প্রথম যেবার শিলাইদহ যাই, আলোর স্রোতে পাল তোলা জীবন্ত বাড়িটা ঘুরে ঘুরে কবির শেষ বিদায়ের ছবির সামনে যখন দাঁড়ালাম স্থির হয়ে গেলাম। অনেকক্ষণ। মনে হলো, এই মাত্র কবিকে হারিয়ে ফেললাম। একই রকম হারানোর হাহাকার হয়েছে, লীলা মজুমদারের 'পাকদণ্ডী'তে নিথর কবিকে শেষবার দেখার বর্ণনা পড়ে এবং বুদ্ধদেবের স্মৃতি বর্ণনায়। এখনো এই বইটি মাত্র শেষ করে 'কবিকে এইমাত্র হারিয়ে ফেললাম ' এমন বেদনা নিয়ে বসে আছি। 'শরীর দুর্বল হয়ে আসছে বয়সের সঙ্গে। কানে কম শুনছেন, চোখের তেজও ম্লান হয়ে আসছে, চলাফেরাতেও কষ্ট হয়-বার্ধক্যের সকল লক্ষপই দেহে দেখা দিচ্ছে...' এখানে এসে ভেতরটাকে কে যেন মুচড়ে দিল। দেখলাম, প্রকৃতির এই অলঙ্ঘ্য সত্যের ভেতর রবীন্দ্রনাথকে বসাতে পারছে না মন। এমন অনুভূতির কথা বুদ্ধদেবও লিখেছেন 'আত্মজৈবনিক ' এ কবির প্রস্থানের পর। ১৯৪১ সাল যত কাছে আসছিল ভেতরে কেমন অস্থিরতার অনুভূতি হচ্ছিল। জীবনী কেমন করে যেন জীবনকে আবার জীবিত করে দেয় পাঠকের কাছে, মৃত্যুকেও জলজ্যান্ত! 'ধায় যেন মোর সকল ভালোবাসা প্রভু তোমার পানে...' গানটা বাজছিল। ২২ শে শ্রাবণ একাকার হয়ে গেল সেই সুরের সঙ্গে...
রবীন্দ্রনাথ যে কতটা বিশাল, এই বই পড়ে সেটাই অনুমান করলাম। যারা ২২ শে শ্রাবণ আর ২৫শে বৈশাখের বাইরে রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে আরও কিছু জানতে চান তারা এই সংক্ষিপ্ত জীবনী পড়ে দেখতে পারেন।