ব্রহ্মদৈত্যরা হলেন সদ্-আত্মা। এঁরা কোনও সময়েই কারও ক্ষতি করান না। যাঁদের অলৌকিকত্ব নিয়ে অনেক চমকপ্রদ কাহিনি অনেকের মুখেই শোনা যায়। এঁদের দর্শনলাভও ভাগ্যের ব্যাপার। এমনই বারোটি গল্প নিয়ে এই বই।
Sasthipada Chattopadhyay (born 9 March 1941) was an Indian novelist and short story writer predominantly in the Bengali language. He was a well-known figure, famous for his juvenile detective stories, namely, the 'Pandob Goenda' series, as well as his contribution to children's fiction in general.
ষষ্ঠীপদ চট্টোপাধ্যায়-এর জন্ম ২৫ ফাল্গুন ১৩৪৭। ইংরাজি ১৯৪১। মধ্য হাওড়া খুরুট ষষ্ঠীতলায়।
কিশোর বয়স থেকেই সাহিত্য সাধনার শুরু। ১৯৬১ সাল থেকে আনন্দবাজার পত্রিকার রবিবাসরীয় আলোচনীর সঙ্গে লেখালেখি সূত্রে যুক্ত থাকলেও ১৯৮১ সালে প্রকাশিত ছোটদের জন্য লেখা ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’ই লেখককে সুপ্রতিষ্ঠিত করে। ‘পাণ্ডব গোয়েন্দা’র জনপ্রিয়তার পর থেকে বিরামহীনভাবে লিখে চলেছেন একটির পর একটি বই। মূলত অ্যাডভেঞ্চারপ্রিয়, তাই দেশে দেশে ঘুরে যে-সব দুর্লভ অভিজ্ঞতা সঞ্চয় করেছেন, তারই প্রতিফলন ঘটিয়েছেন তাঁর প্রতিটি লেখার ক্ষেত্রে।
যারা সেই ছোটবেলায় ঠাকুমার ঝুলি পড়ে, শুনে, বা গল্পগুলোর কার্টুন-স্বরূপ টিভির পর্দায় দেখে বড় হয়েছে, বা যারা আজও সময় পেলে সেসব পুরনো মণি-মানিক্যের সন্ধানে ইউটিউবে হানা দিয়ে থাকে। শিশু কিশোরদের জন্য তো বটেই, কতকটা সেই শৈশব হারানো প্রজন্মের কথা মাথায় রেখেও হয়তো বা লেখকের এই নির্মল প্রচেষ্টা...
ছোটো থাকতে ঠাকুমার ঝুলির সেই 'ব্রহ্মদৈত্যের গল্প' নামক এপিসোডটি দেখতে ভালবাসতাম। গা-ছমছমে স্নিগ্ধ গ্রাম্য পরিবেশে এক গরীব ব্রাহ্মণের পাশে এসে দাঁড়ানো পরোপকারী ব্রহ্মদৈত্য ও তার একপাল শাগরেদ ভূতেদের গপ্পো!
এই বইয়ের বারোটি গল্পও সেই একই ধাঁচের। কোনো গল্পেই ভয়ঙ্করের লেশমাত্র নেই। আছে সেই সদা পরোপকারী সদ্-আত্মার অবাধ বিচরন। ভয়, শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় বেধে রাখলে, যিনি সর্বদা সবার পাশে থাকেন। সহজ সরল গল্পগুলোর মাঝে তাই কোনো প্যাচ নেই। আছে অনেকখানি নির্মাল্য ও আশ্বাস। পাঠক হিসেবে এই অলৌকিকে ভরসা রাখা যায়। একবারও মনে হয় না, দুর মশাই, হালকা-চালের বাচ্চাদের গল্প পড়ে লাভ নেই!
ছোট বইটি জুড়ে ওঙ্কারনাথ ভট্টাচার্যের আঁকা সুন্দর ছবিগুলোও বেশ মনোরম। তাই মাত্র দেড়শো টাকায় বইখানি কিনে আর যাই হোক পস্তাবেন না। লেখকের পাণ্ডব গোয়েন্দা পড়ে যারা সচরাচর বিরক্ত হন, তারা চাইলে এই গল্পগুলো পড়ে দেখতেই পারেন। Wholesome শব্দটির বঙ্গীয় প্রতিশব্দ ভেবে বের করতে পারলাম না ঠিকই, তবে এক সন্ধ্যায় কাবার করে দেওয়ার মতন এই গল্পগুলোর ক্ষেত্রে ওই শব্দটি ভীষণ ভাবে প্রযোজ্য।
এবারে খারাপ লাগাটাও বলে দেওয়া উচিত। যেই হেতু বইটি একটি তাঁরা খোয়ালো। বইয়ের শেষ গল্প 'পিয়েসুলার মাঠ'-এ খোদ ব্রহ্মদত্তি মহাশয় স্পন্সরড colorism, শুধু যে ভীষণ চোখে লাগে তা নয়, বরঞ্চ সহজপ্রবন ছেলেমেয়েদের জন্য সমস্যাযুক্ত বার্তা প্রদান করে। পরিত্রাতা ব্রহ্মদত্তি! ওনার কল্যাণে দুঃখী কালো মেয়ে হয় যায় ফর্সা। হয়ে ওঠে যথার্থরূপে 'সুন্দরী'। খারাপ লাগে। বরাবর এরমটাই কেন হতে হবে? এছাড়া কি ওদের আত্মবিশ্বাস বৃদ্ধির আর কোনো পন্থা নেই?
যাই হোক। বইটি সুপাঠ্য, তবে অবশ্যপাঠ্য হয়তো নয়। বাকিটা একান্তই আপনাদের মর্জি।