বাঙালির হোমস-চর্চার সনাতন কৃষ্টিতে এক ধ্রুপদী সংযোজন হয়ে রইল এই মননদীপ্ত বইটি। চেনা মুখের অচেনা আদল, পথঘাটের সুলুকসন্ধান, ইতিহাসের সালতামামি, স্থানকালপাত্রের ঠিকুজি-কুলুজি আর স্মৃতি-বিস্মৃতির কিওরোস্কিউরোতে মায়াময় হয়ে ওঠা লন্ডন। অনুসন্ধিৎসু পাঠকের সম্ভাব্য সব ধরনের কৌতূহল নিবারণের দরাজ আয়োজন এ-বইতে। এক কথায় বঙ্গীয় হোমস-অনুরাগীর যখের ধন। বইটিকে শুধুমাত্র নতুন সংস্করণ বললে ভুল হবে, এ এক বৌদ্ধিক সম্প্রসারণ যা অনায়াসে দেশ ও কালের গণ্ডী উত্তীর্ণ হবার দাবী রাখে।
সূচিপত্র –
এ স্টাডি ইন স্কারলেট দ্য সাইন অফ ফোর দ্য হাউন্ড অফ দ্য বাস্কারভিলস ভ্যালি অফ ফিয়ার টীকা
Sir Arthur Ignatius Conan Doyle was a Scottish writer and physician. He created the character Sherlock Holmes in 1887 for A Study in Scarlet, the first of four novels and fifty-six short stories about Holmes and Dr. Watson. The Sherlock Holmes stories are milestones in the field of crime fiction.
Doyle was a prolific writer. In addition to the Holmes stories, his works include fantasy and science fiction stories about Professor Challenger, and humorous stories about the Napoleonic soldier Brigadier Gerard, as well as plays, romances, poetry, non-fiction, and historical novels. One of Doyle's early short stories, "J. Habakuk Jephson's Statement" (1884), helped to popularise the mystery of the brigantine Mary Celeste, found drifting at sea with no crew member aboard.
আমি প্রথম শার্লক হোমস পড়েছিলাম চুরি করা টাকায়, ক্লাস সিক্সে পড়ার সময়। কার পকেট মেরেছিলাম, কীভাবে মেরেছিলাম, এইসব বৃত্তান্ত আপাতত "ক্লাসিফায়েড" থাকুক। কিন্তু একটা বিষয় অনুধাবন করতে পেরেছিলাম— বই কেনার জন্যে হাতসাফাই খুবই তৃপ্তিদায়ক একটি কাজ। চুরির টাকায় কেনা বইটিতে শার্লকের ছোটগল্প এবং উপন্যাস সমস্তকিছু একটা খণ্ডেই আঁটিয়ে দেওয়া হয়েছিল। অনুবাদক ছিলেন নচিকেতা ঘোষ (কামিনী প্রকাশনী)। অনুবাদটা ভালো ছিল না।
তারপর পড়েছিলাম "তুলি-কলম" থেকে প্রকাশিত শার্লকের সম্ভবত সবচেয়ে জনপ্রিয় বাংলা অনুবাদ। অনুবাদকের নাম মণীন্দ্র দত্ত। অনুবাদের মান আগেরটার চাইতে ভালো ছিল। ততদিনে শার্লক হোমসের মহিমা আমি বেশ ভালোমতোই ধরে ফেলতে পেরেছি। একই কাহিনি একাধিকবার পড়লেও আশ মিটছে না। দ্য হাউন্ড অভ দা বাস্কারভিলস উপন্যাসটা সারাজীবনে আমি বোধহয় দশবার পড়েছি।
