পৈত্রিক সূত্রে চট্টগ্রামের মানুষ। যদিও বান্দরবান, ঢাকা আর সিলেটেই থাকা হয়েছে জীবনের বেশির ভাগ সময়। বাবা মোঃ আয়ুব ও মা ফাহিমা পারভীন রিতা। একমাত্র বড় বোন শারমিন আক্তার শিমু। পড়াশোনা করেছি চট্টগ্রাম টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ থেকে। বিএসসি শেষ করে ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত আছি চট্টগ্রাম এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোনের একটি মাল্টিন্যাশনাল কোম্পানিতে। ছোটবেলা থেকেই আঁকা আঁকির সাথে ছিলাম। ঘটনাক্রমে লেখক হয়ে গেছি। দুটো শখ মানুষের কখনো থাকে না একসাথে। তবুও মাঝে মধ্যে নিজেকে আঁকিয়ে, কখনো বা লেখক হিসেবে পরিচয় দিতে আনন্দ পাই। নিজের সম্পর্কে এটুকুই।
ফরহাদ সাহেবের লেখালেখির সাথে মোলাকাত অমিয়েন্দ্র দিয়ে,সে কি এক মুগ্ধতায় বুঁদ হয়ে ভুলেই গিয়েছিলাম সময় স্থান আর পরিবেশ, রবীন্দ্রনাথ আর অতিপ্রাকৃতিক প্রেক্ষাপট যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে এক অদ্ভুত মায়াজালে জড়িয়ে রেখেছিল,অমিয়েত্রার সাথে পরিচয়টা অতটা খাসা না হলেও নেহাত মন্দ ছিল না.
তো তৃতীয় বার যখন এই বইখানা পেলাম বহু সাধ্যসাধনা করে প্রত্যাশার পারদমাত্রা তখন আকাশচুম্বী, কিন্তু গল্পগুলো না ঠিক যেন জমলো না এইবারে, ঠিক যেন সেই খাবারের মত গন্ধ রং সবই আছে কিন্তু স্বাদের বেলায় কেমন যেন ফিকে পড়ে গেছে.
ব্যাপার না ,বইয়ের সাথে পথচলার পথ তো শেষ হবার নয়, নিশ্চয়ই পরে অন্য কোনো বই এবারে আক্ষেপ ঠিক মিলিয়ে দিবে
'ক্যাথেড্রাল' মূলত লেখকের একক গল্পের সংকলন। ২০১৩-২০১৭ পর্যন্ত ছোট গল্প সংকলন পড়ার এতো বাজে অভিজ্ঞতা আছে যে এরপর থেকে সংকলন শুনলেই পারত পক্ষে এড়িয়ে যাই৷ তো এই 'ক্যাথেড্রাল' ধরার আগে যদি জানতাম এটা সংকলন তাহলে হয়তো এটাও এড়িয়ে যেতাম। আর তাহলেই মিসটা করতাম।
'ক্যাথেড্রাল' গল্প সংকলনটি মূলত ৩ টি বড় গল্প আর একটি উপন্যাসিকা নিয়ে প্রকাশিত হয়েছে। বড় গল্প ৩টি হচ্ছে 'অমিমাংসিত', 'চতুরঙ্গ' এবং 'আঁধিয়ার' আর উপন্যাসিকাটার নাম বইয়ের নামে; 'ক্যাথেড্রাল'। প্রত্যেকটি কন্টেন্টের মধ্যেই একটা ব্যাপার কমন রয়েছে; তা হলো অতিপ্রাকৃত বিষয়৷ কখনো সে অতিপ্রাকৃত বিষয় এসেছে স্বপ্ন, মৃত্যুর মধ্য দিয়ে