Prafulla Roy was a Bengali author, lived in West Bengal, India. He received Bankim Puraskar and Sahitya Akademi Award for his literary contribution in Bengali.
আপনার যদি আন্দামান দ্বীপ নিয়ে কোনপ্রকার কৌতূহল থাকে তাহলে এই বইটি আপনার জন্য । কেয়াপাতার নৌকো এবং তারপর শতধারায় বয়ে যায় দুই খন্ডে উপন্যাসের পাত্র পাত্রী সকলের উপস্থিতি থাকলেও এখানে শুধু বিনয় একজন সাংবাদিক হিসেবে আন্দামানে আসে ; দেশভাগের পর নতুন যারা বসতি গড়তে এসেছে তাদের জীবন কাহিনী দেখার জন্য । সুতরাং এইখানে আপনি উপন্যাসের আগের কোন আমেজ ই পাবেন না । আমি বুঝলাম না উপন্যাস হইবে উপন্যাসের মতো এইটা তো ইলাস্টিক না যে টাইনা টাইনা বড় করতেই থাকলাম করতেই থাকলাম ... উত্তাল সময়ের ইতিকথা না দিয়ার ''আন্দামানের ইতিকথা'' দিলেই হতো । যাই হোক উপন্যাস লেখকের, তিনি কি করবেন না করবেন তার ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত । আমার সতর্ক করে দেওয়ার কথা , দিলাম ...ব্যস ।
এই ট্রিলজির ১ম বইটা পড়ে মুগ্ধ হয়েছিলাম। পরের দুটোতে ভালোলাগা ক্রমান্বয়ে কমেছে। কেয়াপাতার নৌকোতে উপন্যাসের মজা ছিল। শতধারায় বয়ে যায়তে সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে মানুষের অভাব, অভিযোগ, যন্ত্রণা ও কষ্টের কথা ছিল। উত্তাল সময়ের ইতিকথাতে আন্দামান নিকোবরের ইতিহাস এবং সাতচল্লিশের দেশভাগের ফলে উদ্বাস্তু মানুষের টিকে থাকার লড়াই ছিল।
নেটফ্লিক্সে 'কালাপানি' দেখতে বসে বইটার কথা মনে পরলো। অনেকদিন হলো ফেলে রেখেছি। তাই ঝটর পটর পড়ে ফেলেছি। এখন আগের দুই পার্টের সাথে তুলনা করলে বলবো প্রধাণ ধারা থেকে সরে শাখা নদীর গল্প বেশি। তাই আন্দামান সম্পর্কে জানবার আগ্রহ থাকলে ভালই লাগবে। কিন্তু প্রধান গল্প যেন কোথায় হারিয়ে গেল রাজার সোনালী তোতাপাখির মতো- এ একটা দুঃখ বটে! সারে তিন তারা! আচ্ছা, এই গুডরিডস কি জীবনে আধা তারা, দশমিক তারা রেটিং এর ব্যাপারটা পাত্তা দিবে না, না কি?
মহাকাব্যিক উপন্যাস 'কেয়াপাতার নৌকো', 'শতধারায় বয়ে যায়' এর পরবর্তী খণ্ড 'উত্তাল সময়ের ইতিকথা' নিছক কাহিনি নয় বঙ্গজীবনের এক ক্রান্তিকালের অনন্য ইতিহাসও বটে।
দেশভাগের পর পূর্ববাংলা ( সেই সময়ের পূর্বপাকিস্তান ) থেকে উৎখাত হয়ে লক্ষ লক্ষ মানুষ চলে আসছিল সীমান্তের এপারে। পশ্চিমবঙ্গ মাঝারি মাপের রাজ্য; তার পক্ষে এত মানুষের চাপ নেওয়া ছিল অসম্ভব। তাই শরণার্থীদের জন্য নেওয়া হল আন্দামান প্রকল্প।
বঙ্গোপসাগরের মাঝে দু'শোরও বেশি দ্বীপ নিয়ে যে ভূখণ্ডটি রয়েছে তার বিশাল দুই দ্বীপ দক্ষিণ ও মধ্য আন্দামানে তখন শরণার্থীদের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া চলছিল।
কিন্তু সেই সময় কয়েকটি রাজনৈতিক দল উদ্বাস্তুদের নিয়ে তুমুল আন্দোলন শুরু করে দেয়, কিছুতেই তাদের আন্দামানে যেতে দেবে না। অন্যদিকে আন্দামান যাতে বাঙালি উদ্বাস্তুদের হাতছাড়া হয়, গোপনে গোপনে তারও চক্রান্ত চলছে। এতসব প্রতিকূলতার মধ্যেও সর্বস্বহারানো মানুষগুলো আন্দামান যাচ্ছিল নিজস্ব একটা বাসভূমির সন্ধানে।
