প্রমথ চৌধুরী (; জন্মঃ আগস্ট ৭, ১৮৬৮; মৃত্যুঃ সেপ্টেম্বর ২, ১৯৪৬) বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রাবন্ধিক, কবি ও লেখক। তাঁর পৈতৃক নিবাস ছিল বাংলাদেশের পাবনা জেলার চাটমোহর উপজেলার হরিপুর গ্রামে। তিনি বাংলা সাহিত্যে প্রথম বিদ্রূপাত্মক প্রবন্ধ রচনা করেন এবং তিনি বাংলা গদ্যে চলিতরীতির প্রবর্তক।
Pramathanath Chaudhuri (Bengali: প্রমথনাথ চৌধুরী), known as Pramatha Chaudhuri, alias Birbal, is an exceptionally illuminating persona in modern Bengali literature. It is astounding how he kept hold of his uniqueness in all-pervasive era of Rabindranath Tagore. As the editor of Sabuj Patra ("Green Leaves",1914) and the mentor of the group that gathered around this journal, Chaudhuri left a lasting legacy to the literature of Bengal.
Profoundly patriotic and a stated cosmopolitan, aficionado of Sanskrit, Pramatha Chaudhuri had immense faith in the native genius of the Bengali. “Today if the traditional high Bengali with its stilted Sanskritic elements makes place, more and more, for a form of spoken Bengali, if ‘current’ Bengali is considered an effective medium of literature of Bengal (including the part that is now Bangladesh)- much of the credit must go to Pramatha Chaudhuri and his magazine Sabuj Patra,” says Arun Kumar Mukhopadhyay. Rabindranath Tagore evoked, “He (Chaudhuri) gave this magazine (Sabuj Patra) its distinctive character and paved the way for my literary activities to brunch out in new directions.”
Pramatha Chaudhuri was not only a pioneer; he was also a creative author of exceptional abilities in writing essays and fiction in specific. According to Arun Kumar Mukhopadhyay, “He is undoubtedly one of the most influential makers of the Bengali language and literature in the twentieth century.”
স্কুল-কলেজে পড়াকালীন চেঁচিয়ে পাড়া একাকার করেছি, "সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরীর ছদ্মনাম 'বীরবল।' " অথচ কখনো বীরবল নামধারণ করে তিনি কী লিখেছেন তা পড়ি নি। "বীরবলের হালখাতা" যখন পড়লাম, অত্যন্ত বিস্ময়ে আবিষ্কার করলাম কত সুন্দর,সাবলীল গদ্য লিখেছেন প্রমথ চৌধুরী। হ্যা, দুটো গদ্য পাঠ্যবইতে পড়েছিলাম। কিন্তু নিতান্তই তা নম্বরের লোভে।তাতে লেখার রস আস্বাদন করার সদিচ্ছা মনে জাগে নি।
