Jump to ratings and reviews
Rate this book

লুপ্ত সরস্বতী

Rate this book
এই গ্রন্থে সরস্বতী নদীর অতীত অস্তিত্বকে খুঁজেছেন লেখক। সরস্বতী নদীর দেবীত্বে উত্তরণের আশ্চর্য কাহিনির সঙ্গে আবিষ্কারকদের জীবনের কথা মিলেমিশে আছে এই রচনায়।

Hardcover

Published December 1, 2013

3 people are currently reading
16 people want to read

About the author

Maniratna Mukhopadhyay

4 books1 follower

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
1 (33%)
4 stars
1 (33%)
3 stars
1 (33%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 of 1 review
Profile Image for Farzana Raisa.
530 reviews237 followers
June 5, 2020
ঐ যে হ য ব র ল-তে আছে না? ছিল রুমাল হয়ে গেলো বেড়াল। ব্যাপারখানা অনেকটা এরকম। ছিল নদী, হয়ে গেলেন দেবী৷

কথা বলছি অনেক প্রাচীন, বর্তমানে লুপ্ত হয়ে যাওয়া নদী সরস্বতীকে নিয়ে। অনেকের মনে গোল পাকাতে পারে৷ কী ব্যাপার! দেবী থাকবেন দেবীর জায়গায়, সেখানে নদী আবার আসবে কেমন করে৷ তার আগে দেবী সরস্বতীকে নিয়ে একটা মিথ বলে নেই। পুরাণে আছে, গঙ্গা, লক্ষ্মী ও আসাবরী (দেবী সরস্বতীর পূর্ব নাম) হলেন নারায়ণের তিন স্ত্রী। একদিন গঙ্গা ও সরস্বতীর মাঝে বিবাদ হয় আর সেই সূত্র ধরে গঙ্গা অভিশাপ দেন সরস্বতীকে। ব্যাস, দেবী হয়ে গেলেন নদী৷ পরে অবশ্য নারায়ণ বিধান দেন। কলিযুগের পাঁচ হাজার বছর অতিক্রান্ত হলে শাপমোচন হবে দেবীর৷

পুরাণ তো গেলো। এখন আসি বাস্তবতায়। পৃথিবীতে তখনও চলছে ভাঙ্গা গড়ার খেলা। আজকে আমরা যেমন দেখছি, সাত মহাদেশ, পাঁচ মহাসাগর, কোটি কোটি বছর আগে এরকম ছিল না মোটেও৷ সবটা মিলে ছিল একটাই দেশ বা মহাদেশ। আস্তে আস্তে কোটি কোটি বছরের পরিবর্তনের ফলে পৃথিবী রূপ নেয় আজকের পৃথিবীতে। এই লক্ষ কোটি বছরের মাঝে লুপ্ত হয়েছে কতো, নদী, সাগর, সভ্যতা আবার নতুন করে সৃষ্টি হয়েছে কতো কিছুর। এই ভাঙ্গা-গড়ার ফাঁদে পড়ে, অনেক নতুনের ভীড়ে হারিয়ে যাওয়া একটা নদী নিয়েই এই বইয়ের আলোচনা।

সভ্যতার ইতিহাস বলি কিংবা অন্য যা কিছুই হোক না কেন, হিন্দু ধর্মের সাথে ওতোপ্রোতভাবে মিশে আছে সরস্বতী নদীর নাম৷ হিন্দুদের অন্যতম তীর্থস্থান হলো প্রয়াগের ত্রিবেণী। যা গঙ্গা, যমুনা ও সরস্বতী-এই তিনটি নদীর সঙ্গমস্থল। অথচ ত্রিবেনীতে দেখা মেলে গঙ্গা ও যমুনার। তাহলে সরস্বতী গেলো কোথায়? শুরু হলো খোঁজ। তার আগে মিলিয়ন ডলার প্রশ্ন, সরস্বতী নদী কি আসলেই আছে বা ছিল? নাকি ওটাও কোন মিথ... শুধুমাত্র পুরাণে উল্লেখিত পবিত্র নদীর গল্প কেবল!

