Jump to ratings and reviews
Rate this book

খেলাঘর

Rate this book
কেন ডাকনাম থাকতে নেই নাকি? দাদাভাই ডাকতো ঝুমি, দিদামণি ডাকতো আন্না, মামা ডাকতো গাব্বু, স্কুলের মেয়েরা ডাকতো টেঁপি। সই পাতিয়েছিলাম একজনের সঙ্গে, সে নাম দিয়েছিল লতা। আমি তার নাম দিয়েছিলাম পাতা। দুজনকে একসঙ্গে দেখলে কেউ কেউ ছড়া কেটে বলতো, লতাপাতা যায়, ফিরে ফিরে চায়। পাতাটা ছিল ভারি মুখফোঁড়, ও বলতো, লতাপাতা যায়, গরু পিছে ধায়। আচ্ছা তুমি কখনো কড়িগাঁট্টা খেয়েছে? কি ভালোই না লাগতো। আমাদের ক্লাসের একটা ছেলের নাম ছিল বাবু। বাবুদের বাড়িতে ছিল ফলশা গাছ। আমি আর পাতা বাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলাম, যা ভালোবাসতাম ফলশা! বাবুটার কি হয়েছিল জানো? লড়ির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল বাবু। চাপা পড়বে না, গাধাটা এমন আপনভোলা ছিল! এই দ্যাখো পাতার কথাই বলা হয়নি, পাতা মরে গিয়েছিল পুকুরে ডুবে।

ঝুমি ওরফে আন্না ওরফে গাব্বু ওরফে টেঁপি ওরফে লতা। সেই মেয়েটির গল্প শুনিয়েছেন মাহমুদুল হক। উচ্চশিক্ষিতা কুমারী অপাপবিদ্ধার স্বপ্নের খেলাঘর কীভাবে যে ভেঙ্গে যায়! ১৯৭১ এর গ্লানি আর যন্ত্রণার মাখামাখি গৌরব সে কি জেনেছিল?

72 pages, Hardcover

First published April 1, 1988

6 people are currently reading
246 people want to read

About the author

Mahmudul Haque

20 books112 followers
Mahmudul Haque (Bangla: মাহমুদুল হক) was a contemporary novelist in Bangla literature. He was born in Barasat in West Bengal. His family moved to Dhaka after the partition in 1947. His novels deal with this pain of leaving one's home.

Mahmud gave up writing in 1982 after a number of acclaimed novels. Affectionately known as Botu Bhai and always seen as a lively figure in social gatherings, the rest of the time he was said to lead a solitary life.

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
62 (36%)
4 stars
73 (42%)
3 stars
30 (17%)
2 stars
5 (2%)
1 star
1 (<1%)
Displaying 1 - 30 of 36 reviews
Profile Image for জাহিদ হোসেন.
Author 20 books476 followers
September 1, 2016
মাহমুদুল হককে নিয়ে বলার জন্য যথেষ্ট এলেম লাগে। আমার সে এলেম নাই। এই জেনারেশনের অনেকেই তাকে চেনেন না। এটা মাহমুদুল হকের লস না, এটা আমাদের লস।
মাহমুদুল হক বাংলা সাহিত্যের সবচেয়ে সার্থক গদ্য কবি। তার প্রতিটা উপন্যাসই একটা কবিতা, উপন্যাসের আদলে সারাজীবন কবিতা লিখে গেছেন তিনি।
Profile Image for Yeasin Reza.
509 reviews86 followers
October 4, 2023
মাহমুদুল হক কে বাংলাদেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ কথাশিল্পী বললে মোটেও অতিশয়োক্তি হবে না। তাঁর গল্প বলার ক্ষমতা অত্যন্ত শক্তিশালী। মাত্র দশ বছর সাহিত্যিক জীবনে সাতটি উপন্যাস লিখেছেন।প্রত্যেকটি উপন্যাস ই আঙ্গিক এবং রচনাশৈলী তে অনন্য।

'খেলাঘর' উপন্যাসটি মুক্তিযুদ্ধের সময়ের। শহরতলি তে যখন যুদ্ধের দামামা বেজে উঠে তখন ইয়াকুবের কাধেঁ দায়িত্ব পড়ে তার বন্ধু টুনু'র চাচাতো বোন রেহানা কে দেখে রাখার।রেহানার কথাবার্তা বেশ খেয়ালী।সারাক্ষণ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গল্প করতেই থাকে। ছোট শিশুর মত তার উচ্ছাস। শৈশবের স্মৃতি তে তার বসবাস। কখনো বা শোনায় তার বান্ধবী পাতা এর কথা,যার সাথে নাম মিলিয়ে তাদের লতাপাতা ডাকা হতো।কখনো বা শোনায় দাদাভাইয়ের আশ্চর্য সব ইচ্ছের কথা। কখনো বা কিশোরী মেয়েদের উচ্ছাস নিয়ে বকুল ও কদম কুড়িয়ে আনে। ইয়াকুব মুগ্ধ হয়ে তার গল্পের স্রোতে ভেসে যায়।

মিঠুসার নামক এক গ্রামে আশ্রয় নেয় তারা। মুকুল মাস্টারের সহয়তায় জঙ্গল ও ঝোপঝাড় দিয়ে ঘেরা এক পরিত্যক্ত বাড়িতে আশ্রয় নেয় তারা। সেখানে নানান গল্প, উচ্ছসিত প্রজাপতির মত তাদের পুরো জায়গাময় ছোটাছোটি আর খুনসুটি। এরই মাঝে শহরের যুদ্ধ কবলিত বাতাম গ্রামে ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।মুকুল মাস্টার জড়িয়ে পড়ে এর সাথে। পিয়ার মোহাম্মদ নামের এক চরিত্রের ও সংযোগ রয়েছে গল্পে। কি হয় গল্পের শেষে? টুনু কি নিতে আসে রেহানাকে? ইয়াকুব কি রাহানার গল্পে বিমোহিত হয়? মুকুল মাস্টারের যুদ্ধে জড়িয়ে যাওয়ার ফলাফল কি হয় জানতে পড়তে হবে মাহমুদুল হকে'র খেলাঘর।

প্রতিক্রিয়া:মাহমুদুল হকের অপূর্ব রচনাশৈলী পাঠককে মন্ত্রমুগ্ধ করে রাখবে। আর রেহানা'র প্রতি চরম মমতায় পাঠকদের মন ভরে উঠবে।এটি আমার পড়া মাহমুদুল হকে'র দ্বিতীয় বই।প্রথমটি ছিল ' নিরাপদ তন্দ্রা'।যা পড়ে এতই মুগ্ধ হয়েছিলাম যে ওইদিন ই অনেক খুজেঁ এই বইটি পেয়ে যায়। মাহমুদুল হক অতি শক্তিমান সাহিত্যিক হলে ও জনপ্রিয় বলতে যা বোঝায় তেমন জনপ্রিয় নন।যেটা আমার কাছে অনেব বিস্ময়কর লেগেছে। যাঁর লেখা এমনভাবে পাঠককে মুগ্ধ করে রাখতে পারে তিনি কেনো এত কম পরিচিত?

