গল্পটা কোন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নয়, কিংবা ইতিহাসের বুকে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর কোন সত্যেরও নয়-যা প্রকাশ পেলে পাল্টে যাবে ইতিহাসের গতিপথ। বরং গল্পটা একজন ডিমোশন পাওয়া পুলিশ অফিসারের। একদিকে পারিবারিক বিপর্যয় অন্যদিকে ডিমোশন পেয়ে ক্যারিয়ারের যখন বারোটা বেজে গেছে এমন সময় অদ্ভুত এক কেসের দায়িত্ব এসে পড়ে ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের ওপরে। ময়মনসিংহ শহরের পরিত্যক্ত এক পুকুরের নিচ থেকে উদ্ধার হয় একটি পুরনো গাড়ি, সেটার ভেতরে একজন মানুষের লাশ। এই ঘটনার প্রকৃত স্বরূপ উদ্ধার করতে গিয়ে বাশার যখন দিশেহারা তখন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে সাংবাদিক জয়া সরকার। অন্যদিকে তাদের সাথে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে আর্কিওলজিস্ট রিফাত মজুমদার। ঘটনার পরিক্রমায় তারা জানতে পারে বর্তমান সময়ের এই অদ্ভুত রহস্য সমাধান করতে হলে তাদেরকে ডুব দিতে হবে অতীতের এক অন্ধকার সময়ে, যখন ভারতবর্ষের বুকে বিচরণ করে বেড়াত হিংস্রতম খুনে ডাকাতের দল, ইতিহাসে যারা ‘ঠগী’ নামে পরিচিত। বৃটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন জেমস ম্যাকফি আর ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের সাথে আপনাদেরকেও ঠগী’র অন্ধকার ভুবনে নিমন্ত্রণ।
রবিন জামান খান একজন বাংলাদেশি কথাসাহিত্যিক । রবিন জামান খানের জন্ম ময়মনসিংহ শহরে, পৈত্রিক নিবাস নেত্রকোনার কেন্দুয়ায়। শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি সাহিত্যে পড়ালেখা শেষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইংরেজি ভাষাতত্বে দ্বিতীয় মাস্টার্স সম্পন্ন করেন তিনি। পড়া-পড়ানো, শেখা-শেখানোর চর্চা থেকেই শিক্ষকতাকে পেশা ও লেখালেখিকে নেশা হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংকলনে বেশকিছু মৌলিক ও অনুবাদ গল্প লেখার পাশাপাশি লিখেছেন একাধিক টিভি নাটক। তার মৌলিক থৃলার উপন্যাস শব্দজাল, ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু, ব্ল্যাক বুদ্ধা, ফোরটি এইট আওয়ার্স, দিন শেষে, আরোহী ও অন্ধ প্রহর ইতিমধ্যেই অর্জন করেছে বিপুল পাঠক প্রিয়তা। বাংলাদেশের পাশাপাশি কলকাতা থেকে প্রকাশিত তার মৌলিক গ্রন্থ ২৫শে মার্চ, সপ্তরিপু ও শব্দজাল পশ্চিম বঙ্গের পাঠক মহলে ভালোবাসা কুড়িয়েছে। ভারতবর্ষের ইতিহাসের রহস্যময় ঘটনাবলী, সেইসাথে মানব মনের জটিল মনস্তত্ত্ব বিষয়ে আগ্রহ থেকে উনি বর্তমানে কাজ করে চলেছেন একাধিক ইতিহাস নির্ভর ও সাইকোলজিক্যাল থ্রিলার উপন্যাস নিয়ে। এরই প্রেক্ষিতে খুব শিঘ্রই প্রকাশিত হতে যাচ্ছে তার মৌলিক থ্রিলার উপন্যাস বিখন্ডিত, রাজদ্রোহী, ধূম্রজাল, সিপাহী, অশ্বারোহী, মুক্তি। রবিন জামান খান ঢাকায় প্রথম সারির একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগের সহকারি অধ্যাপক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি গবষেণা করছেন তিনি।
সপ্তরিপু তথা অতি আশক্তি। বই নামকরন এরচেয়ে সফল হতে পারেনা। লেখকের লেখনীতে যা ফুটিয়ে তুলেছেন তা সপ্তরিপুতে আপনার আগ্রহ কেন, আশক্তি জন্মাতে বাধ্য!
দুটি ভিন্ন টাইম লাইন, ভিন্ন ঘটনা একই সুতোই গেথে এত দারুন এক্সিকিউশন যে করা সম্ভব তা গল্প শেষ করার আগ মুহূর্তেও বুঝতে উঠতে পারিনি। গল্পের প্লট যেমন শক্ত ছিল, তেমনি ছিল চরিত্র চিত্রন৷ তবে কিছু কিছু যায়গায় মনে হয়েছে প্রধান চরিত্রের যতটা ফোকাস প্রাপ্য তার তুলনায় একটু কমই পেয়েছে। কিন্তু বাকি সব কিছু দিয়ে লেখক তার অভাব ঠিকই পুরন করে দিয়েছেন।
অতীত বর্তমানের সংমিশ্রণ সাথে ঝকঝকে গতিময় ডিটেইলস এর সাথে লেখা সপ্তরিপু বাংলার মৌলিক থ্রিলারে অন্যন্য সংযোজন।
ঠগী নিয়ে আমার প্রথম মুগ্ধতা আসে অভীক সরকারের "এবং ইনকুইজিশন" বইটির 'শোধ' গল্পটি পড়ার পর। তারপর একে একে শ্রীপান্থ, ফিলিপ মিডোয টেইলর শেষ করার পর শুরু করছিলাম বহুল আকাঙ্ক্ষিত রবিন জামানের ‘সপ্তরিপু’। একেবারে মুগ্ধ। এবং তারপর থেকে ইনি আমার সংগ্রহ তালিকার একটা হিরের টুকরো।
৪ মে, ২০২৪- সম্প্রতি অন্যধারা থেকে যে সংস্করণটি বেরিয়েছে এটা অসম্ভব সুন্দর। দাম একটু বেশি। কিন্তু সংগ্রহে রাখার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না। বানান ভুল অনেকাংশে ত্রুটি মুক্ত। যদিও বানান ভুলটাকে আমি রেটিংয়ে ধর্তব্যের মধ্যেই রাখি না। এবার দিয়ে ৩য় বার পড়লাম। সত্যিই, বাংলা সাহিত্যের থ্রিলার জনরার অন্যতম উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবেই এটা বিরাজমান থাকবে।
এই প্রথম রবিন জামান খান পাঠ । এই বইয়ের ম্যালা প্রশংসা শুনেছি….এই জন্যই শুরুর জন্য এখানা বেছে নেয়া(আমি আবার কোনো বইকে লোকজন গালাগালি করলে সেটা পড়তে পারি না। বিশেষ করে পূর্বে লেখকের কোনো বই পড়া না থাকলে.)। তো লেগেছেটা কেমন? খারাপ না। বাংলা ভাষায় বোধহয় এর আগে কোনো হিস্টরিকাল থ্রিলার পড়ি নি। তাই দেশীয় প্রেক্ষাপট এবং ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে লেখা এমন একটা বই পড়তে পারা সত্যি সৌভাগ্যের বিষয়। সেজন্য লেখককে ধন্যবাদ।
আগে তো একবার বলেছি, বইটা হাতে নিয়েছিলাম এর ম্যালা পজেটিভ রিভিউ দেখে। তবে আরও একটা কারণও কিন্তু রয়েছে। অনেক অনেক দিন আগে অন্য আলোতে ঠগিদের নিয়ে একটা বিস্তারিত ফিচার পড়েছিলাম। সেই সময় ঠগিদের নিয়ে আমার ভীষণ কৌতুহল তৈরি হয়েছিল….পড়াশোনার ইচ্ছা তৈরি হয়েছিল আরকি। তবে ধীরে ধীরে তা অন্য আরও অনেক কিছুর মতোই যাস্ট হারিয়ে গিয়েছিল। এই বই হাতে পেয়ে সেই ইচ্ছাটা আবার মাথা চাড়া দিয়ে উঠল। সেই ইচ্ছা আর পজিটভ রিভিউ…বইটা হাতে না নিয়ে আর উপায় ছিল না।
তবে সমস্যাটা হলো যে এই বই যখন আমি হাতে নিই, তখন আমার রিডার্স ব্লক চলছিল। সেই জন্যই বোধহয় চারশো পৃষ্ঠার বই শেষ করতে ১০ দিন লেগেছে! ১০ দিন! বইটার স্টার্টিং দারুণ ছিল। দুশো বছরের ব্যবধানের দুটো ঘটনাকে লেখক কীভাবে জুড়বেন সেটা নিয়ে বেশ আগ্রহী ছিলাম। আর শুরুর ঘটনাবলীও বেশ দারুণ। শহরের ভিতরে একটা পুকুরে এগারো বছর ধরে একজন বিদেশীসমেত একটা গাড়ি পড়ে আছে কিন্তু কেউ জানে না। লোকটার কঙ্কাল থেকে যখন ফরেন্সিক ডিপার্টমেন্ট ওর চেহারার একটা বর্ণনা দেয় তখন আমাদের প্রোটাগনিস্ট বাশার আবিষ্কার করে এই লোকটাই এক দুই দিন ধরে ওকে গোপনে অনুসরণ করছে। এগারো বছর আগে মৃত একজন মানুষ তার মৃত্যুর তদন্তে নিয়োজিত অফিসারকে ফোলো করছে! চিন্তা করে দেখেন!
