Mir Abdus Shukur Al Mahmud (best known as Al Mahmud) was a Bangladeshi poet, novelist, and short-story writer. He was considered one of the greatest Bengali poets to have emerged in the 20th century. His work in Bengali poetry is dominated by his frequent use of regional dialects. In the 1950s he was among those Bengali poets who were outspoken in their writing on such subjects as the events of the Bengali Language Movement, nationalism, political and economical repression, and the struggle against the West Pakistani government.
Notable awards: Bangla Academy Award (1968) Ekushey Padak (1987)
আমারা আজকের প্রজন্মের ছেলেমেয়েরা যুদ্ধের ভয়াবহতা কতটা উপলব্ধি করতে পারবো? সেই ক্লাস সেভেন এইটে থাকতে হুমায়ূন আহমেদ এর আগুনের পরশমণি বইটা পড়ে কি যে মন খারাপ হয়েছিলো 💔। তারপর জাহানারা ইমামের একাওরের দিনগুলি, আনিসুল হকের মা, হুমায়ূন আহমেদ এর জোসনা ও জননীর গল্প, দেয়াল আরও কতো বই যে পড়া হয়ে গেছে। আর আজকে আল মাহমুদ এর কাবিলের বোন পড়ে মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে গেলো 😢 পাঠকমহলে এই বইটা নিয়ে খুব একটা আলোচনা সমালোচনা দেখি নাহ। মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে বইটা অসম্ভব সুন্দর একটা প্রেমের উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে পড়ার পর সবসময় চেয়েছি এই পৃথিবীতে আর কোথাও যেনো কখনো যুদ্ধ না হয়😢
তিন চার বছর আগে বইটা পড়েছিলাম। বাঙলায় জন্মে লেখক এত সাম্প্রদায়িক আর পাকিস্থান পন্থী কেন বুঝি না। ইনিয়ে বিনিয়ে বইয়ের শেষে তিনি পাকিস্তানের ই গুনগান গেয়েছেন৷
ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর থানার বীরগাঁও গ্রামের সৈয়দা নাদিরা বেগম কবির সহধর্মিনী। তাঁদের পাঁচ পুত্র ও তিন কন্যা।
আধুনিক বাংলা কবিতার পাশাপাশি কথাসাহিত্যেও তাঁর অবাধ বিচরণ। তাঁর উল্লেখযোগ্য উপন্যাসগুলোর মধ্যে "কাবিলের বোন" অন্যতম। উপন্যাস গুলোতে তিনি ভাটি বাংলার জন- জীবন, গ্রামীন দৃশ্যপট, নদীনির্ভর জনপদ, চরাঞ্চলের কর্মমুখর জীবনচাঞ্চল্য ও নর-নারীর চিরন্তন প্রেম-বিরহের বিষয়কে ফুটিয়ে তুলেছেন। এসব কিছুর মাঝেও "কাবিলের বোন" একটি মুক্তিযুদ্ধের উপন্যাস।
সময়টা তখন ১৯৬০ সালের মাঝামাঝি। সৈয়দ আহমদ কাবিল ষোল-সতের বছরের একটি কিশোর। সিলেটের মনতলা সৈয়দ বাড়ীর সৈয়দ আহমদ কামাল ও সৈয়দা জাকিয়া বানুর একমাত্র ছেলে।
কাবিল অনেক ছোট বেলাতেই তার বাবাকে হারায়। আহমদ কামালের একমাত্র ভাই সৈয়দ আহমদ আলম দেশভাগের পর পাকিস্তান হবার পর ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়তে এসে এক অবাঙ্গালী মোহাজিন পরিবারের একমাত্র মেয়ে রওনকে বিয়ে করেই স্থায়ী ভাবে ঢাকাতে বসবাস করেন।
অবাঙ্গালী বিয়ে করাতে যতোটা না ব্যথা পান ভাই কামাল তার চেয়ে বেশী ব্যথা পান নিজের সব কিছু ব্যয় করে যে ভাইকে বড় করছেন সে অনুমতি না নিয়ে বিয়ে করে ফেললো।
এ ব্যথা সহ্য করতে না পেরে আহমদ কামাল মারা যান। নিজের স্ত্রীকে মাথার দিব্যি দিয়ে যান যেন ছোট ভাই আলমের কোন অনুগ্রহ না গ্রহন করেন। কিন্তু ছেলে এস এস সি পরীক্ষা দেবার পর সে প্রতিজ্ঞা আর ধরে রাখতে পারলেন না জাকিয়া বানু। আলমকে একটি চিঠি লিখে কাবিলের কাছে দিয়ে কাবিলকে ঢাকাতে পাঠিয়ে দেন তিনি।