মানুষের জীবনে প্রত্যাশা থাকতে বা রাখতে নেই, জীবন শুধু খেলাঘর।

রিভিউকাল : ৫-৬-২০১৮
Profile Image for Amit Das.
179 reviews117 followers
October 20, 2020
একাধিকবার পড়েছি, এরকমটা হয়তো এর আগে বেশকিছু বইয়ের ক্ষেত্রেই হয়েছে। কিন্তু প্রথমবার পড়ার পর ঘোর কাটতে না কাটতেই অন্য কোনো বই ধরার আগে দ্বিতীয়বার সেটা পড়ার ইচ্ছে হওয়া এবং প্রমত্তের মতো পড়ে ফেলা, সেটা এবারই প্রথম ঘটলো। মাহমুদুল হকের সম্মোহনী গদ্য এতটাই মোহাবিষ্ট করে রাখে যে যখনই তাঁর লেখা পড়ি, ভুলে যাই আশেপাশে কি আছে, কি ঘটছে। পাতার অক্ষর থেকে যেন জীবন্ত হয়ে ওঠে সবকিছু।
মাহমুদুল হকের সব লেখা পড়বো, এটা 'কালো বরফ' পড়ার পরই ঠিক করে রেখেছিলাম। বাংলা সাহিত্যপ্রেমী সবারই মাহমুদুল হক পড়া উচিৎ বলে মনে করি।
Profile Image for Shaila Shaznin.
65 reviews8 followers
May 7, 2024
এটি আমার পড়া মাহমুদুল হক এর ২য় বই। 'জীবন আমার বোন' পড়ার পর সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আস্তে আস্তে উনার সব বই পড়ে ফেলব।
বই পড়তে পড়তে আমি গল্পে এতোটাই ডুবে গেছি যে মনে হলো আমিও গল্পেরই একটা অংশ। লেখক কত সহজভাবে উপন্যাসের মধ্য দিয়ে বলে গেছেন জীবনের গল্প। জীবনে সত্যিই প্রত্যাশা থাকতে নেই, থাকলেই মার খেতে হয়। জীবন এক বিচিত্র খেলাঘর।
Profile Image for Bashar.
4 reviews13 followers
August 25, 2016
১৯৭১, সবে মুক্তিযুদ্ধের খই ফুটছে করে, ঢাকার উচ্চশিক্ষিতা রেহানা, গ্রামের কলেজ শিক্ষক ইয়াকুবের আশ্রয়ে কিছুদিন থাকবেন একটা অজঁপাড়াগায়ে। পাড়াগায়ে এমন একটা ব্যাপার নিয়ে হইচই হয়ে যাওয়ার কথা, হলো না যদিও! তখন হৈচৈ করবার মত ঘটনাতো মুরি মুড়কির মতো। একদিন হয়তো ইশকুল কেরাণী মতিন সংবাদ দিলো ইছামতির পারে তাঁতীদের গ্রাম ছারখার পরেরদিন গেরিলার গুলিতে শান্তিবাহিনীর আঞ্চলিক চ্যালার হাত খোয়া গেলো। এতো সবের মাঝে বন-জঙ্গলে ঘেরা আদিনাথের পোড়া বাড়িতে ঝুমি আর বাবুর চড়ুইভাতি-তে বাগড়া দেয়ার পুলক কারো থাকার কথা নয়।
ঝুমি রেহানার ডাকনাম, আরো অনেকগুলো আছে। ঝুমি ডাকতো রেহানার দাদাভাই, মামা ডাকতো গাব্বু, দিদামণির কাছে আন্না আর ক্লাশের মেয়েরা বলতো টেঁপি। আরেকটা আছে, লতা, এটা ছোটবেলাকার সই পাতার নামের সঙ্গে মিল রেখে। লতা আর পাতার বন্ধু বাবু। বাবুদের বাড়ি একটা ফলশা গাছ ছিলো। ফলশা দেয়া নেয়া নিয়েই ওদের বন্ধুত্ব। সেই বাবুর নামেই ইয়াকুবের নতুন ডাকনাম "বাবু"। রেহানার কাছে ইয়াকুব নামটা কেমন পালোয়ানী ছাঁটের, অনেকটা কদমছাঁটের হেঁড়ে মাথার মত।
তিন ইটের বেড় দিয়ে বনানো ক্ষণজন্মা চুলোয় লেবুর চা থেকে শুরু করে নারোকলের-পোলাও সবই হয়। ভোর করে বকুল ফুল কুড়িয়ে আনে দুজন, দুপুর গড়িয়ে মালা বুনে ঝুমি, যদিও মালা-বদলটা হয় না। বিলের সাথে লাগোয়া খালে দুজন সাঁতরে পৌঁছয় একটা গুড়ি ওয়ালা গাছের কাছে, ওখানে বসে রোদ পোহাতে পোহাতে কোনদিন ঝুপ করে সন্ধ্যা নামে। এইসব করতে করতে দুজনের গল্প চলতে থাকে। গল্প করার ভার অবশ্য সবটা ঝুমি নিজেই নিয়ে নেয়, ইয়াকুব শুধু শুনে। রূপসার কথা, ইস্টিমারের কথা, ঘুমোট বউয়ের আমুখ ঘুমটা টেনে ছাউনি তোলা নৌকায় শ্বশুর বাড়ি ফেরার কথা। শৈশবের সব গল্প, কোনটা সই পাতার সাথে, কোনটা দাদাভাইয়ের সাথে। কোনটায় জোনাক পোকার আলো আছে, কোনটায় কুপি-ভাতির। গল্প সব ফুরিয়ে গেলে আবার শুরু হয়। নতুন উদ্যোমে পুরোনো গল্প বলা।

মাহমুদুল হকের লেখা "কালো বরফ" এর আগে পড়েছিলাম, পড়ার পর বেশ উলোট-পালোট করে দেয়ার মত ভালো লেগেছিলো। তারপর "খেলাঘর" পড়লাম অনেকদিন পরে। একটা মেয়ের পোস্ট-ট্রমা আডজাষ্টমেন্ট স্ট্রাগলের গল্প "খেলাঘর"। মেয়েটি ট্রমার থেকে বাঁচার জন্যে আশ্রয় নেয় শৈশবের সুখ-স্মৃতিচারণে। তরুণীর ছেলেমানুষীর গল্প শুনতে শুনতে আমরাও যখন "বেকুব ইয়াকুবের" মত দুর্বল হয়ে পরি তখন জানতে পারি এই অনর্গল ঘোরলাগা ছেলেমানুষী গল্প একটা সর্বনাশের বিনিময়ে পাওয়া।
Profile Image for Mahmudur Rahman.
Author 13 books357 followers
May 28, 2021
এই, আরেকটা আজীব কারবার! দুনিয়ায় অল্প কিছু লেখক আছে যাদের লেখা পড়লে সেই প্লটে নিজে গিয়ে পড়তে হয়। বছর খানেক আগে শ্যামল নিয়ে ফালাইছিল আর এই বছর 'নিরাপদ ত��্দ্রা'র পর মাহমুদুল হক এই বইয়ে আবার সেইটা করল।
'খেলাঘর' অসাধারণ কোন বই বা সাহিত্যকর্ম না কিছু ভিতরে ঢুকে ছুরি মারে আরকি।
Profile Image for Ësrât .
515 reviews85 followers
May 28, 2021
৭১
কারো কাছে একটা নিছকই শব্দ বা সংখ‍্যা,কারো কাছে এক সমুদ্র স্মৃতির নোনাপানিতে ডুবতে ডুবতে সলিল সমাধি হওয়ার আগেই সৈকতে পৌঁছানোর এক প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা নাম।

যে শব্দের সংখ‍্যার সাথে জড়িয়ে আছে অজস্র গৌরবের আড়ালে চাপা পড়া চৌকাঠ না মাড়ানো সেসব মায়াবতী দের নাম , যাদের গ্লানি জ্ঞানে সরিয়ে দিয়ে ইতিহাসসমৃদ্ধ জাতির জয়গান করি আমরা শতকন্ঠে।

ঝলসে যাওয়া আলো যেমন অন্ধকারের কথা ভুলিয়ে দেয়, একাত্তরের দিনগুলির দিনলিপির পাতায় তেমনি সে অপাপবিদ্ধাদের পরিনতির কথা আছে কিন্তু লেখা নেই।শব্দসম্ভারে সমৃদ্ধ জাতির এসবে অগ্রসর হয়ে অগ্ৰদূতের আগ্ৰহ সময় কোনোটাই নেই।

কিন্তু উজ্জ্বল ব‍্যতিক্রম মাহমুদুল হক।মগ্ন জাতি যখন মশগুল অন‍্য মোহনায়,ভগ্নদূতের মতো তখন অসিকে মসি করে মুগ্ধ করার সাথে দৃষ্টিহীনদের দৃষ্টিগোচর দৈন‍্যদশা দিব‍্যি ফুটিয়ে তুলেছেন।

যার গদ‍্যময় পদে‍্যর পরিশীলিত সুললিত ভাষা অনুভূতির এপার ওপার ঘুরে গল্প শোনায় এক কুমারী কন‍্যার,সে কারো কাছে ঝুমি গাব্বু লতা,কারো কাছে টেপি আন্না।এসব নামের আড়ালে থাকা রেহানার ইয়াকুবের সাথে সেই বাল‍্যস্মৃতির ঝাপিতে ঝুপ করে পাতা আর বাবুকে নিয়ে ডুবসাতারের গল্প।যে গল্পে আলাভোলা বাবু পথে,প্রাণসখী পাতা ভেসে যায় স্রোতের টানে।

কেয়া পাতার নৌকা চড়ে তেঁতুল গাছের গোঁড়ায় আদিনাথের আদি‍্যকালের ভিটের প্রতি ভিতে বকুল ফুলের শুকনো মালার সৌরভে দাদা মনির চাঁদের কনা হিরের ফুল আন্না আর ইয়াকুবের জললিপির জলরং ছবি আচোঁড় কেটে কোচর ভরে ভরিয়ে দিয়ে যায় বদলদিনের প্রথম কদম কুড়ানোর মতো একমুঠো সুখ।

