ধর্ম-পুরাণ-মহাকাব্য ও ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস তছনছ-করা বিস্ফোরক মহা-উপন্যাস। কলকাতার বিখ্যাত এক সংবাদপত্রের সম্পাদক খুন হয়ে যান এক রাতে নিজের চেম্বারে। লালবাজারের ডিসি-ডিডি রজত রায় নামেন তদন্তে। সেই সূত্রে ডিকেও। তদন্তে নেমে এক পাণ্ডুলিপির খোঁজ পায় ডিকে। দীর্ঘ ৩০ বছর গবেষণা করে এক বাঙালি গবেষক, রামায়ণ-মহাভারতের মধ্যে আচ্ছাদিত গুপ্ত সংকেতের অর্থ উদ্ধার করেন। খোঁজ পান বিস্ফোরক তথ্যের যা প্রকাশিত হলে বদলে যাবে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস। সেই পাণ্ডুলিপি এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি। কিন্তু ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী ঘাতকের দল তা চায় না। তারা ঘাতক পাঠিয়ে পণ্ডিত ও পাণ্ডুলিপি, ধ্বংস করতে চায় দুই-ই। কারন কে আসলে রাম বা কে কৃষ্ণ, প্রচলিত ভাবনা আমূল বদলে দেওয়া এই তত্ত্ব প্রকাশিত হলে মৌলবাদীদের অস্তিত্বই হয়ে পড়বে বিপন্ন।
সেই নতুন ব্যাখ্যা কী? কেন খুন হলেন সম্পাদক? পাণ্ডুলিপি ও পণ্ডিত, রক্ষা কি পাবেন ঘাতকের ভয়ংকর থাবা থেকে?
ভারতবর্ষের চলতি ইতিহাস ছিন্নভিন্ন করা বিস্ফোরক উপন্যাস! - (বইয়ের ফ্ল্যাপ থেকে)
দেবতোষ দাশ-এর জন্ম ১১ জানুয়ারি ১৯৭২। মা-বাবা-স্ত্রী-কন্যাসহ থাকেন দক্ষিণ শহরতলি সুভাষগ্রামে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তুলনামূলক সাহিত্যে স্নাতকোত্তর। রাজ্য সরকারের ভূমি ও ভূমি-সংস্কার দফতরে কর্মরত। প্রথম গল্প প্রকাশ ১৯৯৫ সালে ‘অপর’ পত্রিকায়। গল্প প্রকাশিত হয়েছে দেশ, রবিবাসরীয় আনন্দবাজার পত্রিকা, শারদীয়া প্রতিদিন, শিলাদিত্য, কিশোরভারতী পত্রিকায়। লেখেন নাটকও। নান্দীকার তাঁর নাটক ‘বিপন্নতা’ মঞ্চস্থ করে ২০১৪ সালে। নাটক ‘ওচাঁদ’ লিখে পেয়েছেন সুন্দরম পুরস্কার। প্রকাশিত উপন্যাস: ‘বিষকন্যা’, ‘বিন্দুবিসর্গ’ এবং ‘সন্ধ্যাকর নন্দী ও সমকালীন বঙ্গসমাজ’। সিনেমা, সংগীত আর খেলাধুলোয় আগ্রহী।
গরিবের ড্যান ব্রাউন। একটা ননফিকশন বক্তব্য এবং একটা ফিকশন অংশকে শ্যামদেশীয় যমজের মত একসঙ্গে সেলাই করে দেওয়া হয়েছে। ফলে কোনোদিকটাই আর বিশেষ পাঠযোগ্য থাকেনি।
বইয়ের শুরুতেই সেলিব্রিটি পাঠপ্রতিক্রিয়া হিসেবে সেঁটে দেওয়া, দা ভিঞ্চি কোড যেমন খ্রিষ্টীয় মিথোলজিকে ফালাফালা করেছে এ বইও তেমনই ভারতীয় মিথোলজি নিয়ে সাহসী পদক্ষেপ। শুরুটা মন্দ হয়নি। কিন্তু ফালা ফালা করার পরে লেখক সেই ফালিগুলিকে নিয়ে কী করবেন বুঝে উঠতে পারেননি। শেষ কয়েক পাতা বাদে গদ্য অত্যন্ত দুর্বল, প্লটও কাঁচা। ফেসবুক পোস্টের মতই খানিক। ক্রমশ পুরো লেখাটাই কেমন যেন জোর করে মেলাতে চাওয়া চক্রান্ততত্ত্বের মত হয়ে যায়। জানি ফিকশন, তবুও মন্দ থেকে মন্দির, হীন থেকে হিন্দু, মহান থেকে হোমো (স্যাপিয়েন্স), মনু থেকে হিউম্যান, মঙ্ক থেকে মাঙ্কি (হনুমান), দক্ষযজ্ঞ পৃথিবীর প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, অনুস্বর মাথার টিকির প্রতীক, ইওরোপের জিপসিরা বেদাধ্যয়নকারী, ভরতুকি থেকে ভরত, কুসীদ থেকে কুশ, অর্জুন হোয়াইট মানি আর কৃষ্ণ ব্ল্যাক মানি, গু থেকে গুডস, পুঁজ থেকে পুঁজি... বিরক্তিকর থেকে ধাপে ধাপে হাস্যকর হয়ে ওঠে ব্যাপারটা।
জন্মভিত্তিক বর্ণঅনুক্রম (যারে বাংলায় কয় বাই-বার্থ কাস্ট হায়ারার্কি) যে একুশ শতকেও একটি সামাজিক অভিশাপ সে বিষয়ে কোনো দ্বিমতের জায়গাই নাই। বৈদিক অর্থোডক্সিকে নাকচ করে লালন একদা বলেছিলেন, বৈদিক মেঘে ঘোর অন্ধকার উদয় হয় না দিনমণি। খোদ গীতাতেও আছে, বেদবাদরতাঃ পার্থ নান্যদস্তীতিবাদিনঃ। কিন্তু লেখক সে প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে ফিকশন ও নন ফিকশন ঘেঁটেঘুঁটে ফিক্সেটেড রাজনৈতিক ধারণার কাছে বারংবার আত্মসমর্পণ করে ক্লিশে রচনা করেছেন। অনেকখানি ননফিকশনসুলভ রাজনৈতিক অ্যাম্বিশন দেখিয়েছে যে লেখা, সে লেখায় সমকালীন বাংলায় সুনামগঞ্জ থেকে মুর্শিদাবাদে লোকধর্মের অনুসারীদের উপর সংগঠিত ধর্মের নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে কোনোরকম সচেতনতা অনুপস্থিত।
সব মিলিয়ে, সোশ্যাল মিডিয়ায় শোরগোল করে ওড়ানো আরও একটি ধোঁয়ার বেলুন। দেড় তারা দেওয়া উচিত, আশা জাগিয়ে হতাশ করার নানাবিধ ওপরচালাকির জন্য এক দিলাম।
দর্শন বা ভাষাতত্ত্ব নিয়ে তেমন কিছু জানি না, কিন্তু বইয়ের খানিকদূর গিয়ে উইটজেনস্টাইন-এর 'অর্ডিনারি ল্যাঙ্গুয়েজ ফিলসফি'র কথাই মনে এল। আমাদের প্রশ্নের জবাবগুলো জটিল এবং ধোঁয়াটে, কারণ আমরা প্রশ্নগুলোই ঠিকভাবে করতে পারি না। শব্দের ভেতরেই আছে শব্দের মানে, প্রতিটি বর্ণের আছে স্বতন্ত্র অর্থ, শব্দার্থের প্রতীকী অর্থকে এড়িয়ে আদি ক্রিয়াভিত্তিক উৎসে ফিরে গেলেই মিলবে ইতিহাসের সব প্রশ্নের জবাব। মোটামুটি এই দর্শনের ব্যাখ্যাই এই বইয়ের মূল ভাষ্য। সহজ ভাষায় ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থের তত্ত্বের ব্যাখ্যা, এরকম কিছুতেই যদি বইটা সীমাবদ্ধ থাকতো, তাহলে একে ৪ দেয়া যেত। যদিও বারবার একই কথা বলে খানিকটা রিপিটিশন আছে, এবং যে তত্ত্ব বলা হয়েছে সেখানেও বেশ কিছু ব্যাখ্যা আরোপিত এবং অনেকগুলোই বেশ ফার-ফেচড মনে হয়েছে, তারপরেও সেটা আলোচনার দাবী রাখে। কিন্তু ১২টা বেজেছে লেখাটাকে থ্রিলারের রূপ দিতে গিয়ে। এটা অবশ্য মানতেই হবে যে, 'শব্দতত্ত্ব বা ভাষাতত্ত্বের নতুন ব্যাখ্যা' জাতীয় নাম দিয়ে নন-ফিকশন বই বের করলে বাংলার ধুরন্ধর পাঠককুল সে বই এখনকার এক-দশমাংশও কিনতেন কিনা সন্দেহ, আর লেখক-প্রকাশকের পকেটের দিকটাও আমাদের ভাবতে হবে, কিন্তু সেটা হলে বইটার গ্রহণযোগ্যতা অনেকটা বাড়তো। এই বইটা এমনকি শিশুতোষ থ্রিলারও হয়নি। প্লটের জটিলতা নেই, উত্তেজনা নেই, অহেতুক রিপিটিশন, সংলাপ চূড়ান্ত দুর্বল, কাহিনী বিল্ডআপ আরো দুর্বল, একটা চরিত্রও গড়ে ওঠেনি, এমনকি মূল গোয়েন্দা চরিত্রটাও অত্যন্ত অবিশ্বাস্য ও আন্ডার-ডেভেলপড। কাজেই এই থ্রিলার বানানোর জন্য মাইনাস ১ ধরে বইয়ের রেটিং ৩। বেশ কিছু ইন্টারেস্টিং অবজার্ভেশন আছে, ওয়ার্ড প্লে আছে, এই ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থ নিয়ে যে অনেক কাজ আছে সেটা জানতাম না, ভবিষ্যতে পড়ার জন্য কাজে দেবে। যদিও যেভাবে সবকিছুতেই রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণ টেনে মেলানো হয়েছে, সেটা অনেকটা কন্সপিরেসি থিওরির মত লাগে; ওরকমভাবে টানলে কোনভাবে এটাও মিলিয়ে দেয়া যেতে পারে যে, মানুষের আদি নিবাস ছিল এন্ড্রোমিডা গ্যালাক্সিতে। তারপরেও প্রাচীন ভারতের অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিয়ে আলোচনাগুলো ইন্টারেস্টিং, আরো ইন্টারেস্টিং (এবং বিশ্বাসযোগ্য) লেগেছে প্রতিটি বর্ণমালার নিজস্ব অর্থ বা মানে থাকার ব্যাপারটা। চাইনিজ বা জাপানীরা যে কাঞ্জি বর্ন দিয়ে লেখে, সেগুলো পিকটোরিয়াল বর্ণমালা, এবং প্রতিটা কাঞ্জির নিজস্ব অর্থ আছে। সেই কাঞ্জিগুলো দুই বা ততোধিক জোড়া দিয়ে নতুন শব্দ হতে পারে, এবং নতুন শব্দার্থের সাথে মূল কাঞ্জিদ্বয় বা ত্রয়ের অর্থেরও মিল থাকে। যাই হোক, আলোচনা এগুলোতে থাকলেই বইটা ভাল্লাগতো, ভবিষ্যতে এ নিয়ে আরো লেখা হলে পড়ার আশা রাখি। সবশেষে, এক মহিলা দেখলাম এই বলে ১ রেটিং দিয়েছে যে, বইটায় হিন্দুত্বতে নিচে নামিয়ে মুসলিমদের গ্লোরিফাই করা হয়েছে। মজার ব্যাপার হলো, পুরো বইয়ের কোথাও মুসলিম ফিলসফি নিয়ে কোন আলোচনাই নেই, পুরোটাই পুরাণ ও প্রাচীন ভারত নিয়ে। এই উগ্রবাদী মহিলা বইয়ের ১ পাতাও না পড়ে স্রেফ অন্যের কাছে শুনেই যে রেটিং দিয়ে বসে আছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। লেখক জাতটার দিকে এজন্যই আমার পূর্ণ সহানুভূতি থাকে সবসময়; কতরকম মহামূর্খের সাথে যে এদের কারবার করতে হয়! আর হ্যাঁ, ভারতে দলিত সমস্যা যে কি ভয়াবহ এবং অমানবিক, সেটা সম্পর্কে সামান্য ধারণা পেতে 'আর্টিকেল ১৫' ম্যুভিটা দেখতে পারেন। উগ্রবাদী সুবিধাবাদী ধর্মান্ধ জনগোষ্ঠী পৃথিবীর সবখানেই একই রকম।
