আমার ফাঁসি চাই ১৯৯৯ সালে প্রকাশিত মতিয়ুর রহমান রেন্টু রচিত বই। বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে রচিত বইটিতে বাংলাদেশের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার চরিত্রের বিভিন্ন দিক বর্ণনা করা হয়েছে। ইতিহাস বিকৃতি এবং রাজনৈতিক বিতর্ক ছড়ানোর অভিযোগে শেখ হাসিনা কর্তৃক বইটি নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। পাশাপাশি মতিয়ুর রহমান রেন্টু এবং তাঁর স্ত্রিকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়েছিল।
মতিয়ুর রহমান রেন্টু বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন অংশগ্রহণকারী মুক্তিযোদ্ধা এবং বিতর্কিত লেখক। তিনি ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে অকুতোভয়ে লড়াই করেছেন এবং দেশের স্বাধীনতার জন্য জীবন বাজি রেখেছেন। তাঁর মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অবদান স্বীকৃত, যা প্রমাণিত হয় সরকারি নথিপত্রে তাঁর নাম অন্তর্ভুক্তি এবং ভারত সরকারের দেওয়া বিরল সনদের মাধ্যমে।
রেন্টু গোপালগঞ্জের মুকসুদপুরের আব্দুল বারীর পুত্র ছিলেন। তিনি আনুমানিক ১৯৫৪ সালে জন্মগ্রহণ করেছিলেন। তিনি ১৯৮১ থেকে ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার সাথে ঘনিষ্ঠ কর্মসম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন এবং তাঁর সহকারী হিসেবে কাজ করেছিলেন।
তাঁর সবচেয়ে বিখ্যাত ও বিতর্কিত রচনা "আমার ফাঁসি চাই", যা প্রথম ১৯৯৯ সালের মার্চ মাসে প্রকাশিত হয়। এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার ও রাজনৈতিক নেতৃত্বের সমালোচনা করেন, বিশেষ করে দলীয় নেত্রী শেখ হাসিনাকে লক্ষ্য করে। বইটি প্রকাশের পর পরই, ২৯ জুন, ২০০০ সালে সরকার এটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে, যেহেতু এর বিষয়বস্তু উত্তেজনাপূর্ণ ও সরকারের বিরুদ্ধে ঘৃণা সৃষ্টি করতে পারে বলে মনে করা হয়েছিল।
রেন্টুর জীবনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য ঘটনা হল তাঁর উপর সংঘটিত হত্যাচেষ্টা। ২০০০ সালের ২০ জুন, তাঁর বাড়ির সামনে, বিকেল সাড়ে ৩ টায় ৯ নম্বর বি কে দাস রোডে, তাঁকে লক্ষ্য করে গুলিবর্ষণ করা হয়। এই হামলায় তাঁর শরীরে চারটি গুলি বিদ্ধ হয়, কিন্তু অলৌকিকভাবে তিনি প্রাণে বেঁচে যান।
এই ঘটনা তাঁর জীবনে এক মোড় ঘুরিয়ে দেয় এবং পরবর্তীতে তিনি "অন্তরালের হত্যাকারী প্রধানমন্ত্রী" নামে আরেকটি বই লেখেন, যেখানে তিনি এই হত্যাচেষ্টার বিস্তারিত বর্ণনা দেন। তার জীবনের বিভিন্ন অভিজ্ঞতা ও রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরেছেন এই বইটিতে।
তিনি ২০০৩ সালে তাঁর স্ত্রী ও দুই কন্যাকে নিয়ে বাংলাদেশ ত্যাগ করেন। এক বছর ইউরোপের বিভিন্ন দেশে থাকার পর তিনি প্যারিসে স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন।
মতিয়ুর রহমান রেন্টু ৫৩ বছর বয়সে, ১০ নভেম্বর, ২০০৭ সালে প্যারিসে ফুসফুসের ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। তাঁকে প্যারিসেই দাফন করা হয়।