এরপরের গল্পগুলো একেবারে আধুনিক থ্রিলার গল্পের মতো। বেদের মাঝে সবচেয়ে প্রাচীন হলো ঋগ্বেদ। সেই ঋগ্বেদে জনৈক ঋষির হাতে লেখা একটা মন্ত্র পাওয়া যায়৷ সরস্বতীকে উদ্দেশ্য করে৷ তখনও সরস্বতী কেবলই নদী, মর্ত্যের মাটিতে দেবত্ব লাভ হয়নি। সেখানে এই বিশালাকার নদীর মাধ্যমে মানুষ কিভাবে উপকৃত হচ্ছে সেসব মহিমার কথা লেখা৷ আবার আরেকটা ব্যাপার বলে রাখা ভালো, সাধারণত প্রাচীন কালের মানুষের কাছে যা কিছু শক্তি, যা কিছু ভয়- তাকেই তারা দেবতা জ্ঞান করতো। কাজেই সরস্বতী নদীর মাধ্যমে তারা সহজে জীবনধারণ করছে, উপকার পাচ্ছে, সেই ভক্তি, শ্রদ্ধা আর শুভ শক্তিকে তুষ্ট করার উপায় থেকেই সরস্বতীর দেবত্ব লাভ৷ শেষ নয় এখানেই, গবেষকরা বেদ নিয়েই কেবল পড়ে থাকলেন না। খোঁজ চলল আরও। মহাকাব্যের কথা বললে সবার প্রথমে মনে পড়ে যায় মহাভারতের কথা। সত্যি! কী নেই মহাভারতে। গবেষকরা মহাভারতের ভূ-প্রকৃতির বর্ণনার দিকে নজর দিলেন এবার৷ সেখানেও আছে সরস্বতী নদীর কথা৷ মহাভারত যে কেবল গল্প বা কাহিনি তা কিন্তু নয়, এর সত্যতার প্রমাণও আছে। আধুনিক বিজ্ঞানের মাধ্যমে মহাভারতের বর্ণনা অনুযায়ী ঘটে যাওয়া কুরুক্ষেত্রের সেই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সন-তারিখও বলে দেওয়া যায় গড়গড় করে৷ কাজেই, সব মিলিয়ে মহাভারতে বর্ণিত ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক বর্ণনাকে তুড়ি মেরে উড়িয়ে দেবার কোন কারণই নেই৷ ওহ! আরেকটা কথা, মহাভারতেই লেখা আছে সরস্বতীর তখন আর আগেকার তেজ নেই, কিছু কিছু জায়গায় লুপ্ত হচ্ছে সে। অতএব প্রমাণও হাতে৷ স্যাটেলাইট থেকে প্রাপ্ত ছবি, তথ্য আর বেশ কিছু পুরোনো পান্ডুলিপি ও গ্রন্থ থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী কিছু কিছু জায়গায় অনুমান করা হলো যে, এই রাস্তা ধরে বহু বহু কাল আগে বয়ে গেছে সরস্বতী নদী৷ এবং.. এবং...

