Jump to ratings and reviews
Rate this book

রামায়ণঃ খোলা চোখে

Rate this book
লেখকের নিবেদন রামায়ণ এক অনবদ্য কাব্য। আচার্য রামেন্দ্রসুন্দর ত্ৰিবেদী এই রামায়ণ গ্রন্থটিকে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ট মহাকাব্য রূপে উল্লেখ করেছেন। অন্য যে তিনখানি গ্ৰন্থকে তিনি যথার্থ মহাকাব্যের মর্যাদা দিয়েছেন, সেগুলি হল মহাভারত, ইলিয়ড এবং ওডিসি। বিষয়বস্তুর ব্যাপ্তি এবং আয়তনে মহাভারত যে রামায়ণকে অতিক্রম করেছে। সে বিষয়ে সন্দেহ নেই। কিন্তু কাব্য হিসাবে রামায়ণ অতুলনীয় এবং সর্বাধিক জনপ্রিয়। রবীন্দ্রনাথ রামায়ণকে শুধু কাব্য বলে গ্রহণ করেননি। রামায়ণকে তিনি ইতিহাস বলেও উল্লেখ করেছেন, “রামায়ণ মহাভারতকে কেবলমাত্র মহাকাব্য বলিলে চলিবে না, তাহা ইতিহাসও বটে, ঘটনাবলীর ইতিহাস নহে, কারণ সেরূপ ইতিহাস সময় বিশেষকে অবলম্বন করিয়া থাকে। রামায়ণ মহাভারত ভারতবর্ষের চিরকালের ইতিহাস।” সন তারিখ ইত্যাদি নির্দেশ করে যে ধরণের ইতিহাস রচিত হয়ে থাকে, রামায়ণ বা মহাভারত কোন ক্রমেই সে জাতীয় ইতিহাস নয়। বস্তুতঃ প্রাচীন যুগের ভারতীয়রা ঐ জাতীয় ইতিহাস রচনায় কোনদিনই আগ্ৰহ বোধ করেননি। যাঁরা সাহিত্য, গণিত, স্থাপত্য ও চিকিৎসাবিজ্ঞানে অসাধারণ পারদর্শিতা দেখিয়েছিলেন, তারা ইচ্ছা করলে ঐ জাতীয় ইতিহাস লিখতে পারতেন না, এমন নয়। তারাও ইতিহাস লিখে গেছেন, কিন্তু সে ইতিহাস লেখা হয়েছে পুরাণেব আকারে। লেখা হয়েছে রামায়ণ ও মহাভারতের মতো মহাকাব্যের মাধ্যমে। সন তারিখ নির্দেশ করে বলা যায় না মানুষ কবে আগুন জ্বালাতে শিখেছিল, কবে সে শিখেছিল বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে, পুরী নির্মাণ করতে বা চাষ আবাদ করতে। কিন্তু তা সত্ত্বেও এ সবই মানুষের ইতিহাস। একান্ত সত্য ইতিহাস। রামায়ণেও একটি বিশেষ যুগের ইতিহাস বিধৃত হয়ে রয়েছে। রামায়ণকে নিছক এক কবিকল্পনাপ্রসূত কাহিনী ভাবলে ভুল করা হবে। রামচন্দ্রের বীরত্ব ও পিতৃভক্তি, সীতার সতীত্ব ও বেদনা, লক্ষ্মণ ভরতের ভ্রাতৃভক্তি, হামুমানের প্রভুভক্তির মনোরম কাহিনীর অতিরিক্ত এক মূল্যবান ইতিহাসের উপাদানের আকর এই রামায়ণ গ্রন্থ। এই রামায়ণ কাহিনীর মূলে আছে প্রাচীন আর্য ইতিহাসের তিনটি বৃহৎ বৈপ্লবিক ঘটনাঃ ১। মৃগয়াজীবী ও গোধন-পরায়ণ আর্যদের কৃষিনির্ভরতার সূচনা ও ক্রমশঃ রাজ্যবিস্তার ২। আর্য-অনার্যের সংঘাত তথা বৈষ্ণব ও শৈবধর্মের সংঘাত ও অনার্য শৈবধর্মীদের পরাভব এবং ৩। ব্রাহ্মাণ ও ক্ষত্ৰিয়ের বিরোধ। রবীন্দ্রনাথ এই বিষয়গুলির দিকে আমাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে গেছেন। তাঁর বক্তব্য সর্বাংশে মেনে নিয়েও বলা যায়, এর বাইরেও রামায়ণে আরও কিছু ইতিহাস বিধৃত হয়ে আছে। আছে, প্রাসাদবিপ্লবের কাহিনী, আছে নীচতা শঠতা ও চক্রান্তের ইতিহাস, আছে দশরথের পরিবারের নিদারুণ ভ্ৰাতৃ-কলহ সিংহাসনের উত্তরাধিকার নিয়ে বিরোধ এবং সর্বোপরি একদা প্রগতির সমর্থক, হরধনুভঙ্গকারী, রাবণবিনাশকারী রামচন্দ্রের পরবর্তী সময়ের রক্ষণশীল ভূমিকা ও সেই সঙ্গে রামচরিত্রের ছায়াচ্ছন্ন দিকগুলির উন্মোচন। বহু সুধীজন ইতিপূর্বেই রামায়ণের অন্য দিকগুলি নিয়ে বহু আলোচনা করেছেন। কিন্তু সর্বশেষ বিষয়গুলি তারা কোন অজ্ঞাত কারণে পরিহার করেছেন। খুব সম্ভবতঃ প্রচলিত ধ্যানধারণায় আঘাত করতে তারা আগ্রহী ছিলেন না। সেই কারণে তারা এই সব নিদারুণ অপ্রীতিকর কাহিনী উন্মোচন থেকে বিরত থেকেছেন। সামান্য