যাযাবর ছদ্মনামের আড়ালে থাকা মানুষটি বিনয় মুখোপাধ্যায় (Binoy Mukhopadyay, ? - ১৯৮৩)। তাঁর লিখিত বইগুলো হচ্ছে 'দৃষ্টিপাত', 'জনান্তিক', 'ঝিলম নদীর তীরে', 'লঘুকরণ', 'হ্রস্ব ও দীর্ঘ', 'যখন বৃষ্টি নামল'। এছাড়া স্বনামে লেখা দুটি বই হচ্ছে 'খেলার রাজা ক্রিকেট' ও 'মজার খেলা ক্রিকেট'।
যাযাবর আর তার দৃষ্টিপাত বাংলা সাহিত্য পড়েন অথচ এর সাথে পরিচিত নন এমন মানুষ সংখ্যায় সম্ভবত খুব বেশি নন। ঐ একটি বই লিখেই তিনি বাংলা সাহিত্যে আলাদা আসন নিয়ে নিয়েছেন। তবে তার আরও কিছু বই, লেখা আছে যা হয়তো ততোটা পরিচিত নয়। ঝিলম নদীর তীর কাশ্মীর নিয়ে লেখা, এটা উপন্যাস নয়, ১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের পর কাশ্মীরে ঘটে যাওয়া কিছু ঘটনা নিয়ে এই বই। ৪৭ এ ভারত পাকিস্তান ভাগ হয়ে গেলো, দেশীয় ছোট বড় রাজ্যগুলো একে একে যোগ দিলো ভারত বা পাকিস্তানে। কাশ্মীরের কাছে দুটো সুযোগই ছিলো, তার সীমানা দু দেশের সাথেই হলো, কিন্তু কাশ্মীর কোনটাতেই যোগ দিলো না, দিলো না মহারাজা হরি সিং সিদ্ধান্ত নিতে পারছিলেন না বলে।হরি সিং চেয়েছিলেন কাশ্মীর একটা স্বাধীন পৃথক রাজ্য হিসেবেই খাকুক। কিন্তু কাশ্মীরের না ছিলো কোন সামরিক শক্তি না অন্য ক্ষেত্রে সে ছিলো স্বয়ংসম্পূর্ণ। খাদ্য, ওষুধ এগুলো আসতো লাহোর বা রাওয়ালপিন্ডি হয়ে, পেট্রোলও তাই। জিন্নাহ সাহেবের স্বপ্ন ছিলো কাশ্মীর হোক পাকিস্তানের অংশ, কেননা সেখানে বেশিরভাগ মানুষই তো মুসলমান, আর মুসলমানদের জন্যই তো পাকিস্তান। কিন্তু হরি সিং এর সিদ্ধান্তহীনতা তাতে বাধ সাধলো। জিন্নাহ তখন প্ল্যান করলেন কাশ্মীরীদের ভাতে মারার জন্য, কাশ্মীরের সাথে বাণিজ্য যোগাযোগ বন্ধ করে দিলেন, পেট্রোল না পেয়ে বন্ধ হলো গাড়ির চাকা, খাবার না পেয়ে অনাহারে কাটাতে লাহলো কাশ্মীরের জনগণ। অন্যদিকে উত্তর পশ্চিম সীমান্ত প্রদেশের পাঠান জিহাদিরা লুটতরাজ চালাতে ঢুকে পড়লো কাশ্মীরে, মূল উদ্দেশ্য অবশ্য তাদের শ্রীনগর দখল, কাশ্মীরের ক্ষমতা। দূর্বল সামরিক শক্তি নিয়ে কাশ্মীরতাদের সাথে পেরে উঠছিলো না, সেনাপ্রধানও হলেন নিহত, শেষ আশাও শেষ, শ্রীনগরের কাছাকাছি চলে এসেছে জিহাদীরা।হরি সিং বুঝলেন এভাবে আর তিনি পেরে উঠবেন না। কিন্তু নেহেরুর সাথে তার ছিলো তিক্ত সম্পর্ক, তাই সাহায্য চাইতে তার সাহস হচ্ছিলো না। অবশেষে নিরুপায় হয়ে ভারতের সাহায্য তিনি যখন চাইলেন তখন ভারত শর্ত জুড়ে দিলো ভারতে যোগদান করলে তারা সাহায্য করবে নতুুবা অন্য দেশের ব্যাপারে নাক গলানো তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। হরি সিং ভারতে যোগ দিলেন, ভারত সৈন্য পাঠানো শুরু করলো। কিন্তু ভারত ভুখন্ডের সাথে কাশ্মীরের যোগাযোগ কেবল আকাশপথে তাও ক্ষুদ্রাকৃতির