What do you think?
Rate this book


240 pages, Paperback
Published January 1, 2016
রোকেয়া, ওরফে রাধা, খালপাড়ের বস্তিতে থাকত। ওর অতীত জীবনের গল্প তমসাময়, মেজকার কাছে পরে জানতে পারি আমি। রোকেয়ার বয়স যখন বছর পনেরো, ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বস্তিরই কয়েকজন যুবক। পরে সালিশিসভা করে ওদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের পর একটি সন্তান হয় রোকেয়ার। স্বামী কিছুদিন ছিল, তারপর বেপাত্তা হয়ে যায়। শোনা যায় সে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে, আবার বিয়েও করেছে। ইতিমধ্যে আয়ার কাজ করে সন্তানের ভরণপোষণ শুরু করে রোকেয়া। সেবিকা হিসেবে খুবই দক্ষ আর দায়িত্বশীলা ছিল সে। ওর আগে মেজকার দেখাশোনা করত একজন মাঝবয়সি পুরুষ। দেখেছি কী নির্লিপ্তভাবে মেজকার অথর্ব শরীরটা নাড়াচাড়া করত লোকটা । একটি অবশ সাহায্যপ্রার্থী মনুষ্যদেহ তুলে ধরছে, গা মোছাচ্ছে, পোশাক পরিয়ে দিচ্ছে আরেকটি মনুষ্যদেহ। একটি অশক্ত কাঁধ তুলে ধরছে একটি হাত। হাত আছে, মন নেই। একটি কাজ, যা সেবা হয়ে ওঠে না; সংযোগ নেই কোনোরকম। একজন মানুষকে নিরুচ্চার প্রত্যাখ্যান করছে আরেকজন মানুষ। তখন দেখেছি কেমন বিরক্ত হয়ে উঠতেন মেজকা, ওঁর মুখে ফুটে উঠত এক গভীর অসহায়তার অভিব্যক্তি।
তাহলে ধর্ষণের অনুভূতি কেমন হয় ? যখন একটি শরীরে থাকা মানুষকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে দেহটিকে খাবলানো হয়, তার অন্তঃপুরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পুরুষাঙ্গ কিংবা লোহার রড ?
মনে পড়ে, কীভাবে মেজকার পিঠে বৃত্তাকারে পাউডার ঘষে ঘষে রক্তসঞ্চালন ঘটাত রোকেয়া, যাতে বেডসোর না হয়, কীভাবে ঘর্মাক্ত মুখে ভিজে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিত বিপন্নতার অভিব্যক্তিগুলো। অনির্বচনীয় সব দৃশ্যের জন্ম হতো তখন। বন্যা চলাকালীন প্রতিদিন যে মেজকার কাছে যেতাম, সেটা কতটা কর্তব্যের টানে, আর কতটাই বা সেবার এই রহস্যময় আচার চাক্ষুষ করার বিচিত্র নেশায়, সেটা পরে ভাবার চেষ্টা করেছি।