মুসলমান সেনাবাহিনী যখন একের পর এক যুদ্ধে খ্রিষ্টানদের হারিয়ে দিয়ে সিরিয়া পেরিয়ে ইউরোপের দিকে এগিয়ে যাচ্ছিল, তখন বাইজান্টাইন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস এক ধর্মযুদ্ধের ডাক দিলেন। সেনাপতি ভাহানের নেতৃত্বে বিশাল এক খ্রীষ্টান বাইজান্টাইন সেনাবাহিনী জমায়েত করে ফন্দি করলেন মুসলমান সেনাবাহিনীকে চিরতরে গুড়িয়ে দেবার। হঠাতই দৃশ্যপটে হাজির হলেন মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রাঃ)! অতঃপর...
🅓Born as an army brat and joined Bangladesh Army to become a Gunner Officer. 🅓Dived into the Bay of Bengal as a FROGMAN and played with IEDs as Bomb Disposal Expert. 🅓Patrolled the Chittagong Hill Tracts to evict the insurgents and traversed African savanna to witness the birth of South Sudan. 🅓An Army Staff College Graduate. 🅓A writer since childhood and a book author since 2015. 🅓Authored books on Military History, Historical Fiction, War Studies and translations. 🅓A few of the books became bestsellers and received an Army Medal as a contributing military writer. 🅓Writes regularly for various journals and a social media savvy.
মোটামুটি ভালোই লেগেছে। লেখার ধরণ ইতিহাসের পাঠ্যবই এর মতো। প্রচুর ও যথাযথ রেফারেন্স সংযুক্ত হিসাবে আছে। সে হিসাবে ঐতিহাসিক ইয়ারমূক যুদ্ধের উপর একটি টেক্সটবুক হিসাবে যথার্থ।
শুরুতে ভেবেছিলাম ইতিহাস আশ্রিত উপন্যাসের ধাচে লেখা হবে। সেহিসাবে আশাহত হয়েছি। আরেকটু রসকষ যুক্ত করলে পড়ে আনন্দ পাওয়া যেতো। একটানা যুদ্ধের বর্ননা ও ঘটনার বিবরন না লিখে যদি চরিত্রগুলোর কথোপকথনের মাধ্যমে গল্প এগিয়ে যেতো তাহলে নিঃসন্দেহে আরও সুখপাঠ্য হতো।
❛মুসলমান সেনাবাহিনী যখন একের পর এক যু দ্ধে খ্রিষ্টানদের হারিয়ে সি রি য়া পেরিয়ে ইউরোপের দিকে ধেয়ে যাচ্ছিল, তখন বাইজাইন্টাইন রোমান সম্রাট হেরাক্লিয়াস ইসলামের এই অগ্রাভিযানকে থামাতে এক ধর্মযু দ্ধের ডাক দিলেন। সেনাপতি ভাহানের নেতৃত্বে বিশাল এক খ্রিষ্টান বাইজাইন্টাইন সেনাবাহিনী জমায়েত করে ফন্দি করলেন মুসলমান সেনাবাহিনীকে চিরতরে গুড়িয়ে দেবার। হঠাতই দৃশ্যপটে হাজির হলেন, মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা:).....❜
খালিদ ইবনে ওয়ালিদকে বলা হয় ❛সাইফুল্লাহ বা সাইফুল্লাহ আল মাসলুল❜, যার অর্থ ❛আল্লাহর তরবারি❜। বাইজাইন্টাইন বাহিনীর সাথে যু দ্ধে নিশ্চিত পরাজয় থেকে রক্ষা করে এনেছিলেন খালিদ। মহানবী (স:) এই কৃতিত্বের কথা জেনে এই উপাধি দিয়েছিলেন। প্রায় ১০০ টিরও বেশি সমরে অংশ নেয়া খালিদ বিন ওয়ালিদ (রা:) আজীবন ছিলেন অপরাজিত। সেনাবাহিনীতে খালিদের নেতৃত্ব মানে শিবিরে অন্যরকম এক চাঙা ভাব। ইতিহাসের অন্যতম ছোটো সেনাদল নিয়েও দারুণ সব ক্যাভালরি কৌশলের মাধ্যমে প্রতিপক্ষ শিবিরের বিশাল সংখ্যাকেও বুড়ো আঙুল দেখিয়ে দেয়ার মতো দক্ষতা ছিল। ইতিহাস এজন্য খালিদকে মনে রেখেছে সেরা এক সেনাপতি হিসেবে। মহানবী (স) এর ওফাতের পর অনেক রাজ্য ইসলাম পরিত্যাগ করে ফের মূর্তিপূজায় মগ্ন হয়েছিল। ফলে বিদ্রোহ শুরু হয়, প্রতিপক্ষের আক্রমণের সম্ভাবনা বেড়ে যায়। যোগ্য নেতৃত্ব এবং সুকৌশলের দ্বারা খালিদ সে সমস্ত যু দ্ধ পরিচালনা করে মুসলিম বাহিনীকে কাঙ্খিত জয় উপহার দেন। ইতিহাসে ❛ইয়ারমুক যু দ্ধ❜ দারুণ ঘটনাবহুল এক আখ্যান। যার মাধ্যমে রোমান-বাইজাইন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের শুরু হয়। এই যু দ্ধে আবু উবায়দার নেতৃত্বে এবং খালিদের মোবাইল গার্ডের অভূতপূর্ব নৈপুণ্যে মুসলিম বাহিনী সংখ্যালঘু হয়েও বিজয় মালা পড়েছিল। হেরাক্লিয়াস যখন তার একের পর এক কূটকৌশল অবলম্বন করেও কিনার করতে পারছিল না তখন এক লোক দেখানো আপোসের নামে মুসলিম বাহিনীকে ধাওয়া করে কোনঠাসা করার ফন্দি করে। কিন্তু খালিদের ধূর্ততা এবং বুদ্ধির কাছে এই পরিকল্পনাও ভন্ডুল হয়। অবশেষে যু দ্ধ ছাড়া আর কোনো রাস্তা খোলা থাকে না। বাইজাইন্টাইন প্রায় ১-৪ লাখ সৈন্যের বিপরীতে মুসলিম বাহিনী ছিল সর্বসাকুল্যে ২৪-৪০ হাজার। এই অসম দৈরথে টিকে থাকাই অকল্পনীয়। তবুও এক বীর প্রতাপে মুসলিম বাহিনী এগিয়ে গেছে। এমনকি প্রয়োজনে নারীরাও রণাঙণে ভূমিকা রেখেছিলেন। যেমন, আবু সুফিয়ানের স্ত্রী হিন্দ। যখনই মুসলিম শিবিরে চিন্তা, পরাজয়ের আশঙ্কা দেখা গেছে তখনই মুসলিম বাহিনীর নেতারা বুদ্ধির মাধ্যমে সে সমস্যা সমাধান করেছেন। ইয়ারমুক নদীর প্রান্তরে প্রায় ছয়দিন ব্যাপী হওয়া এই যু দ্ধে বাইজাইন্টাইন বাহিনী তাদের সর্বোচ্চ দিয়ে চেষ্টা করেও খালিদ বাহিনীকে দমাতে পারেনি। বিভিন্ন দিক থেকে হুটহাট আক্রমণ, বিপক্ষ শিবিরের সম্ভাব্য চাল আগে থেকেই ধারনা করা সহ অচিন্তনীয় সব আক্রমণের মাধ্যমে তাদের জয় নিশ্চিত করেছিল। ৬৩৬ খ্রিষ্টাব্দের ১৫-২০ আগস্ট পর্যন্ত সংঘটিত এই যু দ্ধে শুরু থেকেই খালিদের বিচক্ষণতায় মুসলিম বাহিনী সুবিধাজনক অবস্থানে ছিল। শিবির স্থাপন থেকে শুরু করে খাবার পানির ব্যবস্থাতেও তাদের নিপুণতার প্রমাণ মিলেছে। আপনি ❛দ্য ব্যাটেল অব লস্ট আইজ❜ নামের সাথে পরিচিত? কথাটা এসেছে ইতিহাসখ্যাত ইয়ারমুকের যু দ্ধ থেকেই। যু দ্ধের চতুর্থ দিন বাইজাইন্টাইন বাহিনীর তিরন্দাজদের আক্রমণে মুসলিম বাহিনীর প্রতি ৭০০ জনে একজন তাদের চোখ হারিয়েছেন, যাদের মাঝে আবু সুফিয়ানও ছিলেন। এই ঐতিহাসিক রণের ইতি হয়েছিল রোমান-বাইজাইন্টাইন সাম্রাজ্যের পতনের মাধ্যমে। ক্ষুদ্র বাহিনী নিয়ে ময়দানে লড়ার জন্যে যে কৌশল এবং একাগ্রতা প্রয়োজন তা সবার মধ্যে আনতে বড়ো প্রভাবক হিসেবে কাজ করেছিলেন খালিদ বিন ওয়ালিদ। এত জয়জয়কারের মাঝেও সুযোগ্য এই নেতাদের মাঝে মতের অমিল ছিল। খলিফা উমর (রা) এর সাথে খালিদের এক ঠান্ডা যুদ্ধ চলতো। এর কারণ হিসেবে অনেকেই খালিদের রিদ্দাহ যু দ্ধের বিশেষ এক ঘটনাকে দায়ী করেন। খলিফা হওয়ার পর উমর (রা) বাহিনীর নেতৃত্ব দেন আবু উবায়দাকে। খালিদ এই সিদ্ধান্তকে মেনে নেয়। আল্লাহর তরবারি উপাধি প্রাপ্ত সেনাপতি একদা অমুসলিম ছিলেন এবং মুসলিমদের বিপক্ষে রণে অংশও নিয়েছিলেন! ইতিহাস বলে ইয়ারমুক যু দ্ধ পৃথিবীর ইতিহাসে অন্যতম ঘটনাবহুল এবং ফলাফল নির্ধারনী যু দ্ধ। হেরাক্লিয়াসের বাহিনীর জয় হলে বর্তমান পৃথিবী ঠিক কতটা ভিন্ন বা অচেনা হতো তা ইতিহাসবিদরাও কল্পনা করতে পারেন না!
পাঠ প্রতিক্রিয়া:
❝ইয়ারমুক যু দ্ধ❞ মেজর মোঃ দেলোয়ার হোসেন (ডেল এইচ খান) এর মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদকে নিয়ে লেখা ইতিহাসের এক বই। বইতে লেখক খালিদ (রা) এর বীরত্ব এবং মুসলিম বাহিনীর ইয়ারমুক যু দ্ধ জয়ের কাহিনী সংক্ষিপ্তভাবে তুলে ধরেছেন। দশটি অধ্যায়ে বিভক্ত বইটিতে লেখক খালিদের সংক্ষিপ্ত জীবনী এবং বাইজাইন্টাইনদের সাথে মুসলিম বাহিনীর যু দ্ধ শুরুর প্রেক্ষাপট আলোচনা করেছেন। ছয়দিন ব্যাপী হওয়া এই যু দ্ধের ঘটনাগুলো ভিন্ন অধ্যায়ে আলোচনা করেছেন।
রণাঙ্গনে ব্যবহৃত নানা কৌশল লেখক নিজস্ব ভাষায় বয়ান করেছেন। অর্থ বোঝার জন্য প্রতি অধ্যায়েই আলাদা টিকার মাধ্যমে বর্ণনা করেছেন। ইতিহাস যারা পড়তে পছন্দ করেন তাদের কাছে ৯৬ পৃষ্ঠার বইটি মন্দ লাগবে না। লেখক ঝারা বর্ণনা আকারে লিখেছেন বইটি। আমার মনে হয়েছে শুধু ব্যাখ্য, বর্ণনা ছাড়াও ঐতিহাসিক চরিত্রদের মাঝে কিছু সংলাপের উপস্থিতি থাকলে পাঠ অভিজ্ঞতা আরো ভালো হ��ো। টিকাগুলো পড়ার সময় সাহায্যকারী হিসেবে থাকলেও টিকার সিরিয়াল আর বর্ণনায় কিছু জায়গায় অমিল ছিল। এক টিকার নাম্বার আগের পৃষ্ঠায় হল��� এর মানে অন্য পৃষ্ঠায় লেখা হয়েছে।
প্রচ্ছদ, প্রোডাকশন :
এই বইটি প্রচ্ছদ দেখেই নেয়ার জন্য উদগ্রীব ছিলাম। বইটির প্রোডাকশন দারুণ। পুরো বই কালো ধূসরের অদ্ভুত সুন্দর কম্বিনেশনে তৈরি। ইতিহাস ভিত্তিক বর্ণনা বোঝার সুবিধার্থে ছক, ম্যাপ, ছবির রঙিন ব্যবহার ছিল দারুণ। তবে বইতে সম্পাদনার ঘাটতি ছিল ব্যাপক।
মহাবীর খালিদ বিন ওয়ালিদ ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.) এর একজন সাহাবী এবং সাইফুল্লাহ আল-মাসলুল উপাধি প্রাপ্ত। মিসরের খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও ঐতিহাসিক আববাস মাহমুদ আল-আক্কাদ ‘আবকারিয়াতু খালিদ’ নামক গ্রন্থে তাঁর সামরিক ব্যক্তিত্বের পর্যালোচনা করে বলেন, ‘সামরিক নেতৃত্বের সব গুণাবলীই খালিদ (রাঃ)-এর মধ্যে ছিল। বাহাদুরী, সাহসিকতা, উপস্থিত বুদ্ধি, তীক্ষ্ম মেধাসম্পন্ন, অত্যধিক ক্ষিপ্রতা এবং শত্রুর উপর অকল্পনীয় আঘাত হানার ব্যাপারে তিনি ছিলেন অদ্বিতীয়।
বইটি মূলত ইয়ারমুক যুদ্ধের সুনিপূন বর্ণনা এসছে, বেশি ভাললেগেছে বর্তমানে সমরবিদ যে ধরনের স্ট্রাটিজিক শব্দ ব্যবহার করে যুদ্ধের বর্ণনাতে ঠিক সেভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। মনযোগ দিয়ে পড়লে একসময়ই নিজেকে মনে হবে নিজেই যুদ্ধক্ষেত্রে উপস্থিত থেকে স্বচক্ষে যুদ্ধটি অবলোকন করছি।
মিলিটারী দৃষ্টিভঙ্গিতে যুদ্ধের ট্যাক্টিক্যাল অ্যানালাইসিস, সাথে গল্প বলার ঢংটা ঠিকঠাক ছিলো। সেজন্য কাঠখোট্টা বিষয়ও পড়তে ভালো লেগেছে। একটাই আক্ষেপ বইটা আরো বড় কেনো হলো না।
১০০টিরও বেশি যুদ্ধে অংশগ্রহণের পরও ছিলেন আমৃত্যু অপরাজিত। যুদ্ধের ময়দানে তার পা পড়েছে মানেই বিজয় সুনিশ্চিত। সিংহের চেয়ে অদম্য সাহসী আর তরবারির চেয়ে ধারালো তার মস্তিষ্ক। কখনো শত্রু শিবিরে বসেই বাঘের হুংকার ছুড়েছেন আবার যুদ্ধের ময়দানে শত্রুকে পরিণত করেছেন বন্ধুতে। তিনি পৃথিবীর ইতিহাসের শ্রেষ্টতম সেনাপতি খালিদ ইবন ওয়ালিদ।
মুসলিম অার্মির চেয়ে পাঁচ-দশগুণ বড় বাইজান্টাইন বাহিনী ইয়ারমুখের প্রান্তরে এসে নাকানিচুবানি খেয়েছে খালিদের একের পর এক কৌশলে।
লেখক ইয়ারমুখ যুদ্ধের বর্ণনা এমনভাবে উপস্থাপন করেছেন যেন মনে হলো মুভি দেখছি। ইয়ারমুখ যুদ্ধে নারীযোদ্ধাদের অংশগ্রহণের তথ্যটির জন্যে লেখককে ধন্যবাদ।