দারুণ প্লট, লেখনীও দারুণ। দুর্বলতা এক্সিকিউশনের। রামায়ণ, মহাভারতের পাঠোদ্ধারের নতুন এক পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন কবীর খান। তা আলোতে আনতে গিয়ে খুন হয়ে গেল এক মিডিয়া মহারথী। মৃত্যুর আগে কিছু একটা বলে গিয়েছে সংকেতের সাহায্যে। রহস্য সমাধানে ডাক পড়ল ডিকে-র। কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বেরিয়ে এল অ্যানাকোন্ডা। লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন ড্যান ব্রাউনের থেকে ইনস্পায়ার্ড তিনি, প্লট ইউনিক না তা তো বলাই বাহুল্য। পাঠোদ্ধারের পদ্ধতিটার জন্য বাহবা পাবেন তিনি, তবে সেই পাঠোদ্ধারের পদ্ধতি নিয়ে রিপিটেটিভ কচকচানিটাই কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর ঘটনা পরিক্রমা বাকি সবই গতানুগতিক, একঘেয়ে।
অসাধারণ বললেও কম হয়ে যাবে। লেখকের কাজই হলো শব্দ নিয়ে খেলা করা। কিন্তু দেবতোষ দাশ যে খেল দেখিয়েছেন, তা শুধু মাত্র প্রশংসা নয়, ব্যাপক আলোচনারও দাবিদার। বিন্দুবিসর্গ একটি রোমাঞ্চ উপন্যাস। এক বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খুনের ঘটনা দিয়ে কাহিনি শুরু। কিন্তু এই রহস্য বইটির খোলস মাত্র। পরতে পরতে লেখক উন্মোচন করার চেষ্টা করেছেন সুপ্রাচীন এক ইতিহাস। সেই সাথ��� প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন ভাষা পঠনের এক অপ্রচলিত রীতি। এই ইতিহাস ও ব্যাকরণ কতটুকু সত্য বা মিথ্যা, তা ঐতিহাসিক আর ব্যাকরণবিদদের তর্কের জন���য তোলা থাক। তবে চিন্তার যে দুয়ার লেখক খুলে দিয়েছেন, তার জন্য থাম্বস-আপ। নিত্য ব্যবহার্য শব্দগুলোর যে অমন ভিন্নরূপ থাকতে পারে, তা, অন্য কারও জানি না, আমার কল্পনাতেও ছিল না। কাহিনির সাথে তথ্যের সন্নিবেশ ঘটাতে গিয়ে আজকাল অনেক লেখক তালগোল পাকিয়ে ফেলেন। শেষতক যা দাঁড় করান, তা না ফিকশনের কাতারে পড়ে, না নন-ফিকশনের। বিন্দুবিসর্গ তথ্যবহুল এক উপন্যাস। ভাষা আর ব্যাকরণ এই উপন্যাসের প্রাণ। তা সত্ত্বেও পড়তে গিয়ে মনে হয়নি লেখক তথ্য গিলতে বাধ্য করছেন। চমৎকার লেখনশৈলীর কারণে বরং আগ্রহ জন্মেছে ক্রিয়া ভিত্তিক শব্দের অর্থ নিয়ে!
উদভ্রান্ত সেই আদিম যুগে, যখন আমিও শব্দ ও তত্ত্ব নিয়ে নানা বইয়ের ভিড়ে ঘেঁটে ঘ হয়ে গোপালের মতো করে ভেবেছিলাম, "উহাদের শব্দ আছে বিস্তর, কিন্তু অর্থ নাই", তখনই হাতে এসেছিল এই বইটি। প্রাথমিকভাবে লেখাটা চাঁদির ঠিক মাঝখানে হাতুড়ির মতো ঠেকেছিল। বাঁটুলের শত্রু ভজা ও গজা তাদের শিকারকে অপশন দিয়েছিল, "ঠিক করুন, বশ হবেন না অবশ?" আমি একরকম অবশ হয়েই চার তারা বসিয়ে দিয়েছিলাম বইয়ের প্রশংসা করে। কিন্তু... ব্যথা কমে। অসাড় ভাব কাটে। বুঝভুম্বুল দশা ত্যাগ করে প্রশ্ন জাগে, "এ আমি কী পড়লাম?" তারপর আসে উপলব্ধি। একেবারে রাবিশ থ্রিলারের মোড়কে ভয়াবহ (এবং ভুল) যা-সব ব্যাখ্যা পড়েছি, তা মনে পড়ে। এক ভদ্রলোক বলেছিলেন, "শিক্ষা আনে চেতনা। চেতনা আনে বিপ্লব। বিপ্লব আনে মুক্তি।" আমারও শিক্ষা হল। তাতে অন্তিমে কী লাভ হল, জানি না। তবে এই বইয়ের লেখক যে-সব সাইকোডেলিক ভাবনার বশবর্তী হয়ে বস্তুটির জন্ম দিয়েছেন, সেই ভাবনাদের উদ্দেশে একটি এবং অখাদ্য থ্রিলারটিকে একটি— মোট দু'টি তারা দিয়ে এই বইয়ের তামাম সুদ করলাম।
ভালো লেগেছে। নতুন ভাবনা,নতুন নতুন সব তথ্য,থ্রিল...সব মিলিয়ে উপভোগ্য একটি বই। তবে সারা বই জুড়েই একটা খটকা খুব তাড়িয়ে বেড়িয়েছে আমায়। বইয়ের খুব গুরুত্বপূর্ণ একটা চরিত্র 'ডিকে', তাকে যেন লেখক আসমান থেকে নামিয়ে এনেছেন। তার কোনো একাডেমীক ব্যাকগ্রাউন্ড বা কোনো পরিচয়...কিছুই তিনি দেন নি। তার একটাই পরিচয়,সে পুলিশের বন্ধু! তাছাড়া বইয়ের বর্ণনাটা আরেকটু ভালো হলে ভালো লাগতো।
বাংলা সাহিত্যে এ পর্যন্ত যতগুলো থ্রিলার উপন্যাস রচিত হয়েছে এর ভেতর আমার পড়া বিন্দুবিসর্গ বইটা বলতে গেলে সেরা একটা উপন্যাস। বলা চলে বাংলা সাহিত্যে এটাই আমার পড়া প্রথম থ্রিলার উপন্যাস। মহাভারত, রামায়ণ, প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস বা পুরাণের মিশেলে খুব চমৎকার এক মিশেলে রচিত হয়েছে এই বইটি। খুব সুন্দর আর সাবলীলভাবে এই বইটি রচনা করে লেখক দেবতোষ দাস প্রশংসার দাবি রাখতেই পারেন।
থ্রিলার হিসেবে একেবারেই ভালো না। প্রধান অনুসন্ধানী চরিত্র হিসেবে ডিকে বা ধরণী কয়াল এর না আছে কোন পরিচয়, না আছে কোন দক্ষতার পরিচয়! বরং আইপিএস অফিসার রজত ই যা করার করল। এদিকে আরেক বিরক্তিকর চরিত্র নিবেদিতা। সাহসী তবে বুদ্ধির যথেষ্ট ঘাটতি। যাই হোক, থ্রিলার হিসেবে আসলে এই বইয়ের কোন প্রয়োজনীয়তা ছিল না। তবে এই বইয়ের প্লট এবং কনসেপ্ট অনেক উন্নতমানের। হঠাৎ যদি শোনা যায় বিষ্ণু আসলে ক্যাপিটালিস্ট, রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণের কাহিনী আসলে সামন্তবাদ হটিয়ে পুঁজিবাদ আন্দোলনের কাহিনী, কৃষ্ণ মানে কালো টাকা আর অর্জুন মানে সাদা টাকা, অবাক হব না? একের পর এক শব্দ ভেঙে ভেঙে নতুন মানে আবিষ্কার, সত্যসেনা বলে একটি মৌলবাদী হিন্দুত্ববাদী দলের আক্রোশ, দলিতদের অধিকার এসব গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার নিয়ে আসা হয়েছে এই বইটিতে৷ যে কারণে বইটির গুরুত্ব আসলে অন্য দিক থেকে৷ থ্রিলারের আবরণে মুড়িয়ে দিলে আজকাল পাঠক বেশি খান সেসব বই। সেই লক্ষ্যেই একটি থ্রিলার তকমা লাগিয়ে নতুন কিছু ভাবনা, নতুন কিছু দৃষ্টিভঙ্গি সাধারণ পাঠকের কাছে পৌঁছে দিতে চেয়েছিলেন লেখক। তাঁর এই চেষ্টাকে সাধুবাদ না জানিয়ে উপায় নেই কারণ সত্যিই ভাবনাগুলো দারুণ চিত্তাকর্ষক।
৪ স্টার দেখে এমন ভাবার কোনো কারণ নেই যে বইটা সেইরকম ভালো একটা বই। বইটা সেইরকম ভালো বই না, ইভেন এক্সিকিউশন প্যাটার্ন হিসেব করলে বইটা খুবই দুর্বল, ইনফো ডাম্পিং দিয়ে ভরা কিন্তু.... কিন্তু... তবুও ৪ স্টার দিয়েছি কারণ বইটা রামায়ণ, মহাভারত পড়ার যে প্যাটার্নটার কথা বলেছে সে আইডিয়াটা অসাধারণ! এক্সক্লুসিভ একটা আইডিয়া (যদিও আইডিয়াটা এই বইয়ের লেখকের না, তবু আমি তো তার মাধ্যমে জেনেছি)। স্রেফ আইডিয়াটাই ৩ স্টার দাবি করে এ বইতে। ওটা না থাকলে এ বই ১স্টার পাবার যোগ্য।
দিব্যি লাগলো। মূল ভাবনাটি বেশ অভিনব। তবে পরিবেশনায় আরেকটু যত্ন থাকলে বেশ জমতো। 'যারা শোর মাচিয়ে দিতে পারে' জাতীয় শব্দবন্ধ ব্যবহৃত না হলেই ভালো হতো। কিছু কিছু তুলনাত্মক আলোচনা জোর করে অঙ্ক মিলিয়ে দেওয়ার মতো লেগেছে বটে কিন্তু থ্রিলারের আড়ালে কাহিনীর প্লট বেশ তরতর করেই এগিয়েছে। মাঝে মাঝে কিছু কিছু ঘটনা স্রেফ প্রয়োজনীয় তথ্যগুলোকে পাঠকের সামনে তুলে ধরার বাহন মনে হয়েছে। তাও বলবো একটানে শেষ করে ফেলার মতো একটা বই, যদিও আরেকটু ছোট হলে খুব ভালো হতো।
কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর ক্রিয়াভিত্তিক-বর্ণভিত্তিক শব্দার্থ অনুযায়ী.... সংস্কৃতে বর্ণমালা বিন্দু দিয়ে শুরু আর বিসর্গ দিয়ে শেষ হয় অর্থাৎ 'বিন্দু বিসর্গ' শব্দে বিন্দু মানে শুরু আর বিসর্গ মানে শেষ । ধরুন কোনাে বিষয়ের বিন্দুবিসর্গ না জানা মানে পুরাে বিষয়টাই না জানা ।
🔸সার-সংক্ষেপ : বিখ্যাত ‘মিডিয়া ব্যারণ’ বিলু চট্টোপাধ্যায়কে এক রাতে তার নিজের চেম্বারেই চেয়ারে বাঁধা অবস্থায় সাইলেন্সার লাগানো রিভলভার দিয়ে খুন করে যায় অদ্বৈত । কিন���তু কে এই অদ্বৈত ? লালবাজারের ডিসি ডিডি রজত রায় নামেন তদন্তে। সেই সূত্রে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধু ডিকেও। তদন্তে নেমে এক পাণ্ডুলিপির খোঁজ পায় ডিকে। দীর্ঘ ৩০ বছর গবেষণা করে এক বাঙালি গবেষক, রামায়ণ-মহাভারতের মধ্যে আচ্ছাদিত গুপ্ত সংকেতের অর্থ উদ্ধার করেন। খোঁজ পান বিস্ফোরক তথ্যের যা প্রকাশিত হলে বদলে যাবে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস। সেই পাণ্ডুলিপি এক ঘুমন্ত আগ্নেয়গিরি । আস্তে আস্তে আপনি ��্রবেশ করবেন চোখে-ধুলাে-দেওয়া ভারতের জাতপাতের ইতিহাসের আড়ালে লুকিয়ে থাকা এক ভয়ংকর ষড়যন্ত্র আর বঞ্চনার ইতিহাসের জগতে । কিন্ত বর্ণ-হিন্দু মৌলবাদীরা যারা দীর্ঘদিন ছাইচাপা দিয়ে রেখেছে সে ইতিহাস তারা কি চাইবে এই ইতিহাস সামনে আসুক, আর ভারতের সামাজিক-রাজনৈতিক ইতিহাস একটা প্রবল ঘূর্ণাবর্তের মধ্যে গিয়ে পড়ুক, ভারতের রাজনৈতিক আকাশে তুফান উঠুক । তাই ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী ঘাতকের দল ঘাতক পাঠিয়ে ধ্বংস করতে চায় পন্ডিত ও পান্ডুলিপি, দুই-ই। কারণ কে আসলে রাম বা কে কৃষ্ণ, প্রচলিত ভাবনা আমূল বদলে দেওয়া এই তত্ত্ব প্রকাশিত হলে মৌলবাদীদের অস্তিত্বই হয়ে পড়বে বিপন্ন। সেই নতুন ব্যাখ্যা কী ? কেন খুন হলেন সম্পাদক ? পাণ্ডুলিপি ও পণ্ডিত, রক্ষা কি পাবেন ঘাতকের ভয়ংকর থাবা থেকে ?
🔸প্রতিক্রিয়া : ভূমিকাতে লেখক নিজেই স্বীকার করেছেন যে তিনি ড্যান ব্রাউন থেকে অনুপ্রাণিত, তিনি চেয়েছিলেন ‘দ্য ভিঞ্চি কোড’ এর মতো উপন্যাস বাংলা সাহিত্যেও যেন লেখা হয় । বলা বাহুল্য, তিনি বেশ সফল বলাই যায় । বাংলায় এই ‘কন্সপিরেশি থিওরি’ বেসড্ থ্রিলার বেশ কম, সেই দিক থেকে দেখতে হলে লেখক বেশ ইউনিক প্লট নিয়ে কাজ করেছেন ।
এই উপন্যাস জুড়ে লেখকের কাজই হলাে শব্দ নিয়ে খেলা করা । বিন্দুবিসর্গ একটি রােমাঞ্চ উপন্যাস । এক বিখ্যাত মিডিয়া ব্যক্তিত্ব খুনের ঘটনা দিয়ে কাহিনি শুরু। কিন্তু রহস্য-রোমাঞ্চ এই বইটির খােলস মাত্র । পরতে পরতে লেখক উন্মােচন করার চেষ্টা করেছেন সুপ্রাচীন এক ইতিহাস এবং সেই সাথে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন ভাষা পঠনের এক অপ্রচলিত রীতি । এর মাধ্যমে চিন্তার যে দুয়ার লেখক খুলে দিয়েছেন, তার জন্য লেখককে কুর্নিশ ।
বিন্দুবিসর্গ তথ্যবহুল এক উপন্যাস। ভাষার ব্যাকরণ এই উপন্যাসের প্রাণ । তবে কিছু অংশ বেশ রিপিটেটিভ । একই বক্তব্য আলাদা ব্যক্তির মুখ থেকে ব্যখ্যা করা হয়েছে, যার ফলে ইতিহাস ও ভাষাতত্ত্বের ঐ একই অংশগুলি পড়তে পড়তে বিরক্তির উদ্রেক হয় ।
আর একটি খারাপ-লাগা বলাই বাহুল্য । পুরো উপন্যাস জুড়ে ডিকে’র উপস্থিতি অর্থহীন মনে হয়েছে । প্রথম কথা, তার কোনো স্ট্রং ব্যাকগ্রাউন্ড দেওয়া হয়নি । শুধু পুলিশের বন্ধু হিসেবেই এত হাই-প্রোফাইল একটি কেস্ এর তদন্তে জড়িয়ে পড়া যায় ?? তাছাড়া অপরাধীর এত কাছে থেকেও ইন্সটিঙ্ক্ট বা ইনট্যুইশন কোনোটিই কাজ করেনি ওনার, বরং রজত এবং নিবেদিতাকে অনেক বেশী অ্যাক্টিভ মনে হয়েছে ।
336 পাতার এই থ্রিলার উপন্যাসকে বর্ণনা করার ভাষা জোগাড় করা চাপের ব্যাপার। একটি খুনের তদন্ত গোটা গল্পের কেন্দ্রে। গল্পের চারটি মূল চরিত্রই প্রচন্ড বুদ্ধিমান। তারা কখন কে কি সিদ্ধান্ত নেয়, বা কি করে বসে, গল্প কোনদিকে গড়ায় সেই নিয়ে বইয়ের শেষ অব্দি উত্তেজনা সশরীরে বিদ্যমান। এই গল্পের প্রেক্ষাপট তবে আরও জটিল এবং অন্য একটি বিষয়। তাতে পুরাণ- রামায়ন - মহাভারত - শাস্ত্র - তন্ত্র সবের এক অন্যরকম মানে বের করার পদ্ধতি নিয়ে কথা হয়েছে। শুরু করলে শেষ না করে উঠতে মন যাবে না।আর একদিন শেষ এই বই হবে না। তাই মন উসখুস করতেই থাকবে।
বলে রাখা ভালো বইটি অবশ্যই যারা গল্পকে গল্প মনে করে পড়তে পারেন তাদের জন্য লেখা। নচেৎ এই বই অনেক ভুলভাল whatsapp forward বা ফেসবুক পোস্টের কাঁচামাল জোগাতে সক্ষম।
ইংরেজিতে যাকে বলে unputdownable. গোগ্রাসে গিলেছি বইটা। কিছু তথ্য হয়ত গাঁজাখুরি লাগলেও লাগতে পারে এবং মাথার ওপর দিয়ে যেতে পারে, তবে অনিশ দেব এবং সায়ন্তনী পূততুণ্ড'র পর এমন দুর্ধর্ষ উপন্যাস অনেকদিন বাদে পড়লাম। যদিও বেশ কিছু অপ্রয়োজনীয় হিন্দি শব্দ জোর করে বাংলাকরণ করে ব্যবহার করা হয়েছে, যা একেবারেই আমার অপছন্দের। Dan Brown এর থেকে অনেকাংশেই অনুপ্রাণিত, যদিও সে কথা লেখক স্বয়ং স্বীকার করেছেন।
বর্তমানের অন্যতম জনপ্রিয় কবি যশোধরা রায়চৌধুরী মহাশয়া বলেছিলেন, "অনেক দিনের ক্ষোভ ছিল খ্রীষ্টধর্ম ফালাফালা করা 'দ্য ভিঞ্চি কোড' অথবা 'এঞ্জেলস অ্যান্ড ডেমন্স' এর মতো ড্যান ব্রাউনিয় উপন্যাস এদেশে কেন হয় না। দেবতোষ দাশ এর লেখাটি এক কথায় সত্যি আনপুটডাউনেবল"
ঠিক কথাই বলেছিলেন কবি যশোধরা রায়চৌধুরী। থ্রিলার, তার সাথে দুই গবেষকের গবেষণামূলক বিষয়, চিন্তাভাবনাকে একসাথে নিয়ে যে উপন্যাস দেবতোষ বাবু রচনা করেছেন, তা পাঠক সমাজে ব্যাপক প্রশংসা পেয়েছে। ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রথম প্রকাশিত হয়ে, ওই বছরেই নভেম্বর মাসে দ্বিতীয় মুদ্রণ হয়েছে। এরপর পরের বছর ২০১৮ তে আগষ্টে তৃতীয় মুদ্রণ ঘটার পর বইটি সম্পর্কে আমি প্রথম জানতে পারি। থ্রিলার সাধারণত পড়িনা, বিশেষ করে যদি হত্যাকান্ড বিষয়ক হয়, তবে ওই খুনখারাপি রক্তারক্তির বিষয়টা এখন আর নিতেই পারি না। একটা সময়ে ডিটেকটিভ সহ বিবিধ টানটান উত্তেজক লেখায় আকর্ষণ থাকলেও, গত কয়েক বছরে সেই উৎসাহে ভাটা পড়ে গেছে। তবুও এই বইটিতে আগ্রহী হয়ে উঠেছিলাম কেন! ২০১৮ তে এই বই সম্পর্কে জানার পরেও ২০২০ পর্যন্ত প্রায় দুবছর এই বই আমি হাতে নিইনি। কিন্তু ইতিমধ্যে ফেসবুকে লেখকের প্রোফাইলে আমার অনুপ্রবেশ ঘটে। বিভিন্ন পোস্টে বিভিন্ন ব্যক্তি এই বই সম্পর্কে আলোচনা করেছেন, তা থেকে একটা বিষয় বুঝতে পারি, এই বইতে একটা আজব তথ্য আছে; আমরা যেভাবে অনুবাদে পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারত পড়েছি, সেই অনুবাদ আসলে এরকম ঠিক নয়। এর অর্থ অন্যরকম হবে।
মনে একটা প্রশ্ন জাগল, এটা কেমন কথা! এতদিনের কত ব্যক্তির অনুবাদ পড়া হলো, এখন একজন লেখকের কথায় এটাকে মানতে হবে যে এইসকল অনুবাদ বৈদিক গ্রন্থগুলির প্রকৃত অনুবাদ নয়! এরমাঝেও একটা দোলাচল অবস্থান ছিল আমার। একদিকে অতি কট্টর ধার্মিকদের ওইসব আষাঢ়ে গল্পে অন্ধবিশ্বাস, অন্যদিকে কট্টর নাস্তিকদের বৈদিক গ্রন্থের সমালোচনার নামে ব্যাপক কুৎসা প্রচার; এই দুইটির কোনটাই কোনদিন ভালো লাগেনি, দুটোই থেকেছে বিরক্তিকর। প্রচলিত অনুবাদ পড়ে তবে একটা ধারণা উঠে এসেছিল, মিথ আর বাস্তবতা এক হয় না, পুরাণ ইতিহাসে মুখ দেখাদেখি সম্পূর্ণ বন্ধ। কাজেই ওই সকল বইগুলিকে সাহিত্যের জায়গা ধরে পাঠ করা যেতে পারে, কিন্তু ওগুলোকে ইতিহাসের বই ধরা যায় না, কখনও না।
কিন্তু এত মানুষ বইটি পড়েছেন দেখে, অবশেষে আমিও পড়লাম। এক ভীষণ ধাক্কা পড়ে গেল চিন্তাভাবনার জগতে। সত্যিই দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত ধারণাটা টলে গেল। লেখক দেবতোষ দাশ এইরকম একটি বই লেখার কথা ভাবেন "দ্য ভিঞ্চি কোড" পড়েই। বাংলাভাষায় এইরকম এই বই লেখা সম্ভব বলেই তার মনে হয়। একটা সময় তার জীবনে এলো, যখন তিনি পরিচিত হলেন দুই ব্যক্তির গবেষণার সাথে -- এনারা হলেন কলিম খান এবং তার সহযোগী রবি চক্রবর্তীর সাথে। কিন্তু পরিচয়টা কোথায় হলো? অবিশ্বাস্য বিষয় হলো, লিটল ম্যাগাজিনের মারফত। এনারা প্রাচীন সাহিত্য কে ফুঁড়ে বের করে আনছেন প্রকৃত শব্দার্থ। যেগুলোকে আমরা মিথ ভেবে গেছি, অনেকে বলেছেন রূপক; এনারা দুই ভাবনাকেই ঠেলে বলছেন, এগুলো সাংকেতিক। প্রচলিত অর্থ ছেড়ে এনারা আনছেন শব্দের মধ্যেকার ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ; ফলে গ্রন্থ���ুলির এক অন্যরকম অনুবাদ তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এত গবেষণামূলক বিষয়গুলো বেশিরভাগটাই লিটল ম্যাগাজিনে থেমে রইল কেন! বেশিরভাগ মানুষের কাছে পৌঁছল না কেন! এর উত্তর সম্ভবত, প্রথাগত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রদত্ত যোগ্যতার শংশাপত্র না থাকায়। শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকলে কেউ দাম দেয় না, এই বর্তমান বাজারে তো নয়ই। তাই নন একাডেমিক বিষয়টাও একটা বাধা হয়েই গেল।