চাচার বাসাতে চাচা-চাচীর অনেক আদর যত্নে লেখাপড়া করতে থাকে কাবিল। একই সাথে কাবিল পায় রোকসানার ভালোবাসা। রোকসানা আহমদ আলম ও রওনকের একমাত্র মেয়ে, কাবিলের বোন।
পরিবারের সকলেই কাবিল ও রোকসানার ভালোবাসাটা কে মেনে নেয়। জাকিয়া বানু ছেলেক হারানোর ভয়ে মেনে নিলেও মনের দিক থেকে অনেক বেশী ভেঙ্গে পড়েন, কারন তিনি ছেলের বিয়ে ঠিক করে রেখেছিলেন নিজে ভাইয়ের এতিম মেয়ে মোমেনার সাথে। মোমেনাও কাবিলের বোন।
ইতিমধ্যে কাবিল রাজনীতিতে জড়িয়ে পরে। আর দেশের পরিস্থিতি ও চরম বিপর্যয় শুরু হয়। পুরোপরি ভাবে পূর্ব পাকিস্তান পশ্চিম পাকিস্তানের দখলে চলে যায়। দেশের বড় বড় রাজনৈতিক নেতাদের প্রিয় পাত্র হয়ে ওঠেন কাবিল এবং পরিবার থেকে দূরে চলে যেতে থাকে। এরই মাঝে একদিন রাতের আধারে পুলিশ এসে হাজির হয় আলম সাহেবের বাড়ীতে।
"কাবিলের বোন" উপন্যাসটি মোট ৫টি পর্বে বিভক্ত। ১৯৬০ সালের জানুয়ারী মাস থেকে ১৯৭১ সালের ১৭ই ডিসেম্বর পর্যন্ত সময়ের রাজনৈতিক অস্থিরতা ও গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ও পরিস্থিতিকে লেখক সহজ সরল ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন হাতে গোনা কিছু চরিত্রের মধ্যে। তাছাড়া তখনকার সময় অবাঙ্গালী মুসলমান যাদেরকে বিহারি বলা হতো, তাদের উপর অত্যাচার ও সেই সময়ের দেশের রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গের ভূমিকা ও পরিস্থিতি যা দেশেক মুক্তির দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে। তার উপর কিছু মানুষের ত্যাগটাও সুন্দর ভাবে তুলে ধরেছেন যা কোন ভাবেই অস্বীকার করা চলেনা।
পারিবারিক ও সামাজিক কাহিনীর মধ্যে দিয়ে এগিয়ে গেলেও "কাবিলের বোন" মুক্তিযুদ্ধ কেই লালন করে।
উপন্যাসটির প্লট সেই বৃহৎ ভারতবর্ষ ভাঙনের শুরু থেকে মহান মুক্তিযুদ্ধের শেষ পর্যন্ত বিস্তৃত। একটি বাঙালি ছেলে আরেকটি অবাঙালি মেয়ের প্রেমে পড়ে। সম্পর্কে তারা চাচাতো ভাই-বোন। গল্পটা তখনকার যখন বৃহত্তর ভারত ভাগ হয়। দেশের সেই ক্রন্তিকালের বিহারী ছাড়াও বাকি উর্দুভাষী তথা অন্য মুহাজিরদের (অবাঙালী। যারা ভারত বিভাগের পর এদেশে চলে আসে।) মনস্তাত্ত্বিক দিক নিয়েও লেখক বেশ লিখে গেছেন। তৎকালীন অবাঙালি আর বাঙালিদের সমাজিক, অর্থনৈতিক বা আত্মীক দিক নিয়ে জানতে চাইলে এই বই পাঠকের সর্বোচ্চ ক্ষুধা নিবৃত্তির সহায়ক। নরনারীর প্রেম, দেশের এক ভাঙন পরিস্থিতিতে অবাঙালিদের মনের ভাব, ভিন্ন ভাষাভাষী বা চালচলনের তরুণ তরুণীর প্রেম। শেকড় সন্ধানী শক্ত সাবলীল লেখনী নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। বাংলাসাহিত্যে এসব বই রত্নতুল্য।শুধু এটুকু বলে রাখি শেষ দিকে পাঠকদের মেরুদণ্ড ঠান্ডা হবার মতো সত্য আর বাস্তবতার মুখোমুখি হতে হবে তা সত্যি। ভালোবাসা আসলে কি? দুটি নরনারীর একে অন্যের ভালোলাগার মিল নাকি শুধু একটি আশ্রয় কিংবা অন্য কোন কিছু? ভালোবাসার মূল ভাষা কি? পরিস্থিতির চাপে দুজন মানুষ দু'দিকে চলে গেলে তাদের মধ্যকার বন্ধন কি আগের মতোনই থাকে নাকি অনেকখানি শিথিল হয়ে যায়?
