মুহিব ভেবেছিলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হবে না। প্রেমিকা, পরিবার, বন্ধু এবং বান্ধবীদের নিয়ে উনিশ বছরের সুখী জীবন। প্রশাসনের দুর্নীতি আর অনিয়মের মধ্যেও জীবনটা মানিয়ে নিতে শুরু করেছিলো যখন, একটি ক্যাম্পাস মার্ডার পাল্টে দিলো সবকিছু। পরিবেশটিকে আরও জটিল করে তুলতেই যেনো যোগ দিলেন একজন ক্যালটেক ফেরত শিক্ষক, ভদ্রলোকের বাম হাতটা কনুইয়ের নিচ থেকে কাটা কেনো? ছাত্রনেতারা রাজনীতির নামে কোন অন্ধকার জগতে পা বাড়িয়েছে? এই কেসে কমিউনিস্ট পার্টির আগ্রহটা ঠিক কোথায়? পুলিশ এবং প্রশাসনের নীরবতার কারণ কি? আন্দোলনরত শিক্ষার্থিদের ক্ষোভের উৎপত্তিস্হল কোনটি? একটা খুন ওলোট পালোট করে দিলো বিশ্ববিদ্যালয়টির গতিপথ। পাল্টে দিলো মানুষগুলোকে। “যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল” সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্ধকার জগতের চিত্রায়ন। কৌতূহলের কাছে সতর্কতার হার মেনে যাওয়া মানব চরিত্রের সহজাত বৈশিষ্ট্য। এ এক হার মেনে নেওয়া উপাখ্যান। ক্ষমতাসীনদের সঙ্গে সাধারণদের না পেরে ওঠার গল্প। তারুণ্যের শক্তি - আদর্শের লড়াই আর মতবাদের সংঘর্ষ। অধিকার আদায়ে বেপরোয়া চিরায়ত বাঙালি ছাত্রদের স্তবগান। সাধারণ এক ছাত্রের জীবন বিশ্ববিদ্যালয়ের আঁধারস্পর্শে ধীরে ধীরে পাল্টে যাওয়ার ক্রমবর্ণনা। মুহিব জানে সে আর পিছিয়ে আসতে পারবে না। পড়াশোনা করতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে আসা ছেলেমেয়েগুলো কোন পরিস্হিতিতে হাতে অস্ত্র তুলে নেয় টের পেলো হাড়ে হাড়ে।
Kishor Pasha Imon is a famous Bangladeshi crime writer.
Musa Ibne Mannan, known by the pen name KP Imon, is an accomplished writer who initially gained recognition through his short stories on social media. Over the course of his career, he has written over 220 short stories, captivating his online audience with his vivid imagination and storytelling skills. Building on his success in the digital realm, Imon went on to establish himself as a prominent novelist, with his works being published in both Bangladesh and India.
His regular publishers are Batighar publications, Abosar Prokashona Songstha, and Nalonda in Bangladesh. Abhijan Publishers solely publish his books in India. He is the author of 13 novels and translated 9 books to Bengali till date (5/10/23).
He graduated from the Department of Mechanical Engineering at Rajshahi University of Engineering & Technology. Presently, he resides in Dallas, TX, focusing on his PhD studies in Mechanical Engineering at UT Dallas after completing his MS at Texas State University.
His other addictions are PC gaming, watching cricket, and trekking.
"অসাধারণ".......। বাংলায় এমন কিছু লিখতে শুধু মেধা বা পরিশ্রমই নয়,লাগে বুকের পাটা ও। লেখক এইসব কিছু একসাথে ঢেলে দিয়েছেন বইটাতে। যার ফলে এটা হয়ে উঠেছে সত্যিকার অর্থেই "অসাধারণ"। বাংলা মৌলিক থ্রিলারে এই বইটা সবসময়ই আলাদা একটা জায়গা নিয়ে থাকবে।
অনেকগুলো ভাল রিভিউ দেখে বইটা কেনা এবং এক কথায় বলতে গেলে বইটা একদমই হতাশ করেনি। মুহিব নামক অতি সাধারণ এক তরুণ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে এসেই ব্যক্তিগত ঝামেলা থেকে নিজেকে সামলে নিতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে হতাশ অবস্থায় এক ভজঘট সময় পার করতে থাকে তখনই এক ভয়ংকর ও অনাকাংখিত ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী হয়ে পরে এখদম যাকে বলে আউট অফ ব্যাড লাক পরিস্থিতিতে। জীবন সংশয় এবং ভবিষ্যত নষ্ট হয়ে যাবার এক আশংকা দেখা দেয়। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে আগত এক নতুন শিক্ষকের হাত ধরে পরিবর্তনের আলোর আভাস পাওয়া গেলেও প্রাচীনপন্থী পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নতুন হাওয়া নিয়ে আসা নিয়ে আসা সহজ না। তায় আবার এ শিক্ষকের অতীতে রয়েছে কিছু রহস্য। মুহিব ও তার বন্ধুদের সবার জীবনে. ক্লাস-পরীক্ষা-ল্যাবের যন্ত্রণা সামলাতে না সামলাতে নেমে আসে আরেক দুর্যোগ.. জীবন চলতে থাকে এভাবেই..। এরই মাঝে খাবি খেতে খেতে পরিস্থিতির হাল ধরতে চায় কেন্দ্রীয় চরিত্র মুহিব। ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে সে সবকিছু বুঝতে এবং সামলাতে চেষ্টা করে, বুকে তার ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে চলে, এই যন্ত্রণার অবসান কবে , কিভাবে হবে? কবে এই জীবন নিয়ে খেলার যন্ত্রণা থেকে সে ও তার বন্ধুরা রেহাই পাবে সে অপেক্ষার প্রহরগুলো যেন ধীর থেকে ধীর লয়ে পেরোতে থাকে। পুরো পরিস্থিতির জটিলতা, কুয়াশার চাদরে ঢেকে থাকা কিছু রহস্য ও তার সমাধান করে নিজেকে একটা ভাল অবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে আসার সম্পূর্ণ প্রকৃয়া নিয়ে উপন্যাসের কাহিনীবিন্যাস সাজানো।
এবার যদি লেখার প্রসঙ্গে আসি, তবে ভূমিকার অংশ এবং উপন্যাসের শেষ বা ফিনিশিং আরো ভাল করা যেতো এমন একটা চিন্তা ছাড়া পুরো বই পড়ার সময় একটুও বোর/ অধৈর্য্য হইনি। রহস্যগুলো তেমন পিলে চমকানো/জটিল নাহলেও রহস্যের আবহ তৈরী করে দিয়েছে চমতকার। ব্যক্তিগত ভাবে আরেকটু ভাল লেগেছে কারণ শক্তিশালী নারী চরিত্রের দেখা পেয়েছি তাই। বলতে খারাপই লাগছে তবে বইয়ের প্রচ্ছদ একেবারেই ভাল লাগেনি, ইচ্ছে করলে আরো রুচিশীল করা যেতো প্রচ্ছদটা। এই লেখকের আরো বই পড়ার জন্য আগ্রহী হয়েছি। ফিকশন বই নিয়ে ভাল সময় কাটাতে চাইলে বইটি পড়তে পারেন, রেকমেন্ডেড।
পরীক্ষা দিয়ে এসেই বইটা পড়তে বসেছিলাম । বর্তমান ভার্সিটি জীবন এবংসাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা ছাত্ররাজনীতিকে এরকম টানটান উত্তেজনাপূর্ণ একটা বইকে সৃষ্টি দেয়া খুব সোজা না । লেখককে অভিনন্দন । সামনে এরকম লেখার জন্য প্রত্যাশা থাকল ।
শুধু ডিটেক্টিভ থ্রিলার হিসেবে যদি কনসিডার করি, বেশ ভালো বই। আস্তে ধীরে খেলে রহস্যের শেষে নিয়ে আসছেন লেখক, এতো বড় সাইজের বই হওয়া সত্ত্বেও কোথাও ঝুলে যায় নাই। যদি ক্যাম্পাস জীবনের স্লাইস-অফ-লাইফ হিসেবে কনসিডার করি, আমি রিলেট করতে পারি নাই, গল্পের এই ক্যাম্পাসের মত এসব কেরামতি তো আমার ক্যাম্পাসে আজীবনেও দেখি নাই। বারবারই বই রেখে চিন্তা করতে হইসে, এসব কেমনে হয়, জীবনেও তো দেখলাম না।
এনিহাও, ভালো বই। সিক্যুয়েলের রাস্তা খোলা রাখা হইসে মনে হচ্ছে লাস্ট কয়েক পাতা পড়ে।
ক্যাম্পাসের ব্যাকড্রপে মোটামুটি মানের এক রাজনৈতিক থ্রিলার 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল'। বর্তমানে বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে যেরকম অবস্থা চলছে তার মোটামুটি একটা ওভারঅল বর্ণনা উঠে এসেছে লেখকের ভাষায়।
গল্পটা মূলত প্রতিশোধের। রিভেঞ্জ থ্রিলারের ক্ষেত্রে যেটা সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তা হলো এর টানটান গতি, টুইস্ট আর দুর্দান্ত একটা ক্লাইম্যাক্স। কিন্তু এর কোনটাই একটা সময়ের পর আর পাওয়া যায় না। অহেতুক অনেক সাবপ্লট এনে অযথাই লম্বা করে হয়েছে গল্পটাকে। যার কারণে গল্পের অন্তিম পর্যায়ে এসে কোন আগ্রহবোধই হয় না আর। একটা একটা করে তুরুপের তাস লেখক বের করতে থাকেন, আর একটু একটু করে আগ্রহ চলে যেতে থাকে।
কেপির প্লট ভাবনা দারুণ। লেখকের চিন্তাভাবনাও দারুণ। কিন্তু গল্প বলার ক্ষেত্রে এসবের থেকে বেশি গুরুত্বপূর্ণ তার লেখনী। ফেসবুকে লেখকের ছোটগল্পগুলোতে যে ধরনের ফ্লেভার পেতাম,তা এখন অব্দি তার উপন্যাসে অনুপস্থিত। যাইহোক, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল' অবশ্যই একটি ব্যতিক্রমী উপস্থাপনা। ভালো খারাপ সে যাই হোক...
