*সাম্রাজ্যবাদ কী বস্তু? এই প্রশ্নের উত্তরে পর্তুগিজ শাসনাধীন গিনি বিসাউ ও সবুজ কেপের নেতা আমিলকার কাব্রাল একবার বলিয়াছিলেন, সাম্রাজ্যবাদ হইতেছে সেই মাল যাহার নিকৃষ্টিতম উদাহরণ জার্মানির নাৎসি সৈরতন্ত্র। নাৎসিদের পরাজয়ের পর ফরাসি শাসনাধীন মার্তিনিকের কবি ও রাষ্ট্রনেতা এমে সেজার লিখিয়াছিলেন, ইউরোপ ও আমেরিকার স্বাধীনতা ব্যবসায়ীরা নাৎসীদের অনুসৃত নীতি বহুদিন ধরিয়া তাঁহাদের অধীন দেশে দেশে প্রয়োগ করিয়া আসিতেছেন। হিটলারের দোষ এয়ুরোপীয় বর্বরতা তিনি খোদ এয়ুরোপবক্ষে টানিয়া আনিলেন। এমে সেজারের বাক্য নতুন করিয়া সত্য প্রমাণ করিল ২০০৩ নাগাদ এরাকে মার্কিন দস্যুতার কূটনীতি জয়লাভের পথ খোলাসা করিয়াছিল। মার্কিননীতির সমথ্যকরা সাদ্দাম স্বৈরশাসক বলিয়া দেশে দেশে প্রচার করিতেছিলেন। একই প্রচার ১৮ ও ১৯ শতকে নবাব সুবেদার সিরাজুদ্দৌলার বিরুদ্ধেও চলিয়াছিল। মৃণায় কৃঞ্চিতনাসা সুশীল সমাজ তাঁহার নাম উচ্চারণ করিতেন ‘সাজেরদৌলা।’ সাম্রাজ্যবাদী প্রচারণা যুদ্ধ কী নোংরা হইতে পারে তাহার স্বরূপ যৎকিঞ্চিত উদঘাটন করিতেছে এই বই।এই সংস্করণে একটি নতুন অধ্যায় যোগ হইয়াছে। ইংরেজ সর্দারের পত্রাবলি ঘাঁটিয়া ইহা দেখাইতেছে সিরাজুদ্দৌলার ঘাতক শুদ্ধ মোহাম্মদী বেগ বা মিরন একলা নহে। তাঁহার আসল ঘাতকের নাম লর্ড রবার্ট ক্লাইব।
Salimullah Khan is a Bangladeshi writer, thinker, critic, and public intellectual. Regarded as an eminent thinker of Bangladesh, Khan explores national and international politics and culture using Marxist and Lacanian theories. Informed and influenced by Ahmed Sofa's thoughts, his exploration of Bangladesh's politics and culture has a significant following among the country's young generation of writers and thinkers.
Khan translated the works of Plato, James Rennell, Charles Baudelaire, Frantz Fanon, Dorothee Sölle into Bengali. In Bangladesh, he is a regular guest in talk shows on national and international political issues.
A proponent of anti-colonial movements, Khan has engagements in the global and regional political economy and culture from a Lacanian-Marxist perspective. A critic of Western interventionism, Salimullah Khan analyzes Western thought and discourse through critical scrutiny of the colonial and imperial legacy of the West. From this perspective, he has written on the works of Charles Baudelaire, Walter Benjamin, Michel Foucault, Frantz Fanon, Claude Lévi-Strauss, Edward Said, Aime Cesaire, Talal Asad and many others. Since 1997, his engagement with Freud and Lacan has made him use psychoanalysis to explore Bangladesh's politics and culture and also international issues. He also wrote two books on Freudo-Lacanian philosophy: Freud Porar Bhumika, and Ami Tumi She.
