মুক্তমনা, বিজ্ঞানমনস্কতা আর মানবতার স্বঘোষিত পতাকাবাহীদের কথা তো অনেক শুনলেন। শুনলেন ইসলাম নিয়ে তোলা তাদের নানা অভিযোগ আর অপবাদ। তাদের বুলি-সর্বস্ব বায়বীয় চেতনা আর জোড়াতালি দেয়া আদর্শের শ্রেষ্ঠত্বের ব্যাপারে ভাসা ভাসা অনেক কথাও শুনলেন। এবার তাহলে অন্য পক্ষের কথা শোনা যাক, কি বলেন? . সবাই যখন ব্যস্ত অন্ধকারের মিছিলে যোগ দিতে তখন আসুন পা বাড়ানো যাক আলোর দিকে। মুছে ফেলা যাক পাথর হয়ে যাওয়া হৃদয়গুলোর উপর জমে থাকা মিথ্যের শ্যাওলাগুলো। পরীক্ষা করা যাক নীতিবাক্য আওড়ানো নৈতিকতার ঠিকাদারদের কথাগুলোর সত্যতা। বিজ্ঞান আর মানবতার চাদর পরিয়ে যে অদ্ভুত ফিলোসফি তারা প্রচার করে, ফাঁপা দেয়ালের বদ্ধ ঘরে আটকে থাকা সেই অন্ধকারের আসল চেহারাটার দিকেও উঁকি দেয়া যাক… . আপনার কি ইচ্ছে আছে সত্যকে জানার? নিঃসঙ্গ পদক্ষেপে হলেও সত্যের খোঁজে পথচলার?
আরিফ আজাদ একজন জীবন্ত আলোকবর্তিকা - লেখক আরিফ আজাদকে বর্ণনা করতে গিয়ে একথাই বলেছেন ডঃ শামসুল আরেফিন। গার্ডিয়ান প্রকাশনী আরিফ আজাদের পরিচয় দিতে গিয়ে লিখেছে, “তিনি বিশ্বাস নিয়ে লেখেন, অবিশ্বাসের আয়না চূর্ণবিচুর্ণ করেন।” আরিফ আজাদ এর বই মানেই একুশে বইমেলায় বেস্ট সেলার, এতটাই জনপ্রিয় এ লেখক। সাম্প্রতিককালে বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনে সবচেয়ে আলোড়ন তোলা লেখকদের একজন আরিফ আজাদ।
১৯৯০ সালের ৭ই জানুয়ারি চট্টগ্রামে জন্ম নেয়া এ লেখক মাধ্যমিক শিক্ষাজীবন শেষ করে চট্টগ্রাম জিলা স্কুলে। একটি সরকারি কলেজে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন এবং সেখানে উচ্চশিক্ষা সম্পন্ন করেন।
লেখালেখির ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই আরিফ আজাদ এর বই সমূহ পাঠক মহলে ব্যাপক সাড়া ফেলে। তার প্রথম বই ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ’ ২০১৭ সালের একুশে বইমেলায় প্রকাশ পায়। বইটির কেন্দ্রীয় চরিত্র সাজিদ বিভিন্ন কথোপকথনের মধ্যে তার নাস্তিক বন্ধুর অবিশ্বাসকে বিজ্ঞানসম্মত নানা যুক্তিতর্কের মাধ্যমে খণ্ডন করে। আর এসব কথোপকথনের মধ্য দিয়েই বইটিতে অবিশ্বাসীদের অনেক যুক্তি খণ্ডন করেছেন লেখক। বইটি প্রকাশের পরপরই তুমুল জনপ্রিয়তা পায়। এটি ইংরেজি ও অসমীয়া ভাষায় অনূদিতও হয়েছে। ২০১৯ সালের একুশে বইমেলায় ‘প্যারাডক্সিক্যাল সাজিদ - ২’ প্রকাশিত হয়ে এবং এটিও বেস্টসেলারে পরিণত হয়। সাজিদ সিরিজ ছাড়াও আরিফ আজাদ এর বই সমগ্রতে আছে ‘আরজ আলী সমীপে’ এবং ‘সত্যকথন’ (সহলেখক) এর মতো তুমুল জনপ্রিয় বই।