মুহিব। স্টেট ইউনিভার্সিটির ম্যাকানিক্যাল এঞ্জিনিয়ারিং এর ছাত্র সে। সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যকার আলো ও অন্ধকারের মধ্যে মিলিয়ে ছাত্রজীবন শুরু করা অন্য দশজনের মতই এক ছেলে। বন্ধুরা হলেন শামীম, ইলোরা এবং লিটু।
কালিগোলা অন্ধকারে সিগ্রেট ফুঁকে একটু রিল্যাক্স করতে গিয়ে আর সাধারণ দশজন ছাত্রের মত থাকা হয়ে উঠলো না মুহিবের। সংগঠিত হল এক ভয়ানক হত্যাকান্ড। একটু দূরে থেকেও কিছু করতে না পারা মুহিব ঠিকই বুঝতে পারলো খুনি কারা।
সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে স্টেট ইউনিভার্সিটি একটু বেশি রক্ষণশীল এবং বদ্ধ পরিবেশের। এখানে একদিকে যেমন আছে দলীয় ক্যাডারদের অত্যাচার আবার অন্যদিকে আছে শিক্ষকদের লাগামহীন অস্বচ্ছতা। জবাবদিহীতার অভাবে অপছন্দের ছাত্রছাত্রিদের ক্যারিয়ার লাটে তুলতে তাদের বিবেকে কোন নাড়াচাড়া হয় না।
এর মধ্যে ক্যালটেক ইউনিভার্সিটি থেকে হাজির হলেন এক রহস্যময় শিক্ষক। বাম হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কাটা রবিন জামান খানের উপস্থিতিতে পাল্টে যেতে লাগলো স্টেট ইউনিভার্সিটির বাতাসের ঢেউ। তবে হাকারবিন স্যার যেন সাঁতরাচ্ছেন ঠিক স্রোতের বিপরীতে। যেখানে স্রোত অনেক তীব্র।
তদন্তে নেমে পড়লো মুহিব এবং তাঁর বন্ধুরা। কিন্তু অত্যন্ত ভয়ানক ক্যাডারদের সামনে তাঁরা তো ধূলিকণার চেয়েও ক্ষুদ্র। লেখালেখির প্রতি তীব্র প্যাশনে ভুগা মুহিব ভুগতে থাকে নিদারুন অপরাধবোধে। যে অপরাধবোধের কারণে সে হয়তো পরিণত হতে পারে বিবাদমান কোল্ড ওয়ারে থাকা একই ছাত্র সঙ্ঘের দুই গ্রুপের কোন একটির গুটিতে।
উগ্রপন্থি কমিউনিষ্ট গ্রুপেরই বা কি স্বার্থ আছে এইসবে? দেশজুড়ে ���তংকের আরেক নাম 'অনুশীলন গ্রুপ' এর হাইলি ট্রেইন্ড কেউ কেউ জড়িয়ে পড়েন এই নৈরাজ্যে।
সান জু বলেছিলেন, "নৈরাজ্যের মাঝেই সুযোগ নিহিত।" তবে এই সুযোগের সদ্ব্যবহার কারা করতে পারবেন শেষ পর্যন্ত? পরিস্থিতি কত ড্যাসপারেট হয়ে গেলে একজন সাধারণ ছাত্রের হাতে উঠে আসতে পারে অস্ত্র?
কিশোর পাশা ইমন সবসময় কয়েক স্তরে গল্প বলে থাকেন। এই উপন্যাসে স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষকদের অমানবিক আচরণ যেমন আছে তেমনি আছে কিছু শিক্ষকের সাধারণ ছাত্রের প্রতি নির্ভেজাল ভালোবাসা। ছাত্ররাজনীতির ভয়াল অন্ধকার রূপ আছে একদিকে আবার অপরদিকে আছে অপেক্ষাকৃত ভালো ছাত্রনেতাদের উপস্থিতি, তবে তাদের হাত যেন বাঁধা। উদীয়মান লেখক মুহিবের কাছ থেকে লেখালেখি সংক্রান্ত নলেজ শেয়ারিং কিছুটা পাওয়া যায় এই স্টোরিতে। বদ্ধ সমাজের ঢাক-ঢাক গুড়-গুড় নেই কেপির এই নভেলে। কোদালকে জিলেট মাক থ্রি টার্বো বলতে চান নি লেখক।
আবার দরিদ্রঘরের সন্তান লিটুর প্রচন্ড স্ট্রাগলে মনটা খারাপ হয়ে যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ে ইলোরা বা তূর্ণার মত মেয়েদের নিরাপত্তাহীনতা এবং সেই বিষয়ে প্রায় সকলের উদাসীনতা যেকোন পাঠকের মনে বিপন্নতা সৃষ্টি করতে পারে। বন্ধুকে বাঁচানোর জন্য ফান্ডের জোগার, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরীক্ষার নামে ফালতুমি এবং নিরপরাধ ছাত্রছাত্রিদের সাথে চরম প্রহসন ছত্রে ছত্রে ছুটে উঠেছে এই উপন্যাসে। কেপিকে আজ পর্যন্ত খারাপ লিখতে দেখলাম না। নাকি তাঁর খারাপ কোন লিখা আমি এখনো পড়িনি? বাংলাদেশের খুব সম্ভবত সবচেয়ে পরিশ্রমী এবং জেদি লেখক কিশোর পাশা ইমন। থ্রিলারের শুরুতেই খুনির পরিচয় প্রায় জেনে যাওয়া সত্ত্বেও কেন একজন পাঠক এই উপন্যাস পড়ে যাবেন? শুধুমাত্র কেপির গল্পকথনের উপর দানবীয় দক্ষতার কারণে।
বাংলাদেশের সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলো তো একধরণের শক্তিকেন্দ্রই। যেখানে শক্তিমানেরা তাদের মাসল ফ্ল্যাক্স করে থাকেন। তবে অনেক সময় তাঁরা হয়তো ভুলে যান যে আপাত সাধারণ দেখতে ছাত্রটির মাঝেও থাকতে পারে তীব্র আগুনের গুদাম। যে অগ্নি হয়তো পাল্টে দিতে পারে অনেককিছুই। আবার হয়তো আনতে পারে ছোটখাট কোন পরিবর্তন। উপন্যাসের প্রতিটি চরিত্রের বারংবার হেরে যাওয়াটা মেনে নিতে নিতে একজন সচেতন পাঠক হয়তো নিজেকে ভাবতে পারেন বিপন্ন।
দুই তিন দিনে প্রায় সাড়ে চারশো পৃষ্ঠা যদি আপনাকে দিয়ে কোন বই পড়িয়ে নেয় তাহলে সেই বই যে বিশেষ রকমের ভালো তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। ``যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল'' নিসন্দেহে সেই রকমেরই একটি ভালো বই। থ্রিলার পছন্দ করে যে কারও এই বই ভালো লাগবে। তবে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বা বিশ্ববিদ্যালয়ের সক্রিয় রাজনীতির ভিতরের পাঠ নেওয়া কোন বই পড়ুয়া যদি এই বই ধরে তাহলে শেষ না করা অব্দি সে নিস্তার পাবে বলি মনে হয় না।
কাহিনী অনেকটা এইরকম, প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বিরহ উদযাপনের সময় প্রথম বর্ষের ছাত্র মুহীব নিজের অজান্তেই ক্যাম্পাসের ভিতরে ঘটে যাওয়া এক খুনের সাথে নিজেকে জড়িয়ে ফেলে। খুনটি অবশ্যই রাজনৈতিক নেতাদের দ্বারা সংঘটিত হয়। তারপর থেকে খুনটা কীজন্য ঘটলো এবং এর অপরাধীরা কীভাবে কোন পদ্ধতিতে সাজা পাবে সেই দিকটি নিয়ে মুহীবকে কেন্দ্র করে ঘটনা এগিয়ে চলে। এবং স্বাভাবিক ভাবে মুহীবের সাথে তার বন্ধুরাও চলে আসে প্রেক্ষাপটে। এই ঘটনার পাশাপাশি চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্গত ছাত্র শিক্ষক সম্পর্কের এক অন্ধকার দিক। যেখানে আবার `হাকারবিন' নামক এক ব্যতিক্রম শিক্ষক চরিত্রের আগমন ঘটে। এইভাবেই ঘটনা এগিয়ে যায়।
ঘটনা আমি বলতে গিয়ে যতোটা ম্যারম্যারা ভাবে বললাম, বাস্তবের বইটি ঠিক ততটাই অসাধারণ। সময় থাকলে যে কেউ পড়ে দেখতে পারেন।
