Sarat Chandra Chattopadhyay (also spelt Saratchandra) (Bengali: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) was a legendary Bengali novelist from India. He was one of the most popular Bengali novelists of the early 20th century.
His childhood and youth were spent in dire poverty as his father, Motilal Chattopadhyay, was an idler and dreamer and gave little security to his five children. Saratchandra received very little formal education but inherited something valuable from his father—his imagination and love of literature.
He started writing in his early teens and two stories written then have survived—‘Korel’ and ‘Kashinath’. Saratchandra came to maturity at a time when the national movement was gaining momentum together with an awakening of social consciousness.
Much of his writing bears the mark of the resultant turbulence of society. A prolific writer, he found the novel an apt medium for depicting this and, in his hands, it became a powerful weapon of social and political reform.
Sensitive and daring, his novels captivated the hearts and minds of thousands of readers not only in Bengal but all over India.
"My literary debt is not limited to my predecessors only. I'm forever indebted to the deprived, ordinary people who give this world everything they have and yet receive nothing in return, to the weak and oppressed people whose tears nobody bothers to notice and to the endlessly hassled, distressed (weighed down by life) and helpless people who don't even have a moment to think that: despite having everything, they have right to nothing. They made me start to speak. They inspired me to take up their case and plead for them. I have witnessed endless injustice to these people, unfair intolerable indiscriminate justice. It's true that springs do come to this world for some - full of beauty and wealth - with its sweet smelling breeze perfumed with newly bloomed flowers and spiced with cuckoo's song, but such good things remained well outside the sphere where my sight remained imprisoned. This poverty abounds in my writings."
বইটা কাল রাতে শেষ করলাম। এমন একটা বই, শেষ করেও মন ভরেনি। বারবার মনে হচ্ছিলো গোটা বিশেক পাতা আরো থাকলে বোধহয় আরো ভালো লাগতো। " শেষ হওয়াও হইলোনা শেষ " - অনেকটা এমন। খুব সুন্দর গল্প, খুবই realistic।
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় কে নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু নেই। আর চেষ্টা করলেও,তা হয়তো বৃথা ই হবে আমার পক্ষে।
