Datta is one of the most popular novels by Sharat Chandra Chattopadhyay. It is a romantic novel set in Victorian Bengal with a backdrop of Bengali society fragmented into Hindu and Brahmo (Brahma Samaj). The main story revolves around the relationship between an affluent Brahmo woman and a brilliant but indigent young Hindu. Sarat Chandra Chattopadhyay is a Bengali legendary Novelist of 20 Century. He was born on September 15, 1876, at Debanandapur village in the Hooghly district. He was the second child of his parents. His father’s name was Matilal Chattopadhyay and mother’s name was Bhubanmohini. Sarat grew up in his maternal grandparents’ home at Bhagalpur. His childhood was spent in dire poverty because his father was an idler and paid little attention to sustain his five children. The Author died on 16 January 1938. His best novels are Palli Samaj (1916), Charitraheen (1917), Devdas (1917), Nishkriti (1917), Srikanta in four parts (1917, 1918, 1927 and 1933), Griha Daha (1920), Sesh Prasna (1929), Sesher Parichay published posthumously (1939), Pather Dabi, Biraj Bou, Nishkriti, Ovagir Swargo, Grihadaha, Chandranath etc.
Sarat Chandra Chattopadhyay (also spelt Saratchandra) (Bengali: শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) was a legendary Bengali novelist from India. He was one of the most popular Bengali novelists of the early 20th century.
His childhood and youth were spent in dire poverty as his father, Motilal Chattopadhyay, was an idler and dreamer and gave little security to his five children. Saratchandra received very little formal education but inherited something valuable from his father—his imagination and love of literature.
He started writing in his early teens and two stories written then have survived—‘Korel’ and ‘Kashinath’. Saratchandra came to maturity at a time when the national movement was gaining momentum together with an awakening of social consciousness.
Much of his writing bears the mark of the resultant turbulence of society. A prolific writer, he found the novel an apt medium for depicting this and, in his hands, it became a powerful weapon of social and political reform.
Sensitive and daring, his novels captivated the hearts and minds of thousands of readers not only in Bengal but all over India.
"My literary debt is not limited to my predecessors only. I'm forever indebted to the deprived, ordinary people who give this world everything they have and yet receive nothing in return, to the weak and oppressed people whose tears nobody bothers to notice and to the endlessly hassled, distressed (weighed down by life) and helpless people who don't even have a moment to think that: despite having everything, they have right to nothing. They made me start to speak. They inspired me to take up their case and plead for them. I have witnessed endless injustice to these people, unfair intolerable indiscriminate justice. It's true that springs do come to this world for some - full of beauty and wealth - with its sweet smelling breeze perfumed with newly bloomed flowers and spiced with cuckoo's song, but such good things remained well outside the sphere where my sight remained imprisoned. This poverty abounds in my writings."
এ এমন এক কালজয়ী উপন্যাস যা সময়ের বলিরেখাকে উত্তীর্ণ করেছে বহু আগেই। দত্তা বহুচর্চিত এক গল্প। আসলে গল্পের বাঁধন মানুষের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলে তবেই সার্থকতা লাভ করে। ভাবলে বিস্মৃত হতে হয় যে অত যুগ আগে শরৎচন্দ্র বাবু এরকম ভাবে সময়ের অকাল ক্ষতকে তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলেছেন।