ভার্সিটি পলিটিক্স, খুন, পালটে যাওয়া পাশার দান, বদলে যাবার স্রোতে ভেসে যাওয়া অপর দিকে বন্ধুত্ব, বিশ্বাস, প্রেম, আরো অনেককিছুর মিশেল । গল্পটা আমাদের । গল্পটা চোখের সামনে দিয়ে ঘটে যাওয়া দৃশ্যপটবদলের, মুনিব হয়তো সাহসী ছিল তাই, বদলে যেতে পিছপা হয়েছে , কিন্তু আমরা পারতাম না। তাই আমাদের গল্পে তোফায়েল আর রেদোয়ানদের কিছু হয়ও না। কিন্তু যদি আমরা পারতাম ? সেই পারা না পারার গল্পই তো হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে আছে সেই কুকুরদলের সাথে ? কি সে গল্প ? পাঠ প্রতিক্রিয়া কিংবা রিভিউ কোনোটাই আসবে না এই বইয়ের জন্য। অন্তত প্রথমবার পড়ার পর তো নয়ই । আরেকবার পরবো এর পর নাহয় জানালাম পাঠ প্রতিক্রিয়া ;) শুভ হোক বই পড়া । তবে...... না থাকুক আজ ।
কী নিখাদ গা শিউরে ওঠা উপাখ্যান! অথচ প্রতিটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীই জানে এইসব অন্ধকারে নগ্ন রাজনীতির আকার-ইঙ্গিত।
সাধুবাদ দিতে হয় প্লট সিলেকশনে। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের রাজনীতি নিয়ে বিশদ কলেবরে লেখা সম্ভবত এটাই প্রথম। তবে আমি নিশ্চিত, এটাই শেষ না।
কাহিনীর সাথে এই পাঠকের সেঁটে যেতে কোনো বেগ পেতে হয়নি। জাগেনি কোনো ব্যাপারের প্রামাণিকতা নিয়ে প্রশ্ন। আমার মনে হয়, গল্পটি যতো পার্সেন্টেজে ফিকশন তার চেয়ে বেশি পার্সেন্টেজে বাস্তবতা। মুহিব চরিত্রটিতে লেখক খুব বেশি পরিমাণে তিনিই।
লেখকের পার্সোনালিটির সাথে কিছুটা পরিচিতি থাকায় তার বোল্ড উপস্থাপন খুব স্বাভাবিকই লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন ব্যাপার নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন - নিজস্ব মতাদর্শ দিয়ে তিনি তার মত করে সমাধানও দেখিয়েছেন। প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়ার চাইতেও সার্থকতা হচ্ছে পাঠককে তা নিয়ে ভাবানো। এইক্ষেত্রে আমি মনে করি, তিনি সফল একেবারে।
কিঞ্চিৎ স্পয়লার কিংবা না : থ্রিলার হিসেবে যেহেতু বইটা তুলেছিলাম, সচেতন মন বারবার টুইস্টের আশা করছিলো। আর অবেচতন ভাবে আমি এমন কিছু চাচ্ছিলাম না যাতে উপন্যাসের শেষে এ কী পড়লাম!! অনুভূতি হয় কিন্তু মেসেজটা খেলো হয়ে যায়। লেখক সেই পাঠক চাটনির দিকে না গিয়ে বরঞ্চ প্লটের বিল্ডআপেই পুরোটা মনোযোগ দিয়েছেন। এইজন্য ব্যক্তিগত ভাবে ধন্যবাদ দেই।
উগ্র যৌনতার ছাপ ছিলো পুরো উপন্যাসজুড়ে। তবে মনে রাখতে হবে, গল্পের প্রধান চরিত্ররা কেউই সঙ্কীর্ণমনা নয়। তাদের চরিত্রের সাথেই এটা যায়। অনেকে ব্যাপারটায় একটু নাক সিঁটকাবেন হয়তোবা।
জেফরি-বাস্টার্ড সিরিজের পর আমার পড়া বেস্ট বাংলা থ্রিলার বলা যায় এটাকে। Actually এটা জেফরি-বাস্টার্ড থেকেও ভালো। শুধু ওটা আগে পড়া বলে গুরুত্ব বেশি দিলাম। First Love বলে কথা...😁
যে হীরকখন্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল লেখক :কিশোর পাশা ইমন প্রকাশনি : বাতিঘর পৃষ্ঠা :৪৪৫ জনরা : থ্রিলা��
এই লেখকের পড়া এটাই আমার প্রথম বই।বেশ কিছুদিন আগে পড়া শুরু করেছিলাম। বইঘর থেকে পিডিএফ কিনেছিলাম। আসলে পিডিএফ পড়ে শান্তি পাই না। কিন্তু কখনো কখনো পড়তে হয়। আমি আসলে রাজনীতি বুঝি না। কিন্তু এই বইটা আমাকে রাজনীতির অন্ধকার জগৎ টা বুঝিয়েছে কি ভয়ংকর। বইটা আমাকে কখনো টেনশনে ঘুমাতে দেয় নাই। কখনো চরিত্র গুলোর উপর অত্যাচার, ওদের ব্যার্থতা আমাকে রাগিয়েছে, জিদ উঠিয়েছে,বলেন বন্ধুর প্রতি ভালোবাসা দেখে হিংসা লেগেছে। এই বই আমাকে একদম শেষ মুহুর্তে যেয়ে শিখিয়েছে কখন একজন ঠান্ডা মাথার সাধারণ মানুষ জীবনের চরম সিদ্ধান্ত নেওয়ার মতো সাহসী হয়ে উঠে। শিখিয়েছে কিভাবে অনেকে কিছু চোখ বন্ধ করে ভুলে যাওয়া যায় না। এই রকম একটা বই লেখার জন্য শুধু সাহস না, বুকের পাটা থাকাটাও বড্ড জরুরি। সমাজ এর অনেক অসংগতি এই বই এ প্রকাশ পেয়েছে। কিন্তু আসলে সমাধান নেই এগুলোর। সবকিছুই ঠিক, কিন্তু শেষ টা অতি দ্রুত শেষ হয়েছে। যদিও রাজনীতির মাঠেও ঘটনা গুলো এভাবেই শেষ হয় অতি দ্রুত। নিজের স্নায়ুর পারদ কে বাড়াতে বইটা শুরু করতে পারেন। কাহিনী ভ্রমণে আশা করি বোর হবেন না।
গল্পটা মফস্বলে গড়ে ওঠা আর আট-দশটা বিশ্ববিদ্যালয়ের মতই একটা বিশ্ববিদ্যালয়ের। এখানে আছে সরকার সমর্থিত ছাত্রপক্ষ। আছে বিরোধী পক্ষ। আবার সাধারণ ছাত্র যে নেই তাও কিন্তু না। আছে ক্ষুদ্র মস্তিষ্কের কয়েকজন শিক্ষক যারা ছাত্রদের নাজেহাল করতে সর্বদা তটস্থ। আবার এমন শিক্ষকও আছে যাদের দেখলে ভেতর থেকে সম্মান চলে আসে। মুহিব, শামীম, ইলোরা, লিটু। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম বর্ষের ছাত্র। সব কিছু তো ঠিকই চলছিল। হঠাৎ ক্যাম্পাসে খুন হয়ে গেল শামস নামের এক ছেলে। কীভাবে যেন এসবে জড়িয়ে পরলো ওরা । তারপর? ক্যালটেক ফেরত একজন শিক্ষক কেনই বা বাংলাদেশে ফেরত আসলেন? শুধুই কি জন্মভূমির প্রতি ভালোবাসা।? আচ্ছা তার একটা হাত কনুই এর নিচ থেকে কাঁটা কেন? ইলোরার ওপর নজর পরেছে সরকার পক্ষের এক ছাত্র নেতার। ক্যাম্পাসের কিং অফ রেপ এর হাত থেকে বন্ধুকে কীভাবে বাঁচাবে মুহিবরা? ভাইয়ের খুনিকে পাগলের মত খুঁজছে শিয়া। কিন্তু উনিশ বছর বয়সী একটা মেয়ে সিস্টেমের বিরুদ্ধে কীই বা করতে পারবে?
পাঠ পতিক্রিয়া- দারুণ, অসাধারণ। এত চমৎকারভাবে বাস্তবতা তুলে ধরা হয়েছে। লেখক আস্তে আস্তে যেন নিজেকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন। আমার ব্যক্তিগতভাবে মৃগতৃষা এবং মিথস্ক্রিয়া থেকে এটা বেশী ভালো লেগেছে। এখন পর্যন্ত পড়া এমাসের সেরা বই নিঃসন্দেহে।
অনেক ইমোশন দিয়ে লেখা বই। লেখকের কোন বই আগে পড়া হয়নি, এটাই প্রথম। তাই জানিনা লেখকের লেখার স্টাইল এমনি কিনা, তবে এই গল্পে ইমোশনগুলা লেখার স্টাইলেও বোঝা যাচ্ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় লাইফের ডার্ক সাইডটা বেশ ডিটেইলেই বর্ণনা করা হয়েছে। সব ঘটনার সাথে রিলেট করতে না পারলেও এগুলো সত্য ঘটনার উপর লেখা হয়ে থাকলে অবিশ্বাস করবোনা।
Original rating: 2/5 stars. Reading this book was the worst form of torture for my migraine. Imagine you have good cooking ingredients: hilsha fish, chicken, dark chocolate, ghee and shitake mushroom. Rather than cooking different items, you ended my making a abomination of a dish, and that is something the writer did with this book.