ত্রিশটি নানা স্বাদের প্রবন্ধ নিয়ে এই বই। তবে বেশিরভাগের বিষয়বস্তু বাঙালির সাহিত্যচর্চা,মননশীলতা ও শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে।আর প্রবন্ধগুলো প্রায় সবই "সবুজপত্র" - সাময়িকীতে বেরিয়েছিল।
বাঙালিকে হাড়ে-অস্থিতে চিনেছিলেন প্রমথ চৌধুরী। সেই চেনার দরুন "হালখাতা" নামক পয়েলা প্রবন্ধেই নববর্ষের গুণাগুণ বর্ণনপূর্বক বাঙালি জাতের অবস্থা নিয়ে লিখেছেন,
" বৎসরের পর বৎসর যায়, আবার আসে।কিন্তু আমাদের নূতন লাভের খাতায় কিছু নূতন কথা থাকে না। আমরা এক হালখাতা থেকে আরেক হালখাতায় শুধু লোকসানের ঘরটা বাড়িয়ে চলেছি। এভাবে আর চললে কিছুদিন পর আমাদের জাতকে যে দেউলে হতে হবে, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই।"
প্রবন্ধগুলোর প্রেক্ষাপট ইংরেজশাসিত ভারতবর্ষ। তাই সেইসময়ে বঙ্গশার্দুলদের অনেকেই শিক্ষা নিয়ে শিল্প,সাহিত্য আর শাস্ত্রজগতে খোদ ইংরেজের ওপর খোদকারী করতে কতটা পারঙ্গম ছিল তা নিয়ে পুরো বইতে বিস্তর লিখেছেন প্রমথ চৌধুরী। নিজের শক্তিমান কলমে আক্রমণ করেছেন তাদের। যার যা হবার নয়, সে তাই হতে চাইছে এমন ভঙি সর্বত্র সে বিষয়ে ক্ষেদ চেপে রাখতে পারেন নি। জাতির বিজ্ঞতা নিয়ে উপহাস করতে গিয়ে লিখেন,
" বিজ্ঞতা জিনিসটা আমাদের বর্তমান অবস্থার একটি ফল মাত্র। এ অবস্থাকে ইংরেজিতে বলে, Transition Period অর্থাৎ আমাদের জাতির বয়ঃসন্ধি উপস্থিত।"
বয়ঃসন্ধিতে থাকা জাতের মননশীলতা কেমন হবে তা নিয়ে সুতীক্ষ্ণ খোঁচার অন্ত ছিল না বইতে। যেমনটি খোঁচা দিয়েছেন বিপিনচন্দ্র পালসহ অন্যান্যদের যারা চলিত ভাষারীতির ঘোরতর বিরোধী ছিলেন।আর এই বিষয়টি ইঙ্গিত দিচ্ছিল, প্রমথ চৌধুরীর চলিত ভাষারীতি প্রবর্তনের পথটি মসৃণ তো ছিলই না, বরং সেকালের অনেক রথী-মহারথীরা তাদের বিদ্যা-বুদ্ধির রথ নিয়ে পথ আগলে রাখছিলেন জনাব চৌধুরীকে বাধা দিতে। সেইসময়েই আরেকদল পন্ডিতের অস্তিত্ব পাওয়া যায়, যারা বাংলাকে সংস্কৃতের দুহিতা বানাতে জং লড়তে রাজি আছে।গদ্যকার তাদের সেই সাধ-আহ্লাদ মাটি করে দিয়ে লিখেছেন,
" বিচার না করে একরাশ সংস্কৃত শব্দ জড়ো করলেই ভাষারও শ্রীবৃদ্ধি হবে না, সাহিত্যেরও গৌরব বাড়বে না, মনোভাবও পরিষ্কার ব্যক্ত হবে না। "
