Jump to ratings and reviews
Rate this book

অপুর দেশ: একটি আত্মকাহিনী

Rate this book

240 pages, Paperback

Published January 1, 2016

4 people are currently reading
80 people want to read

About the author

Parimal Bhattacharya

14 books39 followers
পরিমল ভট্টাচার্য বাংলা ও ইংরেজি দুই ভাষাতেই লেখেন। স্মৃতিকথা, ভ্রমণ আখ্যান, ইতিহাস ও অন্যান্য রচনাশৈলী থেকে উপাদান নিয়ে তিনি গড়ে তুলেছেন এক নতুন বিশিষ্ট গদ্যধারা, নিয়মগিরির সংগ্রামী জনজাতি থেকে তারকোভস্কির স্বপ্ন পর্যন্ত যার বিষয়-বিস্তার। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক। কলকাতায় থাকেন।

Ratings & Reviews

What do you think?
Rate this book

Friends & Following

Create a free account to discover what your friends think of this book!

Community Reviews

5 stars
11 (57%)
4 stars
6 (31%)
3 stars
2 (10%)
2 stars
0 (0%)
1 star
0 (0%)
Displaying 1 - 11 of 11 reviews
Profile Image for Harun Ahmed.
1,659 reviews420 followers
March 28, 2024
অপু "পথের পাঁচালী" আর "অপরাজিত" উপন্যাসের মূল চরিত্র নয় শুধু। অন্যান্য বাঙালি নায়ক দেবদাস, শ্রীকান্তর চাইতে সে কম আদরণীয় নয়। আমাদের আজন্মলালিত রোমান্টিকতা, আমাদের দারিদ্র, হতাশা, জীবন থেকে পালিয়ে পাওয়ার ইচ্ছা, আবার ধ্বংসের মধ্যে জীবনের স্বপ্ন দেখা - অপুর মধ্যে আমরা সবাই নিজেকে দেখি, তাই পরিমল ভট্টাচার্য তার দেশকে "অপুর দেশ" বলে চিহ্নিত করেছেন।দারিদ্র থাকলেও অপুর জীবনে মাধুর্য আছে, মৃত্যু থাকলেও তার জীবনে স্নেহস্পর্শ আছে, জীবনকে ভালোবাসার অধিকার আছে। অপু তো সব বাঙালির জীবনেই আছে। কিন্তু...