আমি মনে করি বিজয়ার চরিত্র আজকের আধুনিকার অন্যতম দিক। কথায় বলে জীবনসঙ্গী নির্বাচনের ক্ষেত্রে নিজের মনের কথা শোনা উচিত, তবে কথা শুধু কথাই বাস্তবে তা মূল্যহীন। এই উপলব্ধিটাই আরও সুদূর ভাবে এই উপন্যাসেই বোঝা যায়। সমাজ, আত্মীয় সর্বোপরি নিজের কাছেই নিজের অস্পষ্টতা যেন আষ্টেপৃষ্টে বেঁধে রাখে একজন নারীকে তা সে আধুনিকাই হোক বা গ্রাম্য তরুণী। বিজয়ার প্রতি মাঝে মাঝে করুণার উদ্রেক ঘটে আসলে ছোট বয়সে ভাগ্যের আঘাতে নিয়তির যে বাঁধা পথ তৈরী হয়েছে তার জন্য তা ভেদ করে বেরিয়ে আসা কঠিন এবং দুঃসহ। তার উপর মনের মানুষ টাই যদি মনের কথা না বুঝতে তবে বুঝি সেই মেয়েটির মত অভাগা আর কেউ হয় না।
যারা নিয়মের বেড়াজালে সত্যকে বেঁধে রাখে তাদের মধ্যে অন্যতম বিলাসবিহারী। ধর্ম পালনকর্তা যদি নিজে সঠিক পথে ধাবিত হয় তবে ধর্ম আপনা আপনিই চলবে। কারণ ধর্ম জোর করে চাপিয়ে দেবার জিনিস নয়, এ হল অন্তরের গভীরে থাকা একধরনের বিশ্বাস যা বাইরে থেকে উৎখাত করলেও ভিতরে তা ঠিকই থাকে।
সত্যি বলতে কী নরেনের উপর রাগই হবে, সে আত্মভোলা মানুষ তবে ভালোবাসা কিন্তু আত্মভোলা নয়, সে তার অধিকার ঠিক আদায় করেই ছাড়ে । ভালোবাসা কী কোনোকিছুর আজ্ঞাবহী দাস? যে সে সর্বদা অনুমতি নিয়ে অন্দরমহলে প্রবেশ করবে? সে তো ঝোড়ো হাওয়ার মত উদাসীন তাই বোধ করি মাতালের মত মাতিয়ে রাখে মানুষকে।
সত্যের নগ্ন রূপ যতই কুৎসিত হোক না কেন তা একদিন সামনে আসবেই। সত্য শুধু মুখের কথা নয় এ হল অন্তরের উপলব্ধি যা নতুন দৃষ্টিকোণ থেকে মানুষকে দেখতে সাহায্য করে। এ প্রসঙ্গে শরৎচন্দ্র বাবুর অনুভূতি কত প্রখর তা বোঝা যায় যখন নলিনী নরেনের কথাগুলো দয়ালবাবুকে বলছেন,
” সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোনো জিনিস কখনো সত্যি হয়ে ওঠে না। তবুও তাকে যারা সকলের অগ্রে, সকলের উর্ধ্বে স্থাপন করতে চায়, তারা সত্যকে ভালোবাসে বলেই করে না, তারা সত্যভাষণের দম্ভকেই ভালোবাসে বলে করে।”
I always read and reread Datta with the deepest pleasure. The idyllic Bangla grammo backdrop, the noble ideals of an aspiring age, the underlying flaws and intrigues... the lovely, rich heroine who is caught between the demands of duty and the claims upon her heart... the extraordinarily intelligent and utterly unworldly hero... Oh, I fell in love with Naren as a youngster and I find him irresistible still. There is something of Dostoevsky's Myshkin in Naren's character... the same straightforwardness, guilelessness, and sincerity. He's almost too good, too free spirited for this world. And yet, Naren can be endearingly devious and demanding. I love the scenes where Bijaya and Naren interact. She can be such a whimsical little tyrant and yet, her love for him comes across so clearly. And, he can be so exasperating in his blindness... in his self-denial. I like the other characters too... the wily and wicked Rashbehari, the avuncular Dayal, the friendly Nalini. Also, Bilaash. He is the surprise package of the story.
Sarat Chandra Chatterjee is a master storyteller. In his hands, a simple plot line becomes a beautiful and unforgettable love story.
হুগলি ব্রাঞ্চ স্কুলের ত্রিরত্ন বলে পরিচিত ছিল জগদীশ, বনমালী এবং রাসবিহারী। স্কুল থেকে তাদের তিনজনের বাড়িই ছিল বহুদূরে, সেখান থেকে হেঁটে তারা আসতো স্কুলে। তিনজনের মধ্যে এতোটা গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছিল, স্কুলের পথের ন্যাড়া বটগাছকে সাক্ষী রেখে তারা শপথ করে বসে তিনজনের কেউ কখনো কারো থেকে আলাদা হবে না, কেউ জীবনে বিয়ে করবে না এবং তিনজনে টাকা রোজগার করে ভবিষ্যতে তা দিয়ে দেশের মঙ্গল করবে।
কিন্তু সময়ের স্রোতে সবকিছুর সাথে সাথে তাদের শপথের জোরও মলিন হয়ে যায়। বনমালী এবং রাসবিহারী ব্রাহ্মধর্ম গ্রহণ করে ব্রাহ্ম-পরিবারেই বিয়ের কাজ সম্পন্ন করে। কিন্তু জগদীশ তা না করে আগের জীবনে স্থায়ীভাবে থিতু হয়ে যায়, একসময় আইন পাশ করে অতঃপর এক ব্রাহ্মণকন্যাকে বিয়ে করে এলাহাবাদে গিয়ে সংসার পাতে। অন্যদিকে - ব্রাহ্মধর্মের অনুসারীদের চালচলনের প্রতি গ্রামের মানুষের বিতৃষ্ণার মুখে বনমালী গ্রাম ছেড়ে কলকাতায় গিয়ে বসবাস শুরু করেন ; আর রাসবিহারী রয়ে যায় গ্রামেই এবং বনমালীর বিষয়-আশয় দেখাশোনার ভার তার উপর পড়ে।