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সমসাময়িক প্রমথ চৌধুরী। তিনি রবীন্দ্রনাথকে ভক্তির বস্তু মনে করতেন বলে লেখা সাক্ষ্য দেয় না, বরং তিনি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সাহিত্যের মূল্যায়ন করে তার গ্রহণ কিংবা বর্জনের পক্ষপাতী ছিলেন।সেই যাচাইকরণের মাধ্যমেই রবীন্দ্রনাথ ছিল প্রমথ চৌধুরীর শ্রদ্ধার পাত্র। দিজেন্দ্রলাল রায়ের সাথে রবিঠাকুরের সম্পর্ক বিশেষ ভালো ছিল বলে মনে হয় না। যখন থিয়েটারে ডি এল রায়ের নাটক নিয়ে রায় মহাশয়কে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপের সম্মুখীন হতে হয়েছে, তখন ডি এল রায়ের পক্ষে কলম ধরেছেন বীরবল প্রমথ চৌধুরী। বাজারের চে' পোকায় যে বইয়ের কাটতি ঢের বেশি সেই আফসোস নিয়ে লিখতে বসে একই কলামে লিখেছেন বাঙালির বই কেন বিকোয় না, যাদের বই লোকে কেনে তারা নাকি, উচ্চও নয়, নিম্নও নন, মাঝারি লিখিয়ে বলে দাবি করেছেন প্রমথ চৌধুরী।যারা বই কেনেন, তাদের উৎসাহ দিয়ে লিখেছেন,
" গ্রন্থক্রেতা যে নিঃস্বার্থে পরোপকার করেন তা নয়। চারিদিকে বই দ্বারা পরিবৃত্ত হয়ে থাকাতে একটা উপকার আছে। চব্বিশঘণ্টা চোখের সম্মুখে থেকে এই সত্যটি স্মরণ করিয়ে দেয় যে, এই পৃথিবীতে চামড়ায় ঢাকা মন নামক একটি পদার্থ আছে।"
প্রথম মহাযুদ্ধ চলছে। সেই সময়ে বীরবলরূপী প্রমথ চৌধুরী এই প্রশ্ন রেখেছেন, একজন যদি অপরকে মারে তবে তা অপরাধ হলে, অনেকজন মিলে অনেকজনকে মারলে তা অপরাধ নয় কেন? পণপ্রথা, বাল্যবিবাহ দুইই সমাজের ক্যান্সার বিশেষ। সাহিত্যিক প্রমথ চৌধুরী শুধু সাহিত্যাঙ্গন নিয়েই ভাবেন নি। পণপ্রথা,বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধেও কলম ধরেছেন। কংগ্রেসের রাজনৈতিক কৌশলের, ভূমিকার সমালোচনা করেছেন। সমাজের ধর্মই যে নষ্ট করা মনকে, মননকে, সৃষ্টিশীলতাকে তা বেশ পরিষ্কারভাবে ব্যক্ত করেছেন। শিক্ষা নিয়ে অনেককিছু লিখেছেন তিনি। তবে মাথায় গেঁথে আছে "তরজমা " নামক প্রবন্ধের কথাটি,
" পাঁচটাকা বেতনের গুরু- নামক গোরু দ্বারা তাড়িত হওয়া অপেক্ষা চাষার ছেলের পক্ষে গোরু তাড়ানো শ্রেয়। 'ক'- অক্ষর যেকোনো লোকের পক্ষেই যে গোমাংস হওয়া উচিত সে কথা সকলেই মানি।কিন্তু 'ক' - অক্ষরে যে আমাদের রক্তমাংস হওয়া উচিত এ ধারণা সকলের নেই।"
১৮০ পৃষ্ঠার দারুণ গদ্য "বীরবলের হালখাতা"। অনেকগুলো বিষয়ে পাঠককে ইঙ্গিত দেয় এই বই। বিশশতকের গোড়ার বাংলার শিক্ষিত মধ্যবিত্ত সমাজের চরিত্র। আমি যদি আরো পরিষ্কার করে বলি, গত শতকের সাহিত্যসচেতন সম্প্রদায়ের মনোভাব নিয়ে একটি ধারণা পেয়েছি এই বইতে। পড়তে গিয়ে ভাবনা জগতে আচমকা প্রশ্ন জেগেছে তথাকথিত সাহিত্যপ্রেমীদের মনোজগত সব সময়েই কী এমন ছিল? কিংবা এরা এতো সংস্কারবিরোধীই বা কেন ছিল?
