নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর জন্ম ফরিদপুর জেলার চান্দ্রা গ্রামে, ১৯ অক্টোবর ১৯২৪।পিতা জিতেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী ছিলেন ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যের বিখ্যাত অধ্যাপক।শিক্ষা: বঙ্গবাসী ও মিত্র স্কুল; বঙ্গবাসী ও সেন্ট পল’স কলেজ।সাংবাদিকতায় হাতেখড়ি দৈনিক ‘প্রত্যহ’ পত্রিকায়। ১৯৫১ সালে আনন্দবাজার প্রতিষ্ঠানে যোগ দেন। একসময় ছিলেন ‘আনন্দমেলা’র সম্পাদক এবং পরবর্তীকালে ‘আনন্দবাজার পত্রিকা’র সম্পাদকীয় উপদেষ্টা।কবিতা লিখছেন শৈশব থেকে। কবিতাগ্রন্থ ছাড়া আছে কবিতা-বিষয়ক আলোচনা-গ্রন্থ। আর আছে উপন্যাস ও ভ্রমণকাহিনি।শব্দ-ভাষা-বানান-শৈলী নিয়ে রচিত বিখ্যাত বই ‘বাংলা: কী লিখবেন, কেন লিখবেন’।পুরস্কার: ১৯৫৮ উল্টোরথ, ১৯৭৩ তারাশঙ্কর, ১৯৭৪ সাহিত্য অকাদেমি, ১৯৭৬ আনন্দ। পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির সভাপতি (২০০৪-২০১১)। সাহিত্য অকাদেমির ফেলো ২০১৬। এশিয়াটিক সোসাইটির ইন্দিরা গান্ধী স্বর্ণপদক ২০১৫। কলকাতা (২০০৭), বর্ধমান (২০০৮), কল্যাণী (২০১০) বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাম্মানিক ডি লিট।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমন্ত্রণে বিদ্যাসাগর লেকচারার হিসাবে ১৯৭৫ সালে প্রদত্ত বক্তৃতামালা ‘কবিতার কী ও কেন’ নামে গ্রন্থাকারে প্রকাশিত হয়।বহুবার বিদেশ ভ্রমণ করেছেন। ১৯৯০ সালে লিয়েজে বিশ্বকবি-সম্মেলনে একমাত্র ভারতীয় প্রতিনিধি।শখ: ব্রিজ ও ভ্রমণ।
কবিতা কী, কবিতার শিল্পরূপ ও ভাবার্থ কীভাবে অনুধাবন করতে হয়, কবিরা কীভাবে লেখেন - এমন কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা আছে বইতে। সম্ভবত আরো ২০ বছর আগে পড়লে বেশি ভালো লাগতো।
কবিতা সম্পর্কে ইংরেজিতে একটা প্রাজ্ঞবচন আছে যে ‘কবিরা তাদের নিজেদেরই সঙ্গে কথা বলেন, আর আমরা, পাঠকেরা আড়াল থেকে সেই কথাগুলো শুনে ফেলি। অর্থাৎ কবিতা আর কিছুই নয়, কবিদের স্বগত-সংলাপ মাত্র’। লেখক বলেছেন ‘কবিতা এই বস্তুপৃথিবীর গোপন সৌন্দর্য কে গুণ্ঠনমুক্ত করে দেখায়, এবং এমন ভাবে দেখায় যে, যেসব বস্তুকে আমরা চিনি তাদের ও যেন অচেনা ঠেকতে থাকে’।
কবিতা আর গদ্য দুটোই আসলে শব্দ নিয়ে খেলা করা। গদ্যও একধরনের শব্দ-রূপই, আমাদের ভাবনাকে সেও মূর্তি দেয়, কিন্তু শব্দ সেখানে তার তাৎক্ষনিক বা আভিধানিক অর্থের বেশি কিছু আমাদের বলে না। কবিতার শব্দ সেক্ষেত্রে তার তাৎক্ষনিক অর্থকে ছাড়িয়ে যেতে চায়, প্রায়শ ছাড়িয়ে যায়ও, ইঙ্গিত করতে থাকে অন্যতর কোন অর্থের কিংবা তাৎপর্যের দিকে। এখানেই গদ্য আর কবিতার তফাৎ খুব গাড় হয়ে দেখা দেয়।
