"প্রথমটা ভেবেছিলাম লিখব না। শেষকালে কলম ধরতে বাধ্য হলাম এই ভেবে যে আমারও আপনাদের কাছে কিছু বলবার আছে। সেই না বলা বাণীকেই আজ আমি ভাষায় রূপ দিতে চলেছি ..."
১৯৬৪ সালে 'নবকল্লোল' সাময়িকীতে ধারাবাহিকভাবে আত্মজীবনী লেখা শুরু করেছিলেন উত্তমকুমার। কিন্তু কাজটি তিনি পুরোপুরি শেষ করতে পারেননি। দীর্ঘদিন দৃষ্টির অগোচরে থাকা এই আংশিক আত্মজীবনীটি (১৯৬২ সাল অবদি) সম্পাদনা করে পাঠকের হাতে তুলে দিয়েছেন অভীক চট্টোপাধ্যায়।
Uttam Kumar (3 September 1926 – 24 July 1980) (born as Arun Kumar Chatterjee) was an Indian film actor, director, producer, singer and music composer, playback singer who predominantly worked in Indian Cinema. He is widely regarded as the greatest actor of Bengali cinema, and also among the greatest actors ever in India. Through his career he earned commercial as well as critical success, and he remains as an Indian cultural icon.
পড়লাম মহানায়ক উত্তম কুমারের আংশিক আত্মজীবনী। এমন একজন খ্যাতনামা মানুষের নিজের লেখার মাধ্যমে তাঁর নিজের জীবনের বিভিন্ন বিষয় এবং অনেক অজানা কথা জানতে পারবো সেই উদ্দেশ্যেই পড়া শুরু করেছিলাম।প্রথমেই বলবো এই বই এর ভূমিকা নিয়ে। শ্রদ্ধেয় সম্পাদক মহাশয় এতো সুন্দর ও সহজভাবে এই বইটির প্রকাশের কাহিনীর পাশাপাশি উত্তম কুমার সম্পর্কে তাঁর ধারনা ও দৃষ্টিভঙ্গি কিভাবে ও কি কি কারনে বদলেছে তার ব্যাখা করেছেন যা সত্যিই প্রশংসনীয়। সংক্ষেপে আলোচনা করেছেন ওই সময়ের চলচ্চিত্র ও থিয়েটার জগতের বিখ্যাত অভিনেতাদের কথা ,উত্তম কুমারের সিনেমার জগতে প্রবেশ,ব্যর্থতা,উদ্বেগ ,তাঁর কাজের প্রতি নিষ্ঠা ও দক্ষতা এবং সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছনোর ইতিহাস। ভূমিকা থেকেই জানতে পারলাম মহানায়কের প্রিয় হলিউড স্টার রোনাল্ড কোলম্যান ও কিভাবে হলিউড স্টার ঘরানা তাঁকে প্রভাবিত করেছিল নিজেকে দর্শকদের সামনে বিশেষ ভাবে উপস্থাপনা করতে যা আজও আমাদের কাছে ভীষণ প্রিয়। এবারে আসা যাক বই এর মূল অংশে। খুবই সহজ সরল ভাষায় মহানায়ক নিজের মনের কথা লিখেছেন। কোনও সাহিত্যের মার প্যাঁচ নেই , গল্পের মতো করেই জীবনের বেশ কিছু ঘটনা লিপিবদ্ধ করেছেন। লিখেছেন পরিবারের কথা, মা,বাবা ,অকালে চলে যাওয়া এক দিদির স্মৃতিচারণ।বিশেষ ভাবে উঠে এসেছে গৌরী দেবীর সাথে প্রথম দেখা ,প্রেম, দুই পরিবারের মধ্যে এই সম্পর্ক নিয়ে উদ্বেগ ও অবশেষে দুই পরিবারের সম্মতিতে বিয়ে ইত্যাদি ঘটনাগুলি। এছাড়াও যুক্ত হয়েছে ছোটবেলা থেকেই অভিনয় এর প্রতি তীব্র আকর্ষণ,সংসার চালানোর জন্যে কেরানির চাকরি করা,সিনেমায় নামার সুযোগ, চাকরি নাকি সিনেমা এক চরম দোলাচলের মধ্যে দিন কাটানো ,মহান অভিনেতা তুলসী চক্রবর্তী এর সাথে এক গভীর সম্পর্ক।এক সাধকের সাথে হঠাৎ দেখা ও তাঁর অমোঘ ভবিষ্যতবাণী।আত্মকথার মাধ্যমে জানলাম প্রথম দিকে যখন তাঁর অভিনীত সিনেমাগুলি সাফল্য পাচ্ছিলো না তখন কতোটা উদ্বেগ আর মানসিক চাপে ছিলেন কিন্ত বিপর্যস্ত হতে দেননি নিজেকে।ধীরে ধীরে সমস্ত বাধা কাটিয়ে সফল হয়েছেন।বই এর শেষে মহানায়কের জীবনপঞ্জী,তাঁর অভিনীত ,পরিচালিত ও প্রযোজিত চলচ্চিত্রের তালিকা, কিছু টীকা,সিনেমার পোষ্টার, বুকলেট ও বেশ কিছু ছবি বইটি কে বিশেষ ভাবে সমৃদ্ধ করেছে।উত্তম কুমার অভিনীত বিভিন্ন সিনেমার পোষ্টার ও কিছু দৃশ্য দিয়ে তৈরী প্রচ্ছদ ও কভার এককথায় অভিনব । সবমিলিয়ে এই বই টি আমার পড়ে ভালো লেগেছে।
আফসোস এটাই যে এটি মহানায়কের আংশিক আত্মজীবনী ( ১৯৬২ পর্যন্ত)।তাই অনেক কিছুই যেনও অজানা থেকেই গেলো ।ব্যক্তিগত ভাবে আমার কিছু কিছু জায়গায় একটু আগোছালো লেখা মনে হলেও তিনি যদি সিনেমা ও অন্য কোনও বিষয় নিয়ে আরো কিছু লিখতেন বা লেখার সুযোগ পেতেন তাহলে আমরা নতুনভাবে তাঁকে পেতাম। সপ্তর্ষি প্রকাশন , সম্পাদক অভীক চট্টোপাধ্যায় ও প্রচ্ছদ শিল্পী সৌরীশ মিত্র কে ধন্যবাদ জানাই এতো যত্ন নিয়ে বইটিপ্রকাশ করবার জন্যে।আর মহানায়ক কে জানাই প্রনাম। পৃথিবী যতই বদলে যাক আপনি সবসময়ে আমাদের কাছে সবার সেরা হয়ে আছেন ও থাকবেন। হারিয়ে যাওযার কোনও প্রশ্নই নেই।