লেখক ভারতবর্ষে ঘুরে বেড়ান,সুন্দরবনে যান, দুর্গম পাহাড়ি অঞ্চলে ভ্রমণ করেন, সমতলে ঘোরেন - এ কোন দেশ? যেখানে নিরাপদ পানির জন্য একটা টিউবওয়েল নিয়ে দেনদরবার করতে করতে বছরের পর বছর পার হয় অথচ আড়ালে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়। মাওবাদীদের ভয়ে স্কুল হয়ে ওঠে সৈনিকদের ক্যাম্প, সভ্যতার পাপ থেকে আড়ালে থাকা আদিবাসী গোত্রে দৈহিক সম্পর্কে জড়ানোর অপরাধে এক মেয়েকে যেখানে গণধর্ষণের শিকার হতে হয় (যাতে একবিন্দু টলে ওঠে না গ্রামের দৈনন্দিন জীবনচিত্র), যেখানে মরিচঝাঁপি আছে, যেখানে অন্যায়ের প্রতিবাদ করতে যেয়ে পুরো গ্রাম রাষ্ট্রের নির্দেশে লোপাট হয়ে যায় - এ কোন অপুর দেশ? এখানে স্বপ্ন কই? মানবতা কই? হৃদয় বিদীর্ণ করা বোধ নিয়ে লেখক ঘুরে বেড়িয়েছেন, খুঁড়েছেন নিজের ও দেশের একেকটি অধ্যায় আর খুঁজেছেন অপুর দেশ, যা আর কোথাও নেই।
Profile Image for Shotabdi.
819 reviews194 followers
June 21, 2023
সবসময়ই বলে এসেছি কবিরা অসম্ভব ভালো কাব্যময় গদ্য লেখেন। কিন্তু এমন একজন নন-ফিকশন লেখক আছেন যাঁর ভাষা পড়লে মনে হয় দুনিয়ার অন্যতম শ্রেষ্ঠ কবি তিনি, সঙ্গীতের সুমধুর তান তাঁর লেখার তন্ত্রে তন্ত্রে। কখনো কখনো তাঁর লেখা মনে করিয়ে দেয় লেবুপাতার সজীব ঘ্রাণ, কখনো বা তা বিষণ্ণতার রূপ ধরে হিরাইথে আক্রান্ত করে। তিনি একমেবাদ্বিতীয়ম, পরিমল ভট্টাচার্য।
বিভূতিভূষণের অপু আর সত্যজিৎ এর অপু। দুইই বাঙালির আবেগ। কিন্তু আবেগকে বাস্তব জীবনেও কীভাবে খোঁজা যায়? কীভাবে প্রতিটা মধ্যবিত্ত বাঙালির জীবন মিলে যায় অপুর সাথে?
প্রথম অধ্যায়ে সেই খোঁজই কি দিলেন পরিমল আমাদের? অপুর বাবা ছিলেন পুরোহিত, তাই অক্ষরজ্ঞানটা তার হওয়ার কথাই ছিল। স্কুলে পড়তে পয়সা লাগে, সেই পয়সার অভাব ছিল অপুদের। তবুও নিজ আগ্রহে এবং মেধায় সে পড়াশোনার জগতে স্থায়ী হয়।
অন্যদিকে শেখপাড়ার রফিকুল? সে কি অপুর মতো পারবে তা? অনিশ্চয়তা এখানে। কারণ তার বাবা উচিয়ার আলী সামান্য এক ভূমিহীন নিরক্ষর কৃষক। উপন্যাসের নায়ক হয়ে ওঠা রফিকুলের বোধহয় সাজে না। যেমন আবু আর লীলার প্রেম? এক মুসলিম দরিদ্র স্বপ্নবাজ ছেলে আর হিন্দু মাড়োয়ারি মেয়ের এই প্রেমের বিরুদ্ধে সমাজের পাশাপাশি অস্ত্র যে ক্ষমতা আর আইনও।
তাই অপুর ছাপ সমাজের সকল শ্রেণীর কারো না কারো মধ্যে একটু না একটু বোধহয় পাওয়াই যায়।
ইন্দির ঠাকুরুনের একটা ন্যাকড়া-বাঁধা পুঁটলি ছিল। যে ন্যাকড়া গুলো রোদে মাঝে মাঝে শুকোতে দিতেন তিনি আর ভাইবৌ এর সাথে ঝগড়া হলে পুঁটলিতে সেই ন্যাকড়াগুলো নিয়ে রওয়ানা দিতেন৷
শিমলিপালের হো আর লাল মাটি টাঁড় পাহাড় মহুয়া পলাশের দেশ পুরুলিয়ার আদিবাসী-এই দুই গোষ্ঠীকে দেখে ইন্দির ঠাকরুনের ন্যাকড়ার মতো স্মৃতি জমা করেছেন লেখক। কেবল স্মৃতিই নয় তাঁদের নিয়ে কাজ করার জন্যই ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রজেক্ট।
সেই মানুষগুলোর গল্প চলে এসেছে অপুর জীবনের সমান্তরালে।
স্বাপ্নিক মানুষ হওয়া আর স্বপ্নকে বাস্তবায়িত করতে গিয়ে কোন একটা উদ্দেশ্যে মাটি কামড়ে ধরে সেই চেষ্টা করে যাওয়া-এই দুইয়ের মাঝে আসলে বিস্তর ব্যবধান।
এই যে আমরা নানা কিছু পড়ি, জানি, ভাবি এরপর নিজের স্বার্থটা সুন্দর করে গুছিয়ে একটা সুখী জীবনের ছবি আঁকি আর বাস্তবেও তাইই করি, এখানে সেইসব পিছিয়ে পড়া-স্বাক্ষর অথচ অশিক্ষিত সাবিত্রী মুন্ডাদের স্থান কোথায়?
লেখক-বন্ধু অমিতাভ কিন্তু পরিবার আর নিশ্চিত জীবন ছেড়ে পড়ে আছেন সেই ডুমুরদি বিদ্যাশ্রমে, কিংবা সেইসব জীবনের আশেপাশে, কেন শিক্ষার হার কম, কেন তাদের জীবনে ম্যালিগন্যান্ট ম্যালেরিয়া সাক্ষাৎ মৃত্যু আর তার থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজতে। নিজে শিখছেন, শেখাচ্ছেন। আমরা সবাই কি তা পারি?
কিন্তু সমস্ত কিছু ছাপিয়ে আবিষ্কার করি আসলে অপুর দেশে লুকিয়ে থাকা অপুটি আসলে লেখক নিজেই। নিজেরই জীবনের নানা কাজ আর দর্শন তাঁর অত্যাশ্চর্য ভাষায় ব্যক্ত করে তৈরি করেছেন এক মায়াজাল।
মোমের সলতে, খোলামকুচির রান্নাবাটি, শ্লেটরঙের ছায়া, কচুপাতার ছাতা- একেকটা অধ্যায়ের নাম এমন অনুপম শব্দবন্ধে রচনা কী করে করেন তিনি?
সূক্ষ্ণ পর্যবেক্ষণ আর গভীর জীবনদর্শনে বোনা এই কাব্যিক আত্মকথাটি সচরাচর পড়া অন্যান্য আত্মকাহিনী থেকে একেবারেই আলাদা। কিন্তু ব্যঞ্জনা তার এত বেশি যে প্রায়ই থমকে দাঁড়িয়ে ভাবতে বাধ্য করে পাঠককে, দেখার নতুন চোখ, নতুন আলোর সন্ধান দেয়।
একটি সার্থক সাহিত্য, সার্থক গ্রন্থ হতে এর চেয়ে বেশি কী প্রয়োজন আর?
Profile Image for Fajley Rabbi.
1 review
December 14, 2024
"... শেষপর্যন্ত আমার কাছে যা জমেছে তা কতগুলো ইমেজ - কথা শব্দ দৃশ্য আর গন্ধ।
...যখন গিয়েছিলাম, মাঠে ফসল কাটা হয়ে গিয়েছে। গ্রামে গ্রামে ধান ঝাড়াই হচ্ছে, নতুন বাঁশের চালি থেকে উজ্জ্বল সোনালি শস্যদানা ঝরে পড়ছে টনটনে মেটে উঠোনে।
সেভাবেই কথা দৃশ্য শব্দ আর গন্ধের রূপকল্পগুলো ঝরছে আমার চেতনায়, আমার ভেতরে চুঁইয়ে ঢুকে পড়ছে, পরস্পরে ফিসফাস করে চলেছে অবিরল"।