সূচনা আর পরিশিষ্ট - এই দুইটা অংশ বাদ দিলে, এ বইয়ের সবকিছুই মাত্রাতিরিক্ত রকমের অসাধারণ; অথচ পড়ার আগে এক রকম খারাপ রিভিউ ই কানে এসেছিলো। সবকিছু মিলিয়েই দুর্দান্ত একটা বই! তবে এ'রকম একটা প্লট সিলেকশনের জন্য কিশোর পাশা ইমনের দুঃসাহসটা আরও দুর্দান্ত এবং অবশ্যই আরও অনেক বেশি প্রশংসার দাবীদার।
লেখক রুয়েটিয়ান। নাম চেঞ্জ করে দিলেও পাত্র-পাত্রী, স্থান-কাল সবই রুয়েটের এটা বুঝতে কষ্ট হয়না একবিন্দু 😂 (কারণ একমাত্র সেখানেই ব্যাচকে সিরিজ বলে)
এইটারে আমি থ্রিলার বলবনা, বলব অল্টারনেট রিয়েলিটি ফিকশন। সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়গুলার এর চেয়ে বাস্তব বর্ণনা আর কেউ দিতে পারবেনা। 😂 মফস্বলের প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের জায়গায় 'ঢাকেশ্বরী' প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় থাকলেও খুব একটা ব্যত্যয় হইতনা। প্রত্যেক ইঞ্জিনিয়ারিং স্টুডেন্ট ফ্রাস্ট্রেশনে পড়ে সিস্টেম চেঞ্জের যে দিবাস্বপ্ন দেখে এই বইটা জাস্ট ওইটার সাহিত্যরূপ।
পলিটিক্যাল রেষারেষিতে পড়ে নন পলিটিক্যাল ছাত্র মারা যাওয়া পর্যন্ত লেখক বাস্তবেই ছিলেন, এর পরে শুরু হয় ফিকশন। বইটা প্রকাশিত হইসে ২০১৮ তে। বইয়ের মতই একটা ঘটনা বুয়েটে ঘটে গেল ২০১৯ এ (আবরার হত্যা), এরপরের পরিণামগুলা বইয়ের মত না হইলেও যা হইসে সেটাও মিরাকল। ❤️
থ্রিলার হিসেবে চিন্তা করলে আহামরি না খুব একটা। কিন্তু সরকারি প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের এমন অদ্ভুত কারেক্ট বর্ণনা থাকার জন্য এটারে কালেকশনে রেখে দিব।
গল্পটা মুহিব নামক অতি সাধারণ এক হাসিখুশি তরুণের। বিশ্ববিদ্যালয়ের অজানা-অচেনা পরিবেশের সাথে নিজেকে খাপ খাইয়ে নিতে না নিতেই ক্যাম্পাসে ঘটে যায় একটা দুর্ঘটনা। একটা নৃশংস খুন! ঘটনাক্রমে এর সাথে জড়িয়ে পড়ে মুহিব। ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে আগমন ঘটে নতুন এক শিক্ষকের। এক হাত কনুইয়ের নিচ থেকে কাটা রহস্যময় এ শিক্ষক আবার ক্যালটেক ফেরত। মুহিব ও তার বন্ধুরা বুঝে পায় না এরকম একটা জায়গা ছেড়ে তাদের ইউনিভার্সিটিতে কেন এলেন তিনি। হিসেব মিলে না.. ক্লাস-পরীক্ষা-ল্যাবের যন্ত্রণা সামলাতে না সামলাতে নেমে আসে আরেক দুর্যোগ.. জীবন চলতে থাকে এভাবেই.. সিন্দাবাদের ভূতের মতো ঘাড়ের উপর চেপে থাকা খুনের ঘটনার জের তো আছেই!
ছোট্ট জীবনের অভিজ্ঞতা দিয়ে বুঝে নেয়, পড়াশোনা করতে এসে ছেলেমেয়েগুলো কোন পরিস্থিতিতে অস্ত্র হাতে তুলে নেয়। স্বপ্নের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিয় বিভাগে ভর্তি হয়ে সে ভেবেছিল জীবনটাকে নতুন করে গুছিয়ে নেবে। আসলে শুধু মুহিব না, ওর মতো প্রতিটা তরুণ-তরুণীর এরকম স্বপ্ন থাকে.. স্বপ্ন থাকে বদলে দেবার.. নতুন কিছু করে দেখানোর। সত্যিকার অর্থে পারে ক'জন?
সামর্থ্য তো সবারই থাকে.. কিন্তু সেটার প্রতিফলন দেখি না কেন? কী হয় ওই স্বপ্নবাজ তরুণ-তরুনীদের? এ কী তবে শিক্ষার্থীদের দোষ? নাকি নামকড়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের? কে দায়ী? সিস্টেম নাকি অন্যান্য প্রভাবক? এসব প্রশ্নের উত্তর কেপির (কিশোর পাশা ইমন) 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল' নামক সুবৃহৎ উপন্যাসটি। বইটাকে কোন উপায়ে কিংবা কী শব্দে বিশেষায়িত করব ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। আপাতত মাথায় একটাই শব্দ ঘুরছে-'বিস্ফোরক!'
বইটি পড়ার পর থেকে ঘোরের ভিতরে আটকে আছি আমি.. সেই সাথে যুক্ত হয়েছে ভয়। একেকটা পৃষ্ঠা উল্টাচ্ছিলাম আর মনে মনে খোদাকে ডাকছিলাম.. প্লিজ আল্লাহ! এদের রক্ষা করো। (যদিও জানি এটা শুধুই একটা বই, কাল্পনিক চরিত্র। তবুও) বইয়ে উল্লেখিত স্টেট ইউনিভার্সিটি নামক ক্যাম্পাসটি যেন প্রায় প্রতিটা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিচ্ছবি। মুহিব, শামীম, লিটু কিংবা ইলোরা নেহায়েত উপন্যাসের কোন চরিত্র না.. এই ছেলে-মেয়েগুলো আমি, আপনি.. আমাদের মতো আরও লক্ষ লক্ষ শিক্ষার্থী। শামসের মতো হাজারো তরুণ অকালে প্রাণ হারায়.. বিচারের বাণী নিভৃতে কেঁদে মরে। বুক ফুলিয়ে ঘুরে বেড়ায় রেদোয়ান কিংবা তোফায়েলের মতো ছাত্র-নেতারা। দুর্নীতি-অনিয়মের বেড়াজালে বন্দি প্রশাসন, শিক্ষকতার মতো মহান পেশাকে অবমাননা করে চলছে গুটিকয়েক শিক্ষক.. সাধারণ-ক্ষমতাসীনের দ্বন্দ্ব, আদর্শের লড়াই, ছাত্র-রাজনীতির নামে নোংরা কার্যকলাপ, প্রেম-বন্ধুত্ব-প্রতিশোধ-তারুণ্য সব মিলিয়ে সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর অন্ধকার জগতের চিত্রায়ন এই বই। অসাধারণ একটা বই লেখার জন্য লেখকে বিশাল স্যালুট; শুভকামনা সামনের দিনগুলোর জন্য।
বি. দ্র. যে ক্যাম্পাসের ছবি আঁকা হয়েছে মনে হচ্ছিল প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়। অথচ নামকরণ করা হয়েছে স্টেট ইউনিভার্সিটি হিসেবে। ব্যাপারটা একটু কেমন হয়ে গেল না? -_- (যদিও খুব সিলি ম্যাটার,তা-ও কেমন কেমন যেন লেগেছে।)
বই: যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল লেখক: কিশোর পাশা ইমন
অবশেষে কেপির বই দিয়ে থ্রিলারের ব্লক কাটালাম। এর আগে পাঁচটি থ্রিলার পড়ার চেষ্টা করেও পারিনি। এবারের রিডার্স ব্লক শুধু থ্রিলার বইয়ের ক্ষেত্রেই ছিল।
কেপির লেখা বরাবরই আমার ভালো লাগে। হুকড হতে সময় লাগে না। কেপির বর্ণনাভঙ্গি, জায়গায় জায়গায় হিউমার আর স্ল্যাং এর ব্যবহার বরাবরই ভালো লাগে আমার। কাজেই এই রিভিউটা খানিকটা বায়াসড হলে আমাকে দোষ দেবেন না।
বইটার প্রোটাগনিস্ট মুহিব বিরাট কোনো ইনভেস্টিগেটর কিংবা গুপ্তচর নয়৷ সে একজন সাধারণ ছাত্র, উদীয়মান লেখক, চমৎকার একজন বন্ধু এবং অবশ্যই জেদী একজন মানুষ।
পুরো উপন্যাসে কোথায় মুহিবের ল্যান্ডস্লাইড ইন্টেলিজেন্স দেখা যায়নি, যেটা দেখা গেছে তা হলো হাতের সামনে থাকা সামান্য ক্লু বারবার নাড়াচাড়া করে বিশ্লেষণ করার চমৎকার ধৈর্য্যশক্তি।
কেপির এই ক্যাম্পাস থ্রিলারে বিশ্ববিদ্যালয় জগতের অন্ধকার রাজনীতি চমৎকারভাবে আবর্তিত হলেও সবচেয়ে নজরকাড়া বিষয় হলো মুহিব আর তার বন্ধুচক্রের অসাধারণ বন্ধুত্ব৷ প্রায় পুরো সময়টা জুড়েই মুহিব তদন্তকার্যে তার বন্ধুদেরকে জড়ায় না তাদের নিরাপত্তার কথা ভেবে। এক পর্যায়ে বন্ধুর চিকিৎসার জন্য প্রায় অসম্ভব এক এমাউন্টের টাকা জোগাড়ে লেগে পড়ে মুহিব। পুরো বিষয়টায় সামনে থেকে নেতৃত্ব দেয় সে। মুহিবসহ বাকিদের বন্ধুত্ব মুগ্ধ করার মতোই। পাঠক ভাবতে বাধ্য হবেন, এরকম বন্ধুচক্র থাকলে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবন হয়তো আরেকটু সুখকর হতো।
