এক অনন্ত নক্ষত্রবীথির সামনে আমরা দাঁড়িয়ে। শূন্যে কালপুরুষের তরবারি। নীচে স্বেদ, রক্ত, শব্দগুঁড়ো, ভাসমান কাগজের স্তূপ। শব্দের শরীর এত ভাস্কর্যময় তা কি আমরা জানতাম? যেন তাদের নীল দ্যুতি আমাদের করোটি ভেদ করে চলে যাবে! ঘুমের উতরোল ঢেউ পার হয়ে বিশ্বসাহিত্যের এক গ্যালারিতে আমাদের নিয়ে হেঁটে চলেছেন লেখক। কে নেই সেখানে? শিল্পসাহিত্যের শ্রেষ্ঠ নক্ষত্রেরা- শেক্সপিয়র, মার্লো, পাসকাল, লা রোশফুকো, ভলতের, কোলরিজ, ভিক্তর য়্যুগো, বঙ্কিমচন্দ্র, তলস্তয়, তরু দত্ত, শোপেনহাওয়ার, নীৎশে, বোদল্যের, মালার্মে, রম্যাঁ রলাঁ, অবনীন্দ্রনাথ, মপাসাঁ, প্রুস্ত, সার্ত্র, আপোলিনের, এলিয়ট, স্যান্ডবার্গ, বেকেট, আঁরি মিশো, এল্যুয়ার, প্রেভের, জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু, সিলভিয়া প্লাথ, চ্যাপলিন, সত্যজিৎ রায়, মৃণাল সেন, অন্নদাশঙ্কর, জ্যোতিভূষণ চাকী...। আছেন স্যুররেয়ালিস্তরা, আছেন জান দ্যুভাল, আছে সমুদ্র আর অন্ধকার। এ এক অন্যরকম বই, অন্যরকম অন্বেষণ, যে-অন্বেষণ ইতিহাস খুঁড়ে খুঁড়ে হারিয়ে যাওয়া মানুষের কণ্ঠস্বর খোঁজে। ফলে নিষ্প্রাণ জ্ঞানবস্তুর গায়ে লাগে সাতরঙা আলো। আমাদের ক্রমক্ষীয়মাণ মনীষার জগতে এই বই এক অন্যরকম সংবেদী সংযোজন।
Chinmoy Guha (born in September 1958 in Kolkata, India) is a professor and former Head of the department of English at the University of Calcutta, a Bengali essayist and translator, and a scholar of French language and literature. He has served as the Vice-Chancellor of Rabindra Bharati University and Director of Publications, Embassy of France, New Delhi. Earlier he taught English at Vijaygarh Jyotish Ray College in Kolkata for more than two decades, and French at the Alliance Française and the Ramakrishna Mission Institute of Culture for eleven and five years respectively.
He has won the Lila Ray award of the Government of West Bengal in 2008 and the Derozio bicentenary award in 2010. He has been awarded knighthoods by the ministries of Education and Culture of the Government of France, in 2010 and 2013. Paschimbanga Bangla Akademi and the Government of West Bengal conferred on him Vidyasagar Puroshkar in 2017. The French President conferred on him in November 2019 the title of Chevalier de l'Ordre national du Mérite for his contribution to intercultural exchange. He won the prestigious Sahitya Akademi Award 2019 in Bengali literature for his collection of essays Ghumer Darja Thele.
গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন থেকে হঠাৎ করেই ঘুমের দরজা ঠেলে দেখে মিললো বাংলা সাহিত্য ও বিশ্বসাহিত্যের যত অলিগলি। এছাড়াও আছে চলচ্চিত্র, চিত্র শিল্প নিয়ে যত আলোচনা ও ভাবনা। কোন নিদিষ্ট বিষয় দিয়ে শুরু নয়, হঠাৎ হঠাৎ মনের কোনে যখন যিনি উঁকি দিয়েছেন তাঁকে নিয়েই আলোচনায় থেকেছেন লেখক চিন্ময় গুহ। হালকা চালে কোন গল্প বলা নয়, নয় শুধু নিছক নিজের কোন স্মৃতি হাতড়ে ফেরা। একনিষ্ঠ ও গভীর মনোযোগ দিয়ে রচনা করেছেন এক গুচ্ছ প্রবন্ধ।
যখন কোন বিষয় নিয়ে লেখক লেখেন তখন সেই বিষয়ে সঠিক জানাশোনা না থাকলে বিষয়টাকে সঠিক ভাবে ফুটিয়ে তোলা যায় না। সাহিত্য জ্ঞান যাঁদের মধ্যে বেশী বা জানাশোনা টাও অনেক তাঁরাই বুঝবেন লেখকের পরিশ্রম ও সফলতা টুকু। " ঘুমের দরজা ঠেলে " বইটাতে দেশ-বিদেশের নানা লেখকদের নিয়ে চমৎকার গোছানো চিন্তা ভাবনা ও উপস্থাপনা। চেনা জানা লেখকের অজানা সব কাহিনি, নাম জানা তবে লেখা না পড়া অনেক লেখকের সাহিত্যকর্ম ও ব্যক্তিজীবন। নাম না জানা লেখকের, নাম না জানা দারুণ সব বইয়ের তথ্য। কী নাই বইটাতে?
পড়ালেখার জগতে যারা নতুন তারা যেমন অবাক হয়ে দেখবেন - লেখক কেমন করে একটা একটা দরজা খুলে অলি গলি হাতড়ে নিয়ে চলেছেন সুদূরের কোন এক জাগতে। তবে বিরক্তি ও আসতে পারে। তেমনি যারা অনেক জানেন তারা মুগ্ধ হবেন কতো কতো অজানা আজও অজানাই থেকে গেছে সাহিত্যের বিচিত্র এই জগতে। এমন মুগ্ধ হওয়া গদ্য কমই পড়েছি।
আমরা কেন কবিতা পড়ি? মধ্যপ্রাচ্য থেকে আর.জি.কর, মূল্যবৃদ্ধি থেকে শুরু করে নিপীড়িতের আত্মহত্যা, রিলস্ থেকে শুরু করে ফুডভ্লগারদের আত্নরতি— তথাকথিত বিনোদনের এই বিপুল সম্ভার হাতের নাগালে থাকা সত্বেও আমরা কেন অজানা এক মানুষের লিখে যাওয়া টুকরো কথাগুলোর আশ্রয় নিই? অন্যের কথা জানি না; তবে আমি কবিতা পড়ি দুটো কারণে। প্রথমত, কবিতা আমার কাছে একটা অন্যরকম কাচ— যার মধ্য দিয়ে তাকালে সবকিছু একটু বেশি স্পষ্ট, একটু বেশি রঙিন বা বেরঙা হয়ে দেখা দেয়, আবার যার খুব কাছে এলে আমি নিজের প্রতিবিম্বকে দেখতে পাই শব্দ আর বাক্যের মধ্যে জমে থাকা কান্না, ক্ষত, চিৎকার, বা উল্লাসে। দ্বিতীয়ত, যেভাবে ভাবতে পারলে ভালো লাগত, কিন্তু যে-রকমভাবে আমি ভাবি না, সেইসব ভাবনা ও অভিব্যক্তিকে আমার নাগালে এনে দেয় কবিতা। বলতে পারেন, কবির মন থেকে জন্ম নেওয়া ওই ভাবনারা আমার ক্রাশ। অপ্রাপণীয় বলেই আমি তাকে দেখে চলি— লুকিয়ে, শয়নে, স্বপনে, মালিন্যে ভরা জাগরণে। আলোচ্য বইটি পড়তে গিয়ে হুড়মুড় করে এইসব চিন্তা আমার সামনে এসে দাঁড়াল। দরজা শুধু ঠেলে নয়, রীতিমতো "ভেঙে মোর ঘরের চাবি" স্টাইলে তারা আমাকে নিয়ে গেল কবি ও কবিতার ভুবনে। বেশ কিছুক্ষণ কাটল সেই জগতে৷ সেখান থেকে ফিরে আসার পর নিজের বাণী বসুর 'কবিকাহিনি'-তে পড়া উপমা-মাফিক মধুর বয়ামের মনে হচ্ছে— যার বাইরেটা শুকনো, ঝরঝরে, আর ভেতরটা ভারী ও ঘন। কেন? প্রথমত, চিন্ময় গুহের গদ্য একেবারে আলাদা লেভেলের। পুরোপুরি গদ্য-কবিতা না হয়েও এক প্রাবন্ধিকের গদ্য যে কবিতার কতটা কাছাকাছি যেতে পারে, এ তারই দৃষ্টান্ত। দ্বিতীয়ত, গোটা পৃথিবীর কবি, কাব্যচিন্তা, মায় কবিতার একটি মস্ত বড়ো অংশের সারাৎসার ধরা আছে এই চৌষট্টিখানা লেখায়। এদের মাধ্যমে আমরা এক-একটি বিশেষ সময়কালে পৌঁছে যাই, যখন প্রতিকূল পরিস্থিতি ও কবির নিজস্ব মন্থনের সমন্বয়ে জন্ম নিয়েছিল বিভিন্ন কালজয়ী কবিতা— যাদের মধ্যে চিরতরে ধরা রয়েছে সেই সৃষ্টিলগ্নের পদচিহ্ন। শুধু সৃষ্টি বললে অবশ্য ভুল হবে। অনেক ধ্বংস, অনেক আগুন আর অশ্রুও গোলাপ হয়ে ফুটেছে সেই লেখাগুলোতে। তৃতীয়ত, শুধু এক-একজন কবিই নন; ক্রস-রেফারেন্সড্ হয়ে অন্য দেশ ও কালের কবি, মায় অনুবাদকও এসেছেন এই লেখাগুলোতে। এদের পড়তে গিয়ে সত্যিই মনে হয়েছে, যেন হংসবলাকা হয়ে আমরা উড়ছি কবিতার পৃথিবীর আকাশে৷ নীচে দেখা দিচ্ছে আলো-ঝলমল শহর, শান্ত গ্রাম, গম্ভীর পাহাড়, অন্ধকার সমুদ্র, আর এ-সবের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা প্রেম ও অপ্রেমের মনপবন। শেষে বলি, এই বইয়ে আলোচিত কবিদের অর্ধেককেই আমি আগে সেভাবে চিনতাম-জানতাম না। কিন্তু লেখাগুলো পড়ে মনে হয়েছে, এঁদের সৃষ্টির মধ্য দিয়ে গড়ে ওঠা ক্যালিওডোস্কোপটা যেন হঠাৎই এসে পড়েছে একেবারে হাতের, এমনকি চোখের নাগালে। এ যে লেখকের কত বড়ো কৃতিত্ব, তা না পড়লে বোঝা কঠিন। এ-সব বই পড়া বিপজ্জনক। এগুলোর পর মনে হয়, দরজা-জানালা বন্ধ করে, মোবাইলটা সুইচ-অফ করে, ডুব দিই কবিতার গভীরে। আসলে এ এমনই এক বই যা বলে, শত নিগড়ে বন্দি হয়েও কবিতার ভুবনে হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা। সেই কথা মেনে যদি সত্যিই... নাহ্, মোবাইলের দরজা ঠেলে মেসেজ ঢুকছে। দশটায় ভি.সি আছে। তৈরি হই বরং। তবে হ্যাঁ, কবিতাকে ভালোবেসে থাকলে— সে আমার মতো গোপন প্রেমিকই হোন বা পড়শিকে চেপে ধরে কবিতা শোনানোর মতো বাতিকগ্রস্ত— এ-বইটা আপনাকে পড়তেই হবে।
সাহিত্য নিয়ে এত চমৎকার বই আমি খুব অল্পই পড়েছি। লেখক 'ঘুমের দরজা ঠেলে' পাঠকদের বিশ্ব সাহিত্যের মায়াময় জগতে নিয়ে যাবেন। আর নিঃসন্দেহে পাঠক সেই জগতের ঘোর কাটিয়ে উঠতে পারবেননা (অন্তত আমি পারিনি)।