তাঁর জীবন ও কর্ম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়। তার লেখা বিভিন্ন দেশে প্রচারিত হয়েছে এবং বাংলাদেশের সমকালীন রাজনীতি ও ইতিহাস নিয়ে আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। তিনি একজন জটিল ও বহুমাত্রিক ব্যক্তিত্ব ছিলেন, যিনি মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিতর্কিত লেখক পর্যন্ত নানা ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।
“দেশটা যে কারো বাপের একা ওর বাপে কয়া যায় নাই/ হের বাপে যা কইরা গেসে ওর ভিত্তে এডি রয়া যায় নাই/ ঘরের সন্তান যে ঘরে নাই এই চিন্তা আপায় করে নাই/ কত ঝর যে আইলো গেলো চেয়ার আপার লরে নাই/"
▪️▪️▪️
স্তব্ধ! পড়া শেষে প্রথম রিয়েকশন ওই ‘আওয়াজ উডা' গানটা। জুলাই-কাণ্ডের পর এই বইটা পড়েছি বলে মোটেও অবিশ্বাস্য রূপকথা বা বানানো কিছু মনে হচ্ছে না।
সময় নাকি মানুষ চিনিয়ে দেয়। এখন ভাবছি সময়ের আবেদন কী ভয়ানক হাতে পারে। শেখ হাসিনা যে এমন খুনী, পিশাচিনী এটা আমরা যেভাবে বুঝতে পারছি, পরবর্তী/তার পরবর্তী প্রজন্ম কী অতটা বুঝবে? যেমনটা মুক্তিযুদ্ধ-উত্তর প্রজন্ম হিসেবে আমরা মুজিবের ব্যাপারটা বুঝতাম না। আমরা বুঝলাম, মুজিব খারাপ ছিল। কিন্তু কতটা খারাপ ছিল তা বুঝিনি.. তেমনি জেন-আলফা/বিটারা জানবে, হাসিনা খারাপ, কিন্তু কতটা জঘন্য খারাপ এটা আমরা তাদের বোঝাতে পারব না। এক একটা ছাত্রের মৃত্যু দেখে কীভাবে ভয়ঙ্কর রাত আমরা পার করেছি, এটা বোঝাতে পারব না।
হ্যাঁ, বইটা পড়ে মনে হয় লেখক একদম স্বচ্ছ থাকতে পারেনি, ব্যক্তিগত খেদ থেকেই লিখেছে। মনে যত দ্বেষ ছিল, সব উগরে দিয়েছে। তাই বলে কোনো লেখাই মিথ্যা মনে হচ্ছে না। বিডিআর হত্যা, শাপলা চত্বর ঘটনা– খুব ছোট ছিলাম এসব বোঝার জন্য। কিন্তু বোঝার পর থেকে হতবাক হয়ে গেছি, কীভাবে পারল মানুষ এত এত হত্যা মেনে নিতে? তার উপর এই জুলাই ম্যাসাকার– নাহ, লেখক মিথ্যা লিখেননি শেখ হাসিনা যে আদতেই কেবল লাশ পছন্দ করতেন। এই সেদিনও কিনা শুধুমাত্র গদি বাঁচাতে আরো আরো লাশ চেয়েছে (ইতিমধ্যে সহস্রাধিক মারার পরও); নরপিশাচিনী কিংবা.. ঠিকঠাক শব্দ পাচ্ছি না বোঝাতে।
আমরা যারা জন্মের পর থেকেই আওয়ামী লীগ আর শেখ হাসিনাকে দেখে অভ্যস্ত, তাদের জন্য এই বইটা যে কত বড় ধাক্কা তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। মিথ্যা ইতিহাসের বড়ি গুলিয়ে অনেক তো খেলাম.. এবার জঞ্জাল ঘেঁটে লুকিয়ে রাখা ইতিহাসে ফিরে যাওয়া যাক... মাস্ট রিড।
প্রিয় এক সুহৃদের বদৌলতে ২০১৪ সালের এপ্রিলে কম্পুকপি পাঠ করার (সৌ না দু)ভাগ্য হয়েছিলো।
আওয়ামীলীগ ও শেখ হাসিনা বিরোধীরা এই বিক্রয় নিষিদ্ধ পুস্তককে "বেশ" প্রাধান্য দেন, কেউ কেউ তো কোটও করেন।
মতিয়ুর রহমান মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন তাতে সন্দেহ নাই। কিন্তু এই বইতে তিনি যেসব রোমহর্ষক তথ্য শেখ হাসিনা ও আওয়ামীলীগ নিয়ে দিয়েছেন (তাকে শেখ হাসিনা ব্যাড বুকে ফেলায়) তার ১% সত্যতা থাকলেও আওয়ামীলীগ বা শেখ হাসিনার রাজনীতিতে টিকে থাকার প্রশ্নই আসে না।
এই বই স্রেফ ব্লাক প্রোপাগান্ডা বৈ কিছু নয় (ইতিহাস নিয়ে ঘাঁটাঘাটি করার ন্যূনতম অভিজ্ঞতা থেকেই বলছি)।