রূপকথার সেই রাজে‍্য নেই হানাদারের বর্বরতার বিভীষিকাময় ভয়াল থাবার ছোপ,নেই সেখানে জন্ম অভাগী বাপে তাড়ানো মায়ে খেদানো পিশাচ খুবলে খাওয়া ছোট্ট খুকু রেহানার রাতজাগা তারার মতো প্রভাতের প্রথম কিরনে মিলিয়ে যাওয়ার ভয়।

আগুনের সে দিন শেষ হয়েছে, ঝর্না সাথে কলকলিয়ে উঠেছে এদেশের মাটি মানুষ,ম‍্যাজিক দেখিয়েছে মুকুল টুনুদের টুক টুক করে এগিয়ে চলা গেরিলা বাহিনীর বহর,উড়েছে ঐ নতুনের কেতন লাল সবুজের পতাকা।

বিশ্ব জেনেছে বাংলাদেশকে কিন্তু বাংলা জানেনি,মানেনি আদর করে ঠাঁই দেয়নি দুরন্ত স্বপ্নচারী দসি‍্যদের,দানব যাদের খুবলে খেয়েছি,মানব তাদের মনে রাখেনি।

রেহানারা এভাবেই থাকে বইয়ের পাতায় ঘুমন্ত পুরীর ঘুমকুমারী হয়ে চুপটি করে চিরকাল,খেলাঘরে খুশি মনে খোয়াবের খেই ধরে খেলে বা খোলসে জড়িয়ে ছড়িয়ে ছিটে থাকে মেঠো পথের প্রান্তরে।

রেটিং:🌠🌠🌠🌠.৬০
28/05/21
Profile Image for Rifat.
501 reviews327 followers
February 8, 2024
কাগজের সাদা পাতায় যেই না ৭১ আর দেশভাগ গুটি গুটি পায়ে ছড়িয়ে পড়ার পায়তারা করেছে মাহমুদুল হক তৎক্ষণাৎ দিয়েছেন টান আর বলেছেন- উহু! তোমরা নও, তোমরা প্রসঙ্গমাত্র! এ কাগজ অন্য কারোর যার মনের অবস্থা টালমাটাল। আর তাই মাহমুদুল হকের "কালো বরফে" আবদুল খালেকের স্মৃতিই হয়ে ওঠে আলোচ্য বিষয় কিংবা "জীবন আমার বোনে" ফুটে ওঠে মনস্তত্ত্বের প্রবল দৃশ্যায়ন। আর এখানে আমরা শুনতে পাই পাতার পর পাতা ঘোর লাগানিয়া এক ছেলেমানুষির গল্প যেখানে ৭১ করেছে শুধু ঘটনার সূত্রপাত।

বিলের মাঝখানে মিঠুসার গ্রামের সবচেয়ে নির্জন দিকের পরিত্যক্ত বাড়িটি আরেকবার প্রাণ ফিরে পায় মেয়েলি হাতের ছোঁয়ায়। রেহানা ওরফে ঝুমি ওরফে লতা ওরফে আন্না আর কলেজ মাস্টার ইয়াকুবের পদচারণায় আবার জেগে ওঠে আদিনাথের ভিটে। ক'দিন আগেই তরুণ কলেজ শিক্ষক ইয়াকুবের কাছে বন্ধু মনোয়ার ওরফে টুনুর কাছ থেকে একটি চিঠি আসে, সে লিখেছে- "রেহানা আমার চাচাতো বোন; নিজের হেফাজতে রাখিস।" এরই প্রেক্ষিতে রেহানা ওরফে আন্নার সাথে ইয়াকুবের ঠাঁই হয় এই ভিটেতে। ইয়াকুবের কাছে রেহানাকে বেশ অদ্ভুত মনে হয়, ভারী ঠোঁটকাটা গোছের মেয়ে কিন্তু সবসময় কেন যেন এক ঝলমলে শৈশব তাড়া করে ফিরছে আন্নাকে। সারাক্ষণ শুধু পাতানো সঁই, বাল্য বন্ধু বাবু আর দাদাভাইয়ের কথা। অন্যদিকে আন্নার কাছে ইয়াকুব কেমন যেন! একদিন আন্না বলেই ফেলল-
"তোমার চাউনি দেখলে আমার গা ছমছম করে, যেন টর্চের আলো, কিন্তু ব্যাটারী ফুরিয়ে এসেছে ; টিপটিপে, মিনমিনে, অন্ধকার খুশিতে হাততালি দিয়ে ওঠে"

একদিন টুনু আসে, জানা যায় একটা মিসহ্যাপের কথা যার কারণে সে কখনও রুদ্রমূর্তী কিংবা শৈশবের ছায়াতলে দুলতে থাকা লতা!

মিসহ্যাপ ঘটে বেকুব ইয়াকুবের জীবনেও, কিন্তু ঢের দেরি হয়ে গেছে কেননা ততক্ষণে বেজে উঠেছে মেহেদী হাসানের গজল "রাফতা রাফতা ও মেরি হাস্তি কা সামা হো গায়ে"
"সারা বারান্দায় আন্নার পায়ের ছাপ। ইচ্ছে হয় ওর ওপর গাল পেতে শুয়ে থাকি। সবকিছু ফাঁকা মনে হয়। ঝোড়ো বাতাস শূন্য কোঠায় হাহাকার করে। মনে হয় প্রতিটি গাছ সজল চোখে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। দোরগোড়ার দেয়ালে ঝাঁপিয়ে ওঠা ডুমুর গাছটার সঙ্গে আমার কথা হয়, বলি মনে আছে তোমার, কাল তুমি না একটা পাতা দিয়েছিলে, মনে আছে তোমার!
বিলের ওপর পাগলা বাতাস দুমড়ে একাকার হয়ে যায়। ছলছলে পানির কোল ঘেঁষে ওই তো ঘুমশাক, আন্না আমাকে চিনিয়েছিল। ভাই ঘুমশাক, আন্নাকে তুমি মনে রেখো। ওই তো আমরুল, থানকুনি পাতা, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে!"


ঝামেলা হয় আমার এখানেও এই অভাবের সময়েও একবার পড়া শেষ করে আবার বসে যাই ৮০ পাতার এই খেলাঘর নিয়ে!