তবে গল্পের মধ্যভাগ একটু বেশি রকমেরই দুর্বল। বিশেষ করে বাশারের তদন্তকাজকে আমার একদম বাচ্ছাসুলভ মনে হয়েছে। যেভাবে খুব সহজেই অনেক জট ছুটিয়ে ফেলল তাতে গল্পটাই একটু হালকা হয়ে গেলো। তবে সবকিছু চুকিয়ে দিয়েছে এন্ডিং! মিথের সঙ্গে বাস্তবতা মিশিয়ে এরকমভাবে গল্প শেষ করা হয়েছে যে আর খারাপ লেগে উপায় নেই। আগেও বপেছি দেশীয় ইতিহাসের উপর ভিত্তি করে এরকম একটা বই পড়া সোজা কথা নয়। আর লেখক এমন দারুণভাবে লিখলে তো আর কোনো খেদই থাকে না।
তবে লেখক বেচারী জয়া সরকারের সঙ্গে যেরকম ব্যবহার করছিলেন(সময়ে অসময়ে বারবার মনে করিয়ে দেয়া মহিলা কুৎসিৎ। তারওপর রিফাত মজুমদারের রূপের সঙ্গে তুলোনা করে আরও একধাপ অপদস্থ করা) তাতে তো মেজাজটা ভীষণ চড়ে গিয়েছিল। তবে শেষে গিয়ে সবকিছু চুকিয়ে দিয়েছেন।
সবকিছু বিবেচনায় নিলে বেশ ভালো ছিল বইটি। রিডার্স ব্লক ফ্লকে না ভুগলে দুই দিনেই শেষ করে ফেলতাম, সন্দেহ নেই।
ফাটাফাটি একটা বই পড়া হল! এর বিষয়বস্তু নিয়ে বিস্তর লেখালেখি হয়েছে। ওয়েবসিরিজের বিষয় হিসেবে ঘোষিত হওয়ার পর তো উপন্যাসটি রোজকার কথাবার্তার অংশই হয়ে উঠেছে। তাই আমি শুধু আমার ভালোলাগার, আর ঈষৎ মন্দ লাগার জায়গাটুকু লিখি।
ভালো লাগল~ ১. বাংলায় ঠগীদের নিয়ে শ্রীপান্থ'র গবেষণামূলক কাজ বাদ দিয়ে এযাবৎ উল্লেখযোগ্য লেখা ছিল মাত্র দু'টি: হিমাদ্রিকিশোর দাশগুপ্তের 'ফিরিঙ্গি ঠগী' (পিওর গাঁজা) এবং অভীক সরকারের 'শোধ' (ইতিহাসের অংশটা সলিড হলেও মূলত অকাল্ট তথা হররের অসামান্য নিদর্শন)। সেই গুল্মাচ্ছাদিত পটভূমিতে এই লেখাটি গবেষণা ও প্রসাদগুণে মহীরুহ। ২. শুরু করার পর একান্ত বাধ্যতামূলক নিত্যকর্মাদি ছাড়া এই লেখা থেকে ওঠা অসম্ভব। লেখাটা মাঝখানে বেশ ঝুলে গেছে। এমনকি এও বোঝা গেছে যে তদন্তের নানা স্তরে অতিমাত্রায় সরলীকরণ করা হচ্ছে। তবু যে দু'টি সমান্তরাল কাহিনি আমাদের সামনে ফুটে উঠেছে, তারা সর্বার্থে আনপুটডাউনেবল। খারাপ লাগল~ পটভূমি এবং অধিকাংশ চরিত্র অনেকটা জায়গা ও সময় পেয়েছে। কিন্তু মূল খল চরিত্রটিকে ঠিকমতো গড়ে তোলা হয়নি। বরং বেশ তাড়াহুড়ো করে কাহিনিটি শেষ করা হয়েছে।
তবু, সব মিলিয়ে, বাংলার মৌলিক থ্রিলার সাহিত্যে এই বই অনন্য৷ রহস্য, রোমাঞ্চ, বা ইতিহাস— আপনি এদের মধ্যে যদি একটিরও অনুরাগী হয়ে থাকেন, তাহলে সপ্তরিপু আপনি উপভোগ করবেন বলেই আমার বিশ্বাস। অলমিতি।
রিভিউ: বইয়ের নাম :সপ্তরিপু লেখক:রবিন জামান খান ধরন:হিস��টোরিক্যাল থৃলার প্রকাশনী : বাতিঘর প্রকাশনী প্রথম প্রকাশ:ফেব্রুয়ারী-২০১৮ প্রচ্ছদ :ডিলান মূল্য :৪৫০টাকা
মানুষ মরে গেলে পঁচে যায়, বেঁচে থাকলে বদলায়,না বদলালে মারা খায়-জয়া সরকারের এই কথাটি আমরা পদে পদে প্রমান পাবো সপ্তরিপু ঠগীদের গল্পে, থাক সে কথা আসুন আমরা ঠগীদের গল্প শুনি:
ঠগী : ভারতীয় উপমহাদেশ এ এক দূদর্ষ ডাকাত দল।তারা সবসময় দল বেধে থাকে। ঘুরে বেরায় এবং সাধারন মানুষ, বানিজ্যিক পথিকদের সাথে মিশে সময় সুযোগ মতো ঘায়েল করে তাদের। আরেকটু ডিটেস বলি ঠগীরা সাধারন মানুষ এর সাথে মিশে সুযোগ মতো তাদের নির্মম ভাবে হত্যা করে তাদের সম্পদ নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদের হাতিয়ার হচ্ছে রুমাল। লম্বা একটি রুমাল তার এক মাথায় একটি কয়েন বাধা থাকে তা দিয়ে ফাস দিয়ে মানুষ হত্যা করে এবং লাশ মাটিতে পুতে ফেলে। ১৮২০-৩০ এই সময়ে পুরো ভারতে প্রায় লাখ খানিক মানুষ তারা হত্যা করেছেন। তারা মূলত ভবানী দেবী মানে মা কালীর ভক্ত।। উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান এই ঠগীদের দমন করেন।।
সপ্তরিপু
বর্তমান সময়: মুক্তগাছা এক পুকুর এ থেকে উদ্ধার হয় একটি গাড়ি এবং গাড়ির ভিতরে একটি কঙ্কাল। পুলিশ অফিসার বাশার নামে তদন্ত এ। ল্যাব রিপোর্ট থেকে যানা যায় এই গাড়িটি এগারো বছর আগে ডুবেছিল।আর কঙ্কালটি কোন এক বিদেশী নাগরিক এর, ঘটনার তদন্ত করতে গিয়ে বাশারের পিছনে নেয় একটি সাদা গাড়ি আর তার ভিতরের একজন বিদেশী। বাশার তাকে দেখেছে, ফরেনসিক রিপোর্ট এ কঙ্কাল এর সম্ভাব্য চেহারা দার কড়ায় যেটা তা ঐ সাদা গাড়ির বিদেশীর চেহারায় মিল।। যাই হোক বাশার এর সঙ্গী হয় আব্দুল্লাহ এবং রমিজ দারোগা। কেস এর তদন্ত করতে করতে যখন হিমশিম তখন বাশার এর সঙ্গী হয় জয়া সরকার নামে এক নারী সাংবাদিক। তারপর ঘটনাচক্রে দেখা হয় রিফাত মজুমদার এর সাথে এবং তাকে নিয়েই মূল ঘটনায় পৌছায়, বাশার আব্দুল্লাহ রমিজ জয়া রিফাত এরা মিলে এমন কিছু ঘটনা বের করে আনে যা ইতিহাসের কিছু লুকানো সাক্ষী।
অতীত সময় ১৮২৮: ভারতবর্ষে ইংরেজি কিছু সৈনিক হঠাৎ নাই হয়ে পরে। তাদের খোজ করা শুরু করেন একজন ব্রিটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন জেমস ম্যাকফি এবং তার সঙ্গী মহাবীর সিং আর ডুম্বুর। ঘটনাচক্রে তারা জানতে পারে ভারতের সেই দূর্দষ ডাকাত ঠগীর দল। তাদের সাহায্য করতে আসেন উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান।এবং তাদের সাথে জরিয়ে পরেন জোহরা নামের এক জমিদার পরিবারের পুত্রবধূ।জোহরার স্বামী এবং তার সৈন্যরাও একই ভাবে ইংরেজ সৈনিকদের মতো গায়েব হয়ে যায়। তারপর শুরু হয় তাদের অভিযান ঠগী দমন করা। ক্যাপ্টেন ম্যাকফি, জোহরা, স্লিম্যান, মহাবীর সিং এরা মিলে উন্মেচন করে হত্যার রহস্য।।।
তাহলে দুই ঘটনার রহস্যটা কোথায়? ঠগীদের নিয়ে? নাকি জোড়া কালী মূর্তি? নাকি জমিদার বাড়ির ইতিহাস?? জানতে হলে ডুব দিতে হবে সপ্তরিপু ঠগীদের দুনিয়ায়।
পাঠ প্রতিক্রিয়া : প্রথমেই অসংখ্য ধন্যবাদ রবিন জামান খান ভাইকে এমন একটা হিস্টোরিক্যাল থৃলার পাঠকের সামনে দেয়ার জন্য। পুরো গল্প পরার সময় যেন মনে হয়েছে আমি সেই ব্রিটিশ ভারতেই আছি,তাদের সকল কর্মকান্ড আমার চোখের সামনেই। ব্রিটিশ সময়ের এত সুন্দর বর্ননা আর ঠগীদের নিয়ে কাহিনীটা আমাকে নেশায় ডুবিয়েই রেখেছে।ইতিহাস এর প্রতি আমার আকর্ষণ কিশোর বয়স থেকে তার উপর ব্রিটিশদের ইতিহাস কি আর বলব চমৎকার কয়টা দিন কেটেছে সপ্তরিপু নিয়ে, প্রতি পাতায় পাতায় থৃলিং রহস্য আর ইতিহাস।আর চরিত্র গুলো বার বার পাঠকের চোখ কপালে তুলবেই। সর্বাপরি পুরো গল্পটা কোথায় একটু ঝুলে পরেনি সবজায়গায় সমান উত্তেজনা। ৪২৮ পেজ এর বই মনেই হয়নি যে এত বড় বই পরে শেষ করলাম।
শেষকথা রবিন ভাই বইয়ের শেষে তার পরবর্তী বই ব্ল্যাক বুদ্ধার একটা ইঙ্গিত দিয়েছেন এবং তার প্রফাইলেও ব্ল্যাক বুদ্ধা সম্পর্ক এ বলেছেন। তার ব্ল্যাক বুদ্ধার জন্য অপেক্ষায় রইলাম, আশা করি আগামি বই মেলা-২০১৯ এ পাবো।
শেষ দুটি কথা : উপন্যাস, উপন্যাসই এবং ইতিহাস ইতিহাসই দুইকে এক করে দেখায় যায় না,,, বঙ্কিমচন্দ্রের এই উক্তিটি এই বই পরে মনে হয়েছে ভুল, কেননা বই পরার সময় আমি বরাবর এর মতো গুগল করে যা যা জানতে পারি তা সবই এই বইএর সাথে মিল তাই বলা যায় যে এই বইয়ের সকল তথ্য এবং ঘটনা সত্য এবং কল্পনারমিশ্রন।।
কাহিনি সংক্ষেপঃ ঠগী। ভারতীয় উপমহাদেশের সম্ভবত সবচেয়ে প্রাচীন খুনে দল। এরা দলবদ্ধভাবে চলাফেরা করতো। পথিকদের সাথে মিশে গিয়ে এক পর্যায়ে বিশেষ এক রুমালের সাহায্যে গলায় ফাঁস লাগিয়ে তাদেরকে খুন করে সাথে থাকা সমস্ত দামী মালামাল ও অর্থকড়ি হাতিয়ে নিতো তারা। এই ভয়াবহ খুনে দলকে নিয়েই বিশাল কলেবরের উপন্যাস 'সপ্তরিপু'-এর কাহিনি আবর্তিত হয়েছে।
১৮২৮ খৃষ্টাব্দ। অবিভক্ত ভারতের বৃহত্তর ময়মনসিংহ-মধুপুর অঞ্চলে পাঠানো হলো ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ক্যাপ্টেন ম্যাকফিকে৷ কারণ, কিছুদিন আগেই এই এলাকা থেকেই রাতারাতি গায়েব হয়ে গেছে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর ছোট্ট একটা দল। কি ঘটেছে দলটার ভাগ্যে, সেটা জানার জন্যই ম্যাকফিকে পাঠানো হয়েছে। তার সঙ্গী হয়েছে বিশ্বস্ত মহাবীর সিং ও জোনাথন। তদন্ত করতে গিয়েই অদ্ভুত এক অন্ধকার জগতের দিকে এগিয়ে যেতে লাগলো ক্যাপ্টেন ম্যাকফি'র দল। রাজা সূর্যকান্তর নির্মানাধীন শশীলজ থেকে এলাকার সবচেয়ে বড় ঘোড়ার হাট - সবখানেই দৌড়ে বেড়াতে হলো ওদেরকে। ধীরে ধীরে ম্যাকফিদের এই গল্পে যুক্ত হলো ডোংরু মহারাজ নামের এক পুরোহিত, প্রভাবশালী তালুকদার পরিবারের মাথা জোহরা, লাল পাগড়ি বাহিনী এবং স্বয়ং কিংবদন্তিতুল্য কর্নেল হেনরি স্লিম্যান। ধীরে ধীরে পুরো ব্যাপারটা আশ্চর্য এক মোড় নিতে লাগলো। যে মোড়ের ওই মুখে অপেক্ষা করছে ভয়ঙ্কর এক ঠগী দল, যার মাথা হিসেবে আছে ফিরিঙ্গিয়া।