অনেক জায়গাতে ই শুনেছি যে, "বৈকুন্ঠের উইল" শরৎচন্দ্রের লেখা কালজয়ী উপন্যাসের একটি। প্রথমে উপন্যাসের নাম টা শুনে একটু কেমন কেমন লাগলেও, আসলে পড়ার পর মনে হচ্ছে ... আমি প্রাচীন কিছু তথ্য হয়তো পেয়েছি আর সাথে বাস্তবতাও বেশ দেখলাম আর কি! প্রাচীন সময়ের আর্থ-সামাজিক অবস্থার যে ছাপ এখানে বিদ্যমান রয়েছে,তা আমাদের মতো প্রজন্ম অবধি যে তিনি আনতে পেরেছেন তা কম বৈ কি!!!
বৈকুন্ঠের ২ টি ছেলে। গোকুল আর বিনোদ। গোকুল লেখা-পড়া তে খুব ই বাজে। পাশ করতে পারে না,বই খুলে লেখার সুযোগ পেয়েও লিখিতে পারে না! বিনোদ তাঁর থেকে যথেষ্ট মেধাবী। ক্লাসে ডাবল প্রমোশন পায়, বিনোদ। তাঁর শিক্ষক বলেন,সে একদিন জজ হবে,পড়া-শুনা শেষ করে। বৈকুন্ঠের ছোট ছেলে বিনোদের জন্ম, তাঁর ২য় স্ত্রীয়ের(ভবানী) ঘরে। বৈকুন্ঠ বুঝতে সক্ষম হয় যে, তাঁর বড় ছেলে গোকুল কে দিয়ে পড়া-শুনা হবে না। তবে,সে তাঁর ছেলের সৎ থাকার প্রয়াস দেখে বেশ আনন্দিত হয়। এজন্যই সে তাঁকে দোকানে বসায়। গোকুল এমনিতে খুব ই সহজ-সরলে ছেলে। সে সারাক্ষণ তাঁর ছোট ভাই বিনোদ কে নিয়ে ই ভাবে। গোকুলের মনের ইচ্ছা,তাঁর ভাই একদিন এম.এ. পাশ করবে। মেডেল পাবে। সে খবর টা বলবে এ গ্রামের মানুষ কে। এগুলা ই চলিতে লাগলো তাঁর মনে! দিন অতিবাহিত হতে লাগলো বেশ কিছু বছর চলে গেলো! বৈকুন্ঠ গত হলো। এ পৃথিবী থেকে চলে যাবার আগে পর্যন্ত, সে বিনোদের সম্পর্কে কিছু কিছু খারাপ খবর শুনিলো। সে বিশ্বাস করিতো যে, গোকুল ই তাঁর সংসারের হাল ধরবে একদিন। বিনোদ ছেলে টা কেমন জানি গোল্লায় গেলো। এগুলো ভাবতে ভাবতে, সে তাঁর স্ত্রী ভবানীর সাথে পরামর্শ করিয়া একখানা উইল করিলো মৃত্যুর পূর্বে। তাঁর এই স্ত্রী ভবানী, গোকুল কে তাঁর নিজের ছেলের মতো করিয়ে ই ভালোবাসিতো!!! বিনোদ তো কলকাতা থাকে। বাবা মারা যাবার খবর পেলেও,সে আসলো না বাড়িতে। সে বাড়ির বাইরে মদ নিয়ে পড়িয়া থাকিত রাতের পর রাত। এম.এ. পড়া টা ও বাদ দেবার উপক্রম হয়ে আসে বন্ধুদের পাল্লায় পড়ে। গোকুলের স্ত্রী-মনোরমা, সেকেলে বউদের ই প্রতিচ্ছায়া! মনোরমা,সারাদিন গোকুলের মাথায় নানা রকম আজে বাজে চিন্তা ঢুকায়। উল্টা-পাল্টা কথা বলে গোকুলের কাছে। সে আস্তে আস্তে, গোকুলের মনে সন্দেহ ঢুকিয়ে দেয় এটা বলে যে ... তাঁর মা আর তাঁর ভাই বিনোদ এই বিষয়-সম্পত্তির উপর লোভ দিয়েছে!!! তাঁর নামে,তাঁর বাবা উইল করে দিলেও ... বিনোদ ও তাঁদের মা এই বিষয়ের জন্য মকদ্দমা লড়বে বলে গোকুল কে তাঁর স্ত্রী বলে। গোকুল বিভ্রান্ত হয়ে পড়েন। তাঁকে নানা ভাবে কুপরামর্শ দেয়,তাঁর স্ত্রী। গোকুলের মা ভবানী, অবাক হয়ে পড়েন গোকুলের পরিবর্তনে। এরকম টা গোকুল আগে ছিলো না! বৈকুন্ঠ তাঁর বড় ছেলে গোকুল কে বিশ্বাস করে ই সব ভার দিয়ে গিয়েছিলেন সংসারের। বিনোদ একটু উদাসীন ভাবে ই চলতে লাগলো! তবে তাঁর কিছু বন্ধু তাঁকে বেশ উস্কানি দিতো! ভাইয়ের বিরুদ্ধে মামলার করানোর জন্য!!!
অন্যদিকে গোকুলের শ্বশুর, নিমাই ... মেয়ে-জামাতা কে রক্ষা করবার নাম করে বেশ গোকুলের বাড়িতে এসে ওঠেন। গোকুলের ব্যবসা দেখতে চায়!!! সব মিলে একটা অন্যরকম আবহাওয়া সৃষ্টি হয়। গোকুল মনে মনে বিনোদ কে খুব ভালোবাসলেও, কোথায় যেন একটা বাঁধা পায়!!! কি সেই বাঁধা? সৎ ভাই, তাই? আচ্ছা অবশেষে কি হবে? মামলা-মকদ্দমা কি হবে? আর তা হলেও,রায় কার আসবে? কে জিতবে??? ..... এরপর??? শেষ কি হবে???