৮ফেব্রুয়ারি, ২০২৪
Profile Image for Farhana Sufi.
495 reviews
June 23, 2017
এই বইটা পড়ার সময়ে মাঝপথে অবাস্তব লেগেছিলো, সত্তরের দশকের বাংলাদেশে এক নারীকে একলা একলা অবহেলাভরে কোন অজায়গায় নিরাপদ আশ্রয়হীন ভাবে ফেলে রেখেছে তার আত্মীয়রা। যত গরীবই হোক বাংলাদেশের সে সময়ের প্রেক্ষাপটে ভারি বেমানান। আর সেই মেয়েটা শিক্ষিত, সুন্দর মেয়ে, অথচ কথাবার্তা আচরণ অদ্ভুত, একা একা কোথায় এসে আন্দাজে কার সাথে খেলাঘর খেলছে, কী বলছে, কী ভাবছে বা করতে চাইছে কিছুরই ঠিক নাই। যেখানে পুরো দেশটা যুদ্ধের বিভীষিকায় ক্লান্ত, অস্থির, সেখানে এই পুরো কাহিনিটাই বড় বেমানান, খাপছাড়া... যেন বাংলাদেশের গল্প না, যেন সত্তরের আমেরিকায় হিপ্পি জীবন, কোন দায় নেই, ঠিকঠিকানা নেই... তারপরে গল্প যখন শেষের দিকে... তখন শুধু তখন খুব কষ্ট লেগেছিলো... মনে হয়েছিলো গল্পটা বেমানান, খাপছাড়া, বোকা, বা দায়িত্বকাণ্ডজ্ঞানহীন দুইটা তরুণ-তরুণীর গল্প হলেই তো ভালো ছিলো, এত কষ্ট লাগতো না পড়ে...
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews195 followers
August 11, 2022
শুরুটা শান্তির। কেয়াপাতার নৌকো একটা। দুজন মানুষ৷ রেহানা আর ইয়াকুব তাদের নাম। নাম নিয়ে গল্প করতে করতে রেহানা বলতে থাকে তার ছোটবেলার কথা, হাসির কথা, দুঃখের কথা। তার মধ্যেই লেখক তার স্বভাবসুলভ স্টাইলে দাগা দিয়ে দেন৷ ঘনিষ্ঠ বান্ধবী বা সরল বন্ধুর মৃত্যুর কথা যখন অবলীলায় বলে রেহানা বুকে একটা ধাক্কা লাগে৷
মিঠুসারের আদিনাথের ভিটেতে উঠেছে গ্রাম্য মাস্টার মুকুল, যার মনে হয় গ্রামে বেঁচে থাকাটাও একটা জটিল ব্যাপার, এত ঘোরপ্যাঁচ গ্রামের জীবনযাত্রার। তার সাদাসিধে বোকাসোকা ছাত্র তবিরতকে পিটিয়ে মানুষ করার দায়িত্ববলেই আদিনাথের ভিটেতে কোনমতে মাথাগোঁজার ঠাঁইটুকু জুটে তার। তবিরতের ছিল মৃগী ব্যারাম, একদিন সন্ধ্যায় লাশ ভেসে আসে জলে। ব্যস!
মিঠুসারের সেই মুকুলের বাড়িতে আ���াতদৃষ্টিতে সম্পর্কহীন দুই নরনারী ইয়াকুব এবং রেহানা এসে ওঠে। শান্তিবাহিনীর বেশ দর এখানে, অত্যাচারেও দড় এরা। খুনসুটি করতে করতে হঠাৎ রেহানা খুলে দেয় তার গল্পের ঝাঁপি, তার দাদাভাইয়ের কথা, মানুষের বেঁচে থাকার অনন্ত আকাঙ্ক্ষা আর প্রিয়জন হারানোর হৃদয় নিঙড়ানো বেদনা যেখানে রয়েছে হাত ধরাধরি করে।
গল্প এগিয়ে চলে পাগলাটে আন্না ওরফে রেহানাকে নিয়ে ইয়াকুব ওরফে বাবু ওরফে তপুর জবানে। নিঃস্তব্ধ পোড়োবাড়িতে দুজন মানুষ আশ্রয় নিয়েছে, মুক্তিযুদ্ধের লড়াইয়ের আঁচ থেকে বাঁচতে। নিজেদের গা বাঁচানোকেই যারা দেশপ্রেম ভেবে নিয়েছে, সময়ের খাতিরে। মানব-মানবীর সম্পর্কে স্খলন আসার সূচনাতে ইয়াকুবের মনে পড়ে যায় সেই চিরন্তন কথা, যা অযাচিত, তাই আনন্দের, তাই ঐশ্বর্য; জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই। আরো মনে হয়েছে নিজেকে সংযত রাখাটাই সবচেয়ে কঠিন কাজ। কিন্তু রেহানা এমন খেপাটে, এমন পাগলাটে কেন? কেন তার জীবনে ভালোবাসার কোন অভিজ্ঞতা নেই?
দেশ জ্বলার সাথে সাথে পুড়ে যায় কত ঘর, কত ভালোবাসার ঘর গড়ে ওঠে আবার খেলাঘরের মতো ভেঙে যায়। কথক দেখে তার জীবনের কোন একটা সুতো ছিঁড়ে যাচ্ছে, আবার অন্য কোন ভাবে যেন জুড়তে বসেছে তা।
মাহমুদুল হকের আশ্চর্য স্বাদু কলমে এই ছোট্ট উপন্যাসটি একদিকে মুক্তিযুদ্ধের, একদিকে দুটি মানুষের। মুক্তিযুদ্ধ প্রত্যক্ষ করা কিছু মানুষ৷ ধীরে ধীরে গড়ে ওঠা সম্পর্ক, ভেঙে যাওয়া সম্পর্ক, মরে যাওয়া মানুষ, বেঁচে ওঠা জাতির।
Profile Image for Ashraful Alam Khan Pranto.
34 reviews2 followers
July 7, 2024
সাত দিনে লেখা একটা উপন্যাস। এক দিনে তিন বসায় সাত ঘন্টায় পড়ে ফেলা গেলো। 'জীবন আমার বোন' নামটি শুনেছি অনেক, তবে মাহমুদুল হক পড়া হয়নি। জীবনে একটা নতুন আফসোস যুক্ত হলো, তবে তার সাথে প্রতিজ্ঞা হলো একটি নতুন শুরুর।

গল্পটা মুক্তিযুদ্ধের, তবে ঠিক মুক্তিযুদ্ধের না।
কতগুলো চরিত্রের, তবে ঠিক চরিত্র নির্ভর হয়তো না।
গল্পটাকে আমি প্রেমের বলবো না, গল্পটা হয়তো ঘোরের।

দেখলাম সিনেমা হয়েছে গল্পটা নিয়ে। গল্পটার ঠিক কোনো পরিণত শেষ হয়েছে কিনা সেটা নিয়ে বিতর্ক হতে পারে। তবে গল্পটা যে আসলে মানুষের মনের, তা নিয়ে কোনো ভ্রুকুটি নেই।

একটা লাইন নিলাম ডাইরির জন্য — প্রত্যাশাই শয়তান।

মাহমুদুল হকের সাথে পরিচয় করানোর জন্য বইটিকে চার তারা।
Profile Image for Chandreyee Momo.
219 reviews30 followers
July 23, 2025
সিনেমা দেখে বইটা পড়তে নিয়েছি৷ ছোট বই, কি সহজ সাবলীল ভাবে লেখক বলে গেলেন মুক্তিযুদ্ধের সময়ের একটা ছোট্ট ঘটনা। আন্না, ঝুমি কিংবা গাব্বুর কথা, কষ্টের কথা, পাগলামির কথা, আনন্দের কথা। খুব ভাল লেগেছে।
Profile Image for musarboijatra  .
283 reviews357 followers
March 11, 2023
"সারা বারান্দায় আন্নার পায়ের ছাপ। ইচ্ছে হয় ওর ওপর গাল পেতে শুয়ে থাকি। সবকিছু ফাঁকা মনে হয়। ঝোড়ো বাতাস শূন্য কোঠায় হাহাকার করে। মনে হয় প্রতিটি গাছ সজল চোখে বিধ্বস্ত বাড়িটার দিকে তাকিয়ে আছে। দোরগোড়ার দেয়ালে ঝাঁপিয়ে ওঠা ডুমুর গাছটার সঙ্গে আমার কথা হয়, বলি মনে আছে তোমার, কাল তুমি না একটা পাতা দিয়েছিলে, মনে আছে তোমার!

বিলের ওপর পাগলা বাতাস দুমড়ে একাকার হয়ে যায়। ছলছলে পানির কোল ঘেঁষে ওই তো ঘুমশাক, আন্না আমাকে চিনিয়েছিল। ভাই ঘুমশাক, আন্নাকে তুমি মনে রেখো। ওই তো আমরুল, থানকুনি পাতা, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে তো ভাই, মনে আছে!"
.
.
‘সবকিছু তো ওই আরামটুকুর জন্যেই—' টুনু উত্তর দেয়, ‘আরাম আছে বলেই জীবনটা আছে। দ্যাখেন না, লাথি মারার সময়ও আমরা কেমন পোঁদটাকেই বেছে নিই। এত জায়গা থাকতে পোঁদটাকেই বেছে নিই, লাথি মারার নামে নরম গদিতে একটু পা রাখা, এই তো!'
.
.
"এক-একজনের অমন হাতের গুণ থাকে; যা-ই দিক না কেন, মনে হয় দুনিয়ার সেরা খাবার খাচ্ছি । মন থাকা চাই, মনটাই সব। মনে আদর থাকা চাই। মনে যদি ছিটেফোটাও আদর থাকে, হাত চট্ করে বুঝে ফ্যালে। বলে মনভাই মনভাই তোমার আদর একটু ধার দাও না! সেই আদর যদি হাত একটুখানি পায়, ব্যাস্, তখন তার আর কিছুর দরকার নেই। সেই হাত ধোয়া যে পানি, তাতেও থাকবে বারো মসলার গুণ!"
.
"কেন ডাকনাম থাকতে নেই নাকি? দাদাভাই ডাকতো ঝুমি, দিদামণি ডাকতো আন্না, মামা ডাকতো গাব্বু, স্কুলের মেয়েরা ডাকতো টেঁপি। সই পাতিয়েছিলাম একজনের সঙ্গে, সে নাম দিয়েছিল লতা। আমি তার নাম দিয়েছিলাম পাতা। দুজনকে একসঙ্গে দেখলে কেউ কেউ ছড়া কেটে বলতো, লতাপাতা যায়, ফিরে ফিরে চায়। পাতাটা ছিল ভারি মুখফোঁড়, ও বলতো, লতাপাতা যায়, গরু পিছে ধায়। আচ্ছা তুমি কখনো কড়িগাঁট্টা খেয়েছে? কি ভালোই না লাগতো। আমাদের ক্লাসের একটা ছেলের নাম ছিল বাবু। বাবুদের বাড়িতে ছিল ফলশা গাছ। আমি আর পাতা বাবুর সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতিয়েছিলাম, যা ভালোবাসতাম ফলশা! বাবুটার কি হয়েছিল জানো? লড়ির তলায় চাপা পড়ে মারা গিয়েছিল বাবু। চাপা পড়বে না, গাধাটা এমন আপনভোলা ছিল! এই দ্যাখো পাতার কথাই বলা হয়নি, পাতা মরে গিয়েছিল পুকুরে ডুবে।"
.
"আমি কি ইচ্ছে করে কাঁদি রে, কি জানি কেন, আজকাল আমার এমন হয়, কত কথা মনে পড়ে; কত মানুষ, কত আদর-যত্ন, এখন যা দেখি তাই ভালো লাগে, তাই সুন্দর মনে হয়; ঐ যে বাবলা গাছটা, দেখিস না সারাদিন কেমন তাকিয়ে থাকি ওটার দিকে, মন খারাপ হয়ে যায় রে, বড় মন খারাপ হয়ে যায়, ক'দিনই-বা আর আছি! ওই বাবলা গাছটা থাকবে, আমার সোনার পুতুল থাকবে, আমার চাঁদের আলো থাকবে, আমার হীরের ফুল থাকবে, সব থাকবে, কেবল আমি থাকবো না..."
Profile Image for Titu Acharjee.
258 reviews33 followers
October 27, 2020
সুন্দর...হারিয়ে যাওয়ার মতো,ডুবে থাকার মতো অপার্থিব সুন্দর। পড়তে পড়তে চেয়েছিলাম বাবু আর আন্নার এই খেলাঘর যেন না থামে। যেন চলতেই থাকে। কিন্তু খেলাঘর তো কখনোই শক্তপোক্ত একটা বাড়ি হয়ে উঠতে পারেনা। তবুও... তবুও বাবু আর আন্নার এই খেলাঘরটা শক্তপোক্ত একটা বাড়ি হয়ে উঠতেও পারতো। আর যাইহোক, অন্ততপক্ষে ক্ষতি তো হতো না।
Profile Image for Soumik.
83 reviews17 followers
September 7, 2021
মাহমুদুল হক তুলির আচড়ে ছবি আঁকেন আর সেই ছবি বাস্তব হয়ে যায় নিখাদ, দুর্দান্ত গদ্যে। এই আবেগপ্রবন লেখকের প্রতিটি লেখাই বারবার, কোনো না কোনোভাবে ফিরে যায় ফেলে আসা অতীতে, ছেলেবেলায়, আনন্দঘন সময়ে।
Profile Image for A. Rahman Bishal.
267 reviews12 followers
January 16, 2024
এই বছরে প্রথম পড়া বইটাই সৌভাগ্যক্রমে ভীষণ সুন্দর একটা বই।
পুরোটা সময় ঠোঁটে মুচকি হাসি ঝুলিয়ে রেখে শেষটা ভিজিয়ে দিয়ে গেল বিষন্নতায়। মাহমুদুল হক লিখতে জানতেন বটে!
Profile Image for শুভাগত দীপ.
275 reviews47 followers
October 30, 2019
|| রিভিউ ||