বর্তমান বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে এই বইকে সম্পূর্ণ মিথ্যা বলা যায় না বোধকরি। ঠিক এক মাস আগেও যদি আমি পড়তাম এই বই তবে ধরেই নিতাম গাজাখুরি গল্প লিখেছেন লেখক।
হাসিনা পতন আন্দোলনের সময় এই বই খুব-ই হাইপড ছিলো।আছে এখনো।
পড়ে ফেললাম। এই বইয়ের তথ্যগুলো বিশ্বাস করবেন কি করবেন না তা আপনি নিজেই পড়ে সিদ্ধান্ত নিবেন। ব্যক্তিগত ভাবে আমি বিশ্বাস করেছি,বিশেষত হাসু আপার রাজনৈতিক কূট-কাচালী।কারন এই একই ধরনের কূট-কৌশল,চাল-বেচাল কোটা সংস্কার আন্দোলনে নিজেই তো দেখলাম,বিশ্বাস না করে উপায় নাই।
জুলাই গণহত্যা, রানা প্লাজা ট্রাজেডি, পিলখানা হত্যাকাণ্ড, অপারেশন সিকিউর শাপলা, বিএনপির পাশাপাশি অন্যান্য বিরোধীদলকে নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানো, নিজ স্বার্থে বহুবার আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি নিজদলীয় লোকদের ব্যবহার করে বলির পাঠা বানানো, রাজাকারদের সাথে বন্ধুত্বের পাশাপাশি ক্ষমতায় বসানো, দেশ ও দেশের মানুষদের প্রতি প্রচন্ড ঘৃণা, ক্ষোভ এবং সম্পদের লোভ......(ডট ডট এর জায়গায় আরও বহু কুকীর্তি যোগ হবে)— এই নিয়ে স্বৈরশাসক ফেন্সিখোর খুনি শেখ হাসিনা।
এই বইয়ের লেখক মতিউর রহমান রেন্টু দীর্ঘ ১৬ বছর(১৯৮১-১৯৯৭) শেখ হাসিনার ব্যক্তিগত সহকারী বা পরামর্শদাতা ছিলেন। মূলত সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচন, জুন ১৯৯৬-এ রেন্টুর অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও শেখ হাসিনা তাকে সংসদ সদস্য না বানানো এবং অবাঞ্ছিত করার পরিপ্রেক্ষিতেই এই বইয়ের জন্ম হয়েছে বলে আমরা সহজেই ধরে নিতে পারি।
শেখ হাসিনা মুক্তিযোদ্ধা এবং বাংলাদেশের মানুষদের প্রচন্ড ঘৃণা করতো। কারণ মুক্তিযোদ্ধারাই তার পরিবারকে হত্যা করেছে এবং শেখ মুজিবের মৃত্যুর পর সাধারণ জনতা শোক পালন করেনি। পাশাপাশি হাসিনা রাজাকারদের ভালো চোখে দেখতো যেহেতু তার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের কোনো চেতনা ছিলো না। শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুর পর হাসিনা খুশিতে আত্মহারা হয়ে নাচানাচি শুরু করেছিলো; হাসিনা জাহানারা ইমামকে তার প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করতো। মানুষের লাশ দেখলে হাসিনা বেশি খেতে পারতো; যেদিন হাসিনার নির্দেশে বেশি লাশ পড়তো সেদিন খাবারের আইটেম বাড়তো। পাশাপাশি সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ তাকে প্রচন্ড আনন্দ দিতো৷ সে তার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী রাখতে চাইতো না। এজন্যই সর্বক্ষণ জাহানারা ইমাম ও খালেদা জিয়ার মৃত্যু কামনা করতো; তাঁদের নিশ্চিহ্ন করার অপচেষ্টা চালাতো। এমনকি শহীদ জিয়াউর রহমানকে হত্যার মাস্টারমাইন্ড নাকি স্বয়ং হাসিনা ছিলো— লেখক বইতে এগুলোর পাশিপাশি হাসিনার আরও বহু পৈশাচিক পরিকল্পনা ও কর্মকান্ডের কথা বলেছেন।