পঁচিশ বছর পরের কথা। তাদের সকলের বয়স হয়েছে বেশ। এরই মধ্যে স্ত্রী মারা গিয়েছে জগদীশের, এককালের তীক্ষ্ণ মেধাবী মানুষটি স্ত্রীর শোকে মদ্যপান করে নিজের স্বাস্থ্য ও সম্মান দু'টিই হারিয়ে নিজেও গত হয়েছেন। কেবল রয়েছে তার পুত্র নরেন। বাবার কারণে যে এখন সকলের কাছে এমনকি বাবার বাল্যবন্ধু রাসবিহারীর কাছেও চক্ষুশূল। কিন্তু বনমালী আজীবন স্নেহ করে গিয়েছেন নরেনকে। মৃত্যুশয্যায় মেয়ে বিজয়াকে তিনি বারবার বলে যান তার বাল্যকালের বন্ধুর স্মৃতির প্রতি যেন সবসময় তার মেয়ে শ্রদ্ধা বজায় রাখে এবং আভাস দিয়ে যান তার শেষ ইচ্ছে তার মেয়েটি যেন নরেনকে আপন করে নেয়।
এদিকে ছোটবেলা থেকে পরস্পরকে চেনা-জানার মাধ্যমে বিলাস তথা রাসবিহারীর ছেলেকে নিজের ভবিষ্যত স্বামী বলে মনে মনে মেনে নিয়েছিল বিজয়া। বিলাস এবং রাসবিহারীর মুখে শুনে তার নিজেরও নেতিবাচক ধারণা জন্মেছিল নরেনের ব্যাপারে। কিন্তু কলকাতা থেকে নিজের বিষয়-আশয় চোখে দেখার জন্য যখন সে গ্রামে গেলো কিছুদিনের জন্য, তখন চোখের সামনে নরেনকে দেখতে পেয়ে - পরবর্তীতে তার সাথে কিছুদিন আলাপের পর সে বুঝতে পারলো মানুষটিকে সে যা ভেবেছিল মোটেই তা নয়। হঠাৎ এক আচমকা ঝড়ের মতো সে দুর্বল হয়ে পড়লো মানুষটির প্রতি। অথচ রাসবিহারী ও তার ছেলে উঠেপড়ে লেগেছে বিজয়াকে হাত করার জন্য। আবার দিন-রাত বাবার শেষ ইচ্ছেটাও কানে বাজছে বিজয়ার।
পাঠ-প্রতিক্রিয়াঃ
শরৎবাবু আমার সবসময়ের একজন পছন্দের লেখক। তার লেখা যখন আমি পড়া শুরু করি তখন সদ্য হাইস্কুলের ছাত্রী আমি। কঠিন আবেগের বয়স, যা পড়তাম তাতেই সুখে-দুঃখে-অসীম আবেগে উদ্বেলিত হয়ে যেতাম। সেই সময়ের সুবাদেই বলা যায় - তিনি আমার মনে একটি চিরস্থায়ী জায়গা দখল করে নিয়েছিলেন। যা আজ এতো বছর পরেও অটুট রয়েছে।
আগে থেকেই শরৎবাবুর বেশ কয়েকটি লেখা আমার ভালো-লাগার তালিকায় ছিল। তার সাথে নতুনভাবে যুক্ত হলো "দত্তা"। লেখকের অনেক উপন্যাসে শক্তিশালী নারীচরিত্র আজও সকলের কাছে উজ্জ্বল আদর্শ। বিজয়া সেরকম একজন চরিত্র। পুরো উপন্যাসজুড়ে তার অনুভূতিগুলো ভীষণ নাড়া দিয়ে গিয়েছে মনে - তার রাগ, দুঃখ, ভালোবাসা, দ্বিধার দোলাচল, কখনো-সখনো ছেলেমানুষি, তার সাহস, চঞ্চলতা। আর নরেন চরিত্রটিকে আমি নিজেই ভালোবেসে ফেলেছি।
মানবমনের শুদ্ধতম অনুভূতি এবং চিরায়ত ভালোবাসাকে শরৎবাবু তার উপন্যাসগুলোতে অসম্ভব সুন্দর রূপে প্রকাশ করেছেন। তার প্রতিটি বই পড়ার পর মুগ্ধতা আগের চেয়ে বেড়ে যায়।
'যাহাকে নির্বোধ বলিয়া গালি দিলে লুকাইয়া হাসে, এবং শ্রদ্ধায় কৃতজ্ঞতায় তদগত হইয়া প্রশংসা করিলে কাঁদাইয়া ভাসাইয়া দেয়, এমন অদ্ভ���ত প্রকৃতির জীবকে লইয়া সংসারের জ্ঞানীলোকের সহজ কারবার চলে কি করিয়া!'
দত্তাকে শুধু প্রেমের উপন্যাস বললে এ লেখার যথার্থ মূল্য দেওয়া হয়না। এর ব্যপ্তি মানুষের মনজগতের সবটা জুড়ে। তাতে প্রেমের জায়গা যেমন সত্যি, তেমনি সত্যি লোভ-লালসা, নিচুতা, অহংকার। তৃতীয় পুরুষে লেখা এ উপন্যাসের কেন্দ্রে আছে বিজয়া। বাবা মাকে হারিয়ে পলোকগত বাবার বিশাল জমিদারিত্বের সব এসে পরে নিজের কাঁধে। অর্থ আর প্রতিপত্তির লোভে তাকে টেনে আনা হয় যে ভূমিতে সেখানে সে জীবনের ১৮ বছরে আসা হয়নি একটিবারও। এ গ্রাম থেকেই একদিন ব্রাহ্ম ধর্মে দীক্ষা নেওয়ার অপরাধে চলে যেতে হইয়েছিল তার বাব-মাকে। এতদিন পরে সেখানে এসে অচেনার সাথে মানিয়ে নেওয়া, জমিদারিত্বের অলিগলি চিনে নেওয়া আর সদ্য তরুণী বিজয়ার মানুষের আলো আর অন্ধকারের সাথে পরিচয়ের মধ্যে দিলেই উপন্যাসের কাহিনী এগিয়ে চলে।
এ গ্রামে এসেই দেখা মেলে নরেনের। দেখা মেলে বিলাস, রাসবিহারীদের সাথে। এমন সুন্দর করে লেখা তাদের বর্ণণা, এমন মিষ্টি কিছু আলাপ আর তার মাঝে থেকে থেকে দেখা মেলে মানুষের কদঅর্যতার। মুগ্ধ হয়ে পড়েচি নরেনের চরিত্রকে। কেমন শুভ্র একটা মানুষ। অবাক হয়ে দেখেছি আঠারো বয়সী বিজয়ার সত্য, সমাজ, সংস্কারের সাথে টানাপোড়েন।
কি ভীষোণ ভালো লাগায় ছেয়ে গেলাম বইটা পড়ে! শেষ করে শুধু মনে হলো, আর কটা পাতা যদি আরো পড়তে পারতাম ওদের গল্প! ইশ!