বৈকুন্ঠ মজুমদার একজন ব্যাবসায়ী লোক।ব্যাবসার প্রতি তাঁর যেমন আদর্শ,তেমনিই ভালোবাসা।খুব সৎ ও স্বচ্ছ ভাবে তিনি তাঁর ধ্বংসপ্রায় মুদির দোকানকে বড় আড়তে পরিণত করেন;তাই তাঁর প্রতি শ্রদ্ধাটাও মানুষের বেশি।বৈকুন্ঠের দুই ছেলে–বড় ছেলে;গোকুল এবং ছোট ছেলে বিনোদ।গোকুল হচ্ছে তাঁর প্রথম স্ত্রীর সন্তান,যখন তাঁর প্রথম স্ত্রী মারা যান তখন ছেলের দিকে তাকিয়ে আবার দ্বিতীয় বিবাহ করেন এবং সেই দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে বিনোদ।গোকুল মূলতই অনেকটা বোকা ধরনের;কিন্তু বাবা,মা এবং ভাইয়ের প্রতি তাঁর ভালোবাসাটা অনেক গভীর।পড়ালেখাতে সে মোটেও ভালো ছিল না;তাই বাবার আড়তের কাজে লেগে যায় সে ছোটবেলা থেকেই।অপরদিকে বিনোদ পড়ালেখায় খুবই ব্রিলিয়ান্ট;তাই তাঁর ওপর সকলের আস্হাও অনেক।কিন্তু বিনোদের স্বভাব, চরিত্রে তাঁর বাবা মোটেও সন্তুষ্ট ছিলেন না।তাঁর বিশ্বাস যে,এত্ত দুঃখ-কষ্টের সঞ্চিত সম্পদ বিনোদ আরাম-আয়েস করেই ধ্বংস করে দেবে;তাই মৃত্যুর সময় তিনি তাঁর স্ত্রী ভবানীর সম্মতি নিয়ে সমস্ত সম্পত্তি গোকুলের নামে উইল করে যান।যদিও গোকুল বোকা-সোকা মানুষে;তবুও তাঁর আদর্শ খুব খাঁটি।এই বিষয়-আশয়ের উইল নিয়েই দুই ভাইয়ের মনোভাব বইতে লেখা হয়েছে।
আমার কাছে এই বইটি শরৎ বাবুর অন্যান্য উপন্যাসের তুলানায় কিছুটা খর্বিত মনে হয়েছে।এমন প্লে আরো অনেক গল্পই সবার কমবেশি জানা আছে;তাই তেমন ভালো না লাগাটাও স্বাভাবিক। কিন্তু গোকুলের চরিত্র যে সবার মনে একেক সময় একেক ধরনের অনুভূতি সৃষ্টি করবে সে বিষয়ে আমি নিশ্চিত।
গাঁয়ের অবস্থাপণ্য বৈকুণ্ঠের মৃত্যর পর তার দুই পুত্রের মধ্যে সম্পত্তির টানাপোড়েন নিয়ে গল্প। গ্রামে ব্যবসা সামলায় বড়ভাই গোকুল আর শহরে পড়ালেখা আর ফুর্তি করা ছোটো ভাই বিনোদ(সে-ই বেন্দা, এটা বুঝতে আমার সময় লেগেছিল, তাই বলা, হাহা)। বড়ো ভাইয়ের চরিত্র দিয়ে শরৎবাবু ঠিক কী বোঝাতে চেয়েছেন তা আমি ঠিক বুঝতে পারিনি-একজন মানুষের ভালোবাসা নাকি নির্বুদ্ধিতা। আমাদের সমাজে যে ভালোবাসা প্রকাশ করার চাইতে লু���িয়ে রাখতে ভালোবাসি, তা বারবার ফুটে এসেছে গল্পে। আর মানুষের কানকথা যে কত ব্যাপারে বিপদ বয়ে আনে, তাও। মূল নারীচরিত্রদুটো একজন খুব ভালো না হলে খুব খারাপ- পরিপূর্ন চরিত্রায়ণ হয়নি। পড়তে ভালো লেগেছে লেখনী। আর কাহিনীর শেষ ভালো যার সব ভালো - এই পরিণতি।
**অন্য রিভিউতে দেখলাম সবাই ভাইয়ের নিঃস্বার্থ ভালোবাসার কথা বলেছেন। আমার কাছে ভালোবাসাটা এতটা শুদ্ধ মনে হয়নি। মায়ের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভাইয়ের প্রতি ভালোবাসা যদি শুদ্ধই হতো এত, তাহলে আর এত নাটক কেন?