কবিতার ক্ষেত্রে শব্দ নির্বাচন ও তার সঠিক বিন্যাস অনেক মুল্য রাখে। লেখক বলেছেন- শব্দের সুস্ট বিন্যাস আসলে কবিতামাত্রকেই সেই সামর্থ্য যোগায়, যা থাকলে তবেই একটি কবিতা, কিংবা তার একটি অংশ সবচেয়ে জোড়ালো ভাবে আমাদের চিত্তে এসে আঘাত করে। কবিতা কোন বিশেষ ভাষা বা বিশেষ ভাবনা কিংবা বিশেষ বিষয়বস্তুর মধ্যে আটকে থাকবার ব্যাপার নয়। কবিতা তাকে ছাড়িয়ে যেতে পারে, যায়ও। লেখক আরো বলেছেন- বস্তুত, কোন কবিতার মধ্যে কোন শব্দ বা শব্দগুচ্ছ যখন আড়ষ্ট, অপ্রতিভ ও আধোবোধন হয়ে দাড়িয়ে থাকে, এবং কবিতাটিকে তার লক্ষে পৌঁছে দিতে বিন্দুমাত্র সাহায্য করেনা, তখন এটাই আমাদের বুঝতে হবে যে, শব্দ নির্বাচনে অন্তত সেই কবিতাটিকে নির্মাণ করবার সময় তিনি যথেষ্ট রকমের যোগ্যতা দেখাতে পারেননি।
অষ্টাদশ শতকের কবি টমাস গ্রে বলেছিলেন ‘কবিতা কখনো তার সমকালীন ভাষায় রচিত হয়না’।তবে কবিতা কেমন ভাষায় লেখা উচিৎ সেটা নিয়ে তর্ক বিতর্ক সেই শুরুর দিক থেকেই। কেউ পছন্দ করে একেবারে আটপৌরে কথ্য ভাষায় লিখতে আবার কেউ একটু কঠিন কঠিন শব্দের কঠিন বুননে কবিতা লিখতে পছন্দ করেন। কেউ পছন্দ করেন কাব্যিক ভাবে লিখতে কেউ গদ্য ধারায় লিখতে। এই ধরুন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের কথাতেই আসি, তিনি কাব্যিক এবং কিছুটা সহজ কথ্য ভাষাতেই কবিতা লিখতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করতেন, তাই বলে তিনি যে কঠিন ভাষায় কবিতা লিখেননি তা কিন্তু না। আর তার এই সহজ ভাষায় কবিতা লেখাটা তৎকালীন কবি সমাজ ঠিক মেনে নিতে পারেনি। সমালোচনা তাকে যথেষ্ট শুনতে হয়েছে। তেমনি প্রখ্যাত কবি W. Wordsworth এর মতে ‘শুধু সেই ভাষাতেই কবিতা লেখা উচিৎ, যা কিনা মানুষের নিত্য ব্যাবহার্য মুখের ভাষা’। কিন্তু আটপৌরে কথ্য ভাষায় W. Wordsworth এর কবিতা লেখা পছন্দ করতে পাড়েননি তৎকালীন প্রখ্যাত কবি S. T Coleridge, এমন নিদর্শন ভুরি ভুরি পাওয়া যায়।
শেষ করবো লেখকের আরেকটি উক্তি দিয়ে, এটা আমার দারুন পছন্দ হয়েছে। লেখক বলেছেন- ‘কীভাবে তৈরি হয়ে ওঠে কবিতা? অর্থাৎ একটি শব্দের আহ্বানে কিভাবে আরেকটি শব্দ তার পাশে এসে দাঁড়ায়, কোনও দৃশ্য উক্তি পরিস্থিতি কিংবা ঘটনা সম্পর্কে কবির অনুভুতি কিংবা মানস প্রতিক্রিয়া কীভাবে পরস্পরের-সঙ্গে-অবিচ্ছেদ্যভাবে-আবদ্ধ শব্দমালার মধ্য দিয়ে উন্মীলিত হতে থাকে, সেই শব্দমালা কিভাবে- ভেতর থেকে ঠেলা খেয়ে - একটি পঙতি থেকে আর একটি পঙতিতে গড়িয়ে যায়, দশ বিশ তিরিশ কি পঞ্চাশটি পঙতির সমবায়ে কীভাবে গড়ে ওঠে একটি ফ্রেম, এবং সেই ফ্রেমের মধ্যে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ ভাবনার মুখশ্রী কীভাবে উঁকি দেয়- এই প্রশ্নের উত্তর জানা কি একান্তই জরুরী’?