রূপকথার জগত আসলে সত্যি। তা আমরা নিজেরাও সৃষ্টি করে নিতে পারি। কী থাকে কল্পনায়? একটা সুখ, একটা ভাবনা, একটা মনোহর জগৎ, একটা প্রাপ্তির আশা। স্টুডিও ঘিবলির সবুজগুলো সেই সুখের সন্ধান কি দেয় না? ব্যাটম্যানের সাথে কি কঠিনতম সিদ্ধান্ত নিতে বসি না? হারভে ডেন্টের এলোমেলো আর সাজানো বইগুলোর ইঙ্গিত কি চমৎকৃত করে না? চলচ্চিত্র নিজেই একটা রূপকথার জগৎ। সেখানে তারকোভস্কি, বার্গম্যান, সত্যজিৎ, নোলান, স্করসেজি, মিয়াজাকি, তারেক মাসুদ, জহির রায়হান প্রত্যেকে একটা আলাদা আলাদা দেশ। এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াতে ওখানে পাসপোর্ট-ভিসা কিচ্ছু লাগে না। ছবি? আরেকটা জগৎ রূপকথার। পিকাসো, দালি, ভ্যান গগ, মোনে, মাতিস, ফ্রিদা কাহলো, মকবুল ফিদারা হাত ধরাধরি করে আমন্ত্রণ জানান তাঁদের সৃষ্টির জগতে ঘুরে বেড়াতে। এক ভাস্কর নভেরা আমন্ত্রণ জানান আরেক ভাস্কর এঞ্জেলোর সৃষ্টিকে অন্য চোখে দেখতে৷ প্রতিটা ছবি, প্রতিটা ভাস্কর্য কি একেকটা আলাদা দেশ নয়? অজন্তা ইলোরার গুহাচিত্র? প্রাচীন বৌদ্ধ স্থাপত্যগুলো? মন্দির-মসজিদের নকশাগুলো? একটা আলাদা আলাদা দেশ৷ অবনঠাকুর-লীলা মজুমদার যেমন কথার মাধ্যমে ছবি আঁকেন। যে বাচ্চারা টংলিং পড়েনি বা বুড়ো আংলার সাথে যাদের কথা হয়নি তারা তো এমন জগৎ সৃষ্টি করতে পারবে না। ফেলুদার লুক্কায়িত সম্পদ তাদের চোখে পড়বে না। সাহিত্য-চিত্রকলা-চলচ্চিত্র-সংগীত চারটা আলাদা রূপকথার সুমধুর জগতে প্রবেশের অধিকার তো হাতের নাগালেই ঘুরে আমাদের৷ আমরা কেউ কেউ সে জগতে প্রবেশাধিকার পাই, খুব ধীরে বুঝতে পারি। চার জগতের কেউ বিচ্ছিন্ন নয়। সকলে হাত ধরাধরি করে চলেছে একে অন্যের সাথে। মস্তিষ্কের মধ্যে, হৃদয়ের মধ্যে এমন অস��খ্য জগত বহনের সক্ষমতা রয়েছে আমাদের৷ তবে দ্য ড্রিমারস এর চরিত্রের মতো ওইসব জগতে ডুবে আমাদের নিজ পায়ে হাঁটার জগতটাকে ভুলে গেলে আবার বিপদ! এই জগততো রক্ত-মাংসের, সৌন্দর্য আর কদর্য যেখানে পাশাপাশিই বিচরণ করে। এখানের অর্জিত মৌলিক জ্ঞান নিয়েই অন্য জগতে ঢোকার চাবিকাঠি পাই আমরা।
এটি একটি ফেসবুক স্ট্যাটাস। মাস কয়েক আগে চিন্ময় গুহের বইয়ের ছবি দিয়ে এমনিতেই লিখেছিলাম। তখনো বইটি পড়া হয়ে ওঠে নি আমার। অত্যন্ত কাকতালীয় ভাবে, সেই ভাবনাগুলোই এই বইটির পাঠ-প্রতিক্রিয়া হিসেবে অত্যন্ত চমৎকার খাপ খেয়ে গেল। চিন্ময় গুহের ঘুমের দরোজা খুলে এভাবেই বিশ্বজগতের স্বাপ্নিকেরা ঘুরে বেড়িয়েছেন আর চিন্ময় গুহ তাঁর স্বপ্নের জগৎ থেকে বাস্তবে এসে জাদুর কলমে তুলে ধরেছেন সেইসব অভিজ্ঞতা।
এ এক আশ্চর্য বই। যে অনেক জানে তার ভালো লাগবে, যে কিছু জানে তার ভালো লাগবে, যে কিছুই জানে না তারও ভালো লাগবে।
প্রধানত বিশ্বসাহিত্য ও সাহিত্যিক, কিঞ্চিৎ সিনেমা, নামমাত্র দার্শনিক আর চারুকলা নিয়ে লেখা বইয়ের পাতায় পাতায় মায়া জড়ানো। চৌষট্টি নিবন্ধের কয়েকটি বিচ্ছিন্ন লেগেছে। বাকি সব এক নিশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো। মাঝে মাঝেই কবিতা, বিভিন্ন জায়গা থেকে উদ্ধৃত কথা, একের পর এক বিখ্যাত ব্যক্তিবর্গের আগমন অনন্য মাত্রা যোগ করেছে।