দেবতোষ বাবু এই গবেষণার সাথে পরিচিত হয়ে নিশ্চয়ই অনুভব করেছিলেন, মানুষের কাছে এনাদের চিন্তাজগৎ তুলে ধরা প্রয়োজন। এনাদের প্রকাশিত বইসংখ্যা নেহাত কম নয়, কিন্তু গবেষণামূলক প্রবন্ধ টাইপের বইতে বেশিরভাগ পাঠকের আগ্রহ নেই; না থাকাই স্বাভাবিক, প্রবন্ধ বড় নীরস, খটখটে বিষয়, বিনোদন প্রায় নেই বললেই চলে। সাহিত্যপাঠের একটা উপযোগিতা তো বিনোদন বটেই, বই শিক্ষামূলক এবং তা পড়ে বিনোদন আসে, এইরকম হলে তা পাঠকসমাজ খুশি হয়, অন্তত আমার মতো সাধারণ মানের পাঠক হলে তো কথাই নেই। যাইহোক, সম্ভবত দেবতোষ বাবু বুঝে নেন, এনাদের প্রবন্ধমূলক বই বড় আকারের পাঠকের কাছে যখন পৌঁছয়নি, তখন একটা উপন্যাস হলে কেমন হয়! সেই সাথে তার দ্য ভিঞ্চি কোড পড়ার পর বাংলায় এমন একটা লেখার ভাবনা, দুইটি মিলিয়ে তিনি বুঝে ফেলেন এই দুই পন্ডিত ব্যক্তির গবেষণার অংশ নিয়ে আর কাল্পনিকতার প্লট মিশিয়ে এক সুন্দর উপন্যাস তৈরি সম্ভব। পড়াশোনা শুরু করলেন। পড়াশোনা না বলে এক ঐতিহাসিক তীর্থযাত্রা বললেই মনে হয় ভালো হবে। ভাবনা জগতের সেই মহাযাত্রায় পর্যটকের মতো লেখালেখিও চলল। টানা তিন বছরের এই যাত্রায় সম্পূর্ণ হলো উপন্যাস। ব্লগে ধারাবাহিক প্রকাশিত হবার পর, তারপর কাগজের বই। তার আগে পান্ডুলিপি দেখলেন গবেষক কলিম খান এবং রবি চক্রবর্তী, দুজনেই উচ্ছসিত হলেন লেখা পড়ে, একথা দেবতোষ বাবু "বিন্দুবিসর্গ" উপন্যাসের ভূমিকাতেই লিখেছেন। সানন্দে তাদের সম্মতিতে কাগজের বই হয়ে বেড়িয়ে এলো "বিন্দুবিসর্গ" । বাংলার পাঠক সমাজে ব্যাপক জনপ্রিয়তা অর্জন করল এই উপন্যাস।
কিন্তু কলিম খানের এই গবেষণাকে আমি কী কারণে গুরুত্ব দিয়েই দেখছি! পুরাণের মাঝে ইতিহাস দেখাটা কি স্বাভাবিক!
কিন্তু অন্যভাবেও একটু দেখা হোক, এই মিথ হিসেবে যা ধরেছি এতদিন এগুলো লেখা হয়েছে খ্রীষ্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৮০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে। অনুবাদে পড়েছি নানান আজব গল্প -- যেমন কলসীর ভিতর দ্রোনাচার্যের জন্ম হওয়া। হনুমানের নানান কান্ড। সেসব পড়েই আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি এগুলো ছেলেভুলানো গল্পের চেয়ে বেশি কিছু নয়। কিন্তু যে সময়ে এই গ্রন্থ লেখা হয়েছে সেই সময় ভারতীয় সভ্যতা পিছিয়ে পড়া সভ্যতা ছিল না। কারণ, খ্রীষ্ট পূর্ব ৭০০ সালেই ভারতীয়রা চিনি তৈরি শিখেছে, পাশ্চাত্য তা শিখেছে ১৪ শতাব্দীতে। লোহা গলিয়ে পিটিয়ে তাকে নানান যন্ত্রের আকার দিতে ভারতীয়রা শিখেছে খ্রীষ্ট পূর্ব ২০০ সালে, পাশ্চাত্য শিখেছে ১৩০০ খ্রীষ্টাব্দে। চরক সংহিতায় বিবিধ শল্যচিকিৎসার খবর পাওয়া যায় যা লিখিত খ্রীষ্ট পূর্ব ১০০ সালে। ভারতীয় সভ্যতার নগরনির্মান, মন্দির সাক্ষী দেয় উন্নত প্রযুক্তির সেই সময়ে দাঁড়িয়েই। তাহলে সেই সময়ের লেখকেরা যারা সামাজিকভাবে শ্রদ্ধেয় ছিলেন, তারা এসব আষাঢ়ে গল্প লিখবেন, এটা কি ভাবা যায়! নাকি আমরাই সঠিক অর্থ ধরতে পারিনি!
একটা বিষয় পরিস্কার জানা আছে, প্রায় সংস্কৃত বিশেষ্য পদ গুলির বহুরকম অর্থ পাওয়া যায়। যেমন, "গো" শব্দটির অর্থ হয় -- গরু, চাঁদ, কথা, পৃথিবী ইত্যাদি। "নাগা" শব্দের অর্থ হয় -- পর্বত, গাছ, সূর্য ইত্যাদি। কিন্তু একিই শব্দের অর্থগুলি এমন ভিন্ন কেন! "পর্বতে"র সাথে "গাছে"র মিল নেই, বা "গরু"র সাথে "কথা"র মিল নেই; একিই শব্দের অর্থ বোঝাতে এই ভিন্নতা কেন!
কলিম খান এই অর্থনির্নয়ের পদ্ধতিটি খুঁজে পান ১৯৮৬ সালে। এই অর্থ নির্নয়ের পদ্ধতিটির নাম ভাষাবিজ্ঞানের ভাষায় -- Verb Based Semantics বা সংক্ষেপে VBS , এই পদ্ধতির সাহায্যে কলিম খান প্রাচীন গ্রন্থগুলি ঘেঁটে ইতিহাস এনেছেন। ভিবিএস পদ্ধতিতে "গো" শব্দের মানে "যেটা চলতে বা যেতে পারে", হতে পারে তা কোনো গবাদী পশু, অন্য কোন বস্তু, গ্রহতারা, পৃথিবী ইত্যাদি যা চলমান। চলমানতা বৈশিষ্টটি এগুলোর সবকটার মধ্যেই মিল বহন করে। ভাষার এই অর্থগত বৈশিষ্টটি শুধুই প্রাচীন সংস্কৃত ভাষায় প্রযোজ্জ্য নয়, এই বৈশিষ্টটি আছে পুরনো হিব্রু, আবেস্তীয়, প্রাচীন বাংলা, লাতিন সহ বিভিন্ন ভাষায়। প্রতিটি বাংলা বর্ণ একটি অর্থ বহণ করে, এই বর্ণগুলির অর্থ যোগ করেই শব্দ নির্মিত হয়, তা দেখিয়ে ছিলেন হরিচরণ বন্দ্যোপাধ্যায় "বঙ্গীয় শব্দকোষ" রচনা করেন।
উপন্যাসটি রচিত হয়েছে এই গবেষণার জগতের সাথে কল্পনা মিশিয়ে। নতুনভাবে রামায়ণ মহাভারতের অনুবাদ করলেন কবীর খান, কিন্তু এটা প্রকাশ করবেন কীভাবে! তিনি যোগাযোগ করলেন বাল্যবন্ধু বিলুর সাথে, যিনি এক মিডিয়ার মালিক, সেই সাথে ইতিহাসের ভালো ছাত্র। পন্ডিত মানুষ বিলু বাবু এই গবেষণার গুরুত্ব বুঝে নিলেন এবং প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নিলেন।
কিন্তু গ্রন্থপ্রকাশের আগে তার কলামে কিছু আভাস ইঙ্গিত দিলেন বিলু। কবীর খানের গবেষণা বংশানুক্রমিক বর্ণভেদ সিস্টেমের উপরেও যে ঘা ফেলতে চলেছে, তার অল্প একটু আধটু চিহ্ন ছড়িয়ে বিলু লিখতে লাগলেন কলাম। এই কলাম চোখে পড়ে গেল এক উগ্রবাদী সংগঠনের অন্যতম প্রধান মুখ নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। এই নীলকন্ঠ একসময় ছিলেন বিলুর সহপাঠী, ভালো ছাত্র নীলকন্ঠ ওরফে নীলু রাজনীতিগতভাবে এই উগ্রবাদী সংগঠনের(সত্যসেনা) অন্যতম প্রধান মুখ। এই সংগঠনের প্রধান লক্ষ হলো অখন্ড ভারতের প্রতিষ্ঠা করা -- আসমুদ্রহিমাচলম তো বটেই এমনকি পশ্চিমে গান্ধার দেশ(আফঘানিস্থান) থেকে পূর্বের ব্রহ্মদেশ(মায়নমার) পর্যন্ত অখন্ড ভারত নির্মাণ করতে বদ্ধপরিকর সত্যসেনা। সনাতন সংস্কৃতিতেই দেশ চালাতেই চায় নীলকন্ঠরা। এই উগ্রবাদী সংগঠনে জড়িত হয়ে যাওয়ার কারণ কি? লেখক অল্প একটু আভাস দিয়েছেন দু তিন লাইনে। তা থেকে ধারণা পাওয়া গেল, এক উদ্বাস্তু পরিবারের ছেলে নীলকন্ঠ । দেশত্যাগী বাবাকে চোখের সামনে দেখেছে দেশভাগের যন্ত্রনায় আক্ষেপ করতে। যাদের জন্য দেশ ছাড়তে হয়েছে সেইসব বিশেষ বিশেষ মানুষদের(ধর্মীয় পরিচয়টাও হয়ত যুক্ত আছে লুকিয়ে) আজীবন ক্ষমা করতে পারেননি নীলকন্ঠের বাবা। চোখের সামনে তা দেখেই হয়ত নীলকন্ঠের মনে বিশেষ প্রতিক্রিয়া হয়। হারানো দেশ উদ্ধারের বাসনাতেই হয়ত ইউনিভার্সিটির সেকেন্ড টপার নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায় হয়ে গেলেন সত্যসেনার এক গুরুত্বপূর্ণ সেনাপ্রমুখ। এককালের ভালো ছাত্র নীলকন্ঠ বাল্যবন্ধু বিলুর কলামে এমন কিছু খুঁজে পায় যা বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে সত্যসেনার লক্ষে। বিলুর সাথে দেখা করে কবীর খানের গবেষণার বিষয়বস্তু জেনে আরো নিশ্চিত হয়ে নেয় নীলকন্ঠ ।
এই গ্রন্থপ্রকাশ হলেই ঘটবে সমূহ সর্বনাশ। বর্ণভেদের শাসনে দমিয়ে রাখা জনগোষ্ঠীর মধ্যে জেগে উঠতে পারে অন্য এক চেতনা। ধ্বংস হতে পারে প্রচলিত সিস্টেম। সমর্থন হারিয়ে ভাঙতে পারে সত্যসেনার স্বপ্ন। নীলকন্ঠ সবদিক ভেবে ঠান্ডা মাথায় হত্যা করে বিলুকে। পরবর্তী লক্ষ হয় -- কবীর খান। এই খুনের তদন্তে আসেন ডিকে বা ধরনী কয়াল, বিলুর সহকারী নিবেদিতাও এক অন্য ভূমিকায় নামে কবীর খান কে রক্ষা করতে। উপন্যাসের শুরুতেই খুনিকে পাঠক কে জানিয়ে দিয়ে তদন্তকারী কী খুনিকে ধরছে, রহস্য জট ছাড়াচ্ছে দেখানোটাও এক অন্যরকম শিহরণ লাগল পাঠ করে। সবটা মিলিয়ে এক দারুণ রহস্যজালে মোড়া উপন্যাস, যার পাতায় পাতায় চমক, পুরাকালে ভ্রমণ, সাথে কলিম খান, রবি চক্রবর্তীদের গবেষণার সাথে পাঠকের সান্নিধ্যলাভ। এরকম মনে ঢেউ জাগানো থ্রিলার বাংলা ভাষায় আর আছে কিনা আমার জানা নেই। উপন্যাসের অংশে অংশে টানটান উত্তেজনা, সাথে জ্ঞানের খোঁজ, সাহিত্য, দর্শন, সমাজবিজ্ঞানের মিশ্রণ সবটাই আছে বিন্দুবিসর্গে। কলিম খানের গবেষণা ঠিক নাকি ভুল, তা বিচার করতে পারা আমার মত সাধারণ পাঠকের পক্ষে সম্ভব নয়, একমাত্র যারা ভাষাবিজ্ঞান নিয়ে কাজ করছেন বা অন্যান্য জ্ঞানী মানুষ, তারা সেটা বুঝবেন। আম এটাকে সাহিত্য হিসেবেই ধরলাম। যারা এখনো পড়েননি, শিগগির পড়ে ফেলুন।
কয়েকদিনের মধ্যেই প্রকাশিত হচ্ছে বিন্দুবিসর্গের পরবর্তী ভাগ "কামসূত্র" , আশায় থাকলাম এমনিই সুন্দর হবে, পড়ে সমৃদ্ধ হবে আমার মতো অজস্র পাঠক। ধন্যবাদ লেখক দেবতোষ দাশ মহাশয়কে।