শেষের দুই পাতা পড়ার আগ পর্যন্ত এক বিরহ ভাবনা চিন্তা-চেতনা কে গ্রাস করে রেখেছিলো, পাঠক হিসেবে আমি লিবারাল, স্যাড হ্যাপি যেকোনো ক্লাইম্যাক্সই মেনে নিতে পারি কিন্তু কেনো জানি এই উপন্যাসের জন্য একটা ভালো সমাপ্তি মনে মনে আশা করছিলাম এবং তাইই হলো। শরৎচন্দ্রের লেখার মাঝে গ্রাম বাংলার প্রকৃতি এতো সুনিপুনভাবে ফুটিয়ে তোলা হয় যেনো জীবন্ত লাগে সব। খুব ভালো লাগলো। বোধহয় আরো আগেই পড়া উচিৎ ছিলো।
I loved this story. This is the story where a girl named as Vijaya follows the promise of her father. The story also represents the cultural disturbance of that time. She faced many discrimination and taunting from the people, but still she didn't move from it. I loved the powerful character of Vijaya. This is a translated version and due to this I have noticed that this book has many grammatical mistakes.
This is a small book, which you can finish in a day.
শরৎচন্দ্রের এমন চমৎকার সৃষ্টি 'দত্তা'! এই মাঝরাতে পড়ে শেষ করলাম। বিজয়াকে আমার ভীষণ ভালো লাগলো, সেকালে মাত্র অষ্টাদশী এক তরুণী কেমন দৃঢ়চেতা! নরেন, ভীষণ আত্মমগ্ন যুবক, সেও এক ভালো লাগার জায়গা নিয়েছে। ১০০ পাতায় গিয়ে বারবার ভাবছিলাম,কি হবে এরপর! অতঃপর গল্পের সমাপ্তিই মন ভালো করে দিলো! সমাজ যা, সমাজের মানুষ যা, শরৎচন্দ্র ঠিক তাই লেখে। মন ছুঁয়ে যাওয়া বই এটা!
বাংলা চলচিত্রের কাহিনীকাররা বোধহয় সবচেয়ে বেশি অনুপ্রেরণা পেয়েছেন শরৎচন্দ্রের উপন্যাস থেকে। তার দত্তা উপন্যাসের সাথে প্যানপেনানি সস্তা বাংলা ছবির খুব কোন পার্থক্য নাই। স্পয়লারসহ এবার একটু কাহিনী বলা যাক। খলনায়ক রাসবিহারী খুব ধূর্ত, তিনি ভিলেন ব্যক্তি; নায়ক নরেন সহজ-সরল ছেলে। এমন কাহিনীতে শেষটায় নায়কের জয় হবে ধরেই নেওয়া যায়। যদিও বিজয়ীদের পক্ষ থেকে বীরোচিত কিছু আশা করছিলাম। হয় নাই। চরিত্রগুলোর সাথে বাস্তবতার কোন মিল নাই। নরেন আলাভোলা ছেলে, কিন্তু স্টুপিড নয়; বিজয়া যে তাকে পছন্দ করে সেটা বিজয়া কারণে অকারণে তাকে বুঝিয়ে দেয়। কিন্তু হয় নরেন বোঝে না, নয়তো উল্টা বোঝে। বিলাসের অভদ্র-অশোভন আচরণকে বিভিন্ন কাল্পনিক যুক্তি দ্বারা খণ্ডন করে বিজয়া সেগুলোকে বৈধ করে তুলতে চায়, মনের কষ্ট ভুলে সম্পর্কের ভাঙা কাচ জোড়া লাগায়; এসব যুক্তিগুলা পাঠককে কনভিন্স করতে লেখকের দুর্বল ব্যর্থ চেষ্টা, এগুলা ভূগোল বুঝিয়ে সাসপেন্স তৈরি করে উপন্যাস দীর্ঘায়িত করার ধান্দা। কাহিনী যখন শুরু হয়, নরেন-বিজয়ার তখন শিক্ষিত, প্রাপ্তবয়স্ক; কিন্তু তারা যেন জীবনের অতিবাহিত বছরগুলো থেকে কিছুই শেখে নাই, পৃথিবীর মানুষের কুটিল চিন্তাধারা সম্পর্কে তারা অবহিত না, রাসবিহারীর কপট অভিনয় তারা কিছুই বুঝতে পারে না, ক্লান্তিহীন রাসবিহারীর বিরক্তিকর বকবক তাদের কাছে কমফোরটিং মনে করে... খুব পেইনফুল উপন্যাস। পড়তে গেলে মাথা যন্ত্রণা করে।
শরত চন্দ্র সবসময়েই প্রিয়। একদম সেই ছোটবেলা থেকে যখন বাংলা বইয়ে তাঁর ছোটগল্প গুলো পড়তাম তখন থেকেই । দত্তা উপন্যাসটির নামও অনেক আগেই শোনা। আকাশ বাংলায় ধারাবাহিক নাটক ছিল একটা এই উপন্যাসের উপর নির্ভর করে। নাটকটির কিছু স্মৃতি এখনও মনে আছে। বইয়ে সবকিছু ঠিক থাকলেও শেষের দিকে যেয়ে মনে হয়েছে একটু তাড়াহুড়ো করে শেষ করা। সকল চরিত্রের সমাপ্তি টানায় যেন একটা অপূর্ণতা। তাই ৫ তারা দিতে গিয়েও পারলাম না।
▪️দত্তা: অনুবীক্ষণ যন্ত্র যে গল্পে বিজ্ঞানের নয় প্রেমের অনুঘটক হয়ে উঠেছিল...
“ যেদিন বুঝবে রূপটাও মানুষের ছায়া, মানুষ নয়, সেইদিনই শুধু ভালবাসার সন্ধান পাবে।” ------ শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়।।
১৯১৮ সালের ভারতীয় সমাজের সেই সময়টা, যে সময়ে নারী স্বর পেলেও তার মুক্তবাণী উচ্চারণ করা প্রায় অসম্ভব ছিল। সেই সমাজের ক্লান্ত নীরব প্রান্তরে, প্রত্যেক সম্পর্কের ছায়ায় লুকানো নিয়ম, মর্যাদা আর অসম্পূর্ণ স্বপ্নের মহড়ায় শরৎচন্দ্রের কলমের ছোঁয়ায় পাঠকের দুয়ারে হাজির হয় দত্তা। যেখানে অচেনা হৃদয়ের আবেশে স্বপ্নেরা নাচে অদৃশ্য পাঁজরের গহীনে, আবদ্ধ চোখের তরে তরে উঁকি দেয় ভালোবাসা আর প্রতিটি অশ্রুত ধ্বনি বুনে দেয় সময়ের মলিন বর্ণমালা।
পূর্ণস্ফীত বন্যার স্রোতের মতো যে উপন্যাসের কাহিনি আমাকে ভাসিয়ে নিয়ে গেল, সে নির্মল অনুভবের স্রোতের হদিস দিতে হজির হলাম আজ। চলুন তবে আমরা রুদ্ধশ্বাসে ভেসে যাই সাহিত্যের পাতায়, এক অপরাজেয় সুরে নেচে উঠা অম্লান স্বপ্নের খণ্ডচিত্রে।
.
❍ গ্রন্থভাষ্য....
নরেন ও বিজয়ার প্রেম এই উপন্যাসের হৃদস্পন্দন হলেও, তার আড়ালে ধীরে ধীরে উন্মোচিত হয়েছে তৎকালীন সমাজ ও পারিবারিক জটিল টানাপোড়েন। ব্যক্তিগত অনুভূতির সঙ্গে সামাজিক দায়, অভিভাবকত্ব, প্রতিশ্রুতি আর নীরব কর্তব্য সব মিলিয়ে এই কাহিনি বাংলা সাহিত্যের বহুচর্চিত ধারার এক অনিবার্য নাম।
▪️সহজ দৃষ্টিতে যদি এর কাহিনি সংক্ষেপ বলতে যাই তো উপন্যাসের প্লটটি ছিল....
ছেলেবেলার বন্ধু জগদীশ ও রাসবিহারী দু’জনেই একসময় বনমালীকে চিঠি লিখেছিলেন, তাঁদের ছেলের সঙ্গে বনমালীর কন্যার বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। ঘটনাক্রমে বনমালীর প্রয়াণে তার কন্যা বিজয়ার অভিভাবক হয়ে ওঠেন রাসবিহারী এবং তাঁর ছেলে ভারতের সঙ্গে বিজয়ার বিয়েও ঠিক করে ফেলেন।
অপর দিকে জগদীশের পুত্র নরেন্দ্রর সঙ্গে পরিচয়ের পর ধীরে ধীরে বদলে যেতে থাকে বিজয়ার জীবনের সবকিছু। কথার ফাঁকে, দৃষ্টির আড়ালে, নীরব মুহূর্তে জন্ম নেয় এক গভীর আত্মিক টানের। যা এক সময় আকর্ষণকে ছাপিয়ে বোঝাপড়া আর সম্মানের বন্ধনে রূপ নেয়। একদিকে প্রতিশ্রুতির ভার অন্যদিকে হৃদয়ের ডাক, এই দ্বন্দ্বই উপন্যাসটিকে এগিয়ে নিয়ে যায় এক অনিবার্য প্রশ্নের দিকে।
▫️শেষ পর্যন্ত কি সামাজিক নিয়ম জয়ী হবে? ▫️নাকি হৃদয়ের সত্য পথ খুঁজে নেবে নিজস্ব মুক্তি?
.
❍ পাঠঅনুভূতি....
নির্মাণ কাঠামো ও চরিত্রচিত্রণের দিক থেকে দত্তা উপন্যাসটিকে অনেকেই শরৎ চন্দ্রের শ্রেষ্ঠ উপন্যাসগুলির একটি বলে মনে করেন। আবার দত্তাকে বহু পাঠক খুব সহজে ‘রোমান্টিক উপন্যাস’ এর তাকেই তুলে রাখেন। আপাত দৃষ্টিতে দত্তা পড়ে প্রথমে মনে হয় যেন এক চেনা রূপের প্রেমকাহিনি, জমিদারবাড়ির আড্ডা, ষড়যন্ত্রের ছায়া, নিষ্ঠুর অভিভাবক সব মিলিয়ে আজকের চোখে গল্পটি হয়তো নব্বইয়ের দশকের বাংলা সিনেমার মতো এক পরিচিত ছকের রূপ। তবে চোখ স্থির করলে, মন থমকে গেলে দেখা যায়, এই উপন্যাস আসলে প্রেমের আড়ালে দাঁড়িয়ে থাকা এক জটিল সমাজব্যবস্থার নির্মম পাঠ।
শরৎচন্দ্র কখনো কেবল হৃদয় লিখেননি। তাঁর প্রেমের চিত্রগুলোও ছিল সমাজের আকার আকৃতি বোঝার উপায়।
▫️দত্তার আরেকটি স্তর হলো ধর্ম ও সমাজের দ্বন্দ্ব। ব্রাহ্মণ সমাজের শৃঙ্খলা, আচার-অনুশাসন এবং গোঁড়ামি এগুলোকেই শরৎচন্দ্র প্রশ্নবিদ্ধ করেন। দুর্গাপূজা কিংবা বিজয়াকে মেম-সাহেব সম্বোধন সবকিছুতে তার তীক্ষ্ণ দৃষ্টি লক্ষ্য করা যায়। তিনি ধর্মের বিশ্বাস নয়, গোঁড়ামিকে মূল সমস্যা বলেছেন।
▫️আবার এখানে প্রশ্নটা কেবল জাতপাতেরও নয় এখানে আছে ব্রাহ্ম সমাজ বনাম ব্রাহ্মণ সমাজ, ধর্মীয় সংস্কার বনাম মানবিক যুক্তি আর সামাজিক মর্যাদার নামে আত্মসম্মান বিকিয়ে দেওয়ার প্রবণতা।
▫️ব্রাহ্ম সমাজের মানুষ হয়েও বিজয়া ও বিলাস বিহারীর দুর্গাপূজা হবে কি হবে না এই বিতর্ক নিছক ধর্মীয় দ্বন্দ্ব ছিল না। এই জায়গাগুলো বুঝতে গেলে উপন্যাসের ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট জানাও জরুরি। যা মূলত ১৮১৫ সালে রাজা রামমোহন রায়ের প্রতিষ্ঠিত আত্মীয় সভা থেকে ১৮২৮ সালে সে সভার ব্রাহ্ম সমাজে বিকাশ লাভ আর সেই সমাজের ভেতরেই জন্ম নেওয়া নতুন ধরনের দ্বন্দ্বে উঠে এসেছে।
.
❍ যবনিকাপাত....
দত্তা কেবল ইউটোপিয়ান স্বপ্নের মতো নরম কোমল কোন প্রেম কাহিনি নয়, শরৎচন্দ্রের কলমে এর প্রতিটি চরিত্র নিঃশব্দভাবে সমাজের ভারী চিলেকোঠা খুলে দেয়। দত্তা শেষ করার সঙ্গে সঙ্গে মনে হবে ঠিক এই মুহূর্তটুকুর জন্যই আমরা গল্পে ডুবে ছিলাম। বিজয়া ও নরেন্দ্রের নিঃশব্দ বোঝাপড়া, তাদের ছোট ছোট আবেগের স্পন্দন, সমাজের বাঁধা পেরোনোর সাহস আর নীরব ভালোবাসার যে মিষ্টতা তা সাহিত্যপ্রেমী পাঠকের মনে অমলিন দাগ রেখে যাবে।
শেষ মুহূর্তের ভালো লাগার আবেশে, যখন বই বন্ধ করেছি, তখন মনে হয়েছে গল্পটি শেষ করার পাশাপাশি সুখপাঠ্য আনন্দ আর তৃপ্তির অভিজ্ঞতা হাতে তুলে নিয়েছি। সব কথা বলা তো হলো , তবু মনে হচ্ছে আরও কিছু বলা বাকি। সেই না বলা অনুভবের জায়গা থেকেই দূরের বৃষ্টির হিম হাওয়ার মতো আপনাদের হৃদয়ে অপ্রত্যাশিত চমক দিতে এই উক্তিটি দিয়ে শেষ করছি------
“ নলিনী ঠিকই বুঝেছিল বিজয়া, কিন্তু আমি বিশ্বাস করিনি। আমার মত একটা অকেজো অপদার্থ লোককেও যে কারও কোন প্রয়োজন হতে পারে, এ আমি অসম্ভব বলে হেসে উড়িয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু সত্যিই যদি এই অসঙ্গত খেয়াল তোমার হয়েছিল, শুধু একবার হুকুম করনি কেন? আমার পক্ষে এর স্বপ্ন দেখাও যে পাগলামি বিজয়া! ”