সলিমুল্লাহ খান চমৎকার কহেন তা সবাই জানি। লেখক হিসেবেও তিনি কম যান না৷
সলিমুল্লাহ খানের জানার,দেখার আর পড়াশোনার গণ্ডির অতিব্যাপক যার স্বাক্ষর লেখনীতে বিদ্যামান।
খান কথন পরে হবে এবার বই নিয়ে কথা হোক। বইটার নাম বেশ বিচিত্র। কেন এই আজিম কিসিমের নাম তার স্বপক্ষে সলিমুল্লাহ খান লিখেন-
"বাংলা সন ১৪০৯ হইতে ১৪১৩- পর্যন্ত এই পাঁচ বৎসরের ভিতর আমার স্বাক্ষরে প্রকাশিত সাত নিবন্ধ ও দুই তর্জমা সম্বল করিয়া ইতিহাস কারখানাঃ প্রথম কান্ড ছাপা হইল। সঙ্কলিত একটি প্রবন্ধেরর নামে প্রথম কান্ডের নামম সত্য,সাদ্দাম হোসেন ও স্রাজেরদৌলা রাখিলাম। আমরা এখন যাঁহাকে সিরাজুদ্দৌলা নামে জানি তাঁহার নাম ঊনবিংশ শতাব্দীরর গোড়ার দিকে কখনো কখনো "স্রাজেরদৌলা " লেখা হইত।এই বয়ানের বৃত্তান্তই ইতিহাস কারখানা।"
পশ্চিমাগণের ইরাক আক্রমণের অজুহাত ছিলো সাদ্দাম একনায়ক, স্বৈরাচারী। সে মানবসমাজের জন্য হুমকিসুলভ অস্ত্র তৈরিতে নিয়োজিত। তাই পশ্চিমাগণ স্বপ্রণোদিত হয়ে ইরাক আক্রমণ করে।
যদিও ওসমানীয় সাম্রাজ্যের সবচেয়ে সমৃদ্ধশালী অংশটিকে প্রথম মহাযুদ্ধের পরই নানা ধুয়া তুলে ওসমানীয় সাম্রাজ্য থেকে ভাগ করে নেয় ফ্রান্স আর ব্রিটেন। যাইহোক, সাদ্দামকে পরাজিত করে ইরাকি জনগণকে "প্রকৃত " মুক্তিদানকারী পশ্চিমাফৌজের বিরুদ্ধেই সংগ্রাম শুরু করে দেয়া ইরাকি জনগণ।
ইরাকিরা বড্ড পাঁজি জাত। ইয়াংকি আর তার বন্ধুগণ কতো কষ্ট করে "ইরাকি ফ্রিডম" পরিচালনা করে, ইরাকিদের একটি সরকার উপহার দিলো তা তারা না মেনে "জনযুদ্ধ " (সলিমুল্লাহ খানের মতে,আমারও দ্বিমত নাই) শুরু করে দিলো যা এখনো চলছে। এদিকে,ইয়াংকি আর তার মিত্রদের পোয়াবারো (তের বলতে পারলে খুশ হই)।তেল খনি সব দখল হল। আর কী চাই!
সলিমুল্লাহ খান সাদ্দামকে একজন প্রকৃত জাতীয়তাবাদী বলে উল্লেখপূর্বক সপক্ষে যুক্তি দিয়েছেন। যা বেশ গ্রহণযোগ্য (কীসব যুক্তি বললে স্পয়লার হতে যায়)। তিনি সাদ্দাম কর্তৃক কুর্দিদের দমনের "মৃদু " সমালোচনাও করেছেন।
ফরাসি বিপ্লবের শিশু, "সাম্য,মৈত্রী,স্বাধীনতা"র ধোয়া তুলে নেপোলিয়ন বোনাপার্টের ১৭৯৮ সালের মিসর দখলের ঘটনা বর্ণনাপূর্বক প্রমাণ করতে চেয়েছেন দুষ্টের অজুহাতের অভাব নেই, অন্যকে নির্যাতন করার জন্য। এখানে স্মরণ করতে পারি মিসর দখলের সময় খোদ নেপোলিয়ন "মেহমুদ/মাহমুদ " নামধারণ করেছিলেন এবং ব্যাপক প্রোপাগান্ডা চালিয়েছিলেন ফরাসিবাহিনী মামলুক শাসকদের হাত থেকে নিরীহ মিসরীয়দের রক্ষার্থে আগমন করেছে(লক্ষ করুন ইয়াংকি আর তার দোসরদের সাথে কত্তমিল)।
নেপোলিয়ন আর তার দলবল মিসর দখলের সময় ইসলামকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে মিসরীয়দের মনস্তত্ত্বে স্থান লাভের চেষ্টা করে।