যাঁর লেখা পড়েননি আগে, যে প্রকাশনী আপনার জন্যে নতুন; সে সংশ্লিষ্ট বই হাতে তুলতে গেলে প্রচ্ছদ অনেক বড় ভূমিকা রাখে যদি না; যদি না পরের জিভে ঝোল পরখ করার অভ্যাস মানে অন্যের ঋভ্যু/পাঠ-প্রতিক্রিয়া পড়ে বই কেনার অভ্যাস আপনার না থাকে। এ অভ্যাসটা আমার নাই একদম। কোন বইয়ের কাহিনী সংক্ষেপ আর প্রচ্ছদ পছন্দ হলে, স্পয়লার এড়াতে (স্পয়লার না থাকলেও, পড়বার আগে ন্যূনতম ধারণাও পেতে চাইনা) সে বইয়ের ঋভ্যু/পাঠ-প্রতিক্রিয়া থেকে শত হাত দূরে থাকতে চাই আমি। ইয়েস আই ডু জাজ আ বুক বাই ইটস কাভার। ৩৩ বছর কাটলো (কিছু দিন বেশিই), কেবল ১ জনই হতাশ করেছেন, যার বইয়ের প্রচ্ছদ ভাল লেগেছিল। প্রচ্ছদ, লেখক আর প্রকাশনীর মননের পরিচায়ক। সে হিসেবে, ভাল একটা প্রচ্ছদ, বইকেনায় ভূমিকা রাখে অনেক জোরালো। অন্যের ঋভ্যুর চেয়ে বরং প্রচ্ছদ আর কাহিনী সংক্ষেপেই আস্থা রাখবো আমি। মোটকথা, প্রচ্ছদটা খুব পছন্দ হয়েছে।
শিবের গীত বরং থাক এখন। কলকাতার বিখ্যাত এক সংবাদপত্রের সম্পাদক খুন হয়ে যান রাতে। সে তদন্তে নামার পর এক পান্ডিুলিপির খোঁজ মেলে। দীর্ঘ ৩০ বছর গবেষণা করে এক বাঙালি গবেষক, রামায়ণ-মহাভারতের মধ্যে আচ্ছাদিত গুপ্ত সংকেতের অর্থ উদ্ধার করেন। খোঁজ পান বিস্ফোরক তথ্যের, যা প্রকাশিত হতে বদলে যাবে ভারতবর্ষের প্রাচীন ইতিহাস। কিন্তু ধর্মীয় সন্ত্রাসবাদী ঘাতকের দল তা চায়না। কারণ কে আসলে রাম বা কে কৃষ্ণ, প্রচলিত ভাবনা আমূল বদলে দেয়া এই তত্ত্ব প্রকাশিত হলে মৌলবাদীদের অস্তিত্বই হয়ে পড়বে বিপন্ন। মোটাদাগে বিন্দুবিসর্গ’র গল্প হল এই। শুরুতেই কনফেশান হোক। এই বইকে ব্যাবচ্ছেদ করতে গেলে, রামায়ণ-মহাভারত আর বাংলা ব্যাকরণে পন্ডিত হতে হবে। নয়তো ঋভ্যু হবে খুব সারফেস লেভেলের। তাই বিন্দুবিসর্গর ঋভ্যু কিংবা ব্যাবচ্ছেদে যাওয়ার দুঃসাহস করা হবেনা বলেই এই নিরীহ, গোবেচারা পাঠ-প্রতিক্রিয়া।
ছেলেবেলায় আমার সনাতন ধর্মাবলম্বী সহপাঠীদের রামায়ণ-মহাভারত পড়তে দেখেছি সহায়ক গ্রন্থ হিসেবে, বাড়িতে গল্পের ছলে পড়েছে কি না জানিনা আর আমরা মানে মুসলমানরা পড়তাম আরবী শিক্ষা, আরবী ব্যাকরণ ইত্যাদি (এস.এস.সি তে ইসলাম ধর্মে ৯০ পেয়েছিলাম)। বড়বেলায় জানার আগ্রহে পড়েছিলাম রামায়ণ-মহাভারত; তাও কিশোর সংস্করণ। মহাভারতে এত চরিত্র, একবার পড়ে মনে রাখা দুষ্কর। যে ব্যাবধান টা ছিল কৈশোরে, রামায়ণ-মহাভারত কেবল সনাতন ধর্মীরাই পড়বে; সে জায়গাটা ভাঙারই প্রয়াস পেয়েছেন দেবতোষ দাশ। গ্রন্থদুটোকে নিছক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখতে নারাজ তিনি।
একটা থৃলার গল্প আছে বিন্দুবিসর্গে। কিন্তু সে কেবলই শরীর, সারফেস। এই গল্পটা যে কনসেপ্ট কে টেনে নিয়ে গেল, ধারণ করলো; পাঠকের নজর নিবিদ্ধ হবে ওখানে। তাই শরীর নিয়ে না বলে বরং বইয়ের আত্নায় নজর দেয়া যাক। কি ছাই নজর দেব, ওই এলেমই নাই আমার। আমি একাডেমিক না, ব্যাকরণ পড়তে গেলে ভারী ঘুম পেতো সবসময়। এতো আরাম সে ঘুমে! আর রামায়ণ-মহাভারত তো চরিত্র মনে রাখার ভয়ে পড়িনি ভালকরে। তার চেয়ে বরং সরাসরি বই থেকে তুলে দেয়া যাক কিছু বিষয়। বিকল্প ইতিহাস কিংবা নতুন চোখে দেখা বলতে পারেন একে। বুঝতেই পারছেন, স্পয়লার আসতে যাচ্ছে। যারা এখানেই এ পাঠ-প্রতিক্রিয়া শেষ করতে চাইছেন স্পয়লারের ভয়ে; জেনে নিনি- ফাটাফাটি বই একটা। চমৎকৃত হবেন।
* মানুষকে সেকালে নর বলা হত না, বলা হত “মহ” বা “মহান”।... ভারতের মহ = MOHO বিদেশে গিয়ে হয়েছে হম = HOMO । পরে তা Homo Sapiens হল। sapiens মানে আক্কেল বা বুদ্ধি।... এই “মহ”ই পরবর্তীকালে নমনীয় হয়ে একদিন “মনুঃ” (= MAN-HU ) হল এবং বিদেশে গিয়ে একই নিয়মে হল HU-MAN । প্রাচীন ভারতের ইতিহাসে “মহ” বা “মহান”- এর পরই “মনু”র আগমন। প্রায় সব পুরাণই এর সাক্ষী।
আর মহানই মুনতে পরিণত “হয়েছে” বলে ইংরেজিতে কথাটা Human Being (=মনু হওয়া) হয়েছে, না হলে “being” কথাটা কেন “human” এর লেজুড় হয়ে থেকে যাবে! এই মহান দের দ্বারা জাত সমাজবৃক্ষ বা দারু-ই “মহান-জ-দারু”, যার ধ্বংসাবশেষ মহেঞ্জোদারো নামেই আমাদে কাছে পরিচিত।
* এই জন্য সে ব্যুরোক্র্যাট পোষে- তাদের সেক্রেটারি বলে। যারা তথ্যকে,সত্যকে সিক্রেট করে, those who secrete তারা সেক্রেটারি।
এভাবেই পুরো বই জুড়ে শব্দের, ইতিহাসের বিকল্প অর্থ খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে, যেগুলো ভীষণভাবে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়। অন্ততঃ যৌক্তিক তো বটেই। একাডেমিক হলে কিংবা ইতিহাসে ভাল দখল থাকলে কথায় আরও জোর থাকতো। আটপৌরে জীবনে যতবার ভগবানের নাম নেয়া হয় সুখে কিংবা অসুখে “হায় রাম” বলা হয়; সেটা কোত্থেকে, কেমন করে এল তা জানলে পরে লেখককে সাধুবাদ না দিয়ে পারবেন না।
দেবতোষ দাশ মেদহীন লিখেন এবং যে গবেষণা, শ্রমের প্রমাণ আছে তাঁর লেখায়; তার জন্যে কুর্ণিশ। এমন গবেষণালব্ধ ফিকশানেরই জয়জয়কার বিশ্বজুড়ে, বাংলা সাহিত্যকে সেই কাতারে নিয়ে গেলেন লেখক। বইয়ের থেকেই একটা লাইন দিয়ে শেষ করছি--- “আমাদের মূর্খতা সীমাহীন কবীরদা- জানিই না এইসব।” এই ১ লাইনেই আমার পাঠ-প্রতিক্রিয়া নিহিত আছে।
প্রখ্যাত সাংবাদিক এবং পত্রিকা সম্পাদক হত্যা হয় নিজের অফিসে। তারই এক ঘনিষ্ঠ বন্ধু আবিষ্কার করেন নতুন এক পঠনশৈলী যার মাধ্যমে পুরাণ, রামায়ণ এবং মহাভারতের মধ্যকার ইতিহাস আবিষ্কার হবে নতুনভাবে এবং নতুনরূপে। ১ তারা দিতাম আমি। আমার কাছে মনে হয়েছে লেখক জোর করে এত বড় করেছেন উপন্যাসটি। কিন্তু ক্রিয়াভিত্তিক পাঠের উপায়টা আমার কাছে বেশ অভিনব মনে হয়েছে। তাই আরেকতারা ফ্রি।
কাহিনি সংক্ষেপঃ রামায়ণ ও মহাভারতের মূল বক্তব্য কি আজও আমরা পুরোপুরি ভাবে বুঝতে পেরেছি? নাকি আরেকটু গভীরে ডুব দিলে ভারতীয় উপমহাদেশের প্রাচীণ ইতিহাস ও ধর্মের অন্যতম চিহ্ন হিসেবে বিবেচিত এই গ্রন্থ গুলোর অর্থই পাল্টে যাবে? অদ্ভুত মনে হতে পারে। তবে এমনটাই ঘটলো। দীর্ঘদিন ধরে রামায়ণ ও মহাভারত নিয়ে গবেষণা করে এগুলোর বক্তব্যের ভেতরের অন্তর্নিহিত অর্থ বের করার উপায় আবিস্কার করে বসলেন গবেষক কবীর খান। বাংলা তৎসম ও সংস্কৃত ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি প্রয়োগ করে তিনি যা দেখলেন, তা সত্যিই আশ্চর্যজনক। এতে করে পাল্টে যাবে এই মহাধর্মগ্রন্থ গুলোর সমগ্র অর্থই। এসব আর নিছক ধর্মগ্রন্থ হিসেবে বিবেচিত হবে না, বরং এসবের প্রকৃত অর্থ জানতে পারলে বদলে যাবে ভারতবর্ষের ইতিহাসের অনেক কিছুই।
কবীর খান তাঁর এই দীর্ঘদিনের গবেষণাকর্মকে আলোর নিচে আনতে সাহায্য চাইলেন তাঁর পুরোনো বন্ধু মিডিয়া ব্যারন হিসেবে খ্যাত বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় ওরফে বিলু'র কাছে। বিলুও বন্ধুকে সাহায্য করবেন বলে কথা দিলেন। কিন্তু নেমে এলো দুর্যোগ। নিজ সংবাদসংস্থা ভোরের কাগজের অফিসেই মৃত অবস্থা���় পাওয়া গেলো সম্পাদক বিলু চট্টোপাধ্যায়কে। খুন করা হয়েছে তাঁকে। আর যে বা যারা খুনটা করেছে, তারা কোনমতেই কবীর খানের গবেষণাকর্ম প্রকাশিত হোক এটা চায় না।
নিজের সারাজীবনের অর্জন সেই গবেষণাকর্মের পাণ্ডুলিপি নিয়ে পালানো শুরু করলেন কবীর খান। তাঁর সঙ্গী হলো খুন হওয়া বিলু চট্টোপাধ্যায়ের পিএ নিবেদিতা, যে নিজেও মনেপ্রাণে চায় তার কবীরদা'র কাজ পুরো পৃথিবীর সামনে প্রকাশ পাক। এদিকে পেছনে লেগে আছে ভারতীয় উগ্র জাতীয়তাবাদী এক মৌলবাদী সংগঠন সত্যসেনা (এসএস)। সত্যসেনা'র থিংক ট্যাংক হিসেবে খ্যাত নীলকন্ঠ মুখোপাধ্যায়ের মিশন রামায়ণ ও মহাভারতের ডিকোডেড পাণ্ডুলিপি হস্তগত করা। এটা করতে না পারলে উগ্রবাদী সংগঠন এসএস-এর অস্তিত্বই পড়ে যাবে হুমকির মুখে; আবারো মাথাচাড়া দিয়ে উঠবে হাজার বছর ধরে দাবিয়ে রাখা দলিত সমাজ।