প্লেন ছাড়া অন্য প্লেন শ্রীনগর এয়ারপোর্টে নামতে পারে না। এর পরের ঘটনা ভারতীয় বাহিনীর সাথে জিহাদীদের লড়াই এর বর্ণনা, আছে লেফট্যানেন্ট কর্ণেল রায় আর বাঙালি ব্রিগেডিয়ার এল সেন এর বীরত্বের কাহিনীও। কিন্তু জিহাদীরা কতদূরে পিছু হঠেছিলো, অথবা ভারত আর পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর এর সীমানা ভাগ হলোই বা কিভাবে এই বইয়ে সেই ব্যাপারে বিশদ বর্ণনা নেই। এরপরে আলাদা করে আছে জম্মুর লড়াই এর বর্ণনা, সেখানে এক মুসলিম ভারতীয় সেনানায়কের বীরত্বের কাহিনীও। এক্ষেত্রেও সেই একই পুর্নাঙ্গ তথ্য নেই। ফারুক আবদুল্লাহ এর উথ্থানের কাহিনীও আছে, আছে হরি সিং এর সিংহাসন পাওয়ার কাহিনী, অবশেষে তিনি কিভাবে সিংহাসন হারালেন সে তথ্যও। অনেক নতুন তথ্য পেলাম এই বইয়ে, কতোটা নিরপেক্ষ যাচাই করিনি। তবে মনে হলো আরেকটু বিশদে লেখলে বোধহয় আরও বেশি স্বচ্ছ ধারণা পেতে পারতাম। তাছাড়া তিনটি আলাদা ঘটনা উঠে এসছে এই বইয়ে কিন্তু ঘটনা পরম্পরার মধ্যে সমন্বয়হীনতা ছিলো, ছিলো আগেরটা পরে পরেরটা আগে বলার ব্যাপারও।
সাল ১৯৪৫, দেশভাগ হয়েছে। একভাগ ভারত এবং অপরভাগ পাকিস্তান। দেশভাগের ফলে বিভিন্ন দেশীয় রাজারা যে যার সীমানা বরাবর ভারত বা পাকিস্তানের সঙ্গে যোগ দিয়েছে। কিন্তু কাশ্মীর পড়েছে দোটানায়। কারণ তার সীমানা রয়েছে দুই দেশের সঙ্গেই। ফলে কাশ্মীরের কোন দেশের সঙ্গে যুক্ত হওয়া উচিত তা কাশ্মীরের শেষ মহারাজা হরি সিং ভেবে পাচ্ছেন না। ভারতের নেতারা এই নিয়ে কিছু না বললেও, পাকিস্তান কর্তাদের সবুর হচ্ছে না আর। তারা চান কাশ্মীর তক্ষুনি তাদের দখলে আসুক। "খুদে নেতারা ঘুসি হুঙ্কার দিলেন, লড়কে লেঙ্গে—"
এরপর থেকেই শুরু হলো তাদের কাশ্মীর দখল করার পরিকল্পনা। প্রথমে শুরু হলো ভাতে মারা, তারপর শুরু হলো সরাসরি আক্রমণ। পাকিস্তানি হানাদারদের বাধা দিতে গিয়ে মহারাজা হরি সিংয়ের প্রধান সেনাপতি রাজেন্দ্র সিং নিহত হলেন। চারিদিকে শুরু হয়েছে নৃশংস হত্যাকাণ্ড। এমতো ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মহারাজা হরি সিং তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জওহরলাল নেহেরুর সাহায্য প্রার্থনা চেয়ে চিঠি পাঠান। এই সময়ই কাশ্মীর ভারতের সাথে যুক্ত হয় এবং প্রধানমন্ত্রী পাক হানাদারদের আটকাতে সেনাদের পাঠান শ্রীনগরে। এরপরই কাশ্মীরের ঝিলম নদীর তীর বরাবর শুরু হয় রক্তক্ষয়ী সংগ্রাম। ভারতের মাটি থেকে পাক হানাদারদের পিছু হটাতে একে একে প্রাণ যায় লেফটেনেন্ট কর্নেল দেওয়ান রণজিৎ রায়, ব্রিগেডিয়ার এল.পি.সেন, ব্রিগেডিয়ার ওসমান সহ বহু বীর সেনাদের। শোণিতপাতে ঝিলমের জল হয় রাঙা। শেষপর্যন্ত রাতের অন্ধকার কাটিয়ে সূর্যের আলো ফোটে, কাশ্মীর ফিরে পায় তার স্বাভাবিক অবস্থা। গায়ের জোরে পাক হানাদারদের কাশ্মীর দখলের পরিকল্পনা হয় বিফল। শ্রীনগরের রাজভবনে পাকিস্তানি পতাকা তোলার স্বপ্ন হয় না আর সফল।