ক্ষমতা নিয়ে সেই দুরূহ প্ৰয়াস আমি করেছি। কারণ মহাকবি বাল্মীকি রামপ্রশস্তির ফাঁকে ফাঁকে উক্ত বিপ্লব ও কলহ ইত্যাদির আভাস রেখে গেছেন। অতি কঠিন মণিতে যদি ছিদ্র থাকে, সুতোও সেখানে অনায়াসে প্রবেশ করতে পারে। বাল্মীকি রচিত কাহিনী অবলম্বন করেই আমি সেই পথে অগ্রসর হয়েছি। প্রসঙ্গতঃ একটা কথা বলা দরকার, বাল্মীকি ব্যস প্রভৃতি প্রাচীন কবিরা কল্পনার মায়াজাল বিস্তার করে বহু আদর্শ চরিত্র রচনা করে গেছেন বটে, কিন্তু কোথাও সত্য গোপন করেননি। যাকে ধর্মপুত্র যুধিষ্ঠির বলেছেন, তিনিও যে যুদ্ধজয়ের জন্য গুরু দ্রোণাচার্যকে প্রতারণা করেছেন—উচ্চকণ্ঠে অশ্বত্থামা হত-বলে প্রায় অনুচ্চারিত ভাবে ইতি গজঃ-উচ্চারণ করে গুরুর পরম বিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে তঁকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিয়েছেন, এ কথা উল্লেখ করতে ব্যাসদেব ভোলেননি। যাকে স্বয়ং ভগবান বলে চিত্রিত করেছেন, সেই কৃষ্ণও যে গোপিনীদের বস্তু হরণ করেছেন, তাদের সঙ্গে নিধুবনে রঙ্গরসে মেতেছেন তা গোপন করেননি। মানুষের রক্তপানের মত বীভৎস ব্যাপারের অনুষ্ঠান ভীম করেছেন তার স্পষ্ট উল্লেখ মহাভারতে আছে। কোনও বরণীয় চরিত্রের রূপায়ণে আধুনিকরা যে ভাবে জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তঁকে মহৎ বলে চিত্রায়িত করেন, এইসব প্রাচীন কবিরা সেরকম করতেন ন। দুর্বল দিকগুলির উল্লেখ করতেও তিনি ভোলেননি। নানা আস্তরণ ও প্রক্ষেপের সাহায্যে পরবর্তী যুগে রামচরিত্রের এই নেতিবাচক দিকগুলির কথা ঢেকে ফেলবার চেষ্টা করা হয়েছে, কিন্তু এখন পর্যন্ত তা সম্পূর্ণ মুছে ফেলা যায়নি। রামায়ণে কোন না কোন ভাবে বাল্মীকি এই সব সত্যের যে আভাস দিয়েছেন, যথাসম্ভব। স্পষ্ট ভাবে পাঠকদের সামনে সেগুলি উপস্থিত করা-এ গ্রন্থ রচনার উদ্দেশ্যে। সেই সঙ্গে যে কথাটা বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে চাই তা হল রামায়ণের প্রকৃত ঘটনাবলী অনুসন্ধানে আমি বাল্মীকি রামায়ণকে কোথাও অতিক্রম করিনি। পণ্ডিতপ্রবর শ্ৰীহেমচন্দ্ৰ ভট্টাচাৰ্য্য কালীপ্রসন্ন সিংহের মহাভারত প্রকাশে সহায়তা করেছিলেন। পরবর্তীকালে তিনি বাল্মীকি রামায়ণের বঙ্গানুবাদ করেছিলেন। ১৮৬৯-৮৪ খৃষ্টাব্দের মধ্যে বর্ধমানরাজের অর্থনুকূল্যে প্রকাশিত ঐ রামায়ণ গ্রন্থটিকে এ যাবৎ প্রকাশিত সর্বাধিক প্রামাণ্য বঙ্গানুবাদ বলে গ্ৰহণ করা হয়ে থাকে। ‘ভারবি” প্রকাশনালয় দুটি খণ্ডে হেমচন্দ্ৰ ভট্টাচার্যের অনুদিত রামায়ণ পুনমুদ্রণ করেন। ১৯৭৫ খৃষ্টাব্দের এপ্রিল ও ১৯৭৬ খৃষ্টাব্দের ফেব্রুয়ারীতে রামায়ণের যাবতীয় উদ্ধৃতি ভারবি প্রথম সংস্করণ থেকে দেওয়া হয়েছে। পাদটীকা নির্দেশের ক্ষেত্রে ঐ একই গ্ৰন্থ আমি ব্যবহার করেছি। বাল্মীকি রামায়ণহেমচন্দ্ৰ ভট্টাচার্য কর্তৃক অনুবাদিত, প্রথম ভারবি সংস্করণ। এই কারণে বারংবার আকর গ্রন্থটির নাম উল্লেখের প্রয়োজন মনে করিনি। রামায়ণ কাহিনীর অন্তর্নিহিত সব সত্যকে এই গ্রন্থে আবরণমুক্ত করতে পেরেছি, এমন দাবী আমি করি না। আমার স্বল্প ক্ষমতায় রামা...
1 person is currently reading
3 people want to read

About the author

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
2 (100%)
4 stars
0 (0%)
3 stars
0 (0%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
No one has reviewed this book yet.

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.