তবে আপত্তি আছে অন্যখানে। যখন প্রমথ চৌধুরী বীরবলের হালখাতা লিখছেন, তখনও বঙ্গের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষ বাঙালি মুসলমান। অথচ সারা বই তন্নতন্ন করে খুঁজলেও বোঝার উপায় নেই বঙ্গে বাঙালি মুসলমান বলে কোনো প্রাণীর অস্তিত্ব আছে। "হালখাতা" প্রবন্ধে বাঙালির পরিচয় দিলেন, " বোস ঘোষ দে মিত্র গুহ " ইত্যাদি উল্লেখ করে! আবার লিখলেন,
" ধর্ম এবং নীতির দোহাই দিয়েই মুসলমানেরা আলেকজান্ড্রিয়ার লাইব্রেরি ভস্মসাৎ করেছিল। "
অথচ এটি একটি বিতর্কিত তথ্যমাত্র। প্রমাণিত কোনো সত্য নয়। অনেক ঐতিহাসিক একে মিথ বৈ কিছু ভাবতে রাজি নন। অথচ প্রমথ চৌধুরীর মতো শিক্ষিত সচেতন লেখক যদি এই তথ্যকে ফলাও করেন তখন নিঃসন্দেহে বঙ্গে 'অসাম্প্রদায়িক' শব্দটির ভুল ভাবে কত লোকের নামের আগে আমরা ব্যবহার করি তা ভাবতে বসতে বাধ্য হই। তবুও প্রমথ চৌধুরীর "বীরবলের হালখাতা" একটি ভালো বই; সাহিত্যের স্বরূপ বুঝতে, শিক্ষার দোষ জানতে।
মসিজীবী, ছিবলেমি, পণ্ডিতপ্রবর, চ্যবনপ্রাশ, কুন্তলবৃষ্য, পরুষ, কুন্তলীন তাম্বুলীন, বৈশেষিকদর্শন, ইতোনষ্টস্তোভ্রষ্ট, ঋষিবাক্যসকল, কন্থা, বিশল্যকরণী, গন্ধমাদন, খেউড়, কেষ্টবিষ্টু, রণচণ্ডী, কান্তি, গালাভরা, সারঙ্গী, মতদ্বৈধ, জোতা, প্রত্য, চিদাকাশ, দোকর, বৈতানিক, বৈতালিক, ধষ্মিল্ল, প্রাড়বিবাক, মলিম্লুচে, কৌম্ভবমণি, ধ্বজবজ্রাঙ্কুশ, যাস্ক, ফেৎকারিনী, ডামর, উড্ডীশ, করঙ্ক, ভৃগুপোক্ত... দশজন মানুষকে বলা যাবে একটা বাংলা বই পড়েছি, বলাবাহুল্য, বইটি বাংলায় রচিত। আনন্দের বিষয় এই যে, ভাগ্যক্রমে লেখক বৈয়াকরণ নয় বরং ঘোরতর সাহিত্যস��রষ্টা। বইটি ৪০ শতাংশ পড়ে এই শব্দগুলো সংগ্রহ করেছিলাম। মাথার ভিতর অপারেশন থিয়েটার চালু হয়ে যায়। পরবর্তী অংশে অবশ্য এমন নতুন শব্দের ঝর্ণাধারার স্রোত ক্ষীণ হয়ে এসেছে। পরবর্তী অংশের কতক দুষ্পাচ্য শব্দ: খন্তা, ক্ষুদ্রাদপিক্ষুদ্র, আহেলা, কথাসরিৎসাগর, পরাঞ্জপে, বিদ্বন্মণ্ডলী, লগুড়, বরুণাস্ত্র ইত্যাদি। কিছু বাগধারাও উল্লেখ্য: কাব্যের ঝুমঝুমি, বিজ্ঞানের চুষিকাঠি, দর্শনের বেলুন, রাজনীতির রাঙালাঠি, ইতিহাসের ন্যাকড়ার পুতুল, নীতির টিনের ভেঁপু, ধর্মের জয়ঢাক। এ কয়টা কেবল একটা জায়গা থেকে খাবলা দিয়ে তুলে দিলাম। পুরো বই কেঁচে সব লিখে দিলে প্রমথ চৌধুরী নিজে এসে আমার কান মলে দিয়ে যেতে পারেন।