বাংলা সাহিত্য, বিশ্বসাহিত্যের রাজপথ থেকে অলিগলি এবং বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে এমন একচ্ছত্র দখল সচরাচর চোখে পড়ে না। প্রাবন্ধিকের মতো মনোযোগী এবং একনিষ্ঠ পাঠক হয়তো অনেকেই আছেন। কিন্তু চিন্ময় গুহের পাঠকসত্তার বাইরে লেখকমনের পরিচয় পাওয়া গেল " ঘুমের দরজা ঠেলে" নামক প্রবন্ধসংকলনে।
সাহিত্য জ্ঞানে অজ্ঞান এবং সাহিত্যের অপরাপর শাখায় যাঁরা স্বচ্ছন্দে বিচরণ করেন - এই দু'দলই চিন্ময় গুহের লেখা পড়ে আনন্দ পাবেন। হবেন উপকৃত। দেশি-বিদেশি লেখার এত চমৎকার বিস্তারিত এবং গোছানো আলোচনা পড়তে পড়তে পাঠক নতুন আলোকরশ্মির সন্ধান পাবেন৷ জানা লেখকের অজানা কাহিনি, তাঁর লেখা বইয়ের আলোচনা, বিশ্লেষণ পাঠকের সামনে এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করবে।
অভিজ্ঞ পাঠকের কাছে "ঘুমের দরজা ঠেলে" এক স্মৃতিচারণের নাম। কেননা তাঁরা ইতোমধ্যে বিশ্বসাহিত্যের রূপ এবং রস আস্বাদন করেছেন৷ চিন্ময় গুহের আলোচনা সাহিত্য পাঠের স্মৃতিকে জাগরূক করবে। হয়তো দেখার নব দৃষ্টির সূচনা করবে।
মূলত বইটি আ্যডভান্স পাঠকের জন্য। যাঁদের সাহিত্যপাঠ কম, তাঁরা জানবেন, পড়বেন বটে। কিন্তু অনেকক্ষেত্রেই আগ্রহ হারাতে পারেন।
গদ্যলিখিয়ে হিসেবে চিন্ময় গুহ পয়লা কাতারের লোক। এমন মুগ্ধকর গদ্যরূপ সহজে পড়ার সুযোগ মেলে না।
ঘুমের দরজা ঠেলে স্বপ্নাবিষ্ট লেখক হেঁটে চলেছেন শিল্পসাহিত্য, দর্শন, চলচ্চিত্রের কতশত অজানা-বিস্ময়কর গলিঘুঁজি, কানাগলি দিয়ে। হাতে হাত ধরে সহস্রাব্দভর এ-স্বপ্নচারণে আমাদেরও সঙ্গী করেছেন তিনি। আঙুল উঁচিয়ে-উঁচিয়ে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছেন কালের ধুলোয় মলিন হয়ে যাওয়া একেকটা বিস্মৃত স্ফটিকের সঙ্গে।
লেখক ঘুমের ঘোরে হাঁটতে হাঁটতে পৌঁছে যাচ্ছেন তাঁদের সমাধিতে। কখনও স্বপ্নে, কখনও-বা ঝুলবারান্দার রেলিং ধরে, আবার কখনও সমুদ্রসৈকতে হাঁটতে গিয়ে তাঁদের দেখছেন। কখনও পৌঁছে যাচ্ছেন মগ্ন শিল্পী, লেখকের টেবিলের কাছে; আবিষ্ট হয়ে দেখছেন জীবন্ত ভাস্কর্যদের। তিনি। তিনি দেখতে পাচ্ছেন—কারো হাতে ধরে থাকা বইয়ে অনবরত আগুন জ্বলছে। কারো ক্ষত-বিক্ষত শরীর চুঁইয়ে রক্ত ঝরছে। কারো-বা শরীর জ্যোৎস্নায় উদ্ভাসিত হচ্ছে। কেউ বাদুড়ের ডানার মতো অন্ধকারে নিঃসাড়ে দাঁড়িয়ে আছেন। কেউ নিজের কবিতা ক্রমাগত আবৃত্তি করে চলেছেন অস্ফুটস্বরে। কেউবা বইয়ের পাতা ছিঁড়ে ছড়িয়ে দিচ্ছেন চারিদিকে (সেগুলো পায়রা হয়ে চক্রাকারে উড়ছে)।