মিসরীয়রা ফরাসিদের বন্ধু হিসেবে নেয় নি, বরং তিন বছরের মাথায় ফরাসি হানাদারবাহিনীকে তল্পিতল্পাসহ মিসর ত্যাগ করতে হয়েছিল।
১৭৫২ সালেই আলীবর্দি খান, তরুণ মির্জা মোহাম্মদ ওরফে সিরাজ-উদ-দ্দৌলাকে তার উত্তরসূরি ঘোষণা করেন। কিন্তু যখন ১৭৫৬ সালে সিরাজ নবাব হন, অনেকেই তা মানতে পারে নাই। কেননা সিরাজ তাদের স্বার্থপূরণের সবচেয়ে বড় প্রতিবন্ধক ছিলেন। এইসব রাজন্যবর্গ আর ব্যবসায়ীগোষ্ঠী হাত মেলায় সম্প্রসারণবাদী ইংরেজ ব্যবসায়ীদের সাথে। তরুণ স্বাধীনচেতা সিরাজ কোনোকালেই ইংরেজদের ভালো চোখে দেখতেন না। তিনি বুঝতে পেরেছিলেন ইংরেজদের ক্ষমতালিপ্সা (এ সম্পর্কে আলীবর্দি খা তাকে সতর্ক করেছিলেন)।
ফলাফল পলাশীর যুদ্ধ, নবাবের পরাজয় আর বৃহৎ অর্থে ইংরেজদের পুরোপুরি ক্ষমতা দখল। ইংরেজ আর এদেশীয় কতিপয় ঐতিহাসিক বাংলার শেষ স্বাধীন নবাবকে উপস্থাপন করেন "অত্যাচারী, নারীলিপ্সু, অযোগ্য" বলে। সলিমুল্লাহ খানের বেশ দক্ষতার সাথে প্রমাণ করেছেন ইংরেজ ও তাদের মতাবলম্বী সেইসব ঐতিহাসিকরা কতটা ভুল আর স্বার্থান্ধ ছিলেন।
কে সিরাজদ্দৌলাকে হত্যা করে? মির মিরন নাকী ক্লাইভ ই মূল পরিকল্পনাকারী? উত্তর বইতে সুস্পষ্ট।
ফরাসি দার্শনিক, সমাজচিন্তক বাদিয়ু আর জাক জেরিদা নিয়ে আলোচনা আছে। জাক জেরিদা আর বাদিয়ু নিয়ে আমার জ্ঞান সীমিত তাই সেসব নিয়ে মতামত দিচ্ছি না। তবে আরও সহজবোধ্য হতে পারতো।বাংলায় বাদিয়ুর বই চোখে পড়ে নাই আর জাক জেরিদা নিয়ে স্বদেশী ভাষায় দুইএকটার বেশি বই নাই।
চমৎকার কিছু কবিতা আছে যা বইটিকে নবমাত্রা দিয়েছিলো। বেশ বাস্তবভিত্তিক কবিতা।
এডগার রাইজ বারোজ তার "টারজান " চরিত্র দিয়ে কীভাবে বর্ণবাদ আর সাম্রাজ্যবাদের নগ্নপ্রচার চালিয়েছেন তা নিয়ে অনূদিত প্রবন্ধটি চিন্তারাজ্যে ঝড় তোলে।
সার্বিক বিবেচনায় বেশ তথ্যসমৃদ্ধ বই, চিন্তার খোরাক জোগাতে বাধ্য।
সাদ্দাম হোসেন ও সিরাজুদ্দৌলার অবস্থার মধ্যে যে তুলনা হতে পারে তাই কখনো ভাবিনি! এই তুলনা এবং সিরাজুদ্দৌলা সম্পর্কে অনেক অজানা তথ্য এ অংশকে আকর্ষণীয় করেছে।
পরের অংশের সন্ত্রাসবাদ ও বিভিন্ন মনীষীদের নিয়ে কাঠখোট্টা আলোচনা ঠিক আমার জন্য নয়। যেমন নয় তৃতীয় অংশের কবিতা।
টার্জানের মূল গল্প পড়া হয়নি। ছোটদের জন্য লেখা বই ও চলচ্চিত্র দেখেছি অবশ্য। তারপরও আলোচনাটা ভালোই লেগেছে।
অধ্যাপক সলিমুল্লাহ খান রচিত বই 'সত্য সাদ্দাম হোসেন ও 'স্রাজেরদৌলা। এখানে স্রাজেরদৌলা বলতে, সিরাজদ্দৌলাকে বুঝানো হয়েছে। চিচিত্র নামের এই বইটি মূলত সাম্রাজ্যবাদ নিয়া লেখা একটা পুস্তক। যেখানে ইতিহাসের বিভিন্ন প্রেক্ষাপট দিয়ে দেখিয়েছেন সাম্রাজ্যবাদ আসলে কতটা নোংরা হতে পারে।
