বঙ্কিম চন্দ্র রচিত রম্য গ্রন্থ লোকরহস্য ও মুচিরাম গুড়ের জীবন-চরিত এর সংকলন এই বইটি। ঊনবিংশ শতকে রচিত এই রম্য রচনাগুলি তৎকালীন বঙ্গ সমাজের উল্লেখযোগ্য দলিল। লেখক তীক্ষ্ণ বিদ্রুপের মাধ্যমে সমহজের নানা অসংগতির বর্ণনা দিয়েছেন যার অনেককিছু এ সময়েও বর্তমান। সে সময়কে জানার জন্যে এই লেখাগুলো সহায়ক হতে পারে।বিষয়বস্তু, লেখনী শৈলীর বিচারে সে সময় এবং সব সময়ের জন্যই বাংলা সাহিত্যের সম্পদ এই গ্রন্থ।
Bankim Chandra Chattopadhyay (Bengali: বঙ্কিম চন্দ্র চট্টোপাধ্যায়) ('Chattopadhyay' in the original Bengali; 'Chatterjee' as spelt by the British) was a Bengali poet, novelist, essayist and journalist, most famous as the author of Vande Mataram or Bande Mataram, that inspired the freedom fighters of India, and was later declared the National Song of India.
Complete works of Bankim Chandra Chattopadhyay (বঙ্কিম রচনাবলী) is now available in this third party website (in Bengali): https://bankim-rachanabali.nltr.org/
Chatterjee is considered as a key figure in literary renaissance of Bengal as well as India. Some of his writings, including novels, essays and commentaries, were a breakaway from traditional verse-oriented Indian writings, and provided an inspiration for authors across India.
লোক রহস্য নিয়ে আলাদাভাবে লিখেছিলাম, তবু তারই কিছুটা পুনোরুক্তি করছি।লোকরহস্যের লেখাগুলোর মূল উপজীব্য উনবিংশ শতকের বাংলার লোকজন। তবে শুধু যে বাবু বা ধনিক সমাজ নিয়েই তিনি বিদ্রুপ করেছেন তা না, তার বিদ্রুপের খোচা লেগেছে সে আমলের নব্য শিক্ষিত ইংরেজী কেতার বাঙালি, সাদা চামড়ার সাহেব, পরান্ন ভোজী পুরোহিতসহ নানা সম্প্রদায়ের উপরই। তার কৌতুক এর স্টাইলটাও স্থানে স্থানে অভিনব। সুন্দরবনে বাঘেদের মিটিং হচ্ছে মানুষ নিয়ে, ভাবা যায় ! শহরের চিড়িয়াখানা থেকে পালিয়ে আসা এক বাঘ এর জবানীতে আমরা জানতে পারি মানুষের প্রধান দেবতা টাকা, মানুষের বিবাহ দুই প্রকার ইত্যাদি। হনুমানের সাথে বাবুর কথোপকথন এর গল্পটাও এমনই। নব্য শিক্ষিত বাঙালি বাবু যিনি ইংরেজী ছাড়া বাংলা বলেন না, Independence আর স্বায়ত্ত্বশাসন নিয়ে যিনি গালভরা বক্তৃতা দেন, তাকেই হনুমান বুঝিয়ে দেয় স্বাধীনতা কাকে বলে। গাধা নিয়ে গল্পটিও কি তেমনি নয়? বাবু ও ভার্যার গল্পের বাবু ইংরেজী বই পড়েন, পত্নী বিষবৃক্ষ পড়লে তা নিয়ে তর্ক করেন, শেষে বাংলায় চটি অশ্লীল বই পড়ে তৃপ্তি মেটান, ইংরেজী জানা বা না জানার সাথে শিক্ষা বা রুচির যে কোন সম্পর্ক নেই তাই তো বোঝালেন বঙ্কিম। বাবুদের নিউ ইয়ার উদযাপন ও ইংরেজ তোষন নিয়ে গল্পটিও তো দারুণ। নতুন দাম্পত্য আইনে অবশ্য তিনি স্ত্রীদের যে চিত্র ফুটিয়ে তুলেছেন তা কৌতুকের বিষয় হতে পারে পুরুষতান্ত্রিক সমাজে তবে সত্য অবশ্যই নয়। ইংরেজকৃত রামায়নী আলোচনা অথবা ভারত পরিদর্শনকারী যুবরাজের জনৈক সঙ্গীর কাল্পনিক ভারতীয় সংস্কৃতির বিবরনটি উইটের চমৎকার নিদর্শন। পাশ্চাত্য দেশীয় সাদা চামড়াধারীদের তুচ্ছ গবেষণা বা পর্যবেক্ষনও যে আমরা মাথায় তুলে নাচি অবলীলায় বিশ্বাস করি, তা যতই ডাহা মিথ্যা বা ভুল হোক তারই প্রতিক্রিয়া এই দুটি লেখা। অবশ্য বঙ্কিমের স্বভাবসুলভ রক্ষনশীল মনোভাব তার লেখাগুলোয় ছিলো, ছিলো হিন্দু জাতীয়তাবাদী বিশ্বাসের প্রতিফলনও। বিধবা বিবাহের যে তিনি বিরোধী ছিলেন তা তার লেখায় অাঁচ করা যায়। জনৈক বাঙালি ডেপুটি কর্তৃক এক কালো দেশীয় সাহেবের বিচারের গল্পটিও চমৎকার। সংবাদপত্র যে তিল কে তাল করতে পারে, বাঙালি যে চতুরতায় আর তোষামদে রীতিমতো এক্সপার্ট তার চিত্রই তো তিনি তুলে ধরলেন এই লেখায়।