লেখক আরও বলেছেন, শেখ মুজিবুর রহমান ৭-ই মার্চ স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়েও দেননি। যার ফলে পশ্চিম পাকিস্থান ১২ হাজার কি.মি. দূর থেকে ঢাকায় যুদ্ধের রসদ ও সৈন্য এনে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেয়ার সুযোগ পেয়েছে। নয়তো নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম না করে শুধুমাত্র সাতদিনে বাংলাদেশ স্বাধীন হতে পারতো। যুদ্ধের পুরোটা সময় শেখ মুজিব পশ্চিম পাকিস্থানিদের নিরাপদ হেফাজতে ছিলো। এমনকি শেখ পরিবারকে পাকিস্থানিরা যুদ্ধের পুরোটা সময় নিরাপত্তা দিয়েছে। এর থেকে স্পষ্ট বুঝা যায় শেখ মুজিব ক্ষমতা চেয়েছিলো কিন্তু স্বাধীনতা চায়নি; যা বাকশাল গঠনের মাধ্যমে প্রতিফলিত হতে যাচ্ছিল। এমনকি মুক্তিযোদ্ধাদের যোগ্য সম্মানটুকু সে দেয়নি; যা তার মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়। যার মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের কোনো চেতনা নেই তার তো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মান দেবার মতো যোগ্যতা থাকার কথা নয়।
আমাদের অনেকের বিশেষ করে আমার জানা ছিলো যে, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী সময়ে ময়মনসিংহ ও সিলেটের সীমান্তবর্তী অঞ্চলে কাদের সিদ্দিকীর নেতৃত্বে লুটতরাজ বাহিনী গ্রামাঞ্চলে সম্পদ লুট করে বেড়াতো। কিন্তু এই বই পড়ে জানতে পারলাম, কাদেরিয়া বাহিনী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশ গড়া, আওয়ামীলীগকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা এবং বঙ্গবন্ধুর পরিবারের খুনীদের বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেয়ার মাধ্যমে বঙ্গবন্ধুর গৌরব সমুন্নত রাখার জন্য সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। স্বয়ং লেখক কাদেরিয়া বাহিনীর একজন সদস্য ছিলেন।
স্বয়ং লেখক হাসিনার সকল অপকর্মের সহযোগী ছিলো। যদিও বইতে লেখক হাসিনাকে সর্বদা ভালো কাজ করার পরামর্শ দিতো বলে জানিয়েছেন। এজন্যই অনুতপ্ত লেখক নিজের ফাঁসি চেয়েছেন। আর ফাঁসি চেয়েছেন হাসিনার সকল অপকর্মের জন্য। মুক্তিযুদ্ধের ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দু'লক্ষ মা-বোনদের ইজ্জতের জন্য ফাঁসি চেয়েছেন বঙ্গবন্ধু ওরফে শেখ মুজিবের।
অনেকে এই বইকে পুরোপুরি অবিশ্বাস করবে আবার অনেকে বিশ্বাস করবে। তবে আপনি যদি এই বইকে বিশ্বাস না করেন তবে টাইম ট্রাভেল করে ওই সময়ের ঘটনাগুলোয় যাওয়া ছাড়া কোনো উপায় নেই। লেখক যেহতু নিজের অপকর্ম বলতে দ্বিধা করেননি; তাই বইটা বিশ্বাসযোগ্য মনে হয়েছে। যদিও সম্পূর্ণ বিশ্বাস করা অনুচিত। তবে জুলাই গণহত্যার পর তো সবকিছু পরিষ্কার হয়ে যাওয়া উচিত আপনাদের।
বইটিতে শেখ হাসিনার যে ভয়াবহ বিভৎস রূপ রেন্টু সাহেব তুলে ধরেছেন তা জুলাই বিপ্লবের আগে কেউই সত্য হতে পারে বলে মেনে নিতে চাইতেন না। কিন্তু দীর্ঘ একযুগেরও বেশি একটানা শাসনামল শেখ হাসিনার সে রূপ যে পুরোটা না হলেও একেবারে মিথ্যে নয়, সেই সাক্ষ্য ই দেয়। ক্ষমতাবানরা লাশ আর টাকার উপর টিকে থাকে। ইতিহাসের নির্মোহ সত্যের কতটুকু কাছাকাছি বইটি আছে তা জানিনা তবে রক্তচোষা শাসকদের যে ছবি আমরা দেখি তা চিরায়ত সত্য বলেই মনে হয়