লালবাজারের আইপিএস অফিসার রজত ও তার বন্ধু ধরণী কয়াল ওরফে ডিকে-ও একদম শুরু থেকেই জড়িয়ে গেলো এসবের সাথে। ডিকে'র ব্যক্তিগত আগ্রহের কারণে কবীর খান ও নিবেদিতার সংস্পর্শে আসার সুযোগ হলো তার। জ্ঞানপিপাসু এই মানুষটা ঋষিতুল্য কবীর খানের কাছ থেকে জানলো অজানা ও অভাবনীয় অনেক কিছুই।
কিন্তু বিপদ তো পিছু ছাড়ছে না। কবীর খান কি আদৌ কখনো সুযোগ পাবেন তাঁর সেই গবেষণালব্ধ পাণ্ডুলিপি প্রকাশ করার? নিবেদিতা আর ডিকে কি পারবে কবীর খানকে নিরাপদ রাখতে? আলো বেশি দূরে নেই, আর অন্ধকারও যে পেছনেই!
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ হাজার হাজার বছর ধরে সাধারণ হিন্দুদের চোখে ধর্মের নামে পরানো হচ্ছে বর্ণপ্রথার ঠুলি। কবীর খানের লেখাই একমাত্র পারে বর্ণপ্রথার অযৌক্তিক ও স্বার্থান্বেষী অন্ধকার থেকে মানুষকে আলোর পথ দেখাতে। আর সেটা সম্ভব হয় কি-না সেই গল্পটাই বলা হয়েছে 'বিন্দুবিসর্গ'-তে।
কিছু বই থাকে, যেগুলো পড়ার পর যখন রিভিউ লেখার ব্যাপার আসে আমি কিছুটা বিপদে পড়ে যাই। 'বিন্দুবিসর্গ' এমনই একটা বই। এটার পাঠ প্রতিক্রিয়া অংশে এতো কথা লেখা সম্ভব যে রিভিউ ভয়াবহ দীর্ঘ হয়ে যাবে৷ আমি বরাবরই ইনফরমেটিভ বই পড়তে বেশি পছন্দ করি। আর তার সাথে যদি কন্সপিরেসি থ্রিলারের প্রলেপ দেয়া থাকে, তাহলে তো কথাই নেই। তবে কিছু জায়গায় কাহিনি সামান্য স্লো মনে হয়েছে আমার কাছে।
সুলেখক দেবতোষ দাশের এই বইয়ে হিন্দু পুরাণ, বেদ, রামায়ণ, মহাভারত, ভারতীয় উপমহাদেশের সামাজিক ইতিহাস ও ভাষা সম্পর্কিত অনেক চমকপ্রদ তথ্য ছিলো। বিশেষ করে সনাতন যুগ, বৈদিক যুগ ও বৌদ্ধ যুগ সম্পর্কে লেখক যে থিওরি গুলো দিয়েছেন সেগুলো বেশ ইন্টারেস্টিং লেগেছে আমার কাছে। আবহমান কাল থেকে চলে আসা সুবিধাবাদী ও স্বার্থান্বেষী তথাকথিত উচ্চবর্ণের ধর্মগুরুদের ধর্মাচারের নামে চাপিয়ে দেয়া জঘন্য বর্ণপ্রথার যৌক্তিক ব্যবচ্ছেদ করেছেন লেখক এই বইয়ে। ভালো লেগেছে ব্যাপারটা। প্রাচীণ ভারতীয় ভাষা সহ বিভিন্ন সংস্কৃত ও বাংলা তৎসম শব্দ কিভাবে অন্যান্য ভাষায় গিয়ে বিস্ময়কর ভাবে অর্থ ও রূপের দিক দিয়ে পরিবর্তিত হয়েছে, তা জেনেও বেশ অবাক হয়েছি। আর ঠিক এই জায়গাটাতেই দেবতোষ দাশ ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধি টার্মটার চমৎকার ব্যাখ্যা দিয়েছেন।
ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থবিধির অস্তিত্ব কিন্তু আসলেই আছে। প্রখ্যাত গবেষক কলিম খানের গবেষণা থেকে অনুপ্রাণিত হয়েই লেখক 'বিন্দুবিসর্গ'-তে এই টার্মটার ব্যাপক প্রয়োগ ঘটিয়েছেন। এই বইয়ের কবীর খান চরিত্রটাকেও কলিম খানের ছাঁচে ফেলে নির্মাণ করেছেন দেবতোষ দাশ। এটা অবশ্য একান্তই আমার নিজস্ব ধারণা। কার্ল মার্ক্স বিষ্ণুকে কেন ক্যাপিটালিস্ট বা পুঁজিপতি বলেছিলেন তাঁর 'ডাস ক্যাপিটাল'-এ, তার ব্যাখ্যা আমাকে বেশ ভাবিয়েছে। শিব, দক্ষরাজ, ব্রহ্মা এঁদের সম্পর্কেও চমকপ্রদ কিছু থিওরির দেখা পাওয়া যায় 'বিন্দুবিসর্গ'-তে। এই অংশ গুলো যখন পড়েছি, বারংবার চমকৃত হয়েছি।
অনেকে 'বিন্দুবিসর্গ'-কে ড্যান ব্রাউনের 'ভিঞ্চি কোড'-এর সাথেও তুলনা করে থাকেন। তবে আমার কাছে তেমনটা মনে হয়নি। 'বিন্দুবিসর্গ' স্বতন্ত্র তার নিজ গুণেই। এর আগে দেবতোষ দাশের দেশভাগের ইতিহাস কেন্দ্রিক 'বিয়োগপর্ব' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। এবার মুগ্ধ হলাম 'বিন্দুবিসর্গ' পড়ে। সহজ-সরল ভাষায় লেখা চমৎকার একটা ইনফরমেটিভ থ্রিলার উপন্যাস এটা। অন্যান্য অনেক থ্রিলারের মতো এই বইয়ে অ্যাকশন সিকোয়েন্স কম থাকলেও ইন্টারেস্টিং সব ইনফরমেশনের আধিক্যের কারণে রোমাঞ্চকর আবেশটা মোটেও কেটে যায়নি। ভালো লেগেছে। বেশ ভালো লেগেছে। এই ধরণের কাজ বাংলা সাহিত্যে আরো হওয়া উচিৎ বলে মনে করি আমি।
২০১৭ সালে কলকাতায় প্রকাশিত হয় 'বিন্দুবিসর্গ'। যথারীতি বেস্টসেলারের তালিকায় নিজের জায়গা দখল করে নেয় বইটা। বাংলাদেশে বইটা প্রকাশ করার জন্য ভূমিপ্রকাশ-কে ধন্যবাদ। দেবতোষ দাশের 'বিয়োগপর্ব'-ও এই দেশে প্রকাশ করেছে একই প্রকাশনী।
সৌজন্য চক্রবর্তীর করা প্রচ্ছদটা ভালো লেগেছে আমার। বইটার বাঁধাই আর কাগজের মানও অ্যাজ ইউজুয়াল দারুণ ছিলো।
রিভিউটা বড় হয়ে গেলো বোধহয়। বড় হবে, জানতাম। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'বিন্দুবিসর্গ'।
❝এক দেশের বুলি, আরেক দেশের গালি।❞ ভাষা এমন একটি জিনিস যা অঞ্চলভেদে তার অর্থ বদলায়। ভাষা পরিবর্তনশীল। হাজার বছর আগের বাংলা ভাষা আর বর্তমানের বাংলা ভাষার মধ্যে অনেক তফাৎ আছে। তবে এই ভাষার সূত্র এক। কালের বিবর্তনে অনেক পরিবর্তন হলেও এর উৎস সেই আদিকাল। প্রতিটা শব্দের অর্থ কী দেশ বা অঞ্চলভেদে আলাদা। তবে এমনটা কি হতে পারে যে সকল ভাষার পরিবর্তিত রূপ বা অর্থ আসলে সেই আদিকালের ভাষার থেকেই? যাহা লাউ তাহাই কি কদু? ❝গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকেছিল তারা..❞ বাজছে ব্যাকগ্রাউন্ডে। পরপর গু লি ঢুকছে মিডিয়া ব্যারন ভোরের কাগজের সম্পাদক বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়ের শরীরে। কেঁপে উঠছে শরীর। খু ন হলেন তিনি নিজের অফিসেই। কিন্তু কেন? আচ্ছা মহাভারত-রামায়ণের আসল অর্থ কি আমরা জানি? একে শুধুই ধর্মগ্রন্থ হিসেবে দেখে কি প্রাচীন ভারতের সভ্যতার ইতিহাস জানা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি? এই সভ্যতার আসল ইতিহাসের অর্থোদ্ধার করতেই গতো ত্রিশ বছর ধরে নিজেকে নিবেদন করেছেন কবীর খান। দীর্ঘ এই সাধনার ফলও পেয়েছেন। সঠিক পাঠদ্ধার করেছেন মহাভারত-রামায়ণের। এবার প্রচারের পালা। এ ব্যাপারে সাহায্য করেছিলেন কবীরের ওল্ড ফ্রেন্ড আমাদের মিডিয়া ব্যারন বিলু চ্যাটার্জি (বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়)। কিন্তু কবীরের গবেষণা এতোটাই চমকপ্রদ যে তা প্রকাশ হলে রিরি পড়ে যাবে চারদিকে। নতুন করে লিখতে হবে ইতিহাস। কিন্তু একদল স্বার্থান্বেষী আছে যারা চায়না এরকমটা হোক। তাই এই গবেষণা প্রকাশ হবার আগেই সমূলে উৎপাটন করতে চায় তারা। তারই জের ধরে উ গ্র জাতীয়তাবাদী এক মৌ ল বাদী সংগঠন সত্যসেনা (এসএস) পাঠায় তাদের অন্যতম সেনাপ্রমুখকে। বি��ুকে শেষ করে দিয়ে সে ছোটে কবীরের পিছে। বিলু হত্যার তদন্তে নামে লালবাজার ডিসি- ডিডি রজত। সাথে এক্সপার্ট অপিনিয়ন হিসেবে সঙ্গী হয় ডিকে ওরফে ধরণী কয়াল। তদন্ত শুরু হয়। এক এক করে উঠে আসে নানা তথ্য। বিলু মৃ ত্যু র পূর্বে বিড়বিড় করে বলে যায় কিছু কথা। সেটা কি কোন কোড? এনক্রিপ্টেড কোন তথ্য না পাসওয়ার্ড? অনুসন্ধান চলছে। তদন্তে নাম বেরিয়ে আসে বিলুর অন্যতম সেক্রেটারি নিবেদিতার। গবেষণা সম্পর্কে অনেক কিছু সে জানে। এবং মনে প্রাণে চায় এই পাণ্ডুলিপি বই আকারে বেরিয়ে আসুক। হাজার বছরের অন্ধ নিয়মের অবসান হোক। তাই সে ছুটে চলে কবীর খানকে নিয়ে। যে করেই হোক খানদাকে বাঁচাতেই হবে। ঘটনাক্রমে নিবেদিতা এবং কবীর খানের যাত্রা সঙ্গী হয় ডিকে। শেষ রক্ষা হবে কি? না এসএস এর থিংক ট্যাংক খ্যাত সেই সেনাপ্রমুখ এবারও তার কম্মে সফল হয়ে ইতিহাস রচনার নতুন সূর্য ডুবিয়ে দেবে? পাঠ প্রতিক্রিয়া: ধর্ম বা ইতিহাস একদম ডিসেকশন করে থ্রিলার জাতীয় বই পড়লে প্রথমেই মাথায় টুইং করে বেজে ওঠে ❝আউ, এইটা তো ড্যান ব্রাউনের ভিঞ্চি কোডের মতো!