"ঝিলম নদীর তীর" কেবল কাশ্মীর রক্ষা কাহিনীর উপর লিখিত বই নয়। এই বই সেই সকল বীর সেনাদের কাহিনী তুলে ধরেছে যারা তাদের অসীম সাহস নিয়ে, বীরত্ব দেখিয়ে রুখে দাঁড়িয়েছিল পাশবিক পাক হানাদারদের সামনে। রক্ত দিয়ে রক্ষা করেছে কাশ্মীরকে।
এই দেশের বুকে সাম্প্রদায়িকতার বীজ বপন করেছিল ইংরেজরা, যা আজ সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়েছে। দেশ ভাগের সময় থেকে আজ অবধি যার মাসুল আমাদের দিতে হচ্ছে। ফলস্বরূপ কাশ্মীর বারবার রক্তাক্ত হয়েছে। তবে ভারতীয় বীর সেনারা বরাবরের মতোই তাদের অসীম সাহস, বীরত্ব দিয়ে রক্ষা করেছে দেশের মাটি। থাবা বসাতে দেয়নি পাক পিশাচদের।
যাযাবর ওরফে বিনয় মুখোপাধ্যায়ের লেখা এই প্রথম পড়লাম। আর পড়ে আমি তো মুগ্ধ হয়ে গেলাম। শুধু পড়ছিলাম বললে ভুল বলা হবে, আমি চোখের সামনে সমস্ত দৃশ্য দেখতে পাচ্ছিলাম মনে হচ্ছিল। কি প্রাণবন্ত জীবন্ত লেখা! এক কথায় বললে অসাধারণ, হয়তো অসাধারণের থেকেও বেশি। এর সাথে উপরি পাওনা বইয়ের ভেতরের অলংকরণ গুলো। ওগুলো পড়ার প্রতি আকর্ষণ আরও বাড়িয়ে তুলছিল।
তবে শেষে আবারও বলবো, এ সত্যিই এক অসাধারণ বই। আর পাঠকদের বলবো যারা এখনও পড়েননি দ্রুত পড়ে ফেলুন। আশা করি ভালো লাগবে। তবে আমার মতে সবার পড়া উচিত এই বই।
কাশ্মীরের বারমুলার পথে যেতে যেতে চোখে পড়ে রাস্তার ধারে ছোট পাহাড়টির গায়ের কাছে একটি স্মৃতিফলক, একটি কাঠের বোর্ডে ইংরেজিতে লেখা-- "ভারতের সেইসব বীর শিখ সৈন্যদের কথা চিরকাল মনে থাকবে, যারা কাশ্মীরের স্বাধীনতা রক্ষায় ১৯৪৭ সালের ২৭ অক্টোবর প্রথম এইখানে হানাদারদের রুখতে গিয়ে প্রাণ দিয়েছেন। "
কাশ্মীরে আরও আছে একটি ছোট্ট স্মৃতিস্তম্ভ । পাথরের মনুমেন্ট। তার চারদিক কাঠের রেলিং দিয়ে ঘেরা। ইংরেজিতে কী লেখা আছে তা স্থানীয় পাড়া গাঁয়ের লেখাপড়া না জানা লোকগুলোর জানার দরকার পড়ে না, তবে স্মৃতিস্তম্ভের সামনে দিয়ে যাবার সময় কপালে হাত ঠেকিয়ে, -' কর্নীল রা বাবর থপ। ওয়ে ওহি থে জিনহোনে হামকো বচায়া।" বলতে ভুল হয় না।
১৯৪৭ সালের ২৫ অক্টোবর কাশ্মীরের শেষ মহারাজ হরি সিং অন্ধকার রাজপুরীর খাসকামরায় লণ্ঠনের আলোতে বসে একটা চিঠি লেখেন। করুনা প্রার্থনা করেন ভারতের নতুন সরকারের কাছে। লিখলেন-- " এক্ষুনি সৈন্য-সামন্ত পাঠিয়ে কাশ্মীরকে রক্ষা করুন। দোহাই, তাঁর চল্লিশ লক্ষ লোককে বাঁচান।"
সেই থেকে শুরু হয় ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে কাশ্মীর নিয়ে যুদ্ধ, যা অনেক বছর অনেক রক্তের বিনিময়ে শেষ হয়।
একই সাথে সম্পর্কযুক্ত দুটি কাহিনি নিয়ে এই বই " ঝিলম নদীর তীর"। একটি, কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে ভারতের সাথে পাকিস্তানের লড়াই এবং অবশেষে ভারতের বিজয়। এই বিজয়ে যাদের অংশগ্রহণ ও অবদান তার ধারাবাহিকতায় প্রবাহিত হয়েছে কাহিনি। অন্য একটা, যা একশ বছর আগের কথা। কাশ্মীরের শেষ অদিপতি হরি সিং রজার পুত্র নয়, ভাতুষ্পুত্র। ভাইয়ে ভাইয়ে দ্বন্দ্ব যা চিরাচরিত রাজপরিবারে ঘটে থাকলেও এ কাহিনি অনেকটা আদালা।
যাযাবর এর লেখা "ঝিলম নদীর তীর" কাশ্মীর নিয়ে পাকিস্তান ও ভারত এর মধ্যে যুদ্ধের একটি তথ্যভিক্তিক বই। এখানে কাশ্মীরের ভূপ্রকৃতি ও তার সৌন্দর্য উঠে আসেনি, তবে ৪৭ পরবর্তী ঘটনা ও সেই ঘটনার সাথে জড়িয়ে থাকা ব্যক্তিদের কথা উঠে এসেছে। অসাধারণ এক বই।লেখকের লেখা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নাই।
It is so bad I want to give you a zero, but that's not possible. So, I give you a one.
ছোটোখাটো বই। তারমধ্যে কাশ্মীর যে আটবে না তা বুঝেই পড়া শুরু করেছিলাম। পুরা বইয়ের কাহিনী এলোমেলো। তার ভেতর কিছু চ্যাপ্টার জুরে কিছু ভারতীয় সেনাবাহিনীর অফিসারদের বন্দনা। পুরো বইয়ে প্রচন্ড সাম্প্রদায়িক মনোভাব প্রকাশ পেয়েছে। 'ভারতীয় সাহসী সেনাবাহিনী কতৃক পাকিস্তানি হানাদারদের নির্মম পরাজয়'- ঘুরে ফিরে কাহিনী এই।
ভালো লাগার যে বিষয়টা ছিল তা হচ্ছে কাশ্মীর এর প্রকৃতির বর্ণনা। বইয়ের একেবারে শুরুতে আর শেষের কিছু লাইন সাবলীল আর ছন্দময় ছিল।
This slim book recounts the thrilling tale of how the erstwhile princely state of Jammu & Kashmir acceded to India, under the threat of invasion by Pakistan-supported troops. The best part is that it's all factual.
We all are well versed about the present situation in J&K, but many of us do not know when, where, how and why it started. We do not understand who the main heroes were who faced the situation undauntingly and laid down their lives to protect the people.
The traitors, the invaders, the two faced Janus are all clearly outlined in this book.
Written by Binoy Mukhopadhyay, under the pseudonym Jajabor, this book has been translated in English by Sujit Kr Das.
What was Jinnah's role in forming Pakistan thus playing a major role in India's partition? After Pakistan attacked Kashmir in 1947, how did Indian Army fight back? Many important questions have been answered in this book. One has to read to know the answers of such questions and many more...