⠀ ⠀ বনমালী,রাসবিহারী ও জগদীশ বাল্যকালের বন্ধু। একসাথে বিদ্যালয়ে যাওয়া আসা ছাড়াও পথের দ্বারে গাছের নিচে বসে চলতো তাদের ছেলেমানুষী কল্পনা। ছেলেমানুষী প্রতিজ্ঞা করার সময়টুকু পার করে তিনজনেই একসময় ব্যস্ত হয়ে নিজেদের জীবন ঘর সংসার নিয়ে। তাই বলে বন্ধুত্ব একেবারে শেষ হয়ে যায় নি। কালেভদ্রে একজন আরেকজনের খোঁজ নিতেন। ⠀ এদিকে বনমালী ও রাসবিহারী কিছুটা অবস্থাপন্ন হওয়ায় নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা একটু গাঢ় ছিল। যে সম্পর্ক আরো একটু জোরদার হওয়ার পথে এগোয় বনমালীর মেয়ে বিজয়া ও রাসবিহারীর ছেলে বিলাসের সম্পর্কের কারণে। অন্যদিকে জগদীশের নরেন্দ্র নামে একটি সন্তান আছে তবে ঋণগ্রস্থ পিতার বন্ধুদের সাথে তার কোন আলাপ ছিল না।⠀ জীবনের হিসাব নিকাশ চুকিয়ে কিংবা বাকি রেখে ওপারে চলে যায় দুই বন্ধু বন��ালী ও জগদীশ। বনমালীর গ্রামের বিশাল সম্পত্তি এসে পড়ে একমাত্র কন্যা বিজয়ার হাতে। এসব তদারকির জন্য রাসবিহারী তার পুত্র বিলাস ও ভাবী পুত্রবধূ বিজয়াকে নিয়ে গ্রামে আসেন। ⠀ গ্রামে এসে ব্যস্ত বিজয়া স্বাস্থ্যকর আলো হাওয়ার সাথে দেখা পেল এক নতুন মানুষের। যে মানুষটির খোলা মনের ব্যবহারে মনে হতে লাগলো তারা খুব পরিচিত। তবে বিলাসের এই লোকটিকে বড় উটকো মনে হতে লাগলো। এ নিয়ে বিজয়া ও বিল���সের সম্পর্কের অবনতি ঘটতে থাকে। তবুও একসময়ের বন্ধু ও হিন্দুদের নানারকম নিয়মাবলির কারণে রাসবিহারী দুজনের বিয়ের সম্পূর্ণ প্রস্তুতি নিতে থাকে। কিন্তু বিজয়ার মন যে অন্য একজন জয় করে বসে আছে। যার মতে,তার মতো একটা অকেজো অপদার্থ লোককেও যে কারো প্রয়োজন হতে পারে, তা যেন অসম্ভব মনে হচ্ছিল। ⠀ বিজয়া কি সিদ্ধান্ত নেয়?! রক্ষণশীল সমাজের রীতিনীতি মেনে নেয় নাকি বাবার দেওয়া আশীর্বাদই সত্য হয়?!⠀ ⠀ 'দত্তা' উপন্যাসটি কতবার পড়েছি তার হিসাব প্রথম প্রথম রাখতাম। কিন্তু এতোবার পড়া হয়েছে যে এখন আর হিসাব থাকে না। কিন্তু তাও যেন ঠিকমতো রিভিউ লিখতে পারছিলাম না। যারা পড়েছেন তারা হয়তো জানেন উপন্যাসটি কতটা অসাধারণ। তবে যারা পড়েন নি তাদের বলবো আমার রিভিউ পড়ে ভালো না লাগলেও উপন্যাসটি একবার পড়ে দেখবেন। আমার কাছে 'দত্তা' কে শরৎচন্দ্রের সৃষ্টি সেরা উপন্যাস বলে মনে হয়।⠀ ⠀ ⠀ ⠀⠀ ⠀
শরৎচন্দ্রের বই পড়লেই কান্না করতে হয়, আমাকে। 'দত্তা' বইয়ের মাঝখানে যখন গেলাম এতো রাগ লাগছে,কিন্তু শেষ পর্যন্ত খুব ভালো লাগছে। আমি জানতাম শরৎ শুধু কাঁদাতেই পারে।
__বনমালী,জগদীশ ও রাসবিহারী তিন বাল্যবন্ধু। তারা একসাথে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলো দেশের সেবা করবে।সময় গড়িয়ে যায়,আর সেই সঙ্গে তাদের সিদ্ধান্তের ও পরিবর্তন ঘটে। বনমালীর ইচ্ছে ছিলো জগদীশের ছেলে নরন্দ্রের সাথে তার মেয়ে বিজয়ার বিয়ে দিবেন।বনমালী মৃত্যুর আগে তা বিজয়াকে বলে যান,কিন্তু বিজয়া তা গুরুত্ব দেয় নি। বনমালীর সব সম্পত্তি সামলাতো তার কূট চরিত্রের বন্ধু রাসবিহারী। রাসবিহারী চাইতো তার ছেলে বিলাসবিহারীর সাথে বিজয়ার বিয়ে দিতে। . বিজয়া হুট করে চাইলো সে নিজে এইসবের দায়িত্ব নিতে।বিজয়া এইসবের দায়িত্ব নিলো,আর তাকে সাহায্য করতো রাসবিহারী আর বিলাসবিহারী। জগদীশ অনেক দেনা করে মারা যায়,কিন্তু বনমালী তা মওকুফ করে দেন।আর বনমালী নিজের টাকা দিয়ে নরেন্দ্রকে বিলেত পাঠায় ডাক্তারি পড়ার জন্য। . নরেন্দ্রের পরিচয় না জেনেই বিজয়া নরেন্দ্রের সাথে অনেক আলাপ করে। এইসব অপছন্দ করে বিলাসবিহারী,সে কড়া কড়া কথা শুনাতে থাকে বিজয়াকে।বিজয়ার এইসব পছন্দ না,তাই বিজয়া বিলাসবিহারীকেও কিছু কড়া কথা শুনিয়ে দেয়।যার ফলে বিলাসবিহারীর মাঝে আসে এক পরিবর্তন। আর এইদিকে বিলাসবিহারীর সাথে বিজয়ার বিয়ে ঠিক হয়ে গেলো। এরপর???
▪ "সত্যের স্থান বুকের মধ্যে, মুখের মধ্যে নয়। কেবল মুখ দিয়ে বার হয়েছে বলেই কোনো জিনিস কখনো সত্য হয়ে উঠে না। তবু যারা তাকে সকলের অগ্রে, সকলের ঊর্ধ্বে স্থাপন করিতে চায়, তারা সত্যকে ভালোবাসে বলেই করে না, সত্যভাষণের দম্ভকেই ভালোবাসে বলে করে!"