যেন দৃশ্যপটের পর দৃশ্যপট জোড়া লেগে ফুটে উঠছে পূর্ণাঙ্গ এক ক্যানভাস।
সবুজ মাঠের ওপর নীলাভ অস্পষ্ট কুয়াশায় জমে আসা অন্ধকার কিংবা প্রাচীন কোনো মন্দিরের গায়ের টেকাকোটায় যেভাবে লুকিয়ে থাকে বিলুপ্ত কোনো ইতিহাসের লাইকেন;
পরিমল ভট্টাচার্য সেভাবে সময়ের পলি সরিয়ে শব্দের পর শব্দ সাজিয়ে বুনে তোলেন এক অনুপুঙ্খ নিত্যপুরাণ।

'অপুর দেশ - একটি আত্মকাহিনি'র শিরোনামটি কয়েকটি প্রশ্ন জাগায় পাঠকমনে।

যে অপুর কথা পরিমল বলছেন সে কোন অপু?
অপুর দেশটাই বা কোন নিশ্চিন্দিপুর?
আর এই যে আত্মকাহিনি সেটা আদতে কার আত্মপরিচয়ের তালাশ করে?


ঊনবিংশ শতাব্দীর মাঝভাগ থেকে বাঙালির জীবনের ভেতর বয়ে চলা অদৃশ্য স্রোতের মতো রহস্যময় এক উচ্চাশার অনুসন্ধান করেন লেখক।
যে স্রোতের খোঁজে আমরা ঢুকে পড়ি ২৩/৯ শ্রীগোপাল মল্লিক লেনের ঘিঞ্জি গলির ভেতর যেখানে ভ্যাপসা বাতাস ঝুলে থাকে মলিন মশারির মতো।
এখানেই কোথাও পলেস্তারা খসে পড়া দেয়ালের ঘরে ছিল অপু আর অপর্ণার স্বল্পায়ু সংসার।

শেখপাড়া নামের অজ পাড়াগাঁয়ের আশ্চর্য স্বচ্ছ চোখের দরিদ্র কিশোর রফিকুল ইসলামের দিকে তাকিয়ে যেন অপুকে ফিরে পাই আমরা।

যেন কোনো আঁধার অতীতের জঠর থেকে তর্জমা হয়ে এক ঐতিহাসিক সজীব তৃষ্ণা নিয়ে ফিরে ফিরে আসে নতুন সব অপু।
কেবলি দৃশ্যের জন্ম হয়।

