে যে স্নিগ্ধতা, পাঠকের সন্দিগ্ধ চোখেমুখে যে চাঁদের আলো এনে দেয়, তাতেই একটি বইয়ের সার্থকতা। এবং এক্ষেত্রে, আমার ক্ষেত্রে, সার্থক আমার দুপুর রোদে কষ্ট করে কলেজ স্ট্রিট যাওয়া, সার্থক এই বইটি, সার্থক এক লেখকের সঙ্গে প্রথমবার পরিচয় হওয়া।
অভীক, তোমাকেও ধন্যবাদ। এত সুন্দর একটা বইয়ের কথা আমাকে জানানোর জন্য।
জয় গোস্বামী কবি। তাই তার গল্পেও যেন কবিতা গান আর কাব্যরসের ছড়াছড়ি। পড়তে বেশ লাগে।
প্রথম গল্প ভগ্নাংশ নির্ণয়। গল্প না বলে উপন্যাসিকা বলা যেতে পারে। কারণ উপন্যাসের ভগ্নাংশ মিলিয়ে দেয়ার কাজটা খুব ভালভাবে করেছেন। শেষদিকে চমকে যেতে হয়।
দ্বিতীয় গল্পে আছেন বিধিবাম। তার বিধি যেন বামে হেলে আছেন। তবে কল্পনারা তাকেও ঘুমোতে দেয় না।
সবশেষ গল্পে আসেন এক মৃত কবি। কবিতার মতন তার জীবন। একটু বেসামাল ছন্নছাড়া, আর একটু আবেগের লাগামবিহীন ঘোড়া।
ভালো লাগলো। মনাশ গণপাঠাগার থেকে ধারে এনেছিলাম। তাদেরকে অনেক ধন্যবাদ বইটা সংরক্ষণের জন্যে।