গোকুলের মত ভাই আমাদের সবারই দরকার।নিঃস্বার্থ ভালোবাসা কাকে বলে গোকুল উৎকৃষ্ট উদাহরণ।কখন বইটি শেষ হয়ে গেছে বুঝতেই পারিনি। মনে হচ্ছে ইস আর একটু যদি বড় হতো। অসাধারণ লেখা শরৎচন্দ্রের।
অনেকদিন পরে শরৎচন্দ্রের কোন বই পড়লাম. বৈকুন্ঠের দুই ছেলে গোকুল ও গোকুলের সৎ ভাই বিনোদ. ব্যাক্তি হিসেবে গোকুলকে ভীষণ বোকা ও মেরুদন্ডহীন হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। দুই ভাইয়ের ভালবাসা দেখে আমার ' বাদল দিনের দ্বিতীয় কদম ফুল' - এর হেতায়েতের প্রতি বেলায়েতের ভালবাসার কথা মনে পড়েছে। বেলায়েত যেমন ভাবে যে তার ছোটো ভাই সব জানে, গোকুল ও অনেকটা তেমন এ.
"বৈকুন্ঠের উইল" চিরাচরিত বাংলার পরিবারের একটি কল্পকথা। যাতে পরিবারের মাঝে ভাঙন, তাদের মাঝের অন্ত কোন্দল, স্বার্থপর মানুষের আনাগোণা, এবং কি সমাজপতিদের বাস্তব স্বরুপ বর্ণনা করেছেন লেখক। মনের কষ্ট গুলো যে সহ্য করে আবার পুনরায় বাঁচার চেষ্টা করে সেই তো জীবনের সারথী তাই বুঝিয়েছেন। লেখক যেন পুরনো গ্রাম বাংলার সহজ সমীকরণ এতে তুলে ধরেছেন বইটিতে।
আমার কচুরিপানার মত ভেসে যাওয়া জীবনে কখনো হয়তো থামা হয়নি। চোখ তুলে দেখা হয়নি আকাশটা কত সুন্দর। আমার বাসা থেকে বের হলে ফিরতে ইচ্ছে করে না। নিজের সাথে কোন্দল বেঁধে যায়, না ফিরার তাগিদে। শূন্য ঘরের হাহাকার যারা বুঝে না তারা কখনো বুঝবে না একাকীত্ব কি! দেয়ালে লেপ্টে থাকা তার প্রথম আদুরে শব্দের লেখা গুলো কত মনে করিয়ে দেয় কেউ বুঝবে না।
ভালোবাসা তো রোজই আমাদের হয়। কখনো ভাইয়ের ছোট আবদারে আমাদের জীবনটা দিয়ে দিতে ইচ্ছে করে, কখনো বা মায়ের আশীর্বাদে উচ্চারণ করা সংক্ষিপ্ত "ভালো থেকো" কথা গুলো মনে সুখের হিল্লোল বয়ে দেয়। সবাই মিলে যখন উঠানের প্রাঙ্গণে বসে গল্প জুঁড়ে দেওয়া হয়, তখন জীবনের প্রাপ্তির হিসাব খুব সহজে মিলে। কিছুটা সহিষ্ণুতা ভরা এই জীবনে ভালো থাকার জন্য ভালোবাসার নীলকন্ঠ মায়া পরিবারের মাঝে থাকলে সব সুন্দর হয়।
এই উপন্যাসে লেখক একটি পরিবারের কাহিনী বলেছেন। বিনয়, গোকুল আর তার মা ভবানীর। বৈকুণ্ঠের দ্বিতীয় স্ত্রী ভবানী। কিন্তু তিনি গোকুলকে তার জীবনের থেকেও বেশি ভালোবাসে। গোকুল সাদাসিধা ধরনের মানুষ। তার জীবনে জটিলতা কখনো স্পর্শ কর। নি। হঠাৎ তার বাবা মারা যাওয়ার সময় তার নামে সকল কিছু উইল করে দিয়ে যায়। কারণ বিনয় কলকাতায় শিক্ষার নামে মদের পর মদ গিলছে। খারাপ পাড়ায় যাচ্ছে। এদিকে গোকুলের বউ দিনরাত তার কাঁন ভারী করছে।
সম্পত্তি কিভাবে নিজের রাখবে! তাই তার বউ গোকুলের শ্বশুর, ভাইকে নিয়ে আসে। বিনয়কে গোকুল খুব ভালোবাসতো। তার জন্য নিজের সবকিছু সে দিতে পারতো। কিন্তু বিনয় কখনো তার কাছে কিছু চাইতে আসে নি।
ভবানীর উপর অহেতুক শব্দে বাণে যখন পরিবারের ভাঙন ধরেছে তখন সে বিনয়কে নিয়ে যেতে বলে। কিন্তু ভবানী জানে তার গোকুল কতটা নিরপরাধ। এভাবে দু ভাইয়ের মিলনে শেষ হয় দুঃখের শ্লোক গাঁথা বৈকুণ্ঠের উইল।
ভবানী দেবী একজন আদর্শ মা। সৎ পুত্র হওয়া সত্ত্বেও সমান আদরে গোকুল কে মানুষ করেছেন। তাছাড়াও তাঁর ধৈর্য অসীম। আশেপাশের কিছু সুবিধাবাদী মানুষের কুচক্রে একটা সুন্দর ভালবাসায় পরিপূর্ণ সংসার কীভাবে নষ্ট হতে পারে সেটা বুঝলাম। কিন্তু সত্য ভালোবাসা রয়েই যায়। গোকুল যতই মেজাজি বা বোকা হোক না কেনো, মা আর ভাইয়ের প্রতি ভালবাসাকে সে চাপা দিয়ে রাখতে পারে নি। তবুও, যে মা তাকে এতো ভালবাসা দিয়ে বড় করেছে, কখনও তার অসফলতা নিয়ে তাকে ছোট করে ক্থা বলে নি, বৌ আর অন্যদের কথায় কৃতজ্ঞতাবোধ হারিয়ে মাকে বাজে বাজে কথা বলা তার উচিত হয়নি। তাছাড়াও মনের ভালোবাসা যদি তারা কেউ মুখে প্রকাশ করতে পারত,তাহলে এতো সন্দেহ,এতকিছু হতো না। বিনোদ,গোকুল সকলেই ভালোবাসা নীরবে রেখে অকারণে অভিমান করে নানা কথা বলে ফেলে, বিশেষত গোকুল। বাইরে দিয়ে কারও মনের ভাব বোঝা অসম্ভব, তাই স্বাভাবিকভাবেই গোকুল এর কাছের মানুষ তার ব্যবহার এ কষ্ট পায়। খুবই সুন্দর একটা গল্প।
প্রথম প্রথম শান্ত শিষ্ট ভদ্র স্বভাবের জন্য গোকুলকে ভালো লাগলেও শেষদিকটা কেমন যেনো ভালো লাগছিলো না তার ব্যবহার দেখে। গোকুলের বউ মনোরমাকে একদম সহ্য করতে পারছিলাম না।
কাহিনী সংক্ষেপ : বৈকুণ্ঠ মজুমদারের মুদির দোকান। তার দুই ছেলে - গোকুল ও বিনোদ। গোকুল প্রথম পক্ষের স্ত্রীর সন্তান, আর বিনোদ দ্বিতীয় পক্ষের।এই গোকুল সাধাসিধে, পড়াশোনায় ভালো না, অপরদিকে বিনোদ ব্রিলিয়ান্ট স্টুডেন্ট। গোকুল তার এই ছোটোভাইটিকে অপত্য স্নেহ করতো। বৈকুণ্ঠ গোকুলকে পড়াশোনা ছাড়িয়ে তার ব্যবসার দায়িত্ত্ব দেয়। ধীরে ধীরে পিতা পুত্র মিলে দোকানটিতে বড়ো করে তোলে। বৈকুণ্ঠ যখন শেষ শয্যায় দ্বিতীয় পক্ষের পুত্র বিনোদের জীবনযাপন নিয়ে খুবই মর্মাহত।তাই তিনি তার সমস্ত স্থাবর অস্থাবর সম্পত্তি গোকুলের নামে উইল করে দিয়ে যান।পরবর্তীকালে কি দুই ভাইএর মধ্যে এই উইল নিয়ে কি কোনো বিবাদ হবে নাকি আগের মতোই গভীর সম্পর্ক থাকবে ?
বৈকুন্ঠ মজুমদার ব্যবসায়ী লোক, খুব সৎভাবে পরিশ্রমের মাধ্যমে তাঁর ধ্বংসপ্রায় মুদি দোকানকে বড় আড়তে পরিণত করেন তিনি। বৈকুন্ঠের দুই ছেলে গোকুল এবং বিনোদ। গোকুল তাঁর প্রথম স্ত্রীর সন্তান, আর দ্বিতীয় স্ত্রীর সন্তান হচ্ছে বিনোদ। গোকুল অনেকটা বোকা ধরনের হলেও বাবা, মা এবং ভাইয়ের প্রতি তার ভালোবাসা অনেক গভীর। পড়াশোনায় মনোযোগ নেই বিধায় ছোটবেলায়ই বাবার আড়তের কাজে লেগে যায় গোকুল। বিনোদ পড়ালেখায় খুবই ভালো হলেও তার স্বভাব-চরিত্র, চালচলনে মোটেও সন্তুষ্ট নন বাবা বৈকুণ্ঠ। বৈকুণ্ঠের মনে হয় এত কষ্ট করে গড়ে তোলা তাঁর সহায়-সম্পদ বিনোদ আরাম-আয়েস করেই ধ্বংস করে দেবে আর এই ভাবনা থেকেই মৃত্যুর আগে তিনি তাঁর স্ত্রীর সম্মতি নিয়ে সমস্ত সম্পত্তি গোকুলের নামে উইল করে যান। এই বিষয়-আশয়ের উইল নিয়ে দুই ভাইয়ের মনোভাবের কাহিনি নিয়েই রচিত হয়েছে ‘বৈকুণ্ঠের উইল’ উপন্যাসটি।
শরৎচন্দ্র মহাশয়ের বিখ্যাত "Rural Family Drama" জ্যঁর বাংলা সাহিত্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। আলোচ্য উপন্যাসটি বা বড়গল্পটি এই একই জ্যঁরের। গ্রাম্য পরিবার, দুই সৎভাই, মুমূর্ষু পিতার উইল, সহনশীলা মা, কলহপরায়ণ বউ-শ্বশুর-শ্যালক — সবকিছ�� মিলিয়ে এই কাহিনির সারবত্তা। তবে এইবারের কাহিনিতে স্নিগ্ধতা কম, কলহই বেশি। দুই ভাইয়ের কারোরই চরিত্র স্থির না, এই ভালো আবার এই খারাপ। কী যে হবে বোঝা দায়! কিন্তু, মনোরমা ও তার বাপকে সবাই-ই বোধকরি থাপড়াতে চাইবে। শরৎচন্দ্র যা পড়েছি এতদিনে, তার মধ্যে এটিকে খুব উপরের দিকে রাখা সম্ভব না। তবে পড়তেও মন্দ লাগে না গ্রীষ্মের সন্ধ্যায়। তার একটাই কারণ। লেখকের ভাষা এবং সাংসারিক চিত্র তুলে ধরার পটুতা।
মুদি দোকানী বৈকুন্ঠের প্রথম স্ত্রী মৃত্যুর আগে গোকুলকে রেখে যান।স্ত্রীবিয়োগে ব্যকুল বৈকুন্ঠ তার সন্তানকে আঁকড়ে বাকি জীবন কাটিয়ে দেবার সিদ্ধান্ত নেয়।কিন্তু গোকুলকে মানুষ করার জন্য তাকে ভবানীকে বিয়ে করতে হয়।ভবানীর কোলজুড়ে আসে বিনোদ। বিনোদ লেখাপড়ায় উত্তোরত্তর উন্নতি সাধন করলেও গোকুল একই ক্লাসে পড়ে রইল।তবে গোকুলের চরিত্রের বিশেষ দিক পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর প্রকাশিত হলো।তারপরদিন গোকুলের স্কুল বন্ধ করে বৈকুন্ঠ তাকে সাথে নিয়ে দোকানে গেল। গোকুল ও তার পিতা দোকানটাকে বড় করে তোলে।অর্থবৈভবে তাদের ভালোই কাটে কিন্তু কলকাতায় উচ্চশিক্ষা নিতে যাওয়া বিনোদের বকে যাওয়ার সংবাদ বৈকুন্ঠকে পীড়ন করতে থাকে।মৃত্যুর পূর্বে বৈকুন্ঠ উৎকন্ঠিত হয়ে পড়লে ভবানীর পরামর্শে তার সব সম্পদ উইল করে যান গোকুলের নামে। সম্পদের সাথে সম্পর্কের ওঠা-নামা নির্ভর করে।সৎ ভাই ও মায়ের সাথে গোকুলের সম্পর্কের অবনতি হতে থাকে।প্রকাশিত কথায় কতো অভিমান জড়ায়ে থাকে,ক্রোধে কত ব্যাকুলতা থাকে;অর্থবিত্তের আগুনের নিচে সম্পর্কের কোমলতা থাকে ;তা প্রকাশ পেতে থাকে সংলাপ ও গল্পের প্রবাহমানতায়।এখানেই উপন্যাসের সৌন্দর্য রয়েছে।শরতের অন্যান্য উপন্যাসের মতো খ্যাতি না পেলেও সুখপাঠ্য উপন্যাস বলা যায়।