"শিক্ষা, যা যুগে যুগে বাঙালির আত্মপ্রতিষ্ঠার সোপান। তার টানে কোন সুদূর মফসসল থেকে এসেছে কিশোর, দেখ, ট্রেনে চেপে শিয়ালদহ, তারপর হ্যারিসন র���ড ধরে পায়ে হেঁটে, চোখে তার দুর্দম পিপাসা।
তাকে দেখে দোকানদারেরা হাঁকছে - এই যে এদিকে, কী বই চাই? কী বই ভাই?
...এখনও বিকেলের মধুরং আলো ফোটে বিশ্ববিদ্যালয়ের মোটা থামে,
নীচে ফুটপাথে টেবিল পেতে সিলেবাস আর প্রশ্নমালা নিয়ে বসা লোকটা এখনও ঠোঙায় করে মুড়ি-বাতাসা খায়"।

এইসব ফিরে ফিরে আসা অপুদের গল্পগুলো কেমন হয়? একজন লীলা বা একজন অপর্ণা কি আসে ওদের জীবনে?

"লেখাপড়া শিখে কী হয়? কিছু কি হয়?"

এই প্রশ্নের ভেতরে লুকিয়ে আছে এক অস্পষ্ট স্বপ্নের জাল। পশ্চিম ওড়িশার শিমলিপালের দুর্গম জঙ্গলে স্কুল শিক্ষক যমুনা সামাদ যে জালে আটকে যায়।

"যমুনা ওর নিজের ছেলেকে শহরের ভালো স্কুলে রেখে পড়াতে চায়, সম্ভব হলে ভুবনেশ্বরে কোনো আবাসিক স্কুলে"।
যমুনা বুঝে গেছে শিক্ষা হলো বহির্বিশ্বের দরজার চাবি।

অপু, তুমিও কি এই দরজার চাবির খোঁজেই একদিন বগলে বাক্স-বেডিং আর গ্লোব হাতে কলকাতার ট্রেনে চেপে বসেছিলে?

সুন্দরবনের পূর্বপ্রান্তের শেষ আবাদভূমির সন্তান দুলাল।
আশেপাশের কয়েকটা গ্রামের ওই একমাত্র উচ্চশিক্ষিত মানুষ।
দুলালের মায়ের মুখে শ্লেটরঙের যে গাঢ় অন্ধকার ফুটে ওঠে সেই একই অন্ধকার যখন আমি আমার মায়ের মুখে দেখি তখন অপুর দেশ কি আমার নিজেরও আত্মকাহিনি হয়ে ওঠে না?

চাপ চাপ অন্ধকার জমে থাকা উঠোনে অলীক কুয়াশাচ্ছন্ন ভবিষ্যতের আলোর সলতে জ্বালাতে যেয়ে দেখি অন্ধকার কাটে না; আমাকে এক বিপন্নতার মুখে ঠেলে দেয়।
শ্লেটরঙ জ্বলজ্বল করে।

নীল রঙের সে অন্ধকারে দাঁড়িয়ে মনে হয় 'অপুর দেশ- একটি আত্মকাহিনি' আসলে বাঙালির আত্মপরিচয়েরই গল্প।
Profile Image for Kripasindhu  Joy.
543 reviews
December 20, 2024
শুরুটা খুব ভাল লাগলো। সত্যি বলতে অসাধারণ লেগেছে। শেষটাও আকর্ষণীয়। তবে মাঝখানে বেশ কিছু জায়গা একঘেয়ে লেগেছিল। এর কারণ সম্ভবত একই বিষয়ের বারবার ফিরে আসা। তবে, সামগ্রিকভাবে, এই বইটি মনে থাকার মতো।

বিভূতিভূষণের অপু বাংলা সাহিত্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও জনপ্রিয় চরিত্র, যার জনপ্রিয়তা কিছুটা হলেও বাড়িয়ে দিয়েছিলেন সত্যজিৎ রায় তাঁর অপু ট্রিলজির মাধ্যমে, সেই অপুকে ও তার সময়কে লেখক যেন নিজের দেখার মাঝে খুঁজে বেরিয়েছেন। কতটুকু প্রাপ্তি আর অপ্রাপ্তিই বা কতখানি, তার হিসেব দেওয়া ভার। তবে কালের স্রোতে জগতের যে পরিবর্তন হয় তার রেশটা ধরা পরে যায়।
Profile Image for Sheikh Nurunnahar.
1 review
March 14, 2023
অপুর দেশ একটি আত্মকাহিনী।