সর্বমোট ৯ টি লেখা, যার মধ্যে ৭ টি মূল লেখা, বাকি দুটো অনুবাদ করা হ্যারন্ড পিন্টারের কবিতা এবং নিউ সিঙ্গারের প্রবন্ধ।
বইয়ের প্রথম লেখা 'ইরাক, আরব জাতীয়তাবাদ আর সাদ্দাম হোসেন' শিরোনামে। খুবই উপভোগ্য এই রচনায় তিনি প্রথমেই সাদ্দাম কি 'জাতীয়তাবাদী না একনায়ক' এই প্রশ্ন সামনে নিয়ে আসেন। প্রশ্নের জবাবে তিনি আরব জাতীয়তাবাদের ইতিহাসে ও এর বিরুদ্ধে নানা চক্রান্তগুলো বর্ণনা করেন। লেখক ইরাক যুদ্ধ কে 'জনযুদ্ধ' আখ্যায়িত করে সাদ্দাম হোসেনকে দাঁড় করান মুক্তিযুদ্ধার কাতারে দাঁড় করিয়ে তিনি বলেন, "সাদ্দাম হোসেনের প্রকৃত অপরাধ তাঁহার আরব জাতীয়তাবাদ বা সাম্রাজ্যবাদবিরোধী রাজনীতি।” যদিও লেখক পুরো আলোচনায় সাদ্দাম কীভাবে নিজেকে আরব জাতীয়তাবাদের সাথে যুক্ত করেন, সেই ব্যাখ্যা অনুপস্থিত রেখে দেন। তিনি বারবার জোর দিয়ে বলেন, সাদ্দসাম হোসেন একনায়কবাদী নন, তার মূল অপরাধ ছিল তিনি সাম্রাজ্যবিরোধী।
দ্বিতীয় প্রবন্ধও সাদ্দামকে নিয়েই। এখানে তিনি একহাত নেন যারা সাদ্দামকে একনায়ক বলে সমালোচনা করেন তাদের। তার মতে এরা সাম্রাজ্যবা��কে সহনশীল করে তোলেন, পশ্চিমা আগ্রাসন করে বৈধতা দেওয়ার চেষ্টা করেন অথবা ভিত্তি তৈরি করে দেন। এরপর তিনি ক্রমান্বয়ে সাম্রাজ্যবাদীদের রাজনীতির ইতিহাস ব্যাখ্যা করেন। তিনি বলেন, “সাদ্দাম হোসেনের আসল অপরাধ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে অবস্থান নেওয়া, তার ‘অপশাসন’ নয়।” এবং দাবি করেন “সাদ্দাম হোসেন আরব জাতীয়তাবাদী, কমসে কম ইরাকি জাতীয়তায় তার পক্ষপাত থাকবেই।”
সাদ্দামের সূত্র ধরে তিনি মঞ্চে আনেন সিরাজুদ্দোলাকে। সিরাজকে যেভাবে ক্ষমত্যাচ্যুত করা হয়েছে, তার সাথে মিল খোঁজার চেষ্টা তৎকালীন সাদ্দামের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের। আবারো সাদ্দাম ও সিরিজুদ্দোলার জাতীয়বাদের বিষয়ে প্রশ্নের উত্তরকে অপরিষ্কার রেখেই লেখক তুলে ধরেন কীভাবে পুঁজিপতি সমাজ ও আমলাতন্ত্র তাদের বিরুদ্ধে বিপ্লব করেছিল। কিন্তু কেন তৎকালীন বাংলার পুঁজিপতি সমাজ সিরাজের বিরুদ্ধে গেল? তার কি মানুষ হিসেবে খারাপ ছিল নাকি দেশপ্রেমিক ছিল না? এখানেও সলিমুল্লাহ খান ঘোলাটে করে ছেড়ে দিয়েছেন।
স্বাধীনতা অর্থ দাসত্ব লেখায় তিনি তুলে আনেন তৎকালীন সরাসীদের মিসর দখলের প্রেক্ষাপট। সাম্রাজ্যবাদীরা কীভাবে নন ইস্যুকে ইস্যু বানিয়ে আগ্রাসন চালায় লেখক তা তুলে আনেন বিস্তারিত ভাবে।
নীতির নতুন জামাঃ এয়ুরোপে বর্ণবাদ, এই প্রবন্ধে তিনি বলেন, "মানুষের অধিকার আর নাগরিকের অধিকার এই দুই আওয়াজ পুঁজি করেই তো ফরাসি বিপ্লব আর মার্কিন বিপ্লব ইতিহাস হয়েছিল। আর আজ এয়ুরোপ আর আমেরিকা এই দুই অধিকারের নামে কোন অপকর্মটা নাই যা করছে না?"