অল্প বয়সে বইটি একবার পড়া হয়েছিলো। অনেক খানি ভিন্ন সময় ও বাস্তবতার কারণে সেই সময়ে "আমার ফাঁসি চাই" পাঠের পর এক ধরণের মিশ্র প্রতিক্রিয়া কাজ করেছিলো আমার মাঝে। অগাস্ট ৫, ২০২৪ এর পরবর্তি সময়ে এ বই নিষিদ্ধ অবস্থা থেকে আবার রমরমা অবস্থায় ফিরে এলে ভাবলাম দেখি কেমন লাগে।
মূলত, রেন্টুর "আমার ফাঁসি চাই" গ্রন্থ কিংবা ডালিমের লিখা অথবা বজলুল হুদা রচিত বই পড়ে আপনি ইতিহাস জানবেন এ রকম ধারণা করাটা ভ্রান্তিময় হবে। তবে ১৫ বছরে শেখ হাসিনার মাফিয়া শাসন এবং সর্বশেষ জুলাই আন্দোলনে ছাত্র-জনতাকে পাইকারী হারে গুম-খুন-জখম-পঙ্গু করে দেয়ার ব্যাপারে এখন পর্যন্ত সেই হাসিনারই কোন আফসোস থাকা বরঞ্চ মোবাইল রেকর্ডিং এ তার কন্ঠনিশ্রিত "দেখে নিবো।" শুনার পর বুঝা যায় ফ্যাসিস্ট মানসিকতার মানুষজনের মাঝে কোন অনুশোচনা থাকে না।
রেন্টু বইয়ের শেষের দিকে নিজের ফাঁসি চেয়েছেন। তবে রাজ্যের বদমাইশিতে শেখ হাসিনাকে বহু বছর ধরে রেন্টুর দেয়া অকুন্ঠ সমর্থনও মিথ্যা নয়। মাফিয়া সরকারের ১৫-১৬ বছরের শাসন এবং জুলাই মাসে ম্যাস মার্ডার করার ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা যে মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করে গেছেন তা তো একদম পরিষ্কার।
শেখ হাসিনার চরিত্রের কিছু বিষয়-আশয় এ বইয়ের দেয়া বর্ণনার সাথে মিলে যায়। লাশ ও টাকার প্রতি তার ফ্যাসিনেশন তো আসলেই ছিলো, আছে এবং থাকবে।
শেখ হাসিনা একজন রাজনীতিবিদ। তার সমালোচনা করার জন্য যুক্তিযুক্ত অনেক বিষয় ও উপায় আছে, এবং সাধারণ নাগরিক হিসাবে তার কাছে জবাবদিহিতা চাওয়া আমাদের একটা স্বাভাবিক অধিকার। উনি দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে যত বিতর্কিত কাজ করেছেন, সেগুলো স্রেফ লিপিবদ্ধ করলেই শক্তিশালী একটা আর্গুমেন্ট তৈরি করে ফেলা যায়।
তবে রেন্টু সা'বের বই পড়ে আমার মনে হলো না এখানে যুক্তি বা বাস্তবের তেমন ভূমিকা আছে। ব্যক্তিগত বিদ্বেষ চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে পাতায় পাতায়, প্রথমে পড়তে গিয়ে অবাক হয়েছিলাম, তারপর ভুরূ কুঁচকেছি, এবং একটু দূর গিয়ে অভিযোগের অ্যাবসার্ডিটি দেখে হাসি পেয়েছে, আর পড়ার ইচ্ছে জাগেনি।
এই বইটি হাস্যস্পদ করে তুলেছে জনাব রেন্টুকে। দুঃখজনক।
২০২৪ সালের বর্তমান পরিস্থিতি সামনে রেখে যারা বইটি পড়ছেন বা পড়েছেন তাদেরকে সত্য মিথ্যা ধরিয়ে দেবার কোনো প্রয়োজন বোধহয় আর নেই। আমার মতে সকলের একবার হলেও বইটি পড়া উচিত।
বইটিতে বলা প্রায় প্রতিটি কথাই সত্য। অন্তত হাসিনার আচরণ তার প্রমাণই দিয়ে গেছে বারবার। আমার মতে বইটি সবার পড়া উচিৎ। মূল্ধারার ইতিহাসের চেয়ে এই বই একটু আলাদা। এটি লেখাই হয়েছে হাসিনার মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বিশ্লেষণ করার জন্য। হাসিনার গত ২০ বছরের কুকীর্তি নিয়েও যেন কেউ এমন আরেকটি বই লিখে এই কামনা করি।