সার্বজনীন শিক্ষা ব্যবস্থা। নিম্নবর্গের শিক্ষা ছাড়া সার্বজনীন শিক্ষা পূর্ণতা পায়না। এটা এমন এক সিস্টেম যেখানে ঠিকঠাক শিক্ষাদান ছাড়া আর বাকিসব কিছু ঠিকঠাক চলে। মাঝে মাঝে চলে কাক-শেয়ালের চিল-চিৎকার! শিক্ষক বাদে বাকি সকলে জানে কিভাবে শিক্ষাদান হতে পারে!

পরিমল ভট্টাচার্য আমার অত্যন্ত প্রিয় লেখক। কি দারুন ঝরঝরে প্রাণবন্ত তাঁর লেখা! তিনি মূলত ভারতের নিম্নবর্গের শিক্ষা ব্যবস্থার পরিদর্শক হিসেবে তাঁর অভিজ্ঞতার কাহিনী লিপিবদ্ধ করেছেন 'অপু দেশ একটি আত্মকাহিনী'।
কে এই অপু?
বিভূতিভূষণের পথের পাঁচালীর অপু, নিশ্চিন্দিপুরের দরিদ্র ব্রাহ্মণ হরিহর আর সর্বজয়ার পুত্র অপু, নিদারুণ দারিদ্র‍্যের সাথে লড়াই করে বেড়ে ওঠা, লেখা-পড়া করা অপু। আমাদের অপু। আমাদের প্রিয় অপু। যার আনন্দে আমরা হেসেছি, যার দুঃখে আমরা কেঁদেছি।
এই বইয়ের পাতায় পাতায় হাজার হাজার অপুর গল্প। পাহাড়ের ঢালে আদিবাসী শিশু, সুন্দরবনের জেলে সন্তান, বিরান চর, জঙ্গলে বাস করা নিম্নবর্গের প্রান্তিক মানুষের সন্তানের শিক্ষা গ্রহণের রূঢ় বাস্তবতার উপর রচিত এই গ্রন্থ।
বইটি পড়তে আমার অনেক সময় লেগেছে। আমি নিজেও প্রায় প্রান্তিক শিক্ষাব্যবস্থার অংশ। বারবার নিজেকে গুলিয়ে ফেলেছি, এইসব হত দরিদ্র বঞ্চিত শিশুদের শিক্ষাব্যবস্থার সাথে। চাকরির শুরুর দিকে পরীক্ষার খাতা দেখার সময় রাগ হত পরীক্ষার্থীদের পড়াশোনার মান নিয়ে। আজকাল কষ্ট হয়, ভয়াবহ কষ্ট হয়। আমি জানি, আমার কিছু করার নেই। গড্ডলিকাপ্রবাহে আমি সেরেফ 'কেউনা'। কিচ্ছু করার নেই আমার। পাঠদান হবে কিংবা হবে না। তবু কাস্তে দিয়ে ধান কাটা কড়া পড়ে যাওয়া হাত, নুন-হলুদের দাগ মাখা ক্ষয়াটে আঙ্গুলে ভুল বানানে, ভুল বাক্যে, ভুল উত্তর লিখে যাবে।
নাম সর্বস্ব শিক্ষাব্যবস্থায় অপুর জন্য কিচ্ছু করার নেই, থাকেও না বোধ হয়।
Profile Image for Dibyendu Singha Roy.
76 reviews4 followers
June 5, 2022
এ এক আশ্চর্য দেশ। যে দেশ আমি ছুঁতে পারিনি। ছাড়তেও পারব না কখনও। দিকভ্রষ্ট জীবনে অবিরাম সন্ধান করব। কিন্তু কিসের সন্ধান তা জানব না। কখনো কোনো বিরল মুহূর্তে সেই বদ্ধ ঘরের দেয়াল ফাটিয়ে একটা জানলা ফুটবে। আলো এসে পড়বে। এই বইটা সেই জানলার মত।
2 reviews
August 12, 2023
একজন লেখক, যিনি সমসাময়িক এবং তথাকথিত লেখক সম্প্রদায়ের থেকে অনেকখানি ব্যবধানে। সোশ্যাল মিডিয়ায় লেখা পোস্ট করে কমেন্ট লাইকের তীক্ষ্ণ বাসনা, স্বঘোষিত আত্মগরিমা এসবের থেকে বহু ক্রোশ তফাতে তাঁর চলাফেরা। তবে তিনি লেখেন, ঝরনার জলের মতো তার তার অক্ষরমালা বয়ে চলে পাহাড় নদী মাঠ ঘাট প্রান্তর ছুঁয়ে। তার শব্দের বুনোট দেখে মনে হয় আহা, কি অপূর্ব মাধুর্যে ভরা বাংলা ভাষা। কি সম্পৃক্ত তার প্রকাশ। কতখানি অভিজ্ঞতা, পড়াশোনা, পরিণত মনন আর নির্ভেজাল অনুভূতি একাকার হলে এমন একটা বই লিখে দেওয়া যায়!