মূল ইংরিজি লেখাগুলো পড়েছিলাম কলেজে পড়ার সময়। প্রায় সবক'টা গল্পই আগে থেকে পরিচিত থাকায় ইংরিজি রচনাশৈলী উপভোগ করতে আরেকটু বেশি সুবিধে হয়েছিল। কিন্তু তার চেয়েও বড় কথা, সেই প্রথম আমি বুঝতে পারি, বাঙালি অনুবাদকরা তাঁদের অনুবাদে বেশ খানিকটা জল মিশিয়ে রেখেছেন। কোনো লাইনকে আক্ষরিকভাবে বঙ্গায়িত করার প্রচেষ্টায়, কিংবা আপন মনের মাধুরী মেশানোর চক্করে, শার্লক হোমসের প্রকৃত চেহারা পুরোপুরি সফলভাবে ফুটে ওঠেনি। অনুবাদে অনুবাদ-অনুবাদ গন্ধ রয়ে গেছে।
শার্লকের যে-বাংলা অনুবাদটা পড়ে প্রথম পুরোপুরি তৃপ্তি পেয়েছিলাম সেটা হলো মানবেন্দ্র বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা "বাস্কারভিলস"-এর অনুবাদ। তারপরে পড়লাম মানবেন্দ্রবাবুরই "দ্য সাইন অভ ফোর"-এর অনুবাদ। দুঃখের বিষয় তিনি শার্লকের আর কোনো অনুবাদ করেননি। বাঙালি শার্লকপ্রেমীদের জন্যে সেই অভাব পূরণ করে দিয়েছেন দ্য গ্রেট অদ্রীশ বর্ধন মশাই।
বেঙ্গল পাবলিশার্স নামে অধুনা-বিলুপ্ত একটি প্রকাশন সংস্থা ছিল। অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদে শার্লকের সমস্ত রচনা পাঁচটা আলাদা খণ্ডে পাওয়া যেত। আমার কাছে প্রথম চারটে ছিল। সে-ই পুরোনো লেটারপ্রেসে ছাপা বই। কিন্তু পঞ্চম খণ্ডটা বহু খুঁজেও জোগাড় করতে পারিনি। অসম্পূর্ণ সেই সেটটা আলমারিতে মাঝে মাঝে দেখতাম আর দীর্ঘশ্বাস ছাড়তাম। আমার বোন আমার এই ফোঁস ফোঁস শব্দে হতাশ দীর্ঘশ্বাসের কারণটা জানতো।
বছর সাতেক আগে এক ভাইফোঁটায় আমার বোন কাগজে মোড়ানো বেশ ভারী একটা উপহার দিলো আমাকে। হাতে নিয়েই বুঝেছিলাম বই, কিন্তু মোড়ক খুলে আমার খাদের ধারে দাঁড়ানো প্রফেসর মরিয়ার্টির মতো হতভম্ব অবস্থা। লালমাটি প্রকাশন থেকে সদ্য প্রকাশিত খুব চমৎকার দুই খণ্ডে অদ্রীশ বর্ধনের অনুবাদ করা শার্লক হোমস সমগ্র! ভাইফোঁটার অনুষ্ঠান, খাওয়া দাওয়া, সবকিছু মাথায় উঠলো।
অদ্রীশ বর্ধনের কাজটাই আমার পড়া শার্লকের সবচে ভালো বাংলা অনুবাদ। বাংলা রহস্য এবং সায়েন্স ফিকশন সাহিত্যের জগতে অদ্রীশবাবু নিজেই এক একক প্রতিষ্ঠান। শার্লক ছাড়াও তিনি জুল ভার্নের সব রচনা বাংলায় অনুবাদ করেছেন। এডগার অ্যালান পো-র সমস্ত কাহিনি বাংলায় অনুবাদ করেছেন। ফাদার ব্রাউনের গল্পের অনুকরণে তৈরি করেছেন ফাদার ঘনশ্যাম নামের একটি চরিত্র। বিশাল আয়তনের "কথাসরিৎসাগর" বইয়ের পুরোটা অনুবাদ করেছেন (তাঁর এই কাজটি খুব বেশি পরিচিতি পায়নি)। কিন্তু নির্দ্বিধায় বলা যায় হোমসের অনুবাদই তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ। এই দুর্দান্ত কাজটিকে লালমাটি প্রকাশন যথাযোগ্য সম্মান দিয়ে প্রকাশ করেছে।