বইঃ খেলাঘর
লেখকঃ মাহমুদুল হক
প্রকাশকঃ সাহিত্য প্রকাশ
প্রকাশকালঃ এপ্রিল, ১৯৮৮
ঘরানাঃ মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক উপন্যাস
প্রচ্ছদঃ নিসার হোসেন
পৃষ্ঠাঃ ৮০
মুদ্রিত মূল্যঃ ১৫০ টাকা
ধরণঃ পিডিএফ

কাহিনি সংক্ষেপঃ ১৯৭১ সাল। কালো রাত ২৫-শে মার্চের কিয়ৎকাল পরের কথা। ইয়াকুব নামের একজন তরুণ রেহানা নামের এক উচ্ছ্বল তরুণীকে নিয়ে যাত্রা করেছে মিঠুসার গ্রামের দিকে৷ রেহানা মেয়েটা ইয়াকুবের বন্ধু টুনুর কাজিন। মেয়েটাকে কিছুদিনের জন্য দেখে রাখার জন্য ইয়াকুবকে দায়িত্ব দিয়েছে তার বিশ্বাসী বন্ধু৷ মিঠুসার গ্রামের আদিনাথের ভিটায় যে পোড়োবাড়িটা আছে, সেটাই এই দুই তরুণ-তরুণীর গন্তব্য।

যাত্রাপথেই ইয়াকুবের সাথে অদ্ভুত এক সম্পর্ক সৃষ্টি হয় রেহানার। সম্পর্কটা গল্পের। রেহানা ওরফে আন্নি ওরফে ঝুমি ওরফে টেঁপি একের পর এক তার শৈশবের গল্প বলে যায়। তার দাদা-দাদির গল্প, বাল্যকালের বন্ধু পাতার গল্প, অকালে মারা যাওয়া তার আরেক বন্ধু বাবুর গল্প। ইয়াকুব শুধু মুগ্ধ হয়ে শোনে। কথা যেন শেষই হয়না রেহানার। মিঠুসারের আদিনাথের ভিটায় পৌঁছেও গল্প বলে চলে মেয়েটা। সেই জঙ্গুলে ভিটায় বাস করা ইয়াকুবের আরেক বন্ধু স্কুল শিক্ষক মুকুল চন্দ্রের ভাঙাচোরা ঘরে আর বর্ষার নেশা ধরানো প্রকৃতির মাঝে গড়ে ওঠে রেহানা আর ইয়াকুবের অদ্ভুত ও অলিখিত এক সংসার।

মাঝে মাঝে রসদপাতি দিতে মুকুল ফিরে আসে আদিনাথের ভিটায়। তখন গ্রাম্য ভাষায় সে ইয়াকুবকে শোনায় বাংলার দামাল ছেলেদের গেরিলা আক্রমণের গল্প। আপাত সাধারণ থেকে অসমসাহসী একেকজনের মুক্তিযোদ্ধা হয়ে ওঠার গল্প৷ অস্থির সেই সময়টা যেন রেহানা আর ইয়াকুবের কাছেই একমাত্র স্থির। রেহানাতে মুগ্ধ এই তরুণের একটা একটা করে দিন কাটতে থাকে গভীর ভালো লাগার আবেশে। আর সেই আবেশে বর্ষার নির্জনতা ভরা গন্ধ যেন আরো ভিন্ন একটা মাত্রা সৃষ্টি করে।

খামখেয়ালী স্বভাবের তরুণী রেহানা আর তরুণ ইয়াকুবের মধ্যকার অদ্ভুত ভালোবাসার গল্পটা এগিয়ে যেতে থাকে রেহানার শৈশবের গল্পগুলোর হাতে হাত রেখে। আর আরেকদিনে উত্তাল সময়ের গল্প রচনা করে চলে কিছু সাহসী মানুষ, যারা ছিনিয়ে এনেছিলো বহুল আকাঙ্ক্ষার স্বাধীনতা। রেহানার গল্পের আরো একটা দিক হঠাৎ ভেসে ওঠে ইয়াকুবের সামনে, যা ছিলো কষ্টের করুণ বাঁশির সুরের মতোই।

পাঠ প্রতিক্রিয়াঃ কালজয়ী লেখক মাহমুদুল হকের সাহিত্যকর্মের সংখ্যা কম। বলতে গেলে বেশ অনিয়মিতভাবে লেখালেখি করেছেন তিনি৷ তবে 'অনুর পাঠশালা', 'জীবন আমার বোন', 'কালো বরফ' ও 'খেলাঘর'-এর মতো কালজয়ী সৃষ্টি দিয়ে পাঠকদের মনে জায়গা তৈরি করে নিতে তাঁকে বেগ পেতে হয়নি মোটেও। একটা নির্দিষ্ট সময় পর লেখালেখি ছেড়ে দেন মাহমুদুল হক। যে কারণে এখনকার যুগের অনেক পাঠকই এই অসামান্য লেখনশৈলীর অধিকারী লেখকের কাজের ব্যাপারে জানেননা। ২০০৮ সালে মারা যান এই মহান লেখক।

মুক্তিযুদ্ধ ভিত্তিক অনেক উপন্যাসই পড়েছি আমার এই ক্ষুদ্র পাঠক জীবনে। তবে 'খেলাঘর' যেন সেখানে সম্পূর্ণ অন্যরকম এক যাত্রা ছিলো আমার জন্য। এই উপন্যাসটা আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময়কাল নিয়ে লেখা হলেও সেখানে মূলত উঠে এসেছে রেহানা নামের এক খেয়ালী তরুণীর যাপিত শৈশবের গল্প। আর উপন্যাসটা যার জবানীতে বর্ণিত হয়েছে সেই ইয়াকুবকে দেখা গেছে মনোযোগী এক মুগ্ধ শ্রোতার ভূমিকায়। মুকুলের কাছে শোনা মুক্তিযোদ্ধাদের সাহসীকতার গল্পও উঠে এসেছে এই উপন্যাসে।

