বাউলের সাধনার স্তর চারটি। প্রথম দুটো স্তর গুরুর সঙ্গ করা আর পরের দুটো স্তরে প্রয়োজন হয় সাধন সঙ্গিনীর। বাউল ত সাধনা করেন সিদ্ধি লাভও করেন কেউ কেউ কিন্তু তার সঙ্গিনীর অবস্থান কোথায়? এই প্রশ্নেরই উত্তর হচ্ছে লীনা চাকীর এই বই।
বাউল বললে এক রহস্যময় মানুষের কথা মনে আসে। টুটা ফুটা জোড়াতাপ্পি দেওয়া পোশাক, এক গাল না কামানো দাড়ি , হাতে একতারা আর চোখে জটিলতাহীন ,সদানন্দ দৃষ্টি। পুরুষ বাউল , বাউল বললে এমন একজন পুরুষ বাউলের ছবিই মনে আসে। এই লোকায়ত ধর্মে মহিলার স্থান কোথায় ? তার ছবি আমাদের কষ্ট করে কল্পনা করতে হয়। বাউলেরা মানুষভজা। তারা না আস্তিক না নাস্তিক। আপনার মধ্যেই তারা মনের মানুষ খোঁজে। তাদের সাধন প্রণালীও গুহ্য। দেহতত্ত্বের সাধনায় তার লাগে সঙ্গিনীকে। কিন্তু এই সাধনায় সঙ্গিনীর প্রাপ্তি কি ? তাকে কেবল সঙ্গিনী হয়েই থাকতে হয় আজীবন ? মুক্তি , সিদ্ধি কি তার মেলেনা ? পরমপ্রাপ্তি কেবল পুরুষ বাউলদের ? আপাত উদার এই ধর্মে মহিলাদের অবস্থানের অসাধারণ তথ্যসমৃদ্ধ, মনোজ্ঞ বর্ণনা দিয়েছেন লেখিকা। উঠে এসেছে বাউল সাধন সঙ্গিনীদের দুর্দশার কথা। দেহসাধনার নামে পুরুষ বাউলদের ব্যভিচারের কথা ও ধর্মের নামে সঙ্গিনীকে দাবিয়ে রাখার কাহিনী। বইটা এখানে শেষ হলেও ক্ষতি ছিল না। কিন্তু লেখিকা মুক্তির গল্পও শুনিয়েছেন। বাউল কিংবন্দন্তী গায়িকা ননীবালা , যিনি কনো পুরুষ সঙ্গীর তোয়াক্কা না করে, চরম আর্থিক দৈনতা অগার্হ্য করে নিজ অসামান্য গায়েকি দিয়ে পুরুষ গায়কদের মধ্যে নিজেকে অন্য উচ্চতায় প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন। লেখিকা তার গল্পও বলেছেন। বলেছেন কৃষ্ণা ,সুমিত্রা , গায়েত্রী , রাধারানীদের কথা যারা সব বাঁধা তুচ্ছ করে গান বাঁধছে , দল গড়ছে। পুরুষের আশ্রয় ও নিশ্চয়তার মুখাপেক্ষী না হয়েই।
কখনো কখনো আন্দাজেই একেকটা বই তুলে নি। মন বলে পড়ে দেখ দারুন কিছু পাবি। তেমন ভাবেই এই বইটা পড়তে শুরু করেছিলাম। শেষ করলাম অপূর্ব অনভুতি নিয়ে।