যেখানে একজন মানুষের দুঃস্বপ্নের সাথে নিকট ভবিষ্যত মিলে যায়। আবার কখনো কোন অতিপ্রাকৃত সত্ত্বাকে দেখা যায় ডাঃ এমরানের মিউজিয়ামরুপী বাড়ির ছাদে উল্টো করে লাগানো রহস্যময় দাবার ঘুঁটির আদলে। আঁধিয়ারে আবার দেখা যায় রহস্যময় শিবমূর্তি রুপে। তবে যে গল্পে যেভাবেই দেখা যাক না কেন, প্রতিবারই অতিপ্রাকৃত সত্ত্বা ঘাড়ের রোম দাঁড় করিয়ে দিয়েছে। আর এটা সম্ভব হয়েছে লেখকের দারুণ লিখনশৈলীর কারণে। এরকম ঘাড়ের রোম দাঁড়ানো লেখা পড়েছি একমাত্র হুমায়ূন আহমেদের মিসির আলী সিরিজের দেবী, নিশীথিনী তে। কেমন যেন দম বন্ধ করা ভীতিকর একটা অনুভূতি। গল্পগুলোর মধ্যে ভালোলাগার র্যাংকিং করলে 'অমিমাংসিত'টা একদম ওপরে থাকবে। তারপর চতুরঙ্গ, তারপর আঁধিয়ার। তবে উপন্যাসিকাটার স্টার্টিংটা প্রমিসিং মনে হলেও এই ভাইবটা মাঝখানে গিয়েই হারানো শুরু করেছে এবং শেষে একেবারে হারিয়েই গিয়েছে। একমাত্র এ কন্টেন্টাতেই আশা মেটেনি। অবশ্য আশা না মেটার কারণ হিসেবে বইয়ের শুরুর ৩ টি বড় গল্পকেও দায়ী করা যেতে পারে। এত চমৎকার গল্পগুলো পড়ে এসে, উপন্যাসিকাটায় পাঠক বেশি কিছু দাবী করলে তা নিশ্চয়ই অন্যায় কিছু নয়। তবে একটা কথা না বললেই নয়, এই বইতে যে গল্পগুলো আপনি পাবেন সেগুলোকে একদম ফ্রেশলি ব্রুড গল্প বলা যায়। লেখা পড়ে আমার মনে হয়েছে, এরকম বা এর আশেপাশে কোন লেখাই আমি আজ অব্দি পড়িনি। কাহিনী বলি আর লিখনশৈলীই বলি, অতিপ্রাকৃত জনরায় লেখক তার সেরাটা দিয়েছেন এবং বুঝিয়েছেন এই জনরার রেসে তিনি যদি প্রতিযোগী হিসেবে নামেন তবে খুব সহজেই ১ম স্থান অধিকার করবেন। শুধু এ সংকলন পড়ে এ দাবী করছি এমনটা কেউ ভাববেন না, কারণ আমি আগেই লেখকের 'অমিয়েন্দ্র' আর 'অমিয়েত্রা' পড়েছি। ওখানেই লেখকের প্রতিভার স্বাক্ষর দেখেছি।
যারা একটু ভিন্ন স্বাদের হরর, থ্রিলার, অতিপ্রাকৃত জনরার বই পছন্দ করেন এ বইটা তাদের জন্য রেকমেন্ডেড থাকলো।
এই লেখকের "ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া" পড়ার পরই সিদ্ধান্ত নেই যে, উনার লেখা সব বই পড়ে ফেলব। কারন এই বছরে একমাত্র "ক্যাপ্টেন বাবাকোয়া" কেই আমি ৫★ দিয়েছি।