আদিনাথের জঙ্গুলে ভিটার সেই পোড়োবাড়ি ও এর আশেপাশের বর্ষাস্নাত পরিবেশের এমন জীবন্ত বর্ণনা দিয়েছেন লেখক যে মনে হচ্ছিলো আমি নিজেই সেখানে উপস্থিত আছি। মাহমুদুল হকের গল্প বলার ধরণ সত্যিই কেমন যেন নেশা ধরানো৷ এতোদিন তাঁর কোন লেখা কেন পড়িনি, এটা ভেবেই আফসোস লাগছে। 'খেলাঘর'-এর শেষটা অদ্ভুত এক মন খারাপ করা অনুভূতির যেমন জন্ম দিয়েছে তেমনি আমাকে শিহরিত করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের সংগঠিত হওয়ার চিত্র৷ অনন্য এক অপ্রকাশিত প্রেম আর অস্থির এক সময়ের সুস্থির এই গল্প আমার কাছে স্মরণীয় হয়ে থাকবে।

ব্যক্তিগত রেটিংঃ ৪.৫/৫
গুডরিডস রেটিংঃ ৩.৯৭/৫

© শুভাগত দীপ

(৩০ অক্টোবর, ২০১৯, সন্ধ্যা ৬ টা ৪৭ মিনিট; নিজ রুম, নাটোর)
Profile Image for প্রিয়াক্ষী ঘোষ.
362 reviews34 followers
November 5, 2021
সময়টা ছিল ১৯৭১ সাল। চারিদিকে মানুষের মাঝে একটা আতঙ্ক। ঢাকা শহরে গুলির শব্দ ছাড়া একটা পাখিও ডাকে না। মানুষ প্রাণ নিয়ে ছুটে চলেছে গ্রামে, গ্রামেট মানুষ যেভাবে পারছে আশ্রয় দিচ্ছে শহর থেকে আসা মানুষদের। ইয়াকুব গ্রামের একটা কলেজে পড়ায়। দেশের এই অবস্থায় কলেজ বন্ধ কিন্তু বেতন ঠিকই পায়, বাজারে ক্যারাম খেলে দিন পার করে।

এরই মাঝে ইয়াকুব তার বন্ধু টুনুর চিঠি পায়। টুনুর চাচতো বোন রেহানাকে রাখতে হবে কিছু দিন। দেশের এই অবস্থায় একটু ঝামেলা করার অনুরোধ করেই রেহানাকে পাঠিয়ে দিছে।
ইয়াকুব প্রথমে রেহানাকে কবিরাজবাড়ীতে রাখে, সেখানে তার কোন সমস্যা হবার কথা নয় কারন সে বাড়ীর দুজন মেয়ে কলেজে পড়ে, তাদের কাছে খোঁজ খবর নেয়া যায়।

কয়েকদিন পর কবিরাজগিন্নী রেহানাকে রাখতে চায় না তার আচরনে। ইয়াকুব তখন তাকে নিয়ে যায় মিঠুসারে আদিনাথের ভিটায়। নির্জন এক পুরাতন ভাঙ্গাবাড়ী।

ইয়াকুবের সাথে অদ্ভুত এক সম্পর্ক তৈরি হয় রেহানার। সে ছোট বেলার গল্প বলে চলে আর চুপচাপ শুনে চলে রেহানা। তার অনেকগুলো না--আন্নি, ঝুমি, টেপি। এগুলো কোন একটা বলে ডাকতে বলে ইয়াকুব কে। নিজের শৈশব স্মৃতি এবং সেই শৈশবের হারিয়ে যাওয়া বন্ধু বান্ধবীর গল্প অনর্গল বলতে বলতে অনেকখানি কাছাকাছি চলে আসে তারা।

চারিদিকে অস্থিরতা, তরুনরা যাচ্ছে মুক্তিযুদ্ধে, সময়টা পার হচ্ছে এলোমেলো এক পথ বলে এরই মাঝে এক শান্ত স্নিগ্ধ সময় যেন আটকে আছে রেহেনা আর ইয়াকুবের জীবনে।

খামখেয়ালি রেহানা আর শান্ত ইয়াকুব শীলত এক ভালোবাসাময় সময়ে নিজেদের মুড়িয়ে ফেললেও দেশের মুক্তিযোদ্ধারা দেশকে স্বাধীনতার দিকে এগিয়ে নিয়ে চলেছে।

লেখক মাহমুদুল হক এর বেশ চারটা উপন্যাস পড়েছি। প্রতিটি উপন্যাস বিষয়বৈচিত্রের দিক দিয়ে আলাদা এবং ভালোলাগাটাও আলাদা একটা অন্যটা থেকে। লেখকের লেখা মুগ্ধ করার মতই।

ফিকশন, নন-ফিকশন মিলিয়ে বেশ কিছু বই পড়েছি মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে তবে "খেলাঘর" বইটার কাছে বিক্রি হয়ে গেলাম মনে হচ্ছে।

"জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই, প্রত্যাশা থাকলেই মার খেতে হয়। যা অযাচিত, তাই ঐশ্বর্য ;"
Profile Image for Zarif Hassan.
121 reviews42 followers
October 20, 2020
কী সুন্দর! কী সুন্দর! কী মন খারাপ করা সুন্দর!

কিছু না। এক চিলতে স্মৃতি যার ঘোরে কাটিয়ে দেওয়া যায় সারাজীবন!
শক্তিশালি লেখা পড়ার অন্যরকম একটা আনন্দ আছে। ক্ষণিকের ঘোরে আদিনাথের ভিটার গাছপালা হয়ে গেছিলাম যেন।
Profile Image for Yasin Sharif.
5 reviews5 followers
August 10, 2017
গল্পের ভিতর ঢুকার আগেই, শব্দ মালায় আবদ্ধ করে রাখে যেন।
কোথাও যুদ্ধ নেই।কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে মুকুলচন্দ্র যেন যুদ্ধ বয়ে বেড়ায়।

অন্যদিকে বর্বরতার স্বীকার এক নারীর প্রেমের যেন অদ্ভুত দৃশ্য সব।তার সাথে জুটে দেয় ইয়াকুব কে।তরতর করে বইতে থাকে কথামালা।
সামাজিক পে���্ষাপট কে উপেক্ষা নয় বরং মনে হলো যে, তখন মানুষের অন্যের বিষয় নিয়ে তেমন কোন কৌতূহল ছিলনা।শুধুই বেঁচে থাকার একটা লড়াই ছিল।ফলে এমন সম্ভব হয়ে উঠেছিল।

একজন ভিতু ইয়াকুব কিভাবে যেন ম্যাজিক দেখে অনেক কিছুই শিখে ফেলে।

আমার মনে হয় এটা একটা সিনেমা হইতে পারে।
#খেলাঘর
#আগাষ্ট_১৭
Profile Image for Habiba Kamrun.
36 reviews16 followers
July 5, 2021
মাহমুদুল হকের লেখা পড়েই কেমন জানি এলোমেলো অনুভূতি হয়, উনার লেখার প্রতি আমার অদ্ভুত সম্মোহনী টান কাজ করে। উনার যে বইটাই পড়ি তাতেই মুগ্ধ হই, 'খেলাঘর'ও তার ব্যতিক্রম নয়।
Profile Image for SH Sanowar.
118 reviews29 followers
November 23, 2024
প্রিয় লেখক মাহমুদুল হকের আরও একখানা লেখা। যেটা আমি বারবার বারবার বারবার পড়ে যেতে চাই।
Profile Image for Fardin Helal.
214 reviews18 followers
November 29, 2022
A short novella during the liberation war period in Bangladesh. War and love flow side by side. Often war starts from love and more often love is kindled by war. In this case, Mahmudul Haque has chosen the later to define this book.

The female protagonist of the book, Rehana, was a war victim. When she fled from the city with a deep scar within her, she met Yakub. Circumstances brought them closer and Rehana found solace in talking to Yakub about her childhood.

This seemingly simple plot has depicted the mentality of the people during the beginning of the war with surprising depth. Rehana represents all those girls abused during the war, Yakub represents the people who are still in doubt and thinking about self-preservation only, and Mukul, a friend of Yakub represents those who braved the first leap and started the resistance.