বর্তমান সময়। হতাশাগ্রস্ত পুলিশ ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের পোস্টিং হয় নিজ শহর ময়মনসিংহের কোতোয়ালি থানায়। কখনোই সে চায়নি নিজের ছোটবেলার শহরে ফিরে আসতে। কিন্তু আসতেই হলো। এককালের বন্ধু এখন ওর সুপিরিয়র। আর সেই সুপিরিয়র ওসি মন্ডলও বাশারের সাথে শুরু করলো নোংরা শত্রুতা। এদিকে ময়মনসিংহ শহরের এক পরিত্যক্ত পুকুরের তলা থেকে আবিস্কৃত হলো একটা গাড়ি। আর সেই গাড়ির ড্রাইভিং সিটে বসে থাকা এক কঙ্কাল তো আছেই৷ ব্যক্তিগত জীবনে প্রায় সব হারিয়ে দিশেহারা ইন্সপেক্টর বাশারের কাঁধে এসে পড়লো অদ্ভুত এই কেসের তদন্তের দায়িত্ব। কঙ্কালটার পরিচয় খুঁজতে গিয়েই একের পর এক প্রতিবন্ধকতার মুখোমুখি হতে লাগলো বাশার। তাকে অনুসরণ করতে লাগলো একটা সাদা মাইক্রোবাস। এসবের সাথে হঠাৎ করেই জড়িয়ে গেলো রহস্যময়ী এক ফ্রিল্যান্স সাংবাদিক জয়া সরকার ও ময়মনসিংহ জাদুঘরের সাবেক কিউরেটর রিফাত। বাশার ও তার এই ছোট্ট দল ছোট ছোট সূত্রগুলোর সাহায্য নিয়ে পৌঁছে গেলো এমন এক উপসংহারের কাছাকাছি, যা শুরু হয়েছিলো শতাধিক বছরেরও আগের এক সময়ে। প্রাচীন এক মূল্যবান আর্টিফ্যাক্ট, ঠগী কালচার, ষড়যন্ত্র, ধাওয়া-পাল্টাধাওয়া - সব যেন মিলেমিশে একাকার হয়ে গেলো। পুরোনো একটা দ��হাবশেষের পরিচয় জানার তদন্ত থেকে শুরু হওয়া এই গল্প ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ এক অন্য রূপ নিলো। আর এটাই বোধহয় হওয়ার ছিলো।
অতীত ও বর্তমান। দুটো সম্পূর্ণ আলাদা সময়কে পাশাপাশি নিয়ে এগিয়ে যাওয়া দুটো গল্প একটা সময় মিশে গেলো একই ধারায়। আর এই অভিন্নতার পেছনে রয়ে গেলো শুধু একটামাত্র শব্দ - ঠগী।
পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ রবিন জামান খানের সুবিশাল পরিসরের 'সপ্তরিপু' মূলত একটা ইতিহাস আশ্রিত উপাখ্যান। প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের কুখ্যাত খুনে দল ঠগীদেরকে নিয়ে লেখক স্বতস্ফূর্তভাবে অবতারণা করেছেন এমন এক গল্পের, যার প্রায় অনেকটাই ঐতি���াসিকভাবে সত্য। কর্নেল হেনরি স্লিম্যানের অক্লান্ত পরিশ্রমে উপমহাদেশে ঠগীদেরকে সমূলে উৎপাটন করা সম্ভব হয়েছিলো। সেই ঐতিহাসিক চরিত্র স্লিম্যানকেও লেখক তাঁর কল্পনার রঙে মিশিয়ে দারুন চিত্তাকর্ষক ভাবে উপস্থাপন করেছেন পাঠকের সামনে। ঠগী দল ও তাদের সংস্কৃতি সম্পর্কে লেখকের গবেষণা রীতিমতো মুগ্ধ করেছে। পুরোনো সময়টাকে বেশ সফলভাবে ফ্রেমে বন্দী করতে পেরেছেন তিনি, এটা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা।
ঐতিহাসিক অতীতের সাথে সাথেই সমান্তরালে এগিয়ে গেছে বর্তমানের এক পুলিশ ইন্সপেক্টরের গল্প। ধীরে ধীরে একটা সময় দুটো গল্প একই ধারায় মিলে গেলেও নানা চড়াইউৎড়াইয়ের মধ্য দিয়ে এগিয়েছে পুরো ব্যাপারটাই। বিস্তৃত একটা প্লট ভালোভাবে ডেভেলপ করা এমনিতেই কঠিন ও সময়সাপেক্ষ। সেই সাথে প্রত্যেকটা চরিত্রের নির্মাণ ও ধীরে ধীরে এগুলোকে পারফেক্ট ব্লেন্ডে মিক্সচার করে একটা জমজমাট থ্রিলারে রূপান্তর করাটা সত্যিই অনেক সাধনার ব্যাপার। লেখক রবিন জামান খান দারুনভাবে ব্যাপারটা সম্ভব করেছেন। উনার প্রথম মৌলিক থ্রিলার উপন্যাশ '২৫শে মার্চ'-কেও ছাড়িয়ে গেছেন তিনি এই ব্যাপারে। ৪২৯ পৃষ্ঠার বিশাল এই উপন্যাসটা শুরু থেকেই পাঠকের মনোযোগ ধরে রাখবে। ইতিহাসের সাথে রোমাঞ্চ আর উত্তেজনা মিশে এমন এক আবহ সৃষ্টি করবে, যার ঘোর থেকে যাবে বইটা পড়া শেষ করার পরও আরো কয়েকদিন।
'সপ্তরিপু'-এর মতো এমন বিস্তৃত প্লটের উপন্যাসের রিভিউ লেখাটা আসলে খুব বেশি সহজ কাজ না। তারপরও চেষ্টা করলাম। বইটা সম্পর্কে কতোটা ধারণা দিতে পেরেছি, জানিনা। তবে ঐতিহাসিক কাহিনি প্রেমীদের জন্য বইটা সময় কাটানোর দারুন একটা মাধ্যম হতে পারে। ছোটখাটো অনেক বানান জনিত সমস্যা ও বেশ কিছু টাইপিং মিসটেক ছিলো। ভবিষ্যতে এই ব্যাপারে লেখককে সচেতন থাকার পরামর্শ দিচ্ছি। ডিলান সাহেবের প্রচ্ছদটা চমৎকার লেগেছে। আগ্রহীরা চাইলে পড়ে ফেলতে পারেন 'সপ্তরিপু'।
রবিন জামান খানের সাথে মোলাকাত '২৫শে মার্চ' বইয়ের মাধ্যমে। সেই বইটির কনসেপ্ট পছন্দ হয়েছিল। ভদ্রলোক চমৎকারসব প্লট নিয়ে বই লেখেন। এবারের উপন্যাসের পটভূমি ময়মনসিংহ জেলা। সমানতালে দুইটি কাহিনি অগ্রসর হয়েছে। প্রথমটিতে ঠগীদের কর্মকাণ্ড এবং দ্বিতীয়টিতে বর্তমানকালে একজন পুলিশ কর্মকর্তার রহস্যময় একটি গাড়ি ও কঙ্কাল নিয়ে কাহিনি এগিয়েছে।
অন্য কোনো জনারার বদলে শুধু গ্রোগ্রাসে থ্রিলার পড়ুয়াদের হাতে আর কোনো বই না থাকলে সময় কাটাতে বইটি পড়া যায়। তবে হ্যাঁ, কাহিনির ক্ষুদ্র ত্রুটি-বিচ্যুতি ক্ষমা-ঘেন্না করতে পারেন। তাতেও মুক্তি পাবেন না। কারণ বাতিঘর প্রকাশনী বানান ভুলের নিকৃষ্টতর অভ্যাস থেকে এইটিও রেহায় পায়নি।
This book was something else! অতীত বর্তমানের কাহিনীর এমন মিলমিশ্রণ, আগে কখনো দেখিনি। আর লেখক ঠগীদের জীবন যেভাবে তুলে ধরেছেন, এক্কেবারে nailed it! ২০১৮ সালের পড়া সেরা বই!!
অনেক দিন ধরে একটা হিষ্টোরিক্যাল থ্রিলার খুজছিলাম। মনের মত একটা বই পেয়ে মাত্র দুদিনে শেষ করে ফেলেছি। রবিন জামান খানের প্রতিটা বই পড়েছি। এক কথায় অসাধারণ। তার লেখার ধরনটা খুব ই উপভোগ করি। শুভ কামনা।
এই বয়সে এসে (এহহ! মনে হচ্ছে কত না বুড়ি হয়ে গেলাম আমি) লেখকরা যদি পড়াশোনা করে বই না লিখেন তাহলে খুব খারাপ লাগে। রবিন জামান খানের ইতিহাসনির্ভর ফিকশন পড়তে গেলে এই বিরক্তি বা মন খারাপ থেকে মুক্ত থাকতে পারি এটা একটু স্বস্তিদায়ক ব্যাপার। এর আগে লেখকের ২৫ শে মার্চ পড়েছিলাম। কাহিনী মনে নেই বেশি, কিন্তু খুব ভাল লেগেছিল। ঐ সময়টায় বোধয় অত ঐতিহাসিক থ্রিলার লেখা শুরুও হয়নি। এই বইটি পড়েও খুব আরাম পেলাম। শুধু এই সময়ের প্রটাগনিস্ট এর অতীতে লেখক এত কম জোর দিলেন কেন? এই একটা প্রশ্ন বাদে বাকি সব প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি ভালমতোই। ২০২৪ এর প্রথম পড়ে শেষ করা বইটা যে ৫ তারা পেল- এও কি কম শান্তির?
ঠগী নিয়ে এর আগে খুব অল্প পড়েছি। যা পড়েছি মনে হচ্ছে সেখানে ঠগীদের নিত্যজীবনের ব্যবহৃত শব্দ, আচার নিয়ে সহজ করে লিখেনি। এই বইটি ফিকশন হলেও লেখকের রিসার্চ সাহায্য করেছে যা আগে বুঝতে পারিনি তা বুঝতে। আর সবচেয়ে ভাল লেগেছে নন ফিকশন জগতের উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান বা থাগী স্লিম্যান কে ফিকশনের জগতে উপস্থাপন করবার বিষয়টা। আনন্দের কথা এই সিরিজে বিভিন্ন টাইমলাইনের উপর আরও বই সামনে আসছে। সেগুলো পড়বার জন্য এখন অধীর আগ্রহে বসে থাকবো।
ঠগী শব্দটি সৃষ্ট হয়েছে সংস্কৃত শব্দ ‘ঠগ’ থেকে। যে শব্দের অর্থ সহজ বাংলায় দস্যু বা প্রতারক। বাংলা অভিধানে ‘ঠগী’ বলতে বিশেষ সারির এক দস্যু দলকে বোঝায় যারা পথিকের গলায় রুমাল বা কাপড়ের মধ্য একটি রুপোর টাকা বা তামার ডবল পয়সা বেঁধে নিপুণ ভাবে ফাঁস তৈরি করে হত্যা করতে সুপরিচিত। ঠগীরা ছিল ভারতবর্ষের একটি বিশেষ শ্রেণির খুনি সম্প্রদায়। এদের মতন নিষ্ঠুর আর নিপুণ খুনির দল পৃথিবীতে শুধু নয়, ইতিহাসেই বিরল। পরিসংখ্যানের দিক তাকালে কেবল ১৮৩০ সালেই ঠগীরা প্রায় ৩০,০০০ মানুষ হত্যা করেছে। এছাড়া গিনেস বুক রেকর্ড অনুযায়ী ঠগীদের হাতে প্রায় ২০ লক্ষ মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে!