প্যারিসের ত্যুইলরি বাগানের পাশে টিনের চেয়ারে বসে এক ভদ্রলোক একটি করে কবিতা পড়ে পাতাগুলো উড়িয়ে দিচ্ছেন হাওয়ায়। ''আরে, লোকটা পাগল না কি? কয়েকটা শব্দ বিড়বিড় করে আউরে যাচ্ছেন ক্রমাগত।" "চুপ, চুপ! এ তো পল এল্যুয়ার।" তিনি আবৃত্তি করছেন তাঁর অদ্ভুত এক কবিতা 'ঘুমপাড়ানি'—
"মেয়ে এবং মা এবং মা এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মা এবং মা এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মা এবং মা এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মা এবং মা এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মেয়ে এবং মা।"
খর্বাকায় এক-চোখ অন্ধ সাত্র যখন বুঝতে পারলেন অবশিষ্ট চোখের জ্যোতিও আস্তে আস্তে নিবে যাচ্ছে, দৈনিক কুড়িটি পর্যন্ত করিডন ট্যাবলেট খাচ্ছেন। অ্যাম্ফেটামাইন তাঁর চিন্তার গতি তিন গুণ বাড়িয়ে দিচ্ছে, তিন গুণ বেশি লিখতে পারছেন। শরীর অতিশয় দুর্বল হয়ে পড়ছে, হাত থেকে হুইস্কির গেলাস খসে পড়ছে। আবার করিডন খাচ্ছেন, লেখা চলছে পুরোদমে সারাদিন।
বোরহেস আর কাসারেস লিখে চলেছেন 'ক্রনিকাস দে বুসতোস দোমাক' নামক সেই আশ্চর্য বই, যার নবম খণ্ড পর্যন্ত আছে শুধু একটি টেবিলের উত্তর-পশ্চিম কোণের বর্ণনা।
এলিয়টের এলোমেলো একটি জবরজং কবিতাকে হিংস্রভাবে কেটেকুটে 'দ্য ওয়েস্ট ল্যান্ড'-এর বর্তমান রূপ দেওয়া আধুনিক ইংরেজি কবিতার অন্যতম প্রধান রূপকার এজরা পাউন্ড ওয়াশিংটনের সেন্ট এলিজাবেথ মানসিক হাসপাতালে কমলালেবু খেতে-খেতে খোসা ছুড়ছেন। ফ্যাসিজম-কে সমর্থনের জন্য বিচারের সময় অপ্রকৃতস্থ হয়ে পড়েন তিনি। তবুও লিখে চলেছেন পিজান ক্যান্টোজ, রকড্রিল, থ্রোনের মতো দীর্ঘ-দীর্ঘ কবিতা।
বালক চ্যাপলিন সারাদিন জানালার বাইরের মানুষদের দেখছেন, প্রতি মুহূর্তের ঘটনা অবলোকন করছেন, মায়ের থেকে মূকাভিনয়ের তালিম নিচ্ছেন। হেসেখেলে মা-ছেলেতে দিব্যি দিন কেটে যাচ্ছে। উনিশ বছর বয়সী কপর্দকহীন চ্যাপলিন প্রেমে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছেন হেনরিয়েটা কর্তৃক।
আততায়ীর ছুরিকাঘাতে মার্লোর ডান চোখ দিয়ে নিঃশব্দে ক্ষীণ জলপ্রপাতের মতো রক্ত চুঁইয়ে পড়ছে। আকাশ-মাটি বিদীর্ণ করে একটি আর্ত চিৎকার মহাশূন্যে নীল তারা হয়ে আটকে গেল।
"৩ অক্টোবর, ১৮৪৯। আমেরিকায় বল্টিমোরের ফুটপাথে পড়ে আছে একটি মাঝবয়সি লোক। মাঝে মাঝে জ্যোৎস্নায় ঝলসে উঠছে তার শরীর। গায়ে দুর্গন্ধ, ত্বক নষ্ট হয়ে গিয়েছে, পোশাকটি তার নিজের নয়। প্রলাপ বকছে। ওয়াশিংটন মেড���কেল কলেজে নিয়ে যাওয়ার তিনদিন বাদে ৭অক্টোবর ভোরে সে মারা যাবে। এর দু'দিন পরে নিউইয়র্ক ট্রিবিউনে একটি শোকসংবাদ প্রকাশিত হয়। ''Edgar Allan Poe is dead. He died in Baltimore the day before yesterday. This announcement will startle many, but few will be grieved by it."