কেপি পুরো খুনের ঘটনাটা এমনভাবে সাজিয়েছেন যাতে পুলিশি তদন্তের কোনো অবকাশ না থাকে। এক্ষেত্রে বিষয়টা ডেভেলপ করতে ক্যাম্পাসের রাজনীতির চমৎকার আবর্তন করেছেন।
এন্টাগনিস্ট হিসেবে দুই নেতার চরিত্র একদম নিখুঁত হয়েছে। এছাড়াও পার্শ্বচরিত্র হাকারবিন বেশ ভালো লেগেছে। বইটি পড়ার সময়ে উক্ত প্রফেসর সামনে আসলে বারবার মনে পড়ছিল কুয়েটে পড়া বন্ধুর প্রিয় প্রফেসরের কথা যিনি একই সাথে মেধাবী, একজন ভালো বক্তা এবং ছাত্রবান্ধব শিক্ষক।
তবে একটি ঘটনা, বন্ধুর চিকিৎসার জন্য প্রায় অসম্ভব এক এমাউন্টের ব্যবস্থা করার বিষয়টা গল্পের সাথে যায় না। এই অংশটায় গল্প কিছুটা স্লো হয়ে গেছে।
এইটুকু বাদ দিলে উপন্যাসটা আমার চমৎকার লেগেছে। রেকমেন্ডেড।
মফস্বল এলাকার এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে আসা শিক্ষার্থী মুহিব। ঘটনাচক্রে জড়িয়ে পড়ে নিজেরই ক্যাম্পাসে ঘটে যাওয়া এক খুনের সাথে, হয়ে যায় রাজস্বাক্ষী। জড়িয়ে ফেলে কাছের বন্ধুদের। কিন্তু তারপর কী ঘটে? তা জানতে হলে ঘুরে আসতে হবে মুহিবের ক্যাম্পাসে। ক্যাম্পাস রাজনীতির চালচিত্র, ক্যাম্পাস জীবনের আতিপাতি, মরিয়া হয়ে ওঠা সাধারণ ছাত্রের বিবর্তনের গল্প জানা যাবে এই উপাখ্যানে। বইটা আমার সবচেয়ে প্রিয় বই হয়ে উঠতে পারতো। কিন্তু সামান্য খচখচানি থাকায় একটু পেছনে পড়ে গেল। বইয়ের ক্যারেক্টার ডেভেলপমেন্ট হচ্ছে সবচেয়ে দারুণ বিষয়। চরিত্রদের সর্বোচ্চ স্কোপ দিয়েছেন লেখক। শুধু মূল ঘটনা নয়, চরিত্রগুলো যেখানে জীবন অতিবাহিত করে, সেই জীবনের চিত্র দেখানো হয়। এতে চরিত্রগুলো হয়ে উঠে পরিপূর্ণ। আর রইল চরিত্রগুলোর মনস্তত্ত্ব। এই দিকটা সবচেয়ে বিস্মিত করেছে আমাকে। খুব সূক্ষ্ণভাবে এই দিকটায় কাজ করা হয়েছে। একটা স্পেসিফিক নাম শুনেই একটা ঘটনা মনে পড়ে যাওয়া, প্রয়োজনে রাগ নিয়ন্ত্রণ করা আবার হুট করেই ভুল কাজ করে ফেলা। চরিত্রগুলো খুবই জীবন্ত মনে হয়েছে, যেন কাছ থেকেই দেখছি। আর রইল লেখনশৈলী। চমৎকার! কেপি সবসময়ই বিস্মিত করে। আলাদা কিছু কাজ সে করে বর্ণনার মধ্যে। যেমন কোনো একটা প্রবাদই ধরা যাক। সে সরাসরি সেটা না লিখে একটু ঘুরিয়ে লিখে। প্রবাদটি আমি জানি, কিন্তু এই যে একটু পরিবর্তন আলাদা একটা ফ্লেভার দেয়। আর সংলাপগুলোও পারফেক্ট ছিল। ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে শুধু দুইটা সমস্যা আমার রয়েছে, যে কারণে বইটা প্রিয় হতে গিয়েও হলো না। দুইটা ব্যাপার। স্পয়লার হওয়ার ভয়ে খোলাখুলি বলা যাচ্ছে না। হয়ত লেখক গুরুত্ব দেয়নি বা মিস করে গেছে। খুনে জড়িত যারা ছিল, সবার দিকটাই দেখা উচিত ছিল। আর শ্রাবন্তীর বাবার সাথে মুহিবের একটা আলোচনা অংশ বোধ হয় দরকার ছিল। এইটুকু ফাঁক বোধ হয় থেকে গেছে। ওভারঅল কাহিনী খুবই চমৎকার। গুডরিডসে ভগ্নাংশ রেটিং দেওয়ার উপায় নেই। তাই পাঁচ তারা দেওয়া হলো। রেটিং আসলে সাড়ে চার হবে।
৪৪৫ পেজের বিশাল ক্যালিবারের এই বইয়ে কোথাও একঘেয়েমি বা বিরক্তি স্পর্শ করে নি। তবে থ্রিলার এর আমেজ শেষার্ধেই বেশি পাওয়া যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র রাজনীতির মত বিষয় গুলো নিয়ে লেখা। ভূমিকা এবং পরিশিষ্ট ভালো লাগে নি আসলে এবং কিছু জিনিসে কিছুটা খটকা লেগেছে। তবে সফল থ্রিলারের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ি, সব ফাকফোকর লেখক বন্ধ করেছেন।
বইটিকে ২০১৮ সালের সেরা থ্রিলার বলা হয়। তবে বইটি কিছুটা আন্ডাররেটেড। খুব বেশি জনপ্রিয়তা পায় নি। এর কারণ হিসেবে আমার মনে হয় বইটির রাশভারি নামটিই দায়ী।
বইটি পড়ার সময় আমার এক বন্ধু আমাকে বলেছিল, পছন্দ করে বই কেনার সময়, এই বইটা আমাকে আকর্ষণ করবে এমন কোনো কারণ নাই তো। এরকম রাশভারি নামের বই এড়িয়ে চলাই আমাদের স্বাভাবিক আচারণ।
আসলে, পারফেক্ট ৫ তারার বই বলব না। আবার ৪তারা দিলেও অন্যায় হয়। কেপি'র প্রতি এক্সপেকটেশন'টা যেহেতু একটু বেশিই। তবুও আমি যেহেতু উদার মনের মানুষ তাই ৫💥
এই বইয়ের লেখক মহাশয়ের সবচেয়ে বড় যে গুণটা হচ্ছে, সেটা হল পাঠকদেরকে বইয়ের সাথে চুম্বকের মত আটকে রাখার লেখনীশক্তি, সেটা এই বইয়ের ক্ষেত্রে হোক, বা তার লেখা অন্য যেকোন বইয়ের ক্ষেত্রে হোক। এত ঢাউস সাইজের বই পড়তে গিয়ে একটাবারও বিরক্ত হইনি, একটাবারও কাহিনী ঝুলে পড়েনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নোংরা ছাত্ররাজনীতির শিকার শিকার হয়ে এক ছাত্রের খুন হওয়া এবং গল্পের প্রোটাগনিস্টের সেই খুনের প্রত্যক্ষদর্শী হবার মধ্য দিয়ে গল্পটা শুরু হয়। প্রোটাগনিস্ট, যার নাম মুহিব, সে চেষ্টা করে সেই প্রভাবশালী খুনীকে আইনের আওতায় আনার, এবং এই নিয়েই গল্প টা এগিয়ে যায়। গল্পের মধ্য দিয়ে লেখক তুলে ধরেছেন বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় ব্যবস্থার অসংগতি গুলো, তুলে ধরেছেন এসব ব্যাপারে তার নিজস্ব অভিমত।
লেখক বরাবরই তার বইগুলোতে প্রোটাগনিস্ট এর ক্যারেক্টার বিল্ডিং এর দিকে খুব বেশি মনোযোগ দেন, একইসাথে সাইড ক্যারেক্টারগুলোও পায় পর্যাপ্ত চরিত্রায়ন। এই বইয়ের প্রোটাগনিস্ট মুহিব কে লেখক একজন দৃঢ়চেতা ছাত্র হিসেবে তুলে ধরেছেন, যে চায় যেকোন মূল্যে আইনের হাতে তার সিনিয়রের খুনীদের তুলে দিতে। তার প্রতিটি কাজই ছিল যুক্তিসংগত, কারণ ওইযে, লেখক চরিত্রটা কে এভাবেই গড়ে তুলেছেন। সেই সাথে ইলোরা, শামীম, তোফায়েল, রেদোয়ান, প্রফেসর রবিন এবং অন্যান্য পার্শ্ব চরিত্রগুলোর চরিত্রায়ন ও ছিল যথাযথ।
লেখকের সংলাপ গঠন কেতাবি নয়, একদম আমরা ইনফর্মাল যেভাবে কথা বলি, তেমনটা হওয়ায়, বই আরো সাচ্ছন্দ্যে পড়া যায়। বইটা কে হয়ত ফুল মার্ক্স ই দিতাম, তবে শেষে এসে ইলোরার মত একটি চরিত্রের সাথে কী হল তা অসম্পূর্ণ রেখেই শেষ করা হয়েছে বলে আমার মনে হল। এ নিয়ে কিছুটা নাখোশ আরকি। ভেবেছিলাম সিক্যুয়েল আসবে, তবে লেখক কে ইমেইল করে জানতে পারলাম এটার সিক্যুয়েল আসবে না আর :')
সব মিলিয়ে একটি হাইলি রেকমেন্ডেড বই। পড়ার সময় লেখকের সাথে আপনার থট প্রসেস কিছু ক্ষেত্রে হয়ত না ও মিলতে পারে, সেক্ষেত্রে "Agree to disagree" মতবাদে এগিয়ে গিয়ে বইয়ের কাহিনীতে মনোযোগ দেয়াই উত্তম। বইটিতে নেই কোন মাথা ঘোরানোর মত টুইস্ট, কারণ লেখক প্লট বিল্ডিং এর দিকে অসম্ভব মনোযোগ দিয়েছেন আর এটাই আমার কাছে এই বইয়ের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক..
লেখকের লালিত চিন্তাধারা বা মতাদর্শ যখন লেখার মধ্যে স্পষ্ট হয় এবং সেটা প্রতিষ্ঠা করার জোর তাগিদ থাকে, সেটার ব্যাপকতা আমার কাছে অনেক বেশি। লেখক কিশোর পাশা ইমনের বেশ কিছু ফেসবুক পোস্ট পড়ে তার চিন্তা-ধারা সম্পর্কে আমি মোটামুটি অবহিত, যেটা তার লেখা 'যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল' বইয়েও ফুটে উঠেছে।
তার মতাদর্শের সাথে আমার ভিন্নতা থাকলেও তাকে বেশ শক্তমানের লেখক ও ক্রিয়েটিভ মনে হয়েছে।
স্টেট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী মুহিব, যার বয়স বিশ পেরোইনি। প্রেমের বিরহ ঢাকতে রাতের অন্ধকারকে বেছে নিয়েছিল। সেই রাতেই তার সামনে একটা হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়ে গেল!
মুহিব রাতের অন্ধকারে তাদেরকে সরাসরি দেখতে না পারলেও খুনিদের কথোপকথন থেকে দুজনকে সহজেই শনাক্ত করতে পারে। তারা তার বিশ্ববিদ্যালয়েরই তুখোড় ছাত্র নেতা। সেই থেকে ঘটনাবহুল আর বৃহৎ পরিসরের একটা গল্পের শুরু...
প্রথমেই যেটা ভালো লেগেছে, লেখক গল্পের শুরু থেকে কোনো লুকোছাপা করেননি। একের পর এক ঘটনা ঘটছে, সেই ঘটনায় কে জড়িত, কেন ঘটছে সব স্পষ্টভাবে বলে যাচ্ছেন। এমনকি এই ঘটনায় খুনি কে— সেটাও পাঠক শুরু থেকেই জেনে যাবে। তবুও প্রায় সাড়ে পৃষ্ঠার বইটি পড়ার ব্যাপারে পাঠকের আগ্রহ কমবে না।
শুরুতে লেখকের মতাদর্শের প্রসঙ্গটা তুলেছি, কারণ গল্পটা ২০৫০ সালের প্রেক্ষাপটে লেখা। লেখকের মগজে সেই সময়ের যে প্রতিচ্ছবি অঙ্কিত হয়েছে, সেটা তিনি লিখেছেন। একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে বাংলাদেশের সংস্কৃতি— রাজনীতি বিশেষ করে ছাত্ররাজনীতি, বন্ধুত্ব, ছাত্র-শিক্ষক সম্পর্ক কেমন হতে পারে সেটাই চিত্রায়িত হয়েছে। এটা ব্যক্তিভেদে ভিন্নতা হবে বলার অপেক্ষা রাখে না।
যাহোক কয়েকটা বিষয় ভালো লেগেছে— আমরা যে 'বন্ধুত্ব চিরদিনের জন্য' স্লোগান বুকে ধারণ করে চলি, একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে গিয়েও সেটার জ্বলজ্যান্ত চিত্র লেখক দেখিয়েছেন। বন্ধুরা অবসরে যেমন আড্ডা আর হই-হুল্লোড় করে কাটিয়েছে, তেমনি ঘোর বিপদের সময় কেউ কাউকে ছেড়ে যায়নি কিংবা নিজের জন্য অন্য বন্ধু বিপদে পড়ুক সেটা চায়নি।
শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের একটা প্লট লেখক তুলে ধরেছেন। যেখানে ছাত্র-শিক্ষকের সম্পর্ক ফুটে উঠেছে। শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনের বিপরীতে আন্দোলনের লিডিং পজিশনে থাকা শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন নস্যাৎ করে দেওয়ার মতো গর্হিত মনোভাব শিক্ষকদের মধ্যে আছে সেটা ফুটে উঠেছে। শিক্ষকদের সাথে শিক্ষার্থীদের রেষারেষির বিগত চল্লিশ বছর ধরে এটা চলছে, এর শেষ কবে হবে কারো জানা নেই। কিন্তু ন্যায্য অধিকারের আন্দোলন কতটুকু শক্তিশালী হতে পারে সেটার কিছুটা ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। অন্যদিকে শিক্ষার্থী-শিক্ষকের সম্পর্ক কেমন হওয়া বাঞ্ছনীয় লেখক সেটা বর্ণনা করেছেন, যেটা এই সম্পর্কে ডিজার্ভ করে।
বর্তমান ছাত্ররাজনীতির সাথে লেখকের কল্পিত সময়ের রাজনীতির তফাত নেই। সরকার দল, বিরোধী দল কিংবা দলীয় কোন্দল এখনকার অবস্থার চেয়ে বেশি বেপরোয়া হতে পারে তেমনটাই বুঝা গেছে।
লেখক গল্পের সাথে সামসময়িক বিষয়গুলো সংলাপ ও বর্ণনায় জুড়ে দিয়েছেন, যেটা অনেক ভালো লেগেছে। সবগুলো মনে নেই। একটা হলো— অটোসাজেশনের মাধ্যমে সাঈদীকে চাঁদে দেখার বিষয়টা উল্লেখ করেছেন। এরকম আরো কয়েকটা ইস্যু উঠে এসেছে।
বইটার পাঠ প্রতিক্রিয়ায় বলতে গেলে, আমার কাছে ভালো লেগেছে, সেটা থিম, প্লট ও লিখনশৈলী সবদিক দিয়েই। তারপরও কিছু দুর্বলতা আমার চোখে পড়েছে কিংবা লেখকের উদ্দেশ্যে আমার কিছু প্রশ্ন তৈরি হয়েছে—
প্রথমে Apology দিই— বইটা আমি পিডিএফ পড়েছি। মূল বই বা পরবর্তী সংস্করণে পরিমার্জন হয়েছে কি-না আমার জানা নেই। আমি পিডিএফের আলোকেই বলছি।
"এখানে আসার আগে শামস ওকে বলেছিলো, 'একটা গল্প লিখে ফেল।'" অথচ শামস নিহত হয়েছে। এটা কীভাবে বলল বুঝতে পারিনি।
"এরকম হাসি মানুষ হাসে এইচএসসি-তে গোল্ডেন ফাইভ পাওয়ার সংবাদ জানার পর, নয়তো স্ত্রীর বাবার মৃত্যুর খবর পেয়ে। পরিস্কার বিজয়ের হাসি।" স্ত্রীর বাবার মৃত্যুতে মানুষ বিজয়ের হাসি হাসে সেটা কতটুকু যৌক্তিক?
"নির্ঝর, শামসের বোনের রুমে যা। হ্যাঁ, হ্যাঁ এখনই। পরবর্তি নির্দেশ দেওয়ার আগ পর্যন্ত ওখান থেকে বের হবি না।" জাকি যখন এই কথাটা বলে, এই প্লটটা যখন দেখানো হয়েছে, পাঠক অলরেডি জেনে গেছে, শামসের বোন শিয়া নির্ঝরকে মেরে খাটের নিচে শুইয়ে দিয়েছে। তাহলে কীভাবে বলল? জাকি তখনো নির্ঝরের ব্যাপারে জানে না। এখানে টাইমলাইন ঠিক থাকেনি মনে হয়েছে।
গল্পের শেষের দিকে গিয়ে কেমন যেন এলোমেলো লেগেছে। উপসংহারে গল্পের পরিণতির সাথে চরিত্রের পরিণতি দেখানোটা জরুরি। কিন্তু সেটা ঠিকঠাক মনে হয়নি।
প্রথমত, বিরোধীদলীয় দলীয় সাবেক মেয়র অর্থাৎ শ্রাবন্তীর বাবার চরিত্রটা সামনে না আনলেও কোনো ক্ষতি ছিল না। তাকে সামনে আনলেও লিটুর মৃত্যুর পরই শ্রাবন্তীর সাথে তার বাবার চ্যাপ্টারও ক্লোজ করা যেত। কিন্তু মুভ করিয়ে হুট করে পরিশিষ্টে গিয়ে অপ্রয়োজনীয়ভাবে তাকে উপস্থাপন করা হয়েছে। রেদোয়ানের খালার বাসা থেকে উদ্ধারকৃত পিস্তলটা প্রাক্তন মেয়রের হাতে কীভাবে গেল! তার কোনো সূত্র আছে?