পাঠ প্রতিক্রিয়া - শরৎচন্দ্র আমার প্রিয় লেখক,বরাবরই। ভেবেছিলাম,এই বই পড়েও কান্না করতে হবে। এন্ডিংটা মজার ছিলো,আসলেই। নরেন্দ্র ক্যারেক্টর ভালো লেগেছে খুব।আর অদ্ভুত লেগেছে বিলাসবিহারীকে।
“দত্তা” প্রতিশ্রুতি রক্ষা এবং প্রণয়ের গল্প, যা সময়ের বলিরেখাকে উত্তীর্ণ করেছে বহু আগেই। গল্পটি শুরু হয় জগদীশ, বনমালী আর রাসবিহারীর মধ্য দিয়ে। আর গল্পটা এগিয়ে নিয়ে যায় বনমালীর কন্যা বিজয়া, জগদীশের পুত্র নরেন্দ্র ও রাসবিহারী পুত্র বিলাসবিহারী । বিজয়া লেখকের উপন্যাসে শক্তিশালী নারীচরিত্র হলেও গল্পের মোড় ঘুরতে ঘুরতে নিঃসন্দেহে পাঠকের কাছে নরেন্দ্রনাথ হয়ে ওঠে সব থেকে প্রিয় চরিত্র এবং বলার অপেক্ষা রাখেনা রাসবিহারীর সব কীর্তি যেন পাঠকের কাছে দু চোখের বিষ ! গল্পের বাঁধন পাঠকের মনোভাবের সঙ্গে একাত্ম হতে পারলে তবেই সেটি স্বার্থকতা লাভ করে। আর লেখক সময়ের সেইসব অকাল ক্ষতকে তার লেখনীর মাধ্যমে ফুটে তুলে এটিকে স্বার্থক গল্পে রূপায়ন করেছেন অবলীলায়! শুরু শুরুতে ভাবতাম শরৎ বোধহয় শুধু কাঁদাতেই পারেন। তার লেখা এতো তাড়াতাড়ি বাঁক পরিবর্তন করে যে সেই ঘোর কাটাতে কাটাতে পাঠক মনে কষ্টের ছায়া পড়ে। তবে এই উপন্যাসের শেষটা পাঠক মন কে নিরাশ করেনি । অবশ্যই উপন্যাসের জন্য এটি একটি ভালো সমাপ্তি । দ্বৈরথের মধ্য দিয়ে বিজয়ার পরিণতিটা কি সুন্দর করেই না বর্ণনা করলেন শরৎচন্দ্র !
আমার ব্যক্তিগত স্মৃতি জড়িত বইটি নিয়ে। আমার নানা বড় ভক্ত ছিলেন শরৎচন্দ্রের। নানার সংগ্রহে থাকা এটি যখন পড়ছিলাম তখন নানা স্পয়লার দিয়ে দিলে খুব রাগ হয়েছিলাম। আহামরি ঘটনা নয়, তবে এই বই নিয়ে এই স্মৃতিটা মনে আছে ভীষণভাবে।
দত্তা একটি চিরাচরিত উপন্যাস। নিজের অমায়িক লেখনিশৈলি দিয়ে গভীরভাবে কাহিনী টি ফুটিয়ে তুলেছেন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বইটি পড়তে পড়তে কখন যে আপনি চরিত্রগুলোকে বাস্তবিক ভাবে কল্পনা করতে শুরু করবেন তা নিজেই বুঝতে পারবেন না।
উপন্যাস এর বেশ কিছু উক্তি আপনার মনে দাগ কাটবে:
-" যা ভাল কাজ, তার অধিকার মানুষ সঙ্গে সঙ্গেই ভগবানের কাছে পায় - মানুষের কাছে হাত পেতে নিতে হয় না। "
- কিংবা নরেন এর জন্য বিজয়ার অনুভূতি ব্যক্ত করার জন্য লেখকের এরূপ বর্ণনা:
" অথচ এই যে একটা অনাসক্ত উদাসীন লোক আকাশের কোন এক অদৃশ্য প্রান্ত হইতে সহসা ধূমকেতুর মতো উঠিয়া আসিল এবং একনিমেষে তাহার বিশাল পুচ্ছের প্রচন্ড তা তাড়নায় সমস্ত লন্ডভন্ড বিপর্যস্ত করিয়ে দিয়া কোথায় সে নিজে সরিয়ে গেল - চিহ্ন পর্যন্ত রাখিয়া গেল না - ইহা সত্য কিংবা নিছক স্বপ্ন ইহাই বিজয়া তাহার সমস্ত আত্মাকে জাগ্রত করিয়া আজ ভাবিতেছিল। যদি স্বপ্ন হয় সে মোহ কেমন করিয়া কত দিনে কাটিবে, আর যদি সত্য হয় তবে তাহাই বা জীবনে কি করিয়া সার্থক হইবে? "
শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের দত্তা একটি চিরন্তন ক্লাসিক, যা মানুষের সম্পর্ক, সামাজিক বাঁধা, এবং ব্যক্তিগত সংগ্রামের বাস্তব চিত্র তুলে ধরে। গল্পটির কেন্দ্রে রয়েছে দেবদাস ও দত্তার সম্পর্ক, যা প্রেম ও ভেদাভেদের জালে জড়িত। লেখক চরিত্রগুলোর গভীরতা এবং তাদের মানসিক অবস্থার চিত্রায়ণ সঠিক ভাবে তুলে ধরেছেন।দত্তার অক্ষমতা ও আত্মত্যাগ পাঠককে স্পর্শ করে এবং দেবদাসের দ্বিধা ও হতাশা মানব জীবনের জটিলতাকে প্রকাশ করে। দত্তা শুধুমাত্র একটি প্রেমের কাহিনী নয়, বরং মানবিক সম্পর্কের জটিলতাকে উপলব্ধির একটি উপায়।