আরভ ইঞ্জিনিয়ারিং না পড়ে পড়তে গিয়েছিল ফিজিক্স অনার্স। ভেবেছিল বাবাকে ভুল প্রমাণ করবে। প্রমাণ করবে ইঞ্জিনিয়ারিং, ডাক্তারির বাইরেও একটা সফল হওয়ার জীবন রয়েছে। কিন্তু তা হল না। অনার্স শেষ করে চাকরি নিয়ে আরভকে পাড়ি দিতে হল বিহারের প্রত্যন্ত কোলিয়ারি অঞ্চলে। তার জীবনে ঢেউয়ের মতো আছড়ে পড়তে লাগল নানান বিপদ, মনখারাপ আর লড়াই। রিকিতার প্রেম, মহেকের বন্ধুত্ব, আর সেলসের চাকরির ভেতরের লড়াইয়ের সঙ্গে মিশে গেল লাল মাটি, মহুয়া গাছ আর হারানো বন্ধুর মতো ছোট ছোট পাহাড়ি বাঁক। মিশে গেল বীরজি, লালা আর অধীরদার মতো মানুষজন। এ যেন নিজেকে নতুন করে চেনা। চোখের থেকে ফুরিয়ে যাওয়ার পরও জীবন বেঁচে থাকে। লড়াই বাঁচিয়ে রাখে আলো। চোখের থেকে ফুরিয়ে যাওয়ার পরও কিছুতেই ‘তাকে’ ভোলে না মানুষ! হাসি-খুশি ও মজার মাঝে ছোট ছোট মনখারাপ, না-পাওয়ার লাল নীল অন্ধকার আর অন্য এক জেদের গল্প শোনায় এই উপন্যাস।
স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর জন্ম ১৯ জুন ১৯৭৬, কলকাতায়। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বাসিন্দা। পৈতৃক ব্যবসায় যুক্ত। প্রথম ছোটগল্প ‘উনিশ কুড়ি’-র প্রথম সংখ্যায় প্রকাশিত। প্রথম ধারাবাহিক ‘দেশ’ পত্রিকায় প্রকাশিত। শৈলজানন্দ স্মৃতি পুরস্কার ২০১৪, এবিপি এবেলা অজেয় সম্মান ২০১৭, বর্ষালিপি সম্মান ২০১৮, এবিপি আনন্দ সেরা বাঙালি (সাহিত্য) ২০১৯, সানডে টাইমস লিটেরারি অ্যাওয়ার্ড ২০২২, সেন্ট জেভিয়ার্স দশভুজা বাঙালি ২০২৩, কবি কৃত্তিবাস সাহিত্য পুরস্কার ২০২৩, উৎসব পুরস্কার ২০২৪, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় মেমোরিয়াল অ্যাওয়ার্ড ২০২৪, আনন্দ পুরস্কার (উপন্যাস: '‘শূন্য পথের মল্লিকা') ২০২৫ ইত্যাদি পুরস্কারে সম্মানিত ।
জমজমাট বাণিজ্যিক সিনেমার চিত্রনাট্য হিসেবে "ফুরায় শুধু চোখে"কে অনায়াসে ৩ তারকা দেওয়া গেলো। ভাষায় একটা কৌতুকপূর্ণ আবহ আর শব্দের খেলা আছে; তবুও এটাকে উপন্যাস হিসেবে বিবেচনা করে নিজেকে আর লজ্জা দিলাম না। "সিনেমার মতো" উপন্যাস লিখতে লিখতে স্মরণজিৎ এবার আস্ত সিনেমার চিত্রনাট্যই লিখে ফেলেছেন। শেষের টুইস্ট-টা ভালো ছিলো।
ফুরায় শুধু চোখে আবার #স্মরঞ্জিত চক্রবর্তী। প্রকাশনায় আনন্দ । মূল্য-200inr(2014) আরভের বাবা চেয়েছিল btech। কিন্তু আরভ নীল chemistry hons। সেদিন থেকেই জীবনের এক নতুন মোর হয়তো ঘুরে যাওয়ার শুরু। যে ছেলে jee র math question এ কবিতা লিখে দিয়ে আসে সে তো প্রেমে পরবেই। রিকিতা হয়ে উঠলো তার কবিতার শুরু শেষ মর্মার্থ। তার জন্য সে চলে গেল বিহার। কিন্তু ও হয়তো এবার জীবন কে কবিতার মতো মেলাতে চেয়েছিল। প্রেমের কবিতা তাকে উপহার দিলো সারাজীবনের ধূসর মলিন পাতা। ভালো বলা চলে। তবে খুব যে মন ছুঁয়ে যাওয়া তা ঠিক নয়। তবে আরভের জন্য মন তা বেশ খারাপ হয়। যে আজও সতেরো বছর পর গরুর রচনার মতো রিকিতাকে সব জায়গায় নিয়ে চলে আসে হয়তো। I am gonna rate it_3.5/5
আরভ মুখার্জী নামের এক বছর চব্বিশের ছেলে, বিহারের ধোরি নামক জায়গায় কোলিয়ারিতে কাজ নিয়ে আসে।কলকাতার ছেলে হয়ে এখানে চাকরি নেওয়ার অন্য একটা উদ্দেশ্যও ছিল তার। এখানে আসার পর জানতে পারে এই অঞ্চলে সবাই কিশোরীলাল লালাকে ভয় করে। তাকে বলা যায় এখানকার মস্তান। আর এই লালা হলো এখানকার রাজনৈতিক নেতার খাস লোক।