শেখ হাসিনার পিএ হিসেবে দীর্ঘ সময় কাজ করেছেন রেন্টু। হাসিনার কাজে বার বার আপত্তি জানানোর কারনে পরবর্তীতে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। বিতাড়িত ভগ্ন মনোরথের ফসল এই বই। একজন পিএ খুব কাছ থেকে সব ঘটনা অবলোকন করতে পারেন। তার জানার পরিধিও হবে বিশাল, পর্যবেক্ষণ ক্ষমতা হবে সূক্ষ্ম। কিন্তু রেন্টু সাহেব সব দিক দিয়ে অন্তঃসার শূন্য বলতে হয়। মিসেস রেন্টু হাসিনাকে তেল মালিশ করে দিচ্ছে, কক্সবাজারে গিয়ে হাসিনা ফেনসিডিল খাচ্ছেন; এসব অপালাপ একজন ইতিহাসের পাঠকের জন্য নিতান্তই অপ্রয়োজনীয়। বরং সেই সময়ে হাসিনা কিভাবে রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা,গুম-হত্যার রাজনীতি করেছেন; সেসব নিয়ে আলোচনা আমি প্রত্যাশা করেছিলাম। এই বইয়ে আহামরি নতুন কোনো তথ্য পাওয়া যাবে না। এরশাদ বা জামাত-শিবিরের সাথে হাসিনার গোপন আঁতাত সবাই জানেন। হুন্দাই বা মিগ ২৯ বিমান নিয়ে দূর্নীতির বিষয়টাও একদম চায়ের দোকানের খবরই বলা যায়। হাসিনার গোমর ফাঁস করার বহু কাহিনি রেন্টু সাহেবের কাছে ছিল। কিন্তু আদতে তিনি সে সব লেখেননি, অথবা তার সেই সৎ সাহস হয়নি। তার লেখা ব্যক্তিগত আক্রোশ থেকে এসেছে এবং তথ্যগুলা রাজনৈতিক পাঠের অনুপযোগী। তবে হাসিনার কিছু বিষয় নিয়ে তিনি ভাল তথ্য দিয়েছেন। পরিকল্পিত হত্য��, কম্পালসিভ মিথ্যাবাদী, সাইকো বিহেভিয়ার এবং দেশের আমলা ও আর্মির সাথে আঁতাতে বরাবরই হাসিনা সবার থেকে এগিয়ে ছিল। প্রচুর নন-ফিকশন না পড়া পাঠকের জন্য এই বই এড়িয়ে যাওয়া ভাল হবে।
জুলাইয়ের আগেও যদি বইটা পড়তাম, নেহাৎ কল্পনানির্ভর ফিকশন মনে হতো। এখন যখন পড়লাম, সত্য বুঝতে এতটুকুও বেগ পেতে হলো না। এতটুকুও অবাক হলাম না। কারণ দেখা হয়ে গেছে চব্বিশের রক্তাক্ত জুলাই। যে জুলাই একত্রিশ, বত্রিশ পেরিয়ে পৌঁছেছে ছত্রিশে।
তবে বইয়ের কিছু কিছু অংশ লেখকের আক্রোশপ্রসূত অতিরঞ্জিত বর্ণনা মনে হয়েছে। তাই বইয়ের মধ্যে বিশ্বাস-অবিশ্বাসের সীমারেখা কোথায় আর কতটুকু টানা প্রয়োজন, তা এর পাঠকরাই নির্ধারণ করবে।
বইটা পরে মনে হয়েছে লেখক তাকে এবং তার স্ত্রীকে সরকার থেকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করার প্রতিশোধস্বরূপ এই বইটি লিখেছেন। অন্য আরেকটা গুডরিডস রিভিউয়ের সাথে আমি একমত, এই বইয়ে নন-ফিকশন আর পলিটিক্যাল ফিকশনের মাঝের সীমানাটা বেশ খানিকটাই ব্লার্ড। বইয়ের সবটাই অবজেক্টিভলি সত্যি না এটা যেমন বোঝা গেছে, আবার সবটাই মিথ্যা না। অবজেক্টিভলি কতটুক সত্য আর কতটুক এক্সজারেটেড এটা বের করা মুশকিল; তবে পাঠকের কাছে কতটুক সত্য আর কতটুক ফিকশন মনে হবে সেটা নির্ভর করবে অনেকটাই পাঠকের বাংলাদেশের ইতিহাসের উপর জ্ঞান কতটুকু এবং তার রাজনৈতিক মতাদর্শের উপর। সহজ কথায় একটা লবনের বাটি নিয়ে পড়তে বসবেন।
লেখকের লেখার ধরন দেখলেই বোঝা যায় উনি প্রচণ্ড আক্রোশ নিয়ে লিখেছেন। যার কারণে তথ্যের সত্যতা কতটুকু, সেটা যাচাই করা যাচ্ছে না। তবে বর্তমান পরিপ্রেক্ষিতে বইয়ের ঘটনাগুলো একেবারে হেসে উড়িয়েও দেওয়া যায় না। বেশকিছু জায়গা পড়ে মনে হয়েছে ঘটনা হয়তো সত্য কিন্তু বেশি মশলা দিয়ে লেখক প্রেজেন্ট করেছেন।
আরেকটু ডিটেইলড রিভিউ হয়তো পরে লিখব, কিন্তু কথা হচ্ছে, অনলাইন বুকশপসহ আরো কিছু মানুষ একে বাংলাদেশের ইতিহাস বা রাজনৈতিক ইতিহাস জানার বই বলে দেদারসে প্রমোট করছে কেন?