ফরাসি দার্শনিক, সমাজচিন্তক বাদিয়ু আর জাক জেরিদা নিয়ে আলোচনা আছে বেশকটি প্রবন্ধে। এদের নিয়ে আমার নিজেরই ভাসাভাসা জ্ঞান, তাই কথা বলছি না। তবে প্রবন্ধ শেষে লেখক বলেন, "বর্তমান দুনিয়ার সমস্ত দোষ এসলামের ঘাড়ে চাপানো এয়ুরোপের অসুখের মধ্যে পড়ে।"
সলিমুল্লাহ একজন অসাধারণ বক্তা, আর মন্ত্রমুগ্ধকর লেখক। উনার জ্ঞানের গন্ডি এতই ব্যাপক যে, রীতিমত যে কারোই ঈর্ষা হবে। পুরো বইতে, প্রতিটা লাইনে তিনি ছাপ রেখে গিয়েছেন। আমার মত আম পাঠকের জন্য যদিও অনেক কথা বেশ দুর্বোধ্য মনে হবে। দুই তিনবার পড়ার পরে ক্লিয়ার হবে। পুরো লেখনি চিন্তার খোরাক জোগাতে বাধ্য।
“কান্ডারী! তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর, বাঙ্গালীর খুনে লাল হ’ল যেথা ক্লাইভের খঞ্জর!”
“দুনিয়ার যত মড়াবায়ু হয় জিন্দা মার্কিন মুলুক দেবতার খোশবু ছড়ায়।” (Harold Pintet)
‘স্রাজেরদৌলা’ বইটা সম্পর্কে বলছিলেন এটা আমি বলি নাই, লক্ষ্য করবেন আপনি বইটা একটু দেখান জনগণকে দেখবেন যে নামটার দুই দিকে উদ্ধৃতি চিহ্ন আছে কানমলা চিহ্ন আছে মানে এটা আমার কথা নয়। উনবিংশ শতাব্দীর বাঙালি ইতিহাসবিদরা এভাবেই তার নামের বানান লিখেতেন। মুসলমানদের নাম কিভাবে লিখতে হয় এটা আমাদের হিন্দু ইতিহাসবিদরা জানতেন না তা নয়, তারা ফার্সি ভালোই জানতেন। কিন্তু কোন মানুষকে অপমান করতে হলে তার নাম কে বিকৃত করতে হয়, এটা হল তার নামের বিকৃত উচ্চারণ- লিখতেন রাজিবলোচন মুখোপাধ্যায় ১৮০৫ সনে ধরেন। এমনকি আমাদের সর্বজন শ্রদ্ধেয় ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর তারা এভাবেই নাম লিখেছেন। সিরাজউদ্দৌলা নামটা তারা এভাবেই লিখেছেন। এখনো দেখেন মুসলমানদের নাম শুদ্ধভাবে কলকাতা লিখতে পারে না। যেমন জিন্নাহ-র নামটা লিখে জিন্না; শৈলাশ রঞ্জন বন্দ্যোপাধ্যায়ের বইতেও ‘'হ’’ -টা বাদ যায়। আমার নাম লেখার সময় সলিমুল্লা এখানেও ‘'হ’’ টা বাদ যায়। যেমন সালমান-কে লিখবে সালমন। আনন্দবাজার পত্রিকায় যখন কোন বাঙালির নাম লেখে, বাঙালি মুসলমানের নাম! শেখ মুজিবুর রহমানের নাম সে শুদ্ধ লিখতে পারবে না ‘'মুজিবর” ; একটা না একটা