শখের পালতোলা নৌকা 'এরিয়েল' উলটে সমুদ্রগর্ভে ডুবে মারা যাচ্ছেন ইংরেজি গীতিকবিতার বরপুত্র ২৯ বছর বয়সী শেলি।
দু'বার প্রত্যাখ্যাত 'দ্য বেল জার' উপন্যাস প্রকাশিত হওয়ার উনিশ দিন পরে গ্যাস আভেনের ভেতর মাথা ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করছেন সিলভিয়া প��লাথ।
***
বইয়ের শুরু হয়েছে এভাবে—
"এক অনন্ত নক্ষত্রবীথির সামনে আমি দাঁড়িয়ে। শূন্যে কালপুরুষের তরবারি। নীচে স্বেদ, রক্ত, শব্দগুঁড়ো, ভাসমান কাগজের স্তূপ। আর পাসকাল-বর্ণিত ভয়াবহ নৈঃশব্দ্য। আমি নিচু হয়ে হাতড়ে-হাতড়ে চেনা অক্ষর খুঁজি। শব্দের শরীর এত ভাস্কর্যময় তা কি আমি জানতাম? তার নীল দ্যুতি কি আমার করোটি ভেদ করে চলে যাবে?"
লেখক ভূমিকায় লিখেছেন— ..."দর্শন আর সাহিত্যের সমুদ্রবেলা দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে আমি এক জলকল্লোলকে ছুঁতে চেয়েছি যা কবিতার মতো গদ্যের শরীরে মিশে গেছে। সেদিক থেকে এগুলিকে পরীক্ষামূলক গদ্য বলা যায়...।" পরীক্ষায় তিনি অবিশ্বাস্যভাবে শতভাগ সফল।
এত সুন্দর করে গদ্য লেখা যে সম্ভব, বইটি না পড়লে ধারণা পাওয়া যেত না। লেখকের কথার পুনরাবৃত্তি করি— "শব্দের শরীর এত ভাস্কর্যময় তা কি আমি জানতাম?" চিন্ময় গুহ-র গদ্য কবিতার মত সুন্দর বললেও কম বলা হবে। তাঁর গদ্য সাতরঙা রামধনুর কারুকার্য—শ্বেতপাথরের সৌম্যদর্শন আশ্চর্য এক ভাস্কর্য—দুটোই।
***
"ঘুমের দরজা ঠেলে" পড়ে বেশি করে জানা হলো সৃষ্টির যুগপৎ উন্মাদনা, যন্ত্রণা ও আনন্দ; নিঃসঙ্গতা আর নৈঃশব্দ্যের মাহাত্ম্য, আশীর্বাদ ও শ্বাসরুদ্ধকর চিৎকার। "নৈঃশব্দ্য জমে থাকে বরফের মতো। আদিম দেবতারা হো হো করে হেসে ওঠে। আর শব্দরা গুঁড়ো গুঁড়ো হয়ে ঝরে। টুকরো টুকরো কাগজে ঢেকে যায় পৃথিবী। আমাদের মুখে ছাইয়ের আস্বাদ।" (চিন্ময় গুহ)
***
"নির্জন সমুদ্রতীরে উল্টে আছে একটি কচ্ছপ একটি বালিয়াড়ির কাছে কেউ নেই যে ওকে সোজা করে দেবে।
বইটা এলিট শ্রেণীর (বিশ্ব সাহিত্যের )পাঠকদের জন্য। খুব স্বাভাবিক ভাবেই সব রেফারেন্স রিলেট করতে পারিনি পাঠ অভিজ্ঞতা কম থাকার কারণে । কিন্তু চিন্ময় গুহুর অনবদ্য গদ্যের সাথে পরিচয় পাওয়ায় তাঁর অন্য লেখার প্রতি আগ্রহ জাগলো।