এইটায় ইতিহাসের 'ই'ও নেই, আমি কারো উপর রেগে গেলে তাকে যেভাবে পার্সোনাল ডায়েরিতে গালাগালি করি, ওইভাবেই বইটা লেখা। নিষিদ্ধ বই হিসেবে বিক্রি করছে সেটা ঠিক আছে, কিন্তু এইটা কখনোই দেশের রাজনীতির ইতিহাস জানার জন্য যথেষ্ট না।
তবে জেনে খুবই খারাপ লাগছে যে হাসিনা আর আমার প্রিয় খাবার একই! (লাশ না কিন্তু, গরুর ভুড়ি :3)। ফেন্সিডিল খেয়ে নেশা করতো ;-;
যাই হোক, কেউ তার প্রিয় 'জিন্দেগি জিন্দেগি' গানের লিংকটা পেলে দিয়েন তো :3 প্রোবাবেল দুইটা গান পেলাম, এখন কোনটায় সে নাচতো বুঝতে পারছি না ;-;
সত্য কথা বলতে যখন থেকে হাসিনাকে দেখি এই নারীকে আমার ইভিল মনে হয়েছে কিন্তু এতটা ইভিল এই বই না পড়লে বুঝতে পারতাম না। উনি যে বেশি বলেছে বা বানিয়ে বলেছে তা প্রমাণ করার কোন সুযোগ আপনার কাছে নেই। স্বামীর সাথে না থাকা অংশটি ছাড়া সবগুলাই বিশ্বাসযোগ্য। আর এটা যেহেতু কেউ দেখেনি সুতরাং তাদের মধ্যে কি সম্পর্ক ছিল আল্লাহই ভাল জানেন। ইন্টারেস্টিং বিষয় হলো 2008 এ নির্বাচনের পর হাসিনা যখন ক্ষমতায় তখন সেই লোকটি (মৃণাল কান্তি দাস) সংসদ সদস্য হয়েছিল।
বুঝ হওয়ার পর থেকে গত পনেরো বছর “হাসিনাশাহী” দেখার সুযোগ হওয়ায় এই বইয়ের কোন কিছুই অবিশ্বাস্য মনে হয়নি। বিশেষ করে বইয়ের সর্বশেষ প্যারার ভবিষ্যদ্বাণীটা তো চোখের সামনে বাস্তবায়িত হতে দেখছি।
লেখার সাহিত্যিক মান বিচার করলে অত্যন্ত নিম্নমানের। ১৫ দিন আগে পড়লেও বইটা আমার কাছে নিছক ব্যক্তিগত ক্ষোভ-হিংসাপ্রসূত ও বাড়াবাড়ি মনে হতো। তবে হয়তো কিছু জিনিস সত্য হিসেবেই নিতাম। কিন্তু, আজকের বাস্তবতায় এই বই যেভাবে মিলে যায় বইয়ের প্রধান চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের সাথে তাতে আর সেসব বলা যায় না। কিছু কিছু জায়গায় বাড়াবাড়ি হয়েছে হয়তো, যেমনটা আমরা রোজকার জীবনে লেখকের মতো এমন ঘটনার সম্মুখীন হলে করে থাকি। তাই বলে সত্যকে অস্বীকার করা যায় না।
শেখ হাসিনা তথা আওয়ামী লীগের রাজনীতি বুঝতে হলে এই বই পড়া আবশ্যক। বইটি যদিও ১৯৭১ থেকে ১৯৯৬ পর্যন্ত বাংলাদেশের রাজনীতির বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ বর্ণিত হয়েছে তথাপি আজও এই বই সমভাবে প্রাসঙ্গিক। শেখ হাসিনা প্রকৃতপক্ষে কেমন মানুষ সে সত্য তুলে ধরেছেন মতিয়ুর রহমান রেন্টু।
এটাকে ইতিহাসের অকাট্য দলিল বলার উপায় নাই। ব্যক্তিগত আক্রোশ বা ক্ষোভ যে একেবারেই ছিলো না সেটাও বলা যাবে না। অনেক বিষয়ে লেখক তার ভাসা ভাসা জ্ঞান বা স্মৃতি থেকে কথা বলেছেন। তবে যা যা বলেছেন সেটা যদি তার ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে বলা হয় এবং যদি ধরেও নেই যে ৫০/৫০ সত্য-মিথ্যার মিশেল আছে তাহলে অনেক শকিং ব্যাপার আছে। সত্যি বলতে যদি মাস খানেক আগেও কেউ আমাকে এই কথা গুলো বলতো তাহলে আমি মানতে চাইতাম না। এখন একেবারে ফেলে দিতেও পারছি না।
সমসাময়িক আরও কিছু বই পড়া গেলে হয়তো আরও অনেক কিছুই জানা যাবে।