প্রত্যেক শার্লকপ্রেমীই সিডনি প্যাজেট-এর অলংকরণের কথা জানেন। এছাড়া বিলিতি দ্য স্ট্র্যান্ড ম্যাগাজিনের নাম তো নিশ্চয়ই শুনেছেন। লালমাটি প্রকাশনের এই বইটিতে পুরোনো সেইসব অলংকরণ এবং আনুষঙ্গিক আরো অনেক কিছু পুনর্মুদ্রিত হয়েছে। ফলে বইটির নান্দনিক মূল্য এক লাফে অনেকটা বেড়ে গেছে। এছাড়া নতুন এই সংস্করণের আরো একটি আকর্ষণ আছে।
এমনিতে কোনো বইতে খুব বেশি টীকাটিপ্পনী আমার ভালো লাগেনা। শার্লক এবং অদ্রীশ বর্ধন যুগলবন্দীর এই নতুন সংকলনে প্রচুর প্রচুর প্রচুর টীকা সংযোজিত হয়েছে। টীকাগুলো আমার খুব কাজে লেগেছে। শার্লক-সমকালীন পুরোনো ইংল্যান্ডকে জানতে (ইতিহাস এবং ভূগোল— দুই দিক দিয়েই) ; তৎকালীন বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা, যেগুলোর সঙ্গে গল্পের যোগসাজশ রয়েছে ; কিংবা একটি গল্পকে বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে বুঝতে সাহায্য করা, ইত্যাদি সবকিছু বিবেচনা করলে এই টীকাগুলো খুবই উপাদেয় বস্তু। প্রসেনজিৎ দাশগুপ্ত এবং সৌম্যেন পাল প্রশংসনীয় এবং পরিশ্রমী কাজ করেছেন।
যদি কেউ বাংলা ভাষায় তৃপ্তিসহকারে শার্লক হোমসের গল্প-উপন্যাস উপভোগ করতে চান, চোখ বন্ধ করে এই সংস্করণটি বেছে নিতে পারেন। অনুবাদের মুনশিয়ানা, অলংকরণের প্রাচুর্য, দৃষ্টিনন্দন গ্রন্থনির্মাণ— সব দিক দিয়ে এই সংস্করণটি দুর্দান্ত। সবার শার্লক-পাঠ আনন্দময় হোক!
অমর এক চরিত্রের যোগ্যতম বঙ্গানুবাদ। গুরুর প্রতি এরচেয়ে বেশি সুবিচার করা সম্ভব ছিল না আর কারো পক্ষে। সফট কপিটা সর্বদাই কিন্ডলে থাকে, টাকাপয়সা হলে হার্ড কপিটাকেও শেলফে ওঠানোর আশা রাখি।
শার্লক হোমসের গল্প ছোটবেলায়ই বিভিন্ন সময়ে পড়া আছে। সব পড়েছি কিনা জানিনা। তাই এবার সমগ্র পেয়ে লাভ হল। কিংবদন্তি গোয়েন্দা, নাহ, গোয়েন্দাদের গোয়েন্দা বলাই ভাল। যেখানে কেউ সমস্যার সমাধান দিতে পারে না সেখানে দ্বারস্থ হয় শার্লক হোমসের কাছে। দুর্দান্ত ডিডাকশন ক্ষমতা ব্যাবহার করে সেসব সমস্যার সমাধান আসে হোমসের কাছ থেকে। এই বইটিতে চারটি বড় উপন্যাস রয়েছে। প্রথম উপন্যাস এ স্টাডি ইন স্কারলেট। প্রতিশোধ কি পরিমানে ভয়ংকর হতে পারে সেইটা এই উপন্যাসে পেলাম। শার্লক হোমসের ডিডাকশন মেথডের ব্যাবহার কেমনে অপরাধী ধরার কাজে লাগে তাও বুঝলাম। কে এই গল্পের ভিলেন সেটা লেখক আসলে পাঠকের হাতে ছেড়ে দিয়েছেন। দ্বিতীয় উপন্যাস দি সাইন অফ ফোর। ভালোই লাগল। কিন্তু প্রথম উপন্যাসে ওয়াটসন যেমন বলেছিল যে শার্লক হোমসের সাহিত্যগত ধারনা কম, সেটার কোন প্রমাণ পেলাম না। বরং মনে হল ব্যাপক ভাল জ্ঞান রাখেন। যেভাবে গ্যেটের কবিতা আউড়ে গেল তাতে সে ধারনাই হয়। অপরাধী জোনাথন স্মলের পাপের গল্পই বেশী পড়লাম। ওয়াটসনের প্রেমও হয়ে