এবারে আসি মুচিরাম গুড়ের জীবন-চরিত প্রসঙ্গে। এই লেখাকে বড় গল্প না ছোট উপন্যাস কি বলা যায় জানি না, তবে লেখাটি রম্য রচনা। মুচিরাম নামে গুড় পদবী ধারী এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের সন্তান কিভাবে সমাজের নিচু স্তর থেকে স্রেফ ভাগ্য আর তোষামুদির সাহায্যে সমাজের উপরের স্তরে চলে যায় তা নিয়ে এই লেখা। কোন ব্যক্তি বিশেষ এই লেখার বাস্তব ভিত্তি কি না জানি না, তবে এই কাহিনীর নানা উপাদান হয়তো বঙ্কিম তার চাকুরী জীবনে বা সমাজের আশেপাশে পেয়েছেন। দুর্নীতি, চাটুকারীতার এই চিত্র পড়লে মনে হয় এ তো বর্তমানেও একইভাবে অাছে। মুচিরাম গুড়ের চরিত্রটির সাথে সকল সময়ে সকল সমাজেই কারো না কারোর মিল খুঁজে পাওয়া যাবে। বুদ্ধি বা বিদ্যা না থাকলেও স্রেফ দুষ্টবুদ্ধি আর মিস্টি কথায় যে লোককে ভুলিয়ে কাজ উদ্ধার করতে পারে মুচিরামেরা তারই বর্ণনা পাওয়া যায় বারবার। সামান্য বেতনের চাকরী থেকে ঘুষখোর পেসকার, ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট, জমিদার হয়ে একেবারে রাজাবাহাদুর হয়ে যাওয়াও যে সম্ভব তার প্রমাণ তো মুচিরাম। বঙ্কিম নিজে ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, তবু তিনি নিজেই লিখেছেন মুচিরামের অযোগ্যতাই ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে ছিলো তার যোগ্যতা কেননা ওতে বিদ্যা বুদ্ধি বিশেষ লাগে না। আমলাতন্ত্রের প্রতি বঙ্কিমের এই অবজ্ঞা হয়তো অভিজ্ঞতাপ্রসুত। বুদ্ধি ও কর্মদক্ষতা থাকলেও ভাগ্য সহায়তা না করলে আর মুরুব্বী না থাকলে যে কাজ হয় না সে চিত্রও বঙ্কিম তুলে ধরেছেন। তবে মুচিরামের মতো বোকা চালাক চোরের লাভের গুড় খাওয়ার জন্য বাটপাররাও যে সমাজে অাছে সেই দিকটাও এই লেখায় আছে।টাকার অংকের সাথে সাথে যে মানুষের সম্মান বাড়ে কমে, গুড় পদবী কিভাবে রায় চৌধুরী হয়ে যায় সেই বর্ণনাও তো বাস্তব। সবাইকে বলবো লেখাটি পড়ে দেখতে। পাঁচ তারা।
যেই হাস্যরস দিয়ে বিদ্রূপ করেছেন, হা হা হা। ইংরেজ দের প্রতি চাটুকারিতা এবং তার ফলে কিরূপে কেউ কেউ নিজের উন্নতি করিয়াছে তাহার এক চমৎকার হাস্যরসময় বর্ণনা, উক্ত রচনায় বর্ণিত হইয়াছে।
"মুচিরাম গুড়ের জীবন-চরিত"-এর বাণীশিল্প থেকে প্রকাশিত সংস্করণটি পড়লাম। রচনাটির আকার খুবই ক্ষুদ্র। সেটিকে অক্ষরবিন্যাস এবং অলংকরণের যাদুবলে কোনক্রমে ফুলিয়েফাঁপিয়ে একটি হার্ডবাইন্ড বইয়ের আকার দেওয়ার জন্য প্রকাশনীর প্রয়াস প্রশংসনীয়। এটি মূলত একটি স্যাটায়ার গোছের লেখনী। অশিক্ষিত মুচিরাম কীভাবে কেবল চাটুকারিতা অবলম্বন করে ফ্রম নাথিং টু ভেরি স্পেশাল থিং হয়ে উঠলেন তারই গল্প। আপাতদৃষ্টে মনে হবে এটি বাঙালির চালবাজি,তেলবাজির উপর উপহাস। কিন্তু বিচক্ষণ পাঠক মাত্রই বুঝবেন যে পরোক্ষভাবে ইংরেজ সরকারকেই সূক্ষ্মভাবে, "তেলপ্রিয় ঢেঁকি, সবটাই মেকি" - বলার অভিপ্রায় ছিল।
পিডিএফ পড়ার অভ্যেস নেই। ভবিষ্যতে "লোকরহস্য" কোনভাবে মুদ্রণ সংস্করণে পেলে পড়ব। পড়ার পর এখানেই সেই বিষয়ক মতামত জুড়ে দেব।