❛সপ্তরিপু❜ বইতে লেখক ১৮২৮ সালের প্রেক্ষাপটের সাথে বর্তমান সময়ের যোগসূত্র ঘটিয়েছেন। দুই টাইমলাইন নির্ভর কাহিনি হলেও সেটা এগিয়েছে নিপুণভাবে। কাহিনি বিল্ডাপে দুই প্রেক্ষাপটের স্বাদ বিদ্যমান ছিল। তৎকালীন সময়ে ভারত যখন বৃটিশদের অধীনে ছিল তখনকার যে সংস্কৃতি ও বর্তমান সময়ের সংস্কৃতির মধ্যে যে পার্থক্য ছিল সেটা লেখনশৈলী ও বর্ণনাভঙ্গি মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলতে সক্ষম হয়েছে। কাহিনিতে উত্তেজনার পারদ কোনো অংশে কম ছিল না৷ পাঠক চাইলেও বইটি দ্রুত পড়তে সক্ষম হবে না কারণ কাহিনির বোঝার জন্য নিজেকে কিছুটা সময় দিতে হবে বইয়ের সাথে সংশ্লিষ্ট তথ্যের জন্য৷ বেশি তাড়াতাড়ি শেষ করতে গেলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিস করার সম্ভাবনা রয়েছে।
লেখক ঠগীদের ইতিহাস নিয়ে যে টাইমলাইন রচয়িতা করেছেন সেখানে পাঠকের সাক্ষাৎ হবে বাংলায় ঠগী দমনের এক অনন্য নায়ক উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যানের সাথে। হেনরি স্লিম্যান কীভাবে ঠগী দমন করার উদ্যোগ নিয়েছিলেন এবং এর জন্য ওনাকে কতভাবে অপদস্ত হতে হয়েছিল সে সবকিছু জানা যাবে ❛সপ্তরিপু❜ বইটি পড়লে।
❛সপ্তরিপু❜ বইতে লেখক ঠগী ছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক তুলে ধরার প্রচেষ্টা করেছেন। প্রচেষ্টা করেছেন বলব, সেখানে পরি��ূর্ণতার কিছুটা ঘাটতি ছিল বলে মনে করি। সে-ই দিকটি হচ্ছে ষড়রিপু! ষড়রিপু বলতে কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য এই ছয়টি রিপুকে বোঝায়। তার সাথে আরও একটি রিপু যুক্ত করলে হয় সপ্তরিপু। এছাড়া আপনি যদি সেভেন ডেডলি সিন্স সম্পর্কে জানেন তাহলে অনেকটা আন্দাজ করে নিতে পারবেন। তবে এ-ই ষড়রিপু বা সপ্তরিপুর দিকটা আরেকটু গভীরভাবে পর্যালোচনা করা গেলে ভালো হতো, অনেকটা উহ্য টাইপ মনে হলো।
➲ আ���্যান—
গল্পটা কোন আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের নয়, কিংবা ইতিহাসের বুকে লুকিয়ে থাকা ভয়ঙ্কর কোন সত্যেরও নয়-যা প্রকাশ পেলে পাল্টে যাবে ইতিহাসের গতিপথ। বরং গল্পটা একজন ডিমোশন পাওয়া পুলিশ অফিসারের। একদিকে পারিবারিক বিপর্যয় অন্যদিকে ডিমোশন পেয়ে ক্যারিয়ারের যখন বারোটা বেজে গেছে এমন সময় অদ্ভুত এক কেসের দায়িত্ব এসে পড়ে ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের ওপরে। ময়মনসিংহ শহরের পরিত্যক্ত এক পুকুরের নিচ থেকে উদ্ধার হয় একটি পুরনো গাড়ি, সেটার ভেতরে একজন মানুষের লাশ। এই ঘটনার প্রকৃত স্বরূপ উদ্ধার করতে গিয়ে বাশার যখন দিশেহারা তখন তাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসে সাংবাদিক জয়া সরকার। অন্যদিকে তাদের সাথে ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে আর্কিওলজিস্ট রিফাত মজুমদার। ঘটনার পরিক্রমায় তারা জানতে পারে বর্তমান সময়ের এই অদ্ভুত রহস্য সমাধান করতে হলে তাদেরকে ডুব দিতে হবে অতীতের এক অন্ধকার সময়ে, যখন ভারতবর্ষের বুকে বিচরণ করে বেড়াত হিংস্রতম খুনে ডাকাতের দল, ইতিহাসে যারা ‘ঠগী’ নামে পরিচিত। বৃটিশ অফিসার ক্যাপ্টেন জেমস ম্যাকফি আর ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের সাথে আপনাদেরকেও ঠগী’র অন্ধকার ভুবনে নিমন্ত্রণ।
➤ পাঠ প্রতিক্রিয়া ও পর্যালোচনা—
বইটি পড়তে গিয়ে উত্তেজনা আমাকে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরেছিল। এই উত্তেজনা ঠিক কেমন একটু ব্যাখা করি, বইয়ের কাহিনি লেখক সাজিয়েছেন অনেক দক্ষতার সাথে। অর্থাৎ অতীত আর বর্তমান টাইমলাইনে কাহিনি চলমান থাকলে এমন জায়গায় সেগুলো চলছে প্রায় একই ধাঁচের মনে হবে। আর অতীতের কাহিনি যেখানে ব্রেক নেই বর্তমানের কাহিনি সেখান থেকে শুরু হয়৷ তেমনই বর্তমানের কাহিনি শেষ মানে অতীতের শুরু এইটা মূলত কাহিনির সিকুয়েন্স সাজানোর দক্ষতার ওপর নির্ভর ছিল। লেখককে তার জন্য হ্যাটস অফ। ঘটনার জোড়া লাগানোর টাইমিং নিখুঁত।
● প্রারম্ভ—
শুরুটা হয় পূর্বকথা দিয়ে। পূর্বকথার পার্ট ছিল হেনরি স্লিম্যানের। ‘ছন্দপতন’ ও ‘মৃত্যুহরণ’ নামে বইয়ের দুইটি অংশ রয়েছে। প্রথম অধ্যায় থেকে ক্যাপ্টেন ম্যাকফিকে দায়িত্ব দিয়ে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ-মধুপুর অঞ্চলে। যেখানে হারিয়ে যাওয়া ইংরেজ সৈন্যদের একটি দলের অন্তর্ধান হওয়ার রহস্য সমাধান করার জন্য৷ সেটা ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের সময়কালের ঘটনা। বাদবাকি কেন, কোথায়, কীভাবে সবকিছু ঘটেছে জানতে হলে বই পড়তে হবে। এরপরে বর্তমান সময়ে নিয়ে যখন লেখক শুরু করে তখন ডিমোশন হয়ে ময়মনসিংহে ফিরে আসা ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারকে পরিচিত করানো হয়। ঘটনাচক্রে সেও পেয়ে যায় অদ্ভুত একটি কেস! এই দুই টাইমলাইনের শুরু যেভাবে শেষটাও সেভাবে হয়েছে। তাই বইয়ের শুরুটা ছিল আগ্রহ জাগানিয়া।
আমার বর্তমান প্রেক্ষাপট থেকেও ১৮২৮ সালের প্রেক্ষাপটের কাহিনি বেশি টেনেছিল। তৎকালীন সময়ের যে ভাইব সেটা লেখক সুন্দর ভাবে ফুটিয়ে তুলতে পেরেছেন। ‘মৃত্যুহরণ’ অংশের শুরুর অধ্যায়ে উত্তেজনার পারদ তখন তুঙ্গে। এছাড়া কাহিনি যখন বিভিন্ন দিকে মোড় নিচ্ছিল তখন পরের অধ্যায়ে ঠিক কী হবে সেটা জানার ইচ্ছা বৃদ্ধি পাচ্ছিল।
● গল্প বুনন—
গল্প বুননে লেখকের পারদর্শিতা লক্ষণীয়। বিশেষ করে সিকুয়েন্স সাজানোতে উনি ফুল মার্কস পাবেন। দুই টাইমলাইনের গল্পকে এত সাবলীলভাবে সমানতালে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া চাট্টিখানি কথা নয়৷ এখানেও আমি ১৮২৮ সালের প্রেক্ষাপটকে ওপরে তুলে রাখব। গল্পটা বর্তমান সময়ের হলেও কাহিনি বিল্ডাপে জোর দিয়েছেন অতীতের ঘটনাবলিতে। শব্দচয়নে সাবলীলতা ও বাক্য গঠনে প্রাঞ্জলতা দুটোই ভালো ছিল।
● লেখনশৈলী—
ইতিহাসের বর্ণনা থেকে বর্তমান সময়ের প্রত্যকটি ঘটনার বিবরণ সুন্দরভাবে অনুধাবন করা গিয়েছে সহজবোধ্য লেখনশৈলীর জন্য। সাহিত্যিক ভারী-ভারী শব্দের ব্যবহারের মোটের ওপর যাও ছিল সেগুলো মানানসই। পড়তে আরাম লেগেছে। কাহিনি গ্রিপ করতে লেখনশৈলীর প্রয়োজনীয়তা যতটুকু দরকার ছিল ঠিক ততটুকু রয়েছে।
● বর্ণনাভঙ্গি—
যেহেতু লেখক ইতিহাস নির্ভর প্রেক্ষাপটে লেখেছেন সেক্ষেত্রে প্রত্যকটা ঘটনার বর্ণনা হতে হবে নিখুঁত। না হয় ভিজুয়ালাইজ করতে সমস্যার সৃষ্টি হবে। তবে লেখক তৎকালীন সময়ের প্রত্যকটা দৃশ্যের বর্ণনা সাবলীলভাবে দিয়েছেন।
বিশেষ কয়েকটি চরিত্রগুলো মনে দাগ কেটে যাওয়ার মতো তৈরি করেছে লেখক। তাদের এক্সপ্রেশন থেকে আচার-আচরণ সবকিছু বেশ ডিটেইলস বর্ণনা দিয়েছেন। খুটিনাটি বিষয়গুলো পাশাপাশি পারিপার্শ্বিক বর্ণনাও আকৃষ্ট করেছেন।
বানান ভুলের জন্য মাঝেমধ্যে বিরক্তও লেগেছে। পড়ার আর কল্পনার ব্যাঘাত ঘটাতে এই ভুলগুলো অনেক প্যারা দিয়েছে।
● চরিত্রায়ন—
বইয়ের প্লট ও চরিত্র দুটোই টেকসই। চরিত্রের মধ্য দিয়ে প্লটকে আরও বাস্তবিক মনে হচ্ছিল। অতীত-বর্তমান টাইমলাইন মিলিয়ে চরিত্র রয়েছে অনেক। তবে অতীতে স্লিম্যান, ম্যাকফি, জোহরা, মহাবীর সিং, শঙ্কর, জোনাথন, ডুম্বুর, ডংরু, রাজা সূর্যকান্ত বেশ শক্তিশালী চরিত্র। আলাদাভাবে ঠগীদের কিছু গুরুত্বপূর্ণ চরিত্র ছিল।
প্রভাবশালী তালুকদার পরিবারের উত্থান-পতনের কাহিনি এই গল্পে বেশ প্রভাব ফেলে। অন্যদিকে বর্তমানে আহমেদ বাশার, জয়া, রিফাত, রমিজ, আবদুল্লাহ এদের মতো বিচক্ষণ চরিত্র সৃষ্টিতে লেখক কার্পণ্য করেননি৷
কিংবদন্তিতুল্য কর্নেল উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যানের মতো চরিত্রের ব্যবহার বেশ সুনিপুণভাবে করেছেন। সে-ই সাথে প্রত্যকটি চরিত্রের মাহাত্ম্য বিস্তর প্রভাব ফেলেছে পুরো উপন্যাস জুড়ে।
● সমাপ্তি—
❛সপ্তরিপু❜ বইয়ের সমাপ্তি বেশ ভালো। কারণ লেখক দুইটা টাইমলাইনের সমাপ্তি একসাথে টেনেছেন। শুরুটা ঠিক যেভাবে হয়েছিল শেষটাও একইভাবে। বিচ্যুতি ঘটেনি। শেষের দিকে যত এগিয়ে যাচ্ছিলাম সাসপেন্স বেশ ভালোই টের পাওয়া যাচ্ছিল। লেখক এখানে এসে ❛সপ্তরিপু❜ নামকরণের ব্যাপারটা খোলসা করেছেন। একইসাথে পুরো ঘটনার সাথে ‘ব্রহ্মপুত্র’ নদীর ইতিহাসও তুলে এনেছেন। সবমিলিয়ে পূর্ণতৃপ্তি পেয়েছি।
...
● খুচরা আলাপ—
বইটির নামকরণে স্বার্থকতা ঠিকঠাক থাকলেও আসল ফোকাসে ছিল ‘অতিভক্তি’ নামের সপ্তম রিপু। কেন অথবা কী কারণে এই রিপু নিয়ে বইয়ের নামকরণ সেটা বইয়ের শেষের দিকে পাঠক খুঁজে পাবে। এছাড়া ময়মনসিংহের ঐতিহাসিক কিছু স্থানের বর্ণনা বইয়ের পাতায় ঠাঁই পেয়েছে। ১৮২৮ খ্রিষ্টাব্দের প্রেক্ষাপটে কীভাবে জমিদারি শাসন, রাজনীতি, কূটনীতি কার্যক্রম হতো সেগুলোর ব্যাখা আছে। ইংরেজদের সাথে তাল মিলিয়ে কীভাবে রাজারা রাজ্য শাসন ও ব্যবসা-বাণিজ্য চালু রাখত এবং কীভাবে ঠগীরা তাদের আক্রমণ সচল রাখত সবকিছুর বর্ণনা যথাযথ ছিল।
বইটি পড়লে ঠগীদের নিয়ে জানতে আরও ইচ্ছে করবে। এছাড়া শশী লজ বা শশীলজ, বাংলাদেশের ময়মনসিংহ শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত মহারাজা শশীকান্ত আচার্যের বাড়ি, যা ময়মনসিংহের রাজবাড়ি নামেও সমধিক খ্যাত। শহরের কেন্দ্রস্থলে, ব্রহ্মপুত্র নদের অদূরে, এই রাজবাড়ী অবস্থিত। ১৯৫২ সাল থেকে শশী লজ ব্যবহৃত হচ্ছে মহিলা শিক্ষক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে। এই শশী লজের সাথে পুরো প্লটের যোগসূত্র ওতপ্রোতভাবে জড়িত ছিল। কখনও ময়মনসিংহ গেলে এই শশী লজে যাওয়া অত্যাবশ্যক। লেখক যে ইতিহাস তুলে এনেছেন এই রাজবাড়ি নিয়ে পড়লে টের পাবেন।
সবমিলিয়ে হিস্টোরিক্যাল থ্রিলার হিসেবে বইটি পারফেক্ট বলব৷ অবশ্যই বইটি পড়বেন, তবে বানানের মহোৎসব এড়িয়ে চলবেন কষ্ট করে৷ বইয়ের অর্ধেক মজা আর লেখকের প্রচেষ্টাকে অসম্মান জানানোর জন্য এই দিকটি যথেষ্ট ভূমিকা রেখেছে।
➢ লেখক নিয়ে কিছু কথা—
রবিন জামান খান ভাইয়ের ❛সপ্তরিপু❜ বইটি আক্ষরিক অর্থে দুর্দান্ত। তথ্য নির্ভর হওয়াতে আরও ভালো লেগেছে। প্রশংসা করার মতো অনেক জায়গা তিনি রেখেছেন। ওনার পরিশ্রমকে সম্মান জানাচ্ছি। ইতোমধ্যে তিনি বেশকিছু অনুবাদ বইয়ে কাজ করলেও, সপ্তরিপু বইয়ের সিক্যুয়েল হিসেবে রয়েছে ‘ব্ল্যাক বুদ্ধা’ এবং রিসেন্ট রিলিজ পাওয়া বই ‘মগরাজ’। এছাড়াও ২৫শে মার্চ, শব্দজাল দুটো বেশ আলোচিত বই। চেষ্টা করব ওনার বাকি বইগুলো পড়ার। ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞ এত দারুণ বই পাঠকদের উপহার দেওয়ার জন্য। আগামীতে বানানের দিকে বিশেষ লক্ষ রাখার অনুরোধ রইল।
● সম্পাদনা—
১২ পৃষ্ঠা : ‘‘ব্যাপারটা কি?” আদতে হবে ‘‘ব্যাপারটা কী?” এইরকম কি/কী বিভ্রাট দেখা গিয়েছে।
৪২১ পৃষ্ঠা : মেরে পানিসহ গাড়িতে ফেলল কীভাবে?” একটা সংলাপের শেষ অংশ। অথচ হবে– মেরে গাড়ি-সহ পানিতে ফেলল কীভাবে?”
