ব্যাগ হাতে নিয়ে বাজারের তিন নম্বর গলিতে ঢুকতেই এক দোকানদার বলল, 'স্যার, নতুন আলু আছে । শোল মাছ দিয়ে রান্না করলে দুই প্লেট ভাত বেশি খেতে পারবেন ।' দ্রুত হেঁটে যাচ্ছিলেন মাখরাজ মুৎসুদ্দী । থমকে দাঁড়ালেন । মাথা উঁচু করে দোকানদারের দিকে তাকিয়ে বড় বড় করে ফেললেন চোখ দুটো, 'তাহলে তো সমস্যা, নাকি !' 'কিসের সমস্যা স্যার ?' 'সমস্যা অনেকগুলো । এক. ভাত বেশি খেলে চাল বেশি খরচ হবে । দুই. ভাত খুব ভালো খাবার না, এটা বেশি খেলে শরীরে অনেক রোগ জন্ম নেবে। তিন. ভাত বেশি খাও্যা মানে ঘুম, এতে কাজের ক্ষতি হবে ।' মাখরাজ মুৎসুদ্দী হাসতে হাসতে বললেন, 'যে জিনিস নিলে তিনটা ক্ষতি হিবে, সেটা কি নেও্যা ঠিক হবে, নাকি ?'
Sumanto Aslam ( Bengali: সুমন্ত আসলাম) is a Bangladeshi journalist and novelist. He was the sectional editor of Alpin, the weekly satirical supplement of Prothom Alo and wrote his editorial under the banner "Boundule". Now he is the sectional editor of Pachal.
আমাদের একজন বাউন্ডুলে লেখক আছেন। লেখক বাউন্ডুলে কি না তা নিশ্চিত করে বলা যায় না অবশ্য, তবে তিনি বাউন্ডুলে নামে একটা সিরিজ লিখতেন। প্রতি সোমবারে তা ছাপা হতো পত্রিকার পাতায়। আমরা আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষা করে থাকতাম। পড়তে পড়তে আমাদের মনে হত এই লেখকের কাঁধে নিশ্চিতভাবেই একটি ঝোলা আছে। তিনি খালি পায়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ান, আর মানুষ দেখেন। তিনি মানুষের যন্ত্রণাকে ধারণ করতে পারেন, মানুষের দৈনন্দিন কথাবার্তা তার চাবুক কলাম লাগতো স্লোগানের মত। লেখকের নামটা অনেকেই হয়তো অনুমান করতে পারছেন।
তার নাম সুমন্ত আসলাম। তিনি এখনো বাউন্ডুলে লিখেন। প্রতি বছর বইমেলায় তা প্রকাশিত হয়। সুমন্ত আসলামকে শুধুমাত্র বাউন্ডুলে সিরিজ দিয়ে মূল্যায়ন করা অনুচিত কাজ হবে। কারণ এছাড়াও তার বইয়ের সংখ্যা কম না। তিনি লিখছেন কিশোর উপন্যাস, লিখেছেন প্রেমের গল্প, লিখেছেন রম্য রচনা।
আমি লেখক সুমন্ত আসলামের ভক্ত। গল্প, উপন্যাস, রম্যরচনা সব মিলিয়ে প্রায় ১০০টি বই প্রকাশিত হয়েছে সুমন্ত আসলামের। বাংলাদেশে তার ভক্ত সংখ্যা অনেক। দু’চোখ ভরা স্বপ্ন তার। দেশ, জাতি, সমাজ, মানুষ সবাইকে নিয়েই তিনি স্বপ্ন দেখেন। সবার ভালো থাকার স্বপ্ন দেখেন। অনেক ভালোবাসা নিয়ে স্বপ্ন দেখেন। আর, সে সব স্বপ্নের বীজ তিনি বপন করেন পাঠকের মনেও। তাইতো কাছের বন্ধুরা তাকে বলে স্বপ্নবাজ। এই লেখক অনেক দূর যাবেন। উনি কখনও ঝরে পড়বেন না। এই লেখক খুব সহজ সরলভাবে জীবন যাপন করেন। একদম মাটির মানুষ। কোনো অহংকার নেই। সবার সাথে হাসি মুখে কথা বলেন। বইমেলায় তাকে দূর থেকে খুব সুন্দর পাঞ্জাবী পড়ে আসতে দেখেছি। উচা, লম্বা প্রানবন্ত একজন মানুষ। চোখে ভারী চশমা।
আমার অত্যন্ত পছন্দের একজন লেখক। যাই হোক, সুমন্ত আসলামের সব বই পড়া না হলেও আমি তার বেশির ভাগ বইই পড়ে ফেলেছি। প্রতিটা লিখাই আমি খুব মজা করে পড়ি। ভালো লাগে খুব, পড়ে তৃপ্তি পাই। ঠিক তেমনি এই লিখটাও ব্যতিক্রম নয়, ভালো লেগেছে বইটা।
This entire review has been hidden because of spoilers.
মানুষ কতই বা কৃপণ হতে পারে? এমন উদাহরণ তো মাঝে মাঝে আমরা দেখতেই পায় আমাদের চারপাশে। শিরোনাম অনুযায়ী এই গল্প এক কৃপণ ব্যাক্তি মাখরাজ মুৎসুদ্দির গল্প, যার সংসারে আছে বৌ ফেরদৌসী বেগম, ছেলে ফারাজ আর মেয়ে দিনা। পাশের প্লট এ খায়ের পাটোয়ারীর বাড়ি তৈরির শুরু দেখে মাখরাজ মুৎসুদ্দির বুক ব্যথা শুরু হয়। না, এবার টাকা বাঁচায় নিজের বাড়ি তৈরী করতে হবেই। বাজার থেকে শুরু করে বিদ্যুৎ বিল বাঁচানো, মেহমান না আসার বাহানা সব ধরণের কৌশল তিনি প্রয়োগ করে যাচ্ছেন। এই কৃপণতা তাকে কতদূর নিয়ে যাবে?
লেখক সম্ভবত এই কাহিনীর অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার ফুপা থেকে (উৎসর্গ যেহেতু উনাকেই করেছেন)। প্রথম দিকে একটু রসাত্মক হলেও পরের দিকে কৃপণতা গুলো বিরক্তই লাগে। আমার মনে হয়েছে কাহিনীটাতে আরেকটু টুইস্ট আনলে আরো ভালো হতো। বাকি চরিত্রগুলোর আরো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা থাকতে পারতো। তবে শেষ দিকটা ভালোই ছিল।
সুমন্ত আসলাম বেশ ভালো লেখক। ওনার সমকালীন উপন্যাস গুলো বেশ গোছালো। কিন্তু এই উপন্যাসে তার অতিমাত্রায় বিশেষ্যের প্রয়োগ কিছুটা বিরক্ত করেছে। প্রতিটি লাইনে মাখরাজ মুৎসুদ্দী না লিখে তিনি সর্বনাম ব্যবহার করতে পারতেন।