অদম্য সেন। ডাকনাম অ্যাডাম। কলকাতার সাদামাটা ছেলেটা সময় আর পরিস্থিতির পাকদণ্ডি বেয়ে হয়ে উঠেছে একজন সাদা-কালো মানুষ। ফিস গ্রামের ছোট্ট অনাথ আশ্রমের সঙ্গে পৃথিবীতে ছড়িয়ে থাকা আরও দশটা অনাথ আশ্রম চলে ওর টাকায়। ‘মরালিটি’-কে নিজের মতো করে দেখে ও। তবু খারাপ কাজের ফাঁকেও কী করে যেন শেষমেশ সাধারণ, নিরীহ মানুষদের পাশেই দাঁড়ায় অদম্য। এই বইয়ের তিনটে গল্পে অদম্য ফিরে ফিরে এসেছে কলকাতায়, তার ছোটবেলার শহরে। তিনটে গল্পতেই কোনও না কোনওভাবে বিপন্ন শহরটাকে বাঁচাতে, দুর্বলের পাশে দাঁড়াতে সে ছুটে এসেছে এখানে। শত্রুর চোখে চোখ রেখে সে নরকের অন্ধকার থেকে বের করে এনেছে শহরকে। আড়ালে থেকেও সে মার্কোস আদিলের সঙ্গে প্রতিহত করেছে সব চক্রান্ত, সব ধ্বংসের প্রস্তুতি। কখনও গল্প ছুটে গেছে সার্বিয়া, কখনও উলান বাটোর, কখনও আবার নিউজিল্যান্ড! আর সমস্ত বিন্দুকে একত্র করে সেজে উঠেছে একের পর এক রহস্য! যার কেন্দ্রে চলে এসেছে অদম্য। ওকে সহজে কেউ দেখতে পায় না। ধরতে পারে না। ওর সম্বন্ধে মানুষে বলে, ও অন্ধকারের চেয়েও অন্ধকার। আলোর চেয়েও আলো! ও উন্মাদের চেয়েও উন্মাদ! পাহাড়ের চেয়েও স্থির! ও পালকের চেয়েও হালকা। পারদের চেয়েও ভারী! ও আগুনের চেয়েও উত্তপ্ত আর বরফের চেয়েও শীতল। তবে ও নিজের পরিচয় দিতে গিয়ে কেবল বলে, ওর নাম, ‘সেন, অদম্য সেন।’
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তী যে এরকম টানটান উত্তেজনাপূর্ণ থ্রিলার লেখেন বইটা না পড়লে জানতেই পারতাম না,এমনকি তাঁর লেখা যে কোনো থ্রিলার বইও আছে সেটাই জানতাম না।পড়া শুরুর আগে তো ভাবছিলাম এই লেখক তো রোম্যান্টিক উপন্যাস লেখেন, ওনার লেখা থ্রিলার আবার কেমন হবে !? কিন্তু পড়ে আমার দারুন লাগলো। এরকম থ্রিলার আরও পড়তে চাই।
(১) অন্ধকারের রাজপুত্র : কলকাতা শহর টেরোরিস্টের কবলে পড়ে। প্রথমে ধ্বংস করে ময়দানে সদ্য তৈরি হওয়া একটি স্টেডিয়াম, তারপর একটি মাল্টিস্টোরেড। এরপর সরকারের কাছে খবর পাঠায় টেরোরিস্ট দের ২টি ডিমান্ড আছে তা পূরণ করতে হবে, তা নাহলে আরও কিছু ধ্বংসলীলা দেখতে হবে। কিন্তু কি সেই দাবি ? শেষপর্যন্ত কি ঘটে ??
👉 জাস্ট ওয়াও। দুর্দান্ত একটা থ্রিলার পড়লাম অনেকদিন পর। কোনো কথা হবে না। নাজিম উদ্দিনের বাস্টার্ড সিরিজের পর কোনো দুর্দান্ত থ্রিলার পড়লাম।
(২) আলোর প্রতিদ্বন্দ্বী : আবারও কলকাতা শহর সন্ত্রাসবাদীর খপ্পরে। আবার ঠিক দুর্গাপুজোর সময়টা বেছে নিয়েছে আক্রমণের জন্য।এবারের সন্ত্রাসী আরও ধূর্ত ও ভয়ঙ্কর।প্রথমত, নরেন্দ্রপুরে একটি নির্মীয়মান বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে ডার্টি বম্বে।তারপর ইনলেলিজেন্ট ইন্ডিয়ান মেরিন কমান্ডোস আদিলকে কিডন্যাপ করা হয়। অন্যদিকে কলকাতা ভ্রমণে আসা এক বিদেশীকে তো শূলেই চড়িয়ে দেয়।আবার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে বোমা রাখার মতো ব্যাপার ঘটিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের এক জায়গায় করা হয়। কিন্তু কি দাবী সেই টেরোরিস্টের ? কি চায় সে ? শুধুই কি টাকা নাকি এর পেছনে আছে কোনো বড়ো ষড়যন্ত্র ??
👉 ওহ্ মাই গড !! জাস্ট মাইন্ড ব্লোয়িং থ্রিলার। দারুন লেগেছে পড়তে। একবার শুরু করলে না শেষ করে অন্য কাজ করা যায় নাহ্।
(৩) অদৃশ্য যুবরাজ : পাবক রায় নামের এক বৈজ্ঞানিক কিডন্যাপ হন, যিনি এমন বিশেষ একটি জিনিস আবিষ্কার করেন যার জন্য পৃথিবী ২০০ বছর এগিয়ে যাবে।ঘটনাচক্রে পাবক রায় গুলি বিদ্ধ হন ও জলের তলায় তলিয়ে যান। এরপরেই আসল চমক। পরদিন সবাইকে অবাক করে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হয় আসল পাবক রায়। এটা যদি পাবক রায় হন তবে যে গুলিবিদ্ধ হলো সে কে ? আসল ঘটনা তবে কি??
👉 চরিত্র গুলো পরিচিত - বেশ কিছু চেনাজানা রাজনৈতিক দলের মানুষ রয়েছেন চরিত্রে,যেমন - সিএম ম্যাডাম, পার্থ চট্টপাধ্যায়, ফিরহাদ হাকিম।এইসব চেনাজানা চরিত্র দেখে প্রথমে ভেবেছিলাম সত্যি ঘটনা অবলম্বনে রচিত, শেষে জানতাম কাল্পনিক গল্প।সত্যি বলতে প্রায় ১১টা পৃষ্ঠা মতন শুধু এমনিই পড়ছিলাম, ইন্টারেস্টিং লাগছিল না, তারপর পর থেকে দারুন লেগেছে শেষ পর্যন্ত।
অদম্য ২ লেখক - স্মরণজিৎ চক্রবর্তী জেনার - থ্রিলার প্রকাশক - আনন্দ. মূল্য - 450/-
সেন অদম্য সেন!!! লেখকের ভাষায় "আমার কোনো নাম নেই শুধু যারা ধ্বংসকে, মৃত্যুকে আলো বলে বিক্রি করতে চায় আমি সেই আলোর প্রতিদ্বন্দ্বী মাত্র" একজন হাইলি স্কীলড এসাসিন, নানাবিধ অন্ধকার জগৎ এর নানা অজানা কাজ এর জন্য কন্ট্রাক্ট করা হয় তাকে। অর্থের বিনিময়ে করতে হয় নানা অন্ধকার জগতের কাজকর্ম। অগাধ তার দেশভক্তি, মাতৃভূমির প্রতি এক অমোঘ টান।
কী করে সে এতো টাকা নিয়ে? আসলে তো সে বর্তমান যুগের রবিনহুড। যে টাকা সে কাজ বাবদ পায় তা চলে যায় তার বড়ো হয়ে ওঠা চার্চ এর ফাদার ফ্রান্সিস এর কাছে, যাতে কিছু অনাথ শিশু খেয়ে পরে থাকতে পারে। অসাধারণ একটি চরিত্র আর আর এই চরিত্রের গুণাবলী ও বৈশিষ্ট্য গুলোর জন্যই আপনি বারবার উপন্যাস গুলো পড়বেন।
পটভূমি - ছোট্ট অনাথ ছেলেটিকে নিজের কাছে নিয়ে যান ফাদার ফ্রান্সিস। বছর কেটে যায়, আল্পসের কোলে এক নিভৃত চার্চ এ বড়ো হয়ে উঠতে থাকে সে। তারপর একদিন আচমকাই পৃথিবীর সামনে এসে দাঁড়ায় সাধারণ চেহারার বাঙালি ছেলেটি। আলো- আঁধারির মধ্যে তার যাতায়াত। ইউরোপ, আফ্রিকা, এশিয়া - সর্বত্র ঘুড়ে বেড়ায় সে। ছায়াময় তার গতিবিধি, গোপনীয় তার কাজকর্ম। মাঝে মাঝেই সে আইনের নিয়ম ভাঙে, বেড়াজাল টপকায়।
এই সংকলনে আছে তিনটি উপন্যাস, আমি প্রত্যেকটি উপন্যাসের নিয়েই সংক্ষিপ্ত আলোচনা করবো।
" অন্ধকারের রাজপুত্র" - ঠিক আগের উপন্যাসের পটভূমির মতো এবারও কলকাতা শহর আন্ডার টেরোরিস্ট আট্যাক। প্রথমে ধ্বংস করে ময়দানে সদ্য তৈরি হওয়া একটি স্টেডিয়াম, তারপর একটি মাল্টিস্টোরেড বিল্ডিং। এরপর সরকারের কাছে খবর পাঠায় টেরোরিস্ট দের ২টি ডিমান্ড আছে তা পূরণ করতে হবে, তা নাহলে আরও কিছু ধ্বংসলীলা দেখতে হবে। এখান থেকেই কিভাবে কলকাতা আবার কাম ব্যাক করে তার ই গল্প 'অন্ধকারের রাজপুত্র'। অদম্য কোথায়? শেষপর্যন্ত কি ঘটে ?? তার জন্য আপনাকে পুরো উপন্যাসটি অবশ্যই পড়তে হবে।
" আলোর প্রতিদ্বন্দ্বী " আবারও কলকাতা শহর সন্ত্রাসবাদীর খপ্পরে। আবার ঠিক দুর্গাপুজোর সময়টা বেছে নিয়েছে আক্রমণের জন্য। এবারের সন্ত্রাসী আরও ধূর্ত ও ভয়ঙ্কর। প্রথমে নরেন্দ্রপুরে একটি নির্মীয়মান বাড়ি ধ্বংস করে দেওয়া হয় ডার্টি বম্বে।তারপর ইনটেলিজেন্ট ইন্ডিয়ান মার্কোস কমান্ডো আদিলকে কিডন্যাপ করা হয়। অন্যদিকে কলকাতা সফরে আসা এক আন্তর্জাতিক রাজনীতিক কে তো শূলেই চড়িয়ে দেয়।আবার দুর্গাপুজোর প্যান্ডেলে বোমা রাখার মতো ব্যাপার ঘটিয়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের নিয়ে আসা হয় লালবাজারে। তারপর কি হয়? অদম্য কি পারবে কলকাতা সহ আদিল কে বাঁচাতে? না নিজেই নিহত হবে?
" অদৃশ্য যুবরাজ " পাবক রায় নামের এক বৈজ্ঞানিক কলকাতায় আসেন নিজেদের আবিস্কৃত যুগান্তকারী এক প্রোডাক্ট লঞ্চ করার জন্য, এমন ই বিশেষ এক প্রোডাক্ট যা পৃথিবীকে ২০০ বছর এগিয়ে নিয়ে যাবে। এই বিশেষ প্রোডাক্টের সত্ব ভারতে যে গোষ্ঠির কাছে আছে, তাদের ফ্যাক্টরি গুলোতে ঘটতে থাকে একের পর এক বিস্ফোরন। এদিকে ঘটনাচক্রে পাবক রায় নিজের বাড়ি থেকে কিডন্যাপ হন, বৈজ্ঞানিক কে নিয়ে দেশান্তরী হওয়ার সময় গুলি বিদ্ধ হন বৈজ্ঞানিক মারাও যান। এরপরেই আসল চমক। পরদিন সবাইকে অবাক করে মিডিয়ার সামনে উপস্থিত হয় আসল বৈজ্ঞানিক পাবক রায়। এটা যদি পাবক রায় হন তবে যে গুলিবিদ্ধ হলো সে কে ? আসল ঘটনা তবে কি??
পাঠ প্রতিক্রিয়া - অদম্য পড়া শেষ করে এক দারুন উত্তেজনা নিয়ে অদম্য ২ শুরু করেছিলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে সেই উত্তেজনা মিয়ে আসে। প্রত্যেকটি উপন্যাসের পটভূমি এক ধরনের। কলকাতায় ঘটনা ঘটে, প্রতিবার ই পুজোর সময়, দেশী বা বিদেশী শক্তির চক্রান্ত, একজন ঘর শত্রু বিভীষণ যেসব খবর শত্রুদের জানান দেয়, মার্কোস কমান্ডো, অদম্য আর তার এক সাংবাদিক বন্ধু। এই সবের মধ্যেই উপন্যাস গুলো ঘোরাঘুরি করে। আমরা যারা বিদেশী থ্রিলার মুভি অথবা বই পড়তে ভালোবাসি বা অনেক কয়েকটি পড়েছি, তাদের কাছে কিছু ঘটনা প্রেডিক্টেবল মনে হতেও পারে।
সত্যি বলতে অদম্য ২ পড়ার পড়ে তৃতীয় পার্ট টি পড়ার ইচ্ছা অনেকটাই কমে গেছে। লেখকের থ্রিলার ছোট গল্প গুলো তুলনামূলক ভাবে বেশ ভালো।