এত ভালো একটা বইয়ের সম্পাদনা আরও সতর্কতার সাথে করার দরকার ছিল।
অনেকদিন পর কোন থ্রিলার শেষ করার পর একচিলতে হাসি মুখে লেগে ছিল আমার। সকালে শুরু করার পর ভেবেছিলাম কমপক্ষে দুইদিন তো লাগবেই এই সোয়া চারশ পাতার বইটা শেষ করতে। কিন্তু না... শুরু থেকে বর্তমান আর আঠারো শতকের যুগলবন্দী এই গল্প আমাকে টেনে রেখেছিল চুম্বকের মতই...
ঠগি... এই শব্দটার সাথে আমি পরিচিত ছিলাম আমার শৈশব থেকেই। কারণটা আর কিছুই না, সেই পিচ্চিকাল থেকে কলকাতার বাংলা বইতে অতিরিক্ত আসক্তি। কিন্তু এই শব্দটা এখনও গা শিউরে ওঠায়। কি নিষ্ঠুর আর নৃশংস ছিল ওই লোকগুলো! ভারতবর্ষের বুক থেকে এত্ত এত্ত মানুষ চোখের পলকে উধাও করে দিয়েছে তারা। আপনজনেরা শেষ দেখাটাও দেখতে পায়নি, এমনকি মারা যাবার খবরটাও পায়নি। কতটা অমানবিক ভাবা যায়???
সপ্তরিপু উপন্যাসের কাহিনি এগিয়ে গেছে সমানতালে বর্তমান আর আঠারো শতকে ময়মনসিংহ এলাকায় এই ঠগিদের নিয়েই। এক নিঃশ্বাসে পড়ে ফেলার মতো একটা থ্রিলার নিঃসন্দেহে। আশাহত হইনি আমি একবারও...
ও ভালো কথা, উপন্যাসের মূল টুইস্ট কিন্তু আমি আগেই ধরে ফেলেছিলাম। তক্কে তক্কে ছিলাম কখন সেটা সামনে আসে তার। এখানেও আশাহত হইনি। ঠিক ধরেছি আমি।।।
ঠগী নিয়ে প্রথম জানতে পারি শ্রীপান্তের 'ঠগী' বইয়ে। বইটা পড়ে অনেক অবাক হয়েছিলাম। ঠগীদের কর্মকান্ড পড়ে অনেক অবাক হয়েছিলাম। গত বছর যখন শুনলাম রবিন ভাই ঠগীদের নিয়ে বই লিখছেন পড়ার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। বইটা মেলাতে সংগ্রহ করলেও নানান ঝামেলায় পড়তে পারলাম এতদিন পরে। এক কথায় বলতে গেলে দারুণ। দুর্দান্ত একটা বই পড়লাম। মূল কাহিনি সমান্তরালে এগিয়েছে অতিত আর বর্তমানের দুই কাহিনীকে কেন্দ্র করে।টানটান উত্তেজনার সুবিশাল বইটা দারুণভাবে এক্সিকিউত করা হয়েছে। সুবিশাল বই হওয়া স্বত্বেও এক মিনিটও বোর হওয়ার কোন চান্স নেই। রোলার কোস্টার গতিতে শেষ পাতা পর্যন্ত টেনে নিয়ে যাবে পাঠকে।
সপ্তরিপু। প্রথমেই সেই সেভেন ডেডলি সিনসের কথা স্মৃতিতে চলে আসে গ্রন্থের নাম দেখে। পুলিশের চাকরিতে ডিমোশন পাওয়া আহমেদ বাশার, সাংবাদিক জয়া সরকার এবং প্রত্নতত্ত্ববিদ রিফাত মজমুমদার জড়িয়ে পড়েন এক অদ্ভুত রহস্যে।
ময়মনসিংহ শহরে এক পুকুর নিয়ে দুই পক্ষের গন্ডগোলে ওসি জড়াতে চান না। তাই পাঠিয়ে দেন ইনস্পেক্টর বাশারকে। কিন্তু পুকুর খননের পর তলদেশে পাওয়া যায় এক জিপসহ লাশ। প্রশ্ন হচ্ছে কত আগের লাশ এটি?
১৮২৮ সন। ভারতীয় উপমহাদেশে মোঘল সাম্রাজ্য দূর্বল হয়ে পড়ছে। ইস্ট-ইন্ডিয়া কোম্পানি ব্যস্ত লুটপাটে। তিন তিনটি যুদ্ধ শেষে বিধ্বস্ত সাধারণ জনগণ যাচ্ছে এক ধরণের ঘোলাটে সময়ের মধ্য দিয়ে। এই ঘোলা সময়ে মানুষ শিকারে নেমেছে ভারতবর্ষের ইতিহাসের সবচেয়ে ভীতিকর ও হিংস্র ডাকাতদল। ঠগী হিসেবেই চিনে তাদের ভারতীয়রা।
ক্যাপ্টেন জেমস ম্যাকফি বিভিন্ন কারণে ইংরেজদের চোখে আস্থাভাজন নন। সেসবের মধ্যে অন্যতম প্রধাণ কারণটি হল তাঁর ভারতীয়দের প্রতি অত্যধিক প্রীতি। নিজেকে ভারতের মানুষ মনে করেন ম্যাকফি। তালুকদার এবং আচার্য বংশের গন্ডগোলের মাঝে একগাদা কোম্পানী আর্মি সদস্য একদম গায়েব হয়ে গেলে ম্যাকফি নেমে পড়েন তদন্তে। সাথে আস্থাভাজন মহাবীর সিং, জোনাথান, না পারতে দলে টানা শংকর এবং একজন অদ্ভুত ট্র্যাকার। ভারতবর্ষের সেরাদের সেরা ঠগীদের দলকে ঘায়েল করতে নেমে যান তাঁরা।
বর্তমান সময়ে আহমেদ বাশার ডিমোশনের কারণে সঙ্গী রমিজ দারোগার মত ফাঁকিবাজ ও আবদুল্লাহর মত নবীন মানুষ পেয়েছেন ঐ জীপসহ লাশের তদন্তকর্মে। তদন্তের এক পর্যায়ে সাংবাদিক জয়া সরকার এবং আর্কিউলজিস্ট রিফাত মজুমদারকে সাথে নিয়ে এক চক্রে পড়ে যান বাশার। নিজের অন্ধকারাচ্ছন্ন অতীতের তাড়নায় ভুগে এবং রহস্য সমাধান করতে গিয়ে পুরো পুলিশ ফোর্সের বিরাগভাজন হয়ে পড়েন এই ইন্সপেক্টর। প্রভাবশালী সাঈদ কন্ডাক্টরসহ নিজ থানার মানুষজনকে শত্রু বানিয়ে এমন এক রহস্যের গোলকধাঁধায় তাঁরা সবাই ঢুকে পড়েন যা ভারতবর্ষের এক সময়ের হিংস্রতম দস্যুদল ঠগীদের সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত।
১৮২৮ সন। ঠগী। রহস্যময় এই ডাকাতদল সবচেয়ে মারাত্মক। তাদের নিজস্ব ভাষা, কর্মপদ্ধতি, নৃশংসতা, এবং ছদ্মবেশের কারণে আপাত দৃশ্যমান না থাকায় শিউড়ে দেয়ার মত এক শক্তিশালী ফোর্স। ময়মনসিংহে নিজেদের টেকসই ঘাঁটি গাড়তে চায় তাঁরা। একের পর এক ভয়াবহ ডাকাতি এবং খুনের ঘটনা এবং কোম্পানী আর্মির একটি দল গায়েব করে দেয়ার মত ক্ষমতাধর ঠগীদের সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনাকে বাস্তবতায় রূপ দেয়ার মাঝে শুধুমাত্র বাঁধা হয়ে দাড়ান ক্যাপ্টেন ম্যাকফি এবং তা���র ডায়নামিক দল। বুদ্ধি বনাম চাতুর্যের এই খেলায় শেষ পর্যন্ত জয় হবে কোন পক্ষের?