This collection of short essays on forgotten or half-known aspects of novelists, poets, film-makers, thinkers, intellectuals mainly from France, Britain, USA and Bengal( India) is written in bengali, the Writer's mother-tongue (and mine). They had come out in serial form and has been collected and published. It is a delight to read, not only because it introduces old literature in a new way or informs us of writers we have not read in the original, or because it brings back faded memories and in thought of facets of beloved writers and film-makers, but it does so in poetic melodic language. The writer has encouraged me to read writers I had heard of but had not got round to reading before. He has shown film-makers and their films in a different light. At the same time I have come to know so much more of so many writers I had had no knowledge of... A great achievement indeed. In fact a memorable contribution in the corpus of our rich bengali literary heritage.
অকাদেমি/আকাদেমি পুরস্কারপ্রাপ্ত বইগুলা ভালো হয়। এটাও তাই। আর খুবই বিখ্যাত বই। চিন্ময় বাবুর এই লেখার ধারাটা খুবই সুখপাঠ্য। রোববারের জন্য লিখতেন। মজার ব্যপার হইলো ২০১৩ সাল থেকে উনি এই লেখা শুরু করেন আর আমিও ২০১৪ সালে এই ধারায় কিছু ফেসবুক পোস্ট লিখছিলাম। চিন্ময় বাবু ঘোরের মধ্যে মালার্মে, শেকসপিয়ার, এজরা পাউন্ড, লা রোশফুকো, রমা রলা, ইয়েটসদের দেখতেন, আমি গরীব বইলা শরচ্চন্দ্র, বঙ্কিমচন্দ্র, জসীম উদদীন, সত্যজিৎ রায়দের দেখতাম। তবে ভ্যান গঘ, রেমব্র্যান্ট, কাম্যু নিয়াও কপচাইছিলাম।
সৌরভ এই কথা শুইনা আমারে বলল, 'খবরদার, এইসব বললে মাইর খাবেন। আপনার যোগ্যতা আছে নাকি এসব নিয়া কথা বলার। তাও বলতে পারেন যদি প্রচার করেন যে আখতারুজ্জামান আপনার গুরু কিংবা গুরুর গুরু। কিংবা আপনি নিয়মিত চর্চা করেন গার্সিয়া মার্কেজ, বোর্হেস।'
সৌরভের কথা শুনতে শুনতে ভাবতেছিলাম, বোর্হেস, না বোর্খেস?
সে যাই হোক, ভালো বই। বেশ ভালো বই। যদিও বিশ্বসাহিত্য নিয়া পড়াশোনা না থাকলে রিলেট করতে কষ্ট হবে। তবে উঠতি লেখকরা এখান থেকে কিছু নাম টুকে জায়গায় বে-জায়গায় ঠুঁসে দিয়ে বেশ নাম কামাইতে পারবেন। আর কিছু না হোক উঠতিদের উঠতি শ্রেণী ভাববে, 'বেড়ে লোক রে বাবা। কত পড়ে।'
आदरणीय चिनंमय गुहा जी नवर्ष का प्रणाम।मैं जामसर कीजन्मी ढाका मूल की राजस्थानी नवोदित लेखिका हूं।मैं आपका घूमेर दरजा ठैले का अनुवाद करना चाहती हूं। मेरी मंसा तो साहित्य अकादमी के द्वारा अनुवाद करने की है।पिछले साल करोना की वजह से वहां।मींटिग नहीं हूयी। एट।पेजेन्ट कोलकाता में कोई नहीं हैजो आपकी किताब भेज दे।तुहीन बोईघर को ऑडर दिया है। कृपया प्रकाशक का व्हाटस अप नंबर देवें।फोन तो लगनहीम।