ভুল করবেই। এটার মধ্যে যে ইংরেজিতে বলে “Disdain” ঘৃণা প্রকাশ পায়, ওইটাই ওই উদ্ধৃতি চিহ্নের মধ্যে আছে। এটা আমি করেছি বললে সামান্য অবিচার হয় স্যার। আহমদ ছফার নামও শফা হয়েছিল। ‘আহমেদ’ লেখে, হুমায়ূন আহমেদের নামে আহমেদ থাকতে পারে কিন্তু আহমদ ছফার নাম যে আহমদ ছফা লোকে এটা খেয়াল করে না। বাংলাদেশে আরবি নাম নানাভাবে লেখা হয় কিন্তু আপনাকে সম্মান করতে হবে কোন লেখক নিজের নাম কিভাবে লেখে। আমরা যখন প্রথম লিখতে আসি, আমাদের সম্পাদকরা লেখা আমার ছাপাতো না। যেমন ময়মনসিংহের কবি রফিক আজাদ, বলে এটা কি নাম তোমার সলিমুল্লাহ খান, নাম বদলাও! আমি বলি নাম তো আর বদলানো যাবে না এটা আমার বাবা মার দেওয়া নাম। একটা উদাহরণ দিচ্ছি - রফিকের বিরুদ্ধে আমার কোন মামলা নাই,, ১৯৭৬-৭৭ সনের কথা যখন ঢাকায় প্রথম ঘোরাফেরা করছিলাম। নাম বদলাইতে বলে, তো এখন তাদের মুসলমানের নাম খারাপ লাগে, কিন্তু এটা তো হজম করতে হবে। বলে তোমাকে এডজাস্ট করতে হবে আমাদের সংস্কৃতির সাথে, আমি বলি না আপনাকে এডজাস্ট করতে হবে আমার সংস্কৃতির সাথে, এই ছিল বিরোধ। তাদের বক্তব্য, তোমাদের নাম তো বিদেশি আরবি শব্দ। আমি বলি দুনিয়ার কোন নাম ইবা স্বদেশী? সব নামই তো বিদেশি। সিরাজউদ্দৌলাকে যারা হত্যা করেছে তারা তাকে হত্যা করেই ক্ষান্ত হন নাই। পরবর্তীকালে অন্তত ১০০ বছর পর্যন্ত ১৯০৫ সন বঙ্গভঙ্গ আন্দোলন পর্যন্ত তার নাম বিকৃত করে লিখতো। কিন্তু এরপর দেখেন অক্ষয়কুমার মৈত্রে-রা যখন লিখছে তখন শুদ্ধ হয়ে গেছে নাম। “সিরাজউদ্দৌলা”। সিরাজউদ্দৌলা মানে কি Star Of The State. সিরাজ মানে Star, State হলো দৌলা। যেটাকে ভারতীয়রা দৌলত বলে এটা আরবি শব্দ। সিরাজ আল দৌলা (Star Of The State) এটা তো তার নাম নয় এটা উপাধি। তার নাম তো মির্জা মোহাম্মদ। ---সলিমুল্লাহ খান স্যারের কোন ইন্টারভিউ থেকে নেয়া।
বিচিত্র নামের এই বইটি মূলত সাম্রাজ্যবাদ নিয়ে লেখা পুস্তক। “যুদ্ধের প্রথম বলি সত্য” - খুব বই আছে, যেগুলোই সম্ভবত প্রত্যেক পার্সপেক্টিভ আলোচনা করা হয়। কিন্ত আমার মতো স্বল্প জ্ঞান সম্পূর্ণ মানুষের জন্যে আরেকটু বর্ণনা ব্যাখ্যার দাবি রাখে।