অসাধারণ একটি বই। আমি সাধারণত এখন নানা ব্যস্ততার কারনে কোন বই একটানা পড়ে শেষ করতে পারিনা। যদি তেমন কোন ইন্টারেস্টিং বই পাই, তাহলে অন্য সব কাজ ফেলে একটানা পড়ে বইটি শেষ করে ফেলি। আর আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি, "সত্যকথন" তেমনই একটি বই। Unstoppable, Unputdownable ইত্যাদি ইত্যাদি বিশেষনে একে আখ্যায়িত করা যেতেই পারে। :)
. ২০০৬ সাল থেকেই ব্লগিং এর সাথে যুক্ত থাকার কারণে জানি, ব্লগগুলোতে কিভাবে ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে অযৌক্তিক কুৎসা রটনা করা হয়। কোন মুসলিম যৌক্তিকভাবে রিফিউট করতে আসলে তাদের নানা ভাবে হেনস্হা করা হয়। কখনও উপহাস করে, কখনও গালাগালি করে। সাধারণ একজন মুসলিমের জন্য হয়তো সাথে সাথে রেফারেন্স দিয়ে কোন ভুল খন্ডন করাও কষ্টকর হয়ে পড়ে। তো "সত্যকথন" ইসলাম ও রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিরুদ্ধে ইসলাম বিদ্বেষীদের আনিত সেরকমই কিছু ভ্রান্ত অভিযোগকে যুক্তি ও রেফারেন্সের মাধ্যমে খন্ডন করতে চেষ্টা করেছে। কুরআন-হাদিস থেকে যেমন রেফারেন্স দেয়া হয়েছে, রেফারেন্স দেয়া হয়েছে পাশ্চাত্যের বিভিন্ন প্রাচ্যবিদ, বিজ্ঞানী এদেরও।
. সবচেয়ে ভালো লেগেছে বইটির ভেতর আর্টিকেল গুলোর বিন্যাস। প্রথমেই আল্লাহার অস্তিত্বের বিরুদ্ধে ভ্রান্তি খন্ডন দিয়ে শুরু করে একে একে ইসলামের বিরুদ্ধে আনিত কিছু মৌলিক অভিযোগ, যেমন-ইসলামে দাসপ্রথা, রাসূলুল্লাহর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বিবাহ, ইসরা ও মিরাজ- এসব নিয়েও নানা অভিযোগ খন্ডন করা হয়েছে। আর সবকিছু করা হয়েছে রেফারেন্সের সাহায্যে যুক্তির প্রয়োগ ঘটিয়ে।
. সব শেষে এন্টনি ফ্লিউ নামক একজন নাস্তিক দার্শনিকের জীবনের কিছু কাহিনী দিয়ে বইটি শেষ করা হয়েছে। যে আর্টিকেলটি হালের নাস্তিক-মুক্তমনাদের জন্য একটি উত্তম দলিল হয়ে থাকবে আজীবন। হালের নাস্তিক-মুক্তমনারা যে এন্টনি ফ্লিউ এর যুক্তি-তর্ক-থিওরীর উপর ভর করেই এখন তাদের মুক্ত মনের পরিচয় দেয়, সেই এন্টনি ফ্লিউ-ই শেষ জীবনে এসে সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাস করেছিলেন। এবং এ নিয়ে নাতিদীর্ঘ একটি বইও লিখে গিয়েছেন। যার নাম - There Is a God: How the World's Most Notorious Atheist Changed His Mind।
. বইটিতে তিনি সৃষ্টিকর্তার অস্তিত্বের স্বপক্ষে তার মতামত তুলে ধরেন। ৫০ বছর নাস্তিকতার চর্চা করার পর একজন দার্শনিকের শেষ জীবনে লেখা এই বই পুরো বিশ্বের নাস্তিক-মুক্তমনাদের গালে অনেকটা চপেটাঘাত স্বরূপ।