রবিন জামান খান 'সপ্তরিপু' লিখতে গিয়ে ঠগীদের নিয়ে যে পরিমাণ পড়াশোনা করেছেন, এবং নন-ফিকশনাল বিষয়কে তাঁর বরাবরের মতই শক্ত লেখনীর গাঁথুনিতে যেভাবে ফিকশনে বন্দি করেছেন তা এক কথায় অসাধারণ। একটি অধ্যায় ১৮২৮ সন এবং পরবর্তি অধ্যায় বর্তমান সময় নিয়ে গল্প বলতে বলতে এগিয়েছে। সমান্তরালে দু'টি টাইমলাইনের গল্পই লেখক এত সুন্দরভাবে লিখেছেন যেন চোখের সামনেই সব চলে আসে পাঠকের। গল্পকথন, প্লটের প্রয়োগ, পরিমিতিবোধ, চিত্রায়ন, একশন দৃশ্যগুলো দুর্দান্তভাবে অঙ্কন করেছেন লেখক এই বইয়ের দুই মলাটের মাঝে। বিশেষ করে দুই টাইমলাইনের দু'টি ভিন্ন দলের টিম ডায়নামিকস এবং ঠগীদের অস্বস্তিকর উপস্থিতি বলাতে গল্পকার হিসেবে মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়েছেন লেখক।
দুইটি ভিন্ন সময়ের আখ্যানদ্বয়ের এক অপূর্ব সংযোগ হয়েছে 'সময় উপাখ্যান' সিরিজের প্রথম বইয়ে। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি সময়ের সাথে এই সিরিজের প্রতিটি বই পড়ে নেয়ার। রবিন জামান খান ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা এই উপন্যাসে লেখক হিসেবে বাজিমাত করেছেন। তাঁর প্রতি শুভেচ্ছা রইলো।
পাঠ প্রতিক্রিয়া
সপ্তরিপু লেখক : রবিন জামান খান অন্যধারা প্রথম সংস্করণ : সেপ্টেম্বর ২০২১ প্রচ্ছদ : আশরাফ ফুয়াদ জঁরা : ইতিহাসকে উপজীব্য করে লিখা থ্রিলার উপন্যাস রিভিউয়ার : ওয়াসিম হাসান মাহমুদ
এটা আমার পড়া রবিন জামান খানের দ্বিতীয় বই। ব্ল্যাক বুদ্ধা পড়ে এত অসম্ভব ভালো লেগেছিলো যে মনে হচ্ছিল লেখকের বাকি সব বইও মনে হয় অনেক ভালো লাগবে। তখনই প্রথম ডুয়েল টাইমলাইনে কোন গল্প পড়ি। তবে সপ্তরিপু তে তো শুধু ব্রিটিশ শাসনামল আর বর্তমান সময় না, বর্তমান সময় থেকেও এক দশকের বেশী সময় আগের গল্পও আছে। একই গল্পে একসাথে ২/৩/৪ টা সময়ের গল্প পড়তে অনেক ভালো লেগেছে। এত সুন্দর করে এতগুলা সময়ের ঘটনা সুন্দরভাবে সাজানো, সবগুলোর মধ্যে যোগস্থাপনের জন্য লেখকের পরিশ্রম , বুদ্ধিমত্তা দুইটাই আসলে প্রশংসনীয়। ঠগীর ব্যাপারে প্রথম জানতে পেরেছিলাম ফেলুদা পড়ে, কিন্তু এত ডিটেইলস এই প্রথম জানলাম। তাদের এই জীবনযাত্রা যে তাদের কাছে শুধুই পয়সা উপার্জনের উপায় না, সম্পূর্ণ ধর্ম বলা যায়, যেটায় তারা সপ্তরিপুতে আক্রান্ত এটাও এই প্রথম জানলাম। এত ভয়ঙ্কর ঠগীদেরকে দমনের জন্য হেনরি স্লিম্যান, ক্যাপ্টেন ম্যাকফি, জোহরা, লালপাগড়ি লাঠিয়াল দল, সূর্যকান্ত প্রত্যেকেই শক্তিশালী চরিত্র ছিল । সেই তুলনায় বর্তমান সময়ের ইন্সপেক্টর বাশারকে বলতে গেলে বেশিরভাগ সময় প্রায় একাই সবকিছু চিন্তা করতে হয়েছে। কিন্তু দুই সময়ের দুইটি ভিন্ন পরিস্থিতে দুই ধরণের যুদ্ধ হিসাব করতে গেলে এটা ঠিকই আছে বলবো।
কিছু বই পড়লে অনেক ভাল লাগে , অনেক দিন মনের মধ্যে থেকে যায়। আবার কিছু বই আছে যেগুলা পড়লে অনেক প্রশ্ন মাথায় আসে, অনেক কিছু নিজে গিয়ে দেখার আগ্রহ বেড়ে যায়। এটা সেরকম একটা বই। বইটা পড়ে মনে হচ্ছে হেনরি স্লিম্যান যা যা পড়ে ঠগী সম্পর্কে এত কিছু জেনেছেন , সেই সব কিছু হাতে পাওয়া দরকার। ময়মনসিংহ গিয়ে শশীলজ, মুক্তাগাছা জমিদার বাড়ি দেখে আসার ইচ্ছা হচ্ছে। পাতালে কি আসলেই ওই মন্দিরটা আছে কিনা এটাও দেখে আসতে ইচ্ছা করছে। আসলেই কি আছে? বইয়ের কাহিনী আর উপস্থাপন নিয়ে কোন ধরণের আক্ষেপ নাই। ৫/৫। আমাদের দেশের মৌলিক থ্রিলারের উপর আস্থা বেড়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে। বানান ভুলগুলো কিছু জায়গায় চোখে লেগেছে । আশা করি পরবর্তী সংস্করণে ঠিক থাকবে।
"কাম-ক্রোধ-লোভ-মদ-মোহ-মাৎসর্য" আর সপ্তম রিপু হল আসক্তি। আসক্তি থেকে ভালো কিছু হলে তো ভালো কিন্তু অতিরিক্ত আসক্তি ভালো কিছু আসবেনা অবশ্যই। আর এই অতিরিক্ত আসক্তি থেকেই জন্ম ইতিহাসের এক জঘন্য দল। যারা "ঠগী" নামে পরিচিত। ২০০বছর আগের এবং বর্তমান সময়ের দুটি বিছিন্ন ঘটনাকে দক্ষতার সাথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন লেখক।আর এই বিচ্ছিন্ন কিন্তু অভিন্ন ঘটনার মধ্যে সংযোগ স্থাপন করে শুধু মাত্র একটি নাম- "ঠগী"। বড় লিখাতে বিরক্ত চলে আসছে তাই গল্পের প্লট নিয়ে বিস্তারিত লিখলাম না।
রবিন জামান খানের 'সপ্তরিপু' মূলত তুলে ধরেছেন প্রাচীন ভারতীয় উপমহাদেশের কুখ্যাত খুনে দল ঠগীদেরকে। ঐতিহাসিকভাবে সত্য এই ঘটনাকে দারুন ভাবে উপস্থাপন করেছেন লেখক। কর্নেল হেনরি স্লিম্যানের অক্লান্ত পরিশ্রমে উপমহাদেশে ঠগীদেরকে সমূলে উৎপাটনকে চিত্তাকর্ষক ভাবে উপস্থাপন করেছেন তিনি পাঠকের সামনে। তার সাংস্কৃতিক গবেষণা সত্যি বাহবা যোগ্য।
ঐতিহাসিক ঘটনার সাথে বর্তমান একটি রহস্যজনক হত্যাকান্ডকে লেখক একসাথে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমার মনে হয়না পাঠকের মনযোগ একটুর জন্যও বিঘ্নিত হবে। রোমাঞ্চকর একটি আবহ হয়েছে বইটিতে তা পড়ে আপনাকে স্বীকার করতেই হবে।
অসংখ্য টাইপিং মিসটেক এবং বানান ভুলের ব্যাপার থাকলেও বইটা আমার প্রিয় বইয়ের তালিকায় ঢুকে গেছে। অতীত এবং বর্তমানের মধ্যে অদলবদল দেখে প্রথমে ভালো লাগবেনা ভেবে ভয় পেয়েও কিছুদুর পড়ার পর মুখ গুজে ছিলাম বইয়ের ভিতর। 'সপ্তরিপু'-র এত বিস্তৃত প্লট যে আমার আর কিছু বলার নেই।
বইটা প্রকাশের সময় সংগ্রহ করা থাকলেও প্রায় ২ বছর পর পড়া হল, এবং পড়া শেষে বলতে হয়, এককথায় অসাধারণ। ঠগীদের নিয়ে আমার ইন্টারেস্ট একটু বেশি। লেখকের বইটি ঠগীদের নিয়েই, কিন্তু গল্পটি এগিয়েছে বর্তমান এবং অতীত দুটি সময়কে কেন্দ্র করে। এবং লেখক দুটো সময়কেই সমান গতিতে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। আমার কাছে অনেক বেশি ভাল লেগেছে।
ময়মনসিংহ শহর সরগরম! শানকিপাড়ার পরিত্যক্ত পুকুরের তলায় একটি পুরোনো কাদামাখা গাড়ি পাওয়া গেছে, ড্রাইভিং সিটে বসে আছে হলদে কঙ্কাল।
ঘটনাটা ধামাচাপা দেওয়ার ইচ্ছে ছিল এলাকার প্রভাবশালী কন্ট্রাক্টর সাঈদ আলীর। সুবিধা হলো না, ইন্সপেক্টর আহমেদ বাশারের জন্য। ময়মনসিংহ থানার ওসি আহসান মল্লিক কেসটা সোপর্দ করেছে বাশারের হাতে। সাথে গছিয়ে দিয়েছে বাপের বয়সী রমিজ দারোগা আর সদ্য গোঁফ গজানো আব্দুল্লাহকে। এদের নিয়েই তদন্তে নেমে পড়লো বাশার।
রহস্য জটিল হয়ে উঠলো ক্রমশ। গাড়িটা যে সময়ের হতে পারে, তখনকার সব দলিল - কাগজপত্র হাওয়া হয়ে গেছে। এদিকে বাশারকে ধাওয়া করে বেড়াচ্ছে রহস্যময় সাদা গাড়ি। ঘটনাক্রমে বাশারের সাথে জড়িয়ে পড়লো সাংবাদিক জয়া সরকার ও আর্কিওলজিস্ট রিফাত মজুমদার। জানতে পারলো রহস্যভেদ করতে হলে উন্মোচন করতে হবে দু'শো বছর আগের অন্ধকার অতীতের।
এই ময়মনসিংহেরই মুক্তাগাছার জমিদার রাজা সূর্যকান্ত আচার্য এর কাছে এসেছিল ব্রিটিশ সরকারের প্রতিনিধি দল। রাজার সঙ্গে দেখা করে সরকারের জন্য উপঢৌকন নিয়ে ফেরার পথে, রহস্যজনকভাবে উধাও হয় যায় সৈন্যদলটি। কি হলো তাদের - খোঁজ করতে পাঠানো হলো ক্যাপ্টেন ম্যাকফিকে, সাথে তার দুই বিশ্বস্ত অনুচর মহাবীর সিং ও লিউক জোনাথন।
কাজটা সহজ নয়। একে তো ব্রিটিশদের উপস্থিতি তেমন ভালো চোখে দেখে না স্থানীয়রা, তার ওপর ছয়জনের দলটি যেন বাতাসে উবে গেছে, এমনকি ঘোড়াগুলোও গায়েব। ম্যাকফি জানতে পারলো এক ভয়ংকর কিন্তু সুশৃঙ্খল ডাকাত দলের কথা। জোড়া কালীর উপাসক তারা, স্থানীয় লোকেরা চেনে এক নামে - 'ঠগী'!
কথিত আছে পারস্যের রাজা জেরেক্সিসের সৈন্যদলের একাংশ ছিল এশীয়, তারা চামড়ার ফালি দিয়ে শ্বাসরোধ করে মানুষ খুন করতে পারদর্শী ছিল। পারস্যের যুদ্ধ শেষ হলে সেই দলটি চলে আসে ভারতবর্ষে। গোড়াপত্তন করে ভয়ংকর ঠগী বাহিনীর। পঞ্চাশ জনের বড় দল নিয়ে পথেঘাটে ঘুরে বেড়ায় তারা। সুযোগ বুঝে ব্যবসায়ী ও তীর্থযাত্রীদের দলের সাথে ভীড়ে যায়। কাপড়ের ফাঁস পেঁচিয়ে খুন করে লুটে নেয় সর্বস্ব।
গুপ্ত এই দলটির খোঁজে অনেক বছর ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছিল কর্নেল উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান। কিন্তু পর্যাপ্ত কোনো প্রমাণ না থাকায়, ব্রিটিশ সরকার তার কথা শুনতে নারাজ।একলাই ঠগীদের নির্মূল করার শপথ নিল হেনরি স্লিম্যান।
উনিশ শতকের কর্নেল স্লিম্যান, ক্যাপ্টেন ম্যাকফি ও একবিংশ শতাব্দীর ইন্সপেক্টর বাশারের তদন্ত গেঁথে গেল এক সুতোয়।
'সপ্তরিপু' উপন্যাসে ব্রিটিশ আমলের ম্যাকফি ও বর্তমান সময়ের বাশারের গল্প চলেছে সমান্তরালে। দুটি ভিন্ন সময়ের টানটান কাহিনী বর্ণনার সময়ে, লেখক দক্ষতার সাথে পরিস্থিতিতে সামঞ্জস্য রেখেছেন। বাশার যখন থানায় খুঁজছে পুরনো ফাইল, ম্যাকফি হাটে সন্ধান করছে কোম্পানির ঘোড়ার। একটি অধ্যায় শেষ হয়েছে যে বাক্য দিয়ে, পরের অধ্যায় শুরু হয়েছে একইভাবে। শেষ অবধি এগিয়ে নিয়ে লেখক নিপুনতার সাথে দুটি সময়ের গল্পকে একসাথে জুড়ে দিয়েছেন।