এবং সব সন্দেহকে তুড়ি মেরে অকাট্য প্রমাণ লাভ... ব্যাস! এ কান-ও কান জোড়া হাসি গবেষকদের। পরিশ্রম সফল। গবেষণা অনুযায়ী হিমালয়ের বন্দরপুছ পর্বতশৃঙ্গে তার উৎপত্তি, হরিয়ানার আদি বদরিতে তার হিমালয় থেকে উত্তরণ। এরপর বিভিন্ন সময় নানান পথে বাহিত হয়ে এই নদী পতিত হয় আরব সাগরে৷ উৎপত্তির পর থেকে মোট চারবার গতিপথ পাল্টেছে সরস্বতী। 'লুপ্ত সরস্বতী' বইটির লেখক মণীরত্ন মুখোপাধ্যায় গবেষক দলের সাথে সুদীর্ঘ দু দশক সন্ধান করে গেছেন সরস্বতী নদীকে৷ সুউচ্চ বরফাবৃত পর্বতশৃঙ্গ ও গ্লেসিয়ার থেকে শুরু করে হিমালয়ের অভ্যন্তর হয়ে হরিয়ানা, পাঞ্জাব, রাজস্থানের মরুভূমি, গুজরাটের খাম্বাট উপসাগর, দ্বারকা, কচ্ছের রনের চারটা মোহনা পর্যন্ত তিনি ও তার দল ঘুরেছেন পায়ে হেঁটে হেঁটে। আর আবিষ্কার করেছেন অনন্য সাধারণ এই নদীকে৷ সিন্ধু সভ্যতাকে যদি প্রাচীন সভ্যতা হিসেবে আখ্যা দিয়ে থাকি, তবে অধুনা বিজ্ঞানীদের প্রমাণ অনুযায়ী বলতে হয় সরস্বতীর অববাহিকায় গড়ে উঠা সভ্যতা আরও বেশি প্রাচীন এবং আরও বেশি সমৃদ্ধও।

'লুপ্ত সরস্বতী' বইটিতে শুধুমাত্র হারিয়ে যাওয়া একটা নদীকেই খোঁজা হয়নি, বরং খোঁজা হয়েছে সামান্য নদী থেকে তার দেবত্বে উত্তরণের ইতিহাস, লুপ্ত হবার ইতিহাস, তীরবর্তী সভ্যতার বিকাশ ও প্রত্নতাত্ত্বিক বিষয়গুলোকেও। আর সেই সাথে স্থানে স্থানে আলোচনা করা হয়েছে প্রাচীন ভারতের ভূ-প্রাকৃতিক গঠনও। নদী মাতৃরূপা। মা যেমন স্নেহ মমতা দিয়ে প্রতিপালন করে সন্তানদের, নদীও ঠিক তেমনিভাবে লালন পালন করে মানুষকে। এভাবেই ধীরে ধীরে গড়ে উঠে সভ্যতা। মণিরত্ন মুখোপাধ্যায়ের বইটা একটা গবেষণাধর্মী বই। গল্পটা শুনে যতোটা ইন্টারেস্টিং মনে হয়, বইয়ের লেখাটা সে তুলনায় একটু খটমটে৷ আহারে! লেখক যদি আরেকটু বর্ণনা দিতেন, পথে প্রান্তরে ঘোরাঘুরির বর্ণনা বা লেখার ভাষাটা যদি আরেকটু প্রাঞ্জল হতো! তাহলে আরও বেশি উপভোগ্য হতো৷ একটু সময় নিলেও দারুণ উপভোগ করেছি বইটা। কী সাংঘাতিক বিষয়! হারিয়ে যাওয়া নদীর খোঁজে একদল গবেষক ঘুরছেন পথে প্রান্তরে৷

পত্রিকা মারফত পাওয়া খবর অনুযায়ী, ভারত সরকার উদ্যোগ নিয়েছে সরস্বতীকে পুনর্জীবিত করার। পুরোটা নদী না পারুক, অন্তত যে সব স্থানে খাতগুলো খুঁজে পাওয়া গেছে সেগুলো পুনরুদ্ধার করা। আবার যাই পুরাণে, শাপমোচন হয়ে দেবী একটা সময় ফিরে যান স্বর্গে। তার আগে কতো শ'তো মানুষই না ভোগ করেছে দেবীর প্রসাদ। দেবী চলে গেছেন, রয়ে গেছে স্মৃতি। এখন দেখাই যাক, আধুনিক মানুষেরা স্বর্গ থেকে দেবীকে আবারও ফিরিয়ে আনতে পারে কি না। মানুষের মাঝে ফিরে আসুক হারানো সরস্বতী।


#বই_হোক_অক্সিজেন
#happy_reading
Displaying 1 of 1 review

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.