❞ কনস্পিরেসি থ্রিলারের ক্ষেত্রে ভিঞ্চি কোডের পর এ জাতীয় বই পড়লে এরকম ধারনা আসতেই পারে। যদিও লেখক বইয়ের ভূমিকায় স্বীকার করেছেন ভিঞ্চি কোড থেকেই ভাবনাটা মাথায় এসেছে। তবে ভিঞ্চি কোডের সাথে একে তুলনা না করলেই বরং ভালো। ধর্ম, পুরাণ ও ভারতবর্ষের ইতিহাস নিয়ে লেখা অসাধারণ এক উপন্যাস ❝বিন্দুবিসর্গ❞। শুরুতেই দেখা যায় ভোরের কাগজ পত্রিকার সম্পাদক মিডিয়া ব্যারন বিল্বদল চট্টোপাধ্যায় খু ন হোন এবং তার তদন্তে নামে রজত। সাথে তাকে সাহায্য করে ধরণী কয়াল। তদন্তে বের হয়ে আসে গা ছমছম করা সব তথ্য। মহাভারত-রামায়ণ এফোঁড়-ওফোঁড় করে তথ্য বের করেছে কবীর খান। লেখক প্রতিটা অধ্যায় বেশ পান্ডিত্যের সাথে লিখেছেন। বইটা পড়ার আগে হয়তো একটা সাধারণ শব্দের মানে কী রকম হতে পারে বা তার আসল অর্থ কী সেসব নিয়ে ভাবিই নি। শব্দতত্ত্ব, সংস্কৃত, বাংলা তৎসম শব্দ, ক্রিয়াভিত্তিক শব্দ এবং এর আসল অর্থ নিয়ে মহাভারত আর রামায়ণকে বোঝার ব্যাপারটা এক কথায় অসাধারণ লেগেছে। লোকমুখে প্রচলিত যেসব প্রবাদ প্রবচন আমরা শুনে আসছি তার উৎস এবং প্রকৃত অর্থ কী আমরা হয়তো অনেকেই জানিনা। আবার জানলেও হয়তো বিকৃত রূপটাই জেনে এসেছি। ❝বিন্দুবিসর্গ❞ বইতে লেখক কবীর খানের মাধ্যমে সেই বিষয়গুলোই তুলে ধরেছেন। ভূমিকায় লেখক ❝কলিম খান❞ এর গবেষণালব্ধ ফলের অংশ বিশেষ উপন্যাসে ব্যবহার করেছেন বলে উল্লেখ করেন। উপন্যাস পড়ার সময় ❝কবীর খান❞ কেই আমার বারবার কলিম খান বলে মনে হচ্ছিল। নতুন সত্য প্রকাশ হলে একদল মানুষের সেটা মেনে না নেয়ার যে প্রবণতা, নিজের স্বার্থ রক্ষায় হাজার বছর ধরে চলা অ না চা র, অ ন্যা য়ে র অবসান করতে না দেয়ার যে প্রবৃত্তি সে বিষয়গুলো লেখক তার উপন্যাসে সুন্দরভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। উপন্যাসের শুরু থেকে শেষপর্যন্ত দারুণভাবে উপভোগ করেছি। মাঝের দিকে একটু ধীর গতির লেগেছিল যদিও। শেষের দিকের নিবেদিতার একটি দৃশ্য মনঃপুত হয়নি ঠিক (স্পয়লার হয়ে যাবে বলে বিস্তারিত বলা গেলো না)। ❝বিন্দুবিসর্গ❞ বইটি বাংলাদেশেও “ভূমি প্রকাশ” থেকে বের হয়েছে।
It is a bag of mixed feelings. Let's start with the good things. This book kept me involved, engaged until the last. Not exactly a thriller, but you would want to see whether the villain is caught or not or whether the manuscript can be saved etc. The way alternative chapters are telling two different stories of sometimes different timescale is often a great way to keep you updated on all fronts. This kind of topic is also less traversed in Bengali, at least to my knowledge. This is why, I might suggest my friends who love a mythology thriller to have a go.
Now let's come to the unpleasantness. The character arcs seemed incomplete to me in almost every case. DK, the friend of the police officer seemed like the intelligent person who would be able to solve the mystery, but at the end, this character didn't really solved anything. In the larger context, there doesn't seem to be any important effect that this character had. The mystery even in the first place doesn't seem like a complex mystery to me. One need to remember that the key to reading Puranas, Ramayana, Mahabharata was not the mystery. It was the murder of Bilu, the media person, which needed to be solved. I also didn't like the ending. The climax was like 'meh', compared to the thrill the author tried to create for a good amount of time.
In conclusion, it could've been better. There are parts that I didn't enjoy, but at the same time, I applaud the author to write on this type of topic. For the most part, the writing itself was good and tight. I would recommend this to someone interested in a different perspective of some of the Purana concept, someone interested in mythological fictions.
এই বইয়ের সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে verb-based semantics বা ক্রিয়াভিত্তিক শব্দার্থতত্ত্বের আলোচনা। শব্দের ভেতরেই আছে শব্দার্থ-আপাতসহজ শুনতে এই বাক্যের শক্তি অনেক বেশি। পুরো বইয়ে ভাষাতত্ত্বের অনন্য এক শাখা সম্পর্কে জানতে পেরেছি। বাংলা ভাষা যে এতটা সমৃদ্ধ এ নিয়ে কোনো ধারণাই ছিলো না। বঙ্গীয় শব্দকোষ এবং বঙ্গীয় শব্দার্থকোষ বইটা নিঃসন্দেহে সংগ্রহে নিয়ে আসতে হবে। বিন্দুবিসর্গের ভালো দিক এখানেই শেষ-এই দুই বইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়া। থ্রিলার হিসেবে খুবই সাদামাটা। ভাষার কপচানি অনেক হয়েছে, কিন্তু প্রাসঙ্গিকভাবে তা জোড়া লাগে নি। রামায়ণ মহাভারতকে যেভাবে সাংকেতিকভাবে বিশ্লেষণ করা হয়েছে সেটা খুবই ফার-স্ট্রেচড ছিল। মনে হয়েছে উত্তেজনার আতিশয্যে যাহা-মন-চাই-তাহাই-বলিয়া-দিলাম মার্কা ইতিহাসের অবতারণা ঘটেছে। এর চেয়ে আর্য-অনার্য সংঘাত আমার কাছে মোর এক্সেপ্টেবল থিওরি বলে মনে হয়। এছাড়াও অনেক প্রশ্নের উত্তর নেই। রবীন্দ্রনাথ গুপ্তভাষায় কী লিখে গেছেন? নিবেদিতার মোটিভ খুবই দুর্বল ছিল কবির খানকে নিয়ে পালানোর। তার আচরণ এই বইয়ে সবচেয়ে হাস্যকর। নীলকণ্ঠ এত পাকা খুনী, অথচ গীতবিতানে ফিঙ্গারপ্রিন্ট রেখে গেলো? তন্ত্রমন্ত্রের কাজ কী ছিলো? দুইজন ফেরারকে ধরতে এত সময় লাগলো পুলিশের? আর মরার সময় হাজার বাদ দিয়ে সহস্রার বলে কে? ওয়ান টাইম রিডেবল। লিংগুইস্টিক্সের ভালো বই হিসেবে পড়া যেতে পারে, ইংরেজি-সংস্কৃতের আশ্চর্য মিলগুলো এক প্রোটো-ইন্ডো-ইউরোপিয়ান সভ্যতার সম্ভাবনা আরো জোরদার করবে আপনার মনে।
আমি ছোটবেলায় আরবি পড়েছি। একটা মূলশব্দ থেকে বিভিন্ন ক্রিয়াপদ বেরিয়ে আসা, তা থেকে বিভিন্ন অর্থ পাওয়ার একটা ব্যাপার আরবিতে আছে। বাংলা শব্দের গভীরে এরকম রহস্যের খেলা কেউ দেখাতে পারেন, সেটা কখনো ভাবিনি। এই ব্যাপারটা আমার কাছে চমৎকার লেগেছে। মার্ক্সের কোটেশন থেকে হরিচরণের বঙ্গীয় শব্দকোষ, রামায়ন-মহাভারতের রিটেলিং ও ব্যাখ্যা আরো শক্ত ভিত্তি দিয়েছে লেখকের প্রচেষ্টাকে। যথেষ্ট বিশ্বাসযোগ্যভাবে উঠে এসেছে ব্যাপারগুলো।
খাঁটি থ্রিলার ধরে পড়ে গেলে আশাহত হতে হবে কিছুটা। ড্যান ব্রাউনিয় টাচ, খানিকটা ওপেন এন্ডিং ও 'হলেও হতে পারে' সিক্যুয়েলের জায়গা রাখা এবং বেশ সাধারণ ঘটনাক্রম মুহুর্মুহু টুইস্টের অপেক্ষায় থাকা খাঁটি থ্রিলার পাঠককে হয়তো সম্পূর্ণ তৃপ্ত করবে না। বিভিন্ন মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি ফোটাতে গিয়ে একই প্রসঙ্গ ও ভাবনা বারবার আসায় খানিকটা একঘেয়েমিও হয়তো স্পর্শ করে যাবে তাকে। তবে বাংলা ভাষার শেকড় নিয়ে ফ্যাসিনেশন থাকলে লেখকের এই দারুণ খেলাটা মুগ্ধ করতে বাধ্য।
ভাষার খেলার জন্যই পাঁচ তারা দেওয়া। নাহয়, এমনিতে তিন থেকে চার তারকার মতোই হয়তো দেবেন থ্রিলার পাঠক। মানে, অতোটা রোমাঞ্চের আশা নিয়ে পড়া যাবে না। পড়তে হবে শব্দের খেলা ও পুরাণের র���টেলিং জানার আগ্রহ নিয়ে। লেখার ভঙ্গিই টেনে নিয়ে যাবে বাকি পথ।
রবীন্দ্রনাথের ভাষা নিয়ে কিছু থাকলে আরেকটু তৃপ্তি হতো। আসবে কি সেরকম কিছু পরে কখনো? ফিরবে অদ্বৈত? কবীর খান? ডিকে? জানি না। আশায় থাকব তবু।