চরিত্রগুলোর মধ্যেও একধরনের মিল পাওয়া যায়। বর্তমান সময়ের নায়ক বাশার তার ভুলের কারণে চাকরিতে ডিমোশন পেয়ে ময়মনসিংহ সদর থানায় এসে যোগ দেয়। তার অধীনে কাজ করে দুজন, রমিজ ও আব্দুল্লাহ। অন্যদিকে ম্যাকফিকেও মাদ্রাজ থেকে ব্রিটিশ সরকার একরকম নির্বাসন দেয় ভারতীয়দের পক্ষ নিয়ে কাজ করার জন্য, ময়মনসিংহে সে হাজির হয় দুই অনুচর নিয়ে।
উপন্যাসের চরিত্রের গঠনে লেখক কোনো ছাড় দেননি। তাই ভুঁড়িওয়ালা রমিজ, আঞ্চলিক মেশানো শুদ্ধ ভাষায় কথা বলা আব্দুল্লাহ, ফরেনসিক ল্যাবের টমি পোদ্দার, জমিদারের সহিস ডুম্বুর আলী, ডংরু মহারাজ, জোহরা - প্রতিটি চরিত্রের বৈচিত্র্য পাঠককে আলাদা স্বাদ দিবে।
পুরো গল্পটি এগিয়ে গেছে ময়মনসিংহ শহরকে কেন্দ্র করে। স্থানীয় চরিত্ররাও অনেকে কথা বলেছে ময়মনসিংহের ভাষায়। যেসব পাঠক এই শহরের সাথে কোনোভাবে পরিচিত, তাদের কাছে ভালো লাগবে বইয়ের বর্ণিত শহরের অলিগলি, ব্রহ্মপুত্র নদী, শশীলজ, মুক্তাগাছার জমিদার বাড়ির উল্লেখ। দড়ির খেলা, অস্ত্র আর পশুর হাটের বর্ণনায় প্রাচীন ভারতবর্ষের চিত্রায়ণও লেখক করেছেন চিত্তাকর্ষকভাবে।
বইটির নামকরণও প্রাসঙ্গিক। মানুষের ষড়রিপুর কথা তো সকলেই জানে, এর বাইরে সপ্তম একটি রিপু রয়েছে - আসক্তি। অতিরিক্ত ভক্তির প্রতি অন্ধের মতো আসক্তিই হলো সপ্তরিপু, যাতে আক্রান্ত ছিল ঠগীরা। কালীর সাধনায় উন্মত্ত হয়ে, ঠগী ধর্ম বানিয়ে নির্বিচারে মানুষকে বীভৎস ভাবে হত্যা করতো তারা। ঠগীদের ইতিহাস লেখক গল্পে ভেঙে ভেঙে এমনভাবে এনেছেন যে, বিস্তৃত ইতিহাসও আরোপিত মনে হয়নি।
দারুন থ্রিলারটিতে খারাপ লাগার মতো একটিই দিক ছিলো, অতিরিক্ত ছাপার ভুল। প্রুফরিডিং এর ক্ষেত্রে বাতিঘর প্রকাশনীর চরম অনিহা যথারীতি ফুটে উঠছিলো এই বইটিতেও। বাদবাকি বইয়ের বাঁধাই ও প্রচ্ছদ, সবই সন্তোষজনক।
প্রায় চারশো পৃষ্ঠার ইতিহাস-আশ্রিত উপন্যাসটি জটিল প্লট, পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি কাহিনী ও একের পর এক চমকের কারনে পাঠককে পাতায় একেবারে আটকে থাকতে বাধ্য করবে নিঃসন্দেহে।
বইঃ সপ্তরিপু লেখকঃ রবিন জামান খান প্রকাশকালঃ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ প্রকাশনায়ঃ বাতিঘর প্রকাশনী প্রচ্ছদঃ ডিলান পৃষ্ঠাঃ ৪২৯ মুদ্রিত মূল্যঃ ৪৫০ টাকা
ঠগী সম্পর্কে কে কি জানেন? এ নিয়ে আমার আসলে কিছুই জানা নেই - শব্দটা জানতাম,ওরা ডাকাত এটা জানতাম।আর বেশি কিছু না। যা জেনেছি তা এই বই থেকেই।
ফিকশনে যদি একটু নাটকীয়তা না থাকে তবে কি ভালো লাগে?কিন্তু অতি নাটকীয়তা লেবুর মতো। লেবু বেশি কচলালে যেমন তেতো হয়ে যায়, অতি নাটকীয়তাও গল্পের জন্য তেমন এক ভাব এনে দেয়। বইয়ের সবচেয়ে ইন্টারেস্টিং অংশ হচ্ছে ইতিহাসের সাথে মিলিয়ে যে গল্প বানানো হয়েছে(আমার রেটিং কিন্তু ওই অংশের জন্যই)।আর হ্যাঁ,ঠগীরাই বইয়ের প্রতি আমার আকর্ষণ বাড়িয়েছে। ঠগীরা হলো উপমহাদেশের সেসময়কার এক দুর্ধর্ষ ডাকাত দল।মা-কালীর ভক্ত এই ডাকাতদলের প্রধান অস্ত্র ছিলো 'এক টুকরো কাপড়, যার এক মাথায় কয়েন বাঁধা'। তারা সাধারণের বেশে দল বেঁধে ঘুরতো,সুযোগ বুঝে বাণিজ্যিক পথিকদের সাথে মিশে তাদের নির্মম ভাবে হত্যা করতো এবং তাদের জিনিসপত্র লুট করে নিতো।অন্যান্য ডাকাতদের চেয়ে তারা আলাদা ছিলো কারণ হত্যাকে তারা কলার পর্যায়ে নিয়ে গিয়েছিলো এবং তারা মৃতদেহ লুকিয়ে ফেলতো যেনো কিছুই হয়নি। বইয়ে এদের ইতিহাস এবং উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান -যিনি কিনা বইয়ের ঠগীদের দমন করেছেন(বাস্তব কাহিনিও কি এমন?[আমি এতো অলস যে Google মশাই থেকে জেনে নেয়ার বুদ্ধি এই মাত্র এলো।আর কয়েকটি বই পেয়েছি,সেগুলো পড়ে পরে ঠগীদের নিয়ে আলোচনা করা যাবে ভেবে, Google করলাম না আর😑😑])-তাদের নিয়ে সুন্দর এক গল্প বলেছেন। আর লেখক অতীত বর্তমানকে খুব সুন্দরভাবে মিলিয়েছেন।এজন্য লেখকের প্রশংসা করতেই হয়। যদিও আমাকে অতীত সময়ের লেখাগুলোই বেশি টেনেছে।
বর্তমান সময়ের বর্ণনাতে আমার প্রথমদিকে অনেক আগ্রহ থাকলেও পরে তা মিইয়ে যায়। ইন্সপেক্টর বাশারের দিকে আগ্রহ তৈরি হচ্ছিলো কিন্তু লেখক ওনাকে নায়ক করতে গিয়ে কেমন যেনো জগাখিচুরি করে ফেলেছেন। আবার জয়াকে নিয়ে যে রহস্য করতে চেয়েছেন -তা আমার কাছে আগেই ধরা পড়ে-যার কারণে শেষের বিরাট মুখোশ উন্মোচন আমার কাছে ম্যাটমেটে লেগেছে। তবে,বর্তমান চরিত্রগুলোকে অতীতের ছাঁচে ফেলে যেভাবে গড়ে তুলেছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়। আর জোহরা চরিত্রটি একটু বেশিই আকর্ষণ করেছে আমাকে। ওকে নিয়ে আরো কিছু থাকলে ভালো লাগতো।আর হ্যাঁ,ঠগী আর স্লীম্যানকে নিয়ে বিরাট এক আগ্রহের জন্ম দিয়েছেন।বৃটিশ আর ঠগী-এই দুই-ই আমাকে কাহিনিতে তন্ময় করে রেখেছিলো।এজন্য লেখককে ধন্যবাদ।
ড্যান ব্রাউন, রোলিন্স সহ বিশ্বখ্যাত লেখকরা বিভিন্ন অঞ্চলের মিথ, ইতিহাস নিয়ে দুর্দান্ত সব থ্রিলার লিখেছেন এবং পাঠকেরা ইতিমধ্যেই সেগুলো সানন্দেই গ্রহণ করেছেন। তবে বাংলাদেশের অনেক মৌলিক পাঠকদেরি আক্ষেপ ছিলো এক জায়গায়। সেটা হচ্ছে এই উপমহাদেশ বিশেষ করে বাংলাদেশে তো এমন রোমাঞ্চকর রক্তিম ইতিহাস এর অভাব নেই, তবে সেগুলোকে ভিত্তি করে সেই পরিমাণ থ্রিলার লেখা হয়েছে কি? ভেন্ট্রুলিকুইস্ট, মিনিমালিস্ট, কাফকা ক্লাব- হাতে গোনা কিছু বই পাবেন মাত্র।
এই বইটা পড়ে সে আক্ষেপ আপনি নিঃসন্দেহে কমাতে পারেন। তাই, দেরী না করে হাতে তুলে নিন সপ্ত রিপু।
তুসুমবাজদের দুনিয়ায় আপনাকে স্বাগতম।
মোট ৪৪টি অধ্যায় + কয়েকটা ছোট ছোট অধ্যায় মিলিয়ে এই মৌলিক থ্রিলার। বিশাল বিস্তৃতির এই উপন্যাসে পাঠক জানতে পারবেন উনিশশো শতকের ছোট্ট একটা ঘটনার ব্যাপারে। সে ঘটনাকে কেন্দ্র করেই উইলিয়াম হেনরি স্লিম্যান আর তার ইনফেন্ট্রির এক কর্নেল ছুটলো এক রহস্য যাত্রায়। গন্তব্য অজানা, সফল পরিণত? সে তো আরও দিবাস্বপ্ন।
চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আর রক্তঝরানো সে যাত্রায় কী হয়েছিলো? কারা ছিলো বন্ধু, কারা শত্রু? কোন অজানা আতংকে তৎকালীন মানুষ একাকী পথ চলতো না। কেন হারিয়ে গিয়েছিলো অসংখ্য মানুষ, হারিয়ে গেলো এক গোটা প্লাটুন ইংরেজি সৈনিক কোন চিহ্ন না রেখে? এসব প্রশ্নে যদি আপনার মাথা ঘুরাতে থাকে ইতিমধ্যে, তাহলে আরেকটু শেয়ার করি। বর্তমান সময়ে , ময়মনসিংহ'র এক পুকুরে পাওয়া গেলো একটি গাড়ি। সে গাড়িতে একটি লাশ। সেই ঘটনার তদন্ত বাশারের ঘাড়ে চাপানো হলো, ব্যক্তিগত জীবনের নানা দুর্ঘটনায় যে সদ্য ডিমোশন পেয়ে ময়মনসিংহ থানায় জয়েন করেছে। সঙ্গী হিসেবে এক অলস আর এক মহা 'জ্ঞানী' মানুষ।
তদন্তের জাল ছড়াতেই দেখা দিলো নানা ধরনের মানুষ। কিছু চেনা, কিছু আগন্তুক আবার কেউবা চেনা পরিচয়ে অচেনা মুখোশে ঢাকা। এসব ভেদ করে বাশারের মূল লক্ষ্য প্রকৃত ঘটনা জানা। আর তা জানতে হলে ডুব দিতে হবে অতীতের অজানা এক অন্ধকার জগতের গল্পে।
প্রাচীন ভারত উপমহাদেশ, বাংলা রাজ্য এবং ময়মনসিংহ অঞ্চলের নানা অজানা গুপ্ত তথ্য উঠে আসবে। আপনি হবেন বিস্মিত, শিহরিত।
তবে হ্যাঁ, এই যাত্রায় রুমাল হইতে সাবধান !
লেখকের গবেষণা আর একাগ্রতার প্রশংসা না করলেই না। বিশেষ করে বাংলাদেশে এই ইতিহাস ভিত্তিক ব্যাপারগুলোর গবেষণার রিসোর্স, পর্যাপ্ত তথ্য পাওয়াটাও অনেক ক্ষেত্রে মুশকিল হয়ে যায়। অতীতের ঘটনা, বর্তমান - যেভাবে সব এক সুতোয় গেঁথেছেন , সেটা প্রশংসার দাবি রাখে। অতীত আর বর্তমানের কাহিনী গোটা বইতে পাশাপাশি চলেছে।- এটা বেশ ভালো লেগেছে। শেষ মুহূর্তের ক্লাইম্যাক্সটা ভালো লেগেছে। বিশেষ করে একশন সিনগুলোর কথা বলতে চাই। বিস্মিত হয়েছি। খুব ভালোমত ডিটেইলিং এর কাজ ছিলো পুরো গল্প জুড়ে। ময়মনসিঙের লোকাল ভাষার ব্যবহারটাও ভালো লেগেছে। আর প্রচ্ছদের ব্যাপারে কী বলবো! এই বইমেলার অন্যতম সেরা প্রচ্ছদ, আমার চোখে। ডিলান রক্স!
লেখকের কাছে তার পরবর্তী বই ব্ল্যাক বুদ্ধা নিয়ে আরও অনেক আশা বেড়ে গেলো। :D
১. ৪ টি নারী চরিত্র। ৪৩০ পৃষ্ঠার বই জুড়ে ৪ টি নারী চরিত্র দেখে কিছুটা বিরক্তিবোধ হচ্ছিলো! আরো বেড়ে যায় শেষে সংখ্যাটা ৩-এ নামিয়ে আনায় (এর বেশি বললে স্পয়লার হয়ে যাবে)। নারীচরিত্রের সাথে জড়িত আরেকটা ব্যাপার, জয়াকে বারবার 'কালো' বলে 'অসুন্দর' বানিয়ে 'সাদা'র সাথে তুলনা দেয়া!
যুক্তি নম্বর ১ঃ পুরো বইয়ে নারী চরিত্রের প্রয়োজনীয়তা অনুভব হয়নি এবং যে সময়ের কথা বলা হচ্ছিলো সেসময় পরিস্থিতি এমনই ছিল। তবে লেখকের সুন্দরী নারীদের প্রতি আলাদা কদর দিয়েছেন! 'তিনটি' নারী চরিত্রই তার প্রমাণ..
যুক্তি নম্বর ২ঃ নারী চরিত্রের সংখ্যা কম হলেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করায় লেখক বোধহয় এর সংখ্যা বাড়ানোর প্রয়োজন বোধ করেননি।
যুক্তি নম্বর ৩ঃ চরিত্রকে বারবার কালো বলা সত্ত্বেও এন্ডিং-এ লেখক আপনার এসব ধারণা মুছে দিবে। তবুও..
২. বিভিন্ন চরিত্রের 'অপ্রয়োজনীয় প্রেক্ষাপট' বা 'শানে নু্যুল!' পুরো গল্পে এমন অনেক চরিত্র আছে, যাদের ভূমিকা খুবই সামান্য তবে রঙ মাখিয়ে কিছু একটা বানানোর চেষ্টা করছিলেন লেখক, এদিক থেকে তিনি শতভাগ ব্যর্থ!
যুক্তি নম্বর ১ঃ তারা পুরো গল্পে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।
যুক্তি নম্বর ২ঃ চরিত্রের প্রেক্ষাপট বর্ণনা না করলে ঘটনা পরম্পরা বুঝতে অসুবিধা হতো!
যুক্তি নম্বর ৩ঃ ডাহা মিথ্যা! এতে পুরো গল্পের বিন্দুমাত্র ক্ষতি হতো না, বরঞ্চ মাঝে মাঝে অন্তত 'হাই' উঠতো না!
৩. এন্ডিং! অবশ্যই সুন্দর, সবকিছু এত সুন্দর ভাবে মিলে যাবে এটা ভাবতে পারিনি শেষ পৃষ্ঠা পর্যন্ত। তবে শেষ কয়েক অধ্যায় বারবার দৃশ্যপটের পরিবর্তন, দুশো বছর আগের ঘটনার সাথে এটা পড়ার গতিকে আর আনন্দকে বাঁধা দিচ্ছিলো..
৪. বানান ভুল ছিলো প্রচুর! তবে এদিকটা নিয়া আমার কোনো মাথাব্যাথা নাই.. কারণ বানান ভুল থাকলেও, কোনো এক অজানা কারণে এতে আমার বিন্দুমাত্র অসুবিধা হয় না, অটো ফিল্টার করে ফেলে আমার চোখ!
সবমিলিয়ে ৪ তারার কম দেয়া সম্ভব না এটাকে! ঠগীদের রাজ্য থেকে ঘুরে আসতে চাইলে, মিথ আর বাস্তবতার পাশাপাশি, আপনিও যদি মনে করেন সপ্তরিপুতে আপনি আক্রান্ত নন, তাহলে এখনই পড়ে ফেলা উচিত..
দুঃখের বিষয় হইলো বইয়ের শেষে জয়া সরকার রে নিয়ে যে টুইস্টখানা লেখক রেডি কইরা রাখসিলেন, ওইটা আমি অনেক আগেই বুঝে গেছি। তাই ওই টুইস্ট টা আমার কাছে লাগলো এককাপ ঠান্ডা হইয়া যাওয়া দুধ চা এর মতো - উপস্থিতি আছে, কিন্তুক ট্যাশ নাই।
আর 'বাতিরঘের' প্রিন্টিং 'মিসকেটের' কথা নতুন করে কি আর কমু! 'বানাম বুল' এর মহোৎসব যেন !!! তাও শুধু যদি বানাম বুল থাকতো তাইলেও হইতো। পড়তে গিয়ে কয়েক পেজ পরপরই যতি/বিরাম চিহ্নের যেই পরিমাণ ভুল পাইলাম(উলটাপালটা দাড়ি-কমা-কোলন-সেমিকোলন-কোটেশন), একজন পেরাপ্তবয়স্ক পুরুষ মানুষ তার পুরা এক জিন্দেগীতে এতো পরিমাণ মাস্টারবেটও করে কিনা সন্দেহ আছে আমার!
এই লেখকের '২৫শে মার্চ' পড়া শুর�� করসি অলরেডি। ওইখানেও রীতিমতো বানাম বুলের মচ্ছব দেখতেসি। সামনে আরো আছে বুঝা যাইতেসে এখনি। এইটাই মেবি আমার পড়া বাতিরঘের শেষ বই হইতে যাইতেসে। I am done with Baatighor.
বানান ভুল থাকলে আমার পড়তে বিরক্ত লাগে। এই বই ভরা বানান ভুল। বিশেষ করে র, ড় এর ভুল ব্যবহার খুব দৃষ্টিকটু। এছাড়াও শব্দের প্রয়োগজনিত বেশ কিছু ভুল চোখে পীড়া দেয়। যেমন- "এই অত্র এলাকায়...!" 😖 প্রুফ রিডিং এ এত অবহেলা কেন?? ব্যাকরণ বুঝে, বানান মুখস্ত করে ভাষা ও বাক্যগঠন খুব একটা আয়ত্তে আসেনা। অবচেতন মনে পড়তে পড়তেই আসে, মাথায় গেঁথে যায়। ইদানিং বইগুলোতে যে পরিমান বানান, শব্দের প্রয়োগ ইত্যাদি ভুলে ভরা থাকে এরকম চলতে থাকলে এসব বই পড়ে বড় হওয়া মানুষজন বই পড়াকে বই পরা আর জামা পরাকে জামা পড়া বলবে এটাই তো স্বাভাবিক!
প্লট ভালো। এতো ভুল বানান আর ভুল বাক্যগঠন বিরক্ত না করলে ৪টা স্টার দেওয়া যেত!
বইটা কিনেছিলাম গতবছর। সাথে ব্ল্যাকবুদ্ধা আর মগরাজ। বড় বই পড়ি পড়ি করেও পড়া হয়না। কিন্তু এবার ভাবলাম বইগুলা ত আর রেখে দেয়া যায়না, আস্তে আস্তে পড়ে শেষ দিতে হবে। তাই সপ্তরিপু বইটা ধরলাম গতকাল। আজকে শেষ। বইটা আমার আগে অনেকেই পড়েছেন, রিভিউতে কাহিনি সংক্ষেপ আলোচনা করেছেন। তাই আমি নতুন করে কিছু লিখলাম না, শুধু আমার কাছে কেমন লেগেছে তাইই তুলে ধরলাম।
প্রথমেই বইটার ভালো লাগার দিক বলি। বইটার কাহিনি বিন্যাস অনেক ভালো। অতীতের একটা ঘটনার সাথে বর্তমানের ঘটনা খুব সুন্দরভাবে সংযুক্ত করা হয়েছে। অতীতের ঠগীদের সাথে বর্তমান সময়ের একটি লাশ উদ্ধারের ঘটনা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত তারই সমান্তরাল বর্ননা করেছেন লেখক। চরিত্র সৃষ্টি, প্লট নির্ধারণ, দৃশ্যপটে সঠিক সময়ে উপযুক্ত চরিত্রের আগমন এবং রোমাঞ্চের ঘনঘটা বইটিকে একটি আদর্শ থ্রিলারে রূপ দিয়েছে।
এবার আসা যাক নেতিবাচক দিকগুলোতে। বাতিঘরের বই আর তাতে বানান ভুল থাকবেনা তা কি করে হয়? অজস্র বানান ভুল ছিল বিরক্তির কারণ তার সাথে বাক্য গঠনে অসামঞ্জ্যতাও চোখে পড়ার মতো। "বিপদের সময়ের জন্যই এখানে একটি ঘোড়া রেখে দেয়া ছিল।" এরকম অনেক বাক্যের দিকে আরেকটু নজর দেয়া উচিৎ ছিল যেহেতু আমারটা দ্বিতীয় সংস্করণ।
জোহরা নাম রাখার ইতিহাসে বলা হয়েছে মিশরের মরুভূমিতে এক মরুদ্যানে আশ্রয় নিয়েছিল তার বাবা। কিন্তু বাংলাদেশ হতে পায়ে হেঁটে সৌদি আরবের রুটে মিশর পড়বে না। যদি মুম্বাই হতে জাহাজে এডেন বন্দর হয়ে মিশর ঘুরে আসে সেক্ষেত্রে ভিন্ন কথা, কিন্তু পায়ে হেঁটে গেলে মিশর রুটে পড়ার প্রশ্নই আসেনা।
জোহরা যখন নিতাই, বিল্লাল শেঠ ও মানিককে নিয়ে ঠগীদের উপর নজর রাখছিল তখন জোহরাকে তার নাম ধরে বর্ননা করলেও একটু পরেই লেখক সেখানে বারেবারে শুধু মহিলা বলে পরিচয় দিচ্ছিলেন। অথচ একটু পরেই আবার জোহরা বলা পরিচয় দিয়েছেন।
ঠগীদের সূর্যকান্তকে ধরার প্ল্যানিং এ সূর্যকান্তের নাম পরিবর্তন হয়ে শশীকান্ত হয়ে গিয়েছে। উল্লেখ্য, ইতিহাসে শশীকান্ত ছিলেন সূর্যকান্ত চৌধুরীর পালক পুত্র। তবে বইতে তার উল্লেখ ছিল না।
ব্রহ্মপুত্র নদের স্রোতধারার পরিবর্তনের ইতিহাসে বলা হয়েছে যে আশির দশকে আসামে ভূমিকম্পের ফলে এমনটা ঘটে। পড়লে মনে হবে বিংশ শতাব্দীর আশির দশক। মূলত ঘটনাটা ঘটেছিল ১৭৮৭ সালে।
ভালো মন্দের মিশ্রণ দিয়েই যেকোনো কিছুর সৃষ্টি হয়। তবে বাতিঘর তাদের বানান ভুলের দিকে নজর দিয়েছে কিনা জানিনা। (যেহেতু এটা ২০১৯ সালের) আর শেষের কিছু অধ্যায় ছোট ছোট হওয়াতে আলাদা পৃষ্ঠায় দেয়নি, যার জন্য আগের অধ্যায়গুলোর সাথে মিল ছিল না সাজানোতে। একটা অধ্যায়ের শিরোনাম ত একেবারে শেষ লাইনে দেয়া, পরের পৃষ্ঠাতে দিলেও চলতো। হ্যাপি রিডিং।
ঠগীদের নিয়ে যেকোনো লেখাই আমি খুব আগ্রহ নিয়ে পড়ি। তাদের কাহিনীগুলো আমার কাছে খুবই আকর্ষণীয় লাগে। এই বইটাও সেই আগ্রহ থেকেই হাতে নেওয়া। আশাহত হতে হয় নি, এককথায় বলতে গেলে চমতকার লেগেছে।
অতীত আর বর্তমান দুটি টাইমলাইনের মিলমিশ্রণে বইটি মলাটবদ্ধ করা হয়েছে।
ঠগীদের ব্যাপারে আকর্ষণ বেশি থাকার কারণে অতীতের টাইমলাইনটা বেশি ভালো লেগেছে। সেখানে বেশ বিস্তারিতভাবে ঠগীদের জীবনবোধ ও তাদের নির্মুল করার এক রোমাঞ্চকর ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে। আর বর্তমান টাইমলাইনে একজন পুলিশ ইন্সপেক্টর, একজন আর্কিওলজিস্ট এবং একজন সাংবাদিকের এক অদ্ভুত রহস্য উদঘাটনের ঘটনা দেখানো হয়েছে।
বইয়ের চরিত্রগুলো সুন্দরভাবে উপস্থাপন করার পাশাপাশি নিপুণতার সাথে কাহিনী এগিয়ে নিয়ে যাওয়া মোটেও সহজ বিষয় না। সে বিষয়টাই লেখক বেশ দক্ষতার সাথেই সম্পন্ন করে দেখয়েছেন।
সবশেষে বলবো হিস্টোরিক্যাল থৃলার পাঠকদের জন্য মাস্ট রিড একটি বই। মিস করা ঠিক হবে না!
খুবি ভাল লেগেছে বই টা! অনকে আগে থেকেই ঠগী দের নিয়ে একটা বই পড়ার ইচ্ছা ছিল, পড়ে ভাল লাগল! ৫ তারা ই দিতাম, তবে কেন জেন মনে হলো অহেতুক বই টি অনেক বেশি টানা হয়েছে, প্রত্যেকটি ব্যাপার এত বিস্তারিত ব্যাখ্যা এর দরকার ছিল না! তবুও, টান টান গতির টুইষ্টে ভরপুর একটি থ্রিলার! ভাল লাগল!