Even though it is a liberation period literature, war has always remained in the background with no active actions and the plot revolved around Yakub and Rehana. However, the ending of the book came too early, leaving me hoping for more. I wish there were sequels to this book. It feels like it had great potential. But I'd take what I am offered. I only wish I had read this amazing book earlier.
Profile Image for Anik Chowdhury.
175 reviews36 followers
October 26, 2023
মাহমুদুল হকের লেখা ভালো লাগলে সেই ভালো লাগার ঘোর কাটানোটা সহজ হয় না। তবুও প্রত্যাশার পরিমাণ শূন্য ধরে নিয়ে পড়তে বসি আর যারপরনাই অবাক হই। সুন্দর গদ্য রচনায় তার জবাব নেই! তাঁর রচিত গদ্যসাহিত্য 'খেলাঘর' পড়তে গিয়ে মনে হলো, আদপে তা গদ্য হলেও কোথায় যেন কব্যের রসও মিশে আছে। তাঁর লেখার ভঙ্গিমা, উপমা, রসবোধ সব মিলিয়ে আকৃষ্ট করে রাখে একেবারে শেষ পাতা পর্যন্ত। 

'খেলাঘর' পড়তে গিয়ে মনে হলো বইটা আরেকটু বড় হলো না কেন! রেহানা এবং ইয়াকুব অস্থিতিশীল সময়ের দুইজন নারীপুরুষ। তাদের ঘিরে আবর্তিত কাহিনিমালা। যে খেলাঘর আমরা ছোট থেকে নিজেদের মধ্যে বয়ে বেড়াই তা একসময় ধ্বসে পড়ে আমাদের অগোচরে। থেকে যায় হাওয়া উড়ে বেড়ানো কণার মতো ছোট ছোট স্মৃতিরা। তাদের আশ্রয় করে বেচে থাকে অনেকেই। 

এই বইয়ের অধ্যায়ের নামগুলো চমৎকার। যেমন- কেয়াপাতার নৌকো, বকুল ফুলের শুকনো মালা, হিজলবনের নখের কাছে, ঘাটের কথা, জলপিপি ইত্যাদি। লেখক তার স্পর্শ বইয়ের সবখানে ছড়িয়ে রেখেছেন। তাই মাহমুদুল হককে বারবার ভালো লেগে যায়।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
February 2, 2025
এই উপন্যাসিকায় মাহমুদুল হক গল্প বলেছেন অস্পষ্টভাবে। যা ঘটেছে তার পুরোটা পাঠকের কাছে প্রকাশ করেননি। আর এখানেই খেল দেখিয়েছেন লেখক।
Profile Image for Mahadi Hassan.
129 reviews11 followers
April 21, 2021
বইটা পড়তে ভালো লাগছিল আমার, স্বপ্নের মত, আর অবাস্তব কিছুটা। তবুও চমৎকার সব কিছু।
কিন্তু স্বপ্ন যেমনি ভেঙে যায়, তেমনি ভেঙে গুড়িয়ে গেলো খেলাঘর। খেলাঘর বলেই বোধহয়...
Profile Image for Durlov Ahmed.
63 reviews13 followers
June 23, 2018
প্রথমে বইটা হাতে নিয়ে ভেবেছিলাম ছোটগল্পের বই। পরবর্তিতে, পড়ার সময় বুঝতে পারলাম যে এইটা একটা পূর্ণাংগ উপন্যাস; মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস। মুক্তিযুদ্ধের অন্য যেকোন উপন্যাসের চেয়ে ভিন্নধর্মী এই উপন্যাসে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ফিরে আসা, আসলে আশ্রয় নেয়া এক যুবক এবং ঐগ্রামে আশ্রিত হয়ে আসা আরেক যুবতীর গল্প খেলাঘর। মুক্তিযুদ্ধের ভয়াবহতা থেকে কিছুটা নিরাপদ, কিন্তু যেকোন মূহুর্তেই বিপদ আঘাত হানার আশঙ্কাতেও না থেমে থাকা জীবনের গল্প এই খেলাঘর। রেহানা নামক সেই মেয়েটির গল্প যে কিনা মুক্তিযুদ্ধের সময়ে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ নির্যাতনের শিকার। এই ভয়াবহ সময়ে ইয়াকুব আর রেহানার মাঝে গড়ে ওঠা মধুর সম্পর্কের গল্প খেলাঘর। মুকুল বলেছিল ইয়াকুবকে ম্যাজিক দেখাবে। কী সেই ম্যাজিক?

মাহমুদুল হক খুবই প্রিয় একজন কথাসাহিত্যিক। ক্ষণজন্মা অত্যন্ত প্রতিভাবান এই লেখক তার লেখার মুনশিয়ানায় অত্যন্ত সাবলীল ভাবে তার লেখনীতে সাররিয়ালজিম তুলে ধরতে পারেন যেটার প্রমাণ আমরা তার "অনুর পাঠশালা" উপন্যাসে পাই। কিন্তু খেলাঘর একেবারেই সোজাসাপটা একটা গল্প। খুবই সাধারণ কিন্তু অনন্যসাধারণ এক গল্প তুলে ধরেছেন মাহমুদুল হক।
Profile Image for Samrat Sam.
10 reviews1 follower
May 22, 2017
মানুষের জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই, ওটা শুধুই খেলাঘর।
আমি ভাবছিলাম মাহমুদুল হক আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন! এদিকে আমিও যাব বলে সিদ্ধান্ত নিয়ে বসে আছি, দাদাভাই, বকুলবালা আমার সিদ্ধান্তকে আরো যৌক্তিক করে তুললেন। এরপরও কিছুটা খাপছাড়া, কিছুটা অস্পষ্ট ঠেকছিল মাঝেসাঝে। কিন্তু রূপসা নদীকে ঢিল মেরে বকে দেওয়া আর তার প্রায়শ্চিত্তে পাতার ডুবে মরে যাওয়া ওসব অস্পষ্টতাকে ছাড়িয়ে গেল।
এরপর অবশিষ্ট থাকে বিষণ্ণতা এবং ঘুরেফিরে সেই আগেকার কথা: জীবনে প্রত্যাশা থাকতে নেই!
কি অদ্ভুত।।
Profile Image for Zihadul Sujon.
2 reviews3 followers
August 22, 2022
খেলাঘর
মাহমুদুল হক
রচনাকাল:১৯৭৮

খেলাঘর মাহবুবুল হকের একটি মুক্তিযোদ্ধাভিত্তিক উপন্যাস যেখানে প্রেমের নিদারুণ উপস্থাপনা ও সমসাময়িক বিষয়কে কল্পিত করেছেন ২টি প্রধান চরিত্রে(ইয়াকুব,রেহেনা)।

খেলাঘরে প্রধান চরিত্রগুলো হল রেহেনা,ইয়াকুব,মুকুল ও টুনু। এখানে তিনটি প্রধান বিষয় আলোকপাত করা হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের প্রত্যক্ষ শিকার,দীধাগ্রস্থ ও আশাবাদী মনন যেখানে রেহেনা মুক্তিযুদ্ধের শিকার,ইয়াকুব দ্বিধাগ্রস্ত এবং মুকুলের আশাবাদী আগ্রহের পরিচয়।

লেখক প্রতিটি চরিত্রের সাথে আলাদা জায়গার স্থান দিয়েছেন যেমন:জলপিপি,আদিনাথেট ভিটে,আন্না এবং অন্যান্য যা চরিত্রের আঙ্গিকতার প্রকাশ।