বিভিন্ন শব্দের ক্রিয়াভিত্তিক অর্থ ব্যবহার করে কি রামায়ণ, মহাভারত সহ বিভিন্ন পুরাণের অন্যরকম ব্যাখ্যা দেওয়া যায়? সেই চেষ্টাটাই করেছিলেন কবীর খান। কলেজ ড্রপআউট কবীর খান অন্যদের থেকে একটু আলাদা। বাকীরা যখন প্রচলিত শিক্ষা গ্রহণ করে বিভিন্ন জায়গায় বড় চাকরিবাকরি করছে কবীর খান তখন খুঁজে বেড়াচ্ছেন রামায়ণ, মহাভারত সহ পুরাণগুলোতে যে লুকানো সত্য আছে সেটাকে খুঁজে বের করার চাবিকাঠি। প্রায় সারাজীবনের পরিশ্রমে তিনি সফল হন সেই কাজে। রামায়ণ, মহাভারত ও পুরাণের বিভিন্ন গল্পগুলোর নতুন অর্থ বের করেন। কলেজের পুরোনো বন্ধু নামকরা খবরের কাগজের সম্পাদক বিলু প্রতিশ্রুতি দেন যে সেগুলো ছেপে বেরোবে। এরমধ্যেই হঠাৎ নিজের অফিসে বিলু খুন হয়ে যান। কবীর খানেরও জীবনসঙ্কট দেখা দেয়। বিলুর সেক্রেটারি নিবেদিতা কবীর খানকে বাঁচানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত কি নিবেদিতা বাঁচাতে পারবে কবীর খানকে? কে মারতে চায় কবীর খানকে? কিই বা লেখা আছে কবীর খানের পাণ্ডুলিপিতে? জানতে হলে পড়তে হবে এই উপন্যাস। লেখক কলিম খান ও রবি চক্রবর্তীর বিভিন্ন গবেষণামূলক প্রবন্ধের উপর ভিত্তি করে এই উপন্যাস রচনা করেছেন। তথ্যবহুল উপন্যাস। লেখার ধরনটা খুব একটা ভালো লাগেনি। তবে ইতিহাসের বিভিন্ন ঘটনা ও ক্রিয়াভিত্তিক শব্দের অর্থের মধ্যে দিয়ে চিরাচরিত পুরাণ, রামায়ণ, মহাভারতের গল্পগুলোকে এক অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে দেখার মধ্যে দিয়ে উপন্যাস নিজেই পাঠককে ধরে রাখে।
বই তা শেষ করতে এফেক্টিভলি দু বেলা লেগেছে কাজেই ইটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না যে কি দুর্ধর্ষ বই..বাংলার Dan Brown আর কি..সত্যি বৈপ্লবিক চিন্তা ভাবনা..অকপটে এই বই আমি সবাইকে পড়তে বলবো, কারণ না পিপড়াটা বোকামী হবে..আমার top bengali books to read-এ এই বই অবশ্যই থাকবে..লেখককে ধ্যনবাদ এরকম একটা লেখা উপহার দেবার জন্য এবং আরো চাই এর আব্দার আগেই জানিয়ে রাখলাম... এবার বই সম্পর্কে কতগুলো পর্যবেক্ষণ... 1.বাংলার Dan Brown.. একটু আক্ষরিক অর্থেই "Dan Brown Novel" হয়ে গেছে আমার মনে হলো..কাহিনীর মাঝখানটা একটু ঝুলে গেল..আর শেষে খোশবাগ এর দৃশ্য একেবারে সিনেমার চিত্রনাট্য হয়ে গেছে..আর একটু কমেও শেষ করা যেত..কিন্তু সেটা খুব একটা বড় ব্যাপার নয় কারণ বইয়ের এতে খুব একটা অঙ্গ হানি হয় নি 2.লেখক বর্তমান সমাজের উপযোগী করতে গিয়ে কোথায় কোথায় হিন্দি শব্দ গুচ্ছ ব্যবহার করেছেন..তাতে বইটা সময়ের উপযোগী হয়েছে কিনা জানি না কিন্তু কোথাও কোথাও বড্ডো অপ্রাসঙ্গিক হয়ে গেছে..যেমন বাংলা ও ইতিহাসে পন্ডিত কবীর খান মনে মনে বলছেন"..কে আমার বই ছাপিয়ে ধুম মাচিয়ে দেবে.." এটা just নেওয়া গেল না..যদিও এ ব্যাপারে হয়তো সম্পাদকের কিছুটা দায় থাকবে 3.সারা বই জুরে প্রচুর ছাপার ভুল আছে..প্রকাশক ও প্রুফ রিডার কে বলব যেগুলো কে শুধরে দিন..একটা পাঁচতারা Shopping Mall এর সামনে কাদা জমলে পুরো Show টাই মাটি হয়ে যায় তাই না
কাহিনী সংক্ষেপ: হঠাৎ নিজের অফিসেই খুন হলেন শহরের বিখ্যাত পত্রিকায় সম্পাদক আর চৌকশ লেখক বিল্বদল চট্টোপাধ্যায়। কাহিনীর ভাঁজে বের হয়ে আসে রামায়ণ- মহাভারত- পুরাণের কিছু অন্তর্নিহিত গোপন তথ্য, যা প্রকাশ হলে টলে যাবে হিন্দু ধর্মের কিছু প্রাচীণ ভিত, যা লিখতে বাধ্য করবে এক নতুন ইতিহাস। এতদিন ধরে যারা দলিত হিসেবে পরিচয় পেয়ে আসছে তারা উঠে যাবে সমাজের অগ্রভাগে – ৩০ বছর এই তত্ত্ব খুঁজে করে বের করেছেন এক খ্যাপাটে গবেষক। এরপর কি তবে তাকে মারার জন্যেই এগিয়ে যাচ্ছে খুনি? কিন্তু কি তার মোটিভ? পুলিশ কি পারবে সেই খ্যাপা গবেষককে বাঁচতে? - এসব নিয়েই কাহিনী এগিয়ে চলে। .......... পাঠ প্রতিক্রিয়া: বেশ কিছু পৌরাণিক গল্পের বা বাংলা শব্দের বেশ গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বইটিতে লেখক দিলেও বার বার তথ্যের পুনরাবৃত্তি লিখাকে একঘেয়ে করে তুলেছে। লেখকের উদ্দেশ্য ছিল ড্যান ব্রাউনের 'দ্য ডা ভিঞ্চি কোড' এর মত একটি বই প্রকাশ করার। কিন্তু বার বার প্রসঙ্গ পরিবর্তন, একটা টপিক শেষ না করে আরেকটা বিষয় বা সময়ের কাহিনীতে চলে যাওয়ায় বেশ বিরক্ত লেগেছে পড়তে। কোনো বিষয়েই পাচ্ছিলাম না কোনো সুনির্দিষ্ট, গোছানো তথ্য। তাই থ্রিলার হিসেবেই পড়ে গিয়েছি বইটা, তথ্যবহুল কোনো লিখা হিসেবে নয়... এটাই হতাশ করেছে অনেক।
হঠাৎ খবর ,খুন হয়ে গেছেন বিখ্যাত খবরের কাগজের সম্পাদক । মৃত্যুর আগে এমন কতগুলো কথা বলেগেছেন যার বিন্দু বিসর্গ কিছুই উদ্ধার হচ্ছে না। তদন্তে নেমে ডিসি-ডিডি রজত রায়ও হিমশিম। ডাক দিলেন বন্ধু ডিকে কে। ডিকে- ধরণী কয়াল।
মৃত্যু পথযাত্রীর মুখের শেষ কথাগুলির বিন্দু বিসর্গ উদ্ধার করতে গিয়ে , কেঁচো খুঁড়তে কেউটের মুখ ও দেখা গেল।
খুন হয়ে যাওয়া সম্পাদক যুক্ত ছিলেন রামায়ণ-মহাভারতের মধ্যে আচ্ছাদিত গুপ্ত সংকেত উদ্ধারে , যা গবেষণা করছিলেন আরেক বাঙালি । এই গবেষণার পাণ্ডুলিপি সূচনা করবে এক নূতনের। গুঁড়িয়ে দেবে পুরাতন কিছু সত্যি।
তাহলে কি খুনি ধ্বংস করে দিলো এই পাণ্ডুলিপি ? আর গবেষক ? তার কি হলো ?জানত হলে পড়তে হবে দেবতোষ দাশের লেখা "বিন্দুবিসর্গ"
গল্পের শুরুটা প্রথমে একটু শ্লথ মনে হয়েছে। কিন্তু ধীরে ধীরে রহস্য রোমাঞ্চ আমাকে গিলতে শুরু করলো। রামায়ণ-মহাভারতের তথ্য, জাতবিচারের মর্মান্তিক ঘটনার বিবরণ প্লটকে বেশ আটিসাটি করেছে। লেখার ধরণ ও বেশ ভালোই বলা চলে। সব মিলিয়ে বেশ ভালো লেগেছে। বইটি পড়ার অনুরোধ রইলো ।
পড়লাম বইটা। মোটামুটি এক বইতেই ভারতবর্ষের ম্যালাকিছু সম্পর্কে ধারণা দিয়ে দিলো। যদিও বেশিরভাগ জিনিস আমি জাস্ট পড়ে গেছি, মনে থাকবে না; কারণ মহাভারত-রামায়ণ সম্পর্কে আমার ধারণা খুবই কম। ছোটবেলায় উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরীর লেখা বই পড়েছিলাম, তাও ভাসা ভাসা মনে আছে। যেহেতু ধর্মীয় ভাবেই আমি গল্পচ্ছলে নিয়েছিলাম। এখন, এ বইটা একটা থ্রিলার বইয়ের জনরায় পুরোপুরি ধরে বসে থাকা যায় না। এটা একচুয়েলি একটা ইতিহাসের বই। ইতিহাসের ফাঁকে ফাঁকে একটা কাঠামো দাঁড় করিয়ে উপন্যাসের রূপ দেওয়া হয়েছে। ছোট ছোট অধ্যায় হওয়াতে আমার পড়তে ভালোই লেগেছে। ব্যস্ততার জন্য এক বসায় পড়ার সুযোগটা নেই বিধায় তিন চার পৃষ্ঠায় অধ্যায় শেষ হয়ে যাওয়াটা আমার উপকারে লেগেছে। শেষমেশ বলব, হিন্দ��� ধর্ম-পুরাণ নিয়ে অবাক করা কিছু হাইপোথিসিস পড়াটা উপভোগ করতে পারলে এ বইয়ে কেউ বিরক্ত হবে না। হ্যাপি রিডিং ❤️
দেবতোষ দাশের দেশভাগের ইতিহাস কেন্দ্রিক 'বিয়োগপর্ব' পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। সেই তুলনায় বিন্দু বিসর্গ পড়ে খানিকটা হতাশ হলাম বলা যায়। প্লটটা বেশ ভালো ছিলো সন্দেহ নেই। লেখনীও ভালো। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে খুবই বোরিং এগিয়েছে বইটা। উনি ইতিহাসভিত্তিক ভিকশনে যতটা পারদর্শী, থ্রিলার লেখায় ততটা নন বলে মনে হলো। কাহিনী বিন্যাসটা ঠিক থ্রিলার বইয়ের মতো লাগছিলো না। চাঞ্চল্যকর সব বিষয় উঠে এসেছে একের পর এক, অথচ আমি ঠিক থ্রিলটা ফিল করতে পারছিলাম না। হতে পারে যে অনেক বেশি এক্সপেক্টেশন নিয়ে পড়তে বসেছিলাম বলেই এমন লেগেছে। যাই হোক, যারা মিথ এবং হিস্টোরিক্যাল কন্সপিরেসির সাথে জড়ানো বই পড়তে ভালোবাসেন, এই বইটা তাদেরকে রিকমেন্ড করবো।