বইটা পড়তে পড়তে বিরক্ত হয়ে গেছি একটা মানুষ এত খারাপ হইতে পারে, অনেকে হইত বইটা পড়ে মনে করবে সব কিছু বেশি বেশি কিন্তু আমারা যারা জুলাই ২০২৪ দেখেছি তারা জানি এই বইয়ে সব কথা সত্যি। কিন্তু মেজাজ খারাপ হয়েছে লেখক সব জায়গাতে বারবার বলেছে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা একবার বলে দিলেই হলো বারবার বলাতে পড়তে খুব মেজাজ খারপ হইছে।
যদি সব সত্যি হয়, বড় বাঁচা বেঁচেছি, শেষমেশ। আজকের দিনে যা কিছু করে নোংরা কীটটা ভাগল, সেসব তো নিজের চোখেই দেখলাম। এরপর আর এসব মিথ্যা ভাবা সম্ভব না।
তবে, উল্টোদিকের লোকজনকে অন্ধের মতো বিশ্বাস করা যাচ্ছে না আমার পক্ষে। সবার এক থাকা মানে আমার কাছে কম বয়সে বিয়ে করার গুরুত্ব বোঝানো লোক সরকারে রাখা না।
এটা কি আমাদের দোষ যে আমরা কাউকে আশা-ভরসা বানিয়ে ফেলতে চাই? মনে হয়। ইতিহাস তো পাল্টে ফেলা যায় না। তার চেয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে হতাশ না হওয়া এবং ভালো মানুষ হয়ে দেশের জন্য নিঃস্বার্থভাবে কিছু করাই আসলে যথেষ্ট আর সেটাই সত্যিকারের মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। নিস্পৃহভাবে ইতিহাস পাঠ বাদে হয়তো কপালে কিছু নেই, আর সেটা মেনে নিলে ক্ষতি নেই।
এর চেয়ে এমন করে দেখা শুরু করি আমরা— গলাবাজীর চেয়ে, নানারকম নাটকের চেয়ে কারা কারা কাজ করে দেশের জন্য আর রাজনীতির উর্ধ্বে গিয়ে দেশকে ভালোবাসতে পারে। কারা অসাম্প্রদায়িকতা আসলেই নিশ্চিত করতে পারে, ভান না করে আর কারা চোর, ডাকাত, খুনী বা ক্ষমতালিপ্সু না। আর কারা বাকস্বাধীনতার টুটি টিপে ধরে না। ভিন্নমত শুনলেই কারোর মুখে যেমন তার বাপের দেশ শুনতে আমাদের ভালো লাগতো না, তেমন ভাবেই আমরা বসাইসি, আমরা নামাইসি, এসব শুনতেও ভালো লাগে না, সন্দেহ হয়।
শেষ করলাম মতিউর রহমান রেন্টুর লিখা বই "আমার ফাঁসি চাই"। এই বইটা কিনেছিলাম জানুয়ারি মাসে রাজশাহীর পুরাতন বাজার থেকে। বাসায় এসে দেখলাম বইটা নিষিদ্ধ। নিষিদ্ধ হওয়ায় তুলেই রেখে দিয়েছিলাম এতোদিন। এখন তো আর বাঁধা নাই। শেষ করে ফেললাম। যদিও শেষ করতে বেশ অনেকদিনই লেগে গেলো। বই ইদানীং হাতে তোলাটাই অনেক চ্যালেঞ্জিং হয়ে যাচ্ছে।
যাইহোক, কেমন লেগেছে বইটা তা রেটিং দেখেই বুঝে গেছেন। আমার কাছে লেখকের পুরো লেখাতে কেমন জানি একটা প্রতিশোধ প্রতিশোধ ব্যাপার লেগেছে। প্রথমদিকে বইটা বেশ ভালোই লাগছিলো। অনেককিছু জানলাম। আস্তে আস্তে কেমন জানি খাপছাড়া আর ব্যক্তিগত আক্রোশপূর্ণ বলে মনে হলো। অনেক জায়গায় মনে হবে লেখক নিজের মনের মাধুরী মিশিয়েও অনেককিছু লিখেছেন। স্পষ্ট রেফারেন্স থাকাটা উচিত ছিলো। রেফারেন্স থাকলে বইটা হয়তো বেশি বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হতো।
সবমিলিয়ে, বইটাতে লেখকের ব্যক্তিগত আক্রোশ আপনি প্রতিটা শব্দে খুঁজে পাবেন। বাস্তবজীবনে তাকালে এখন অনেককিছুই বিশ্বাসযোগ্য বলে মনে হলেও হতে পারে। একদমই উড়িয়ে দেয়ার অবকাশ-ও নাই। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। তবে এতোটুকুই বলবো, রেফারেন্স ছাড়া "চালাই দেন" সোর্সে বিশ্বাস করাটা হাস্যকর বৈ আর কিছুই না।