পুরো পরিশিষ্টটা অপ্রয়োজনীয় লেগেছে। যেখানে স্থান পাওয়ার দরকার ছিল— তোফায়েলের মৃত্যুর পর শামীমকে দেখানো; স্পটে ইলোরা ছিল, পরবর্তীতে ঘটনাটা তার উপর কতটুকু প্রভাব ফেলেছে, জাকির আইডিয়ায় ঘটনাটা ঘটছে এবং তার রাজনীতির পথ সুগম হচ্ছে, তোফায়েলের মৃত্যুতে তার মনোভাবই কেমন! শামসের পিতামাতার তো জানার অধিকার ছিল, সন্তানের হত্যাকারীরা নিপাত গেছে। যদিও মা-বাবার ব্যাপারটা অ্যাভয়েড করা যায়, তবুও এটার গুরুত্ব ছিল। কিন্তু পরিণতিগুলো দেখানো হয়নি।
মেমরি কার্ডটা পাওয়ার পর তূর্ণার মধ্যেও প্রেমিক হত্যার প্রতিশোধের বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়েছিল, সেটা ওখানেই ক্লোজড। আর দেখানো হয়নি। পরবর্তীতে তাকে সামনে আনার দরকার ছিল। হাকারবিনের আমেরিকা ছেড়ে বাংলাদেশে আসার গল্পটা বলা হয়েছে, কিন্তু এর পেছনে তার উদ্দেশ্যটা কী ছিল, সেটা স্পষ্ট হয়নি।
মুহিবদের বন্ধুত্বকে একটা পরিবারের মতো দেখানো হয়েছে। এটা পজিটিভ। কিন্তু দৃশ্যটা এমন ছিল যে, একসাথে ইলোরার সাথে ঘুমোলেও জৈবিক চাহিদার ব্যাপারটা লেখক উপেক্ষিত দেখিয়েছেন। আর এটাকেই পরিবারের বৈশিষ্ট্যের মধ্যে এনেছেন। কিন্তু মুহিব আর ইলোরার সম্পর্কটা সেই ধরনের থাকেনি। ভিন্ন পথে মোড় নিয়েছে। যেটা লেখকের ওই পরিবার থিওরির সাথে মানানসই হয়নি এবং খানিকটা সাংঘর্ষিক লেগেছে।
কিশোর পাশা ইমনের এই বইটা আমি প্রথম পড়েছি। আগামীতে অন্য বইগুলো পড়ব, ইনশাআল্লাহ। লেখকের জন্য অনেক শুভকামনা।
গল্পটা আপনার আমার মতই একটা সাধারন ছেলের। ঢাকায় বড় হলেও উচ্চশিক্ষার জন্য মফস্বলের এক বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছে মুহিব। একটা ছাত্রের জীবনে আর কি চাওয়া থাকতে পারে? পাবলিক ভার্সিটিতে চান্স পেলে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয় না। যদিও আমাদের দেশে সকল প্রশাসনেই অনিয়ম আর দুর্নীতি। তার মাঝেও পড়াশুনা, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে ভালোই যাচ্ছিলো মুহিবের দিন। তবে আর চেনা জগতটাকে ওলট-পালট করে দিলো ক্যাম্পাসে একটি খুন। দুর্ভাগ্যক্রমে খুনের সময় স্পটেই ছিলো মুহিব। অন্ধকারে খুনিদের দেখতে না পেলেও কণ্ঠ শুনে খুনিদের ঠিকই চিনে গেছে মুহিব। কিন্তু হঠাৎ করে একজন সাধারন ছাত্র, যার রাজনীতির সাথে কোনো সম্পর্ক নেই তাকে কেন খুন হতে হবে? মুহিব বুঝে গেছে সে আর পিছিয়ে যেতে পারবে না। সাথে জড়িয়ে ফেলেছে ওর কাছের বন্ধুদেরও। শামীম, লিটু, ইলোরা। এর সাথে রহস্যময় মুখ হিসেবে ময়দানে আবির্ভাব হয়েছে শিয়ার। নিহত শামসের কাছের বন্ধু জাকি কিছু একটা লুকাচ্ছে ওদের কাছ থেকে শামসের প্রেমিকাকে দেখা গেলো জাকির হল থেকে কেঁদে বের হচ্ছে ক্যাম্পাসের সরকারী দলের দুই প্রভাবশালী নেতার বিরুদ্ধে কি করতে পারবে মুহিব? তাদের অপরাধ কিভাবে প্রমান করবে? এর ভিতরে জড়িয়ে পড়েছে কমিউনিস্ট পার্টি।। ক্যালটেক ফেরত শিক্ষকের সাথে কিভাবে জড়িয়ে গেলো ঘটলা!
অনেকদিন পরে একটা থ্রিলার পড়তে বসলাম। বর্তমানে ফিকশন পড়া হয় খুব কম। তবে সময় কাটানোর জন্য আর একঘেয়েমি দুর করতে থ্রিলারের তুলনা নেই। গত বছর লেখকের মৃগতৃষা পড়ার পরে তার লেখার ভক্ত হয়ে গেছি। এই বইতে লেখক নিজেকে ছাড়িয়ে গেছেন। মার্ডার, মিস্ট্রি, একশনের সাথে যখন আমাদের অতি পরিচিত চেনা জগত মিশে যায় তখন সেটা পাঠকের মনে জায়গা করে নেয়। আগের বইটাতে একটা অচেনা জগত থাকলেও এই বইতে আমাদের অতি পরিচিত জগত। ভার্সিটির ক্যাম্পাস, মেস লাইফ, বন্ধুদের আড্ডা, প্রেমে ছ্যাকা খাওয়া এগুলো তো আমাদের জীবনের প্রতিদিনের ঘটে যাওয়া ঘটনা। ফলে গল্পের ভিতরে ঢুকে গিয়েছি খুব সহজে। আমার এক বড় ভাই মাঝে মাঝে কিছু বইকে রোলার কোস্টারের সাথে তুলনা করেন। আমার কাছে এটাকে ঠিক রোলার কোস্টার মনে হয়েছে। শুরু করার পরে গতি শুধুই বেড়েছে। সেই সাথে ছিলো সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম আর দুর্নীতির ফিরিস্তি। লেখক নিজে পাবলিক ভার্সিটির ছাত্র। ফলে কথাগুলো তারই মনের ক্ষোভ থেকে এসেছে। যদিও অনেক খটকার জায়গা ছিলো কিন্তু স্পয়লারের জন্য এড়িয়ে গেলাম।
অনেকদিন রিভিউ না লেখার ফলে মনে হচ্ছে লেখার হাতে মড়িচা পরতে বসেছে। লেখাটা নিজেরই পছন্দ হল না। তবে আমার খারাপ রিভিউয়ের জন্য কেউ যদি বইটা না পড়েন তাহলে চমৎকার কিছু মিস করে যাবেন।
বইঃ যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল লেখকঃ কিশোর পাশা ইমন বইয়ের ধরণঃ মৌলিক (সমসাময়িক এবং বাস্তবধর্মী) প্রকাশনীঃ বাতিঘর। প্রকাশকালঃ একুশে বইমেলা ২০১৮ পৃষ্ঠাঃ ৪৪৫ পার্সোনাল রেটিং - ৪.৬/৫ - দেড় দিনের মাথায় ৪৪৫ পৃষ্ঠার বইটি শেষ! আমি নিজেকেই নিজে বিশ্বাস করতে পারছিনা। এতো তাড়াতাড়ি কিভাবে শেষ করলাম? 🤔
লেখকের স্বার্থকতা এখানেই 👍
বই নিয়ে কিছু বলবোনা। শুধু এতটুকু বলে রাখি কেপির লেখা বইগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা একটা বই এইটা। সমসাময়িক এবং বাস্তবধর্মী।
অনেক সময় এমন হয় না আমাদের নতুন কোন বই হাতে নিয়ে বেশ কিছু অধ্যায় শেষ হওয়ার পরেও যেন গল্পে ঢুকতে পারছিনা কিংবা খানিকটা স্লো মনে হয়! কিন্তু "যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" এর ক্ষেত্রে আপনি 'লেখকের কথা' পড়ার পরপরই যেন অনুভব করবেন আপনাকে অদৃশ্য কিছু একটা টানছে। আপনি ঐ টানকে উপেক্ষা করতে পারছেন না। যেমনটা আমিও পারিনি। পুরো উপন্যাসে না আছে কোন তাড়াহুড়ো, না আছে অতিরিক্ত কোন কথা। যতোই পড়বেন মনে হবে আপনার চোখের সামনে ঘটে যাওয়া কাহিনীগুলোকেই পড়ছেন।
হ্যাঁ, গল্পের প্রয়োজনে কিছু ব্যতিক্রম জিনিস পাবেন তবে সেগুলোকে আপনার কখনোই বাড়াবাড়ি মনে হবে না।
আমি এখনও ভার্সিটির স্টুডেন্ট হইনি। তবে বাবা সরকারি কলেজের অধ্যাপক হওয়ার সুবাদে জন্ম থেকে এখন পর্যন্ত আমার জীবন কেটেছে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাম্পাসে। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর সাথে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মিল থাকবে না সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু খুব বেশী যে অমিল রয়েছে এমনও নয়। ছোটবেলা থেকে এই জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ক্যাস্পাসেই বেড়ে উঠেছি। সে হিসেবে এখানকার সিস্টেম বা এনভায়রনমেন্ট সম্পর্কে অনেকাংশেই জানি। কিশোর পাশা ইমন তাঁর এ বইটির মাধ্যমে যেভাবে সেই সিস্টেম বা এনভায়রনমেন্টের প্রতিটি দিকে (একচুয়ালি বেদিক :3) একটা থৃলার বই দিয়ে আঘাত হেনেছেন বা প্রতিবাদ জানিয়েছেন তাতে আমি স্রেফ একটা কথাই বলতে পারি, হ্যাটস অফ ম্যান।
বন্ধুত্ব আসলে কী? বন্ধুত্বের জন্য স্বার্থ ত্যাগ করা যায়? আজকাল বন্ধুত্বের প্রকৃত সংজ্ঞা ঠিক বোঝা যায় না। স্বার্থান্বেষী মানুষগুলো জানে না বন্ধুত্ব কী? তবুও কিছু মানুষ আছে, যারা নিঃস্বার্থভাবে পাশে থাকতে পারে। সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতে পারে। তার তাইতো জীবন মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে যখন লিটুরা বেঁচে থাকার উপায় খুঁজে, ছুটে আসে মুহিব-শামীমরা। বন্ধুকে যে বাঁচাতে হবে। যে করেই হোক!