যদি আপনি কবিতা পছন্দ করেন তবে নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী’র ‘কবিতার কি ও কেন?’ বইটি পড়ে ফেলুন নির্দ্বিধায়। দারুন একটা বই। কবিতাকে কিছুটা চিনতে ও বুঝতে আপনাকে সাহায্য করবে বইটি আশা করি।
কবিতা অনেকের কাছেই একটা দুর্বোধ্য ব্যাপার। কীভাবে কিছু শব্দসমষ্টি একটি মানোত্তীর্ণ কবিতা হয়ে ওঠে আবার কখন অনেক চেষ্টা, ছন্দ আর অন্ত্যমিলের ঝকমকির পরেও কিছু শব্দসমষ্টি কেন কবিতা হিসেবে উত্তীর্ণ হয় না, এইসব নিয়ে আলোচনার সূত্রপাত। শব্দ না বাক্য? ছন্দ না না অন্ত্যমিল? ভাব না ভাষা? আবেগ না উপমা? নাকি সবকয়টি? নাকি কোনোটিই না হলেও চলে? ঠিক কোন বা কোন কোন বিশেষ জিনিসের উপস্থিতির কারণে একটি লেখা কবিতা হয়ে ওঠে? কবিতার হালকা এবং সিরিয়াস পাঠক থেকে শুরু করে, কবিতা লিখতে সচেষ্ট কবিযশপ্রার্থী এমনকি লব্ধপ্রতিষ্ঠ কবি-সাহিত্যিকদের মধ্যেও এইসব নিয়ে ব্যাপক বিতন্ডা আছে। কতো বিশ্ববিখ্যাত কবির কবিতাকে তাঁর সময়ের অন্যান্য কবি বা কাব্য-সমালোচকরা উড়িয়ে দিয়েছেন; কেন দিয়েছেন? কেন জীবনানন্দ তাঁর 'কবিতার কথা' শুরু করেছেন সেই বিখ্যাত লাইন দিয়ে - 'সকলেই কবি নয়। কেউ কেউ কবি;'। জীবনানন্দ বাক্য এখানে এইভাবে এই সেমিকোলনে শেষ না করলেও কেন আমরা তাঁকে উদ্ধৃত করবার সময় বাক্যের বাকিটুকু উল্লেখ করি না? বাকিটুকু উল্লেখ করলে কবিতা নিয়ে যে কল্পনা আর রহস্যের খেলা সেটা কিছুটা ম্লান হয় বলে? অথচ জীবনানন্দ তো সেই কম উদ্ধৃত অংশটিতে তার সূচনাবাক্যটিকে আরেকটু স্পষ্ট করার চেষ্টা করছেন এই বলে, 'কবি-কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সঙ্গে আধুনিক জগতের নব নব কাব্য-বিকীরণ তাদের সাহায্য করেছে। সাহায্য করেছে; কিন্তু সকলকে সাহায্য করতে পারে না; যাদের হৃদয়ে কল্পনা ও কল্পনার ভিতরে অভিজ্ঞতা ও চিন্তার সারবত্তা রয়েছে তারাই সাহায্যপ্রাপ্ত হয়; নানা রকম চরাচরের সম্পর্কে এসে তারা কবিতা সৃষ্টি করার অবসর পায়।' এই কবি আর কবিতা হয়ে ওঠার পথের রহস্যময় আর অসংজ্ঞায়িত নানা বাঁকের ওপর নিজস্ব বৈশিষ্ট্যপূর্ণ সরল অথচ সংহত ভাষার মাধ্যমে আলোকপাতের চেষ্টা করেছেন নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী।
দেশ-বিদেশের কবি, সমালোচক আর প্রাজ্ঞজনদের উদ্ধৃতি, দৃষ্টিভঙ্গি আর কবিতা নিয়ে লেখকের নিজস্ব চিন্তাভাবনার মাধ্যমে কবিতার মতো একটি আপাতদুরূহ বিষয় নিয়ে প্রাণবন্ত আলোচনাই এই গ্রন্থের উপজীব্য। কবিতাকে সংজ্ঞায়িত করার চেষ্টার মধ্যে দিয়ে এই আলোচনার সূচনা। কিন্তু অন্য প্রায় সব শিল্পের মতই একে সংজ্ঞায়িত করবার চেষ্টা করলেই ব্যাপারটা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়, এই উপলব্ধি ধীরে ধীরে আলোচনার মাধ্যমে স্পষ্ট হতে থাকে। কোনো কাঠামোবদ্ধ সংজ্ঞার মধ্যে না ফেলে একে নিয়ে আলোচনা করতে থাকলে ধীরে ধীরে কবিতাকে উপলব্ধি পর্বের সূচনা করা যায়।