গেল। পেয়ে গেলো জীবনসংগী মেরী মর্সটানকে। একটা জিনিশ চোখে লাগার মত। সিপাহি বিদ্রোহের পুরোটা না জেনে কেউ এ উপন্যাস পড়লে তাতে তৎকালীন ভারতবাসীকে বর্বর আর বিনা কারণে ইংরেজ হত্যাকারী মনে হবে। যাই হোক কল্পবিজ্ঞান আর ডিটেকটিভ উপন্যাস হিসেবে ছাড় দেয়া গেল। এর পরেই রয়েছে দ্য হাউন্ড অফ বাস্কারভিল। এটি শার্লক হোমসের পড়া উপন্যাসগু���োর মধ্যে ভাল। শুধু ডিটেকটিভ না বলে খানিকটা থ্রিলারও বলা যেতে পারে। এক সুপ্রাচীন বংশধর বহু বছর পরে বাস্কারভিলে ফেরত আসে একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে। সম্পত্তির মূল্য কম নয়, সাড়ে সাত লক্ষ পাউন্ড। কিন্তু এই পরিবারের উপরে রয়েছে এক হিংস্র কুকুরের অভিশাপ। যার দরুন জীবন চলে যায় এক এক করে ওই পরিবারের সদস্যদের। কিন্তু এবার বাধ সাধেন স্বয়ং শার্লক হোমস। বাস্কারভিলের প্রাণঘাতী কুকুরের রহস্য ভেদ করে ফেলে হোমস।পুরো উপন্যাসটা ওয়াটসনের জবানীতে লেখা। গা ছমছমে আবহাওয়ার বর্ণনাও দিয়েছেন আকর্ষণীয় ভংগীতে। সব মিলিয়ে ব্যাপক মজা পেয়েছি। শেষ উপন্যাস হিসেবে রয়েছে ভ্যালি অফ ফিয়ার। এটা পড়ে আমার মিশ্র প্রতিক্রিয়া হয়েছে। শার্লকের হোমসের উপস্থিতি উজ্জ্বল মনে হল না খুব একটা। কিন্তু ম্যাকমুর্ডোর গল্পটা অসাধারণ। পিকারটন সম্পর্কে জেনে মজা পেলাম খুব। এই পিকারটন বাস্তবে আছে। ভ্যালি অফ ফিয়ারের নৃশংস কাহিনী অন্ধের মত পড়ে গিয়েছি। কিন্তু মরিয়ার্টি কেমনে ফিট খেল সেটা বের করতে পারলাম নাহ। সব মিলায় বেশ ভালই লেগেছে। স্যার আর্থার কোনান ডয়েল পাড় ব্রিটিশ। একটু অন্যান্য জাতিকে খোলা চোখে দেখলেও পারতেন। কিন্তু কিছু কিছু থিওরি চরম বাস্তব। মানে আপনি সবখানে কাজে লাগাতে পারবেন। এর মধ্যে আমার খুব ভাল লেগেছে এমন একটি কথা হল "তুমি যখন একটি অসম্ভব এবং অবাস্তব ঘটনা বাদ দেবে, এর পরে যাই থাকে তাই সত্য।" রিভিউ পড়ে দেখেছি অনেকে বলল যে এই অনুবাদ ভাল। হ্যা, কথাটা খারাপ না। আগে যেটা পড়েছি সেটা থেকে অনেক ভাল। তাও কিছু কিছু যায়গায় মনে হল তাল কেটে গেছে। জানিনা, সেটা আমার ভুলও হতে পারে।
শার্লক হোমস:গোয়েন্দাদের গোয়েন্দা। আর সাথে পরম বন্ধু ডক্টর জন ওয়াটসনও কম যায় না। এক্কেবারে মানিক জোড়। সবচেয়ে বেশি ভালো লেগেছে লাস্টের দুটোই, এক ভয়াল হাউন্ড আর উপত্যকার কাহিনী। অপেক্ষায় ছিলাম মরিয়ার্টি নামটা কখন দেখতে পাবো, পেলামও শেষের কাহিনীটায়। পড়ার সময় বারবার বেনেডিক্ট আর মার্টিনের চেহারা ভেসে উঠছিল চোখের সামনে। দুর্দান্ত অভিনয়ই করেছে বটে। আর অনুবাদটি বলতে গেলে খাসা ছিল, ৫ তারকার যোগ্যতম। শেষে আইরিন এডলারের মতোই বলবো," আই এম শার্লকড😊"