▪️ কাহিনি সংক্ষেপ :
একটি খুন ঘটে গেছে স্টেট ইউনিভার্সিটিতে। শামস নামের ছেলেটার কী অপরাধ ছিল? কেন এভাবে নির্দয়ভাবে খুন করা হলো? জবাই করে মানুষ মারার খবর মিডিয়ার মাধ্যমে হরহামেশাই কানে আসে। সেই ঘটনার চাক্ষুষ সাক্ষী হয়ে জমে গেল মুহিব। নিজের সামনে এক নিরপরাধ, নিরস্ত্র মানুষকে খুন হতে দেখে কিছুই করতে পারছে না। এর চেয়ে কষ্টের আর কী হতে পারে! বুকের মধ্যে জেদ চেপে বসেছে। এর শেষ দেখে ছাড়বে সে। শামস ভাইয়ের গলা চিরে ফেলা কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। কিছুতেই হবে না।
রাজনীতির খেলা অনেক বিশাল। এর পেছনের মারপ্যাঁচ বোঝার সাধ্য কারও নেই। একই সংগঠন হোক বা বিরোধী পক্ষ, বিরোধ সবখানেই চলমান। জাকির সাথে রেদোয়ান আর তোফায়েলের বিরোধ এই দল নিয়েই। শীর্ষে ওঠার চেষ্টায় একে অন্যকে নাস্তানাবুদ করার চেষ্টা চলছে। শামস এর বেস্ট ফ্রেন্ড জাকি। ঘটনা মোড় নিচ্ছে অন্যদিকে। তবে কি জাকি-ই দায়ী? নিজের বন্ধুর খুনের দায়ভার একান্তই তার? কে জানে?
তদন্ত করতে গিয়ে মুহিব আবিষ্কার করল গা শিউরে ওঠা কিছু তথ্য। যার সত্য-মিথ্যা জানা নেই। বন্ধু শামীমকে নিয়ে ছুটে চলা সত্যের অন্বেষণে। সাথে যোগ দিয়েছে শামসের ছোটো বোন শিয়া। ভাইয়ের হত্যার প্রতিশোধ নিতে বদ্ধ পরিকর সে। এখন মেয়ে মানুষের জন্য কিছু ক্ষুধার্ত হায়েনার বিরুদ্ধে লড়াই করে জয়ী হওয়া কঠিন। শিয়াও বিপদে পড়েছে। মুহিব কি পারবে শিয়াকে বাঁচাতে? না কি মুহিব নিজেই বিপদের অতলে তলিয়ে যাবে।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর রবিনের এক হাত নেই। লেখক জাফর ইকবালের হাত কাঁটা রবিন চরিত্রের যেন প্রতিচ্ছবি। সংক্ষেপে হাকারবিন। প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থার বাইরে শিক্ষাদানের জন্য বহুল জনপ্রিয় হওয়া হাকারবিনকে শিক্ষার্থীরাও পছন্দ করে। বন্ধুর মতো সম্পর্ক হওয়াতে শিক্ষার্থীদের পক্ষেও দেখা যায় তাকে। কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গিয়ে হলেও। আর এমন মানুষের পেছনে লেগে থাকার মানুষের অভাব হয় না। আর তা-ই কাল হলো। অতীতের খুঁড়ে বের হওয়া ঘটনার বলি হতে হলো চাকরি হারিয়ে। কী ছিল এই অতীত? সুদূর আমেরিকা ছেড়ে বাংলাদেশে এসে শিক্ষকতা করা কি শুধুই দেশের টানে? না এর পেছনে অন্য কারণ আছে?
▪️পাঠ প্রতিক্রিয়া :
লেখক কিশোর পাশা ইমনের "যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" একটি ব্যতিক্রমধর্মী থ্রিলার উপন্যাস। যেখানে একই সাথে উঠে এসেছে খুন, রাজনীতি, প্রেম, প্রতিশোধ, হিংসা, বন্ধুত্ব, বিশ্বাস। লেখকের প্লট নির্বাচনের তারিফ করতে হয়। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনার আড়ালে ছাত্র রাজনীতি কতটা ভয়াবহ হতে তার চিত্র-ই যেন তুলে ধরেছেন লেখক। একই সাথে লেখক তুলে ধরেছেন আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশাও। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা চলে। তার পেছনে চলে রাজনীতি। তারও তরল দূর্নীতি শিক্ষার মহৎ উদ্দেশ্যকে বারবার বাঁধাগ্রস্থ করে। আর এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে এভাবে খোলামেলাভাবে আলোচনা করা সত্যিই প্রশংসার যোগ্য। অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রসমাজের রুখে দাঁড়ানো নতুন কিছু নয়। তা-ও লেখকের লেখায় উঠে এসেছে।
লেখকের লেখনশৈলি গতিশীল। কখন যে পাঠককে বইয়ের মাঝে ডুবিয়ে দেবে, পাঠক নিজেও বুঝতে পারবে না। "যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" বইটিতে লেখক মূল প্লটের পাশাপাশি একাধিক সাবপ্লটের অবতারণা করেছেন। যার কিছুটা হয়তো প্রয়োজন ছিল না, কিন্তু বইয়ের শোভা বৃদ্ধি করতে দারুণ অবদান রেখেছিল। লেখকের বর্ণনাশৈলীর প্রশংসাও করতে হয়। দারুণভাবে সবকিছুর বর্ণনা করেছেন। প্রতিটি বিষয়ে লেখকের সুনজর ছিল। প্রতিটি বর্ণনা স্পষ্ট আর বাস্তবসম্মত। যে বিষয়টি সবচেয়ে ভালো লেগেছে, উপন্যাসের গতি। কোনো এক পর্যায়ে গল্পের গতি ছিল বেশ দ্রুত। মাঝে লেখক সেই গতিতে লাগাম ধরেছিলেন। পাঠককে ভাবতে বাধ্য করেছেন, কী ঘটেছে না ঘটবে! আবার পরক্ষনেই গল্পের গতি বৃদ্ধির সাথে ছুটে চলতে হয়েছে।
লেখক দেখিয়েছেন বন্ধুত্বের সংজ্ঞা। বন্ধুর জীবনের জন্য পুরো পৃথিবী ওলটপালট করে দেওয়া যায়। এই বিষয়টায় লেখক যেভাবে আবেগ ঢেলে দিয়েছেন, সেই আবেগে ভেসে গিয়েছিলাম আমিও। লেখক দেখিয়েছেন ছাত্র রাজনীতির করুণ পরিণতি। ক্ষমতার লোভে মানুষ কত বেপরোয়া হতে পারে তার-ই চিত্র তুলে ধরেছেন। অ্যাডাল্ট কন্টেন্টগুলোতে খোলামেলা আলোচনা থাকলেও ভাষার ব্যবহার ছিল পরিমিত। আক্রমণ দৃশ্যগুলোও লেখক খুব স্পষ্টভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন।
"যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" বইয়ে মাথা ঘোরানো টুইস্ট নেই। লেখক কাহিনি বিল্ডআপেই গুরুত্ব দিয়েছেন। পাঠক এক পর্যায়ে বুঝতে পারবেন পরবর্তীতে কী হতে চলেছে। তারপরও গল্পের মায়ায় পড়ে যাবেন। শেষ না করে বই ছাড়া যাবে না। এখানেই লেখকের স্বার্থকতা লুকিয়ে আছে।
চরিত্রায়নের ক্ষেত্রে লেখক যে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন, তা ফুটে উঠেছে প্রতিটি অধ্যায়ে। বড়ো থেকে ছোটো, প্রতিটি চরিত্রকে লেখক সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। উপন্যাসের প্রধান চরিত্র মুহিব হলেও তার পাশের বন্ধু শামীম, ইলোরা, লিটুকে দারুণভাবে চিত্রায়িত করেছেন। বন্ধুত্বের এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন। যেখানে লিটু না থেকেও ছিল প্রতিটি সময়। রেদোয়ান আর তোফায়েলের অন্ধকার দিক যেমন লেখক তুলে ধরেছেন, তেমনই করে মৃত শামস বা তার বোন শিয়াকেও সমান গুরুত্ব দিয়েছেন।
এছাড়া ছোটবড় সব চরিত্রকে লেখক সমান গুরুত্ব দিয়েছেন। রহস্যময় প্রফেসর হাকারবিনের পেছনের অতীত জানার আগ্রহ ছিল। লেখক নিরাশ করেননি।
তবে কিছু একটা বিষয়, যা ভালো লাগেনি। অধিক হারে সিগারেট খাওয়া বিষয়টা আমার কাছে দৃষ্টিকটু লেগেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে উঠলেই ছাত্রসমাজ সিগারেটের পেছনে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সত্য, তারপরও এমনভাবে সিগারেট খাওয়ার উপস্থাপনা ঠিক মনঃপুত হয়নি। ছাত্রদের পাশাপাশি ছাত্রীদেরও সিগারেট খাওয়া ভালো লাগেনি। আধুনিক অনেকভাবে হওয়া যায়। আধুনিক হতে হলে সিগারেট ফুঁকতে হবে কেন? এই বিষয়টা আগেও ভালো লাগেনি, এখনো লাগে না।
▪️সম্পাদনা :
বইঘর ইবুকে পড়ে শেষ করেছি "যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" বইটি। ইবুকের ক্ষেত্রে কিছু বানান ভুল লক্ষ্য করেছি। কয়েক জায়গায় যুক্তবর্ণ ভেঙে গিয়েছিল। এছাড়া বইঘর অ্যাপের সবচেয়ে বড়ো সমস্যা একই অধ্যায়ে ফন্ট বড়ো বা ছোটো হয়ে যাওয়া। আশা করি বইঘর কর্তৃপক্ষ এই বিষয়ে নজর দিবে।
▪️পরিশেষে, "যে হীরকখণ্ডে ঘুমিয়ে কুকুরদল" এক অন্যরকম যাত্রা। প্রেম, বন্ধুত্ব, সংঘাত, ছাত্র রাজনীতি, শিক্ষা ব্যবস্থার বেহাল দশা, অন্যায়ের বিরুদ্ধে ছাত্রদের রুখে দাঁড়ানো, প্রতিশোধ - সবকিছু দুই মলাটে বন্দী। লেখকের লেখার জন্য বেশ উপভোগ্য হয়ে উঠেছিল এ যাত্রা।