গ্রন্থটির কলেবর বেশ ছোট। দারুণ সুখপাঠ্য এই বইটি শুরু করতেই করতেই শেষ হয় যায়। কবিতা এবং তার কলকব্জা আর ইতিহাসের প্রতি আগ্রহী পাঠকের অতৃপ্তির পুরোটা হয়ত এতটুকু কলেবরে মেটানো গেল না।
প্রথমে আমার নামটা দেখে খুব আগ্রহ জাগে। কারণ কবিতার মতো জটিল ব্যাপারকে ডিফাইন করা বেশ কঠিন। তো ভাবলাম পড়ে দেখা যাক। যেমন ভেবেছিলাম, কবিতা নিয়ে সহজভাবে ব্যাখাতে আসতে গেলেও অনেক জটিল কিছু উদাহরণ, অনেকরকম স্টাডির দরকার রয়েছে। লেখক এগুলো বেশ সুন্দরভাবে পূরণ করতে পেরেছেন। আমাদের দেশের এবং বাইরের দেশের অনেক গুণী লেখক, সমালোচকদের কথা উনি এনেছেন, ঐসব কথা নিয়ে নিজের মতামতও দিয়েছেন। বিভিন্ন উদাহরণ দিয়ে বুঝাতে চেয়েছেন প্রতি অধ্যায়ে। কবিতা নিয়ে লেখকের চিন্তার যে বিশালতা এবং কবিতা নিয়ে উনার যে আবেগ, এসব বিষয়ের প্রতিফলনও দেখা যাবে এই বইয়ে।
যারা কবিতার সাথে জড়িয়ে রয়েছেন বা কবিতা নিয়ে ভাবেন তাদের এই বইটা পড়ে দেখা উচিত বলে মনে হয়েছে।
ছোট্ট একটা বই, কবিতা সম্পর্কে অনেক তথ্য দেয়া আছে। কবিতা সম্পর্কে কিছু প্রশ্ন আমার ছোটবেলা থেকেই মনের মধ্যে ঘোরপাক খেতো। ভাবতাম কবিতা কেনো মানুষ পড়ে, কিভাবেইবা কবির মনে কবিতার জন্ম হয়, এরকম অনেক কিছু। বইটিতে এসব প্রশ্নের উত্তর দেয়া আছে বিস্তারিত ভাবে। তবে বইটির ভাষা একটু কঠিন লেগেছে, হয়তো অন্যদের কাছে সেটি নাও লাগতে পারে। কবিতা সম্পর্কে যাদের জানার আগ্রহ আছে তারা বইটি পড়ে দেখতে পারেন।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তীর বক্তৃতা থেকে এই বইয়ের উৎপত্তি। ৫টি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটি, এই ৫ অধ্যায়ে পাঠক মাত্রই বুঝতে পারবেন কেন কবিতা পড়া প্রয়োজন, জীবনানন্দ, ওয়ার্ডসওয়ার্থ, কোলরিজ, শেলি কিংবা রবীন্দ্রনাথ সবাই আছেন অধ্যায়গুলোতে। কবিতার কি প্রয়োজন সেটা দারুণভাবে ব্যাখ্যা করেছেন তিনি। প্রথম অধ্যায়ে শব্দ নিয়ে খেলাকে যেমন কবিতার অন্তর্ভুক্ত করেছেন, দেখিয়েছেন অবাস্তবিক মানবিক ভাবধারা কিভাবে বস্তুজগতে লুকিয়ে থাকে। দ্বিতীয় অধ্যায়ে কবিতার বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ নিয়ে আলোচনা করে তার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। এত কিছুর পরও মানুষ কবিতা কেন পড়ে এটা নিয়েও কবি লিখেছেন। সৌন্দর্যের সঙ্গে মানুষকে পরিচয় করিয়ে দেয়াই নাকি কবিতার সবচাইতে বড় অর্জন এটাই কবি প্রতিষ্ঠা করেছেন এখানে। কবিতা বুঝতে না পারা বা কবিতার অবস্থান ব্যাখ্যা করা হয়েছে তৃতীয় অধ্যায়ে। চতুর্থ অধ্যায়ে কিভাবে শব্দের পর শব্দ গেঁথে কবিতা তৈরি হয় সেই রেসিপি নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। শেষ অধ্যায়ের নাম কঠিন কবিতা। তাতে আলোচিত হয়েছে কবিতা কেন পাঠকের কাছে কঠিন মনে হয় কিংবা পাঠকের আদৌ কবিতার অর্থ বোঝার প্রয়োজন রয়েছে কিনা সে বিষয়ে। প্রতিটি অধ্যায়েই প্রাঞ্জল ভাষায় ব্যাখ্যা করা হয়েছে, রয়েছে নানা উদাহরণও। এটিই বইকে সমাদৃত করেছে।
কবি নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী কবি হিসেবে কেমন এই নিয়ে দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক আলোচনা হতে পারে , কিন্তু কবিতা বিষয়ে তার গবেষনামূলক ব্যাখ্যামূলক বইগুলো যে বাংলাভাষায় অদ্বিতীয় - এই বিষয়ে যারা পড়াশোনা করেছেন বা আগ্রহ আছে তাই খোঁজ নিয়েছেন - এমন সকলে একমত হবেন আশা করি।
উনার সবচেয়ে বিখ্যাত বই - কবিতার পাঠশালা - আমার মতে কবি হতে চাওয়া সকলের জন্য অবশ্যপাঠ্য একটি বই। আমার কবি হবার যোগ্যতা বা দুঃসাহস কোনোটাই নেই , তবুও পড়েছি। উনার কথার মাঝে যে উদাহরন দিয়ে বুঝানোর সরস ব্যপার তা পড়া বড়ই উপভোগ্য।
আজ পড়লাম উনার কবিতার কী ও কেন , কবিতা কেনো লেখা হয়? কবিতা জিনিসটা আসলে কি? কবিতা দিয়ে আসলে কি হয়? কবিতা না থাকলে এ জগতে কি ক্ষতি বৃদ্ধি হবে? এসকল বিষয়ে লেখক নিজের এবং অন্য কবি- দার্শনিক - সমালোচকদের বক্তব্য সাজিয়েছেন একত্রে। যা বড় সুখপাঠ্য।
যেমন মহান দার্শনিক প্লেটো মনে করতেন - একটি আদর্শ রাস্ট্রে কবিতার কোনো স্থান নেই। কারন কবিরা নিজেরা জনগনের জন্য মঙ্গলজনক কোনো কিছু করেনা। যেমন মহাকবি হোমার তার সময়কার রাজাদের যুদ্ধজয় বা অন্যান্য কীর্তি বর্ননা করেছেন। কিন্তু মহাকবি হোমার নিজে কি করেছেন? নিজে কিছু করেননি অন্যের কাজের বর্ননা দিয়েছেন শুধু , একটি মঙ্গলরাস্ট্রে এরকম অকর্মার দরকার নেই - প্লেটোর বক্তব্য অনেকটা এমনই। তার রিপাবলিক বইয়ে তিনি এমনটা বলেছেন।
পরে তার শিষ্য এরিস্টটল কি বলেছেন কবিতা নিয়ে?
বা গত শতাব্দীর বিখ্যাত দুটি প্রবন্ধ - শিডনির এপোলজি আর শেলির ডিফেন্সে কি আছে কবিতা নিয়ে?
আমার লেখা শেষ করছি বইয়ে পড়া কবিতার চারটি লাইন দিয়ে -
MAID of Athens, ere we part, Give, O, give me back my heart! Or, since that has left my breast, Keep it now, and take the rest!