একটু উঁচুতে না-চড়লে আমরা দর্শক এবং শ্রোতৃমণ্ডলীর নয়ন-মন আকর্ষণ করতে পারি নে। বেদিতে না বসলে আমাদের উপদেশ কেউ মানে না, রঙ্গমঞ্চে না-চড়লে আমাদের অভিনয় কেউ দেখে না, আর কাষ্ঠমঞ্চে না-দাঁড়ালে আমাদের বক্তৃতা কেউ শোনে না। বেশি আলোয় আমাদের চোখ ঝলসে যায়, আর আমরা ফুলের ঘায়ে মূর্ছা যাই। লোকটা কী মাত্রার শাণিত মস্তিষ্কের ছিল কিছুটা টের পাওয়া যায় আমাদের ভোঁতা মস্তিষ্কে বাংলায় বাংলা অঞ্চলের ইতিহাস, আচার, সংস্কৃতির বিচার ও কটাক্ষের দফা রফা করে যুক্তি প্রবেশ করাতে গিয়ে। আরো দশজন প্রমথ চৌধুরী থাকলে পরে বোধ করি এই বুদ্ধিমাত্রাটাকে গা সওয়া করে নিতে পারতাম।
ভিতরে মালমশলা খুব একটা না থাকলেও ভাষার কারুকাজ চমৎকার। প্রবন্ধগুলো সব একশো বছরেরও বেশী আগে লেখা। সংক্ষেপে বাঙালির শুধু রবীন্দ্রনাথ ভালো আর বাকি সব খারাপ। বাঙালির চেহারা খারাপ, পোষাক খারাপ, সুর খারাপ, সাহিত্য খারাপ, বসন্ত নাই, শিশুসাহিত্য নাই, রাজনীতি খারাপ, যুদ্ধ করে না, অন্যদিকে ইউরোপীয়দের সব ভালো।
‘বীরবলের হালখাতা’ প্রমথ চৌধুরীর ৩০টি প্রবন্ধের সংকলন। তৎকালীন সাহিত্য, রাজনীতি ও সমাজনীতি নিয়ে বেশ যুক্তিপূর্ণ আলোচনা করেছেন লেখক। এই লেখাগুলো এমন একটা সময়ের যখন ভারতবাসী জনগণের মধ্যে জাতীয়তাবাদের উত্থান ঘটছে। প্রমথ চৌধুরী সেই সময় ‘সবুজ পত্র’ পত্রিকা সম্পাদনা করতেন। অনেকেই অবগত আছেন যে, বাংলা সাহিত্যে চলিত ভাষার প্রচলনে এই পত্রিকা অগ্রণী ভূমিকা পালন করেছিল। তবে তৎকালীন সাহিত্যিক মহলে এ নিয়ে কম জলঘোলা হয়নি। বিতর্ক যাই হোক, প্রমথ চৌধুরী প্রবর্তিত চলিতরীতি শেষ পর্যন্ত টিকে গেছে।
এই বইয়ের প্রবন্ধের শিরোনামের দিকে খেয়াল করলেই তৎকালের সাহিত্য সম্পর্কে কিছুটা ধারণা পাওয়া যায়। যেমন: ‘মলাট-সমালোচনা’, ‘সাহিত্যে চাবুক’, ‘তরজমা’, ‘বইয়ের ব্যবসা’, ‘বঙ্গসাহিত্যের নবযুগ’, ‘সাহিত্যে খেলা’ ও ‘শিশু-সাহিত্য’। কতিপয় প্রবন্ধ পড়লে বোঝা যায় প্রচলিত শিক্ষার প্রতি লেখক খুব একটা শ্রদ্ধাশীল ছিলেন না। যেমন: ‘শিক্ষার নব আদর্শ’ প্রবন্ধে তিনি বলেছেন, ‘আমাদের শিক্ষার ভিতর আনন্দ নেই বলে আনন্দের ভিতর যে শিক্ষা থাকতে পারে, তা আমাদের বুদ্ধির অগম্য’। গাধা পিটিয়ে ঘোড়া বানানোর শিক্ষা পদ্ধতিকে চিরকাল অপছন্দ করে এসেছেন মননশীল এই লেখক।
‘সবুজ পত্র’ পত্রিকায় প্রকাশিত কতিপয় সমালোচনার জবাবও এই গ্রন্থে প্রবন্ধাকারে উল্লিখিত হয়েছে। এছাড়া ‘কনগ্রেসের আইডিয়াল’ প্রবন্ধে লেখকের রাজনৈতিক জ্ঞানের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘আমরা ও তোমরা’ প্রবন্ধে বেশ সরলভাবে লেখক বাঙালি ও পশ্চিমাদের জীবনযাত্রার পার্থক্য দেখিয়েছেন। বস্তুত, এই বইয়ের বিবিধ প্রবন্ধগুলোর মাধ্যমে লেখক যে প্রচলিত সমাজব্যবস্থার কোথাও খুব সূক্ষভাবে, কোথাও বা খুব কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন তা পাঠকমাত্রই বুঝতে পারবেন।