ডক্টর অতুল সুর প্রখ্যাত নৃতত্ত্ববিদ, ইতিহাস বিদ ও সমাজ-বিজ্ঞানী বিদ্বৎ সমাজে ‘দুধর্ষ’ পণ্ডিত রূপে আখ্যাত। বয়স ৯২ বৎসর। রচিত গ্রন্থ সংখ্যা ১৫৪।কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃতী ছাত্র ও অধ্যাপক। ‘প্রাচীন ভারতীয় ইতিহাস ও সংস্কৃতি ও নৃতত্ত্ব’ বিষয়ে এম.এ. পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে প্রথম স্থান অধিকার করে সুবর্ণ পদক ও পুরস্কার পেয়েছিলেন। অর্থনীতিতে সপ্রশংশ ডি.এস.সি উপাধি পেয়েছেন। দশ বৎসর বিশ্ববিদ্যালয় অধ্যাপনা করেছেন।লেখক পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ‘রবীন্দ্রপুরস্কার’ পেয়েছেন। মধুসূদন ও রামমোহন পুরস্কার পেয়েছেন। নিখিল ভারত বঙ্গ সাহিত্য সম্মেলন থেকে সুশীলা দেবী বিড়লা পুরস্কার পেয়েছেন।
১৯২০'র দশকে সিন্ধু সভ্যতা আবিষ্কার হওয়ার সাথে সাথে সংশ্লিষ্ট অনেকেই অনুমান করেছিলেন এই সভ্যতা যতটা মনে হচ্ছে তার চেয়ে বেশি প্রাচীন। তাই এব্যাপারে আরো গবেষণা করার জন্য যোগ্য কাউকে পাঠানোর জন্য কলকাতার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে চিঠি পাঠালেন জন মার্শাল। বইয়ের ৩৫ নম্বর পৃষ্ঠায় লেখক দাবি করেছেন, তখনকার দিনে প্রাচীন ভারতের ইতিহাস ও সংস্কৃতি নিয়ে অভিজ্ঞ লোক একমাত্র তিনিই ছিলেন। তাই তাকেই পাঠানো হল। ১৯২৮ সালে মহেঞ্জোদারো নিয়ে গভীরতর গবেষনার জন্য অতুল সুর পৌছলেন সিন্ধু প্রদেশের লারকানায়। বেশকিছুদিন আগে কোথাও পড়েছিলাম, দ্রুত একটা সিদ্ধান্তে পৌছে যাওয়ার একটা প্রবণতা অতুল সুরের লেখায় খুজে পান পাঠকেরা। এই বইটা পড়ার সময় আমার তেমন লাগেন আসলে। বরং নিজের বক্তব্যের দূর্বল দিকগুলো অকপটে প্রকাশ করার মধ্যে বেশ বড় মনের একটা পরিচয় পাওয়া যায়। তিনি যেহেতু সিন্ধু সভ্যতা নিয়ে গবেষনাকারী প্রথম বাঙালি গবেষকদের একজন তাই এই সভ্যতার ব্যাপারে আগ্রহী যে কেউ তার লেখা পড়তে আগ্রহী হবেন, সেটা বলাই বাহুল্য। প্রাচীন ভারতের ব্যাপারে বেশ কিছু ইন্টারেসটিং বই লিখেছেন ঐতিহাসিক, নৃতাত্ত্বিক, প্রাবন্ধিক অতুল সুর। যেমনঃ বাঙালির নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, চৌদ্দ শতকের বাঙালি, বাংলা ও বাঙালি, দেবলোকের যৌনজীবন, ভারতের নৃতাত্ত্বিক পরিচয়, প্রাগৈতিহাসিক ভারত, তিন শ বছরের কলকাতা, ভারতীয় বিবাহের ইতিহাস ইত্যাদি।
অধ্যায় সমূহঃ ১৪০ পৃষ্ঠার বইটিকে নয়টি অধ্যায়ে ভাগ করেছে লেখক। সেগুলো হলঃ ১. প্রাককথন ২.মহেঞ্জোদারোর কথা, ৩. সিন্ধু সভ্যতার উদ্ভব, ৪. সিন্ধু সভ্যতার ইতিহাস ও বৈদিক বৈরিতা, ৫. সিন্ধু সভ্যতার গঠনে প্রাগার্ধদের দান, ৬. সিন্ধু সভ্যতায় বিজ্ঞানের ভূমিকে, ৭. সিন্ধু সভ্যতায় প্রাগার্যদের দান, ৮. সিন্ধু সভ্যতার লোকের কোন নরগোষ্ঠীর লোক ছিলেন, ৯. সিন্ধু সভ্যতার নগরসমূহের পতন। ননফিকশন বইয়ের পেছনে ইন্ডেক্স বা নির্ঘন্ট না থাকলে বিরক্ত লাগে। এই বইতে বেশ ভালোভাবে আছে। ব্যাপারটা আরামদায়ক। বইয়ের অধ্যায় বিন্যাস দেখেই বোঝা যাচ্ছে যে, লেখক সিন্ধু সভ্যতার মোটামুটি একটা পূর্ণাঙ্গ চিত্র তুলে ধরার চেষ্টা করেছেন এই বইতে। আর আমার মতে, পেরেছেনও বেশ ভালোভাবেই। আমি ইতিহাসের ছাত্র নই, তবুও বইটা পড়তে কোনো অসুবিধাই হয়নি, বেশ সহজে বুঝেছি। কোনো কোনো ব্যাপারে আরো জানার আগ্রহ পাচ্ছি। এটা অবশ্যই বইটার বিরাট সফলতা। পৌনে এক শতাব্দীর বেশি সময় আগে লেখা এক্টা বই পড়তে যেসব অসুবিধা হওয়ার কথা সেগুলোও খুব বেশি ফেস করতে হয়নি। আমার কাছে লেখা বেশ আরামদায়ক মনে হয়েছে। সর্বোপরি আমি যে উদ্দেশ্যে বইটা পড়েছিলাম সেটা সফল হয়েছে, এটাই আসল কথা।