এখানে এসে পুরানো এক কলেজ বান্ধবী মুসকানের সাহায্যে দেখা করে তার হারিয়ে যাওয়া প্রেমিকা রিকিতার সাথে। হ্যাঁ...এটাই ছিল আরভের এখানে আসার মোটিভ। এরপর কাজের প্রেশার, লালার হুমকি, প্রেমিকার প্রত্যাখ্যান, আরও নানান ঘাত প্রতিঘাতের মধ্যে কাটতে থাকে আরভের জীবন এগিয়ে চলে।তারপর হঠাৎ রিকিতার আরভের জীবনে প্রবেশ, আরভের স্বপ্ন পূরণের শেষ ক্ষণে এসেও তার স্বপ্ন ভেঙে খান খান হয়ে যায়। তার প্রেমিকা তাকে ছেড়ে অন্য কারোর হাত ধরে চলে যায়।
বাস্তবেও বেশির ভাগ এটাই তো হয়। বাবা মায়েরা মেয়ের বিয়ে দেবার জন্য ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার ছেলে খোঁজে, ভাবে সেখানেই হয়ত তার মেয়ে সুখী হবে।কিন্তু তার মেয়ে কাকে চায় তা তারা বুঝতে যায় না।অতএব বাস্তব জীবনের গল্পেও প্রেমিক প্রেমিকা আলাদা হয়ে যায়, যে যাকে ভালোবাসে সে তাকে পায়না।
যতটা ঝরঝরে, উপভোগ্য এই বইটার গদ্য ততটাই ন্যাকামোমার্কা, ক্লিশে, মান্ধাতা আমলের গল্প। কিছু রম-কম সিনেমা আছে যে দেখতে বসলে মনে হয় কমপক্ষে হাজারখানেক সিনেমা আছে এই গল্পে এবং তার মধ্যে কমপক্ষে শখানেক আমার দেখা তবু ট্রিটমেন্ট এর কারণে খারাপ লাগেনা দেখে যেতে- এই বইটাও সেরকম।
অনাবিল ঝরঝরে গদ্য। গল্পের নায়ক : আরভ গল্পের বুনোট লেখকের অন্যান্য গল্পের মতই সীমিত, এবং পাঁচ-ছয় চরিত্রের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। ঘটনাপ্রবাহের বিকাশ ঘটেছে বিহারের রামগড়-এ। এ-ছাড়াও চিত্রপটে নায়কের হাত ধরে এসেছে কলেজ এবং ছোটবেলার স্মৃতি। লেখনী খুব সুমধুর, কিন্ত আমার কাছে কাহিনীর অঙ্কন অপ্রত্যাশিত লাগে নি।
উপন্যাস টি পড়ে একটাই বক্তব্য, রিকিতার অতো খামখেয়ালিপনা র কি খুব দরকার ছিলো? মেয়েটা কি চায় সেটা সে নিজেও কি বোঝেনা? আরভ ওর জন্য এত কষ্ট করলো, নিজের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ ছেড়ে দিয়ে বিহারের ওই প্রত্যন্ত গ্রামে গেল চাকরি নিয়ে তা তো শুধুমাত্র রিকিতার জন্যই। সেটা কি ও বুঝতে চায় না? রিকিতা তো ওর মা কে আর একটু বোঝাতে পারত। সেটাও করলো না। পড়া শেষ করার পর রয়ে গেল আরভের জন্য একরাশ খারাপ লাগা।
মনে হল যেন ভালো-মন্দ, ঠিক-ভুল সব ঘটনাগুলো চোখের সামনে ঘটতে দেখছি, কোলকাতার আরভ মুখোপাধ্যায় আর বর্ধমানের রিকিতা ঘোষকে ভীষণ পরিচিত চরিত্র বলে মনে হয়, জাতপাতের ঊর্ধ্বে উঠে আরভের ভালোবাসা, বা রিকিতার হঠকারিতা বাস্তবতাকে স্পর্শ করে গেছে, আর এখানেই হয়তো এই কাহিনীর সার্থকতা....
শুধু একটিই কথা। আজও হয়তো আরভের মত অনেক ছেলে আছে যাদের মনের কথা রিকিতার মত মেয়েরা বোঝেনা। হয়তো চেষ্টাও করেনা আর মুসকানের মত মেয়ের অদৃশ্য ভালোবাসা আড়ালেই থেকে যায় যেটা হয়তো আরভের মত ছেলেরা deserve করে।
গল্পের প্রথমে বলা হয়েছিল, এটা খুব মজার গল্প, গল্পের শেষে দুজন হাত ধরে হেঁটে যাবে-- তবে তা সত্ত্বেও স্মরণজিৎ চক্রবর্তীর অন্য উপন্যাসের তুলনায় এর শেষটা একটু আলাদা স্বাদের। এ গল্পে কলেজ-রোমান্স আছে, গুন্ডা আছে, বিহারের রুক্ষতা আছে, এক পাগল প্রেমিকের ধাওয়া করা আছে। আর আছে এক কবির গদ্যকার হয়ে ওঠা। তবে এগল্পের নাম সার্থক। যা ফুরিয়ে যায়, বহুদিন ধরে পালন করা আশা যখন চূর্ণ হয়ে যায়, তা থেকে যে জীবনে কিছু খুঁজে পাওয়াও যায়, এই ভাবনাই এগল্পের উপজীব্য।
খুব একটা মন ছুঁলো না। প্রেমের উপন্যাস এ জীবন একটা বড় ভূমিকা নেয়। সেখানে মাল মশলা প্রচুর ছিল , লেখনী ও ভালো। কিন্তু এক তরফা এই সব প্রেম গুলোকে দিয়ে জীবনী লেখা যায়না। তাই ৫ এ ২.৫ দেবো। পুনশ্চ : একবার পড়ার জন্য ভালো।