কতোটা গভীরে গিয়ে লিখলে এই আজকের প্রেক্ষাপটেও প্রতিটা সন্ধে বেলা কাজ ফিরতি এক মফস্বলের অপুকে উদগ্রীব করে তোলা যায় তার নিজেরই জীবনের গল্প পড়াতে। প্রতিটা অধ্যায় শেষে কি নিদারুণ যাচনায় পাঠক খুঁজে ফেরে স্রষ্টার মুখ। দেখতে মন হয় তাঁকে। এমন যিনি লিখেছেন তিনি ঠিক কেমন দেখতে! তাঁর গলার স্বর ঠিক কেমন শোনায়! লেখার মতো কি ততোটাই মেদুর, পেলব! মনে হয় যদি এক্ষণি, ঠিক এই মুহূর্তে সামনে পেতাম মানুষটাকে! একমনে তার গল্প শুনেই শীতের একটা আস্ত রাত হেলায় কাটিয়ে দেওয়া যেতো।

পরিমল ভট্টাচার্য, আপনাকে স্যার বলবো নাকি দাদা নাকি নিছকই "অপুর দেশের" স্রষ্টা জানি না, এইসব কথা কোনোদিন আপনার কাছে গিয়ে পৌঁছবে কিনা সেও অনিশ্চিত তবে একটু জানাই এই বই পড়তে গিয়ে আমি লেখার সাথে সাথে আপনাকেও ভালবেসে ফেলেছি। যাপন করেছি ওড়িশা থেকে সুন্দরবন, পুরুলিয়া থেকে কৃষ্ণনগর অব্দি পুরোটা পথ, তার আনাচে কানাচে প্রতিনিয়ত বেড়ে চলা অজস্র অপুদের হাত ধরে। শিখেছি বাংলা ভাষার কতো নতুন শব্দ, তাদের ব্যবহার। তার চেয়েও বেশি বুঝেছি এক একটা বিরাট বিরাট সম্ভাবনার অনায়াসে হারিয়ে যাওয়া। যেমনটা কথা ছিল না, তবু সেখান থেকে কোনদিন আর ফিরে আসা হবে না তাদের। অথবা আকাশ ছুঁয়ে পুরোটা জীবন কাটাবে ভেবেও দিন শেষে চেনা ব্যর্থতা আর আপোষ নিয়ে যারা বাড়ি ফেরে নিত্যই। সে'সব মুখেদের কেউ কেউ তলিয়ে গিয়েছে কালের গর্ভে। যারা টিকে আছে তাদের অব্যক্ত সাফাই সমাজ শোনেনি, তাদের সেই পরিণতির প্রচ্ছন্ন দায় যে রাষ্ট্রের সেই রাষ্ট্রই তাকে প্রতিনিয়ত জর্জরিত করেছে গ্লানিতে, তার কাছে যা এক চিরায়ত আত্মগ্লানি।