"ক্যাথেড্রাল" বইটা ৩ টা বড় গল্প একটা উনপ্যাসিকা নিতে সংকলিত। গল্পের বিষয়বস্তু অতিপ্রাকৃত এবং রোমাঞ্চ। আমার কাছে ৩ টা বড় গল্প বেশ ভালোই লেগেছে। বেশ ভয় ভয় ভাব আছে। কিন্তু মুল উপন্যাসিকা "ক্যাথেড্রাল" যেটার জন্য বইটা কেনা, সেটা পড়ে একটু হতাশ হয়েছি। :/
কিন্তু লেখকের লেখনীর ধরন খুব সুন্দর এবং সাবলীল। যেটা ভালো লেগেছে। :)
আমার কাছে যদি বর্তমান লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে আন্ডাররেটেড কোনো লেখকের নাম বলতে বলা হয় - আমি তড়িৎগতিতে বলব, "ফরহাদ চৌধুরী শিহাব"। আমার মতে, ভালো লেখকদের মধ্যে সবচেয়ে কম চর্চা হয় তাকে নিয়েই।
১। অমীমাংসিত গল্পের শুরুটা অদ্ভুত স্বপ্নের মাধ্যমে। ভিন্ন ভিন্ন সময়ে চারটি ভাঙা ভাঙা স্বপ্ন। একটা ন্যাড়া মাথার বাচ্চা বার বার স্বপ্নের মধ্যে এসে উপস্থিত। সেই সাথে স্বপ্নের ভেতর ঘটতে থাকে অস্বাভাবিক কিছু ঘটনা। প্রতিবারই ঘুম ভাঙতেই অবাক হয়। কখনো শরীর ভিজে আছে শ্যাওলাযুক্ত পানিতে, কখনও বা হাতে ধরে আছে তালা, কখনও কবরের মাটি। ঘটনাগুলো নিছক বলে উড়িয়ে দেওয়া যেত, কিন্তু ৩রা আগস্ট একটি পত্রিকায় প্রকাশিত খবরের শিরোনাম নজর কাড়লো। "হিঙ্গুলী মাদ্রাসা গোরস্থানে এক মাদ্রাসা ছাত্রকে জীবন্ত কবর দেয়া হয় ভুলবশত।"
২। চতুরঙ্গ চতুরঙ্গ। ইংরেজীতে বলা হয় chess. বহুল প্রচলিত নাম দাবা। কোনো সাধারণ দাবার কথা হচ্ছে না। অস্বাভাবিক একটা দাবা, যেটি ছাদের সিলিংয়ের সাথে। অদ্ভুত দাবার কোটটায় মানুষের মত লম্বা ঘুঁটি উল্টো হয়ে ঝুলছে। এগুলো অনেকটা বর্ম পরিহিত সেপাই। ডা. এমরানের ব্যক্তিগত সংগ্রহশালার কিউরেটরের চাকুরির ইন্টারভিউ দিতে আসা ডা. নভেরার চোখ এড়ালো না দাবার কোট এবং এই ঘুঁটিগুলো। আদৌ কি কোনো রহস্য আছে এর পেছনে?
৩। আঁধিয়ার গল্পের শুরুটা এক আঁধিয়ারের গল্প দিয়ে। জমিতে কাজ করতে গিয়ে আবিষ্কার করে শিবের ��ূর্তি। স্বাভাবিক মূর্তিগুলোর মত নয় এটি। রয়েছে বিশেষত্ব। নিজের অজ্ঞাতে মূর্তির কাঁধে কোদালের কোপ বসাতে মানুষের মত ফিনকি দিয়ে রক্ত বের হতে শুরু করে মূর্তি থেকে। এর কিছুদিন পর আঁধিয়ারের সাথে ঘটতে থাকে অদ্ভুতুড়ে সব কান্ড। আপনাআপনি আঁধিয়ারের কাঁধে ক্ষতের সৃষ্টি হয়। ক্ষত থেকে চুইয়ে পরতে থাকে রক্ত। মারা যায় আঁধিয়ার। মৃত্যুর আগে শিবের গলায় পেঁচিয়ে থাকা একটা সাপ তার গলা পেঁচিয়ে ধরে ছিলো। শুরু হয় নতুন আরেক গল্পের...