১৯৭১ সালের মাঝপথে খুলনা জেলার কোন এক মিঠাসার গ্রামে এই কাহিনীর আলোড়ন। প্রথমেই ইয়াকুব আর রেহেনার বিলে নৌকা নিয়ে যাত্রার ঘটনা লক্ষ্য করা যায়।রেহেনার দুষ্টমিষ্ট স্বভাব এবং ইয়াকুবকে বোকা বানানো এবং ভাবার সংমিশ্রণ দেখা যায়,ইয়াকুব তাতে সায় দিয়ে যায় ।রেহেনার ভিন্ন ভিন্ন নামের সাথে ঘটনা এবং ইয়াকুবকে তপু নাম দেয়ার ছেলেখেলা পরিস্ফুটিত হয়েছে। আদিনাথের ভিটে তাদের আসা এবং তাদের পূর্ব ইতিহাস দেখতে পাওয়া যায় তাদের বর্ননায়।সাথে জীর্ণ, ভঙ্গুর আদিনাথের ভিটেতে মুকুলচন্দ্রের এক স্থান পাওয়া, তার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলা শিক্ষক হয়েও স্বাভাবিকতার প্রয়াস। ঘটনাচক্রে ইয়াকুব আর রেহেনার শঙ্কিল হিজল বনের আদিনাথের ভিটেতে রাত্রিযাপন আর সারা রাত গল্প ও আড্ডার আসর বসত যেখানে ইয়াকুব নীরব দর্শক।বন্ধু মুুকুল তাদের সকল খোঁজ খবর নিত এবং ইয়াকুবের সাথে দেখা হলেই গ্রামের মুক্তিযুদ্ধের খবর দিত সাথে তার আগ্রহ এবং উত্তেজনা বেড়ে যেত যাকে বলে প্রত্যাশার ঘোষনা প্রতি স্তবকে।রেহেনার গল্প বলায় লতা(রেহেনা), পাতা ও বাবু চরিত্রের কাল্পনিক আভাস পাওয়া যায় তাদের ছোট বেলার একসাথে বিয়ে করার ইচ্ছে প্রকাশ পেয়েছে। রেহেনার মূলত টুনুর চাচাতো বোন যার মা-বাবা নেই।তার শৈশব জীবন দাদা,দিদিমণ���র কাছে বেড়ে ওঠা।পুকুরপাড়ে তার দাদার ইচ্ছে প্রকাশ এখানে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে উঠেছে তার মৃত্যুর আগে। রেহেনার কবিরাজ বাড়ি থেকে ইয়াকুবের কাছে আসার পিছনে টুনুর অনুরোধ প্রধান ছিল যেহেতু টুনু আর ইয়াকুব পরিচিত। টুনু একজন মুক্তিযোদ্ধা যিনি রেহেনাকে না সামলাতে পেরে কিছুদিনের জন্য রেখে যাওয়ার অনুরোধ করে।তারপর এক পর্যায়ে ইয়াকুব ও রেহেনার ভিতর বন্ধুত্বসূলভ মনোভাব দেখা দেয়। রেহেনার মধ্যে ইয়াকুব নিজের অস্তিত্ব খুঁজে পায়।প্রতিদিন রান্না, ইয়াকুবের উপর সকল বিষয়ে আধিপত্য প্রকাশ পেত রেহেনার চরিত্রে এবং একটি মূহুর্তে তাদের মধ্যে আন্তরিকতা প্রকাশ পায় যা ইয়াকুবকে ভাবিয়ে তুলে যা তার পুরাতন স্মৃতিতে খালার কাছ থেকে তুচ্ছতা পাওয়ার ইতিহাস জাগিয়ে তুলে, প্রত্যাশার অতিক্রম করায় নিজেকে খারাপ ভাবে।অন্যদিকে, মুকুলচন্দ্র তাদের সকল বিষয়ের পাশাপাশি যুদ্ধের খবর নিয়ে উচ্ছাস প্রকাশ করত যে একদিন পাকবাহিনী নির্বিশেষ হয়ে যাবে। মিঠাসার গ্রাম মুক্ত হবে পিয়ার মোহাম্মদ এর মত ঘৃণ্য রাজাকারের হাত থেকে। শেষে মুকুলের মুখে জয়ের ধ্বনি উচ্চারিত হয়।টুনু কয়েকজন মুক্তিবাহিনী নিয়ে ইয়াকুবের সাথে দেখা করতে আসে। ভোলানাথ কবিরাজের বাসায় থেকে রেহেনাকে তাড়িয়ে দেয়া তাকে চিন্তিত করে।ইয়াকুব অবাক হয় আরও অবাক হয় যখন টুনুর রেহেনার মানসিক বিষয় তুলে ধরে পাক হানাদের বাহনীর নির্যাতনের শিকার রেহেনা। যদিও ইয়াকুব বুঝতে পারে না। কিন্তু শেষে রেহেনার প্রস্থান ইয়াকুবকে কাঁদায় এবং নতুনভাবে মানসিকভাবে নরম করে দেয়

লেখক প্রতিটি চরিত্রে সাথে গ্রামীণ জীবনকে সাবলীলভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন যা এককথায় অসাধারণ ও কাব্যিক।রেহেনা চরিত্রের মাধ্যমে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ধর্ষিত নারীদের মানসিক বিষাদ তুলে ধরেছেন আর এটি লেখক উপন্যাসের শেষভাগে তুলে ধরেছেন যা পাঠককে আন্দোলিত করবে শতভাগ। গ্রামের নির্জন বনে একটি সেকেলে বাড়ির ভিতর দুটি চরিত্রের পারস্পরিক মতো মিথস্ক্রিয়া অনবদ্য। মাহবুবুল আলম তার এই নাতিদীর্ঘ উপন্যাস অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে যুদ্ধের আবহাওয়া,ইয়াকুবের দ্বিধাগ্রস্থতা,শরনার্থীদের গ্রামের ফিরে আসা এবং কিছু চরিত্রের মধ্যে আশার বানী দেখিয়েছেন অত্যন্ত শৈল্পিক দৃষ্টিতে।যুদ্ধ মানুষকে অনেক পরিস্থিতিতে ফেলে তার প্রভাবে অন্য মানুষকে অতীতে ফিরিয়ে নিতে পারে তারই বহিঃপ্রকাশ খেলাঘর।যেখানে রেহেনা ও ইয়াকুব আদিনাথের ভিটেতে একটা খেলাঘরে মত জীবন যাপন করেছেন কয়েকটা দিন।

প্রতিফলন: উপন্যাসে যুদ্ধের প্রতিক্রিয়া,প্রভাব,মানসিকতার রূপ দেখানো হয়েছে। এককথায় যুদ্ধ মানুষের অনেক কিছু কেড়ে নেয় এবং দিয়ে যায় বিষাদগ্রস্থতা কিন্তু আশার বানী পিছনে কড়া নাড়তে ভুলে না।
Profile Image for Forhad Juwain Sumon.
75 reviews3 followers
September 26, 2022
মাহমুদুল হকের কোনো বই পড়ে শেষ করতে আমার একদিনের বেশি সময় লাগেনি। এই বই পড়তেও আমি বরাবরের মতো ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পেরেছি। এক্ষেত্রে, লেখককে ক্রেডিট দিতেই হয়। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক উপন্যাস হলেও মুক্তিযুদ্ধের ডাইনামিক বাদ দিয়ে দুইটা মানুষের ব্যক্তিগত জীবন ম্যাজিকাল রিয়েলিজমের মাধ্যমে উপস্থাপন করেছেন মাহমুদুল হক; এ ঘরানার লেখনীতে মাহমুদুল হক অনন্য। মুক্তিযুদ্ধের সময় যারা যুদ্ধে যায়নি, নিজের নিরাপত্তাটুকু সম্বল করে সবকিছু থেকে নিজেকে আড়ালে রেখে বাঁচতে চেয়েছে এমন এক যুবক "ইয়াকুবের" যে এই উপন্যাসের নায়ক, তার দৃষ্টিকোণ থেকে ঘটনাপ্রবাহ বিবৃত হয়েছে।

উপন্যাসের প্রধান নারী চরিত্র রেহানা। চতুর, প্রাণোচ্ছল এবং যার ডাকনাম অনেক ঝুমি, আন্না, গাব্বু, টেঁপি ওরফে লতা। এই মেয়েটির গল্প-ই ইয়াকুবের জবানিতে শুনিয়েছেন কথাশিল্পী মাহমুদুল হক। যুদ্ধকালে ইয়াকুবের বন্ধু টুনু তার চাচাতো বোন রেহেনাকে দেখে রাখতে পাঠায় তার কাছে। রেহানার কথাবার্তা বেশ খেয়ালী। গল্প করতে ভালোবাসে সে। শৈশবের স্মৃতি তে তার বসবাস; থাকবেও না কেনো, জীবন তার জন্য যে কঠিন। মা-বাবাহীন রেহেনা তার বান্ধবী পাতাকে হারিয়েছে শৈশবে, যার সাথে নাম মিলিয়ে তাদের লতাপাতা ডাকা হতো, হারিয়েছে তার সবচেয়ে কাছের বন্ধুকেও। ইয়াকুবের কাছে সে তার যত আশ্চর্য ইচ্ছের কথা বলে। কখনোবা কিশোরী মেয়েদের উচ্ছাস নিয়ে বকুল ও কদম কুড়িয়ে আনে, কখনোবা রান্না করতে করতে চলে যায় এক স্বপ্নের দেশে। ইয়াকুব মুগ্ধ হয়ে রেহেনার কল্পকাহিনিতে হারিয়ে যায়।
কিন্তু আমাদের নায়ক ইয়াকুবের সাথে রেহেনার সখ্যতা গড়ে উঠলেও তাদের সম্পর্কের পরিপূর্ণতা পায়নি ভাগ্যের হেরফেরে। কি হয় তাদের মধ্যে? কেনই বা রেহেনাকে ছাড়তে হয় তার সুখের খেলাঘর?


আমার পড়া মাহমুদুল হকের চতুর্থ বই এইটি। আগেরগুলোর মতো এই বইয়েও আমি হারিয়েছি মাহমুদুল হকের অপূর্ব রচনাশৈলীর মন্ত্রমুগ্ধে। আমার এখনো মাথায় ধরেনা কেনো মাহমুদুল হক তেমন জনপ্রিয় না; বিস্ময়কর লাগে। প্রিয় লেখককে তার রচনাশৈলীর জন্য বিনম্রশ্রদ্ধা।
Displaying 1 - 30 of 36 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.