. পরিশেষে বলবো, "সত্যকথন" বইটি সবারই অন্তত একটিবার হলেও পড়ে দেখা উচিত। আপনি ঘোর নাস্তিক্যবাদী হলেও বইয়ের আর্টিকেলগুলো আপনাকে ভাবাবে আমি নিশ্চিত। ইসলামের বিরুদ্ধে করা আপনার অভিযোগগুলো নিয়ে পুনরায় রিভিউ করতে আপনাকে সচেষ্ট করবে ইন-শা-আল্লাহ। আর যদি আস্তিক (কিন্তু প্র্যাকটিসিং মুসলিম না) হয়ে থাকেন, তবে আপনার আস্তিক্যের স্বপক্ষে যুক্তি-তর্ক আপনার আস্তিকতাকে আরো সুদৃঢ় করবে এবং ইসলামের পথে আপনাকে এক স্টেপ এগিয়ে নিতে সাহায্য করবে ইন-শা-আল্লাহ। আর যদি প্রেকটিসিং মুসলিম হয়ে থাকেন, তবে নিজের ঈমান পাকাপোক্ত করতে এবং অন্যকে দাওয়াহ করার ক্ষেত্রে ইন-শা-আল্লাহ বইটি আর্টিকেলগুলো আপনাকে ব্যাপক সাহায্য করবে।
. বইটি ফেইসবুক ভিত্তিক যে কোন অনলাইন লাইব্রেরী থেকে ওর্ডার করা যাবে। আল্লাহ তা'আলা আমাদের সকলকে সঠিক জ্ঞানার্জনের তাওফিক দান করুন। সবাইকে সঠিক পথের উপর অটল রাখুন। আমীন।
অসাধারণ একটি বই এবং অত্যন্ত যুগোপযোগী!! কাফির বা নাস্তিক দ্বারা ইসলামের উপর উত্থাপিত অনেক "অভিযোগে" আজ সর্বক্ষেত্রের মিডিয়া উত্তপ্ত হয়ে আছে। এই বইটিতে এমনই অনেক অভিযোগের বাস্তবরূপ ও অন্তঃসার শূন্যতা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেয়া হয়েছে। প্র্যাক্টিসিং,নন-প্র্যাক্টিসিং মুসলিম, নাস্তিক, কাফির সকলের জন্য বইটি রিকোমেন্ডেড। শুধু তারা ছাড়া যাদের সত্যের প্রতি কোন আগ্রহ নেই। আগ্রহ কেবল আছে জিদ ও হঠকারিতায়!!
Mass People এর কাছে যেমন আরিফ আজাদের "প্যারাডক্সিকাল সাজিদ" পৌঁছে গেছে। এই বইটাও সবার কাছে পৌঁছে যাক, এই প্রত্যাশা করছি। আল্লাহ তা'আলা সবাইকে সত্য জানার তাওফিক দান করুন। আমিন।
সত্য আর মিথ্যার দ্বন্দ্ব তো থাকবেই। দু:খ লাগে যখন মানুষ মিথ্যার পক্ষে লড়াই করে আরো শত শত মিথ্যাকে ভিত্তি করে। 'সত্যকথন' মিথ্যার সৈনিকদের কিছু দুর্গে চরম আঘাত করবে। আর এটাতো স্পষ্ট যে সত্যের সৈনিকরা নিজেদের জ্ঞানের শক্তিকে শাণিত না করলে লড়াইয়ে আক্রান্ত হতেই থাকবে।
কিছু প্রবন্ধ হালের কিছু জনপ্রিয় প্রশ্নকে দুমড়ে- মুচড়ে ডাষ্টবিনে ফেলে দিয়েছে। কিছু প্রবন্ধ আবার অযৌক্তির আঘাতে রক্তাক্ত মনটাতে শীতল পরশ বুলাবে। সবচেয়ে বড় যে বিষয়টা বইটি পড়তে পড়তে মনে এসেছে, সংশয়বাদীদের কোন যুক্তিকেই সত্যের পরশ পাথরে যাচাই না করে গ্রহন করা যাবে না।
এটা ঠিক ওরকম বই না যে সকল প্রশ্নের উত্তর দিয়ে দেবে কিংবা ইসলামবিরোধীদের সকল যুক্তি ফুৎকারে উড়িয়ে দেবে। তবে বইটি বিশ্বাসীদের বিশ্বাস শক্ত করবে, দ্বিধাদ্বন্দ্বে ভোগা মানুষকে খানিকটা উপশম দেবে এবং অবিশ্বাসীদের খানিকটা অস্বস্তি দেবে। এরকম বই আরো দরকার। লেখকদের আমার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ।