বড় বড় গনমাধ্যম কীভাবে যুগের পর যুগ ধরে মানুষের সামনে খবর তুলে আনতে গিয়ে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিয়েছে, কীভাবে মানুষকে তথ্যহীন করেছে, সেসব নিয়েই ডজনখানেক প্রবন্ধ।
যুদ্ধ চলছে, দুনিয়ার নানা প্রান্তে , আর ভোক্তা হয়ে সে যুদ্ধের উত্তেজনা ভোগ করি ঘরে বসে। কিন্তু সমস্যা হয়, যখন আমার বিভ্রান্ত হয়ে যাই, "আসলে কোনটাকে আমরা যুদ্ধ বলব?" এক মোড়ল যখন আইন কানুনের তোয়াক্কা না করেই ধ্বংস করে চলছে ইরাক থেকে আফগানিস্তান, তখন তাকে কীভাবে যুদ্ধ বলি? সেটাতো আগ্রাসন হওয়ার কথা। কিন্তু না, গনমাধ্যম আমাদের গিলিয়েছে যুদ্ধের তত্ত্ব।
২০০৪ সালে শ্রাবন প্রকাশনী থেকে প্রকাশিত বইটিতে মূলত গনমাধ্যমকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করানো হয়েছে ডজন খানেক প্রবন্ধের মাধ্যমে। যেখানে স্থান পেয়েছে রবার্ট ফিস্ক থেকে শুরু করে জন পিলজারের মত সাংবাদিকের লেখা। যার প্রশ্ন তুলেছেন, এই যুগে সাংবাদিকতা আসলে কার জন্য? মালিক প্রতিষ্ঠানের জন্য? নাকি গনমানুষের জন্য?
প্রতিটা প্রবন্ধে অত্যন্ত গভীর বিশ্লেষনের মাধ্যমে উঠে আসে, কীভাবে এত গনমাধ্যম থাকার পরেও, মানুষ ধীরে ধীরে তথ্য থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ছে খুব সহজে। কীভাবে মূলধারার গনমাধ্যম তাদের নিজস্ব এজেন্ডা সুকৌশলে গিলাচ্ছে আম জনতাকে, বৈধতা আদায় করে নিচ্ছে তাদের যাবতীয় আগ্রাসনের পক্ষে।
মূলত সাতটি বিশালকায় মিডায় হাউজ নিয়ন্ত্রণ করছে এখন পুরো দুনিয়া, যার ছয়টিরই মালিক মার্কিনীরা। এই হাউজগুলোর মালিকরা আবার তেল কিংবা কোন বহুজাতিক কোম্পানীর মালিক। কেবল বিদেশী গনমাধ্যম নয়, বইটিতে উঠে আসে ইরাক যুদ্ধ নিয়ে বাংলাদেশী গনমাধ্যমে বিভ্রান্তিকর কাভারেজের হালচাল।
দিনশেষে প্রতিটা লেখকই প্রশ্ন রেখে গিয়েছেন, কিন্তু মিডিয়ার বস্তুনিষ্ঠতার কী হবে- নিরেপক্ষতার? অবাধ তথ্য প্রবাহ, মুক্ত মিডিয়া-মিথের কী হবে? এতো কিছুর পরেও সে কি বিশ্ববিবেকের তকমা গলায় ঝুলিয়ে রাখবে?
মিডিয়ার যুগ চলছে বর্তমানে। মূলত,সংবাদপত্রের বিকাশের মাধ্যমে মিডিয়া আমাদের মাঝে প্রবেশ করলেও বর্তমানে টিভি,রেডিও, ফেবু,টুইটার ইত্যাদির জয়জয়কার চারিদিকে।
তাই একটা বিষয় অতি সহজেই অনুমেয় যে,মিডিয়ার পাবলিককে প্রভাবিত করার একটি অসাধারণ ক্ষমতা রয়েছে। এতো ক্ষমতা বোধকরি, আলাউদ্দিনের চেরাগেরও নাই।
সংবাদপত্র বা টিভিতে কোনো খবর প্রচারিত হলে তাকে অনেকটা বেদবাক্যতুল্যই মনে করি আমরা আমজনতা।
কিন্তু "তথাকথিত" এইসব বিবিসি,সিএনএন,রয়টার্স,টেলিগ্রাফ, নিউইয়র্ক টাইমস কতটুকু নির্ভরযোগ্য সংবাদ দেয় আমাদের তাই চিন্তার বিষয়।
কেন চিন্তার বিষয়? আজব!!মিডিয়া আবার মিথ্যা বলে নাকী?! পশ্চিমা মিডিয়াই তো বস্তুনিষ্ঠ, সঠিক সংবাদপ্রচারের জন্য খ্যাতিমান।
এই বইতে আমরা যেসব গণমাধ্যমকে সর্বদা খালিচোখে ধোয়া তুলসি পাতা জেনে এসেছি, তাদের স্বার্থান্ধতা আর অর্থলোলুপতার জন্য ইরাকে ইঙ্গ-মার্কিন হামলা,আফঘানিস্তানে পশ্চিমা সামরিক আগ্রাসনের সঠিক চিত্রকে তুলে না ধরে মিথ্যা প্রচার কিংবা অর্ধসত্য সংবাদ পাঠককুল বা দর্শকদের কাছে পৌছে দেয়ার বিষয়টি বিভিন্ন সাংবাদিক ও সংবাদ পর্যবেক্ষণ করে বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে।
যেকোনো পাঠক,যিনি পশ্চিমা গণমাধ্যমের আসল চরিত্র জানতে চান তিনি পড়তে পারেন।যা চিন্তাজগতে পরিবর্তন আনতে বাধ্য।
কেন ৪ দিলাম?
বিষয়বস্তু জটিল সন্দেহ নেই। কিন্তু বইটির শব্দচয়নে প্রাঞ্জলতা আরো গতিশীল করে তুলতে পারতো।