যে সময়ে এইসব লিখতে বসেছি বিশ্বাস করুন সে'সময়ে লেখার মন নেই একদম। কিন্তু কি তাড়নায় তবু লিখতেই হল কথাগুলো। ভেতরে ভেতরে একটা চাপা অস্বস্তি স্ফীত হচ্ছিল ক্রমশ। আপনার এই বইটি আপনার তো বটেই এমনকি আমার পাঠক জীবনের একটি অন্যতম মাইলস্টোন হয়ে থাকবে। মনে রইবে আমার, জীবনের এই পর্বে এসে পরিমল ভট্টাচার্যের "অপুর দেশ" পড়েছিলাম।
Profile Image for Gain Manik.
340 reviews4 followers
May 8, 2025
অপু শুধু বিভূতিবাবুর সৃষ্ট চরিত্র নয়, দারিদ্র্যপীড়িত অঞ্চলে অপুদের জুড়ি নেই। লেখক সুন্দর ভাবেই শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে গেলেও মাঝে মাঝে কেমন যেন dissonant feel হলো, মাঝখানে একবার মনে হলো যেন শুধু তথ্য মুখস্থ করে যাচ্ছি BCS পরীক্ষায় যেমন করতে হয়, হয়তো এ আমার জ্ঞানের দারিদ্র্য। তবুও লেখকের অন্যান্য ব‌ইয়ের প্রতি আগ্রহ বাড়লো
Profile Image for Chhanda.
90 reviews
October 18, 2023
এই ভদ্রলোকের লেখা ধূসর।
Profile Image for Subhasree D. .
14 reviews2 followers
June 29, 2025
যে 'অপু'র সাক্ষাত পেয়েছি অল্পে অল্পে মনের সাদা কাগজে ফুটে ওঠা, বইটা খুলে দেখি, কেমন সে হয়ে গিয়েছে লেখকের সঙ্গী — লেখক তাকে দেখতে পায়, তার সাথে ঘুরতে ঘুরতে দেখতে দেখতে কতই আলাপ করে আর গাঢ় নীলচে দুঃখী অন্ধকারে প্রশ্ন করে, উত্তর পাবেনা জেনেও করে, যে প্রশ্নের সমান দায় লেখকের মতো পাঠকেরও। এই বইটা স্বদেশীয় দর্শকের কলমে অপুর লাঞ্ছনাপীড়িত হতভাগ্য দেশের শুধুই "আত্মকাহিনী" বলে ধরে নিলেও লেখকের স্বপ্নালু কোমলতাপ্রবণ অনুসন্ধানী সত্তা কী সদর্থক প্রচ্ছন্ন, যেন এক সমকালীন অপু হয়ে উঠেছেন তিনি বাস্তবিক। দূর দূরান্তরে জানার অপরিসীম খিদেকে সম্বল করে চলতে চলতে লেখক কেবলই ভারী দরদে 'অপু'কে শুনিয়ে চলেছেন নতুন নতুন কথা— প্রবাহমানা জীবনের ঢেউ হতে লেখকের আঁজলা করে ছেঁচে নেয়া নৈমিত্তিক ঘটনাবলী সাবলীল বাহুল্যবর্জিত গল্পের ফ্রেমে এসে দাঁড়ায়, চিত্রিত করে কত লোকায়ত অবয়ব। শব্দমালার পরিণত ও যথাযথ স্ট্রোকের নিপুণ ইলাস্ট্রেশনে চিরায়ত গল্পগাছা আশ্চর্য সৌন্দর্যস্নাত হয়েছে। চলচ্চিত্রের রূপালি দৃশ্যকল্পে যেখানে সিনেম্যাটিক চরিত্র অপুর আর এগোনোর উপায় থাকেনা সেখানে সাক্ষর বাসন্তী মুন্ডা, যৌবনের সুপুরুষ মেজকা, বানভাসী আশ্রমের এগারোজন বৃদ্ধা, বাংলা মিডিয়ামের মিস হতে চাওয়া শিশু মাম্পি রানি দাস, আয়া সেন্টারের সেবিকা রাধা বা ভারতী বা সুন্দরবনের কিনারায় মুছে যেতে বসা অঞ্চলের ছেলে অংকের অধ্যাপক দুলাল মন্ডলের মতো কত রক্তমাংসের জ্যান্ত দগদগে মানুষগুলো এসে, যাঁরা ইতিহাস প্রত্যাখ্যাত ও আক্ষরিক অর্থেই দেশের নিপাট রাজনৈতিক মানচিত্রের সর্বত্র নানাবিধ খানাখন্দের অদৃশ্য তলানিতে ঠেকে যাওয়া জীবনভর ঠেকে থাকা নিরুচ্চার নিরীহ জনসাধারণ, লেখকের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার স্মৃতিকোশ ফুঁড়ে বেরিয়ে এসে পাঠককে জেঁকে ধরে , 'অপু'র পরে এগিয়ে যায় প্রত্যেকের আপনাকার পথে । তাই লেখক পরিমল ভট্টাচার্য রোম্যান্টিসিজম খানিক পাশ কাটিয়েও অপূর্বকুমার রায়ের থেকে এগিয়ে থাকেন অনেক অনেকখানি।

একেকবার চোখ ছলছলিয়ে উঠেছে, গায়ে কাঁটা দিয়েছে, বড্ড মায়া হয়েছে আর সেই মানুষগুলোর সাথে গভীর অভিনিবেশে কথা বলার প্রবল ইচ্ছা হয়েছে। 'মোমের সলতে', ' খোলামকুচির রান্নাবাটি', 'শ্লেটরঙের ছায়া', 'খড়ের বাছুর', 'ফানুসগ্রাম', 'সূচের চোখ', 'ফাইবারের দুর্গা', 'খেলনা রেলের স্টেশন', 'তালডোঙা' প্রভৃতি রচনাগুলি একে একে পেরিয়ে শেষ পৃষ্ঠায় কখন যে এসে পড়লাম বুঝতেই পারিনি। পরিমল বাবুর এই বইয়ের কাছে অন্যতম ঋণ : নতুনভাবে 'সমমর্মিতা'র অর্থ চিনতে পারা।

রোকেয়া, ওরফে রাধা, খালপাড়ের বস্তিতে থাকত। ওর অতীত জীবনের গল্প তমসাময়, মেজকার কাছে পরে জানতে পারি আমি। রোকেয়ার বয়স যখন বছর পনেরো, ওকে তুলে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে বস্তিরই কয়েকজন যুবক। পরে সালিশিসভা করে ওদের মধ্যে একজনকে বিয়ে করতে বাধ্য করা হয়। বিয়ের পর একটি সন্তান হয় রোকেয়ার। স্বামী কিছুদিন ছিল, তারপর বেপাত্তা হয়ে যায়। শোনা যায় সে বাংলাদেশে চলে গিয়েছে, আবার বিয়েও করেছে। ইতিমধ্যে আয়ার কাজ করে সন্তানের ভরণপোষণ শুরু করে রোকেয়া। সেবিকা হিসেবে খুবই দক্ষ আর দায়িত্বশীলা ছিল সে। ওর আগে মেজকার দেখাশোনা করত একজন মাঝবয়সি পুরুষ। দেখেছি কী নির্লিপ্তভাবে মেজকার অথর্ব শরীরটা নাড়াচাড়া করত লোকটা । একটি অবশ সাহায্যপ্রার্থী মনুষ্যদেহ তুলে ধরছে, গা মোছাচ্ছে, পোশাক পরিয়ে দিচ্ছে আরেকটি মনুষ্যদেহ। একটি অশক্ত কাঁধ তুলে ধরছে একটি হাত। হাত আছে, মন নেই। একটি কাজ, যা সেবা হয়ে ওঠে না; সংযোগ নেই কোনোরকম। একজন মানুষকে নিরুচ্চার প্রত্যাখ্যান করছে আরেকজন মানুষ। তখন দেখেছি কেমন বিরক্ত হয়ে উঠতেন মেজকা, ওঁর মুখে ফুটে উঠত এক গভীর অসহায়তার অভিব্যক্তি।
তাহলে ধর্ষণের অনুভূতি কেমন হয় ? যখন একটি শরীরে থাকা মানুষকে সম্পূর্ণ প্রত্যাখ্যান করে দেহটিকে খাবলানো হয়, তার অন্তঃপুরে ঢুকিয়ে দেওয়া হয় পুরুষাঙ্গ কিংবা লোহার রড ?
মনে পড়ে, কীভাবে মেজকার পিঠে বৃত্তাকারে পাউডার ঘষে ঘষে রক্তসঞ্চালন ঘটাত রোকেয়া, যাতে বেডসোর না হয়, কীভাবে ঘর্মাক্ত মুখে ভিজে তোয়ালে দিয়ে মুছে দিত বিপন্নতার অভিব্যক্তিগুলো। অনির্বচনীয় সব দৃশ্যের জন্ম হতো তখন। বন্যা চলাকালীন প্রতিদিন যে মেজকার কাছে যেতাম, সেটা কতটা কর্তব্যের টানে, আর কতটাই বা সেবার এই রহস্যময় আচার চাক্ষুষ করার বিচিত্র নেশায়, সেটা পরে ভাবার চেষ্টা করেছি।


শেষতম পরিচ্ছেদের শেষতম বাক্য দিয়ে বইটা ফুরোলেও প্রথমবার হাতে ধরে পাঠের অভিজ্ঞতা বুড়োয় না, মনের মধ্যে রণনের রেশ মুড়োয় না।
Displaying 1 - 11 of 11 reviews

Can't find what you're looking for?

Get help and learn more about the design.