৪। ক্যাথেড্রাল বন্ধুর নিমন্ত্রণে অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রি আর্কিওলজিস্ট মাহিনকে নিয়ে বন্ধুর বাসায় বেড়াতে যায় মেজর শাহরিয়ার রবি।তবে নিতান্তই নিমন্ত্রণ ছিলো না এটি। উদ্দেশ্য পাহাড় ধ্বসে আবিষ্কৃত ক্যাথেড্রাল কেন্দ্রিক। এই ক্যাথেড্রালটির বিশেষত্ব হচ্ছে এটি ভ্যাটিকানের রোমান ক্যাথোলিক চার্চের অনুরূপ। এমন কি ভ্যাটিকানের ক্যাথেড্রালের ছাদ জুড়ে মাইকেল এঞ্জেলোর আঁকা বাইবেলের ঘটনাবলীর চিত্রায়নের অনুরূপ চিত্রও বিদ্যমান। ক্যাথেড্রালের বাইরে যিশু খৃস্টের মূর্তি। রয়েছে জুলিয়াস সিজার, আলেক্সান্ডার দি গ্রেট, কিং ডেভিড এবং চার্লস দি গেট্রের পাথুরে মুর্তি। এ চারজনের মাঝে রহস্যজনক এক বামুনের মূর্তি। আরও একটা বিষয় হলো এখানে রয়েছে বিশাল এক সমাধি, যা ভ্যাটিকানের ক্যাথলিক চার্চটিতে নেই। কবরগুলোর নাম ফলকে ইতিহাস বিখ্যাত সব লোকেদের নাম খোদাই করা। কে বা কারা, কখন এটিকে বাংলাদেশে তৈরি করেছে সেটাই রহস্য। কী এমন রহস্য লুকিয়ে আছে ক্যাথেড্রালের পেছনে?
#পাঠ_প্রতিক্রিয়াঃ
লেখকের লেখার সাথে পরিচয় "অমিয়েত্রা" উপন্যাসটির মাধ্যমে। বলা যায় অমিয়েত্রা পড়ার পর থেকেই অপেক্ষায় ছিলাম লেখকের নতুন বইয়ের। তাই "ক্যাথেড্রাল" বইটি প্রকাশের প্রথম দিনেই সংগ্রহ করতে বাধ্য হয়েছি নিজের ভেতর জিয়িয়ে রাখা চাহিদা পূরণের তাগিদে।
তিনটি গল্প এবং একটী উপন্যাসিকা দিয়ে সাজানো বইটী একও কথায় অসাধারণ। ঘটনা প্রবাহ, গল্পের উপস্থাপন, লেখনী সব মিলিয়ে জবাব নেই। বাংলাদেশী প্রেক্ষাপটে অসাধারণ আধিভৌতিক জনরার গল্পগুলোতে পাঠকে চমকে দেবার মত উপাদানের যথেষ্ট মজুদ রয়েছে। লেখক তার নিজেস্ব লেখনীশৈলীতে খুব সুন্দর করে গল্পগুলো অতি মায়ায় সাজিয়েছেন। লেখকের লেখা সম্পর্কে আমার মতামত এবং ধারণা হলো, "তার লেখনীতে অদ্ভুত একটা মায়া মাখানো থাকে, যা পাঠককে আকড়ে রাখে লেখায়। আমার বিশ্বাস আধিভৌতিক পছন্দ করেন এমন পাঠকরা নিরাশ হবেন না বইটি পড়ে।
"ক্যাথেড্রাল" পড়ার পর বলতে পারি আমার অপেক্ষা অনেকটাই সার্থক। তবে একটা অতৃপ্তি রয়ে গেছে। আর এই অতৃপ্তিটা নতুন আরেকটি লেখিনীর। আশা করি সেটাও মিটবে শীঘ্রই।
আমার ভালো লাগা নিছক সস্তা দরের নয়, যে একে কোনরূপ গাণিতিক সংখ্যায় প্রকাশ করবো। বরং রেটিং নির্ধারণ অসম্ভব। ওটি না হয় আপনাদের হাতেই ছেড়ে দিলাম। পড়ে দেখবেন, নিজেরাই ভালো লাগার পরিমাণ বুঝতে পারবেন আশা করি।