একজন মানুষের জীবনে প্রাপ্তির সুখ যেমম আসে, তেমনই হারানোর বেদনাও তাকে উপলব্ধি করতে হয়। কাছে পাওয়ার সুখের সাথে সাথে দূরে সরে যাওয়ার শোক তাকে পালন করতে হয়। কখনো কখনো প্রাপ্তির আনন্দকে হারানোর দাঁড়িপাল্লা দিয়ে পরিমাপ করা হয়। মাঝে মাঝে সুখ আর দুঃখ, প্রাপ্তি আর বিসর্জন সমান্তরাল ভাবে সামনে এগিয়ে নিয়ে যায় মানুষের জীবন। জীবনের বোধ ও বেদনাকে তখন অন্তস্তল থেকে উপলব্ধি করতে পারে একজন মানুষ। কাবিলের বোন এমনই পাওয়া না পাওয়ার বোধ ও বেদনায় মাখামাখি একটি গল্প।
কাবিলের বোন আসলে একটি উপাখ্যান। একই সাথে পাওয়া না পাওয়ার গল্প। জীবনবোধের গভীর থেকে দেখা একটি দেশের জন্মোৎসব। কাছে যেতে যেতে অনেক বেশি দূরে সরে যাওয়ার আখ্যান। গল্পটা রোমান্টিক। সাথে সাথে ট্রাজিকও। গল্পটা শুধু একা একজন কাবিলের বোনের নয়, গল্পটা একই মানচিত্রে বসবাসরত ভিন্ন দুটি জাতিসত্বার সংকট ও সংকট থেকে উত্তরণের।
যে চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে এই গল্প আবর্তিত হয়েছে তাট নাম "আহমাদ কাবিল"। একজন আত্মবিশ্বাসী স্পষ্টবাদী ছাত্রনেতা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যাল��়ের ছাত্র সংগঠনের কেন্দ্রীয় কমিটির অপরিহার্য সদস্য। আখাউড়া জংশন স্টেশনের অদূরে সিলেট লাইনে মনতলা নামক ক্ষুদ্র স্টেশনের কাছেই পূর্ব পাকিস্তানের শেষ সীমান্তে তার বাড়ি। কাবিলের বাবা আহমদ কামাল একদা তার যে ভাই আহমদ আলমের সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করেছিলেন " বিহারি" মেয়ে বিয়ে করার দায়ে, তার বনগ্রামের বাড়িই কাবিলের বর্তমান আবাস্থল। গল্পটা শুরু হয় এখান থেকেই। কাবিলের মনতলা থেকে বনগ্রামের উদ্দেশ্যে যাত্রা করার মাধ্যমে। তারপরের ঘটনা এগিয়েছে অত্যান্ত দ্রুত গতিতে। চাচাতো বোন রোখসানার সাথে পরিচয় অন্তরঙ্গতা ও এক সাথে পথ চলার সূচনা। অনেকখানি আশা আর অনেকগুলে প্রতিশ্রুতি নিয়ে রোখাসানার পৈত্রিক বসতবাড়িতে ফিরে আসা। গল্পে নতুন স্বাদ যুক্ত হয়, যখন দৃশ্যপটে আবির্ভাব হয় আন্দালিব আর মোমেনার চরিত্র দুটি। রোমান্টিক, পারিবারিক, সামাজিক, রাজনৈতিক বিবিধ ঘটনা পর্ব অতিক্রম করে গল্পটা এমন এক পর্যায়ে পৌঁছায় যখন দেশজুড়ে শুরু হয় অসম এক যুদ্ধ। জুলুমবাজ শাসকের বিরুদ্ধে মজলুম জনতার যুদ্ধ। যে যুদ্ধটা বদলে দেয় সময়ের গতিপথ।
কাবিলের বোন গল্পটার দুটি স্রোত। এক স্রোতের নাম বাঙালি। অন্যটির নাম বিহারি বা মুহাজির। (অসমাপ্ত)