ইতিহাসের এই পটভূমিতে বিনয় 'নতুন ভারত' পত্রিকার সাংবাদিক হয়ে হাজারখানেক উদ্বাস্তুর সাথে প্রথমে 'রস' আইল্যান্ডে এসে নামে। এদের মধ্যে পাঁচশো জন যাবে দক্ষিণ আন্দামানের 'জেফ্রি' পয়েন্টে। বাকি পাঁচশো জন যাবে মধ্য আন্দামানে - 'রস' আর 'পোর্টব্লেয়ার' থেকে সত্তর মাইল দূরে।
চকিতের জন্য 'রস' দ্বীপে নিরুদ্দেশ ঝিনুকের সঙ্গে দেখা হয়ে যায় বিনয়ের। চিরদুঃখী, ধর্ষিতা, অভিমানী ঝিনুক। কিন্তু সে বিনয়ের কাছে ধরা দেয় না, মধ্য আন্দামানের জাহাজে উঠে চলে যায়।
বিনয় পাঁচশো উদ্বাস্তুর সাথে চলে আসে জেফ্রি পয়েন্টে। সেখানে নতুন পুনর্বাসনের কাজ শুরু হয়। এলাকাটার তিনদিকে পাহাড় এবং হাজার বছরের গভীর জঙ্গল। জঙ্গলে রয়েছে হিংস্র আদিবাসী জারোয়ারা। বাইরে থেকে কেউ তাদের এলাকায় এলে ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। মুহূর্মুহু হামলা চালায়। অন্যদিকে সমুদ্র - সেখানে ঝাঁকে ঝাঁকে হাঙর।
পূর্ববাংলায় অপরাজেয় মানুষগুলো দেশ হারিয়ে এসে অদম্য সাহসে গড়ে তুলতে থাকে তাদের নতুন বাসভূমি। ধ্বংসস্তূপ থেকে হতে থাকে তাদের উত্থান। এদিকে বিনয় কি পারবে ঝিনুকের কাছে পৌঁছাতে ?
“উত্তাল সময়ের ইতিকথা” উপন্যাসের স্ট্রাকচারও এর প্রিক্যূয়েলের মতই। বিনয় এবার অ্যাসাইন্মেন্ট নিয়ে আন্দামানে যায় অভিবাসী বাঙ্গালিদের নিয়ে রিপোর্ট করার জন্য।
এই উপন্যাসটিকে আমার বাকি দুটোর চেয়ে বেশি ইন্টারেস্টিং লেগেছে এর বিষয়বস্তুর কারণে। এটি ইতিহাসের এমন এক অধ্যায়ের উপর আলোকপাত করেছে যার সম্পর্কে আমার বিন্দুমাত্র ধারণা ছিলনা। ১৯৪৭ এর দেশভাগের পরে পশ্চিমবঙ্গ সরকার জনস্রোত সামলাতে না পেরে অনেক বাঙালি পরিবারকে আন্দামান-নিকোবর দীপপুঞ্জে স্থানান্তরিত করেছিল, সেই বাস্তুহারা অভিবাসীদের স্ট্রাগল এই বইতে উঠে এসেছে। একই সাথে এসেছে কুখ্যাত জেল, “কালাপানি” ও তার বন্দীদের কথা, একসময়ের দাগী আসামিদের স্বাভাবিক জীবনে পূনর্বাসনের কথা। সাথে উদ্বাস্তুদের নিয়ে ঘোলাটে রাজনৈতিক পরিস্থিতিরও কিছু আভাস আছে।
কিছু রিপিটেশন থাকলেও বইটা স্ট্যান্ড অ্যালোন উপন্যাস হিসেবে চমৎকার হতো কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, এটি একটা ট্রিলজীর অংশ। সে হিসেবে দ্বিতীয় পর্বের পরে, এই পর্বে চরিত্রগুলোর বিন্দুমাত্র প্রোগ্রেশন হয়নি। তারা প্রথম পর্ব শেষে যেখানে আটকে ছিল, তৃতীয় পর্ব শেষেও ঠিক ঐ জায়গাতেই আছে।
আমি বলবো লেখক যদি এটা ট্রিলজি না করতেন। কেয়া পাতার নৌকায় শেষ করে দিতেন তবে চুকে যেত। অহেতুক কাহিনী বর্ধিত করা হয়েছে। আর যেখানে এই পটভূমিতে আরেকটি উপন্যাস 'নোনা জল মিঠে মাটি' আছে।
যে ঝিনুক ঝিনুক করি, আসলেই সে ইলুশান আর তার পিছনে বিনু ছুটে ঝুমার সাথে অবিচার করছে। তাই দুই তারা বাদ।